ফজলুল কবির
একটা সময় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সব বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই ছিল চীনে। এমনকি ফেসবুকও চীনে তার সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য এসেছিল। এসেছিল মাইক্রোসফটসহ বড় সব প্রতিষ্ঠানই। কিন্তু একে একে এখন সবাই বিদায় নিয়েছে বা নিচ্ছে। শুধু এখনো টিকে আছে অ্যাপল, যাকে বেশ কায়দা করেই নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
চীনের বাজারে এখনো আছে মাইক্রোসফট। তবে গত সপ্তাহে মাইক্রোসফট জানিয়েছে, চীনে তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম লিংকডিন বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে বলেছে, চীনের বিভিন্ন আইনের সঙ্গে মানিয়ে চলাটা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ কারণে তারা বাজারটি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অ্যাপল তার আধিপত্য এখনো বেশ ভালোভাবেই টিকিয়ে রাখলেও সেন্সরশিপের সংকটের মধ্য দিয়ে তাকেও যেতে হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে অ্যাপল স্টোর থেকে দুটি জনপ্রিয় ধর্মীয় অ্যাপ সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে অ্যাপলকে। এর পরপর আমাজনের মালিকানাধীন অডিবল ও ইয়াহু ফিন্যান্স নামের দুটি অ্যাপও সরিয়ে ফেলা হয়। চলতি মাসেই এ দুটি ঘটনা ঘটে। অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটিতে সেন্সরশিপ দিনদিন বাড়ছে।
তাহলে কী হচ্ছে সেখানে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা সহজ নয় একদমই। বেইজিংয়ের রুদ্ধ দরজার আড়ালে ঠিক কী ঘটছে, তা বলা মুশকিল। তবে এটা নিশ্চিত যে, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল উভয় প্রতিষ্ঠানই একদিকে চীনের আইন, অন্যদিকে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লড়াই করছে। চীনের নিজের রয়েছে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আলিবাবার কথা সবাই জানে। রয়েছে টেনসেন্ট, হুয়াওয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠান, যাদের বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পশ্চিমা বহু প্রতিষ্ঠানকে। তবে এই কোম্পানিগুলোও কিন্তু চীনা সরকারের নানা বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত নয়। কোনো কোনোটির ওপর তো চীনা সরকার বেশ খড়্গহস্তও বলা যায়।
গত এপ্রিল মাসেই যেমন আলিবাবাকে গুনতে হয়েছে ২৮০ কোটি ডলারের রেকর্ড জরিমানা। কারণ কী? কারণ আর কিছুই নয়, বাজারে নিজেদের প্রভাবকে অন্যদিকে কাজে লাগিয়েছে তারা। এটি শুধু যে আলিবাবার সঙ্গে, তা নয়। গত আগস্টে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরও কঠোর নীতিমালার বিষয়ে পঞ্চবার্ষিক একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করে চীন সরকার। ফলে সামনের দিনগুলোতে চীনের বা চীনের বাইরের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশ ভালো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
আসা যাক ইলেকট্রনিক মুদ্রার বিষয়ে। বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি অনুমোদন পেয়েছে বা পাওয়ার পথে। অনেকেই বিটকয়েনের লেনদেনকে বৈধতা দেওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু চীন সরাসরি এই ডিজিটাল মুদ্রাকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে তাদের অবস্থান বেশ কঠোর।
এই যাবতীয় কঠোর অবস্থানের কারণে চীনের কোম্পানিগুলো যেমন ভুগছে, তেমনি ভুগছে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো। এ নিয়ে ‘দ্য গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ বইয়ের লেখক জেমস গ্রিফিন বিবিসিকে বলেন, ‘চীন ক্রমেই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চেপে বসছে। এ বিষয়ে মাইক্রোসফট, অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ সচেতন। তারা বুঝতে পারছে যে, গত কয়েক বছরে দেশটিতে তাদের অবস্থান বেশ ভঙ্গুর হয়ে গেছে। সাবধানে চলার একটা বার্তাও তারা পেয়েছে।’
বিশেষত মাইক্রোসফটের পক্ষে চীনে টেকাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি দেশটিতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন (পিআইপিএল) নামের একটি আইন হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হবে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই আইন মেনে চলতে হবে। এতে লিংকডিনের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের পক্ষে চীনে টেকাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
মাইক্রোসফটের বিবৃতিতেই বিষয়টি পরিষ্কার। এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে তারা বলেছে, চীনে আমরা ক্রমেই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছি। এমন সব নীতি নেওয়া হচ্ছে, যা মেনে চলতে আমরা বাধ্য।
এই বিবৃতির মধ্য দিয়েই চীনে এক রকম লিংকডিনের দিন শেষ হয়ে এল বলা যায়। বিষয়টিকে চীনের প্রযুক্তি পরিবেশের জন্য ভালো বলছেন না বিশ্লেষকেরা। অবশ্য চীনের দৃষ্টিকোণ থেকে এমন রক্ষণশীল নীতির প্রয়োগের মাধ্যমেই কিন্তু চীনে একের পর এক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। ২০১০ সালেই চীন ছেড়েছিল গুগল। গুগলের পথটি রুদ্ধ না হলে বাইদু, সোগু, সানমার মতো সার্চ ইঞ্জিনের মুখ হতো দেখা যেত না। একইভাবে ফেসবুক, টুইটারের মতো বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো টিকে গেলে উইচ্যাট কতটুকু এগোতে পারত, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার, লিফটের কথা বলা যায়। বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে চীনে গিয়েও একেবারে টিকতে পারেনি তারা। চীনের নিজস্ব অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কৌশলের কাছে মার খেয়েছে তারা। লোকসান গোনার বদলে কেটে পড়াটাই ভালো মনে করেছে তারা।
বড় বড় মোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সবাই চীনের বাজার ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু চীন উল্টো যে হুয়াওয়ে, শাওমির মতো ব্র্যান্ড বাজারে নিয়ে এল, এবং তা দিয়ে গোটা বিশ্বে রাজত্ব তৈরি করল, তার পেছনে তো রয়েছে এই বিদেশি কোম্পানিগুলোর সেখানে টিকতে না পারা। উল্টো সস্তা শ্রমের জন্য অ্যাপলকে চীনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়। হুয়াওয়ের কথা বলতে গেলে ক্যানভাসটি আরও বড় করতে হবে। হুয়াওয়ে শুধু মোবাইল সেট প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান নয়। ফাইভ-জি, ফোর-জি প্রযুক্তির জন্য গোটা বিশ্বের একটা বড় নির্ভরশীলতা রয়েছে এই কোম্পানির ওপর। ফলে এর পরিসরটি অনেক বড় বোঝাই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই ইউরোপও এখন চীনের প্রযুক্তি আধিপত্য থেকে বাঁচার পথ খুঁজছে।
চীনা কোম্পানিগুলোর এই যাবতীয় অর্জন কিন্তু এসেছে দেশটির সরকারের রক্ষণশীলতার নীতির মাধ্যমেই। হ্যাঁ, একটা সেন্সরশিপের কথা বলা হচ্ছে। তবে এই সেন্সরশিপ, আর এই দেশীয় কোম্পানি স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত রক্ষণশীলতা কিন্তু কিছুটা আলাদা। যে সেন্সরশিপের কারণে মাইক্রোসফটকে পিছু হটতে হচ্ছে, তার শিকার কিন্তু চীনা কোম্পানিগুলোও। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ আলিবাবা।
কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও মাইক্রোসফটের চেয়ে অ্যাপল কিন্তু কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানেই রয়েছে। দেশটির সঙ্গে এর সম্পর্ক অনেক গভীর। সর্বশেষ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি চীন ও তাইওয়ানে দেড় হাজার কোটি ডলারের রাজস্ব আয় করেছে, যাকে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। আর এই আয়ের পরিমাণই দেশটিতে অ্যাপলের টিকে থাকার নেপথ্যে।
অ্যাপলের উৎপাদন অনেকাংশেই চীনের ওপর নির্ভরশীল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিষ্ঠানটিকে দেশটি থেকে সরে আসার জন্য চাপ দিলেও অ্যাপল তা করেনি। কারণ আর কিছুই নয়, সস্তা শ্রম, যা তাদের এই বিরাট রাজস্ব আয়ের মূল জ্বালানি। আর এটি অক্ষুণ্ন রাখতে হলে কোম্পানিটি জানে যে, তাদের চীনের আইন মেনে চলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
প্রশ্ন হলো এত বিধিনিষেধের মধ্যে টিকে থাকতে কসরত করার বদলে অ্যাপ স্টোরটি সরিয়ে নিলেই তো হয়। অ্যাপল তো চাইলে সেখানে শুধু তাদের সেট বিক্রি করলেই পারে। অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ বিক্রির দরকার কী? দরকার আছে। অ্যাপল সেটের সঙ্গে এর অ্যাপ স্টোরটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তারা চায় না, তাদের অ্যাপ স্টোর ছাড়া অন্য কোনো অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম থেকে তার ব্যবহারকারীরা অ্যাপ ডাউনলোড করুক।
আর এত বড় বাজার ছেড়ে অ্যাপল যাবে না। আবার অ্যাপ বিক্রি থেকেও আয় চায় তারা। ফলে চীনের বিধিনিষেধ না মেনে তো তার কোনো উপায় নেই। এর সঙ্গে চীন সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে দেন-দরবারও অব্যাহত রেখেছে তারা। কারণ, একবার বিনা বাক্যব্যয়ে বেইজিংয়ের সবকিছু মেনে নিলে, তা আর কখনো শেষ হবে না। চাহিদার ফর্দ খালি বড়ই হবে। এই বাস্তবতা অ্যাপল জানে বলেই তারা দুটি বিষয়ের একটা ভারসাম্য রক্ষা করে চলার নীতি নিয়েছে। বলা যায় বৈশ্বিক প্রযুক্তি মুঘলদের কথা বিবেচনা করলে চীনে অ্যাপলই সর্বশেষ। তারাও আর কত দিন থাকবে, তা দেখার বিষয়।
একটা সময় ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সব বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানই ছিল চীনে। এমনকি ফেসবুকও চীনে তার সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য এসেছিল। এসেছিল মাইক্রোসফটসহ বড় সব প্রতিষ্ঠানই। কিন্তু একে একে এখন সবাই বিদায় নিয়েছে বা নিচ্ছে। শুধু এখনো টিকে আছে অ্যাপল, যাকে বেশ কায়দা করেই নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
চীনের বাজারে এখনো আছে মাইক্রোসফট। তবে গত সপ্তাহে মাইক্রোসফট জানিয়েছে, চীনে তারা তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম লিংকডিন বন্ধ করে দিতে যাচ্ছে। কারণ হিসেবে বলেছে, চীনের বিভিন্ন আইনের সঙ্গে মানিয়ে চলাটা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। এ কারণে তারা বাজারটি ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অ্যাপল তার আধিপত্য এখনো বেশ ভালোভাবেই টিকিয়ে রাখলেও সেন্সরশিপের সংকটের মধ্য দিয়ে তাকেও যেতে হচ্ছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে অ্যাপল স্টোর থেকে দুটি জনপ্রিয় ধর্মীয় অ্যাপ সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়েছে অ্যাপলকে। এর পরপর আমাজনের মালিকানাধীন অডিবল ও ইয়াহু ফিন্যান্স নামের দুটি অ্যাপও সরিয়ে ফেলা হয়। চলতি মাসেই এ দুটি ঘটনা ঘটে। অ্যাপলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটিতে সেন্সরশিপ দিনদিন বাড়ছে।
তাহলে কী হচ্ছে সেখানে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা সহজ নয় একদমই। বেইজিংয়ের রুদ্ধ দরজার আড়ালে ঠিক কী ঘটছে, তা বলা মুশকিল। তবে এটা নিশ্চিত যে, মাইক্রোসফট ও অ্যাপল উভয় প্রতিষ্ঠানই একদিকে চীনের আইন, অন্যদিকে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লড়াই করছে। চীনের নিজের রয়েছে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে আলিবাবার কথা সবাই জানে। রয়েছে টেনসেন্ট, হুয়াওয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠান, যাদের বৈশ্বিক বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পশ্চিমা বহু প্রতিষ্ঠানকে। তবে এই কোম্পানিগুলোও কিন্তু চীনা সরকারের নানা বিধিনিষেধ থেকে মুক্ত নয়। কোনো কোনোটির ওপর তো চীনা সরকার বেশ খড়্গহস্তও বলা যায়।
গত এপ্রিল মাসেই যেমন আলিবাবাকে গুনতে হয়েছে ২৮০ কোটি ডলারের রেকর্ড জরিমানা। কারণ কী? কারণ আর কিছুই নয়, বাজারে নিজেদের প্রভাবকে অন্যদিকে কাজে লাগিয়েছে তারা। এটি শুধু যে আলিবাবার সঙ্গে, তা নয়। গত আগস্টে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরও কঠোর নীতিমালার বিষয়ে পঞ্চবার্ষিক একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করে চীন সরকার। ফলে সামনের দিনগুলোতে চীনের বা চীনের বাইরের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেশ ভালো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
আসা যাক ইলেকট্রনিক মুদ্রার বিষয়ে। বিশ্বের বেশ কিছু দেশে বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি অনুমোদন পেয়েছে বা পাওয়ার পথে। অনেকেই বিটকয়েনের লেনদেনকে বৈধতা দেওয়ার কথা ভাবছে। কিন্তু চীন সরাসরি এই ডিজিটাল মুদ্রাকে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে তাদের অবস্থান বেশ কঠোর।
এই যাবতীয় কঠোর অবস্থানের কারণে চীনের কোম্পানিগুলো যেমন ভুগছে, তেমনি ভুগছে পশ্চিমা কোম্পানিগুলো। এ নিয়ে ‘দ্য গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ বইয়ের লেখক জেমস গ্রিফিন বিবিসিকে বলেন, ‘চীন ক্রমেই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চেপে বসছে। এ বিষয়ে মাইক্রোসফট, অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ সচেতন। তারা বুঝতে পারছে যে, গত কয়েক বছরে দেশটিতে তাদের অবস্থান বেশ ভঙ্গুর হয়ে গেছে। সাবধানে চলার একটা বার্তাও তারা পেয়েছে।’
বিশেষত মাইক্রোসফটের পক্ষে চীনে টেকাটা কঠিন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি দেশটিতে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন (পিআইপিএল) নামের একটি আইন হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর হবে। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই আইন মেনে চলতে হবে। এতে লিংকডিনের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের পক্ষে চীনে টেকাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
মাইক্রোসফটের বিবৃতিতেই বিষয়টি পরিষ্কার। এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে তারা বলেছে, চীনে আমরা ক্রমেই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের মুখোমুখি হচ্ছি। এমন সব নীতি নেওয়া হচ্ছে, যা মেনে চলতে আমরা বাধ্য।
এই বিবৃতির মধ্য দিয়েই চীনে এক রকম লিংকডিনের দিন শেষ হয়ে এল বলা যায়। বিষয়টিকে চীনের প্রযুক্তি পরিবেশের জন্য ভালো বলছেন না বিশ্লেষকেরা। অবশ্য চীনের দৃষ্টিকোণ থেকে এমন রক্ষণশীল নীতির প্রয়োগের মাধ্যমেই কিন্তু চীনে একের পর এক বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্ম হয়েছে। ২০১০ সালেই চীন ছেড়েছিল গুগল। গুগলের পথটি রুদ্ধ না হলে বাইদু, সোগু, সানমার মতো সার্চ ইঞ্জিনের মুখ হতো দেখা যেত না। একইভাবে ফেসবুক, টুইটারের মতো বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো টিকে গেলে উইচ্যাট কতটুকু এগোতে পারত, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ উবার, লিফটের কথা বলা যায়। বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে চীনে গিয়েও একেবারে টিকতে পারেনি তারা। চীনের নিজস্ব অনুরূপ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কৌশলের কাছে মার খেয়েছে তারা। লোকসান গোনার বদলে কেটে পড়াটাই ভালো মনে করেছে তারা।
বড় বড় মোবাইল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সবাই চীনের বাজার ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু চীন উল্টো যে হুয়াওয়ে, শাওমির মতো ব্র্যান্ড বাজারে নিয়ে এল, এবং তা দিয়ে গোটা বিশ্বে রাজত্ব তৈরি করল, তার পেছনে তো রয়েছে এই বিদেশি কোম্পানিগুলোর সেখানে টিকতে না পারা। উল্টো সস্তা শ্রমের জন্য অ্যাপলকে চীনের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়। হুয়াওয়ের কথা বলতে গেলে ক্যানভাসটি আরও বড় করতে হবে। হুয়াওয়ে শুধু মোবাইল সেট প্রস্তুতকারী একটি প্রতিষ্ঠান নয়। ফাইভ-জি, ফোর-জি প্রযুক্তির জন্য গোটা বিশ্বের একটা বড় নির্ভরশীলতা রয়েছে এই কোম্পানির ওপর। ফলে এর পরিসরটি অনেক বড় বোঝাই যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই ইউরোপও এখন চীনের প্রযুক্তি আধিপত্য থেকে বাঁচার পথ খুঁজছে।
চীনা কোম্পানিগুলোর এই যাবতীয় অর্জন কিন্তু এসেছে দেশটির সরকারের রক্ষণশীলতার নীতির মাধ্যমেই। হ্যাঁ, একটা সেন্সরশিপের কথা বলা হচ্ছে। তবে এই সেন্সরশিপ, আর এই দেশীয় কোম্পানি স্বার্থের সঙ্গে যুক্ত রক্ষণশীলতা কিন্তু কিছুটা আলাদা। যে সেন্সরশিপের কারণে মাইক্রোসফটকে পিছু হটতে হচ্ছে, তার শিকার কিন্তু চীনা কোম্পানিগুলোও। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ আলিবাবা।
কিন্তু এসব কিছু সত্ত্বেও মাইক্রোসফটের চেয়ে অ্যাপল কিন্তু কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানেই রয়েছে। দেশটির সঙ্গে এর সম্পর্ক অনেক গভীর। সর্বশেষ প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটি চীন ও তাইওয়ানে দেড় হাজার কোটি ডলারের রাজস্ব আয় করেছে, যাকে অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। আর এই আয়ের পরিমাণই দেশটিতে অ্যাপলের টিকে থাকার নেপথ্যে।
অ্যাপলের উৎপাদন অনেকাংশেই চীনের ওপর নির্ভরশীল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিষ্ঠানটিকে দেশটি থেকে সরে আসার জন্য চাপ দিলেও অ্যাপল তা করেনি। কারণ আর কিছুই নয়, সস্তা শ্রম, যা তাদের এই বিরাট রাজস্ব আয়ের মূল জ্বালানি। আর এটি অক্ষুণ্ন রাখতে হলে কোম্পানিটি জানে যে, তাদের চীনের আইন মেনে চলা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।
প্রশ্ন হলো এত বিধিনিষেধের মধ্যে টিকে থাকতে কসরত করার বদলে অ্যাপ স্টোরটি সরিয়ে নিলেই তো হয়। অ্যাপল তো চাইলে সেখানে শুধু তাদের সেট বিক্রি করলেই পারে। অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ বিক্রির দরকার কী? দরকার আছে। অ্যাপল সেটের সঙ্গে এর অ্যাপ স্টোরটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তারা চায় না, তাদের অ্যাপ স্টোর ছাড়া অন্য কোনো অ্যাপ প্ল্যাটফর্ম থেকে তার ব্যবহারকারীরা অ্যাপ ডাউনলোড করুক।
আর এত বড় বাজার ছেড়ে অ্যাপল যাবে না। আবার অ্যাপ বিক্রি থেকেও আয় চায় তারা। ফলে চীনের বিধিনিষেধ না মেনে তো তার কোনো উপায় নেই। এর সঙ্গে চীন সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে দেন-দরবারও অব্যাহত রেখেছে তারা। কারণ, একবার বিনা বাক্যব্যয়ে বেইজিংয়ের সবকিছু মেনে নিলে, তা আর কখনো শেষ হবে না। চাহিদার ফর্দ খালি বড়ই হবে। এই বাস্তবতা অ্যাপল জানে বলেই তারা দুটি বিষয়ের একটা ভারসাম্য রক্ষা করে চলার নীতি নিয়েছে। বলা যায় বৈশ্বিক প্রযুক্তি মুঘলদের কথা বিবেচনা করলে চীনে অ্যাপলই সর্বশেষ। তারাও আর কত দিন থাকবে, তা দেখার বিষয়।
চার বছর আগে, ২০২১ সালের জুনে, জেনেভায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও পুতিনের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তখনো রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ হামলা চালায়নি। কিন্তু সেই বছরের শেষের দিকেই পুতিন ইউক্রেন সীমান্তে হাজার হাজার সেনা পাঠান এবং যুক্তরাষ্ট্রে সাইবার হামলা চালানো হয়। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার
১ দিন আগেআলাস্কার শান্ত শহর অ্যাঙ্কোরেজ হঠাৎ পরিণত হয়েছে বিশ্বরাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঐতিহাসিক শীর্ষ বৈঠক হতে চলেছে শহরটিতে। বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের ফয়সালাসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।
১ দিন আগেমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়াসংলগ্ন অঙ্গরাজ্য আলাস্কায় অবস্থিত যৌথ ঘাঁটি এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন। বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়
২ দিন আগেনিজের ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, তিনি ইতিমধ্যে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন এবং নতুন কোনো শর্ত আরোপ করা হচ্ছে না। একই সময়ে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও মার্কিন পণ্যে তাদের শুল্ক স্থগিতাদেশ একই মেয়াদে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তাদের পূর্বের চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে।
৪ দিন আগে