Ajker Patrika

ফর্টিস হাসপাতালের নামে শতকোটি টাকা লোপাট

  • ফর্টিস চেইন হাসপাতালের নাম দেখে এএফসি হেলথকে ঋণ দিয়ে বিপাকে ইবিএল
  • প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির পাওনা সুদাসলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা
  • পুঁজিবাজার থেকেও মোটা অঙ্কের অর্থ তুলে নিয়েছে এএফসি হেলথের দুই প্রতিষ্ঠান
ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ০৫
ফর্টিস হাসপাতালের নামে শতকোটি টাকা লোপাট

ভারতীয় চেইন হসপিটাল ফর্টিস এসকর্টস হার্ট ইনস্টিটিউটের নাম ভাঙিয়ে শতকোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে এএফসি হেলথ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও কুমিল্লায় ‘ফর্টিস’ নামে চারটি শাখা হাসপাতাল দেখিয়ে ব্যাংক থেকে এবং দুটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কারখানা দেখিয়ে শেয়ারবাজার থেকে এই টাকা তুলে নেয়।

এর মধ্যে সব সেবা বন্ধ হয়ে গেলেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারবাজারে থাকা দুই কোম্পানির লেনদেন চলছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত বিনিয়োগকারীরা। আর ব্যাংক চিন্তিত অনাদায়ি ঋণ নিয়ে।

ফর্টিস চেইন হাসপাতালের নাম দেখে এএফসিকে ঋণ দিয়ে বিপাকে পড়া ব্যাংকটির নাম ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল)। হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গত সাত বছরেও শোধ করেনি এএফসি হেলথ লিমিটেড, যা এখন সুদাসলে দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি টাকায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইস্টার্ন ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতের একটি নামকরা হসপিটাল ফর্টিস। এএফসি হেলথের মাধ্যমে দেশে হার্টের চিকিৎসাসেবা চালু করে ফর্টিস। তখন এএফসির এই উদ্যোগকে অনেকে স্বাগত জানায়। চট্টগ্রামে ফর্টিসের স্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণে ২০১৮ সালে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ইবিএল। কিন্তু হাসপাতাল নির্মাণের নামে ঋণ নিলেও অভ্যন্তরীণ নানা জটিলতায় দীর্ঘদিনে হাসপাতাল নির্মাণ করতে পারেনি উদ্যোক্তারা। এতে ব্যাংকের বিনিয়োগ আটকে যায়, যা বর্তমানে সুদাসলে প্রায় ৯০ কোটি টাকা।

পাওনাদার ব্যাংক ও আদালতের তথ্যমতে, ৭২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ঋণখেলাপি হওয়ায় এএফসি হেলথের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর অর্থঋণ মামলা করে ইবিএল আগ্রাবাদ শাখা। এতে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের সঙ্গে এএফসি হেলথের দুই অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড ও অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডকেও বিবাদী করা হয়। মামলায় ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির সাত কর্ণধারের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন অর্থঋণ আদালতের তৎকালীন বিচারক মুজাহিদুর রহমান।

নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন এএফসি হেলথ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জুয়েল খান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম সাইফুর রহমান, পরিচালক মো. আফজাল, মো. জিয়া উদ্দিন, সাইদুল আমিন, মো. শামসুদোহা তাপস এবং মাহবুব আরাব মজুমদার।

ইবিএলের লিগ্যাল কর্মকর্তা বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার আদেশের পর প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারেরা ঋণটি পুনর্গঠনের আবেদন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী শ্রেণীকৃত ঋণ পুনর্গঠন করার সুযোগ নেই। তাই ব্যাংক এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। এ ছাড়া বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার আদেশটি প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করেছেন কর্ণধারেরা। ওই আবেদনে সিকিউরিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা, কুমিল্লা ও খুলনার ১৯১ শতক জমি সংযুক্ত করার আবেদনও করেছেন। আমরা ওই জমির মূল্য পর্যবেক্ষণ করে আদালতে মতামত জানাব।’

এই ঋণ এর আগে দুবার পুনঃ তফসিল করা হলেও ঋণ পরিশোধ করা হয়নি। ব্যক্তিগত সিকিউরিটিতে দেওয়া এই ঋণের কোনো বন্ধকি সম্পত্তিও ব্যাংকের কাছে নেই বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা।

ইস্টার্ন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ দেওয়া হলেও এএফসি হেলথের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে ঢাকার নিকেতন এবং তেজগাঁও-গুলশান লিংক রোডে। এমনকি প্রতিষ্ঠানের সাত কর্ণধারেরও ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে ঢাকার সূত্রাপুর, পুরানা পল্টন, তেজগাঁও, নিকেতন, শ্যামনগর এলাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এএফসি হেলথ লিমিটেড ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম, খুলনা ও কুমিল্লায় টারশিয়ারি লেভেল বিশেষায়িত কার্ডিয়াক কেয়ার চেইন হাসপাতাল পরিচালনা করে। এ ছাড়া যশোরে বেসিক মেডিকেল সেবায় আউটরিচ সেন্টার এবং ময়মনসিংহে মাল্টিডিসিপ্লিনারি হাসপাতাল চালুর উদ্যোগও নিয়েছিল এএফসি। কিন্তু এরই মধ্যে এএফসির সব প্রকল্প কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রামের শেভরন হসপিটালের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে শেভরনের দুটি ফ্লোর (৮ ও ৯ তলা) ভাড়া নিয়ে ফর্টিস হার্ট ইনস্টিটিউট নামে বিশেষায়িত কার্ডিয়াক কেয়ার চালু করে এএফসি হেলথ। ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা নিয়মিত সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও চিকিৎসক ও রোগীর তেমন সাড়া মেলেনি। হাসপাতালের জন্য কিছু যন্ত্রপাতি কিনে অর্থ ব্যয় করলেও ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা ছিল। ফলে ২০২১ সালে হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি প্রতিষ্ঠানটির কাছে ভাড়া বাবদ শেভরনেরও প্রায় ২ কোটি টাকা পাওনা বাকি আছে এএফসি হেলথের কাছে।

এদিকে দেশের তিন বিভাগীয় শহরে ফর্টিস হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও শেয়ারবাজারে রয়েছে এফসি হেলথের দুই প্রতিষ্ঠান।

এর মধ্যে একটি হলো এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড এবং অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যমতে, এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেডের মোট শেয়ার ১১ কোটি ৫২ লাখ ১৬ হাজার ২০০। এর মধ্যে পরিচালকদের কাছে ২৭ দশমিক ৮৪, আর্থিক সংস্থার কাছে ৩৩ দশমিক ১৮ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার ৯ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি বাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

অপর কোম্পানি অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেডের মোট শেয়ার ২৩ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার ৫৮০টি। এর মধ্যে পরিচালকদের হাতে ১২ দশমিক ৪, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাতে আছে ২০ দশমিক ১৭, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে শূন্য দশমিক ২৭ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬৭ দশমিক ৫২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গতকাল ৮ দশমিক ৩০ টাকায় কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। অ্যাকটিভ ফাইন বাজারে আসে ২০১০ সালে।

২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অনুমোদনের জন্য এএফসি হেলথ লিমিটেড প্রসপেক্টাসে মিথ্যা বিবৃতি ও ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে বলে অভিযোগ আনে ভারতের ফর্টিস এসকর্টস।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (এসইসি) পাঠানো এক চিঠিতে ফর্টিস অভিযোগ করে, প্রসপেক্টাসে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদানের মাধ্যমে এএফসি হেলথকেয়ার বিনিয়োগকারী ও জনসাধারণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, এএফসি হেলথকেয়ার খুলনা ও চট্টগ্রামে কার্ডিয়াক ও বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা দিতে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়। তবে এএফসি ওই চুক্তি ভঙ্গ করে কুমিল্লা ও যশোর জেলায় তাদের হাসপাতালেও ফর্টিস ও এসকর্টস ব্র্যান্ড ব্যবহার করছে, যা চুক্তির পরিপন্থী। এ ছাড়া এএফসি হেলথকেয়ারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া পরিশোধ না করার অভিযোগ আনা হয় ওই চিঠিতে।

এর এক মাস আগে ১৬ সেপ্টেম্বর এএফসি হেলথকেয়ারকে পুঁজিবাজার থেকে অভিহিত মূল্যে ১৭ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেয় এসইসি।

এএফসি হেলথ লিমিটেডের পরিচালক সাইদুল আমিন বলেন, ‘হসপিটালের প্রজেক্টগুলোতে বিনিয়োগের পর প্রফিটে আসতে সময়ের প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোভিডের কারণে দীর্ঘদিন হাসপাতালের কার্যক্রম স্থবির থাকায় আমাদের লোকসান হয়েছে।’

সাইদুল আমিন আরও বলেন, ‘ইবিএলের ঋণটি পুনর্গঠনের চেষ্টা করছি। দুটি কারখানার একটিতে স্বল্প পরিমাণে উৎপাদন চলছে। কারখানা দুটি পুরোদমে চালু করতে আমরা বিনিয়োগ খুঁজছি।’ ফর্টিস নাম দিয়ে শুরু করা হাসপাতালগুলোর মধ্যে কুমিল্লার হাসপাতালটি এএফসি নামে চলছে বলেও দাবি করেন তিনি।

শেয়ারবাজারে লেনদেন চললেও কারখানার উৎপাদন বন্ধ

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের দিকে খুলনার বটিয়াঘাটায় কৃষিজমির ওপর নির্মাণ করা হয় এএফসি অ্যাগ্রো বায়োটেক লিমিটেড। এরপর ২০১৬-১৭ সালের দিকে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ওষুধের কাঁচামাল উৎপাদিত হয়। তবে করোনার পর থেকে কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

মুন্সিগঞ্জে অবস্থিত গ্রুপটির অপর কারখানা অ্যাকটিভ ফাইন কেমিক্যালসে করোনার আগে প্রায় ৩১টি প্রোডাক্ট তৈরি হতো। তবে দুই বছর ধরে কারখানার উৎপাদন অনেকটা বন্ধ।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অ্যাকটিভ ফাইনের কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স ম্যানেজার বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে কারখানার অবস্থা আগের চেয়ে খারাপ। তবে কারখানা একেবারে বন্ধ হয়নি। এখনো কিছু কিছু প্রোডাক্ট প্রোডাকশন হচ্ছে এবং মার্কেটে যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আইনি স্বীকৃতিসহ ১৫ দফা দাবিতে রাজধানীতে বাকপ্রতিবন্ধীদের অবস্থান কর্মসূচি-র‍্যালি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পল্টন এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু করে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পল্টন এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু করে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আইনগত স্বীকৃতি ও সুরক্ষাসহ ১৫ দফা দাবি নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা। আজ সোমবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয় বধির ঐক্য পরিষদ ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। এর আগে পল্টন এলাকা থেকে একটি মিছিল শুরু করে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।

লিখিত বক্তব্যে শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীরা জানান, প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন ২০১৩-এ শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী শব্দের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত ‘বধির’ ব্যবহার করতে হবে। বাকপ্রতিবন্ধীদের মালিকানাধীন সম্পত্তি রক্ষায় বিরোধ মামলার জন্য ৫০ শতাংশ খরচ মওকুফ করতে হবে। জাতীয় সংসদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মোট পাঁচ শতাংশ সংরক্ষিত আসন বরাদ্দ এবং শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথকভাবে দুই শতাংশ কোটা নিশ্চিত করতে হবে।

তাঁরা আরও জানান, শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক আবাসিক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও কার্যকরীকরণ নিশ্চিত এবং শিক্ষকদের জন্য ইশারা ভাষায় প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। এছাড়া প্রশিক্ষণ ও শিক্ষক নিয়োগ, আর্থিক ভাতা ও সহায়তা, কর্মসংস্থান ও কোটা, বাসস্থান ও ভূমি সংক্রান্ত সুবিধাসহ ১৫ দাবি জানান তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রোগী সেজে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চুরি, সাত নারী গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
গ্রেপ্তারকৃত সাত নারী। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তারকৃত সাত নারী। ছবি: আজকের পত্রিকা

রোগী সেজে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চুরির ঘটনায় সাত নারীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা সবাই জামালপুর ও বগুড়ার সারিয়াকান্দি এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিনিয়ত সদর হাসপাতালে লাইনে দাঁড়ানো রোগীদের টাকা, গয়না ও মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটছে। গতকাল রোববার দুপুরে কুলসুমা বেগম নামে এক নারী ডাক্তার দেখানোর জন্য টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়ান। এ সময় তাঁর ব্যাগ থেকে ছয় হাজার টাকা চুরির করার সময় হাতেনাতে এক নারীকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রাতে শহরের বিভিন্ন বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ছয় নারীকে আটক করা হয়। জড়িত সাত নারীই সদর হাসপাতালে রোগী সেজে চুরির সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাঁরা একই এলাকায় দুই থেকে তিন মাসের বেশি অবস্থান করেন না।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মোন্নাফ বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃত সবাই চোর চক্রের সদস্য। তারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী সেজে চুরিসহ নানা অপরাধ করে থাকে। তারা কয়েক দিন আগে এই শহরে বাসাভাড়া নিয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন স্থানে একই কাজ করে আসছিল এই চক্র। এই চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
ড. নাজমুল করিম খান। ছবি: আজকের পত্রিকা
ড. নাজমুল করিম খান। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) সাবেক কমিশনার নাজমুল করিম খানকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সরকার। গতকাল রোববার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ-১ শাখা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নাজমুল করিমকে জনস্বার্থে সরকারি কাজ থেকে বিরত রাখা আবশ্যক ও সমীচীন হওয়ায় সরকারি চাকরি আইনের ৩৯ (১) ধারা অনুযায়ী তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত থাকবেন এবং বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

নাজমুল করিমকে কেন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে তা জানানো হয়নি।

তবে রাস্তা বন্ধ করে এই পুলিশ কর্মকর্তার অফিসে যাতায়াত নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর গত ১ সেপ্টেম্বর জিএমপি কমিশনার পদ থেকে প্রত্যাহার করে তাঁকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।

সরকারি চাকরি আইনের ৩৯ (১) ধারার বিধান অনুযায়ী কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তাব করা হলে বা বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হলে তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা যায়।

নাজমুল করিমকে বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা প্রজ্ঞাপনে তা জানানো হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৭
ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া
ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া

পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে সকালে দুর্বৃত্তদের গুলিতে তারিক সাইফ মামুন (৫৫) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে জানা যায়, মামুনের বাবার নাম এস এম ইকবাল। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুরের সদর উপজেলার মোবারক কলোনি এলাকায়।

ওই ব্যক্তি পেশায় ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী। তবে পুলিশ বলছে, ওই ব্যক্তি চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, ‘গুলিতে নিহত ব্যক্তিটি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন। তিনি ইমন-মামুন গ্রুপের মামুন।’

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ঢালিউড নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ভাই সাইদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলায় ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী গ্রুপ ইমন-মামুন জড়িত। এই গ্রুপের ইমন বর্তমানে পলাতক। মামুন আজ মামলায় হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন।

ঘটনার বর্ণনায় ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ জানান, আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের সামনে গোলাগুলি হয়। গুলির শব্দ শুনে হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে এসে তিনি এক ব্যক্তিকে রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে হাসপাতালে ভেতরে আনা হয়। অবস্থার অবনতি দেখে সেখান থেকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক হাসপাতালে আনার পর মৃত ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেলে নিহতের পূর্বপরিচিত দাবি করা জনৈক ফাইজুল হক অপু জানান, সকালে তারিক সাইফ মামুনের ফোন নম্বর থেকে তাঁকে কল করে ঘটনাটি জানানো হয়। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেলে এসে পরিচয় শনাক্ত করেন।

ঢামেকে মামুনের স্ত্রী দীপা জানান, মিরপুরে মামুনের গার্মেন্টস ব্যবসা রয়েছে। দুই মেয়েকে নিয়ে আফতাবনগরের এফ-ব্লকে থাকেন তাঁরা। তিনি আরও জানান, দুই দিন পর আজ সকাল ৯টার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন মামুন। জজকোর্টে একটি মামলার হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন। এরপরই ফোনে তাঁর মৃত্যুর খবর আসে।

দীপা বলেন, ‘কারা আমার স্বামীকে খুন করছে জানি না।’ এ সময় ‘ইমন’ নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ইমন ছাড়া কেউ এই কাজ করে নাই। কয়েক দিন আগে ইমনই লোক দিয়ে মামুনকে মারধর করেছিল।’

তবে ইমনের সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে তাৎক্ষণিকভাবে রাজি হননি দীপা।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত