Ajker Patrika

ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েই জিডি, দাবি শরীফের

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২: ৩৫
ঊর্ধ্বতনকে জানিয়েই জিডি, দাবি শরীফের

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেন সংস্থাটির চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়ে ১৩টি অভিযোগ দিয়েছেন। এর মধ্যে ৯ নম্বর অভিযোগে সচিব দাবি করেছেন, গত ৩০ জানুয়ারি শরীফ হুমকি পেয়ে থানায় জিডি করার বিষয়ে কাউকে অবহিত করেননি। তবে শরীফের দাবি তিনি জিডি করার আগে দুদকের পরিচালক (প্রশাসন ও মানবসম্পদ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউলকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছিলেন। 

এ সংক্রান্ত একটি অডিও শরীফ আজকের পত্রিকাকে সরবরাহ করেছেন। শরীফের দাবি, কথোপকথনটি তাঁর ও মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউলের। 

ওই অডিওতে শরীফকে বলতে শোনা যায়, ‘স্যার আস্সালামু আলাইকুম। আমি শরীফ পটুয়াখালী থেকে বলছি। রাতে কল করার জন্য দুঃখিত। স্যার আপনার সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলব।।’ 

উত্তরে মনিরুজ্জামান বকাউল বলেন, ‘সমস্যা নেই বলো।’ 

শরীফ বলেন, ‘আমি ছুটিতে চট্টগ্রামে আসলাম স্যার। বাসার নিচে ছিলাম। ওই সময় হাঁটতে ছিলাম। এমন সময় পেট্রোবাংলার পরিচালক (পরিকল্পনা) আইয়ুব খান চৌধুরী (কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক এমডি) আসেন। তাঁর বিরুদ্ধে আমি বেশ কিছু অনিয়মের তদন্ত করেছিলাম। রিপোর্টও দিলাম। আমার বাসা চিনেও না, খোঁজ-খবর নিয়ে বাসায় আসছে। লোকবল নিয়ে এসে, আমাকে হুমকি দেয়-কেন তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করলাম। কেন মামলার সুপারিশ করলাম। দুদককে দেখে নেবে, এই করবে, সেই করবে...। সবার সামনে আমি একেবারে হতভম্ব হয়ে গেছি। ওই সময় বাসার কেয়ারটেকার ছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে শিবলী স্যারকে (দুদকের গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক মীর মোহাম্মদ জয়নাল উদ্দিন শিবলী) ফোন দিলাম। স্যারকে পেলাম না। পরে স্যার আপনাকেও ফোন দিলাম। এখন আমি কি জিডি করব স্যার? 

শরীফের দাবি, সে সময় মনিরুজ্জামান বকাউল বলেন, ‘অবশ্যই আপনি জিডি করবেন। জিডি করবেন না কেন? করে ফেলেন। আগে তো নিউজ দেবেন তাই না?’ 

তখন শরীফ বলেন, ‘আচ্ছা স্যার। আমি জিডি করছি।’ 

এই বিষয়ে জানতে মনিরুজ্জামান বকাউলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আজকের পত্রিকার এই প্রতিবেদক। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘জিডি করার বিষয়ে শরীফ কাউকে অবহিত করেননি বলে দুদক সচিব সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন। কিন্তু শরীফের দাবি, আপনার সঙ্গে জিডির বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা হয়েছিল।’ এর জবাবে মনিরুজ্জামান বকাউল বলেন, ‘তো?’ এরপর তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কাছ থেকে কেন জানতে চান? সরি, আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই।’ 

শরীফ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি জয়নাল উদ্দিন শিবলি স্যার ছাড়াও মনিরুজ্জামান বকাউল স্যারকেও অবহিত করি। পরে পটুয়াখালীর উপপরিচালক মো. ওয়াজেদ আলী গাজী স্যার বরিশালের দুদকের পরিচালককে একটি চিঠিও দেন।’ 

সংবাদ সম্মেলনে সচিবের আরেকটি অভিযোগ, গত বছরের ১৬ জুন শরীফকে পটুয়াখালীতে বদলির পর তিনি এক মাস পর দেরিতে যোগদান করেন। দেরিতে যোগদান করে তিনি কমিশনের আদেশ অবজ্ঞা করেছেন। 

এই অভিযোগের বিষয়ে শরীফ বলেন, ‘৩০ জুন থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ ছাড়া আমি করোনা আক্রান্ত ছিলাম। করোনা আক্রান্তের রিপোর্টসহ আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সরবরাহ করেছি। আমার সঙ্গে বদলির আরও ২০ কর্মকর্তাও একই সঙ্গে যোগদান করেন। আমি করোনা আক্রান্ত হওয়ার ডকুমেন্ট দেওয়ার পরও কেন আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ? এ ছাড়া আইনেও আছে বদলির পর প্রস্তুতির জন্য ৬ দিন। এ ছাড়া ৩০ দিনের মধ্যে যোগদান করতে হবে।’ 

শরীফ জব্দকৃত ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা নিজের হেফাজতে রাখেন বলে দুদক সচিব অভিযোগ করেন। এই বিষয়ে শরীফ বলেন, ‘টাকা জব্দ করেছে র‍্যাব এবং একটি গোয়েন্দা সংস্থা। আমি নিজে কোনো টাকা জব্দ করিনি। ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি টাকা জব্দ করা হয়। মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর ওই বছরের ১৯ মার্চ আমি মামলা করি। দুটি গাড়িতে পাওয়া আলামত, টাকাসহ চট্টগ্রাম দুদক অফিসে নিয়ে আসি। সেই টাকা নিয়ে এসে অফিসের ভল্টে রেখেছি, সেটা আমার অফিস জানে।’ 

পটুয়াখালীতে বদলি হওয়ার আগে আলামত ও টাকাসহ তখনকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে চালানসহ বুঝিয়ে দিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন শরীফ। 

এ ছাড়া প্রভাব খাঁটিয়ে নিজের আত্মীয়স্বজনকে নিয়োগ, দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের নির্দেশিকা অনুসরণ না করে নিজের খেয়াল-খুশি মতো কাজ, ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ বা নো ডেবিট করার আগে কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করাসহ অন্যান্য অভিযোগগুলো ‘মিথ্যা’ বলে দাবি করেছেন শরীফ।

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত