Ajker Patrika

ফেনীতে বন্যার ১ বছর

ঘরহারা ৯৫% পরিবার পুনর্বাসনবঞ্চিত

  • ক্ষতিগ্রস্ত ১,৭১৮ ঘরের মধ্যে সরকারিভাবে মাত্র ১১০টি নির্মাণ।
  • সরকার আমাদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেয়নি: ভুক্তভোগী
  • বরাদ্দ এলে দ্রুত কাজ করা সম্ভব: জেলা প্রশাসক
ফেনী প্রতিনিধি
গত বছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনীতে নতুন করে অনেক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন উপদ্রুত  এলাকার বাসিন্দারা।	ছবি: আজকের পত্রিকা
গত বছরের বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগেই সাম্প্রতিক বন্যায় ফেনীতে নতুন করে অনেক বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন উপদ্রুত এলাকার বাসিন্দারা। ছবি: আজকের পত্রিকা

২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যার স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় ফেনীর মানুষদের। ভয়াবহ সেই বন্যার স্মৃতি মনে করে এখনো অনেকে আঁতকে ওঠেন। রাতভর আতঙ্কে জেগে থাকা, বেঁচে থাকার আর্তি, সাহায্যের জন্য হাহাকার—সে এক বিভীষিকাময় সময় ছিল; যা কখনো ভুলবে না এই জনপদের লোকজন। বন্যাপরবর্তী সরকারি পুনর্বাসন কর্মসূচির অপ্রতুলতা মানুষের সেই কষ্ট বাড়িয়েছে আরও কয়েক গুণ।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, ওই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৭১৮টি ঘরের মধ্যে সরকারিভাবে মাত্র ১১০টি নির্মাণ করা হয়েছে, যা মোট চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ। ফলে ৯৫ শতাংশ পরিবার এখনো ঘরহীন। সম্প্রতি বন্যায় আবার অনেকের বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পরশুরামউপজেলার চিথলিয়া ইউনিয়নের ধনীকুন্ডা এলাকার গৃহিণী নাহিদা সুলতানা বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর হয়েছে স্বামীর বাড়িতে এসেছি। প্রতিবছরই এখানে নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হতে দেখেছি। কিন্তু সেদিনের পানির তীব্র স্রোত সবকিছুকে হার মানিয়েছে। সবচেয়ে বড় ভয় ছিল আমার ছোট ছোট দুই সন্তান ও বয়োবৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে। পুরুষশূন্য পরিবারে তখন প্রতিবেশীরাই দূত হয়ে এসেছিলেন। এখনো ভয়াবহ সেদিনের ঘটনা মনে হলে আঁতকে উঠি।’

ফুলগাজীর ঘনিয়ামোড়া এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার সঙ্গে আমরা একপ্রকার অভ্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু ২০২৪ সালের বন্যার ভয়াবহতা সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। কোনোমতে জান বাঁচিয়ে উঁচু ভবনে আশ্রয় নিয়ে কয়েক দিন ছিলাম। বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্ক না থাকায় বেশি বিপাকে পড়তে হয়েছে।’

সদরের ফাজিলপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ‘গেল বন্যায় ঘর ভেঙেছে, এখনো কেউ খোঁজ নেয়নি। বাঁশ-টিন দিয়ে কোনোভাবে ঘরটি মেরামত করেছিলাম। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়ে। শুনেছি, আমাদের ঘর করে দেবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটির বাস্তবায়ন দেখিনি। এর মধ্যে কিছুদিন আগে আবার বন্যার পানি এসেছিল, এভাবে চললে বসতভিটাও বিলীন হয়ে যাবে।’

ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের পারভীন আক্তার বলেন, ‘২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই ভেঙে যায়। তখন থেকে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকতে হয়। পরে স্থানীয় এক বিত্তশালী কিছু টিন দিলে সেগুলো দিয়ে কোনোমতে ঘর মেরামত করে এখন বসবাস করছি। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’

ফেনী স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগের সদস্য আসাদুজ্জামান দারা বলেন, ‘বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন না করা সম্পূর্ণ সরকারের উদাসীনতা। সরকার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। বেসরকারিভাবে আমরা কিছু করেছি, তবে তা একেবারেই অপ্রতুল।’

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘২৪ এর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১১০টি ঘর নির্মাণের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বেসরকারি উদ্যোগে তৈরি ঘর সমন্বয় করেছি। সরকারের বরাদ্দ এলে দ্রুত কাজ করা সম্ভব। আমাদের হাতে থাকা সামান্য টিন এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত