Ajker Patrika

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির অভিযোগে পরিবারকে জড়ানো ষড়যন্ত্রমূলক বললেন শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ২২: ০০
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণে দুর্নীতির অভিযোগে পরিবারকে জড়ানো ষড়যন্ত্রমূলক বললেন শিক্ষামন্ত্রী

চাঁদপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণে প্রভাব খাটিয়ে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে। তবে এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে দীপু মনি বলেছেন, এই অভিযোগ বানোয়াট, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক।  

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর হেয়ার রোডে সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধা নিতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। একটি কুচক্রী মহল নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিষয়টি দলীয় দপ্তর ও সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় আমার পরিবারের কোনো জমি নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদপুরে আমার ক্রয়সূত্রে কোনো জমি নেই। পৈতৃক সূত্রে থাকতে পারে। আমার কাছে যা তথ্য-প্রমাণ আছে, তা থেকে বলতে পারি আমার বড় ভাই অধিগ্রহণের আগেই বিক্রি করে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই জায়গায় আমার বা পরিবারের কারও জমি নেই। রাজনৈতিক কোনো সহকর্মীর জমি থাকতে পারে।’ 

জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দক্ষিণে লক্ষ্মীপুর গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেখানে মৌজা দরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দাম দেখিয়ে জমি দলিল করেছেন কয়েকজন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাঁদের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ও রয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এসব তথ্যকে উদ্দেশ্যমূলক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন দীপু মনি। 

দীপু মনি বলেন, ‘আমার পরিবারের কেউ কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নয়। তবে অন্য কেউ দুর্নীতি করেছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা উচিত এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’ 

সংবাদ সম্মেলনে দলীয় এক সংসদ সদস্যের প্রতি ইঙ্গিত করে দীপু মনি বলেন, ‘তাঁর বিষয়ে গণমাধ্যমে আমি কোনো কথা বলতে চাই না। যা বলার দলীয় ফোরামে বলবো।’  

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘চাঁদপুরে যখনই কোনো উন্নয়নকাজে হাত দেওয়া হয় একটি মহলের প্রবল বিরোধিতা করে থাকে। তবে কোনো ষড়যন্ত্র কিংবা চক্রান্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বাধা হতে পারবে না। উন্নয়নকাজ ও একাডেমিক কার্যক্রম এগিয়ে যাবে।’

দুর্নীতি হয়ে থাকলে তাঁদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি তদন্ত ও অনুসন্ধানে সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থা রয়েছে। আমি আশা করব, ওই সব সংস্থা তদন্ত করে প্রকৃত তথ্য বের করবে। দুর্নীতি হয়ে থাকলে যারা জড়িত বলে প্রমাণ পাওয়া যাবে, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চাঁদপুরের রাজনৈতিক নেতাদের এ বিষয়ে কোনো ইন্ধন আছে কি না এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনই আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। দলীয় ফোরামে আমি এটি উত্থাপন করব। এখন আমি কিছু বলতে চাই না।’

জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জমির মূল্য নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসক। এখানে ৬২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ১৩ জনের একটি কমিটি করে প্রাক্কলন করা হয়, এর বাজার মূল্য ১৯৩ কোটি টাকা। এর আগে এর প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫৫৩ কোটি টাকা। আমি মোটা দাগে যেটা বুঝি ১৯৩ কোটি টাকার ২০ গুন কখনোই ৫৫৩ কোটি টাকা নয়।’ 

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি নির্বাচন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘এটি ভাঙ্গনপ্রবণ জায়গা, এখানে স্থাপনা টিকবে না এমন অভিযোগের বিষয় ছিল। তবে চাঁদপুর শহর ভাঙনের কারণে অনেক ছোট ও অনেক ঘনবসতি রয়েছে। আমরা জানি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো সমস্যা হলে হাইওয়ে বন্ধ হয়ে যায়। সেই বিবেচনায় আমরা জমিটি পছন্দ করি। এছাড়াও আমরা কোথায় জমি পছন্দ করছি এর সঙ্গে প্রশাসনের লোকজনও জড়িত ছিল।’

এ সময় মন্ত্রী উল্লেখ করেন, এই জমির সঙ্গে টেকসই বাঁধ রয়েছে। এছাড়া পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্রও ছিল। 

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের বিষয়েও একই সমস্যার কথা অনেকে জানিয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আসলে যখনই কোনো বড় প্রকল্প শুরু হচ্ছে তখনই এমন বাধা আসছে।’

এ বিষয়ে কোনো তদন্ত করা হবে কি না, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘এখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তদন্ত করবে না। ভূমি মন্ত্রণালয় চাইলে তদন্ত করতে পারে।’ তবে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের ভূমিকা নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত