Ajker Patrika

`পত্রিকায় লেখালেখি করায় অকথ্য নির্যাতন করেছেন প্রদীপ'

কক্সবাজার প্রতিনিধি
`পত্রিকায় লেখালেখি করায় অকথ্য নির্যাতন করেছেন প্রদীপ'

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় আজ বুধবার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। আদালতে এ সময় তাঁরা টেকনাফ থানায় কর্মরত থাকাকালীন বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বিরুদ্ধে নানা নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন। 

আদালতকে নির্যাতিত স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান বলেন, `ওসি প্রদীপের অনিয়ম, নির্যাতন ও দুর্নীতির খবর প্রকাশ করার কারণে আমাকে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল। ঢাকার মিরপুরে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রদীপ আমাকে গ্রেপ্তার করে টেকনাফে নিয়ে আসেন। থানায় এনে অকথ্য নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আমি পানি পান করতে চাইলে প্রদীপ প্যান্টের চেইন খুলে আমার মুখে প্রস্রাব করে দেয় এবং চোখে মরিচের গুঁড়ো ঢেলে দেয়।' 

ফরিদুল মোস্তফা খান জবানবন্দিতে আরও বলেন, `এমন নির্যাতন চালানোর পর ওসি প্রদীপ ইয়াবা, অস্ত্র ও মদের বোতল উদ্ধার দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। প্রায় ১১ মাস জেল খাটার পর সিনহা হত্যার পর আমি ছাড়া পাই।' 

এ ছাড়া টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকার বেবী বেগম ও সালেহ আহমদ একইভাবে ওসি প্রদীপের নির্যাতনের বর্ণনা দেন। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামি হাজির ছিলেন। 

গতকাল বুধবার সকাল সোয়া ১০টায় জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইলের আদালতে মামলার ১৭ নম্বর সাক্ষী হামজালালকে আসামিপক্ষের জেরার মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হয়। পরে আদালত আগামী ১০,১১ ও ১২ অক্টোবর মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। 

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, এ মামলায় সাক্ষীরা গত দুদিন ওসি প্রদীপ টেকনাফে কর্মরত থাকাকালীন যেসব অন্যায়, নির্যাতন ও দুর্নীতি করেছেন তার বর্ণনা দিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। এ পর্যন্ত চার দফায় ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়ার শামলাপুর পুলিশের তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের তৎকালীন ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি এবং টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের পর র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে মামলার ১৫ আসামি কারাগারে রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত