রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আমাদের দেশে স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে গবেষণা কিংবা আলোচনা প্রায় অপ্রচলিত একটি বিষয়। খুব কম মানুষ আছেন যাঁরা এ বিষয়ে চর্চা করেন। মাহবুব সিদ্দিকী সেই গুটিকয় মানুষের মধ্যে অন্যতম। নদী, আম, প্রকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সুদীর্ঘ চর্চা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। বরেন্দ্র জনপদের মানুষ হিসেবে মূলত সে অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি নিয়ে তাঁর আগ্রহ বেশি। সে আগ্রহেই তিনি লিখেছেন ‘বরেন্দ্র কৈবর্ত বিদ্রোহ ও রমাবতী নগরী’। শিরোনাম দেখেই বোঝা যায়, বইটি ইতিহাসবিষয়ক।
বরেন্দ্র কিংবা কৈবর্ত বিদ্রোহ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে যে বিষয়টি বলার আছে, তা হলো রমাবতী নগরী। মাহবুব সিদ্দিকী বাংলার এই প্রাচীন নগরীর হদিস দিয়েছেন আমাদের। বাংলার ইতিহাসের প্রাচীন পর্বের এই নগরী পাল রাজা রামপালের প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু নরগরীটি কোথায়? এ নিয়ে বাঘা বাঘা ঐতিহাসিকেরা গবেষণা করেছেন এককালে। কিন্তু মাহবুব সিদ্দিকী বলতে চাচ্ছেন, সে সিদ্ধান্তগুলো যুক্তিযুক্ত নয়। তিনি এন্তার রেফারেন্স টেনে জানিয়েছেন, নওগাঁ জেলার ‘পত্নীতলা উপজেলার পূর্ব কিনারে ঘুকসি বিলের পশ্চিম তীরে আমাইর অথবা আমইড় নামক মৌজায় রামাবতী নগরী’ অবস্থিত। এ বিষয়ে তিনি আলেক্সান্ডার কানিংহাম, বুকানন-হ্যামিলটন, রবার্ট এম. মার্টিন, আবুল কালাম মুহাম্মদ যাকারিয়া, বিজয় কৃষ্ণ বণিক প্রমুখের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, নতুন বিষয়টি কী? এখানেই লেখকের মুনশিয়ানার পরিচয়।
মাহবুব সিদ্দিকীর বই বা লেখার সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন, তিনি শুধু বই বা পূর্ববর্তী লেখকদের লেখার ওপর ভরসা করেন না। তিনি সেই সব বিরল প্রকৃতির গবেষকদের মধ্যে অন্যতম, যারা এখনো মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে মূল্যায়ন করেন এবং সেগুলো সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। লোকসংস্কৃতি বিষয়টি নিয়ে যারা খানিক অবহিত, তারা জানেন যে ‘লোকনিরুক্তি’ বলে একটি বিষয় আছে। আনানাস শব্দটি যখন আনারস হয়ে যায় কিংবা হসপিটাল শব্দটি যখন হাসপাতাল হয়ে যায় সাধারণ মানুষের মুখে, তখন তাকে লোকনিরুক্তি বলে। রমাবতী শব্দটি কি কোনোভাবে আমাইর বা আমইড় হয়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের চলতি কথায়? হয়তো। সে দিকে যথেষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন লেখক। খুঁজে খুঁজে দেখেছেন তার সম্ভাবনা এবং নিজের বইয়ে তার বয়ান দিয়েছেন সবিস্তারে। বরেন্দ্র অঞ্চলে তাঁর বিস্তর ঘোরাফেরা। ফলে সে অঞ্চলের ভূগোল তাঁর পরিচিত। সে ভূগোলকেও তিনি কাজে লাগিয়েছেন এ বইয়ে। তথ্য আর জানা ভূগোল তাঁর লেখাকে সমৃদ্ধ করে সব সময়।
মাহবুব সিদ্দিকীর বইয়ে বা ছোট লেখাতেও অনেক রেফারেন্স পাওয়া যায়— তার ভিত্তিতে সচেতন পাঠক নিজেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, লেখক সত্য বলছেন নাকি অর্ধসত্য বলছেন নাকি কোথাও তথ্য গোপন করছেন। ইতিহাস পাঠে সচেতন না হলে চলে না।
এ বই সম্পর্কে যে বিষয়টি বলার, তা হলো, ছবি ও নির্ঘণ্টসহ ৪৪৭ পৃষ্ঠা না হলেও চলত। অনায়াসে এটিকে দুই থেকে আড়াই শ পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ করা সম্ভব ছিল। ছবি আরও যত্নসহ ছাপা হলে ভালো হতো। এ বিষয়ে অবশ্য প্রকাশকদের তেমন কিছু করার থাকে না। কারণ ভালো মানের কাগজ ঢাকা শহরে দুর্লভ জিনিস।
বরেন্দ্র কৈবর্ত বিদ্রোহ ও রমাবতী নগরী
বিষয়: ইতিহাসবিষয়ক গবেষণা
লেখক: মাহবুব সিদ্দিকী
প্রকাশক: হেরিটেজ রাজশাহী, রাজশাহী
প্রথম প্রকাশ: ২০২০
দাম: ৫৫০ টাকা
আমাদের দেশে স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে গবেষণা কিংবা আলোচনা প্রায় অপ্রচলিত একটি বিষয়। খুব কম মানুষ আছেন যাঁরা এ বিষয়ে চর্চা করেন। মাহবুব সিদ্দিকী সেই গুটিকয় মানুষের মধ্যে অন্যতম। নদী, আম, প্রকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সুদীর্ঘ চর্চা আমাদের সমৃদ্ধ করেছে। বরেন্দ্র জনপদের মানুষ হিসেবে মূলত সে অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও প্রকৃতি নিয়ে তাঁর আগ্রহ বেশি। সে আগ্রহেই তিনি লিখেছেন ‘বরেন্দ্র কৈবর্ত বিদ্রোহ ও রমাবতী নগরী’। শিরোনাম দেখেই বোঝা যায়, বইটি ইতিহাসবিষয়ক।
বরেন্দ্র কিংবা কৈবর্ত বিদ্রোহ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে যে বিষয়টি বলার আছে, তা হলো রমাবতী নগরী। মাহবুব সিদ্দিকী বাংলার এই প্রাচীন নগরীর হদিস দিয়েছেন আমাদের। বাংলার ইতিহাসের প্রাচীন পর্বের এই নগরী পাল রাজা রামপালের প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু নরগরীটি কোথায়? এ নিয়ে বাঘা বাঘা ঐতিহাসিকেরা গবেষণা করেছেন এককালে। কিন্তু মাহবুব সিদ্দিকী বলতে চাচ্ছেন, সে সিদ্ধান্তগুলো যুক্তিযুক্ত নয়। তিনি এন্তার রেফারেন্স টেনে জানিয়েছেন, নওগাঁ জেলার ‘পত্নীতলা উপজেলার পূর্ব কিনারে ঘুকসি বিলের পশ্চিম তীরে আমাইর অথবা আমইড় নামক মৌজায় রামাবতী নগরী’ অবস্থিত। এ বিষয়ে তিনি আলেক্সান্ডার কানিংহাম, বুকানন-হ্যামিলটন, রবার্ট এম. মার্টিন, আবুল কালাম মুহাম্মদ যাকারিয়া, বিজয় কৃষ্ণ বণিক প্রমুখের সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছেন। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, নতুন বিষয়টি কী? এখানেই লেখকের মুনশিয়ানার পরিচয়।
মাহবুব সিদ্দিকীর বই বা লেখার সঙ্গে যারা পরিচিত তারা জানেন, তিনি শুধু বই বা পূর্ববর্তী লেখকদের লেখার ওপর ভরসা করেন না। তিনি সেই সব বিরল প্রকৃতির গবেষকদের মধ্যে অন্যতম, যারা এখনো মানুষের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানকে মূল্যায়ন করেন এবং সেগুলো সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেন। লোকসংস্কৃতি বিষয়টি নিয়ে যারা খানিক অবহিত, তারা জানেন যে ‘লোকনিরুক্তি’ বলে একটি বিষয় আছে। আনানাস শব্দটি যখন আনারস হয়ে যায় কিংবা হসপিটাল শব্দটি যখন হাসপাতাল হয়ে যায় সাধারণ মানুষের মুখে, তখন তাকে লোকনিরুক্তি বলে। রমাবতী শব্দটি কি কোনোভাবে আমাইর বা আমইড় হয়ে যেতে পারে সাধারণ মানুষের চলতি কথায়? হয়তো। সে দিকে যথেষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন লেখক। খুঁজে খুঁজে দেখেছেন তার সম্ভাবনা এবং নিজের বইয়ে তার বয়ান দিয়েছেন সবিস্তারে। বরেন্দ্র অঞ্চলে তাঁর বিস্তর ঘোরাফেরা। ফলে সে অঞ্চলের ভূগোল তাঁর পরিচিত। সে ভূগোলকেও তিনি কাজে লাগিয়েছেন এ বইয়ে। তথ্য আর জানা ভূগোল তাঁর লেখাকে সমৃদ্ধ করে সব সময়।
মাহবুব সিদ্দিকীর বইয়ে বা ছোট লেখাতেও অনেক রেফারেন্স পাওয়া যায়— তার ভিত্তিতে সচেতন পাঠক নিজেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, লেখক সত্য বলছেন নাকি অর্ধসত্য বলছেন নাকি কোথাও তথ্য গোপন করছেন। ইতিহাস পাঠে সচেতন না হলে চলে না।
এ বই সম্পর্কে যে বিষয়টি বলার, তা হলো, ছবি ও নির্ঘণ্টসহ ৪৪৭ পৃষ্ঠা না হলেও চলত। অনায়াসে এটিকে দুই থেকে আড়াই শ পৃষ্ঠায় সীমাবদ্ধ করা সম্ভব ছিল। ছবি আরও যত্নসহ ছাপা হলে ভালো হতো। এ বিষয়ে অবশ্য প্রকাশকদের তেমন কিছু করার থাকে না। কারণ ভালো মানের কাগজ ঢাকা শহরে দুর্লভ জিনিস।
বরেন্দ্র কৈবর্ত বিদ্রোহ ও রমাবতী নগরী
বিষয়: ইতিহাসবিষয়ক গবেষণা
লেখক: মাহবুব সিদ্দিকী
প্রকাশক: হেরিটেজ রাজশাহী, রাজশাহী
প্রথম প্রকাশ: ২০২০
দাম: ৫৫০ টাকা
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী।
২ দিন আগেরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
৫ দিন আগেবাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও অনুবাদক মশিউল আলম ইতালির চিভিতেলা রানিয়েরি ফেলোশিপে ভূষিত হয়েছেন। এই আন্তর্জাতিক সম্মাননা প্রতিবছর বিশ্বের খ্যাতিমান ভিজ্যুয়াল শিল্পী, লেখক ও সংগীতজ্ঞদের দেওয়া হয়। মশিউল আলম এই ফেলোশিপপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি লেখক।
৯ দিন আগেরাউলিং বলেন, ‘হ্যারি পটার আর হগওয়ার্টস হঠাই আমার মাথায় চলে আসে। প্লট আর চরিত্র মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঠিক করে ফেলি এটা লিখতেই হবে। অসাধারণ এক রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম।’
১১ দিন আগে