শিক্ষাঙ্গনে আবার অস্থিরতা
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও চবি সংবাদদাতা
দেরিতে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা নিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে বাসার দারোয়ানের বাগ্বিতণ্ডা। এরপর দারোয়ানের এক থাপ্পড়। এর জেরেই ধারালো অস্ত্র, ইট, পাথর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামবাসী আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। গত শনিবার দিবাগত রাত এবং গতকাল রোববার দিনের বেলা দুই দফা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রো-ভিসি, এক প্রক্টরসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গ্রামবাসীর মধ্যে আহত হয়েছেন কয়েকজন।
গতকাল রাত ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে ছিল। এতে ক্যাম্পাস এবং আশপাশের এলাকায় পরিস্থিতি ছিল থমথমে। যেকোনো সময় আরও সংঘাতের আশঙ্কা করছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় ঘটনাস্থল এবং আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। স্থগিত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের সব পরীক্ষা।
সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর নির্লিপ্ততার কারণে আহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সংঘর্ষ শুরুর পর বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মাঝখানের এই সময়টাতে তাঁদের অনুপস্থিতির বিষয়টি দুঃখজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় চলা সংঘাতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সংঘাতের ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির এক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি।
দুই প্রো-ভিসি, প্রক্টরসহ আহত ৩০০ গ্রামবাসীর হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ও প্রো-ভিসি (একাডেমিক) শামীম উদ্দিন খান এবং প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মো. হায়দার আরিফও আহত হন।
দুই দফায় হামলার ঘটনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাত থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ চট্টগ্রাম জেলাধীন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চমেক হাসপাতালে ৭৭ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ৪৩ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গুরুতর আহত চবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম রহমানকে ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ তথ্যমতে, নাইমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আহতদের অধিকাংশ চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদের সুচিকিৎসায়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। আমাদের প্রায় ৭০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।’
সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রামবাসীর কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা চমেক হাসপাতালে এ ধরনের কাউকে আনা হয়নি। তবে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, গ্রামবাসীর মধ্যে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের আঘাত গুরুতর নয়।
ঘটনার শুরু যেভাবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। দেরি হওয়ায় বাসার গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানান দারোয়ান। এ নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করায় ওই ছাত্রীকে থাপ্পড় মারেন দারোয়ান। তখন কয়েকজন সহপাঠীকে ফোন করে বিষয়টি জানান ওই ছাত্রী। এরপর সহপাঠীরা আসেন এবং দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে অন্য শিক্ষার্থীরাও সেখানে জড়ো হন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধাওয়া করলে স্থানীয়রা একত্র হয়ে ইটপাটকেল মারতে শুরু করেন। এভাবে রাত ১২টার দিকে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে উভয় পক্ষে। সংঘর্ষ চলে রাত ৪টা পর্যন্ত।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, ‘বাসার গেট রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে বন্ধ হয়। কাজের কারণে ফিরতে একটু দেরি হয়। আমি অনেকবার অনুরোধ করেছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান খোলেনি। পরে গেট খুলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে দুবার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থী সাকিব মাহমুদ জানান, স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের চারদিক থেকে ঘিরে তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, রাতে হামলার সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। হামলা করার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এটা করা হয়। এ সময় পুলিশের দুটি, নিরাপত্তার বাহিনীর একটি এবং প্রক্টরিয়াল বডির একটি—মোট চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে স্থানীয়রা।
প্রক্টর তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও (পুলিশ) পর্যাপ্ত ছিল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। পরে শেষ রাতের দিকে সেনাবাহিনী এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এরপর গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবার উত্তেজনা দেখা দেয় উভয় পক্ষে। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন প্রো-ভিসি মো. কামাল উদ্দিনসহ শিক্ষক ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে আবার শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় অধ্যাপক কামাল উদ্দিনসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এরপর ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় গ্রামবাসী। সংঘর্ষ বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলার পর ঘটনাস্থলে আসেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কয়েক শ শিক্ষার্থী এরই মধ্যে আহত হন।
এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীতে থাকা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলকে ফোন করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলা আলোচনায় রয়েছেন বলে জানান।
একই বিষয়ে হাটহাজারী থানার ওসি আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।’
প্রো-ভিসির কান্না
গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রো-ভিসি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি তুলনামূলক ভালো আছি। আমার ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি আহত। আমরা এখন পর্যন্ত আর্মি-বিজিবির কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। প্রত্যেক ছাত্রকে তারা দা দিয়ে কোপাচ্ছে। এটা কোন জগতে আছি আমরা। আপনারা আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন।’
অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হেলমেট পরে আমাদের ছাত্রদের মারতেছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে কথা বলেছি, কিন্তু এখনো আমাদের পাশে কেউ নেই।’
প্রশাসনের ১৪৪ ধারা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় বেলা দুইটায়। এরপরও ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। ১৪৪ ধারা জারির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্ব দিকের রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে সব ধরনের সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র এবং সব ধরনের দেশীয় অস্ত্র বহনসহ এসব এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান বা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো।
বিএনপি নেতা বহিষ্কার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাশের জোবরা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় ‘উসকানি’ ও শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়ায় অভিযোগে বিএনপি নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উদয় কুসুম বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাঁর বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ২ নম্বর গেট এলাকায়।
পরীক্ষা স্থগিত
সংঘর্ষের কারণে গতকালের সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইভাবে আজ সোমবারের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান চবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমদ।
দেরিতে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা নিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে বাসার দারোয়ানের বাগ্বিতণ্ডা। এরপর দারোয়ানের এক থাপ্পড়। এর জেরেই ধারালো অস্ত্র, ইট, পাথর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামবাসী আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। গত শনিবার দিবাগত রাত এবং গতকাল রোববার দিনের বেলা দুই দফা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রো-ভিসি, এক প্রক্টরসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গ্রামবাসীর মধ্যে আহত হয়েছেন কয়েকজন।
গতকাল রাত ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে ছিল। এতে ক্যাম্পাস এবং আশপাশের এলাকায় পরিস্থিতি ছিল থমথমে। যেকোনো সময় আরও সংঘাতের আশঙ্কা করছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় ঘটনাস্থল এবং আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। স্থগিত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের সব পরীক্ষা।
সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর নির্লিপ্ততার কারণে আহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সংঘর্ষ শুরুর পর বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মাঝখানের এই সময়টাতে তাঁদের অনুপস্থিতির বিষয়টি দুঃখজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় চলা সংঘাতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সংঘাতের ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির এক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি।
দুই প্রো-ভিসি, প্রক্টরসহ আহত ৩০০ গ্রামবাসীর হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ও প্রো-ভিসি (একাডেমিক) শামীম উদ্দিন খান এবং প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মো. হায়দার আরিফও আহত হন।
দুই দফায় হামলার ঘটনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাত থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ চট্টগ্রাম জেলাধীন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চমেক হাসপাতালে ৭৭ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ৪৩ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গুরুতর আহত চবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম রহমানকে ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ তথ্যমতে, নাইমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আহতদের অধিকাংশ চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদের সুচিকিৎসায়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। আমাদের প্রায় ৭০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।’
সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রামবাসীর কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা চমেক হাসপাতালে এ ধরনের কাউকে আনা হয়নি। তবে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, গ্রামবাসীর মধ্যে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের আঘাত গুরুতর নয়।
ঘটনার শুরু যেভাবে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। দেরি হওয়ায় বাসার গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানান দারোয়ান। এ নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করায় ওই ছাত্রীকে থাপ্পড় মারেন দারোয়ান। তখন কয়েকজন সহপাঠীকে ফোন করে বিষয়টি জানান ওই ছাত্রী। এরপর সহপাঠীরা আসেন এবং দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে অন্য শিক্ষার্থীরাও সেখানে জড়ো হন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধাওয়া করলে স্থানীয়রা একত্র হয়ে ইটপাটকেল মারতে শুরু করেন। এভাবে রাত ১২টার দিকে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে উভয় পক্ষে। সংঘর্ষ চলে রাত ৪টা পর্যন্ত।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, ‘বাসার গেট রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে বন্ধ হয়। কাজের কারণে ফিরতে একটু দেরি হয়। আমি অনেকবার অনুরোধ করেছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান খোলেনি। পরে গেট খুলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে দুবার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থী সাকিব মাহমুদ জানান, স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের চারদিক থেকে ঘিরে তাঁদের ওপর হামলা চালায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, রাতে হামলার সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। হামলা করার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এটা করা হয়। এ সময় পুলিশের দুটি, নিরাপত্তার বাহিনীর একটি এবং প্রক্টরিয়াল বডির একটি—মোট চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে স্থানীয়রা।
প্রক্টর তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও (পুলিশ) পর্যাপ্ত ছিল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। পরে শেষ রাতের দিকে সেনাবাহিনী এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এরপর গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবার উত্তেজনা দেখা দেয় উভয় পক্ষে। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন প্রো-ভিসি মো. কামাল উদ্দিনসহ শিক্ষক ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে আবার শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় অধ্যাপক কামাল উদ্দিনসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এরপর ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় গ্রামবাসী। সংঘর্ষ বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলার পর ঘটনাস্থলে আসেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কয়েক শ শিক্ষার্থী এরই মধ্যে আহত হন।
এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীতে থাকা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলকে ফোন করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলা আলোচনায় রয়েছেন বলে জানান।
একই বিষয়ে হাটহাজারী থানার ওসি আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।’
প্রো-ভিসির কান্না
গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রো-ভিসি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি তুলনামূলক ভালো আছি। আমার ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি আহত। আমরা এখন পর্যন্ত আর্মি-বিজিবির কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। প্রত্যেক ছাত্রকে তারা দা দিয়ে কোপাচ্ছে। এটা কোন জগতে আছি আমরা। আপনারা আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন।’
অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হেলমেট পরে আমাদের ছাত্রদের মারতেছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে কথা বলেছি, কিন্তু এখনো আমাদের পাশে কেউ নেই।’
প্রশাসনের ১৪৪ ধারা
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় বেলা দুইটায়। এরপরও ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। ১৪৪ ধারা জারির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্ব দিকের রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে সব ধরনের সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র এবং সব ধরনের দেশীয় অস্ত্র বহনসহ এসব এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান বা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো।
বিএনপি নেতা বহিষ্কার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাশের জোবরা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় ‘উসকানি’ ও শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়ায় অভিযোগে বিএনপি নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উদয় কুসুম বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাঁর বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ২ নম্বর গেট এলাকায়।
পরীক্ষা স্থগিত
সংঘর্ষের কারণে গতকালের সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইভাবে আজ সোমবারের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান চবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমদ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে এম ফজলুল হক ভূঁইয়াকে বেলা ২টার মধ্যে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়াসহ ছয় দফা দাবি আদায়ে আলটিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবনের সামনে আমতলায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এ এইচ এম হিমেল...
১৫ মিনিট আগে‘পরিকল্পিত বনায়ন করি, সবুজ বাংলাদেশ গড়ি’—এ প্রতিপাদ্যে নোয়াখালীতে সাত দিনব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করা হয়েছে। মেলায় ফলদ, বনজ, ঔষধিসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১৫টি স্টল দেওয়া হয়। পরে বৃক্ষরোপণ, অংশীজনদের মাঝে চেক বিতরণ ও শিক্ষার্থীদের মাঝে গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে।
২২ মিনিট আগেভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মো. তানজিলসহ পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন ভোলা সদর উপজেলার উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের এক নেতা। তানজিল ওই মামলার ৪ নম্বর আসামি।
৩৬ মিনিট আগেমাগুরা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের ছোট ভাই ও মাগুরা পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জামান হিসামকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার ভোর ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা-পুলিশের একটি দল স্থানীয় রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
২ ঘণ্টা আগে