রজত কান্তি রায়, ঢাকা
খাদ্যসংস্কৃতির প্রাথমিক পাঠ বলে আসলেই কিছু আছে কি না, তা তর্কসাপেক্ষ। তবে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বিষয়টি বুঝতে চাইলে কোনো না কোনো জায়গা থেকে শুরু করা দরকার। সে ক্ষেত্রে ‘খাদ্য, কিন্তু আহার্য নয়’ শিরোনামের বইটি প্রাথমিক পাঠ অবশ্যই। বইটি লিখেছেন সিরাজ সালেকীন।
আমাদের দেশে খাবার নিয়ে লেখালেখিকে সম্ভবত খুব সহজ কাজ ভাবা হয়। ফলে জীবনের সঙ্গ তো বটেই, সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকা এ বিষয়টির মূলগত উৎস জানা, এর নৃতাত্ত্বিক বা সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আলোচনা কিংবা এর ধর্মভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চোখে পড়ে না। খাবার নিয়ে যেসব বই বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলো মূলত বরেণ্য লেখকদের স্বাদ স্মৃতির বয়ান। আর না হলে রেসিপির বই। এই বিশাল শূন্যতা থেকে সিরাজ সালেকীন আমাদের উদ্ধার করেছেন।
গ্রন্থপঞ্জিসহ ১৫২ পৃষ্ঠার বইটির ভূমিকা নেই। আছে উপবেশন। বিষয়টি বুঝতে হবে। রান্না হলেই লাফিয়ে পড়ে খাওয়া যায় না। খাওয়ার জন্য উপবেশন করতে বা বসতে হয়। তারপর পরিবেশন করা খাবার। তারপর খাওয়া হয়। ফলে উপবেশন খাদ্য বিষয়টির ভূমিকা, তা বলা বাহুল্য। এরপর সূচিপত্রে দেখা যাবে ভাত, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ডালসহ নয়টি পদের সমাহার। তারপর আছে ডেজার্ট। সেখানে আছে খাবার নিয়ে তৈরি হওয়া প্রবাদ, মাংস-মীমাংসা ও মাছের গান। তারপরে আছে গ্রন্থপঞ্জি।
বাঙালির প্রধান খাবার ভাত। কিন্তু ভাত বিষয়টি এল কোথা থেকে? লেখক জানাচ্ছেন, তার জন্য ভাতের সমার্থক শব্দগুলো খুঁজতে হবে। কারণ, ‘ভাত’ শব্দটি বহু বিবর্তিত। ভাতের সমার্থক শব্দগুলো হলো অন্ন, ভক্ত, স্বাধা, ওদন। মুশকিল হলো, এই শব্দগুলোর মূলে যেতে হলে শুরু করতে হবে ধান থেকে। আর বুঝতেই পারছেন ধান শুধুই ধান নয়, মানুষ ও সংস্কৃতির এক কঠিন মিশ্রণ। সিরাজ সালেকীন ভাত, মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে বুঝতে চেয়েছেন মানুষ ও তার সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে। আর এ প্রেক্ষাপট খুঁজতে গিয়ে তিনি টেনে এনেছেন রাজনীতি আর মিথের এক দারুণ সমন্বয়। কিন্তু সেটা আবার খাবার বিষয়টি বোঝার ক্ষেত্রে কোনো বাধা তৈরি করে না। আবার তিনি খাদ্যসংস্কৃতি বুঝতে গিয়ে খুব জনপ্রিয় পথেও হাঁটেননি।
এ কারণেই কি বইটি ঠিক সাধারণ পাঠকের কাছে একটু কঠিন বলে মনে হবে? হতে পারে। তবে একে তুলনা করা যায়, নারকেলের সঙ্গে যার ওপরের অংশ বেশ শক্ত মনে হলেও তা ভাঙা যায় শাঁস খাওয়ার জন্য।
১৯৮৭ সালে প্রণব রায় ‘বাংলার খাবার’ নামে একটি বই লিখেছিলেন প্রায় একই রকমভাবে। বাংলার খাবার নাম হলেও সে বই ছিল মূলত পিঠা ও মিষ্টি জাতীয় খাবারের বিষয়ে লেখা। প্রসঙ্গক্রমে কখনো কখনো কিছু কথা উঠে এসেছে অন্যান্য খাবার বিষয়ে। কিন্তু সিরাজ সালেকীনের ‘খাদ্য, কিন্তু আহার্য নয়’ বইটি আমাদের খাবারের সামগ্রিকতা বুঝতে সহায়তা করে। খাদ্যসংস্কৃতি বিষয়ে জানতে আগ্রহী পাঠকদের জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা বইটি অবশ্যপাঠ্য।
খাদ্য, কিন্তু আহার্য নয়
লেখক: সিরাজ সালেকীন
বিষয়: খাদ্যসংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি, ২০২১
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ
দাম: ২৫০ টাকা
খাদ্যসংস্কৃতির প্রাথমিক পাঠ বলে আসলেই কিছু আছে কি না, তা তর্কসাপেক্ষ। তবে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বিষয়টি বুঝতে চাইলে কোনো না কোনো জায়গা থেকে শুরু করা দরকার। সে ক্ষেত্রে ‘খাদ্য, কিন্তু আহার্য নয়’ শিরোনামের বইটি প্রাথমিক পাঠ অবশ্যই। বইটি লিখেছেন সিরাজ সালেকীন।
আমাদের দেশে খাবার নিয়ে লেখালেখিকে সম্ভবত খুব সহজ কাজ ভাবা হয়। ফলে জীবনের সঙ্গ তো বটেই, সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক থাকা এ বিষয়টির মূলগত উৎস জানা, এর নৃতাত্ত্বিক বা সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আলোচনা কিংবা এর ধর্মভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চোখে পড়ে না। খাবার নিয়ে যেসব বই বাজারে পাওয়া যায়, সেগুলো মূলত বরেণ্য লেখকদের স্বাদ স্মৃতির বয়ান। আর না হলে রেসিপির বই। এই বিশাল শূন্যতা থেকে সিরাজ সালেকীন আমাদের উদ্ধার করেছেন।
গ্রন্থপঞ্জিসহ ১৫২ পৃষ্ঠার বইটির ভূমিকা নেই। আছে উপবেশন। বিষয়টি বুঝতে হবে। রান্না হলেই লাফিয়ে পড়ে খাওয়া যায় না। খাওয়ার জন্য উপবেশন করতে বা বসতে হয়। তারপর পরিবেশন করা খাবার। তারপর খাওয়া হয়। ফলে উপবেশন খাদ্য বিষয়টির ভূমিকা, তা বলা বাহুল্য। এরপর সূচিপত্রে দেখা যাবে ভাত, মাছ, মাংস, শাকসবজি, ডালসহ নয়টি পদের সমাহার। তারপর আছে ডেজার্ট। সেখানে আছে খাবার নিয়ে তৈরি হওয়া প্রবাদ, মাংস-মীমাংসা ও মাছের গান। তারপরে আছে গ্রন্থপঞ্জি।
বাঙালির প্রধান খাবার ভাত। কিন্তু ভাত বিষয়টি এল কোথা থেকে? লেখক জানাচ্ছেন, তার জন্য ভাতের সমার্থক শব্দগুলো খুঁজতে হবে। কারণ, ‘ভাত’ শব্দটি বহু বিবর্তিত। ভাতের সমার্থক শব্দগুলো হলো অন্ন, ভক্ত, স্বাধা, ওদন। মুশকিল হলো, এই শব্দগুলোর মূলে যেতে হলে শুরু করতে হবে ধান থেকে। আর বুঝতেই পারছেন ধান শুধুই ধান নয়, মানুষ ও সংস্কৃতির এক কঠিন মিশ্রণ। সিরাজ সালেকীন ভাত, মাছ, মাংস, দুধ ইত্যাদি বিষয়গুলোকে বুঝতে চেয়েছেন মানুষ ও তার সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে। আর এ প্রেক্ষাপট খুঁজতে গিয়ে তিনি টেনে এনেছেন রাজনীতি আর মিথের এক দারুণ সমন্বয়। কিন্তু সেটা আবার খাবার বিষয়টি বোঝার ক্ষেত্রে কোনো বাধা তৈরি করে না। আবার তিনি খাদ্যসংস্কৃতি বুঝতে গিয়ে খুব জনপ্রিয় পথেও হাঁটেননি।
এ কারণেই কি বইটি ঠিক সাধারণ পাঠকের কাছে একটু কঠিন বলে মনে হবে? হতে পারে। তবে একে তুলনা করা যায়, নারকেলের সঙ্গে যার ওপরের অংশ বেশ শক্ত মনে হলেও তা ভাঙা যায় শাঁস খাওয়ার জন্য।
১৯৮৭ সালে প্রণব রায় ‘বাংলার খাবার’ নামে একটি বই লিখেছিলেন প্রায় একই রকমভাবে। বাংলার খাবার নাম হলেও সে বই ছিল মূলত পিঠা ও মিষ্টি জাতীয় খাবারের বিষয়ে লেখা। প্রসঙ্গক্রমে কখনো কখনো কিছু কথা উঠে এসেছে অন্যান্য খাবার বিষয়ে। কিন্তু সিরাজ সালেকীনের ‘খাদ্য, কিন্তু আহার্য নয়’ বইটি আমাদের খাবারের সামগ্রিকতা বুঝতে সহায়তা করে। খাদ্যসংস্কৃতি বিষয়ে জানতে আগ্রহী পাঠকদের জন্য অসাধারণ অভিজ্ঞতা বইটি অবশ্যপাঠ্য।
খাদ্য, কিন্তু আহার্য নয়
লেখক: সিরাজ সালেকীন
বিষয়: খাদ্যসংস্কৃতি বিষয়ক গবেষণা
প্রথম প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি, ২০২১
প্রকাশনী: কথাপ্রকাশ
দাম: ২৫০ টাকা
একজন শিল্পী সারা জীবন কেবল পালিয়েই বেড়ালেন। খ্যাতি, যশ, অর্থ এমনকি সংসারজীবন থেকে পালিয়ে হয়ে উঠলেন বোহিমিয়ান। শিল্প সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় এক অদ্ভুত আধ্যাত্মিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন শিল্পী এস এম সুলতান। বেঁচে থাকলে তিনি হতেন শতবর্ষী।
২ দিন আগেরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ নামগুলোর একটি হলেও কেন বাঙালি মুসলমানদের একটি বৃহৎ অংশের কাছে অগ্রহণযোগ্য? কেন দেড় শ বছর আগের এক কবির সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের রয়ে গেছে একটা দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক? এই দ্বন্দ্বের শুরুটা কোথায়?
৫ দিন আগেবাংলাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও অনুবাদক মশিউল আলম ইতালির চিভিতেলা রানিয়েরি ফেলোশিপে ভূষিত হয়েছেন। এই আন্তর্জাতিক সম্মাননা প্রতিবছর বিশ্বের খ্যাতিমান ভিজ্যুয়াল শিল্পী, লেখক ও সংগীতজ্ঞদের দেওয়া হয়। মশিউল আলম এই ফেলোশিপপ্রাপ্ত প্রথম বাংলাদেশি লেখক।
৯ দিন আগেরাউলিং বলেন, ‘হ্যারি পটার আর হগওয়ার্টস হঠাই আমার মাথায় চলে আসে। প্লট আর চরিত্র মাথায় আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি ঠিক করে ফেলি এটা লিখতেই হবে। অসাধারণ এক রোমাঞ্চ অনুভব করছিলাম।’
১১ দিন আগে