Ajker Patrika

অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে হামলায় পুলিশ সদস্য আহত, আটক ৪

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালী তীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে বাধা ও হামলা। এক পুলিশ সদস্য আহত। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালী তীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে বাধা ও হামলা। এক পুলিশ সদস্য আহত। ছবি: আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালী তীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে বাধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হামলায় এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চার ব্যক্তিকে আটক করেছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে শহরের কস্তরাঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

বাঁকখালী নদীর জমি ও প্যারাবন উজাড় করে প্রভাবশালীদের গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযানে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। সকালে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়ে অভিযানে নামেন কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী। শুরুতেই স্থানীয় ও দখলদারদের বাধার মুখে পড়ে উচ্ছেদ অভিযান।

এ সময় তারা ‘বদরমোকামস্থ উকিলপাড়া সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণ’ ব্যানারে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় এক পুলিশ সদস্য আহত হন।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘বাঁকখালীতে উচ্ছেদ অভিযানে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি মাথায় আঘাত পেয়েছেন। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

দখলে থাকা লোকজনের দাবি, জেলা প্রশাসন তাদেরকে এই জমি ক্রয়ে অনুমতি দিয়েছে। নিয়মিত জমির খাজনাও আদায় করছে। তাদের জমির বৈধ কাগজপত্রও আছে। তারপরও নদীর জমি উদ্ধারের নামে তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।

কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালী তীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে বাধা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালী তীরের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে বাধা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এর আগে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ অভিযান চালিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে নদীর কস্তুরাঘাট এলাকার ৩০০ একর জমি দখলমুক্ত করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু দীর্ঘদিন দখলমুক্ত থাকার পর ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সুযোগে আবারও দখল হয়ে যায় অধিকাংশ এলাকা।

গত শনিবার কক্সবাজার সার্কিট হাউসে বাঁকখালী নদী দখল-দূষণমুক্ত করার লক্ষে এক বিশেষ সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন। সভাশেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, বাঁকখালী নদীর দখল-দূষণরোধে হাইকোর্টের রায় মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ দিকে গত ২৪ আগস্ট এই নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণপূর্বক নদীটিকে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে আদালত নদী তীরের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের আদেশ দিয়েছেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা জনস্বার্থমূলক মামলার (নম্বর ৮৩২৫ / ২০১৪) চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কাজী জিনাত হক এবং বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দীকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, আদালতের আদেশ অনুযায়ী বাঁকখালী নদী দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর নির্ধারণ করা হবে নদীর সীমানা। বিআইডব্লিউটিএ কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, নদীর স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সোমবার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। গতকাল অভিযানের প্রথম দিনে শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৫ একরের বেশি জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত