Ajker Patrika

ঢাবি শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সুপারিশ  

ঢাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২২, ১১: ৫৩
ঢাবি শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতির সুপারিশ  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় একই বিভাগের অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষকে বিভাগের সব অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি প্রদান, বরাদ্দকৃত বিভাগীয় কক্ষ বাতিলসহ কয়েকটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে বিভাগটির অ্যাকাডেমিক কমিটি।  

চলতি বছরের ২৯ মার্চ অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বৈঠকে বাংলা বিভাগের সর্বমোট ১৮ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক শিক্ষক বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন। 

বাংলা বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান, গত মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। পরে ওই ছাত্রী বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক বরাবর একটি অভিযোগ দাখিল করেন। 
 
অ্যাকাডেমিক কমিটির এক সভায় বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হক অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে একজন শিক্ষার্থীর আনা যৌন নিপীড়নের অভিযোগপত্রটি পড়ে শোনানো হয়। এ সময় বিশ্বজিৎ ঘোষ নিজের দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও অতীতের প্রসঙ্গ টেনে ক্ষমা প্রার্থনার বিষয়টি নাকচ করেন উপস্থিত শিক্ষকেরা। পরে একাডেমিক কমিটি সর্বসম্মতভাবে চারটি শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সুপারিশ করে। 

বিবরণীতে উল্লেখ থাকা সুপারিশগুলো হলো 
১. সকল অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হোক। (একাডেমিক কার্যক্রমের মধ্যে পড়বে সব ধরনের ক্লাস নেওয়া, পরীক্ষায় প্রত্যবেক্ষণ, উত্তরপত্র মূল্যায়ন, এমফিল-পিএইচডি গবেষণা তত্ত্বাবধায়ন, পরীক্ষা কমিটির কাজে অংশগ্রহণ প্রভৃতি)। তাঁকে ভবিষ্যতে কোনো একাডেমিক কার্যক্রমে যুক্ত করা হবে না এবং সিঅ্যান্ডডি ও একাডেমিক কমিটির সভায় তাঁকে ডাকা হবে না। এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতেও কার্যকর থাকবে। 

২. তাঁর নামে বরাদ্দকৃত বিভাগীয় কক্ষ বাতিল করা হোক। 

৩. আরও বৃহত্তর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করা হবে কি না, সেটি অভিযোগকারীর সম্মতি সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। 

৪. তদন্তকালীন একাডেমিক কমিটির এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে। 

অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ ঘোষকে ১৪ এপ্রিল সকাল থেকে সংবাদ লেখা পর্যন্ত একাধিকবার কল দেওয়া হলে তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। 

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য বাংলা বিভাগের চেয়ারপারসন অধ্যাপক সৈয়দ আজিজুল হককে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

এদিকে বিশ্বজিৎ ঘোষকে দেওয়া শাস্তির সুপারিশকে ‘ঠুনকো’ উল্লেখ করে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আরাফাত সাদের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তৃতা রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক আমজাদ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ তমা এবং সভাপতি সালমান সিদ্দিকী। 

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘যৌন নিপীড়নের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পরও এবং অপরাধী কর্তৃক অপরাধ স্বীকার করার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে শুধু অব্যাহতি দেয়। কোনো যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া এরূপ নরম পদক্ষেপই প্রমাণ আমাদের সমাজে নারীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের ঘটনাকে কতটা হালকাভাবে দেখা হয়। পুরো সমাজে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা ও বৈষম্য বৃদ্ধি ঘটার অন্যতম উদাহরণ এ ঘটনা।’

এ ছাড়া কঠোর প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী, ছাত্রনেতারা। 

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ ২০১৭ সাল থেকে চার বছর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে অন্যগুলোও বাতিলযোগ্য: উমামা ফাতেমা

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার ফ্লাইট থেকে সরানো হলো দুই কেবিন ক্রু

নারী কমিশন তৈরির জন্য জুলাই বিপ্লবে কেউ জীবন দেয়নি: মাহমুদুর রহমান

প্রাথমিকে আবার চালু হচ্ছে বৃত্তি পরীক্ষা: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

১৯৪৭ থেকে ২০২৫: ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও ফলাফল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত