Ajker Patrika

‘জনগণের নেতার’ শূন্যতায় বগুড়া সদর, ভোটে ‘ক্লান্ত’ এলাকাবাসী

নাজমুল হাসান সাগর, বগুড়া থেকে
আপডেট : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮: ৩৫
‘জনগণের নেতার’ শূন্যতায় বগুড়া সদর, ভোটে ‘ক্লান্ত’ এলাকাবাসী

জনপ্রতিনিধিদের কাছে চাওয়া-পাওয়ার হিসাবের নিষ্পত্তি না হতেই নতুন করে বারবার নেতৃত্ব বাছাইয়ের পরীক্ষায় পড়তে হচ্ছে বগুড়া সদরবাসীদের। যেন ভোট দিতে দিতেই ‘ক্লান্ত’ দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দখলে থাকা এই আসনের ভোটাররা। তাঁদের অভিযোগ, দলীয় রাজনীতির বাইরে সদ্য পদত্যাগী বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ বগুড়া সদরের মানুষের চাওয়া তেমন পূরণ করেননি।

রাত পোহালেই একাদশ জাতীয় সংসদে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য তৃতীয়বারের মতো ভোট দেবেন বগুড়া-৬ সদর আসনের ভোটাররা। পাঁচ বছর না গড়াতেই তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন, উপনির্বাচন নিয়ে অনেকটা বিরক্তই তাঁরা। একের পর এক ভোটাররা ভোট দিয়ে যাচ্ছেন; কিন্তু ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদ পর্যন্ত যেতে পারছেন না শুধু দলীয় রাজনীতি চিন্তা করে। দলীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচে নেতৃত্বশূন্য হয়ে অনেকটাই শোকাতুর, ক্ষুব্ধ ও হতাশ এই আসনের মানুষ। সংসদে গিয়ে তাঁদের চাওয়া-পাওয়া ও দাবি-দাওয়ার কথা বলার মতো কেউ নেই বলে আক্ষেপও জানিয়েছেন বগুড়া সদরের মানুষ। 

বগুড়া শহরের ব্যস্ততম এলাকা সাতমাথা। কাছেই বগুড়া জেলা স্কুলের মূল ফটক। এই ফটকের পাশেই বেশ কিছু চায়ের দোকান। সেখানে নির্বাচন নিয়ে তুমুল আলাপে মজেছেন নানা বয়সী মানুষ। তবে তাঁদের আলোচনায় আগামীকালের ভোটের থেকে বিগত কয়েকবার ভোট দিয়ে তাঁরা কী পেলেন এসব নিয়েই আলোচনা হচ্ছিল বেশি। 

এই এলাকাতেই ছোটখাটো ব্যবসা করেন এমদাদুল হক। বগুড়ার আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বললেন, ‘এইবারের মেয়াদে (বর্তমান সংসদ) আমরা তিনবার ভোট দেব এমপি নির্বাচনের জন্য। কিন্তু আমাদের লাভটা কী? প্রথম যে নির্বাচিত হলো সে তো শপথই নিল না। তারপর যে নির্বাচিত হলো, কিন্তু সে সংসদে গেছে কয় দিন? এখন আবার দলের রাজনীতির জন্য পদত্যাগ করছে। আমরা ভোট দেব। আবার কেউ নির্বাচিত হবে। কিন্তু তাঁরা নির্বাচিত হলেইবা কী হবে! এক বছরও সময় নাই। এই ভোট দিয়েইবা কী হবে!’ 

অপেক্ষাকৃত বয়সে ছোট এক যুবক এমদাদুলের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বললেন, ‘আপনি আছেন গত চার বছরের আলাপ নিয়ে। গত ১২-১৩ বছরে এই এলাকায় কী হয়েছে? এখন থেকে ১৫ বছর আগে বগুড়া উন্নত ছিল এইটা ঠিক। কিন্তু তখন অন্যান্য যে জেলা শহর বগুড়ার থেকে অনুন্নত ছিল, সেগুলো এখন বগুড়ার থেকে অনেক অনেক বেশি উন্নত। আমরা এক জায়গায় দাঁড়ায় আছি। তাই শুধু গত চার বছরে না, আমরা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বঞ্চিত। আমাদের জন্য কথা বলার মানুষ নাই। আমরা ভোট দিয়ে যাঁদের নির্বাচিত করি তাঁরা আমাদের কথা বলেন না।’ 

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গ তোলেন কিনা উল্লাহ নামে বয়োজ্যেষ্ঠ এক ব্যক্তি। উদ্দেশ্যহীনভাবে তিনি বলছিলেন, ‘এবার ভোট দিলে আমরা এমপি পাব বড়জোর সাত মাসের জন্য। শপথ নিতে নিতেই তাঁদের সময় শেষ হয়ে যাবে। তাঁরা আমাদের নিয়ে ভাবারই সময় পাবেন না। আমরা যেই হতভাগা সেই হতভাগাই থাকব।’ এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে এমদাদুল হক আবার বললেন, কেউ কোনো প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না। খালি ভোট চাচ্ছে। কোনো প্রার্থীর কোনো ম্যান্ডেট নাই। নিয়ম রক্ষার নির্বাচন এইটা। এসব কথাই যেন বগুড়া-৬ আসনের প্রতিটি সাধারণ ভোটারের মনের কথা। 

এবারের উপনির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে মোট প্রার্থী ১১ জন। স্বতন্ত্র প্রার্থী পাঁচজন। আলোচনায় আছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমর, স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের আব্দুল মান্নান আকন্দ এবং একতারা প্রতীক নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত-সমালোচিত আশরাফুল আলম (হিরো আলম)। 

দলীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচে নেতৃত্ব শূন্য হয়ে অনেকটাই শোকাতর, ক্ষুব্ধ ও হতাশ এই আসনের মানুষশহরের বিভিন্ন জায়গায় টানানো পোস্টারেও উল্লেখিত প্রার্থীদের কোনো প্রতিশ্রুতি দেখা যায়নি। সাধারণ ভোটারদের এসব ক্ষোভ, হতাশা, প্রত্যাশা ও প্রশ্ন নিয়ে আলোচনায় থাকা প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী নূরুল ইসলাম ওমর আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বগুড়া সদরের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত এটা সত্য কথা। তবে ভোট দিতে দিতে তাঁরা বিরক্ত এটার সঙ্গে আমি একমত নই। বরং মানুষ তাঁদের ভোটটা দিতে পারবেন কি না। এটা নিয়েই মনে হয় তাঁরা বেশি শঙ্কিত। কাল সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হবে কি না এটা নিয়ে আমাদের কথা বলা উচিত।’ 

জনগণের জন্য কী প্রতিশ্রুতি নিয়ে নির্বাচন করছেন? এমন প্রশ্নে তাঁর কৌশলী উত্তর, ‘আমি আগেও পার্লামেন্টে ছিলাম। এবার যেতে পারলে পুরোনো কাজগুলো সম্পন্ন করব। নতুন করে কিছু ভাবিনি।’ তবে তাঁর নির্বাচনী পোস্টারে ‘আধুনিক সদর উপজেলা গড়ার’ কথা লেখা আছে। 

একই প্রশ্ন নিয়ে কথা হয় একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমের (হিরো আলম) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এবার বঞ্চিত বগুড়াবাসীর সঙ্গে কথা বলার জন্য সংসদে হিরো আলম যাবে। আমি নির্বাচিত হলে যথাসাধ্য কাজের চেষ্টা করব।’ 

নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে হিরো আলম বলেন, ‘আমার কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। এই সাত মাসে আমি নির্বাচিত হলে জনগণের জন্য কিছুই করতে পারব না। অযথা জনগণকে বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে কিছু করতে না পারলে সেটা বেইমানি  হবে। তবে, এই এলাকায় যদি বড় বড় ১০টা সমস্যা থাকে, তাহলে সেখান থেকে একটা আমি বেছে নেব এবং সেটা সমাধানের চেষ্টা করব।’ 

আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাগেবুল আহসানের সঙ্গে সকালে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে পরে কথা বলার অনুরোধ করেন, দুই ঘণ্টা পরে কল দিতে বলেন। পরবর্তী সময়ে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা হয় বগুড়ার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিনের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বগুড়া বিএনপির ঘাঁটি হওয়ায় বর্তমান ক্ষমতাসীনদের এই এলাকা নিয়ে এক ধরনের অ্যালার্জি রয়েছে। আমাদের বগুড়া সদরের হয়ে কোনো সংসদ সদস্য, মন্ত্রী বা নেতা নেই যাঁরা এই এলাকার জনগণের হয়ে কথা বলবেন, সমস্যাগুলো সংসদে তুলে ধরবেন। নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আমরা বগুড়া সদরবাসী নিদারুণ কষ্টে আছি।’ 

বারবার সংসদ নির্বাচন ও উপনির্বাচন নিয়ে মানুষের হতাশা ও বিরক্তি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ধরেন, একটা ধারণা বলি। এটা হবে কি হবে না, সেটা পরের ব্যাপার। এই যে হিরো আলম, দুই আসনে নির্বাচন করছেন। যদি দুই আসনেই হিরো আলম নির্বাচিত হন, নির্বাচিত হওয়ার পর যদি সদর আসন ছেড়ে দেন, তাহলে তো এখানে আবার নির্বাচন হবে। হবে না? আসলে বর্তমানে বগুড়া সদর আসন হাসির খোরাক হয়ে গেছে। আসলে রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে দলের পক্ষ থেকে ভোট বর্জন, পদত্যাগ বা শপথ না নেওয়ার মতো কাজ করেন নেতারা। কিন্তু এগুলো জনগণ ভালোভাবে নেয় না।’ 

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই যে কয়টি সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, সব সময় বিএনপির দখলে ছিল এই আসন। বেশির ভাগ সময় নির্বাচিত হয়েছেন দলটির প্রধান খালেদা জিয়া। এবার বগুড়া-৬ আসনে মোট ১৪৩টি ভোটকেন্দ্র। প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গেছে সকাল থেকেই। এখন শুধু দিন গড়িয়ে রাত পোহানোর অপেক্ষা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুগদা-মান্ডা সড়ক: উচ্ছেদের পর ফের দখল

  • ৫০ ফুট চওড়া করা মুগদা-মান্ডা সড়ক দখলের ফলে আবার সরু।
  • রাস্তাটির উভয় পাশ দখল করে অর্ধডজন দোকান বসেছে।
  • সংস্কারকাজে ধীরগতির কারণে সড়ক দখল হয়েছে: এলাকাবাসী।
সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা 
উচ্ছেদের পর মুগদা-মান্ডা সড়কটি ফের দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। এতে সড়কটি আগের মতোই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি মুগদা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
উচ্ছেদের পর মুগদা-মান্ডা সড়কটি ফের দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে অস্থায়ী স্থাপনা। এতে সড়কটি আগের মতোই সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি মুগদা এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

চওড়া সড়কের মাঝ পর্যন্ত একটি রেস্তোরাঁ। মোতালেব রেস্টুরেন্ট নামের ওই রেস্তোরাঁর পাশেই বাকরখানির দোকানটি যেন সড়কের গলা চেপে ধরেছে। উচ্ছেদ অভিযানের পর ৫০ ফুট চওড়া হওয়া ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুগদা-মান্ডা সড়কটি দখলের ফলে আবার সরু হয়ে গেছে। এই সড়কের উভয় পাশে অর্ধডজন দোকান বসেছে। এগুলো যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনে কেউ অভিযোগ না দেওয়ায় সড়কটি নতুন করে দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় সড়কটির সংস্কারকাজ এগিয়ে নিতে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তারা।

ডিএসসিসির ৬, ৭১ ও ৭২ ওয়ার্ডের ওপর দিয়ে গেছে মুগদা-মান্ডা সড়ক। সরু এই সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট হতো। জনভোগান্তি কমাতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় এই সড়ককে ৫০ ফুটে প্রশস্ত করা হয়। এরপর সড়কটির উন্নয়ন ও সংস্কারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২৪ সালে মুগদা বিশ্বরোড থেকে মান্ডা হায়দার আলী উচ্চবিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ডিএসসিসি-রাজউক। এরপর সড়কের সংস্কারকাজ করার কথা ছিল। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সংস্কারকাজ থামকে যায়। এই সুযোগে সড়কটির অর্ধেকের বেশি আবার দখল হয়ে গেছে। ৫০ ফুট চওড়া সড়কটি এখন অর্ধেকে ঠেকেছে।

মুগদা এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক নুরুল হক বলেন, ‘দেট্টা (দেড়) বছর ধইরা রাস্তাডা জ্বালাইতাছে। যখন মনে চায় কাম (কাজ) করে, যখন মনে চায় কাম বন্ধ রাখে। সবই এরার মনমর্জি। মর্জি হইলে করে, না হইলে করে না। কোনো নিয়মকানুন নাই।’

মুগদা বিশ্বরোড ধরে মান্ডার দিকে এগোলে দেখা যায়, মুগদা বড় মসজিদের কাছে দুই পাশ থেকেই সড়কটি দখল হয়ে গেছে। উত্তরপাশে হাজী এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মুদি ও তেলের দোকান সড়কের ওপর ছাউনি দিয়ে বারান্দা তৈরি করেছে। মসজিদ লাগোয়া দোকানগুলো এর আগে উচ্ছেদ করা হলেও পুনরায় নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে ওই জায়গায় সড়কের অর্ধেক অংশ দখল হয়ে গেছে।

সড়কের ওপর ছাউনি দিয়ে

দখল করার বিষয়ে জানতে চাইলে হাজী এন্টারপ্রাইজের মো. নাজমুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটা তো বাড়ির মালিকের জায়গা, সিটি করপোরেশন থেকে তিনি কোনো টাকা পান নাই। তাই তিনি তাঁর জায়গা নিয়ে নিয়েছেন।’

মুগদা ওয়াপদা গলির বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, ঢাকার অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা মুগদা ও মান্ডা। কয়েক লাখ লোক এখানে বসবাস করে। গত সরকার এই সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সড়কটি ৫০ ফুট করে দেয়। কিন্তু এখন কেউ দেখে না। সড়কটি ঠিক করতে করতেই অর্ধেক রাস্তা আবার দখল হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা হাছিবা খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়কটি দখলের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। যদি কোথাও সরকারি সড়ক বা সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আসে, আমরা তা উদ্ধারের জন্য যা যা করা দরকার, তার সবই করব।’

সড়কটির সংস্কারকাজের ধীরগতির জন্য দেশের অস্থিতিশীল অবস্থাকে দায়ী করেছেন ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আগে যাঁরা কাজ করেছিলেন (সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস) তাঁদের পক্ষে যা করা সম্ভব, বর্তমান প্রশাসনের পক্ষে সেটি করা একটু কঠিন। বর্তমান প্রশাসনের সেই সক্ষমতা নেই। সরকার পতনের পর আগের ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। আমরা নানাভাবে কাজটা করার চেষ্টা করছি।’

সড়কের কোনো অংশ দখল হলে তা উদ্ধার করা হবে জানিয়ে নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা করব। আমি খোঁজ নিয়ে যা যা করা যায়, তা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুনামগঞ্জে দুস্থদের কর্মসূচি: টাকায় ভিডব্লিউবির নাম বিক্রি

  • উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
  • বিভিন্ন ইউনিয়নে উপকারভোগীর জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
  • একটি ইউনিয়নের অধিকাংশ কার্ড বিতরণে আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ।
বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুনামগঞ্জে দুস্থ নারীদের জন্য পরিচালিত ভিডব্লিউবি কর্মসূচির উপকারভোগীদের তালিকা তৈরিতে অনিয়ম এবং জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, চলতি মেয়াদে উপকারভোগীর নাম অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে আর্থিক লেনদেনসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে। এ ছাড়া গত মেয়াদে বিভিন্ন ইউনিয়নে উপকারভোগীর জমা করা টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।

মহিলা অধিদপ্তর পরিচালিত ভিডব্লিউবির উদ্দেশ্য হলো, গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে এই জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে দরিদ্রের বদলে সচ্ছলদের নাম যুক্ত করা হয়েছে তালিকায়। সংশ্লিষ্ট দপ্তর, চেয়ারম্যান ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার যোগসাজশে ইউনিয়ন পরিষদের কিছু লোক জড়িত—বলছেন খোদ কর্মকর্তা, ইউপি সদস্যসহ অনেকেই। তথ্যানুসন্ধানেও এর সত্যতা পাওয়া গেছে।

ভিডব্লিউবি কার্ড বিতরণে অনৈতিক অর্থ লেনেদেন-সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। তাতে বলতে শোনা যায়, ‘হ্যালো, আফাই ভাই। হেরা চারজনে দেড় হাজার কইরা দিছে না?’ অপর প্রান্ত থেকে আফাই মিয়া—‘হ্যাঁ, হ্যাঁ।’ ‘আমার টেকাডা (দেড় হাজার টাকা) দেওয়ন (দেওয়া) লাগে। নাইলে আমার নামডা বাদ যাইব। আমি গরীব মানুষ।’ পাল্টা ধমকের সুরে আফাই মিয়া বলেন, ‘আপনারা তো পণ্ডিত মানুষ। পণ্ডিতি কইরা মেম্বারের কাছে গেছিলেন... তর্ক ধইরেন না। এত দিন ফোন দিলেন না। আজকে ফোন দিছেন কিসের জন্য।’

‘ফোন দিছি টেকা দেওয়ার লাগি। আপনার বিকাশ নাম্বারটা দেইন (দেন)?’ আফাই মিয়া—‘তুলেন... পার্সোনাল।’

টাকা পাঠানোর পর—‘হ্যালো, টেকা পাঠাইছি। লাস্টে তেত্রিশ। দেখইন গেছেনি।’ আফাই মিয়া—‘আচ্ছা, ওকে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য জানিয়েছেন, তাঁর ইউনিয়নে অধিকাংশ নামই টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে নামগুলো বিক্রি করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘গণশুনানির দিন কেউ আসেনি, তাই আমার ওয়ার্ডের সব নাম বাদ পড়েছে। যোগাযোগ করলে বলা হয়, সব নাম চূড়ান্ত হয়ে গেছে। আবার যে পাঁচজন টাকা দিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে গণশুনানির দিন তাদের আনা হয়েছে। তাদের কাছে আফাই মিয়ার তরফ থেকে প্রথমে ৩ হাজার দাবি করা হলেও পরে দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।’

আফাই মিয়াকে টাকা প্রদানকারী আশরাফুল (ছদ্মনাম) বলেন, ‘টাকা দিলেও আমার বউয়ের (স্ত্রী) নাম বাতিল কইরা দিছে। ইউনিয়ন অফিসে গেলে তারা কইছে পরবর্তীতে নাম দিয়া দিব। আমরার গ্রামের জাকির হোসেন, আবুল হোসেন, বুলবুল, আমিরুল, আল-আমিন এই পাঁচজনে টেকা (টাকা) দিছে। হেরার নাম হইছে; কিন্তু আমার নাম নাই।’

তবে বেহেলী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সুজন দাস ও উদ্যোক্তা আফাই মিয়া এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গণশুনানির মাধ্যমে সবকিছু যাচাই-বাছাই হয়েছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।’

সুনামগঞ্জ মহিলা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৫-২৬ মেয়াদে জেলার ২৩ হাজার ৬১৫ জন উপকারভোগী ভিডব্লিউবি কর্মসূচির আওতায় খাদ্যসহায়তা পাচ্ছেন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২ হাজার ১৩৩, বিশ্বম্ভরপুরে ২ হাজার ২৬৩, ছাতকে ২ হাজার ১৪৫, দিরাইয়ে ২ হাজার ৭৮, ধর্মপাশায় ২ হাজার ১৬৮, দোয়ারাবাজারে ২ হাজার ২০৭, জগন্নাথপুরে ২ হাজার ৭৩, জামালগঞ্জে ২ হাজার ২১৩, শাল্লায় ২ হাজার ১৬২, শান্তিগঞ্জে ১ হাজার ৯৮৩ ও তাহিরপুরে ২ হাজার ১৯০ জন।

জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজাহান সিরাজ বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি ভিডব্লিউবির উপকারভোগী নির্বাচনে মতামত নেওয়া হয়নি। গণশুনানির নিয়ম রক্ষার কার্যক্রম দেখা ছাড়া কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না আমাদের। বঞ্চিত ব্যক্তিরা এ সম্পর্কে আমাদের কাছে জানতে চায়। কিন্তু আমরা কোনো সদুত্তর দিতে পারি না। এর মাধ্যমে আমাদেরকে ছোট করা হয়েছে।’

গত মেয়াদে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে জানিয়ে শাল্লা উপজেলার বাহাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সহদেব চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের ভিডব্লিউবির তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এক ইউপি সদস্য আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে তিনি এখন পরিষদে নেই।’

এদিকে তাহিরপুরের উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে বলেন, গত মেয়াদে ৪০০ উপকারভোগী প্রতি মাসে সঞ্চয় বাবদ প্রায় ১৯ লাখ টাকা জমা দিয়েছিলেন, সেটা ফেরত দেওয়া হয়নি। চেয়ারম্যান সাহেব গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় সময় চেয়েছেন। তবে নতুন মেয়াদে কারও কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা নেওয়া হয়নি।

সুনামগঞ্জ মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ জে এম রেজাউল আলম অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, ‘জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার, জগন্নাথপুর—এই চার উপজেলার খবর আমি জানি না। এই উপজেলাগুলোতে অনেক টাকা আত্মসাতের মৌখিক অভিযোগ আছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেও কোনো ফল পাওয়া যায় না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঞ্চয়ের টাকা উপকারভোগীর

নিজ নিজ অ্যাকাউন্টে রাখার কথা। কিন্তু এগুলো কিছু কিছু ইউনিয়নে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এতে চেয়ারম্যানরা জড়িত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহী-৪ আসন: জিয়াবিরোধীরা কোণঠাসা

  • বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর উত্তপ্ত বাগমারা।
  • প্রতিপক্ষের জমি দখল, ককটেল হামলা, ঘেরে বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে।
  • তদন্ত করতে বলছেন অভিযুক্ত জিয়াউর রহমান।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া। ছবি: সংগৃহীত
ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা। ৩ নভেম্বর দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর থেকে এ উপজেলায় রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার দিবাগত রাতেও ককটেল হামলা এবং তিনটি পুকুরে বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটেছে। রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জিয়ার কর্মীরা এসব ঘটাচ্ছেন। বেশি প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন এ আসনের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব অধ্যাপক কামাল হোসেনের অনুসারীরা। সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর ওই রাতেই বাইগাছা গ্রামের এমরান আলী নামের এক ব্যক্তির সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে গাছ কেটে ফেলা হয়। এমরানের অভিযোগ, বিএনপির প্রার্থী ডি এম জিয়ার লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ নিয়ে সেদিনই থানায় তিনি একটি মামলা করেছেন।

শনিবার দিবাগত রাতে দুবিলা মধ্য দৌলতপুর বিলে অধ্যাপক কামাল হোসেনের চাচা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ আব্দুস সোবহানের ইজারা নেওয়া তিনটি পুকুরে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে। এতে ৬০ বিঘার পুকুর তিনটিতে প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ মারা গেছে।

গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া দিঘিতে সম্প্রতি বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয় মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া দিঘিতে সম্প্রতি বিষ দিয়ে মেরে ফেলা হয় মাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুলও। শনিবার রাতে টুটুল ও তাঁর শ্বশুর আবদুস সামাদের বাড়িতে ককটেল হামলা করা হয়। টুটুলের বাড়িতে ফেলে রাখা ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হয়নি। তবে তাঁর শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক আব্দুস সামাদের বাড়িতে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। পুলিশ আলামত উদ্ধার করেছে। টুটুলের বাড়ি বাগমারার বুজরুককৌড় গ্রামে। আর তাঁর শ্বশুরবাড়ি শান্তিপাড়া গ্রামে।

ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান বলেন, ‘এই পুকুরগুলো আগে চাষ করতেন ডি এম জিয়াউর রহমান। তিনি জমির মালিকদের ঠিকমতো টাকা দিতেন না। পরে জমির মালিক আমাকে পুকুরগুলো দেন। আমি নিয়মিত টাকা দিয়ে মাছ চাষ করছি। এখানে শতাধিক পুকুর। বেছে বেছে আমার পুকুরগুলোতে বিষ দেওয়া হয়েছে। এটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’

যুবদল নেতা টুটুল বলেন, ‘মনোনয়ন ঘোষণার পর আমরা সবাই নিজেদের মতো কাজ করেছি। দ্বন্দ্ব-বিভেদ হয়নি। সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর এখন এসব ঘটনা ঘটছে। আমার শ্বশুর কোনো রাজনীতি করেন না। তিনি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাঁর বাড়িতে ককটেল হামলা করা হয়েছে। আমার বাড়িতেও ককটেল ছোড়া হয়েছে। সেটা বিস্ফোরিত হয়নি। সেগুলো আমরা দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দিয়ে উদ্ধার করিয়েছি।’

সরেজমিনে বাগমারা: বাইগাছা গ্রামের এমরান আলী রাজনীতি করেন না। তাঁর জমির প্রাচীর ভেঙে গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে বাইগাছা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, পাকা রাস্তার পাশেই ওই জমিটি। ইটের প্রাচীর ভাঙা। আম, মেহগনি, নারিকেল ও কলাগাছগুলো কাটা।

এমরানের স্ত্রী কাজলী আক্তার বলেন, ‘বাইর হোলিই মাইরবে বলে হুমকি দিছে। আমরা তাদের শক্তির সাথে পারিচ্চি না। কেস করার কারণে হাত-পা কাইটি দিবে বলে হুমকি দিছে।’

৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে বোয়ালিয়া বিলে গোবিন্দপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের ইজারা নেওয়া ৫৫ বিঘা দিঘিতে বিষপ্রয়োগ করা হয়। আর বিলশনি গ্রামে পল্লি চিকিৎসক বীরেন্দ্রনাথ প্রামাণিকের বাড়িতে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। দুজনেই স্থানীয় বিএনপির নেতা এবং কামাল হোসেনের পক্ষের লোক। শুক্রবার সকালে দিঘির পাড়ে পাওয়া যায় চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে। দিঘির পাড়ে দেখা যায়, বড় বড় অনেক মাছ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানিতেও কিছু মাছ ভাসছে।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি কামালের মঞ্চে ছিলাম, কিন্তু সব সময় বলেছি যে যিনি ধানের শীষ পাবেন, তাঁর পক্ষেই আমরা কাজ করব। কিন্তু ৩ তারিখে জিয়া মনোনয়ন পাওয়ার পর তাঁর কর্মীরা আমাকে হুমকি দেয়। রাতেই দিঘিতে বিষ দিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ মেরে ফেলে।’

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা গ্রামের এমরান আলীর সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে কেটে ফেলা হয় গাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বাইগাছা গ্রামের এমরান আলীর সাড়ে ৬ শতক জায়গা দখলে নিতে প্রাচীর ভেঙে কেটে ফেলা হয় গাছ। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগমারা থানার ওসি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এমরানের প্রাচীর ভাঙা ও গাছ কাটার ঘটনাটা প্রকাশ্যে ঘটেছিল। তাই মামলা নেওয়া হয়েছে। রোববার সকালে আব্দুস সামাদের বাড়ির সামনে ককটেল বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। টুটুলের বাড়ির সামনেও অবিস্ফোরিত দুটি ককটেল পাওয়া গেছে। এসব ঘটনার তদন্ত চলছে।’

ওসি আরও বলেন, হাবিবুর রহমান ও আব্দুস সোবহানের পুকুরগুলোতেও বিষপ্রয়োগের ঘটনা ঘটে রাতে। প্রত্যক্ষদর্শী নেই। তাই সরাসরি মামলা নেওয়া যায়নি। পুলিশ গিয়ে সরেজমিনে দেখে এসেছে। অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।

জানতে চাইলে ডি এম জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, ‘বাগমারায় ধানের শীষের জোয়ার চলছে। কে বলছে আমার লোক এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে? বাগমারার প্রতিটি লোকই তো আমার লোক। আসলে কারা ঘটাচ্ছে, সে বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। প্রশাসন তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চাঁদপুরের ৫টি আসন: জমে উঠেছে ভোটের প্রচার

  • প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোটারদের কাছে ছুটছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
  • আগে থেকে তৎপর জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন।
  • বিএনপির প্রাথমিক তালিকা ঘোষণার পর প্রচারে সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
মুহাম্মদ মাসুদ আলম, চাঁদপুর
আ ন ম এহছানুল হক মিলন, ড. জালালউদ্দিন, শেখ ফরিদ আহমেদ, মো. হারুনুর রশিদ, মমিনুল হক, আবু নছর আসরাফী, আব্দুল মুবিন, মো. শাহজাহান মিয়া, বিল্লাল হোসেন মিয়াজী ও আবুল হোসাইন।
আ ন ম এহছানুল হক মিলন, ড. জালালউদ্দিন, শেখ ফরিদ আহমেদ, মো. হারুনুর রশিদ, মমিনুল হক, আবু নছর আসরাফী, আব্দুল মুবিন, মো. শাহজাহান মিয়া, বিল্লাল হোসেন মিয়াজী ও আবুল হোসাইন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চাঁদপুরে জমে উঠেছে ভোটের প্রচার। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। জেলার পাঁচটি আসনে আগে থেকে মাঠে তৎপর জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন। ৩ নভেম্বর বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর থেকে জোরেশোরে প্রচারে নেমেছেন দলটির প্রার্থীরা। তবে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের তেমন তোড়জোড় দেখা যায়নি।

চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ সেলিম বলেন, ‘জেলার পাঁচটি আসনে যাঁদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁরাই চূড়ান্ত প্রার্থী। নেতা-কর্মীরাও তাঁদের পক্ষে মাঠে নেমেছেন। বিজয় নিশ্চিত করতে আমরা শেষ পর্যন্ত কাজ করে যাব।’

জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান খান বলেন, প্রাথমিকভাবে পাঁচজনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য দলের সঙ্গে সমঝোতা না হলে উনারাই চূড়ান্ত।

কেন্দ্র থেকে চূড়ান্ত ঘোষণা দেওয়া হবে।

চাঁদপুর-১ (কচুয়া) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালেও তিনি এখান থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ইসলামিক স্কলার মুহাদ্দিস আবু নছর আসরাফী। ইসলামী আন্দোলন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন মুফতি ওমর ফারুক কাসেমী। তিনি ওলামা-মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৩ জন।

চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর ও দক্ষিণ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. জালালউদ্দিন। তিনি ২০১৮ সালেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জামায়াতের মনোনয়ন পেতে পারেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মুবিন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মুফতি মানসুর আহমেদ সাকি। এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৫১ হাজার ৯০৬ জন।

চাঁদপুর-৩ (সদর ও হাইমচর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক। ২০১৮ সালেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন পেতে পারেন কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মো. জয়নাল আবেদীন। গণঅধিকার পরিষদ থেকে আলোচনায় রয়েছেন সাংবাদিক মো. জাকির হোসেন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮০ হাজার ৮১১ জন।

চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. হারুনুর রশিদ। তিনি ২০০৮ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা আমির মো. বিল্লাল হোসেন মিয়াজী। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন দলের সংখ্যালঘুবিষয়ক সম্পাদক মকবুল হোসাইন। এই আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪ জন।

চাঁদপুর-৫ (শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের সাবেক জেলা সভাপতি প্রকৌশলী মমিনুল হক। ২০০৮ সালে এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১ লাখেরও বেশি ভোট পান তিনি। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী অধ্যাপক মো. আবুল হোসাইন। তিনি শাহরাস্তি উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। ইসলামী আন্দোলনের মনোনয়ন পেতে পারেন দলের হাজীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী। এই আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৫ জন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত