Ajker Patrika

পুরো সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে: নাহিদ

রংপুর প্রতিনিধি
রংপুর পর্যটন হোটেলে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
রংপুর পর্যটন হোটেলে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুরো সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি বিরোধিতা করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ বুধবার রংপুর পর্যটন হোটেলে এনসিপির আট জেলা ও এক মহানগর আহ্বায়ক কমিটির পদপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশন যথার্থ সুপারিশ দিয়েছে। সংস্কারের বিপক্ষে আমরা ঐকমত্য কমিশনে অনেক দলকে অবস্থান নিতে দেখেছি। বিএনপিও অনেকগুলো বড় সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে গোটা সংস্কারপ্রক্রিয়াকে তারা চায় কি না, এইটা নিয়ে কিন্তু এখন প্রশ্ন তৈরি হবে। কারণ, পুরো সময় ধরে দেখেছি আমরা, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে বিএনপি ভেটো দিয়েছে, বিরোধিতা করেছে।’

নাহিদ আরও বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না হলে তো নির্বাচন হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। জুলাই সনদ ও বিচারের রোডম্যাপ দিয়ে তারপরে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। এ কারণে দ্রুত সংস্কারপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন।

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, ‘জনগণের তো অনেক প্রত্যাশা ছিল গণ-অভ্যুত্থানের পরে, এই সরকারের পক্ষ থেকে এবং এমনকি আমাদের পক্ষ থেকেও। ফলে আমাদের সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে হবে।’

দেশের মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছে দেশের। মানুষের একটা ভয় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সবকিছু আগের মতো হয়ে যাচ্ছে কি না, যাবে কি না। নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদ আসবে কি না, স্বৈরতন্ত্র আসবে কি না, মানুষের সে কথা বলার জায়গাটা থাকবে কি না। ৫ আগস্টের পরে আমরা দেখেছি যে, দেশে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি নতুন করে শুরু হয়েছে। আবার অন্যদিকে আমরা সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখছি।’

দেশের নানামুখী সংকটের কথা জানিয়ে এনসিপি নেতা বলেন, ‘দেশে কিন্তু নানামুখী সংকট আছে। আবার পতিত স্বৈরাচারী শক্তি, তারা তো নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে, তাদের সঙ্গে বহু নানান বৈদেশিক শক্তি জড়িত। ফলে আমরা কিন্তু একটা সংকটের মুখেই আছি।

‘এই সংকটের মধ্যে আমাদের যেমন জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন, আবার এই জাতীয় ঐক্যের ভেতরে আমাদের নিজেদের দলগুলোর ভেতরে যে সমস্যাগুলো রয়েছে, সেই সমস্যাগুলোও সমাধান করে আমাদের এক জায়গায় থাকতে হবে।’

এককভাবে সরকার গঠন সম্ভব নয় উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এখন কেউ যদি মনে করে, সে এককভাবেই সব নেতৃত্ব দেবে অথবা সরকার গঠন করে ফেলবে, এটা আসলে সম্ভব হবে না। যদি এই ন্যূনতম ঐক্য না থাকে দেশের সবগুলো পক্ষের মধ্যে, ফলে এককভাবে সরকার গঠন করা এবং সেই সংসদ ও সরকার টিকিয়ে রাখা কারও পক্ষে সম্ভব হবে না।

জনগণের যে ন্যূনতম আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল; সংস্কার ও বিচার—এই দাবিগুলোকে উপেক্ষা করে যদি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয়, সেটিও আসলে টেকসই হবে না।’

এনসিপির আহ্বায়ক আরও বলেন, ‘একটা টেকসই পরিবর্তনের জন্য, স্থিতিশীল পরিবর্তনের জন্য অনেক সংস্কার আমরা চেয়েছিলাম, সেটা হয়নি। কিন্তু সংবিধানের অল্প কিছু জায়গায় আমরা ঐকমত্য হয়েছি, কিছু গণতান্ত্রিক, যেটা একটা স্পেস আমাদের তৈরি করে দেবে, ন্যূনতম এই সংস্কার নিয়ে আমরা সামনের দিকে এগোতে চাই।

‘সেই জায়গায় যদি বাধা তৈরি হয়, সেই জায়গায়ও যদি সরকারের জায়গা থেকে কোনো গড়িমসি তৈরি হয়, তাহলে এই সরকারকে কিন্তু জনগণের মুখোমুখি হতে হবে এবং যারা বাধা দেবে, তাদেরও জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।’

জোট গঠন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা কারও মুখাপেক্ষী নই, কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে আমরা রাজনীতি করব না। কিন্তু নির্বাচনে কৌশলগত কারণে বা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে যদি কোনো ধরনের সমঝোতা প্রয়োজন হয়, আমরা সেটার জন্য ওপেন আছি। আমরা এইটুকুই বলছি। কিন্তু আমরা কার সঙ্গে জোট হবে কি হবে না, সেটার ওপর বসে নেই, সেটার ওপর নির্ভর করে নেই। আমরা আমাদের মতোই কার্যক্রম করছি এবং আমরা আমাদের মতো প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।’

নাহিদ আরও বলেন, ‘জনগণের আমাদের নিয়ে অনেক প্রত্যাশা আছে। আমাদের তারা একটা স্বতন্ত্র জায়গায় দেখতে চায় এবং পুরোনো দলগুলোর প্রতি জনগণের অনীহা আছে। আওয়ামী লীগ তো একটা ফ্যাসিস্ট রূপ নিয়েই ছিল, জনগণ তাকে বিতাড়িত করেছে।

‘এ ছাড়া যে দলগুলো আছে, গত ১৬ বছর তাদের ভূমিকা, জনগণের পক্ষে সঠিকভাবে দাঁড়াতে না পারা এবং ঐতিহাসিকভাবেও অনেক দলের অনেক ধরনের ব্যাগেজ (খারাপ নজির) থাকার কারণে কিন্তু জনগণের নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা সমাজে তৈরি হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শচীন দেববর্মনের জন্মভিটায় দুই দিনের মেলা, দাবি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্সের

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা 
কুমিল্লায় শচীন কর্তার জন্মভিটা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
কুমিল্লায় শচীন কর্তার জন্মভিটা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থা এলাকায় অবস্থিত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের কালজয়ী সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শচীন দেববর্মনের জন্মভিটায় আজ (৩০ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘শচীন মেলা’। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা। শচীনের জন্ম (১ অক্টোবর) ও প্রয়াণ (৩১ অক্টোবর) দিবসকে কেন্দ্র করে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই আয়োজনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ত্রিপুরার রাজবংশের নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মনের ঘরে ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন শচীন দেববর্মন। রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের বিরোধ ও রাজনৈতিক কারণে তাঁর বাবা কুমিল্লায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। চর্থার দক্ষিণে প্রায় ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত প্রাসাদটিই তাঁর জন্মভিটা হিসেবে পরিচিত। শচীন দেববর্মন ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর ভারতে মারা যান।

কুমিল্লার গ্রামীণ পরিবেশ, নদীর ঢেউ, ভাটিয়ালি এবং স্থানীয় লোকসংগীতের সঙ্গে তাঁর শৈশবের পরিচয়ই সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। ছোটবেলায় স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটানো, লোকসংগীত সংগ্রহ এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া তাঁর সংগীত প্রতিভাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়।

কুমিল্লা জিলা স্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতায় যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আনুষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯২৩ সালে কলকাতা বেতারে তার প্রথম গান রেকর্ড হয়, আর ১৯৩২ সালে প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এরপর বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনায় নাম লেখান।

শচীন দেবের সংগীতজীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় শুরু হয় ১৯৪৪ সালে মুম্বাইয়ে স্থায়ী বসতি গড়ে। হিন্দি চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালনা এবং কণ্ঠে অমর গান আজও শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করে। ‘শিকারি’, ‘দেবদাস’, ‘সুজাতা’, ‘আরাধনা’, ‘গাইড’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালনা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, গীতা দত্তসহ বহু কিংবদন্তি তাঁর সুরে গান গেয়েছেন।

১৯৩৭ সালে তিনি গায়িকা মীরা দেবীকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তান রাহুল দেববর্মনও ভারতীয় চলচ্চিত্রে খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক হন।

দীর্ঘদিন ধরে শচীনের জন্মভিটা ছিল পরিত্যক্ত। পাকিস্তান আমলে এর একটি অংশ সরকারি খামার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্বাধীন বাংলাদেশে ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়ির একটি অংশ উদ্ধার করা হলেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ আজও হয়নি।

বাড়ির স্থাপত্যগত অবস্থা নাজুক। সদর দরজার সঙ্গে ঘরের বারান্দা আকৃতির তিনটি কক্ষ, পূর্ব ও পশ্চিমাংশে আরও ছয়টি কক্ষ এবং পূজার ঘর রয়েছে। তবে পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়াল ও প্রাচীরে অঙ্কিত আলপনা মুছে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ও ওয়াশব্লকের সমস্যার কারণে সংস্কারহীন ভিটা রাত্রে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে, ঘরের দরজা ভাঙাচোরা এবং বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকার ও ভগ্নদশার কারণে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আমি একা বাধা দিতে গেলে হুমকির মুখে পড়ি।’

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, বাড়িটি সন্ধ্যার পর মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। যদি বাড়ি সংস্কার ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক থাকে, তাহলে শচীন মেলার আয়োজন আরও সফল হবে এবং এখানে বখাটেদের আনাগোনা কমবে।

দুই দিনব্যাপী শচীন মেলায় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ১৫টি স্টল থাকবে। অনুষ্ঠানে শচীনভক্ত, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেবেন এবং তাঁর সুরের মাধ্যমে আবেগময় পরিবেশ তৈরি হবে।

সামাজিক সংগঠন ‘ঐতিহ্য কুমিল্লা’র সভাপতি ও শচীন গবেষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, ‘উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী শচীন দেববর্মন, যিনি শচীন কর্তা এবং এস ডি বর্মন নামে পরিচিত। তাঁর অবদান আজও বাঙালির হৃদয়ে জীবন্ত। শচীনের বাড়ি পরিত্যক্ত না রেখে দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে কুমিল্লা সংগীত ও সংস্কৃতির একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের প্রতিনিধিদল বাড়িটি পরিদর্শন করেছে। পরিকল্পনা রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর, মুক্তমঞ্চ, গবেষণার কক্ষ ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের। এটি বাস্তবায়িত হলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লরির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী তরুণী নিহত

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে তেলবাহী লরির ধাক্কায় আয়েশা আক্তার (২২) নামের এক তরুণী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় তাঁর সঙ্গে থাকা মো. খালেদ হোসেন (২৮) নামের এক যুবক আহত হন। গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাতে মহাসড়কের দশতলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত তরুণী পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার উত্তর তাপালবাড়িয়া গ্রামের মো. জাকির হোসেনের মেয়ে এবং আহত যুবক নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ১ নম্বর ওয়ার্ডের মুজিববাগ এলাকার হাসান আলীর ছেলে।

জানা গেছে, মহাসড়কের ঢাকামুখী লেন দিয়ে নিহত ও আহত হওয়া ব্যক্তিরা মোটরসাইকেলযোগে যাওয়ার পথে দশতলা-সংলগ্ন বেঙ্গল প্লাস্টিক কারখানার সামনে একটি তেলের লরি সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে মুহূর্তেই মোটরসাইকেল আরোহীরা সড়কে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা আহত ব্যক্তিদের তাৎক্ষণিক সাইনবোর্ডের প্রো অ্যাকটিভ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা নিহত তরুণীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর ঢামেক হাসপাতালে নেওয়ার পথেই তরুণীর মৃত্যু হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ জুলহাস উদ্দিন বলেন, ‘একটি ট্যাংক লরি পেছন দিক থেকে মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে আরোহী তরুণী গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেল ও ট্যাংক লরিটি জব্দ করি। তবে ঘাতক লরিচালক দুর্ঘটনার পরপরই পালিয়ে যান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাকা ফেটে টমটম উল্টে দেয়ালে ধাক্কা, চালক নিহত, আহত ৬

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঝালকাঠিতে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের মালবাহী একটি টমটম (নছিমন) উল্টে সোহেল (৩০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও পাঁচ শ্রমিক। বুধবার (২৯ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে সদর উপজেলার বাসন্ডা ইউনিয়নের আগলপাশা এলাকার বাকলাই বাড়ির সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত সোহেল বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ছোট করফাকর গ্রামের নুরু আকনের ছেলে এবং তিনি দুর্ঘটনাকবলিত টমটমের চালক ছিলেন। আহত ব্যক্তিরা হলেন সোলেমান (২২), ইমন হোসেন (২২), রোহান হোসেন (১৮), সামিউল (২৭) ও হামিম (১৮)।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন লিডার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রাত ৯টা ১১ মিনিটে পুলিশ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে থাকা একটি বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢুকে যায়। আমরা প্রাচীরের ইটের নিচে চাপা পড়া একজনকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।’

সোহেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) টি এম মেহেদী হাসান সানি জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই সোহেলের মৃত্যু হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক হামিম বলেন, ‘আমরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তারেক অ্যাসোসিয়েশনের পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন শেষে গুয়াচিত্রা এলাকা থেকে টমটমে করে ট্রান্সফরমার ও অন্য মালপত্র নিয়ে ঝালকাঠি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের উদ্দেশে ফিরছিলাম। পথে গাড়ির সামনের চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দেয়ালে লাগলে দেয়ালটি ভেঙে যায়। এতে আমরা সবাই আহত হই এবং একজন দেয়ালের নিচে চাপা পড়েন। স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তবে একজন দেয়ালের নিচে চাপা পড়ে থাকেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’

এ বিষয়ে ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, নিহত ব্যক্তির মরদেহ ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। স্বজনেরা আসার পর প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪ বছরেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পায়নি ডাসার উপজেলা

  • পৌনে এক লাখ বাসিন্দার চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হয় পাশের উপজেলার ওপর।
  • ২০২১ সালের ২৬ জুলাই মাদারীপুরের ডাসারকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়।
  • প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ তদন্ত হয়েছে।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর
৪ বছরেও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পায়নি ডাসার উপজেলা

উপজেলা ঘোষণার চার বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত নির্মাণ হয়নি ডাসার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফলে মাদারীপুরের এ উপজেলার বাসিন্দাদের সরকারি হাসপাতালের সেবা নেওয়ার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে আশপাশের অন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওপর। এতে তাদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি যানবাহন ভাড়া। একই সঙ্গে দূরত্বের জন্যও তাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত এ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হোক। এদিকে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, ডাসার উপজেলায় ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রম চলছে। প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ তদন্ত হয়েছে। এরপর জমি অধিগ্রহণ শেষে পরবর্তী ধাপগুলো শুরু করা হবে।

২০২১ সালের ২৬ জুলাই সচিবালয়ের নিকারের সভায় মাদারীপুরের ডাসারকে উপজেলা ঘোষণা করা হয়। এর আগে ডাসার উপজেলাটি কালকিনি উপজেলার মধ্যে ছিল। তখন মাদারীপুরে উপজেলার সংখ্যা ছিল চারটি। ডাসারকে উপজেলা ঘোষণার পর এ জেলায় উপজেলার সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচটি। ২০২২ সালের ১৪ আগস্ট ডাসারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিয়োগ দেওয়া হয়। উপজেলাটির আয়তন ৭৬ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা ৭৫ হাজার ১৭৩ জন।

স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা ঘোষণার চার বছর পেরিয়ে গেলেও ডাসার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ হয়নি। ফলে এই উপজেলার মানুষকে চিকিৎসা নিতে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে যেতে হচ্ছে।

ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়নের ধুলগাও গ্রামের নাদিরা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলের বয়স তিন বছর। ঠান্ডা-সর্দিসহ নানা সময় নানান অসুস্থতা লেগেই থাকে। তাই মাঝেমধ্যেই ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয়। আমার স্বামী প্রতিবন্ধী। আয় করতে পারেন না। আমরা গরিব মানুষ, সরকারিভাবে ডাক্তার দেখাতে হয়। তাই মাদারীপুর শহরে গিয়ে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে দেখাতে হয়। এতে করে আমাদের সময় বেশি লাগে, গাড়ি ভাড়ার টাকা লাগে।’ তিনি বলেন, ‘এই উপজেলায় একটি সরকারি হাসপাতাল হলে আমাদের অনেক উপকার হতো।’

গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমার মায়ের ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা রয়েছে। ফলে প্রায় সময়ই তিনি অসুস্থ থাকেন। তাই একটু অসুস্থ হলেই ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের ডাসার উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই। তাই কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় হাসপাতালে ভর্তিও থাকতে হয়। তখন নিজ বাড়ি থেকে যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়। তাই এই উপজেলায় একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ জরুরি বলে আমি মনে করি।’

ডাসারের নবগ্রামের বাসিন্দা নিতু রাণী বলেন, ‘আমাদের ডাসার উপজেলা ঘোষণার চার বছর পেরিয়ে গেলেও একটি সরকারি হাসপাতাল নির্মাণ হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা উপজেলাবাসী চাই অন্য উপজেলার মতো এই উপজেলাতেও একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ হোক।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফ-উল-আরেফীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডাসার উপজেলায় ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রম চলমান আছে। প্রাথমিক পর্যায়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য যৌথ তদন্ত হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ শেষে পরবর্তী ধাপগুলো শুরু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

‘শত শত কোটি ডলারের’ ক্ষতি: অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংকের সালিস আদালতে এস আলম

ফেসবুক বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রী

খাদ্যে ভেজাল: বিদেশের মথবীজ দেশে রং মিশিয়ে মুগ ডাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত