Ajker Patrika

মহিষের শিং থেকে গয়না

সমির মল্লিক ও আকতার হোসেন দীঘিনালা (খাগড়াছড়ি)
মহিষের শিং থেকে গয়না

খাগড়াছড়ির দীঘিনালার নিভৃত পল্লি নন্দেশ্বর কার্বারিপাড়া। সবুজ ক্যানভাসের মতো দেখতে এ গ্রামে বিচিত্র ঐতিহ্যের খোঁজ মিলেছে। গ্রামের এক বাসিন্দা পূর্ণ জীবন চাকমা চার দশক ধরে মহিষের শিং থেকে তৈরি করে আসছেন বাহারি গয়না। এ গয়নার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে তিন পার্বত্য জেলায়।

উপজেলা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নন্দেশ্বর কার্বারিপাড়ায় পূর্ণ জীবন চাকমার বাড়ি। গতকাল সাতসকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বারান্দায় বসে শিং থেকে গয়না প্রস্তুতের কাজ করছেন তিনি। পূর্ণ জীবন জানান, ‘আমার পূর্বপুরুষেরা মহিষের শিং থেকে গয়না তৈরি করত। আমি ৪০ বছর ধরে হাতের চুড়ি, কানের দুল, আংটি ও গলার চন্দ্রা হার তৈরি করছি। কক্সবাজার, টেকনাফ থেকে মহিষের শিং সংগ্রহ করি। প্রতিটি শিংয়ের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা। কেজিতে কিনলে প্রতি কেজি ২৫০ টাকা। গয়না বানানোর জন্য শিং কমপক্ষে ১ ইঞ্চি পুরু হতে হয়।’

সনাতন পদ্ধতিতে এ শিং থেকে হস্তচালিত কাঠের যন্ত্র দিয়ে বিভিন্ন গয়না বানান পূর্ণ। গ্রামের নারীরা চুড়ি, আংটি ও চন্দ্রা হারের আগাম অর্ডার দেন। প্রতি জোড়া চুড়ি বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। আংটি ২৫০ টাকা এবং চন্দ্রা হার বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি তিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকেও অর্ডার পাওয়া যায়।

গয়না বিক্রি করে মাসে ১০-১২ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। পূর্ণ জীবনের সহকারী ধর্মজ্যোতি চাকমা জানান, ‘নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষায় এ কাজ শিখছি। পাশাপাশি মজুরি হিসেবে দৈনিক ৩০০ টাকা পাই। বিবাহিত নারীদের কাছে এসব গয়নার কদর বেশি।’ পূর্ণ চাকমার ছেলে পিন্টু চাকমা জানান, ‘জন্মের পর থেকে বাবাকে দেখছি মহিষের শিং থেকে গয়না বানাতে। এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। অনেকেই মহিষের শিং থেকে বানানো গয়নার ওপর সোনার পাত বসিয়ে অলংকার বানায়। এটি চাকমা সমাজে আভিজাত্যের প্রতীক। যদিও আধুনিক সময়ে কদর কমে আসছে।’

গয়না শিল্পী পূর্ণ জীবন চাকমা জানান, ‘শিং থেকে  গয়না বানানো অত্যন্ত পরিশ্রমের কাজ। এক জোড়া চুড়ি বানাতে দুই ঘণ্টা সময় লাগে। আধুনিক যন্ত্র থাকলে আরও দ্রুত করা যেত। ইদানীং কাঁচামালের সংকটের কারণে চাহিদামতো গয়না বানাতে পারি না। এখন বয়স হয়ে গেছে তাই কাজও কম করতে পারি।’

খাগড়াছড়ির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাংয়ের নির্বাহী পরিচালক ও গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, ‘পাহাড়ি সমাজে মহিষের শিংয়ের গয়না ব্যবহারের ঐতিহ্য রয়েছে। সামন্তীয় প্রভু বা মহাজনেরা একসময় আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে হাতির দাঁতের গয়না ব্যবহার করতেন। হাতির দাঁত ব্যবহারের সামর্থ্য যাঁদের ছিল না, তাঁরা মহিষের শিংয়ের অলংকার ব্যবহার পরতেন। তবে বর্তমানে মহিষের শিংয়ের গয়না খুব কমই দেখা যায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত