Ajker Patrika

ভাঙনে বিবর্ণ পারকি, হারাচ্ছে পর্যটক

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম) 
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকতে চলছে ভূমি ক্ষয়। সম্প্রতি তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকতে চলছে ভূমি ক্ষয়। সম্প্রতি তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা

কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের পর ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল পারকি। চট্টগ্রাম শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলায় অবস্থিত এই সৈকতের দীর্ঘ ১৩ কিলোমিটার। পাশে বিশাল ঝাউবাগান থাকা সৈকতটি একসময় পর্যটকে মুখর থাকলেও এখন সেই অবস্থা আর নেই। ভাঙনের কারণে বালু সরে গিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেছে পারকি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ওঠানামার কারণে খালে পরিণত হয়েছে সৈকত। গোড়ার মাটি সরে গিয়ে ঝাউগাছ উপড়ে পড়ছে। পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সৈকতে ঘুরতে আসা স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, অনেকে মাছের ঘেরের পানি বের করতে বাঁধ কেটে দিয়েছিলেন। কেউ কেউ বালু তুলে নিচ্ছেন। ফলে সৃষ্টি হয়েছে বাঁধ ও সৈকতের ভাঙন। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে তীব্র ভূমিক্ষয় দেখা দিয়েছে। টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের তীব্র স্রোতে ঝাউগাছের নিচ থেকে বালু সরে যাওয়ায় ভেঙে গেছে বিভিন্ন এলাকা। হারিয়ে যাচ্ছে সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনকারী ঝাউবন।

উপকূলীয় বন বিভাগ জানায়, আনোয়ারা উপকূল রক্ষার জন্য বন বিভাগ ১৯৯৩-৯৪ এবং ২০০২ সালে পারকি সৈকত ও আশপাশের এলাকায় প্রায় ৮০ হেক্টর জায়গায় ঝাউগাছ লাগায়। তবে গোড়া থেকে বালু সরে যাওয়ার কারণে পাঁচ বছরে পারকির ৫ শতাধিক গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। বর্তমানে একই কারণে হুমকিতে আছে অন্য গাছগুলোও।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কর্ণফুলী টানেল চালুর পর পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পারকি সৈকতের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেলেও তাতে নজর দেওয়া হচ্ছে না। অথচ টানেলের টোল বাড়াতে চট্টগ্রাম শহরের লাগোয়া পারকি সৈকত বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর নুর বলেন, মাছের ঘের ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে পারকি সমুদ্রসৈকতের এই দশা হয়েছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে সৈকতটি। সৈকতের ব্যবসায়ী কাজী জাফর আহমেদ বলেন, ‘ভাঙন রোধে কেউ নেয়নি কোনো পদক্ষেপ। ব্যবসায়ীদের মধ্যে মন্দাভাব বিরাজ করছে। জানি না, ভবিষ্যতে সৈকতের কী হাল হবে। কমতে শুরু করেছে পর্যটক। অনেক পর্যটক সৈকতের দৃশ্য দেখে ফিরে যান।’

এ নিয়ে কথা হলে পারকি ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম জানান, বর্ষা ও বঙ্গোপসাগরে জোয়ারের প্রভাবে ভাঙনের পাশাপাশি সৈকতের আশপাশ থেকে রাতে বালু তুলে পাচার করছে একটি চক্র। এ কারণেও গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাচ্ছে এবং সৈকতে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সৈকত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।

ভাঙন রোধে পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের আনোয়ারার দায়িত্বে থাকা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী বর্ণ হক আজকের পত্রিকাকে জানান, ভাঙনকবলিত এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। সাপমারা খালের মুখ থেকে পারকি সৈকত পর্যন্ত ২ দশমিক ৭ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন রোধে সুপার ডাইক নির্মাণ প্রকল্পের পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পারকি সৈকত সুরক্ষিত হবে।

যোগাযোগ করা হলে আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, পারকি সমুদ্রসৈকত রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিৎকার শুনে ছুটে আসা স্থানীয়রা ধর্ষণের শিকার নারীকেই মারধর করে

বিমানবন্দরের প্রকল্পে ‘অসম’ চুক্তি, স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়েছেন ঢাকায় ইউএই রাষ্ট্রদূত

বন্ধুর সঙ্গে স্ত্রীর গোপন সম্পর্ক, ধর্ষণের অভিযোগ স্বামীর

তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুইছানা হত্যা: প্রধান আসামি মোবারেক গ্রেপ্তার

এনবিআর আন্দোলনের ৬ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত