Ajker Patrika

অবৈধ অস্ত্র দিয়েছেন বিএনপি নেতা—এমন ফোনকল রেকর্ডে তোলপাড় চাঁপাইনবাবগঞ্জ

 রিমন রহমান, রাজশাহী
বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান। ছবি: সংগৃহীত

সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক বিএনপি নেতা আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ-সংক্রান্ত তিনজনের একটি ফোনকল রেকর্ড ছড়িয়ে পড়েছে। এ ফোনকল রেকর্ড নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় চলছে। যদিও অভিযুক্ত বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান বলছেন, তিনি কখনো অস্ত্র ছুঁয়েও দেখেননি।

ওবায়েদ পাঠান চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকার লোকজন কেউ তাঁকে ওয়াহেদ পাঠান, কেউ ওবায়দুল পাঠান নামেও চেনেন। ফোনকল রেকর্ডে এ দুটি নামই বারবার এসেছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে তদন্ত শুরু করেছে। ওবায়েদ পাঠান যাঁকে অস্ত্র দিয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই যুবক ইতিমধ্যে অন্য একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ওই যুবকের নাম রিশান আলী (২৪)। তিনি সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া সৈনিক। তাঁর বাবার নাম জিয়াউর রহমান। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। রিশান এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হোতা হিসেবে পরিচিত। রিশানকে গ্রেপ্তারের পর এক দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে আজ শুক্রবার (১৫ আগস্ট) তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এলাকার একটি বালুমহাল নিয়ে সংঘর্ষের সময় গত জুলাইয়ে এই রিশান প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করেন। এই অস্ত্রের উৎস কী, তা নিয়ে পরদিন রিশানের সহযোগী ইকবাল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে ইসলামপুর ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নাসির উদ্দিন ও তাঁর চাচাতো ভাই জসিম উদ্দিনের কথা হয়। ওই ফোনকল রেকর্ড সম্প্রতি ছড়িয়ে পড়ে।

প্রথমে রিশানের সহযোগী ইকবালের সঙ্গে কথা বলেন জসিম। তিনি অস্ত্রের ব্যাপারে জানতে চান, ‘উ (রিশান) কি টাকা দিয়ে (অস্ত্র) কিনেছে জি?’ জবাবে ইকবাল বলেন, ‘না, ওকে এমনি দিয়েছে। ভ্যাজালের সমাতে। হামি ধরেন যদি ই করতুং, তো হামিই প্যায় যাতুং।’ জসিম বলেন, ‘ওয়াহেদেরা তো ইন্ডিয়া থাইকা, আনা তো ব্যাপার লয়।’ ইকবাল বলেন, ‘বাংলাদেশেই অভাব নাই। হাঁর কাছেই ছিল আগে।’

জসিম জানতে চান, ‘তাহলে তিনটা গুলি আর একখানডা ই (পিস্তল) দিয়েছে?। ইকবাল বলেন, ‘হু, নিজের সেফটির জন্য।’ জসিম জানতে চান, ‘ওয়াহেদ নিজেই দিয়েছে ডাইরেট?’ ইকবাল বলেন, ‘ওয়াহেদ ধরে লেন যে ইয়ে করেছিল। কিন্তু ল্যাওয়ার দিন হামি যাইনি। ল্যাওয়ার দিন আমরুল (রিশানের আরও এক সহযোগী) আর ওই (রিশান) গেছিল খালি। হাঁকে ডেকেছিল, হামি যাইতে পারিনি।’

জসিম বলেন, ‘পিস্তল থাকাতে কত বড় সেফটি দেখেছেন?’ ইকবাল বলেন, ‘সেফটিও আছে, ভয়ও আছে। কেহু যুতি ধরায় দ্যায়।’ জসিম বলেন, ‘ধরাছে কে ওদেরকে? ওরা এখন পাওয়ারে আছে। আর কি দিয়েছিল, নাকি ওইখানডাই?’ ইকবাল বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে খবর লিব। আমরুলকে হামি কহাবো, কি রে কাকা মাল কি একখানডাই দিয়েছে? হাঁরা পাব না? তাহিলেই বুসতে পারব, একখানডা নাকি আরও দিয়েছে।’

জসিম এবার জানতে চান, ‘দেয়ার তো কথা ছিল তিনখানডা?’ ইকবাল বলেন, ‘হ্যাঁ, দেয়ার কথা ছিল তিনখানডা। লাইসেনধারীডা দিতে চাহেনি।’ জসিম জানতে চান, ‘তাহিলে ওয়াহেদের কাছে ব্যাপার না মাল আইন্যা দেয়া?’ কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে ইকবাল বলেন, ‘তুমি কি লিব্যা নাকি মাল? লিলে কহো, আমি আইন্যা দিছি। এইডা ব্যাপার না। তুমি ভাবছ ম্যালা কিছু। ম্যালা কিছু লয়। শিবগঞ্জ থাইকাই আনা যায়। শুধু আনাডা একটু ইয়ে তাই।’ জসিম প্রশ্ন করেন, ‘ওয়াহেদ কি বেরেন কইরে ছোট ছোট ছেইলের হাতে দিল?’ জবাবে ইকবাল বলেন, ‘ওয়াহেদ পাঠান কিন্তু আমরুলকে খুবই ভালোবাসে। উ যুদি কহে, এ মুহূর্তে আসা লাগবে, ওয়াহেদ পাঠান এক ফোঁটাও ভুল কইরাও ই করবে না। হামি ভালো কইর‍্যা দেখেছি।’

এ পর্যায়ে ‘মিম্বার কী কহিছে শুনো তো’ বলে জসিম তাঁর চাচাতো ভাই নাসির উদ্দিনের সঙ্গে ইকবালকে কথা বলতে দেন। নাসির বলেন, ‘কী অবস্থারে কেমন আছিস? চিন্তাও লাগছে একটা পিস্তুল...।’ ইকবাল বলেন, ‘এটা দাদা চার মাস আগে যখুন গন্ডগোল হয়েছিল না, তখনই দিয়েছে। দেয়ার কথা তিনট্যা, দিয়েছে ধরেন একটা।’ ইউপি সদস্য জানতে চান, ‘এর দাম কত পড়ছে?’ জবাবে ইকবাল বলেন, ‘এ্যার দাম মুনে করেন ৩০ হাজার। আর একাডডা গুলি আঠারো শ-উনিশ শ।’ নাসির বলেন, ‘তাহিলে ছোট গ্যালা। বড় গেলা হলে ৬০,৭০, ৮০ হয়্যা যাইত।’ ইকবাল বলেন, ‘হু, সাইলেন্সারসহ যুতি ল্যাও, কোনো আওয়াজ করবে না। গুলি মাইরব্যা কোনো আউয়াজ করবে না। হাঁর কাছেই ছিল, সালেন্সারসহ।’

নাসির প্রশ্ন করেন, ‘ওরাকে দিল কে?’ জবাবে ইকবাল বলেন, ‘এটা ধরেন যে ওবায়দুল পাঠান, ওই সংগ্রহ করে দিয়েছে। এইডা থাকার কথা আমরুলের কাছে।’ ইকবাল বর্ণনা দিতে থাকেন, ‘রাজরামপুরের সামনে পোখরের ওখানে ওবায় পাঠানের জমি আছে ১১ বিঘা। ওই জমির লাইগ্যা বোলে, “ভাই আপনি শুধু হামরাকে ব্যবহার করছেন।” তখুন বলে, “কী লাগবে তোর?” তখন বোলে, “ঠিক আছে তোরা তিনজনাকে তিনখ্যান ব্যবস্থা করে দিছি।” জিনিসগ্যালার অর্ডার হয়েছিল তিনঝোনার লাইগ্যা তিনটা। আমরুল ট্রেনিংও দিয়েছে ১০ দিন।’

এই আমরুল অস্ত্রটি রিশানকে দিয়েছেন বলে কথোপথনে উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ইকবাল, জসিম কিংবা আমরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে যোগাযোগ করা হলে ফোনকল রেকর্ডটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন। ফোনকল রেকর্ডটি ছড়িয়ে পড়ার কথা শুনেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘কথাটা কিছুদিন আগের। রিশান, আমরুল, ইকবাল—তারা সব একই গ্রুপে চলাফেরা করে। বালু নিয়ে একটা ঘটনা ঘটে, সেখানে রিশান অস্ত্র দেখায়। বিষয়টা জানতে আমি রিশানের ঘনিষ্ঠ ইকবালের সঙ্গে কথা বলি। তার আগে আমার চাচাতো ভাই জসিম কথা বলে।’ তিনি জানান, রাজারামপুরে বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠানের একটি জমি রয়েছে। এ জমিকে কেন্দ্র করে ওবায়েদ অস্ত্রটি আমরুলকে দিয়েছেন বলে তিনি ইকবালের কাছ থেকে শুনেছেন।

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ওবায়েদ পাঠান বলেন, ‘আমার সঙ্গে রিশানের কখনো দেখা হয়নি। আমি তাকে চিনি না। আমি ফোনকলের ব্যাপারে প্রথম শুনছি। আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বহু দিনের। নিজে হাতে নেড়েও দেখিনি কখনো। আমার লাইসেন্স করা অস্ত্রও নেই।’ অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি বলে হাসিনার সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে, তাহলে আমি কী করব? রিশান কি আমাদের দল-পার্টির ছেলে? আমাদের সঙ্গে কী সম্পর্ক? আমাদের সঙ্গে তো কোনো মিছিল-মিটিং করে না। দলীয় পদ নাই। তাহলে আমার সঙ্গে কী সম্পর্ক? কেউ যদি আমার নাম ব্যবহার করে কিংবা রেকর্ড করে, সেটার জন্য তো আমি দায়ী না। আমার সঙ্গে তো ডিরেক্ট তাদের কথা হয়নি। কে কী বলল, না বলল—এগুলোতে কিছু যায় আসে না। কার কাছে কী আছে, আমি কিছুই জানি না।’

রিশান গ্রেপ্তার, অস্ত্র উদ্ধার হয়নি

গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ৫ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের মিরের খৈলান এলাকায় একটি সমাবেশ ছিল। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির আরও এক মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম উপদেষ্টা হারুন-অর-রশিদ। সমাবেশ থেকে ফেরার পথে রিশানের বাড়ির সামনে ইসমাইল হক কিনু নামের একজনের ওপর হামলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হামলার সময় রিশানের বাবা জিয়াউর রহমানও ছিলেন।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই মো. তুফানি ১২ আগস্ট জিয়াউর রহমান, তাঁর ছেলে রিশানসহ ১৪ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার এজাহারের দুটি কপি পাওয়া গেছে। খসড়া কপিতে লেখা হয়েছিল, হামলার সময় ককটেল বিস্ফোরণ হয় এবং রিশান পিস্তল দিয়ে দুই রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করেন। পরে থানায় মামলা হিসেবে যে এজাহার রেকর্ড হয়, সেখানে পিস্তলের প্রসঙ্গটি নেই। পুলিশ পিস্তলের প্রসঙ্গটি বাদ দিতে বাধ্য করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তবে মামলার পরদিন গত বুধবার রাতে রিশানকে গ্রেপ্তার করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানা-পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হাই আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। এ সময় আদালত তাঁকে এক দিনের রিমান্ড দেন। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

যোগাযোগ করা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আব্দুল হাই তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলবেন না বলে জানিয়েছেন। ছড়িয়ে পড়া ফোনকলের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও দাবি করেন। তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান জানান, তিনি ফোনকলের বিষয়টি জানেন। রিমান্ডে থাকাকালে অস্ত্রের বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি তিনি নিজেও রিশানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে রিশান মুখ খোলেননি। কোনো অস্ত্রও উদ্ধার করা যায়নি। বিষয়টি অত্যন্ত গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দৌড়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে বেঁচে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি

গাজীপুর (শ্রীপুর) প্রতিনিধি
পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে জালাল উদ্দীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
পা পিছলে পড়ে যাওয়ার মুহূর্তে জালাল উদ্দীন। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

গাজীপুরের শ্রীপুরে দৌড়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে পা পিছলে চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে যান কৃষক জালাল উদ্দীন। পুরো ট্রেন তাঁর ওপর দিয়ে গেলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তিনি। গতকাল রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে শ্রীপুর রেলস্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। নিহত জালাল উদ্দীন (৪৫) ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চরআগলী ইউনিয়নের নিধিরচর গ্রামের মো. তৈয়ব উদ্দিনের ছেলে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যুর আগে জালাল উদ্দীনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি জানান, শ্রীপুর রেলস্টেশনে দাঁড়ানো মোহনগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেন। এ সময় তিনি ট্রেনে উঠতে দৌড় দেন। একই সময়ে স্টেশনের এক নম্বর লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ট্রেনটিও ছেড়ে দেয়। এ সময় পা পিছলে ট্রেনের ইঞ্জিনের নিচে চলে যান তিনি। এর পরের ঘটনা বলতে পারেননি গুরুতর আহত জালাল উদ্দীন।

স্থানীয় দোকানি মনির হোসেন জানান, স্টেশনে দুটি ভিন্ন লাইনে দুটি ট্রেন দাঁড়ানো ছিল এবং একই সঙ্গে ট্রেন দুটি ছাড়া শুরু করে। হঠাৎ জালাল উদ্দীন এক নম্বর লাইনে দৌড়ালে পা পিছলে চোখের পলকে ট্রেনের নিচে পড়ে যান। জামালপুর কমিউটার ট্রেনটি তাঁর ওপর দিয়ে চলে যায়। ট্রেনটি চলে যাওয়ার পরপরই স্টেশনের লোকজনের সহযোগিতায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে তিনি স্বাভাবিকভাবে কথা বলছিলেন এবং নিজের নাম-ঠিকানা বলতে পারছিলেন। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে চরআগলী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য শহিদুল ইসলাম দুলু বলেন, রাতেই তিনি মারা গেছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘গতকাল রোববার রাত ৯টার পর গুরুতর আহত অবস্থায় কয়েকজন মানুষ জালাল উদ্দীন নামে একজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

শ্রীপুর রেলস্টেশন মাস্টার মো. সাইদুর রহমান বলেন, ‘এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয়রা হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। মৃত্যুর বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তা ছাড়া বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ দেখবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীতে এনসিপি নেতা পাটওয়ারীর কুশপুতুল পোড়াল জিয়া সাইবার ফোর্স

নোয়াখালী প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৩২
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপির পক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের করণীয় এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির নেতাদের সঙ্গে জিয়া সাইবার ফোর্স (জেডসিএফ) নোয়াখালী জেলা শাখার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গতকাল রোববার রাতে নোয়াখালী জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং তাঁর ছবিসংবলিত কুশপুত্তলিকা দাহ করে সভায় অংশগ্রহণকারীরা।

নোয়াখালী জিয়া সাইবার ফোর্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন বাদলের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো।

বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুনুর অর রশিদ আজাদ, নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম পলাশসহ আরও অনেকে।

এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

সভায় বক্তারা বলেন, অদৃশ্য শক্তি ক্রমশ দৃশ্যমান হয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার করে ভোটারদের বিভ্রান্ত করছে। এ অপপ্রচার রুখে দিতে হলে বিএনপির জিয়া সাইবার ফোর্স ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের সঠিক তথ্য ছবি ও প্রমাণ দিয়ে জনগণকে বোঝাতে হবে এবং দল থেকে যাকে ধানের শীষ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে।

সভা শেষে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার কারণে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং তাঁর ছবিসংবলিত কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জে তরুণকে গুলি করে হত্যা, বিএনপির দুই গ্রুপে উত্তেজনা

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৩৫
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মুন্সিগঞ্জের মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি গ্রামে প্রতিপক্ষের গুলিতে তুহিন দেওয়ান (২২) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। রোববার রাত ১০টার দিকে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। নিহত তুহিন দেওয়ান মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ বেহেরকান্দি এলাকার ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি সেলিম দেওয়ানের ছেলে।মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির বিবদমান দুই গ্রুপের পূর্ববিরোধের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে।

এ ঘটনার পর থেকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের বেহেরকান্দি ও মুন্সিকান্দি গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। এতে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত তুহিন মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ওয়াহিদ মোল্লা ও বিএনপি নেতা আতিক মল্লিকের অনুসারী।

নিহতের চাচাতো ভাই আকাশ দেওয়ান জানান, রোববার রাতে তুহিন হাঁটার জন্য বাসা থেকে বের হয়। এ সময় মুন্সিকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মোল্লাকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা ওজির আলী ও আওলাদ গ্রুপের অনুসারী লিটন ব্যাপারীর নেতৃত্বে পেছন থেকে তুহিনকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও গুলি করে। এ সময় তুহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। স্থানীয় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়ে তাদের মধ্যে পূর্বের বিরোধ ছিল বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক প্রান্ত সর্দার জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর পিঠে ও ঘাড়ে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির জানান, কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তদন্ত করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রাজশাহীতে মৌসুমের প্রথম কুয়াশা: তাপমাত্রা কমে ২০-এর নিচে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীতে নেমে এসেছে এ বছরের প্রথম কুয়াশা। সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোর থেকেই রাজশাহী শহর ও আশপাশের উপজেলার গ্রামগুলোর চারপাশ মোড়ানো ছিল ঘন কুয়াশার চাদরে। এই কুয়াশাময় সকাল যেন জানিয়ে দিয়েছে, আসছে শীত, আসছে স্নিগ্ধতার মৌসুম।

শীতের এমন আগমনী ছোঁয়ায় বদলে গেছে প্রকৃতির রূপ। কুয়াশাঢাকা সকাল জানিয়ে দিচ্ছে, শীত আর বেশি দূরে নয়। এদিন ভোরের আলো ফুটলেও মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে চলতে দেখা যায় হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশা ভেদ করে গন্তব্যের পথে ছুটে যায় মানুষ।

এদিকে গ্রামের মাঠে শিশিরভেজা ঘাসে খেলায় মত্ত শিশুরা যেন প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে ওঠে। মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো মিলেমিশে সৃষ্টি করে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।

মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাকড়সার জালে ঝুলে থাকা শিশিরবিন্দু আর ধূসর আকাশে সূর্যের মিটিমিটি আলো। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের রেলগেট এলাকায় কাজের সন্ধানে আসা শ্রমিক আবদুল জব্বার বলেন, ‘আজকের সকালেই এবার প্রথমবার শীত টের পেলাম। এখন থেকে হয়তো শীত বাড়বে।’

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন জানান, সোমবার ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ২৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এখন থেকে তাপমাত্রা কমবে বলেও জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত