Ajker Patrika

শিক্ষাঙ্গনে আবার অস্থিরতা

ছাত্রীকে এক থাপ্পড়ে রণক্ষেত্র চবি এলাকা

  • শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সাড়ে ৯ ঘণ্টার সংঘর্ষ
  • দুই প্রো-ভিসিসহ আহত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী
  • ১৪৪ ধারা জারি, সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও চবি সংবাদদাতা 
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেরিতে বাসায় প্রবেশের চেষ্টা নিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে বাসার দারোয়ানের বাগ্‌বিতণ্ডা। এরপর দারোয়ানের এক থাপ্পড়। এর জেরেই ধারালো অস্ত্র, ইট, পাথর ও লাঠিসোঁটা নিয়ে গ্রামবাসী আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। গত শনিবার দিবাগত রাত এবং গতকাল রোববার দিনের বেলা দুই দফা সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রো-ভিসি, এক প্রক্টরসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গ্রামবাসীর মধ্যে আহত হয়েছেন কয়েকজন।

গতকাল রাত ৯টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে ছিল। এতে ক্যাম্পাস এবং আশপাশের এলাকায় পরিস্থিতি ছিল থমথমে। যেকোনো সময় আরও সংঘাতের আশঙ্কা করছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় ঘটনাস্থল এবং আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। স্থগিত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের সব পরীক্ষা।

সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর নির্লিপ্ততার কারণে আহতের সংখ্যা বেশি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সংঘর্ষ শুরুর পর বিকেল ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। মাঝখানের এই সময়টাতে তাঁদের অনুপস্থিতির বিষয়টি দুঃখজনক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় চলা সংঘাতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। সংঘাতের ঘটনায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিএনপির এক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি।

দুই প্রো-ভিসি, প্রক্টরসহ আহত ৩০০ গ্রামবাসীর হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন ও প্রো-ভিসি (একাডেমিক) শামীম উদ্দিন খান এবং প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মো. হায়দার আরিফও আহত হন।

দুই দফায় হামলার ঘটনায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার রাত থেকে গতকাল রাত পর্যন্ত আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ চট্টগ্রাম জেলাধীন বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চমেক হাসপাতালে ৭৭ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ৪৩ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গুরুতর আহত চবি ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম রহমানকে ন্যাশনাল হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সর্বশেষ তথ্যমতে, নাইমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, ‘আহতদের অধিকাংশ চমেক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদের সুচিকিৎসায়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘আহতের সংখ্যা তিন শতাধিক। আমাদের প্রায় ৭০ জন কর্মী আহত হয়েছেন।’

সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রামবাসীর কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেলেও হাটহাজারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা চমেক হাসপাতালে এ ধরনের কাউকে আনা হয়নি। তবে স্থানীয় কয়েকজন জানিয়েছেন, গ্রামবাসীর মধ্যে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের আঘাত গুরুতর নয়।

ঘটনার শুরু যেভাবে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফেরেন। দেরি হওয়ায় বাসার গেট খুলতে অস্বীকৃতি জানান দারোয়ান। এ নিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি করায় ওই ছাত্রীকে থাপ্পড় মারেন দারোয়ান। তখন কয়েকজন সহপাঠীকে ফোন করে বিষয়টি জানান ওই ছাত্রী। এরপর সহপাঠীরা আসেন এবং দারোয়ানের ওপর চড়াও হন। খবরটি ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে অন্য শিক্ষার্থীরাও সেখানে জড়ো হন। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দারোয়ানকে ধাওয়া করলে স্থানীয়রা একত্র হয়ে ইটপাটকেল মারতে শুরু করেন। এভাবে রাত ১২টার দিকে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে উভয় পক্ষে। সংঘর্ষ চলে রাত ৪টা পর্যন্ত।

ভুক্তভোগী ছাত্রীর অভিযোগ, ‘বাসার গেট রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে বন্ধ হয়। কাজের কারণে ফিরতে একটু দেরি হয়। আমি অনেকবার অনুরোধ করেছি, রুমমেটরা অনুরোধ করেছে, কিন্তু দারোয়ান খোলেনি। পরে গেট খুলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে এবং ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে দুবার ধাক্কা দেয়। জোর করে ঢুকতে চাইলে সে আমাকে লাথি-থাপ্পড় মারে।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত শিক্ষার্থী সাকিব মাহমুদ জানান, স্থানীয়রা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের চারদিক থেকে ঘিরে তাঁদের ওপর হামলা চালায়।

শিক্ষার্থীরা জানান, রাতে হামলার সময় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। হামলা করার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এটা করা হয়। এ সময় পুলিশের দুটি, নিরাপত্তার বাহিনীর একটি এবং প্রক্টরিয়াল বডির একটি—মোট চারটি গাড়ি ভাঙচুর করে স্থানীয়রা।

প্রক্টর তানভীর হায়দার আরিফ বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও (পুলিশ) পর্যাপ্ত ছিল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল। পরে শেষ রাতের দিকে সেনাবাহিনী এলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

এরপর গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবার উত্তেজনা দেখা দেয় উভয় পক্ষে। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে আলোচনা করছিলেন প্রো-ভিসি মো. কামাল উদ্দিনসহ শিক্ষক ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। কিন্তু আলোচনা ব্যর্থ হলে আবার শুরু হয় সংঘর্ষ। এ সময় অধ্যাপক কামাল উদ্দিনসহ কয়েকজন শিক্ষক আহত হন। এরপর ব্যাপকভাবে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয় গ্রামবাসী। সংঘর্ষ বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলার পর ঘটনাস্থলে আসেন যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। কয়েক শ শিক্ষার্থী এরই মধ্যে আহত হন।

এ বিষয়ে যৌথ বাহিনীতে থাকা চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেলকে ফোন করলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলা আলোচনায় রয়েছেন বলে জানান।

একই বিষয়ে হাটহাজারী থানার ওসি আবু কাওসার মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।’

প্রো-ভিসির কান্না

গতকাল বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে শিক্ষার্থীদের অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন প্রো-ভিসি অধ্যাপক কামাল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি তুলনামূলক ভালো আছি। আমার ছাত্ররা সবচেয়ে বেশি আহত। আমরা এখন পর্যন্ত আর্মি-বিজিবির কোনো সাহায্য পাচ্ছি না। প্রত্যেক ছাত্রকে তারা দা দিয়ে কোপাচ্ছে। এটা কোন জগতে আছি আমরা। আপনারা আমাদের ছাত্রদের উদ্ধার করুন।’

অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগের ক্যাডাররা হেলমেট পরে আমাদের ছাত্রদের মারতেছে। আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে কথা বলেছি, কিন্তু এখনো আমাদের পাশে কেউ নেই।’

প্রশাসনের ১৪৪ ধারা

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় বেলা দুইটায়। এরপরও ৪টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। ১৪৪ ধারা জারির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্ব দিকের রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে সব ধরনের সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র এবং সব ধরনের দেশীয় অস্ত্র বহনসহ এসব এলাকায় পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান বা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো।

বিএনপি নেতা বহিষ্কার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পাশের জোবরা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনায় ‘উসকানি’ ও শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেওয়ায় অভিযোগে বিএনপি নেতা উদয় কুসুম বড়ুয়াকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উদয় কুসুম বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। তাঁর বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন ২ নম্বর গেট এলাকায়।

পরীক্ষা স্থগিত

সংঘর্ষের কারণে গতকালের সব পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একইভাবে আজ সোমবারের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে বলে জানান চবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতির জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে, বিএনপির হুঁশিয়ারি

রাজধানীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যশোরের বিএনপি নেতা নিহত

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে আ.লীগ কর্মীরা নিরাপদে থাকবে’

সোনার দাম আরও কমে দুই লাখের ঘরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মনের আশা পূরণে ফাতেমা রা‌নী তীর্থোৎসবে মোমবাতি হাতে হাজারো ভক্ত

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) প্রতিনিধি 
প্রায় ৩০ হাজার তীর্থযাত্রী হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দুই কিলোমিটারের বেশি আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রায় ৩০ হাজার তীর্থযাত্রী হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দুই কিলোমিটারের বেশি আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় ৩০ হাজার তীর্থযাত্রী হাতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দুই কিলোমিটারের বেশি আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ পাড়ি দিলেন। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল—‘মা মারিয়া’র প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁর আশীর্বাদ প্রার্থনা করা।

বৃহস্পতিবার রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত সাধু লিওর খ্রিষ্টধর্ম পল্লিতে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিনব্যাপী ‘ফাতেমা রানী তীর্থোৎসবের’ বর্ণাঢ্য আলোক শোভাযাত্রা। আজ (শুক্রবার) দুপুরে মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে এ বছরের তীর্থোৎসব। এই উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ বিদেশ থেকেও রোমান ক্যাথলিক তীর্থযাত্রীরা অংশ নেন।

শেরপুর-২
শেরপুর-২

পবিত্র খ্রিস্টযোগের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় তীর্থোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পরে রাত ৮টায় আলোক শোভাযাত্রা, ১১টায় মা মারিয়ার মূর্তিকে সামনে রেখে বিশাল প্যান্ডেলে আরাধনা এবং রাত ১২টায় নিরাময় অনুষ্ঠান ও নিশি জাগরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় প্রথম দিনের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। শুক্রবার সকাল ৮টায় জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০টায় মহাখ্রিষ্টযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের তীর্থোৎসব।

প্রধান অতিথি হিসেবে এবারের উৎসব উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত কেভিন এস র‌্যান্ডেল। এবারের তীর্থের মূল সুর ছিল—‘আশার তীর্থযাত্রী: ফাতেমা রানী মা মারিয়া, বারমারী।’

রাজশাহী থেকে আগত তীর্থযাত্রী রোজিনা চাম্বুগং বলেন, ‘এখানে ভক্তরা মনের আশা পূরণের জন্য এবং অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করেন। এতে তাঁদের মনোবাসনা পূরণ হয়।’

খাগড়াছড়ি থেকে আসা জুয়েল ত্রিপুরা বলেন, ‘আমি প্রথমবারের মতো এখানে এসেছি। এসে খুব ভালো লাগছে।’

মুক্তাগাছা থেকে আসা কারিশমা চাম্বুগং বলেন, ‘মারিয়ার কাছে এলে মনে এক ধরনের শান্তি পাই। আমরা এখানে প্রার্থনা করি যেন জীবনের দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। প্রতিবছর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি।’

আয়োজক কমিটির সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই তীর্থযাত্রা প্রতিবছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়।

তীর্থোৎসব সমন্বয়কারী রেভারেন্ট ফাদার তরুণ বনোয়ারি বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় সুন্দরভাবে সবকিছু সম্পন্ন হচ্ছে। এ জন্য আমরা খুবই আনন্দিত।’

তীর্থের সার্বিক বিষয়ে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, এই উৎসবে সতর্কতা ও শতভাগ পেশাদারত্ব বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করেছেন সকল বাহিনীর সদস্যরা। চার স্তরের নিরাপত্তা বিধানে সাদাপোশাকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতির জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে, বিএনপির হুঁশিয়ারি

রাজধানীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যশোরের বিএনপি নেতা নিহত

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে আ.লীগ কর্মীরা নিরাপদে থাকবে’

সোনার দাম আরও কমে দুই লাখের ঘরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বেনাপোল বন্দরে নিরাপত্তা জোরদার, পরিচয়পত্র ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ

আজিজুল হক, বেনাপোল (যশোর) 
পণ্য প্রবেশদ্বারে ট্রাকচালকদের আগুন ব্যবহারে সচেতন করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
পণ্য প্রবেশদ্বারে ট্রাকচালকদের আগুন ব্যবহারে সচেতন করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষ করে বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বেনাপোল স্থলবন্দরে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) থেকে বন্দরে পরিচয়পত্র ছাড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং প্রবেশদ্বারগুলোতে তল্লাশি বাড়ানো হয়েছে।

বন্দর কর্তৃপক্ষ ধূমপান ও আগুনের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে এবং ফায়ার সিস্টেমগুলো সচল রাখতে নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা নাশকতা রোধে পোশাকধারী কর্মীদের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নজরদারি চলছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যমতে, প্রতিবছর এই বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। এই বন্দরে সব সময় প্রায় ২ লাখ টন পণ্য মজুত থাকে।

গত ১৬ বছরে বেনাপোল বন্দরে বড় ধরনের ১২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যাতে আমদানি পণ্য পুড়ে ব্যবসায়ীদের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্দরের সুরক্ষার ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বারবার।

বর্তমানে বন্দরের পণ্যাগারে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ১২ হাজার ৬৫৯ টন মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিলামযোগ্য পণ্য পড়ে আছে। এর মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ২৫০ টন রয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য। এসব কেমিক্যাল ও রাসায়নিক পণ্য অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বেনাপোল বন্দরের আমদানিকারক আমিনুল হক বলেন, বন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে এই রাসায়নিক দ্রব্যগুলো। এগুলো দ্রুত অপসারণ করা দরকার। এ ছাড়া ফায়ার স্টেশনে জনবল কম থাকায় দুর্ঘটনার সময় দ্রুত আগুন নেভানো যায় না, জনবল বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

বেনাপোল বন্দর ফায়ার স্টেশনের ইন্সপেক্টর শাহিনুর রহমান জানান, অগ্নিকাণ্ড রোধে বন্দর কর্তৃপক্ষের সব নির্দেশনা তাঁরা পালন করছেন এবং ফায়ার সিস্টেমগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে তিনি বলেন, ৯০ একর জায়গাজুড়ে স্থাপিত বন্দরে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে দুটি ফায়ার স্টেশনে মাত্র সাতজন জনবল রয়েছে। এই জনবল বাড়ানো হলে আরও বেশি নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হবে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) শামিম হোসেন জানান, অগ্নিকাণ্ড রোধে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বন্দরে পড়ে থাকা নিলাম ও ধ্বংসযোগ্য ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য কাস্টমসকে দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরাতে বা ধ্বংস করতে অনুরোধ করা হয়েছে। বন্দরের মধ্যে আগুন ব্যবহার ও কার্ডধারী ছাড়া প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও অগ্নিনির্বাপণকর্মীদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে এবং বন্দর ব্যবহারকারী বাণিজ্যিক সংগঠন ও কাস্টমসের সঙ্গে বৈঠক করে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রবেশকারীদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতির জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে, বিএনপির হুঁশিয়ারি

রাজধানীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যশোরের বিএনপি নেতা নিহত

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে আ.লীগ কর্মীরা নিরাপদে থাকবে’

সোনার দাম আরও কমে দুই লাখের ঘরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ২৪ হাজার জাল টাকাসহ যুবক আটক

সুবর্ণচর (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: 
জাল টাকাসহ আটক যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাল টাকাসহ আটক যুবক। ছবি: আজকের পত্রিকা

নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ২৪ হাজার টাকার জাল নোটসহ নুর আলম (৩৫) নামের এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার চরজব্বার ইউনিয়নের আবদুল্লাহ মিয়ার হাট এলাকা থেকে তাঁকে আটক করা হয়। নুর আলম জেলার সদর উপজেলার চরমটুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চরমটুয়া গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে। চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাতে নুর আলম আবদুল্লাহ মিয়ার হাট বাজারের একটি মুদিদোকানে সুজি কিনতে যান। তিনি দোকানদারকে ১ হাজার টাকার একটি নোট দিয়ে দ্রুত অবশিষ্ট টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন।

নোটটি দেখে দোকানদারের সন্দেহ হলে তিনি পাশের দোকানদারকে বিষয়টি জানান। পরে অন্য দোকানিদের সহযোগিতায় নুর আলমকে রাস্তা থেকে আটক করা হয় এবং চরজব্বার থানা-পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।

পুলিশ এসে নুর আলমকে তল্লাশি করে তাঁর মানিব্যাগ থেকে ২৪ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করে।

ওসি শাহীন মিয়া বলেন, আটক যুবকের বিরুদ্ধে চরজব্বার থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করা হয়েছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতির জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে, বিএনপির হুঁশিয়ারি

রাজধানীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যশোরের বিএনপি নেতা নিহত

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে আ.লীগ কর্মীরা নিরাপদে থাকবে’

সোনার দাম আরও কমে দুই লাখের ঘরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাপের ছোবল খেয়ে সাপসহ হাসপাতালে নারী

 নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
সাপের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে পাতিলে করে সাপ নিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির রাজিয়া সুলতানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাপের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে পাতিলে করে সাপ নিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাজির রাজিয়া সুলতানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সাপের ছোবলে আক্রান্ত হয়ে রাজিয়া সুলতানা (২৮) নামের এক গৃহবধূ সাপটিকে সঙ্গে নিয়েই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন তিনি।

জানা গেছে, উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের ধরনজি গ্রামের মো. বেলাল হোসেনের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা সন্ধ্যায় বাড়ির আঙিনায় কাজ করছিলেন। পাওয়ার টিলারে রাখা একটি বস্তা সরাতে গেলে একটি সাপের বাচ্চা তাঁকে ছোবল মারে। পরে পরিবারের লোকজন রাজিয়াকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসে। আশ্চর্যজনকভাবে রাজিয়া ওই সাপটিকেও একটি পাতিলে করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) স মু আল আফ মুকসিত বলেন, ‘রাত ৮টার দিকে এক নারী সাপের ছোবল খেয়ে সাপসহ হাসপাতালে ভর্তি হন। সাপটি দেখে নিশ্চিত হয়েছি এটি “ঘরগিন্নি” নামের নির্বিষ প্রজাতির সাপ। তারপরও রোগীকে সতর্কতামূলক সব চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।’

ছোবল খাওয়া রাজিয়ার স্বামী মো. বেলাল হোসেন বলেন, ‘সন্ধ্যার পর আমার স্ত্রী আঙিনায় কাজ করছিল। হঠাৎ সাপের বাচ্চা কামড় দেয় হাতে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন সাপটি বিষধর না হলেও আতঙ্কের কারণে অনেক সময় রোগীর শারীরিক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এ জন্য ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএনপি আমলের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দিল ইমিগ্রেশন পুলিশ

মনগড়া সংস্কার প্রস্তাব জাতির জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে, বিএনপির হুঁশিয়ারি

রাজধানীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যশোরের বিএনপি নেতা নিহত

‘বিএনপি ক্ষমতায় এলে আ.লীগ কর্মীরা নিরাপদে থাকবে’

সোনার দাম আরও কমে দুই লাখের ঘরে

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত