Ajker Patrika

টানা বৃষ্টি, ৫০ গ্রাম জলাবদ্ধ

প্রতিনিধি, তালতলী (বরগুনা) 
আপডেট : ২৬ জুলাই ২০২১, ১৯: ৪৫
টানা বৃষ্টি, ৫০ গ্রাম জলাবদ্ধ

শ্রাবণের টানা বৃষ্টিতে বরগুনার উপকূলীয় উপজেলা তালতলীর অর্ধশতাধিক গ্রাম জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। নদ–নদীর পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চলের বসতভিটা ও ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। গত দুই-তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে উপজেলাবাসীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে তালতলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ, বীজতলা, পুকুর, মাছের ঘের, রাস্তাঘাট ও বাড়ির আঙিনা তলিয়ে গেছে। বেড়িবাঁধগুলোর বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাসহ সবকিছু তলিয়ে গেছে। বর্তমানে তাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ জলাবদ্ধতায় আছেন। এসব মানুষের ঘরে রান্নার চুলা জ্বলে না, গবাদিপশুও পানিবন্দী।’ মানুষের দুর্ভোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নদীর পাড়ের মানুষ। বন্যা হলে আমরা পানিতে ভাসি, বৃষ্টি হলেও আমরা পানিবন্দী হয়ে পড়ি।’

সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘টানা বৃষ্টিতে নিদ্রা এলাকার বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। বৃষ্টিতে গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘বৃষ্টির দিনে এলাকার মানুষ পানিবন্দী থাকে, বন্যার সময়ও আমাদের পানিবন্দী থাকতে হয়। আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।’

নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের নিদ্রা এলাকার পায়রা নদীর পাড়ের বাসিন্দা মো. সোবহান বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই। এ কারণে প্রতিবছর ঝড়–জলোচ্ছ্বাসের সময় আমরা পানিতে ভাসি। বৃষ্টি হলেও পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি। সব মিলিয়ে আমরা খুবই কষ্টে আছি। নিদ্রা এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ সময়ের দাবি।’

নিদ্রা চর এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা সেন্টু বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা নদীর পাড়ে বসবাস করি মাছ ধরে জীবন–যাপন করি। প্রতি বছর দুর্যোগের সময় আমরা খুব দুর্ভোগে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি একটি পুকুরে আমরা এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের পঞ্চাশটি পরিবার মিলে প্রায় ৫ লাখ টাকার মাছ চাষ করেছি। টানা বৃষ্টির কারণে ওই পুকুরের একদিক ভেঙে নদীর সঙ্গে মিশে গেছে। এ কারণে সব মাছ নদীর পানিতে ভেসে গেছে।’

সরেজমিনে তালতলী উপজেলার ইদু পাড়া, নিদ্রা, ছকিনা, ছোট-আমখোলা, বড় আমখোলা খোট্টার চরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির পানিতে রাস্তাঘাট, বসতবাড়িসহ বেড়িবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, নিদ্রা বাজার থেকে ফকিরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে না। ঝড়–জলোচ্ছ্বাসে এসব এলাকার মানুষ পানিতে ভাসে, আবার রোদে শুকায়। তাঁদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এই বেড়িবাঁধ সংস্কার করলে অন্তত ছয় হাজার মানুষের দুর্ভোগ কমে যেত। 

সোনাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতান ফরাজী বলেন, ‘নিদ্রা বাজার থেকে ফকিরহাট বাজার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ এখন সময়ের দাবি। যদি শক্তিশালী পাইলিং করে বেড়িবাঁধের করা হয়, তাহলে অচিরেই ৬ হাজার মানুষের ভোগান্তি দূর হয়ে যাবে।’

নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী বলেন, ‘তালতলী উপজেলার মধ্যে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আমার নির্বাচনী এলাকা খোট্টার চর। ওই এলাকায় ঝড়–জলোচ্ছ্বাসেও মানুষ ভাসে, আবার বৃষ্টির দিনে মানুষ ভাসে। বেড়িবাঁধ এখন একান্তই প্রয়োজন।’

বরগুনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাউসার আলম বলেন, ‘তালতলীর বিভিন্ন এলাকার প্রতিরক্ষাসহ বেড়িবাঁধের কার্যক্রম চলমান আছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত