Ajker Patrika

১৩০০ শিক্ষার্থী স্কুলে যায় ভাঙা সেতু পার হয়ে

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড 
নড়বড়ে কাঠের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নড়বড়ে কাঠের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নড়বড়ে কাঠের সেতু। মাঝ বরাবর একাধিক স্থানে বড় বড় গর্ত। ভাঙা লোহার পাত আর পচা কাঠের ওপর ভর করে প্রতিদিন শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থী ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে বিদ্যালয়ে। এ দৃশ্য চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের ডিডিটি কারখানার ভেতরে অবস্থিত ডিডিটি কারখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভয়ে ভয়ে সেতু পার হচ্ছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম আক্তার। মাঝপথে একটি বড় গর্ত দেখে বসে পড়ে সে। পেছনে থাকা সহপাঠীরা এগিয়ে এলে তাদের সঙ্গে রেলিং ধরে ধীরে ধীরে সেতু পার হয় সে। মরিয়মের মতো আরও ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতু পার হয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অভিভাবকেরা জানান, সীতাকুণ্ডে চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্স নামের রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র কেমিক্যাল কারখানার ভেতরে দুটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৪ সালে কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলেও বিদ্যালয় দুটি চালু রয়েছে। কিন্তু গত ২০ বছরে শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র সেতুটি আর সংস্কার করা হয়নি। ফলে এটি একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে।

সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মনোয়ারা আক্তার ও তাসনিয়া আক্তার উর্মি বলেন, প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে সেতু পার হতে হয়। গত বছর বর্ষার সময় সেতু পার হওয়ার সময় নিচে পড়ে গুরুতর আহত হয় তাদের সহপাঠী লিয়াকত আলী, ফখরুল ইসলাম শামীম এবং নবম শ্রেণির ছাত্র ইমরানুল ইসলাম নোমান।

অভিভাবক রফিক উদ্দিন ছিদ্দিকী বলেন, শিক্ষার্থীদের চলাচলের একমাত্র সেতুটি সংস্কারে তাঁরা একাধিকবার কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গত বছর তিন শিক্ষার্থী পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার পর অভিভাবকেরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে কাঠ দিয়ে সেতুটি আংশিকভাবে মেরামত করেন। কিন্তু বর্ষা এলে কাঠ পচে গিয়ে আবার আগের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে সেতুটি। তিনি বলেন, ‘আমরা একাধিকবার কারখানার দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে গেছি। তারা আশ্বাস দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আজও নেওয়া হয়নি।’

নড়বড়ে কাঠের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নড়বড়ে কাঠের সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে শিশুরা। সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর লোহার পাতগুলো জং ধরে ভেঙে গেছে। কোথাও কোথাও বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। সেসব গর্তে অস্থায়ীভাবে পাতলা কাঠ বসানো হলেও তা নড়বড়ে। শিক্ষার্থীরা চলাচলের সময় কাঠ সরে গিয়ে আবার গর্তের সৃষ্টি হয়। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

জানতে চাইলে ডিডিটি কারখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে শিশুশ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ে। তারা আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে এখানে আসে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সেতুটি এখন পুরোপুরি ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা পড়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে ফেলে। কেউ কেউ মাসের পর মাস ক্লাস করতে পারে না।’

সিসিসি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব কুমার দে বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ে ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এই কাঠের সেতু। অভিভাবকদের বারবার অনুরোধে কিছুদিন পরপরই আমরা কাঠ দিয়ে সেতুর ভাঙা অংশগুলো মেরামত করি। কিন্তু তা বেশি দিন টেকে না। বিশেষ করে বর্ষা এলে কাঠ পচে গিয়ে সেতুটি আবার ভেঙে পড়ে। এটি এখন আর ব্যবহারের উপযোগী নেই।’

এ বিষয়ে চিটাগাং কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিতাই চন্দ্র রায় বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের চলাচলের সেতুটি সংস্কারের বিষয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই কাজ শুরু করা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুঞ্জন, পরিস্থিতি নিয়ে যা বলছে রাজনৈতিক দল ও উপদেষ্টারা

‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন না’ লেখা পোস্টটি সরিয়ে ফেললেন ফয়েজ তৈয়্যব

দেশে ফিরলেন আওয়ামী লীগ নেতা, বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার

পার্লামেন্টে জুতায় বিয়ার ঢেলে পান করে রাজনীতিকে বিদায় জানালেন এমপি

ড. ইউনূস পদত্যাগ করবেন না: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত