Ajker Patrika

বরগুনায় গৃহবধূ হত্যার দায়ে স্বামী-সতিনসহ ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড

বরগুনা প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বরগুনায় গৃহবধূকে বিদ্যুতের শক দিয়ে হত্যার দায়ে স্বামীসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস এ রায় প্রদান করেন। একই সঙ্গে আসামিদের ১ লাখ করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন জেলার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবির তালুকদার (৫৯), তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী এলাচি বেগম (৫০) এবং জামাতা ও এলাচি বেগমের ছেলে সুজন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর হোসনেয়ারা শিপু বলেন, মামলার ভিকটিমকে পরিকল্পিতভাবে আসামিরা হত্যা করেছেন। সাক্ষীদের সাক্ষ্যে হত্যাকাণ্ড প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত এবং অনাদায়ে ১ লাখ টাকা করে অর্থ দণ্ড দেন। আদালতের রায়ে আমি সন্তুষ্ট।’ তিনি আরও বলেন, এই রায় প্রদানের মাধ্যমে সমাজে অপরাধ কমে আসবে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী হেলাল তালুকদারের মা ভিকটিম মহিমা বেগমকে আসামি কবির তালুকদার ৩০ বছর আগে বিয়ে করেন। বৈবাহিক জীবনে বাদীর বাবা যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তাঁর মাকে নির্যাতন করতেন। এ ছাড়া হেলাল তালুকদারের ছোট বোনের শাশুড়ি আসামি এলাচি বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বাদীর বাবার।

বাদীর বোন রেখা বেগম তাঁর বাবা ও শাশুড়িকে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় এবং প্রতিবাদ করায় শাশুড়ি এলাচি বেগম ও স্বামী সুজন রেখার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। তাঁদের নির্যাতন সইতে না পেরে রেখা রাগে-ক্ষোভে আত্মহত্যা করেন। রেখার মৃত্যুর ৩ থেকে ৪ বছর পর কবির তালুকদার বাদীর মায়ের অমতে বোনের শাশুড়ি এলাচি বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

বিয়ে না মানায় ভিকটিম মহিমা বেগমকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে এবং নির্যাতন চালাতে থাকেন কবির তালুকদার। একপর্যায়ে বাদীর মা আত্মহত্যা করার জন্য বিষপান করেন। পরে চিকিৎসায় বেঁচে গেলেও আসামিরা ভিকটিম মহিমা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩ নম্বর আসামি প্রস্তাব দেন আমি কারেন্টের মিস্ত্রি। কারেন্টে শক দিয়ে হত্যা করে, কারেন্টে শক খেয়েছে বলে চালিয়ে দেবেন। তাঁদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর শুক্রবার সকালে আসামি কবির তালুকদার বাদী হেলাল তালুকদারকে বলেন, তোর শ্বশুর অসুস্থ তুই তাড়াতাড়ি যা, বাদী সরলবিশ্বাসে শ্বশুরবাড়ি কালমেঘায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পান শ্বশুর সুস্থ আছেন এবং তিনি তাঁর বাবা কবির তালুকদারকে কোনো ফোন করেননি।

বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার পর ওই দিন দুপুরে বাবা আমার মাকে নানাবাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। আমার মা এতে রাজি না হওয়ায় আসামি কবির তালুকদার, এলাচি বেগম ও সুজনের সহায়তায় ভিকটিম মহিমা বেগমের ডান হাতের ৩টি আঙুলে, পিঠে ও বুকে বিদ্যুতের শক দিয়ে হত্যা করেন। হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিরা চিৎকার করে বলেন মহিমা বিদ্যুতের শক খেয়েছেন। আমি এই সংবাদ শুনে এসে দেখি ঘর থেকে ১০ মিটার দূরে আমার মা আমড়াগাছের সঙ্গে হেলে পড়ে আছেন।

মামলার রায়ে বাদী হেলাল তালুকদার সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘রায়ে আমি আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি হওয়ায় আমি আইনকে শ্রদ্ধা জানাই।’

প্রধান আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট তরিকুল ইসলাম তরু ফরাজী। আসামি এলাচি বেগম ও সুজনের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিগত সরকারের সমর্থকদের পক্ষে নিতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রায় সব দল: ডিআইজি হাবীব

চীনের বেলুন সহ্য হয়নি, এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে কাতারকে বিমানঘাঁটি দিচ্ছেন ট্রাম্প

চট্টগ্রামে কনসার্টে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের জেরে সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ ৩

ট্রাইব্যুনালের পরোয়ানার পর লাপাত্তা মেজর জেনারেল কবীর, সন্ধানে তৎপরতা জানাল সেনাসদর

জুলাই জাতীয় সনদ: গণভোটের সময়ে অনড় জামায়াত-এনসিপি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত