Ajker Patrika

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ, যানজটে দুর্ভোগ

কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের লার্নিং সেন্টারের (শিক্ষাকেন্দ্র) শিক্ষকেরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। আজ সোমবার উখিয়া কোর্টবাজার স্টেশনে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ সময় সড়কের উভয় পাশে দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার গাড়িসহ বিপুলসংখ্যক যানবাহন আটকা পড়ে। বিকেল ৫টার দিকে সড়ক থেকে আন্দোলনকারীরা সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আন্দোলনকারীরা তাঁদের দাবি আদায়ের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁরা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরির যে বিধিমালা, তাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকারের কথা রয়েছে। কিন্তু উল্টো চাকরি হারাতে হচ্ছে। এই অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না।

সকাল সাড়ে ৬টার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা উখিয়ার কোর্টবাজার স্টেশনে জড়ো হয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের যান চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।

এ সময় সড়কের দুই দিকে মাইক্রোবাস, সিএনজি অটোরিকশা, দেশি-বিদেশি এনজিও সংস্থার গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক–লরি, পিকআপ ভ্যান আটকা পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

অবরোধের কারণে টেকনাফের দিক থেকে আসা কিছু যানবাহন উল্টো পথে গিয়ে মেরিনড্রাইভ হয়ে ১৫০ কিলোমিটার ঘুরে কক্সবাজারে আসে। বিক্ষোভকারীরা কোর্টবাজার স্টেশন থেকে মেরিনড্রাইভ সংযোগ সড়কও অবরোধ করায় অনেককে দীর্ঘ এ পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে বলে জানা গেছে।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিকেল ৪টার দিকে মরিচ্যা এলাকায় আটকে পড়া একটি পণ্যবাহী ট্রাকের চালক আবদুল হাকিম বলেন, ‘আট ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। কখন সড়কের অবরোধ প্রত্যাহার হবে, জানতে পারছি না।’ গাড়িতে পচনশীল মালামাল রয়েছে জানিয়ে এ চালক বলেন, ‘ঢাকায় যাচ্ছিলাম। এতক্ষণে কুমিল্লার কাছাকাছি পৌঁছার কথা।’

উখিয়ার পালংখালীর মোসলেম উদ্দিন কক্সবাজারে চিকিৎসা ও পারিবারিক একটি মামলাসংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে যাওয়ার জন্য সকাল ৯টায় এসে আটকা পড়েন। প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর তিনি ফেরত যান। তাঁর মতো জরুরি কাজে অনেকে আসা-যাওয়া করতে পারেননি বলে জানা গেছে। অনেকে দাবি আদায়ের নামে সড়ক অবরোধ করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা জানান, ইউনিসেফের লার্নিং সেন্টারগুলো পরিচালনায় তহবিলসংকটের অজুহাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকরিচ্যুত করেছে। এর ফলে অনেকের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর আগে তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহালের আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে তাঁরা আবারও দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছেন বলে জানান।

শিক্ষকদের প্রতিনিধি সাইদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় শিক্ষকদের স্বপদে চাকরিতে বহাল না করে ক্যাম্পে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে দেওয়া হবে না। আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা বর্তমানে ৪ লাখের মতো। এসব আশ্রয়শিবিরে প্রায় চার হাজার শিক্ষাকেন্দ্রে আড়াই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে পাঠদান করা হয়। গত জুন মাসে এসব শিক্ষাকেন্দ্রের বাংলাদেশি ১ হাজার ১৭৯ জন শিক্ষক চাকরিচ্যুত হন। এ শিক্ষকেরা চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, তহবিলসংকটের কারণে আশ্রয়শিবিরের স্থানীয় শিক্ষকদের চাকরির চুক্তি শেষ হয়। শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে সব শিক্ষাকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর ৩ জুলাই শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করে বন্ধ থাকা শিক্ষাকেন্দ্রগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এক মাসের মধ্যে ইউনিসেফ তহবিল সংগ্রহ করতে পারলে শিক্ষকদের চাকরিতে পুনর্বহালের চেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ হয়নি। চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়া শিক্ষকদের বিষয়টি সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক বলেন, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে আশ্রয়শিবিরে ১৫০টি শিক্ষাকেন্দ্র চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে চাকরি হারানো শিক্ষকদের মধ্য থেকে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চাকরি দেওয়া হবে। ৭ আগস্ট আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ইউনিসেফের তহবিলসংকটের কথা জানিয়ে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এটা শুধু ইউনিসেফের নয়, যুক্তরাষ্ট্র ফান্ড বন্ধ করার পর সব ক্ষেত্রে তহবিলসংকট চলছে। ইউনিসেফ চেষ্টা করছে আন্দোলনরত শিক্ষকদের জন্য কিছু করতে। কিন্তু তহবিল সংগ্রহ করতে না পারলে এ সংকট দূর করা সম্ভব নয়।

মিজানুর রহমান আরও বলেন, এভাবে সড়ক অবরোধ করলে জনদুর্ভোগ বাড়বে, শান্তিপূর্ণ উপায়েও আন্দোলন করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

আমরা দখল করি লঞ্চঘাট-বাসস্ট্যান্ড, জামায়াত করে বিশ্ববিদ্যালয়: আলতাফ হোসেন চৌধুরী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত