Ajker Patrika

নিষেধাজ্ঞা শেষ, আবার মহোৎসব ইলিশ ধরার

বরগুনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ১৭: ১৮
নিষেধাজ্ঞা শেষ, আবার মহোৎসব ইলিশ ধরার

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে ইলিশ ধরা যাবে। আর তাই দক্ষিণের জেলেদের মধ্যে মহোৎসব লেগেছে। কয়েক দিনের খাবার মজুতসহ আনুষঙ্গিক সব প্রস্তুতি তাঁরা প্রায় নিয়ে ফেলেছেন। এখন ভোর হলেই জাল নিয়ে জলে নামবেন জেলেরা।

দেশের বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পাথরঘাটা ঘুরে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার শেষ দিনে জেলেরা নিজ নিজ ট্রলারে জাল ও মাছ শিকারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছেন। সাগরে ও নদীতে আবার ইলিশ ধরার আনন্দে উদ্বেলিত তাঁরা।

পাথরঘাটার পদ্মা এলাকার জেলে মালেক মাঝি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২২ দিন পরে আবার ইলিশ শিকার করতে সাগরে যাব। এর জন্য যাবতীয় বাজার-সদাই করে ট্রলারে তুলে রাখছি। এই ২২ দিন খুব কষ্টে ও ধারদেনা করে চলতে হয়েছে।

বরগুনা সদরের নলী এলাকার আরেক জেলে আবুল হোসেন বলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে ৬৫ দিন, এরপর দুর্যোগের কারণে আরও ২২ দিন নিষেধাজ্ঞায় সব মিলিয়ে আষাঢ় মৌসুম ভালো কাটেনি আমাদের। এখন নিষেধাজ্ঞাও শেষ আর আষাঢ় মৌসুমও শেষ। খুব আশা নিয়ে সাগরের দিকে রওনা করছি আমরা। এই মৌসুমটা ভালো কাটলে বিগত কয়েক দিনের ক্ষতি পোষাতে পারব।’

বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি মোস্তফা চৌধুরী বলেন, উপকূলের প্রায় ১ লাখ জেলে মাছ ধরতে সাগরে যাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন। আজ থেকে সাগরে যাত্রা করবে ট্রলারগুলো।

মা ইলিশ সংরক্ষণে সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সুফল পাবেন জেলেরা এমনটাই দাবি করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। অন্য বছরের চেয়ে এবার গভীর সমুদ্র থেকে ডিম ছাড়তে মা ইলিশ নদীর মিঠাপানিতে ছুটে আসার সুযোগ পেয়েছে। এতে প্রজননের জন্য মা ইলিশ পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছে বলে আরও জানান তাঁরা।

মৎস্যবিজ্ঞানী ও ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, ‘ইলিশ হচ্ছে পরিভ্রমণশীল স্বভাবের মাছ। তাই এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইলিশের ঝাঁক সব বাধা পেরিয়ে সাগর থেকে নদীতে এসে ডিম ছাড়তে সক্ষম হয়েছে। এ সময় মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের যে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়, তা বেশ সফল হয়েছে।’

ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে প্রতিবছর ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। ওই ২২ দিন দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহন, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকে। ইলিশের প্রজননক্ষেত্রেও সব ধরনের মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকে।

জেলেরা জানান, নিষেধাজ্ঞা আর দুর্যোগে বর্ষা মৌসুম ভালো কাটেনি তাদের। শীত মৌসুমে সাগরে ও নদীতে আশানুরূপ ইলিশ ধরা পড়লে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন তাঁরা। তবে বরাবরের মতো এবারও খাদ্যসহায়তা দেরিতে পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। গত ২২ দিন অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কেটেছে উপকূলের জেলে পরিবারগুলোর। নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ শিকার না করে দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটিয়েছেন জেলেরা।

তবে নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়মতো খাদ্যসহায়তা না পেয়ে বরাবরের মতোই হতাশ অনেক জেলে। জেলা ট্রলারশ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল মাঝি বলেন, ‘আমরা বরাবর সরকারকে অনুরোধ করে আসছি নিষেধাজ্ঞার শুরুতে চাল দিতে। কিন্তু এবারও একেবারে শেষের দিকে চাল দেওয়া হয়েছে। ওনারা আমাদের কষ্ট না বুঝলে কী আর করার!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত