Ajker Patrika

মাইকে তখন এশার আজান, আড্ডার মধ্যে হঠাৎ বোমা: প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে দুই আ.লীগ নেতা হত্যার রোমহর্ষ বর্ণনা

মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ২৮ জুন ২০২৪, ২২: ৪৬
মাইকে তখন এশার আজান, আড্ডার মধ্যে হঠাৎ বোমা: প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখে দুই আ.লীগ নেতা হত্যার রোমহর্ষ বর্ণনা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই নেতা খুন হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে ঘটনাস্থলে আওয়ামী লীগের আরও দুই কর্মী ছিলেন। আহতাবস্থায় পালিয়ে রক্ষা পাওয়া দুই ব্যক্তিরা ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে গতকাল বৃহস্পতিবারের হামলার রোমহর্ষ বর্ণনা। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানে, ঘড়িতে সময় রাত ৮টা। চারদিকে মাইকে এশার আজান হচ্ছে। এমন সময় রাণীহাটি ডিগ্রি কলেজের সামনে চেয়ার পেতে গল্প করছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ সদস্য ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, একই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ও হরিনগর হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মতিন, আওয়ামী লীগ কর্মী টিটো ও আব্দুর রহিম বাদশা। 

এ সময় হঠাৎ তাঁদের ওপর এসে পড়ে একটি হাতবোমা। এতে গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন আব্দুস সালাম ও আব্দুল মতিন। আহতাবস্থায় পালিয়ে রক্ষা পান আব্দুর রহিম ও টিটো। এরপরই ছোড়া হয় গুলি। ২০-২৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে সালাম ও মতিনের। এরপরেই তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

খবর পেয়ে সালামের মরদেহ নেওয়া হয় বাড়িতে ও মতিনের মরদেহ জেলা হাসপাতালে। এরপরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নয়ালাভাঙ্গা। 

ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে যাওয়া আব্দুর রহিম বাদশা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সালামকে হত্যার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল হক। তাঁর নির্দেশেই হত্যা করতে রাতের অন্ধকারে প্রাইভেট কার ও বাড়িতে হামলা চালানো হয়। সে দুই দফায় প্রাণে বেঁচে যান সালাম। কিন্তু এবার বাঁচানো গেল না। পরিকল্পনা করেই হত্যা করা হলো।’ 

বাদশা বলেন, ‘গত ২৪ মার্চ রাত সাড়ে ৯টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে নিজ বাড়ি ফেরার পথে চৌধুরী মোড়ে সালামকে বহনকারী প্রাইভেট কারে অতর্কিত হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। ওই দিন প্রাইভেট কারটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সবাই অক্ষত থাকি। এরপর আবারও হত্যার উদ্দেশ্যে রাতের অন্ধকারে বাড়ি ঘিরে ব্যাপক হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। সেদিনও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।’ 

নিহত সালামের ভাতিজা মো. রনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা আশরাফ বহু মানুষকে খুন করেছে। যাকে মন চেয়েছে তাকেই পঙ্গু বানিয়েছে। সঠিক বিচার না হওয়ার কারণে বারবার পার পেয়ে গেছে। তার জন্যই আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। সব কটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হলে তার ক্যাডার বাহিনীর হাতে সাধারণ মানুষকে জীবন দিতে হতো না।’ 

সালামের রাজনৈতিক সহকর্মীরা জানান, স্থানীয় রাজনীতিতে আশরাফ প্রতিপক্ষ রাখতে চান না। তিনি যাকেই প্রতিপক্ষ মনে করেন, যেকোনো কৌশলে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেন। মানুষ খুন ও লুটপাটের জন্য তাঁর নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। যারা প্রায় সময় হাতে ককটেল নিয়ে ঘোরাফেরা করেন। তিনি হুকুম করলেই সংঘটিত হয় হত্যাসহ নানান অপরাধ। তাঁর হুকুমে সালাম ও মতিন হত্যার পর এখন তিনি পলাতক আছেন। সব হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। 

নিহত আব্দুস সালামের স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম বলেন, ‘স্থানীয় ইউপি সদস্য আলম হোসেন হত্যা মামলার আসামি ছিলেন আব্দুস সালাম। এ মামলাটি সমাধানের চেষ্টা করছিলেন সালামসহ দুপক্ষের লোকজন। কিন্তু আশরাফ মীমাংসার নামে নাটক করেছে। সে আমার স্বামীর ওপর হামলার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। আমার স্বামী হত্যায় আশরাফ মূল পরিকল্পনাকারী।’ 

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. ছাইদুল হাসান বলেন, ‘কোনো হত্যাকাণ্ডই কাম্য নয়। পুলিশ সব অপরাধের তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করে। সালাম ও মতিন হত্যাকাণ্ডের সঠিক তদন্ত হবে। যারা দোষী, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ 

তিনি আরও বলেন, নয়ালাভাঙ্গায় পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে রাত থেকেই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। 

এদিকে আজ শুক্রবার দুপুরে জেলা হাসপাতাল থেকে নিহত দুজনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এতে সালামের রাজনৈতিক সহকর্মীসহ অসংখ্য মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন। 

এ সময় বক্তব্য দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন, শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাজ্জাদ হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ নজমুল কবির মুক্তা, সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম টুটুল খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান এডুসহ জেলা ও উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লরির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তরুণী নিহত

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তেলবাহী লরির ধাক্কায় আয়েশা আক্তার (২২) নামের এক তরুণী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে থাকা মো. খালেদ হোসেন (২৮) নামের এক যুবক আহত হন। গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে মহাসড়কের দশতলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর তাপালবাড়িয়া গ্রামের মো. জাকির হোসেনের মেয়ে এবং আহত যুবক নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিববাগ এলাকার হাসান আলীর ছেলে।

জানা গেছে, মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন দিয়ে নিহত ও আহত হওয়া ব্যক্তিরা মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার পথে দশতলা-সংলগ্ন বেঙ্গল প্লাস্টিক কারখানার সামনে একটি তেলের লরি সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মুহূর্তেই মোটরসাইকেল আরোহীরা সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক সাইনবোর্ডের প্রো অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা নিহত তরুণীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তরুণীর মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘একটি ট্যাংক লরি পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে আরোহী তরুণী গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল ও ট্যাংক লরিটি জব্দ করি। তবে ঘাতক লরিচালক দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাকা ফেটে টমটম উল্টে দেয়ালে ধাক্কা, চালক নিহত, আহত ৬

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠিতে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের মালবাহী একটি টমটম (নছিমন) উল্টে সোহেল (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ শ্রমিক। বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগলপাশা এলাকার বাকলাই বাড়ির সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সোহেল বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ছোট করফাকর গ্রামের নুরু আকনের ছেলে এবং তিনি দুর্ঘটনাকবলিত টমটমের চালক ছিলেন। আহত ব্যক্তিরা হলেন সোলেমান (২২), ইমন হোসেন (২২), রোহান হোসেন (১৮), সামিউল (২৭) ও হামিম (১৮)।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন লিডার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ৯টা ১১ মিনিটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। আমরা প্রাচীরের ইটের নিচে চাপা পড়া একজনকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

সোহেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) টি এম মেহেদী হাসান সানি জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই সোহেলের মৃত্যু হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক হামিম বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তারেক অ্যাসোসিয়েশনের পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন শেষে গুয়াচিত্রা এলাকা থেকে টমটমে করে ট্রান্সফরমার ও অন্য মালপত্র নিয়ে ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উদ্দেশে ফিরছিলাম। পথে গাড়ির সামনের চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দেয়ালে লাগলে দেয়ালটি ভেঙে যায়। এতে আমরা সবাই আহত হই এবং একজন দেয়ালের নিচে চাপা পড়েন। স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে একজন দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে থাকেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। স্বজনেরা আসার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪ বছরেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পায়নি ডাসার উপজেলা

  • পৌনে এক লাখ বাসিন্দার চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হয় পাশের উপজেলার ওপর।
  • ২০২১ সালের ২৬ জুলাই মাদারীপুরের ডাসারকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়।
  • প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ তদন্ত হয়েছে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর
৪ বছরেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পায়নি ডাসার উপজেলা

উপজেলা ঘোষণার চার বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত নির্মাণ হয়নি ডাসার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফলে মাদারীপুরের এ উপজেলার বাসিন্দাদের সরকারি হাসপাতালের সেবা নেওয়ার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে আশপাশের অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর। এতে তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি যানবাহন ভাড়া। একই সঙ্গে দূরত্বের জন্যও তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হোক। এদিকে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ডাসার উপজেলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ তদন্ত হয়েছে। এরপর জমি অধিগ্রহণ শেষে পরবর্তী ধাপগুলো শুরু করা হবে।

২০২১ সালের ২৬ জুলাই সচিবালয়ের নিকারের সভায় মাদারীপুরের ডাসারকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়। এর আগে ডাসার উপজেলাটি কালকিনি উপজেলার মধ্যে ছিল। তখন মাদারীপুরে উপজেলার সংখ্যা ছিল চারটি। ডাসারকে উপজেলা ঘোষণার পর এ জেলায় উপজেলার সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচটি। ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট ডাসারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়োগ দেওয়া হয়। উপজেলাটির আয়তন ৭৬ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৭৫ হাজার ১৭৩ জন।

স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা ঘোষণার চার বছর পেরিয়ে গেলেও ডাসার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ হয়নি। ফলে এই উপজেলার মানুষকে চিকিৎসা নিতে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের ধুলগাও গ্রামের নাদিরা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স তিন বছর। ঠান্ডা-সর্দিসহ নানা সময় নানান অসুস্থতা লেগেই থাকে। তাই মাঝেমধ্যেই ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয়। আমার স্বামী প্রতিবন্ধী। আয় করতে পারেন না। আমরা গরিব মানুষ, সরকারিভাবে ডাক্তার দেখাতে হয়। তাই মাদারীপুর শহরে গিয়ে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে দেখাতে হয়। এতে করে আমাদের সময় বেশি লাগে, গাড়ি ভাড়ার টাকা লাগে।’ তিনি বলেন, ‘এই উপজেলায় একটি সরকারি হাসপাতাল হলে আমাদের অনেক উপকার হতো।’

গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার মায়ের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে। ফলে প্রায় সময়ই তিনি অসুস্থ থাকেন। তাই একটু অসুস্থ হলেই ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের ডাসার উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই। তাই কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তিও থাকতে হয়। তখন নিজ বাড়ি থেকে যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এই উপজেলায় একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ জরুরি বলে আমি মনে করি।’

ডাসারের নবগ্রামের বাসিন্দা নিতু রাণী বলেন, ‘আমাদের ডাসার উপজেলা ঘোষণার চার বছর পেরিয়ে গেলেও একটি সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা উপজেলাবাসী চাই অন্য উপজেলার মতো এই উপজেলাতেও একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ হোক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফ-উল-আরেফীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডাসার উপজেলায় ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ তদন্ত হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ শেষে পরবর্তী ধাপগুলো শুরু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশ ‘ম্যানেজ’, নেতার প্রশ্রয়ে বালুখেকো চক্র

  • যমুনেশ্বরী নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে।
  • আগে আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায়, এখন বিএনপি নেতার প্রশ্রয়ে।
আশরাফুল আলম আপন, বদরগঞ্জ 
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ৩৩
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মধুপুর ইউনিয়নের রাজরামপুর কাশিগঞ্জ এলাকায় যমুনেশ্বরী নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকার একটি চক্র ৫-৬ বছর ধরে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করে আসছে। এই চক্র আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বালু তুলত। এখন তাদের ওই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোকসেদুল হক প্রশ্রয় দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এমনকি পুলিশও ‘ম্যানেজ’ হয়ে আছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

স্থানীয় লোকজন জানান, অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছেন প্রভাবশালী মোয়াজ্জেন আলী এবং তাঁর সহযোগী এমদাদুল, মিল্লাদ ও আলমগীর। সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মিজানুর রহমান অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন ও পাইপ ভেঙে দিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও বন্ধ হয়নি সেখান থেকে বালু উত্তোলন।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে নদী থেকে বালু তোলার কারণে তীরবর্তী কাশিগঞ্জ গ্রাম, কৃষিজমি ও মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ হুমকির মুখে পড়েছে। তা ছাড়া বালু পরিবহনের ট্রলির কারণে সেখানকার রাস্তাঘাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসন চালালেও পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। তাঁদের ভাষ্যমতে, ইউএনও সকালে অভিযান চালালে থানা-পুলিশের সহযোগিতায় বিকেলে আবার ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান বালুখেকো মোয়াজ্জেন আলী। তবে মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোকসেদুল হক বলেন, ‘আমি সম্প্রতি বাড়ির কাজের প্রয়োজনে কিছু বালু তুলতে ব্যক্তিগত ড্রেজার মেশিন বসিয়েছিলাম। কিন্তু আমার নামে অপপ্রচার হওয়ায় ৬ ঘণ্টার মধ্যে মেশিন তুলে ফেলি।’

এক প্রশ্নের জবাবে ওই বিএনপি নেতা বলেন, ‘পুলিশ টাকা খায় কি না, তা বিএনপি নেতা হিসেবে আমি বলতে চাই না। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় মোয়াজ্জেন দীর্ঘ বছর ধরে সেখান থেকে বালু তুলছেন।’

রাজরামপুর, কাশিগঞ্জ এলাকার বাইরে লোহানীপাড়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মাধাই খামার, উত্তর মাধাই খামার, সাহেবগঞ্জ, তেলিপাড়া, কুতুবপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট, অরুণনেছা ঘাট, দালালপাড়া, কালুপাড়া ইউনিয়নের চান্দামারীর ঘাট, বৈরামপুর, দামোদরপুর ইউনিয়নের কালীরঘাট, শেখেরহাট, মোস্তফাপুর মণ্ডলপাড়া গ্রামে চিকলী ও যমুনেশ্বরী নদী থেকেও ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

বদরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত দেড় মাসে ১৫-২০টি বালুর পয়েন্টে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই বালু ব্যবসায়ীরা টের পেয়ে সরে পড়ায় তাদের ধরা যায় না। ওই সময়ে এলাকার মানুষও মুখ খোলে না। ঘটনাস্থলে শুধু পাওয়া যায় ড্রেজার মেশিন।’

‘থানা ম্যানেজ’ হওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন বদরগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে এক টাকা নেওয়া তো দূরের কথা; বালুর বিষয়ে এক কাপ চাও খাইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত