Ajker Patrika

‘মব’ তৈরি করে কিশোরকে হত্যা: অভিযুক্ত শিক্ষক পলাতক

চট্টগ্রাম সংবাদদাতাফটিকছড়ি সংবাদদাতানিজস্ব প্রতিবেদক
ছেলের বই ও জামাকাপড় হাতে নিয়ে মাহিনের বাবা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছেলের বই ও জামাকাপড় হাতে নিয়ে মাহিনের বাবা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার কাঞ্চননগর ইউনিয়নের সাকর আলি তালুকদার বাড়ির চেইঙ্গার ব্রিজ এলাকায় ‘মব’ সৃষ্টি করে পিটিয়ে স্কুলছাত্রকে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার পর আটক স্থানীয় দুই ব্যক্তিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক নাজিম উদ্দিন পলাতক রয়েছেন।

পুলিশ জানায়, নিহত মাহিনের মা খাদিজা বেগম বাদী হয়ে সুনির্দিষ্ট ৫ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৫-৭ জনকে আসামি করে ফটিকছড়ি থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে নোমান (২২) ও আজাদ (২৩) নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে পিটুনিতে গুরুতর আহত মানিক (১৫) ও রাহাত (১৫) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে এখনো জ্ঞান ফেরেনি গুরুতর আহত রাহাতের।

ছেলে হত্যার বিচার দাবি করে নিহত মাহিনের বাবা মুহাম্মদ লোকমান শনিবার বিকেলে বলেন, স্থানীয় মো. নাজিম উদ্দিন (৪৫), মো. নোমান (২৫), মো. আজাদ হোসেন (২২), মো. তৈয়ব (৩০), মহি উদ্দিন (২৮) চোর বলে অপবাদ দিয়ে মব সৃষ্টি করে। পরে তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয় অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জন।

লোকমান কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘সকলে মিলে আমার নিষ্পাপ একমাত্র ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। আমি বাঁচাতে গেলে আমাকেও তারা মারধর করে। ঘটনার মূল ইন্ধনদাতা নাজিম মাস্টার আমার বোনকে গলা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়।’

মাহিনের ফুফাতো ভাই রায়হান বলেন, ‘নাজিম উদ্দিন একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি একজন মানুষ গড়ার কারিগর। সে মানুষ গড়ার কারিগর হয়ে কেমনে অমানুষের মতো বর্বর আচরণ করতে পারেন। মূলত তাঁর নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে।’

আহত রাহাতের মা রোজি আক্তার মোবাইল ফোনে বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে আমার ছেলের জ্ঞান নেই। তার হাত-পা ভেঙে গেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক জখম হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

ফটিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর আহমদ বলেন, ‘এ ঘটনায় নিহতের মা বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক নাজিম উদ্দিন পলাতক বলে জানান তিনি।

এদিকে আজ দুপুরে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম সানতু। এ সময় তিনি ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দেন মাহিনের পরিবারকে।

নিহত মাহিন ওই এলাকার ব্যবসায়ী মুহাম্মদ লোকমান ও খাদিজা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। কাঞ্চননগর উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। আহত অপর দুজন হলো একই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়া নুরুল ইসলামের ছেলে মানিক (১৫) ও একই পাড়ার মো. ইউসুফের ছেলে রাহাত (১৫)। দুজনেই স্থানীয় হযরত শাহেন শাহ জিয়াউল হক উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র।

প্রসঙ্গত, মাহিন ও তার দুই বন্ধু একজনের আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়ানো শেষে শুক্রবার রাতে সিএনজি অটোরিকশাযোগে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির কাছে সড়কে সেই অটোরিকশাচালক ও দুই বন্ধু রাহাত ও মানিককে বসিয়ে রেখে বাড়িতে বাবার কাছে থেকে ভাড়া আনতে যায় মাহিন। মাহিনের বাড়ি থেকে আসতে একটু দেরি হলে গাড়ি থেকে নেমে হাঁটাহাঁটি করছিল তার দুই বন্ধু। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন যুবক ও মধ্যবয়সী মিলে তাদের ‘চোর চোর’ বলে ধাওয়া করতে থাকে। তারা ধাওয়ার একপর্যায়ে প্রাণভয়ে পাশের নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদে উঠে যায়। এরপর তাদের ধরে এনে চেইঙ্গার ব্রিজের ওপর বেঁধে ‘মব সৃষ্টি’ করে সকাল পর্যন্ত বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে মাহিন ঘটনাস্থলে মারা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত