আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ এবং ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো কোন দেশের, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানসহ ভারতের একটি সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯ ভূপাতিত করেছে। বেশ কয়েকটি ড্রোনও ধ্বংস করার দাবি পাকিস্তানের। সেই সঙ্গে ৫ ভারতীয় পাইলটকে আটক করার দাবিও করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রের আনুষ্ঠানিক বিবরণ মিলছে। তারা যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বোমা ব্যবহার করেছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ ও হামলায় কী ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। শুধু সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের বেসরকারি ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দীর্ঘ পাল্লার সক্ষমতা ও বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোর কারণে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত। তবে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভারতের জন্য কম হুমকি নয়; বিশেষ করে, দুই দেশের সামরিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এদিক বিবেচনায় আধুনিক প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকলেও কাছাকাছি দূরত্বে ভারতের যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান কার্যকর একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বলা যায়। নিচে দুই দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক বিবরণ তুলে ধরা হলো:
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশ থেকে আসা যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় ভারত একটি শক্তিশালী, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো—
-এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ (৪০০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে পাওয়া এস-৪০০ বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি মাল্টি-এএসএ রাডার ব্যবহার করে, একসঙ্গে ১০০টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে এবং একই সঙ্গে ৩৬টিতে আঘাত হানতে পারে। এই রাডারব্যবস্থার শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। এটি শত্রুর আকাশসীমার গভীরে থাকা স্টিলথ বিমান (রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম আকাশযান), ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ যেকোনো হুমকিকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্তে এই ইউনিট মোতায়েন করেছে ভারত।
-বারাক-৮ (৭০-১০০ কিলোমিটার পাল্লা) : ভারত ও ইসরায়েলের যৌথভাবে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্টের জন্য এএসএ রাডার ব্যবহার করে এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরোধে কার্যকর। এটি নৌ ও স্থল উভয় প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন করা হয়েছে।
-আকাশ ও আকাশ-এনজি (৩০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : দেশীয়ভাবে তৈরি এই ব্যবস্থাগুলোতে এএসএ রাডার রয়েছে এবং এটি একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আকাশ-এনজি-এর পাল্লা পরে বাড়ানো হয়েছে এবং এর নির্ভুলতাও উন্নত করা হয়েছে।
-কিউআরএসএএম (২৫-৩০ কিলোমিটার পাল্লা) : দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম, স্বল্পপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ৩৬০-ডিগ্রি এএসএ রাডার কভারেজযুক্ত। এটি দ্রুতগতির লক্ষ্যবস্তু এবং সম্মুখ অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
-স্পাইডার (১৫-৩৫ কিলোমিটার পাল্লা) : ইসরায়েলের তৈরি এই স্বল্পপাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর।
-পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিএডি) ও অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (এএডি) : ভারতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা (বিএমডি) ব্যবস্থার অংশ এটি। এটি ৫ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে সক্ষম।
-এসআরএসএএম (২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : নৌবাহিনীর স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা আইএনএস বিক্রান্তের মতো সামরিক স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
ভারতের শক্তির দিক
-বেশির ভাগ সিস্টেমে উন্নত এএসএ রাডার প্রযুক্তি রয়েছে। এই প্রযুক্তি উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে সক্ষম।
-দীর্ঘপাল্লার এস-৪০০ অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌশলগত প্রতিরক্ষা দেয়। এটি ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে লাহোর বা ইসলামাবাদ পর্যন্ত হুমকির মোকাবিলা করতে সক্ষম।
-আকাশ ও কিউআরএসএএম-এর মতো দেশীয় ব্যবস্থা বিদেশি সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। এটি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
-বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা কাঠামো পাকিস্তান ও চীন উভয়কে মোকাবিলা করতে সক্ষম। পাশাপাশি বিএমডি সক্ষমতা ব্যালিস্টিক হুমকি প্রতিহত করতে পারে।
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। তবে এখনো সীমিত এবং চীনের প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো:
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই (১০০-২৬০ কিলোমিটার পাল্লা) : সবচেয়ে উন্নত এই ব্যবস্থা ২০২১ সালে পায় পাকিস্তান। এটি চীনের এইচকিউ-৯-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, আবার রাশিয়ার এস-৩০০-এর কিছু উপাদানও রয়েছে। এইচকিউ-৯ বিই ২৬০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং এর সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা রয়েছে। এটি জেএসজি-৪০০ ও জেপিজি-৬০০ রাডার ব্যবহার করে। তবে এটি এস-৪০০-এর চেয়ে কম আধুনিক।
-এফডি-২০০০ (১২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : এইচকিউ-৯ এ-এর রপ্তানি সংস্করণ এটি। এটি এইচটি-২৩৩ রাডার ব্যবহার করে বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারে। এটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩-এর চেয়ে বৃহত্তর পরিসরে কভারেজ দিতে পারে। তবে ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে কম কার্যকর।
-এইচকিউ-১৬ এফই/এলওয়াই-৮০ (৪০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়ার বুক-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর। এইচকিউ-১৬ এফই স্বল্প ও দীর্ঘপাল্লার প্রতিরক্ষার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে।
-এফএম-৯০ (১৫ কিলোমিটার পাল্লা) : স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা পয়েন্ট ডিফেন্সের জন্য তৈরি, যা ভারতের স্পাইডারের সঙ্গে তুলনীয়। তবে এর ব্যবহার ততটা বহুমাত্রিক নয়।
-ম্যানপ্যাডস (যেমন, আরবিএস-৭০ এনজি) : বহনযোগ্য এই স্বল্পপাল্লার ব্যবস্থাগুলো নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির জন্য কার্যকর। তবে এর পরিধি সীমিত।
পাকিস্তানের শক্তির দিক
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই একটি বিশ্বাসযোগ্য দীর্ঘপাল্লার প্রতিরোধব্যবস্থা। এটি ভারতীয় বিমানের জন্য বড় হুমকি।
-সমন্বিত প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপক স্তরযুক্ত সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা (সিএলআইএডি) কাঠামো একাধিক ব্যবস্থাকে একত্রিত করে। ফলে প্রতিরক্ষা জাল তৈরি করতে পারে।
-সাশ্রয়ী চীনা ব্যবস্থা হওয়ায় বাজেট সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বৃহত্তর পরিসরে মোতায়েনের সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের দুর্বলতা
-রাডার প্রযুক্তি (যেমন, এইচকিউ-৯-এর জেএসজি-৪০০) ভারতের এএসএ-ভিত্তিক সিস্টেমের চেয়ে কম উন্নত। ফলে মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট এবং জ্যামিং প্রতিরোধ সক্ষমতা সীমিত।
-কম এনগেজমেন্ট পাল্লা (এইচকিউ-৯-এর ২৬০ কিলোমিটার বনাম এস-৪০০-এর ৪০০ কিলোমিটার) কৌশলগত গভীরতা সীমিত করে।
-ভারতের বিএমডি সিস্টেমের তুলনায় সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা।
-দেশীয় কর্মসূচির (যেমন, লোএমএডিএস, এফএএজেড-এসএল) প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে চীনা আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
সক্ষমতায় কে এগিয়ে
১. পাল্লা ও বিস্তার
-ভারতের এস-৪০০ (৪০০ কিলোমিটার) পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই (২৬০ কিলোমিটার)-এর চেয়ে অনেক বেশি পাল্লার, যা ভারতকে পাকিস্তানের আকাশসীমার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম করে তুলেছে।
-ভারতের মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেমগুলোও (বারাক-৮, আকাশ, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের এলওয়াই-৮০ ও এফএম-৯০-এর চেয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে।
২. রাডার প্রযুক্তি
-ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এএসএ রাডার (এস-৪০০, বারাক-৮, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের কম উন্নত রাডার সিস্টেমের তুলনায় উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে পারে।
৩. বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা
-দীর্ঘ, মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেম, বিএমডিসহ ভারতের বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোটি আরও ব্যাপক ও বহুমুখী। এটি পাকিস্তান ও চীন উভয় থেকে আসা বিভিন্ন হুমকি মোকাবিলা করতে পারে। পাকিস্তানের সিএলআইএডি এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর প্রতিরক্ষামূলক সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
৪. ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা
-ভারতের পিএডি ও এএডি সিস্টেম শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দেয়, যেখানে পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই-এর ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে সীমিত কার্যকারিতা রয়েছে।
৫. দেশীয় সক্ষমতা
-ভারতের দেশীয় সিস্টেম (আকাশ, কিউআরএসএএম) এবং বিএমডি উন্নয়ন বিদেশি নির্ভরতা কমিয়েছে। যেখানে পাকিস্তানের চীনা আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে বাজেট ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নমনীয়তাকে সীমিত করেছে।
৬. কৌশলগত প্রভাব
-এস-৪০০ ভারতকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়। এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কারণে পাকিস্তানকে এফ-১৬ ও জেএফ-১৭-এর মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। ভারতের ব্যবস্থাগুলো বারাক-৮ ও আকাশের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (যেমন, বাবর) প্রতিরোধ করতে পারে। পাকিস্তানের এইচকিউ-৯পি একটি কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা। তবে এটি যুদ্ধের সময় এস-৪০০-এর মতো আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম নয়।
পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম
এস-৪০০-এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাল্লা ও রাডার সক্ষমতা, উন্নত এএসএ প্রযুক্তি, একটি বহুস্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা এবং শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার কারণে আকাশ প্রতিরক্ষায় ভারতের সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এইচকিউ-৯পি ও সিএলআইএডি-এর মাধ্যমে উন্নত হলেও কম পাল্লা, কম উন্নত রাডার এবং সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক সক্ষমতার কারণে সীমাবদ্ধ।
এ ছাড়া ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের কোনো আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নেই। ইসলামাবাদ আইসিবিএম ব্যবস্থা মোতায়েনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির বিকাশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়, অথবা আপাতত সক্ষমতা নেই। পাকিস্তানের সতর্কতামূলক কৌশল অগ্রাধিকার পায়।
ভারতের চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও হুমকি বোধ করে। এর পাশাপাশি ভারতের আঞ্চলিক পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের কেবল একটি প্রধান শত্রু রয়েছে, সেটি হলো ভারত। ফলে প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংঘাতে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অপ্রাসঙ্গিক। পাকিস্তানের বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মজুত তাদের আঞ্চলিক লক্ষ্য পূরণ করে। অর্থাৎ ভারতকে প্রতিরোধ করার মতো যথেষ্ট বলেই মনে করে তারা।
চীনের সঙ্গে সহযোগিতায় তৈরি শাহিন ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের জন্য অনেকটা নির্ভার থাকে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘপাল্লার সক্ষমতা নিয়ে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দেশটি ভারতের হামলা প্রতিহত করার জন্য একটি অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তৈরি ও মোতায়েন করার কাজ করছে। ভারতের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র, যেমন ব্রহ্মোস, ঠেকাতে নতুন প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েনে বিনিয়োগ করছে পাকিস্তান।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আরও খবর পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ এবং ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো কোন দেশের, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানসহ ভারতের একটি সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯ ভূপাতিত করেছে। বেশ কয়েকটি ড্রোনও ধ্বংস করার দাবি পাকিস্তানের। সেই সঙ্গে ৫ ভারতীয় পাইলটকে আটক করার দাবিও করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রের আনুষ্ঠানিক বিবরণ মিলছে। তারা যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বোমা ব্যবহার করেছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ ও হামলায় কী ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। শুধু সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের বেসরকারি ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দীর্ঘ পাল্লার সক্ষমতা ও বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোর কারণে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত। তবে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভারতের জন্য কম হুমকি নয়; বিশেষ করে, দুই দেশের সামরিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এদিক বিবেচনায় আধুনিক প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকলেও কাছাকাছি দূরত্বে ভারতের যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান কার্যকর একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বলা যায়। নিচে দুই দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক বিবরণ তুলে ধরা হলো:
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশ থেকে আসা যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় ভারত একটি শক্তিশালী, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো—
-এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ (৪০০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে পাওয়া এস-৪০০ বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি মাল্টি-এএসএ রাডার ব্যবহার করে, একসঙ্গে ১০০টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে এবং একই সঙ্গে ৩৬টিতে আঘাত হানতে পারে। এই রাডারব্যবস্থার শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। এটি শত্রুর আকাশসীমার গভীরে থাকা স্টিলথ বিমান (রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম আকাশযান), ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ যেকোনো হুমকিকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্তে এই ইউনিট মোতায়েন করেছে ভারত।
-বারাক-৮ (৭০-১০০ কিলোমিটার পাল্লা) : ভারত ও ইসরায়েলের যৌথভাবে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্টের জন্য এএসএ রাডার ব্যবহার করে এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরোধে কার্যকর। এটি নৌ ও স্থল উভয় প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন করা হয়েছে।
-আকাশ ও আকাশ-এনজি (৩০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : দেশীয়ভাবে তৈরি এই ব্যবস্থাগুলোতে এএসএ রাডার রয়েছে এবং এটি একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আকাশ-এনজি-এর পাল্লা পরে বাড়ানো হয়েছে এবং এর নির্ভুলতাও উন্নত করা হয়েছে।
-কিউআরএসএএম (২৫-৩০ কিলোমিটার পাল্লা) : দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম, স্বল্পপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ৩৬০-ডিগ্রি এএসএ রাডার কভারেজযুক্ত। এটি দ্রুতগতির লক্ষ্যবস্তু এবং সম্মুখ অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
-স্পাইডার (১৫-৩৫ কিলোমিটার পাল্লা) : ইসরায়েলের তৈরি এই স্বল্পপাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর।
-পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিএডি) ও অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (এএডি) : ভারতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা (বিএমডি) ব্যবস্থার অংশ এটি। এটি ৫ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে সক্ষম।
-এসআরএসএএম (২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : নৌবাহিনীর স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা আইএনএস বিক্রান্তের মতো সামরিক স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
ভারতের শক্তির দিক
-বেশির ভাগ সিস্টেমে উন্নত এএসএ রাডার প্রযুক্তি রয়েছে। এই প্রযুক্তি উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে সক্ষম।
-দীর্ঘপাল্লার এস-৪০০ অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌশলগত প্রতিরক্ষা দেয়। এটি ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে লাহোর বা ইসলামাবাদ পর্যন্ত হুমকির মোকাবিলা করতে সক্ষম।
-আকাশ ও কিউআরএসএএম-এর মতো দেশীয় ব্যবস্থা বিদেশি সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। এটি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
-বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা কাঠামো পাকিস্তান ও চীন উভয়কে মোকাবিলা করতে সক্ষম। পাশাপাশি বিএমডি সক্ষমতা ব্যালিস্টিক হুমকি প্রতিহত করতে পারে।
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। তবে এখনো সীমিত এবং চীনের প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো:
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই (১০০-২৬০ কিলোমিটার পাল্লা) : সবচেয়ে উন্নত এই ব্যবস্থা ২০২১ সালে পায় পাকিস্তান। এটি চীনের এইচকিউ-৯-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, আবার রাশিয়ার এস-৩০০-এর কিছু উপাদানও রয়েছে। এইচকিউ-৯ বিই ২৬০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং এর সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা রয়েছে। এটি জেএসজি-৪০০ ও জেপিজি-৬০০ রাডার ব্যবহার করে। তবে এটি এস-৪০০-এর চেয়ে কম আধুনিক।
-এফডি-২০০০ (১২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : এইচকিউ-৯ এ-এর রপ্তানি সংস্করণ এটি। এটি এইচটি-২৩৩ রাডার ব্যবহার করে বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারে। এটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩-এর চেয়ে বৃহত্তর পরিসরে কভারেজ দিতে পারে। তবে ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে কম কার্যকর।
-এইচকিউ-১৬ এফই/এলওয়াই-৮০ (৪০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়ার বুক-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর। এইচকিউ-১৬ এফই স্বল্প ও দীর্ঘপাল্লার প্রতিরক্ষার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে।
-এফএম-৯০ (১৫ কিলোমিটার পাল্লা) : স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা পয়েন্ট ডিফেন্সের জন্য তৈরি, যা ভারতের স্পাইডারের সঙ্গে তুলনীয়। তবে এর ব্যবহার ততটা বহুমাত্রিক নয়।
-ম্যানপ্যাডস (যেমন, আরবিএস-৭০ এনজি) : বহনযোগ্য এই স্বল্পপাল্লার ব্যবস্থাগুলো নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির জন্য কার্যকর। তবে এর পরিধি সীমিত।
পাকিস্তানের শক্তির দিক
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই একটি বিশ্বাসযোগ্য দীর্ঘপাল্লার প্রতিরোধব্যবস্থা। এটি ভারতীয় বিমানের জন্য বড় হুমকি।
-সমন্বিত প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপক স্তরযুক্ত সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা (সিএলআইএডি) কাঠামো একাধিক ব্যবস্থাকে একত্রিত করে। ফলে প্রতিরক্ষা জাল তৈরি করতে পারে।
-সাশ্রয়ী চীনা ব্যবস্থা হওয়ায় বাজেট সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বৃহত্তর পরিসরে মোতায়েনের সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের দুর্বলতা
-রাডার প্রযুক্তি (যেমন, এইচকিউ-৯-এর জেএসজি-৪০০) ভারতের এএসএ-ভিত্তিক সিস্টেমের চেয়ে কম উন্নত। ফলে মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট এবং জ্যামিং প্রতিরোধ সক্ষমতা সীমিত।
-কম এনগেজমেন্ট পাল্লা (এইচকিউ-৯-এর ২৬০ কিলোমিটার বনাম এস-৪০০-এর ৪০০ কিলোমিটার) কৌশলগত গভীরতা সীমিত করে।
-ভারতের বিএমডি সিস্টেমের তুলনায় সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা।
-দেশীয় কর্মসূচির (যেমন, লোএমএডিএস, এফএএজেড-এসএল) প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে চীনা আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
সক্ষমতায় কে এগিয়ে
১. পাল্লা ও বিস্তার
-ভারতের এস-৪০০ (৪০০ কিলোমিটার) পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই (২৬০ কিলোমিটার)-এর চেয়ে অনেক বেশি পাল্লার, যা ভারতকে পাকিস্তানের আকাশসীমার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম করে তুলেছে।
-ভারতের মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেমগুলোও (বারাক-৮, আকাশ, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের এলওয়াই-৮০ ও এফএম-৯০-এর চেয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে।
২. রাডার প্রযুক্তি
-ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এএসএ রাডার (এস-৪০০, বারাক-৮, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের কম উন্নত রাডার সিস্টেমের তুলনায় উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে পারে।
৩. বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা
-দীর্ঘ, মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেম, বিএমডিসহ ভারতের বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোটি আরও ব্যাপক ও বহুমুখী। এটি পাকিস্তান ও চীন উভয় থেকে আসা বিভিন্ন হুমকি মোকাবিলা করতে পারে। পাকিস্তানের সিএলআইএডি এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর প্রতিরক্ষামূলক সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
৪. ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা
-ভারতের পিএডি ও এএডি সিস্টেম শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দেয়, যেখানে পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই-এর ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে সীমিত কার্যকারিতা রয়েছে।
৫. দেশীয় সক্ষমতা
-ভারতের দেশীয় সিস্টেম (আকাশ, কিউআরএসএএম) এবং বিএমডি উন্নয়ন বিদেশি নির্ভরতা কমিয়েছে। যেখানে পাকিস্তানের চীনা আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে বাজেট ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নমনীয়তাকে সীমিত করেছে।
৬. কৌশলগত প্রভাব
-এস-৪০০ ভারতকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়। এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কারণে পাকিস্তানকে এফ-১৬ ও জেএফ-১৭-এর মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। ভারতের ব্যবস্থাগুলো বারাক-৮ ও আকাশের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (যেমন, বাবর) প্রতিরোধ করতে পারে। পাকিস্তানের এইচকিউ-৯পি একটি কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা। তবে এটি যুদ্ধের সময় এস-৪০০-এর মতো আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম নয়।
পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম
এস-৪০০-এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাল্লা ও রাডার সক্ষমতা, উন্নত এএসএ প্রযুক্তি, একটি বহুস্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা এবং শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার কারণে আকাশ প্রতিরক্ষায় ভারতের সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এইচকিউ-৯পি ও সিএলআইএডি-এর মাধ্যমে উন্নত হলেও কম পাল্লা, কম উন্নত রাডার এবং সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক সক্ষমতার কারণে সীমাবদ্ধ।
এ ছাড়া ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের কোনো আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নেই। ইসলামাবাদ আইসিবিএম ব্যবস্থা মোতায়েনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির বিকাশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়, অথবা আপাতত সক্ষমতা নেই। পাকিস্তানের সতর্কতামূলক কৌশল অগ্রাধিকার পায়।
ভারতের চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও হুমকি বোধ করে। এর পাশাপাশি ভারতের আঞ্চলিক পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের কেবল একটি প্রধান শত্রু রয়েছে, সেটি হলো ভারত। ফলে প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংঘাতে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অপ্রাসঙ্গিক। পাকিস্তানের বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মজুত তাদের আঞ্চলিক লক্ষ্য পূরণ করে। অর্থাৎ ভারতকে প্রতিরোধ করার মতো যথেষ্ট বলেই মনে করে তারা।
চীনের সঙ্গে সহযোগিতায় তৈরি শাহিন ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের জন্য অনেকটা নির্ভার থাকে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘপাল্লার সক্ষমতা নিয়ে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দেশটি ভারতের হামলা প্রতিহত করার জন্য একটি অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তৈরি ও মোতায়েন করার কাজ করছে। ভারতের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র, যেমন ব্রহ্মোস, ঠেকাতে নতুন প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েনে বিনিয়োগ করছে পাকিস্তান।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আরও খবর পড়ুন:
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ এবং ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো কোন দেশের, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানসহ ভারতের একটি সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯ ভূপাতিত করেছে। বেশ কয়েকটি ড্রোনও ধ্বংস করার দাবি পাকিস্তানের। সেই সঙ্গে ৫ ভারতীয় পাইলটকে আটক করার দাবিও করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রের আনুষ্ঠানিক বিবরণ মিলছে। তারা যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বোমা ব্যবহার করেছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ ও হামলায় কী ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। শুধু সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের বেসরকারি ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দীর্ঘ পাল্লার সক্ষমতা ও বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোর কারণে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত। তবে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভারতের জন্য কম হুমকি নয়; বিশেষ করে, দুই দেশের সামরিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এদিক বিবেচনায় আধুনিক প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকলেও কাছাকাছি দূরত্বে ভারতের যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান কার্যকর একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বলা যায়। নিচে দুই দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক বিবরণ তুলে ধরা হলো:
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশ থেকে আসা যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় ভারত একটি শক্তিশালী, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো—
-এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ (৪০০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে পাওয়া এস-৪০০ বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি মাল্টি-এএসএ রাডার ব্যবহার করে, একসঙ্গে ১০০টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে এবং একই সঙ্গে ৩৬টিতে আঘাত হানতে পারে। এই রাডারব্যবস্থার শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। এটি শত্রুর আকাশসীমার গভীরে থাকা স্টিলথ বিমান (রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম আকাশযান), ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ যেকোনো হুমকিকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্তে এই ইউনিট মোতায়েন করেছে ভারত।
-বারাক-৮ (৭০-১০০ কিলোমিটার পাল্লা) : ভারত ও ইসরায়েলের যৌথভাবে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্টের জন্য এএসএ রাডার ব্যবহার করে এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরোধে কার্যকর। এটি নৌ ও স্থল উভয় প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন করা হয়েছে।
-আকাশ ও আকাশ-এনজি (৩০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : দেশীয়ভাবে তৈরি এই ব্যবস্থাগুলোতে এএসএ রাডার রয়েছে এবং এটি একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আকাশ-এনজি-এর পাল্লা পরে বাড়ানো হয়েছে এবং এর নির্ভুলতাও উন্নত করা হয়েছে।
-কিউআরএসএএম (২৫-৩০ কিলোমিটার পাল্লা) : দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম, স্বল্পপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ৩৬০-ডিগ্রি এএসএ রাডার কভারেজযুক্ত। এটি দ্রুতগতির লক্ষ্যবস্তু এবং সম্মুখ অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
-স্পাইডার (১৫-৩৫ কিলোমিটার পাল্লা) : ইসরায়েলের তৈরি এই স্বল্পপাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর।
-পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিএডি) ও অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (এএডি) : ভারতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা (বিএমডি) ব্যবস্থার অংশ এটি। এটি ৫ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে সক্ষম।
-এসআরএসএএম (২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : নৌবাহিনীর স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা আইএনএস বিক্রান্তের মতো সামরিক স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
ভারতের শক্তির দিক
-বেশির ভাগ সিস্টেমে উন্নত এএসএ রাডার প্রযুক্তি রয়েছে। এই প্রযুক্তি উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে সক্ষম।
-দীর্ঘপাল্লার এস-৪০০ অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌশলগত প্রতিরক্ষা দেয়। এটি ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে লাহোর বা ইসলামাবাদ পর্যন্ত হুমকির মোকাবিলা করতে সক্ষম।
-আকাশ ও কিউআরএসএএম-এর মতো দেশীয় ব্যবস্থা বিদেশি সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। এটি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
-বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা কাঠামো পাকিস্তান ও চীন উভয়কে মোকাবিলা করতে সক্ষম। পাশাপাশি বিএমডি সক্ষমতা ব্যালিস্টিক হুমকি প্রতিহত করতে পারে।
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। তবে এখনো সীমিত এবং চীনের প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো:
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই (১০০-২৬০ কিলোমিটার পাল্লা) : সবচেয়ে উন্নত এই ব্যবস্থা ২০২১ সালে পায় পাকিস্তান। এটি চীনের এইচকিউ-৯-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, আবার রাশিয়ার এস-৩০০-এর কিছু উপাদানও রয়েছে। এইচকিউ-৯ বিই ২৬০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং এর সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা রয়েছে। এটি জেএসজি-৪০০ ও জেপিজি-৬০০ রাডার ব্যবহার করে। তবে এটি এস-৪০০-এর চেয়ে কম আধুনিক।
-এফডি-২০০০ (১২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : এইচকিউ-৯ এ-এর রপ্তানি সংস্করণ এটি। এটি এইচটি-২৩৩ রাডার ব্যবহার করে বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারে। এটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩-এর চেয়ে বৃহত্তর পরিসরে কভারেজ দিতে পারে। তবে ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে কম কার্যকর।
-এইচকিউ-১৬ এফই/এলওয়াই-৮০ (৪০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়ার বুক-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর। এইচকিউ-১৬ এফই স্বল্প ও দীর্ঘপাল্লার প্রতিরক্ষার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে।
-এফএম-৯০ (১৫ কিলোমিটার পাল্লা) : স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা পয়েন্ট ডিফেন্সের জন্য তৈরি, যা ভারতের স্পাইডারের সঙ্গে তুলনীয়। তবে এর ব্যবহার ততটা বহুমাত্রিক নয়।
-ম্যানপ্যাডস (যেমন, আরবিএস-৭০ এনজি) : বহনযোগ্য এই স্বল্পপাল্লার ব্যবস্থাগুলো নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির জন্য কার্যকর। তবে এর পরিধি সীমিত।
পাকিস্তানের শক্তির দিক
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই একটি বিশ্বাসযোগ্য দীর্ঘপাল্লার প্রতিরোধব্যবস্থা। এটি ভারতীয় বিমানের জন্য বড় হুমকি।
-সমন্বিত প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপক স্তরযুক্ত সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা (সিএলআইএডি) কাঠামো একাধিক ব্যবস্থাকে একত্রিত করে। ফলে প্রতিরক্ষা জাল তৈরি করতে পারে।
-সাশ্রয়ী চীনা ব্যবস্থা হওয়ায় বাজেট সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বৃহত্তর পরিসরে মোতায়েনের সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের দুর্বলতা
-রাডার প্রযুক্তি (যেমন, এইচকিউ-৯-এর জেএসজি-৪০০) ভারতের এএসএ-ভিত্তিক সিস্টেমের চেয়ে কম উন্নত। ফলে মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট এবং জ্যামিং প্রতিরোধ সক্ষমতা সীমিত।
-কম এনগেজমেন্ট পাল্লা (এইচকিউ-৯-এর ২৬০ কিলোমিটার বনাম এস-৪০০-এর ৪০০ কিলোমিটার) কৌশলগত গভীরতা সীমিত করে।
-ভারতের বিএমডি সিস্টেমের তুলনায় সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা।
-দেশীয় কর্মসূচির (যেমন, লোএমএডিএস, এফএএজেড-এসএল) প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে চীনা আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
সক্ষমতায় কে এগিয়ে
১. পাল্লা ও বিস্তার
-ভারতের এস-৪০০ (৪০০ কিলোমিটার) পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই (২৬০ কিলোমিটার)-এর চেয়ে অনেক বেশি পাল্লার, যা ভারতকে পাকিস্তানের আকাশসীমার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম করে তুলেছে।
-ভারতের মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেমগুলোও (বারাক-৮, আকাশ, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের এলওয়াই-৮০ ও এফএম-৯০-এর চেয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে।
২. রাডার প্রযুক্তি
-ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এএসএ রাডার (এস-৪০০, বারাক-৮, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের কম উন্নত রাডার সিস্টেমের তুলনায় উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে পারে।
৩. বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা
-দীর্ঘ, মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেম, বিএমডিসহ ভারতের বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোটি আরও ব্যাপক ও বহুমুখী। এটি পাকিস্তান ও চীন উভয় থেকে আসা বিভিন্ন হুমকি মোকাবিলা করতে পারে। পাকিস্তানের সিএলআইএডি এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর প্রতিরক্ষামূলক সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
৪. ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা
-ভারতের পিএডি ও এএডি সিস্টেম শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দেয়, যেখানে পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই-এর ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে সীমিত কার্যকারিতা রয়েছে।
৫. দেশীয় সক্ষমতা
-ভারতের দেশীয় সিস্টেম (আকাশ, কিউআরএসএএম) এবং বিএমডি উন্নয়ন বিদেশি নির্ভরতা কমিয়েছে। যেখানে পাকিস্তানের চীনা আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে বাজেট ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নমনীয়তাকে সীমিত করেছে।
৬. কৌশলগত প্রভাব
-এস-৪০০ ভারতকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়। এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কারণে পাকিস্তানকে এফ-১৬ ও জেএফ-১৭-এর মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। ভারতের ব্যবস্থাগুলো বারাক-৮ ও আকাশের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (যেমন, বাবর) প্রতিরোধ করতে পারে। পাকিস্তানের এইচকিউ-৯পি একটি কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা। তবে এটি যুদ্ধের সময় এস-৪০০-এর মতো আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম নয়।
পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম
এস-৪০০-এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাল্লা ও রাডার সক্ষমতা, উন্নত এএসএ প্রযুক্তি, একটি বহুস্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা এবং শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার কারণে আকাশ প্রতিরক্ষায় ভারতের সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এইচকিউ-৯পি ও সিএলআইএডি-এর মাধ্যমে উন্নত হলেও কম পাল্লা, কম উন্নত রাডার এবং সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক সক্ষমতার কারণে সীমাবদ্ধ।
এ ছাড়া ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের কোনো আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নেই। ইসলামাবাদ আইসিবিএম ব্যবস্থা মোতায়েনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির বিকাশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়, অথবা আপাতত সক্ষমতা নেই। পাকিস্তানের সতর্কতামূলক কৌশল অগ্রাধিকার পায়।
ভারতের চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও হুমকি বোধ করে। এর পাশাপাশি ভারতের আঞ্চলিক পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের কেবল একটি প্রধান শত্রু রয়েছে, সেটি হলো ভারত। ফলে প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংঘাতে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অপ্রাসঙ্গিক। পাকিস্তানের বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মজুত তাদের আঞ্চলিক লক্ষ্য পূরণ করে। অর্থাৎ ভারতকে প্রতিরোধ করার মতো যথেষ্ট বলেই মনে করে তারা।
চীনের সঙ্গে সহযোগিতায় তৈরি শাহিন ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের জন্য অনেকটা নির্ভার থাকে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘপাল্লার সক্ষমতা নিয়ে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দেশটি ভারতের হামলা প্রতিহত করার জন্য একটি অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তৈরি ও মোতায়েন করার কাজ করছে। ভারতের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র, যেমন ব্রহ্মোস, ঠেকাতে নতুন প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েনে বিনিয়োগ করছে পাকিস্তান।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আরও খবর পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ এবং ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে সেগুলো কোন দেশের, সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা তিনটি অত্যাধুনিক রাফাল যুদ্ধবিমানসহ ভারতের একটি সুখোই-৩০ ও একটি মিগ-২৯ ভূপাতিত করেছে। বেশ কয়েকটি ড্রোনও ধ্বংস করার দাবি পাকিস্তানের। সেই সঙ্গে ৫ ভারতীয় পাইলটকে আটক করার দাবিও করা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে ব্যবহৃত যুদ্ধাস্ত্রের আনুষ্ঠানিক বিবরণ মিলছে। তারা যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বোমা ব্যবহার করেছে। তবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ ও হামলায় কী ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। শুধু সীমান্তে ভারী গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের বেসরকারি ইন্ডিয়ান ডিফেন্স রিসার্চ উইং ও ওয়াশিংটনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের তথ্যের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি তুলনামূলক ধারণা পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, দীর্ঘ পাল্লার সক্ষমতা ও বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোর কারণে ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পাকিস্তানের চেয়ে উন্নত। তবে পাকিস্তানের কৌশলগত প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভারতের জন্য কম হুমকি নয়; বিশেষ করে, দুই দেশের সামরিক কৌশল ও ভূরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। এদিক বিবেচনায় আধুনিক প্রযুক্তি ও সক্ষমতায় পিছিয়ে থাকলেও কাছাকাছি দূরত্বে ভারতের যেকোনো আক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তান কার্যকর একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছে বলা যায়। নিচে দুই দেশের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক বিবরণ তুলে ধরা হলো:
ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
যুদ্ধবিমান, ড্রোন, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ আকাশ থেকে আসা যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় ভারত একটি শক্তিশালী, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো—
-এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ (৪০০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়া থেকে ২০২১ সালে পাওয়া এস-৪০০ বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। এটি মাল্টি-এএসএ রাডার ব্যবহার করে, একসঙ্গে ১০০টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে এবং একই সঙ্গে ৩৬টিতে আঘাত হানতে পারে। এই রাডারব্যবস্থার শত্রুপক্ষের লক্ষ্যবস্তু শনাক্তকরণের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার। এটি শত্রুর আকাশসীমার গভীরে থাকা স্টিলথ বিমান (রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম আকাশযান), ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ যেকোনো হুমকিকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সীমান্তে এই ইউনিট মোতায়েন করেছে ভারত।
-বারাক-৮ (৭০-১০০ কিলোমিটার পাল্লা) : ভারত ও ইসরায়েলের যৌথভাবে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্টের জন্য এএসএ রাডার ব্যবহার করে এবং ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান প্রতিরোধে কার্যকর। এটি নৌ ও স্থল উভয় প্ল্যাটফর্মে মোতায়েন করা হয়েছে।
-আকাশ ও আকাশ-এনজি (৩০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : দেশীয়ভাবে তৈরি এই ব্যবস্থাগুলোতে এএসএ রাডার রয়েছে এবং এটি একসঙ্গে একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। আকাশ-এনজি-এর পাল্লা পরে বাড়ানো হয়েছে এবং এর নির্ভুলতাও উন্নত করা হয়েছে।
-কিউআরএসএএম (২৫-৩০ কিলোমিটার পাল্লা) : দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখাতে সক্ষম, স্বল্পপাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ৩৬০-ডিগ্রি এএসএ রাডার কভারেজযুক্ত। এটি দ্রুতগতির লক্ষ্যবস্তু এবং সম্মুখ অবস্থানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
-স্পাইডার (১৫-৩৫ কিলোমিটার পাল্লা) : ইসরায়েলের তৈরি এই স্বল্পপাল্লার প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অনেক নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির বিরুদ্ধে কার্যকর।
-পৃথ্বী এয়ার ডিফেন্স (পিএডি) ও অ্যাডভান্সড এয়ার ডিফেন্স (এএডি) : ভারতের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা (বিএমডি) ব্যবস্থার অংশ এটি। এটি ৫ হাজার কিলোমিটার দূর থেকে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্রকেও বাধা দিতে সক্ষম।
-এসআরএসএএম (২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : নৌবাহিনীর স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা আইএনএস বিক্রান্তের মতো সামরিক স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষায় ব্যবহার করা হয়।
ভারতের শক্তির দিক
-বেশির ভাগ সিস্টেমে উন্নত এএসএ রাডার প্রযুক্তি রয়েছে। এই প্রযুক্তি উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে সক্ষম।
-দীর্ঘপাল্লার এস-৪০০ অপ্রতিদ্বন্দ্বী কৌশলগত প্রতিরক্ষা দেয়। এটি ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে লাহোর বা ইসলামাবাদ পর্যন্ত হুমকির মোকাবিলা করতে সক্ষম।
-আকাশ ও কিউআরএসএএম-এর মতো দেশীয় ব্যবস্থা বিদেশি সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরতা কমিয়েছে। এটি সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
-বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা কাঠামো পাকিস্তান ও চীন উভয়কে মোকাবিলা করতে সক্ষম। পাশাপাশি বিএমডি সক্ষমতা ব্যালিস্টিক হুমকি প্রতিহত করতে পারে।
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা
পাকিস্তানের আকাশ প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। তবে এখনো সীমিত এবং চীনের প্রযুক্তির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এর প্রধান কয়েকটি ব্যবস্থা হলো:
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই (১০০-২৬০ কিলোমিটার পাল্লা) : সবচেয়ে উন্নত এই ব্যবস্থা ২০২১ সালে পায় পাকিস্তান। এটি চীনের এইচকিউ-৯-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, আবার রাশিয়ার এস-৩০০-এর কিছু উপাদানও রয়েছে। এইচকিউ-৯ বিই ২৬০ কিলোমিটার দূরে পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে এবং এর সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা রয়েছে। এটি জেএসজি-৪০০ ও জেপিজি-৬০০ রাডার ব্যবহার করে। তবে এটি এস-৪০০-এর চেয়ে কম আধুনিক।
-এফডি-২০০০ (১২৫ কিলোমিটার পাল্লা) : এইচকিউ-৯ এ-এর রপ্তানি সংস্করণ এটি। এটি এইচটি-২৩৩ রাডার ব্যবহার করে বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রকে প্রতিহত করতে পারে। এটি মার্কিন প্যাট্রিয়ট পিএসি-৩-এর চেয়ে বৃহত্তর পরিসরে কভারেজ দিতে পারে। তবে ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে কম কার্যকর।
-এইচকিউ-১৬ এফই/এলওয়াই-৮০ (৪০-৭০ কিলোমিটার পাল্লা) : রাশিয়ার বুক-এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি মাঝারি পাল্লার এই ব্যবস্থা বিমান ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের বিরুদ্ধে কার্যকর। এইচকিউ-১৬ এফই স্বল্প ও দীর্ঘপাল্লার প্রতিরক্ষার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করে।
-এফএম-৯০ (১৫ কিলোমিটার পাল্লা) : স্বল্পপাল্লার এই ব্যবস্থা পয়েন্ট ডিফেন্সের জন্য তৈরি, যা ভারতের স্পাইডারের সঙ্গে তুলনীয়। তবে এর ব্যবহার ততটা বহুমাত্রিক নয়।
-ম্যানপ্যাডস (যেমন, আরবিএস-৭০ এনজি) : বহনযোগ্য এই স্বল্পপাল্লার ব্যবস্থাগুলো নিচ দিয়ে উড়ে আসা হুমকির জন্য কার্যকর। তবে এর পরিধি সীমিত।
পাকিস্তানের শক্তির দিক
-এইচকিউ-৯ পি/৯ বিই একটি বিশ্বাসযোগ্য দীর্ঘপাল্লার প্রতিরোধব্যবস্থা। এটি ভারতীয় বিমানের জন্য বড় হুমকি।
-সমন্বিত প্রতিরক্ষার জন্য ব্যাপক স্তরযুক্ত সমন্বিত আকাশ প্রতিরক্ষা (সিএলআইএডি) কাঠামো একাধিক ব্যবস্থাকে একত্রিত করে। ফলে প্রতিরক্ষা জাল তৈরি করতে পারে।
-সাশ্রয়ী চীনা ব্যবস্থা হওয়ায় বাজেট সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বৃহত্তর পরিসরে মোতায়েনের সুযোগ পেয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের দুর্বলতা
-রাডার প্রযুক্তি (যেমন, এইচকিউ-৯-এর জেএসজি-৪০০) ভারতের এএসএ-ভিত্তিক সিস্টেমের চেয়ে কম উন্নত। ফলে মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট এবং জ্যামিং প্রতিরোধ সক্ষমতা সীমিত।
-কম এনগেজমেন্ট পাল্লা (এইচকিউ-৯-এর ২৬০ কিলোমিটার বনাম এস-৪০০-এর ৪০০ কিলোমিটার) কৌশলগত গভীরতা সীমিত করে।
-ভারতের বিএমডি সিস্টেমের তুলনায় সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা।
-দেশীয় কর্মসূচির (যেমন, লোএমএডিএস, এফএএজেড-এসএল) প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে চীনা আমদানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
সক্ষমতায় কে এগিয়ে
১. পাল্লা ও বিস্তার
-ভারতের এস-৪০০ (৪০০ কিলোমিটার) পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই (২৬০ কিলোমিটার)-এর চেয়ে অনেক বেশি পাল্লার, যা ভারতকে পাকিস্তানের আকাশসীমার গভীরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম করে তুলেছে।
-ভারতের মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেমগুলোও (বারাক-৮, আকাশ, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের এলওয়াই-৮০ ও এফএম-৯০-এর চেয়ে প্রযুক্তিগত দিক থেকে এগিয়ে।
২. রাডার প্রযুক্তি
-ভারতের প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এএসএ রাডার (এস-৪০০, বারাক-৮, কিউআরএসএএম) পাকিস্তানের কম উন্নত রাডার সিস্টেমের তুলনায় উন্নত ট্র্যাকিং, জ্যামিং প্রতিরোধ ও মাল্টি-টার্গেট এনগেজমেন্ট দিতে পারে।
৩. বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা
-দীর্ঘ, মাঝারি ও স্বল্পপাল্লার সিস্টেম, বিএমডিসহ ভারতের বহুস্তরবিশিষ্ট কাঠামোটি আরও ব্যাপক ও বহুমুখী। এটি পাকিস্তান ও চীন উভয় থেকে আসা বিভিন্ন হুমকি মোকাবিলা করতে পারে। পাকিস্তানের সিএলআইএডি এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর হলেও এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ সম্পদগুলোর প্রতিরক্ষামূলক সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।
৪. ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা
-ভারতের পিএডি ও এএডি সিস্টেম শক্তিশালী অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা দেয়, যেখানে পাকিস্তানের এইচকিউ-৯ বিই-এর ব্যালিস্টিক হুমকির বিরুদ্ধে সীমিত কার্যকারিতা রয়েছে।
৫. দেশীয় সক্ষমতা
-ভারতের দেশীয় সিস্টেম (আকাশ, কিউআরএসএএম) এবং বিএমডি উন্নয়ন বিদেশি নির্ভরতা কমিয়েছে। যেখানে পাকিস্তানের চীনা আমদানির ওপর নির্ভরতার কারণে বাজেট ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নমনীয়তাকে সীমিত করেছে।
৬. কৌশলগত প্রভাব
-এস-৪০০ ভারতকে উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেয়। এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার কারণে পাকিস্তানকে এফ-১৬ ও জেএফ-১৭-এর মতো যুদ্ধবিমান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। ভারতের ব্যবস্থাগুলো বারাক-৮ ও আকাশের মাধ্যমে পাকিস্তানের ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র (যেমন, বাবর) প্রতিরোধ করতে পারে। পাকিস্তানের এইচকিউ-৯পি একটি কার্যকর প্রতিরোধব্যবস্থা। তবে এটি যুদ্ধের সময় এস-৪০০-এর মতো আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম নয়।
পাকিস্তান কি ভারতের আক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম
এস-৪০০-এর অপ্রতিদ্বন্দ্বী পাল্লা ও রাডার সক্ষমতা, উন্নত এএসএ প্রযুক্তি, একটি বহুস্তরযুক্ত প্রতিরক্ষা এবং শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার কারণে আকাশ প্রতিরক্ষায় ভারতের সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এইচকিউ-৯পি ও সিএলআইএডি-এর মাধ্যমে উন্নত হলেও কম পাল্লা, কম উন্নত রাডার এবং সীমিত অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক সক্ষমতার কারণে সীমাবদ্ধ।
এ ছাড়া ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের কোনো আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) নেই। ইসলামাবাদ আইসিবিএম ব্যবস্থা মোতায়েনে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির বিকাশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক নয়, অথবা আপাতত সক্ষমতা নেই। পাকিস্তানের সতর্কতামূলক কৌশল অগ্রাধিকার পায়।
ভারতের চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বৈরী সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকেও হুমকি বোধ করে। এর পাশাপাশি ভারতের আঞ্চলিক পরাশক্তি হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের কেবল একটি প্রধান শত্রু রয়েছে, সেটি হলো ভারত। ফলে প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংঘাতে আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) অপ্রাসঙ্গিক। পাকিস্তানের বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার মজুত তাদের আঞ্চলিক লক্ষ্য পূরণ করে। অর্থাৎ ভারতকে প্রতিরোধ করার মতো যথেষ্ট বলেই মনে করে তারা।
চীনের সঙ্গে সহযোগিতায় তৈরি শাহিন ক্ষেপণাস্ত্র সিরিজের জন্য অনেকটা নির্ভার থাকে ইসলামাবাদ। পাকিস্তান স্বল্প, মাঝারি ও দীর্ঘপাল্লার সক্ষমতা নিয়ে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। দেশটি ভারতের হামলা প্রতিহত করার জন্য একটি অ্যান্টি-ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা তৈরি ও মোতায়েন করার কাজ করছে। ভারতের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র, যেমন ব্রহ্মোস, ঠেকাতে নতুন প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েনে বিনিয়োগ করছে পাকিস্তান।
লেখক: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আরও খবর পড়ুন:

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
১১ ঘণ্টা আগে
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
১ দিন আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা
২ দিন আগে
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য—প্রতিটি নিবন্ধিত ভোটারের পরিচয় যাচাই করা এবং রাজ্যের বাইরে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। ক্লেরেন্স টপ্পো এই যাচাই অভিযানের কথা জানতেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাছে কেউ কোনো নথি দেখতে আসেনি, নাগরিকদেরও কেউ নিজ গরজে কাগজপত্র জমা দিতে যায়নি।
টপ্পোর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জানতে পারেন, যে বিহারে যিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, সেখানেই নাকি তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নথিপত্র দেখাচ্ছে তিনি নাকি রাজ্যের বাইরে চলে গেছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও অনুপস্থিতদের তালিকায়। অথচ, তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল একজন অন্য রাজ্যে গেছেন। টপ্পো বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। আমি ভারতে থাকার পরও যদি আমার ভোটার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হয়—তাহলে সেটা তো অনেক বড় ব্যাপার।’
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে অনেক সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, টপ্পো এই ধর্মের মানুষ। পাশাপাশি তিনি দলিত, অর্থাৎ ভারতের বর্ণ প্রথায় ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছে—এমনটা ভেবে টপ্পো চেয়েছিলেন নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিতে’। কিন্তু পরিবারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শোনার পর তাঁর সেই আশাও শেষ! টপ্পো বলেন, ‘ভোট আমাদের দেশের লাগাম ধরার অধিকার। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিহারে চলমান ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার হারিয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেওয়ার নতুন কৌশল। বিহারের প্রায় ৬৮ লাখ ভোটারের নাম, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের প্রায় ৮ শতাংশ, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে— স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। রায় এলে নতুন ভোটার তালিকা বাতিলও হতে পারে।
এসআইআর-এর প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কর্মীদের এক মাসের মধ্যে বিহারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় এবং হয়ওনি। বিহার পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসে প্রতিটি ঘরে যাওয়া, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে দেখা করা, ফরম নেওয়া এবং নথি সংযুক্ত করা—একেবারেই অসম্ভব।’
সরফরাজ জানান, ২০০৩ সালে এসআইআর সম্পূর্ণ করতে এক বছর লেগেছিল। কিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবু প্রত্যেককে এক মাসে প্রায় ৯০০ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই শর্টকাটে কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন মাঠকর্মীরা কাউকে খুঁজে পেতেন না, তখন নিজেরাই ফরম পূরণ করে সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতেন। ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন, আবার যারা বিহারে নেই তাদের অনেকের নাম তালিকায় থেকে গেছে।’
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া কেবল অসতর্কতার ফল নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। দিল্লির আইনজীবী ও এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘যদি তারা সচেতনভাবে সেই সব মানুষকে ভোটের বাইরে রাখে, যারা সরকারের পক্ষে ভোট দেয় না, তাহলে এর প্রভাব বিশাল হবে। সাধারণত নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় মাত্র ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটে।’
মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এই দারিদ্র্যের মূল কারণ—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, আর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়া। ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হয়। বিহারকে বলা হয় জাতপাতভিত্তিক অস্থির রাজনীতির এক ফুটন্ত কড়াই। একই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করছেন—একবার এই জোটে, আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে যোগ দিয়ে। বিহারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক চরখার সম্পাদক আমির আব্বাস বলেন, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো বিহারকে বলা হয় ‘ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার’।
কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করে বিহার। ফলে রাজনীতিকেরা দেশজুড়ে তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনেই বিশাল জনসভা করেন। দুই বছর পর, বিহার আবারও প্রথম রাজ্য হিসেবে জনগণনার সময় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই তথ্য পরে সর্বভারতীয় জনগণনায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমির আব্বাসের আশঙ্কা, এবার যে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করার এক নতুন পরীক্ষা। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে—যাঁরা সাধারণত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী জোটকে সমর্থন করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১ ধরনের কাগজপত্রের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু বিহারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা, সবচেয়ে পরিচিত ও প্রচলিত পরিচয়পত্র আধার কার্ড ওই তালিকায় ছিল না। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, বরং যে নথিগুলো এসআইআর প্রক্রিয়ায় চাওয়া হয়েছিল—যেমন দশম শ্রেণির ভর্তি ফর্ম বা জমির দলিল—সেগুলো রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছেই নেই।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আধার কার্ডকেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এসআইআর–এর দ্বিতীয় ধাপে, যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৭০ শতাংশ। ফলে অনেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে কিনা, সেটিই যাচাই করতে পারেননি। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। কিন্তু যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায় আরও দুই সপ্তাহ পর—১৭ আগস্ট।
এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কর্মীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটনার মুসলিম অধ্যুষিত ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনকে জানান দিচ্ছিলেন সমাজকর্মী জাহিব আজমল। তিনি তাঁদের জানাচ্ছিলেন—তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আজমল বলেন, অনেকেই তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তো জানিই না কীভাবে তালিকা দেখতে হয়। আমাদের নাম কখনো বাদ পড়েনি। তাহলে কেন বাদ যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
সরকারি এই এসআইআর তালিকায় অস্পষ্ট ঠিকানা আর ভুল তথ্যের কারণে কর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আজমল বলেন, ‘তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না। কোনো একটি এলাকায় যদি আপনার কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে সেখানে কেবল তালিকা ধরে কাউকে খুঁজে পাবেন না।’
প্রথম ধাপের নির্বাচনী নিবন্ধন যাচাই (এসআইআর) শেষে প্রায় ২২ লাখ মানুষ ভোটার নিবন্ধন করেন। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভোটার। তারা আগের তালিকায় ছিলেন না। অন্যদিকে, শুধু বিহারেই প্রায় ৬৮ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নির্দেশনাও দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ‘আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইচ্ছা করে সংখ্যালঘু ও দলিতদের মতো নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, আর এমন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যারা বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী টপ্পো মনে করেন, তাঁর পরিবারের দ্বৈত সংখ্যালঘু পরিচয়ই (দলিত ও খ্রিষ্টান) হয়তো তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণ। তিনি বলেন, ‘একে আমি তফসিলি জাতির মানুষ, আবার খ্রিষ্টানও। এ কারণে আমার নাম কেটে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে, স্থানীয় এক সাংবাদিক টপ্পোর ঘটনা প্রকাশ করার পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা এসে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের নাম পুনরায় নিবন্ধন করেন।
ভোটার যাচাই অভিযানের প্রভাব শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের এই যাচাই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মোদি সরকার এমন এক উদ্যোগ চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন মুসলমানদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারেও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া অবৈধ বিদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাবে।
তবে বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, ভবিষ্যতে তাদের একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (লেনিনবাদী) মুখপাত্র কুমার পারভেজ বলেন, ‘যদি তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আগামী দিনে তারা নাগরিক হিসেবেও থাকবেন না।’
ভোটার নিবন্ধনকে নাগরিকত্ব প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোদির বিজেপির এক পরীক্ষিত কৌশল। ২০১৯ সাল থেকে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সারা দেশে নাগরিকত্ব যাচাই অভিযান চালাবে। এখন পর্যন্ত একমাত্র যে রাজ্যে যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য দেখাতে হয়েছিল—১৯৭১ সালের আগে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় ছিল কি না।
বিহারের অনেকে এখন আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা তাদের পরিবারের নাগরিকত্বই বিপন্ন করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী কৃষ্ণ দয়াল সিংকে টপ্পোর মায়ের মতো ‘মেরে ফেলেছিল’ ভারত সরকার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার সন্তানেরা হয়তো এমন প্রশ্নের মুখে পড়বে যে, “তোমার দাদু তো ভোটার ছিলেন না, নাগরিকও ছিলেন না, তাহলে তুমি এ দেশে এলে কীভাবে?”’
দয়াল সিং জানান, তাঁর অবশ্য কপাল ভালো। কারণ, প্রথম ধাপের এসআইআর–এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ভোটার হিসেবে পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করান।
অনেকের কাছে এই ভোটার নিবন্ধন লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো। ৯২ বছর বয়সী জিতনি দেবী তাঁর মাসিক সরকারি পেনশন ১ হাজার ১০০ রুপি দিয়ে খাবার এবং ওষুধের খরচ চালাতেন। এসআইআর চলাকালে, দেবীর পরিবারের ৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। নিরক্ষর জিতনি দেবী প্রথমে এই প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দেননি। অবশ্য দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না। কারণ, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে আলমপুরে গ্রামে যাননি।
কিন্তু আগস্টে দেবী ব্যাংকে পেনশন নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, তিনি আর নিবন্ধিত নন। যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাই তাঁর পেনশনও নেই। পরে, স্থানীয় এনজিও মানথনের এক কর্মী তাঁকে জানান যে, এসআইআর–এ তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
জিতনি দেবী বলেন, ‘আমি জানি না আমি কী করব। আমি জানি না, সরকারই বা আমার সঙ্গে কী করবে। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।’
এসআইআর-এর প্রভাব কতটা, তার পূর্ণ চিত্র প্রকাশ পেতে মাস কয়েক লাগবে। যদিও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত এসআইআর-এর ফলাফল বাতিল করতে পারে। ফলে বিহার রাজ্যে বিজেপি কি শাসক জোটের নেতৃত্বে থাকবে না কি থাকবে না—তা ১৪ নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনের পরই পরিষ্কার হবে।
কিন্তু যা কিছু বিহারে ঘটছে, শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এর পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্যের ভোটার যাচাই অভিযান শেষের পথে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রাজ্য-স্তরের সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা দেশে এসআইআর-এর প্রস্তুতি নিতে। গত ২৭ অক্টোবর আরও ১২টি অতিরিক্ত রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে। এসব রাজ্য ও অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি ভোটার আছে।
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ৯ কোটি ভারতীয় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। আর এ কারণেই মূলত বিহারের ঘটনা জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত আগস্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিহারে মিছিলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর নেতারাও সেখানে অংশ নেন।
বিহারের ভোটার যাচাই অভিযান এখন নাগরিক সমাজ কর্মী ও বিরোধীদলীয় দলগুলোর চোখে ভারতের গণতান্ত্রিক বৈধতা রক্ষার নতুন সংগ্রাম। এই বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের ভাইস–প্রেসিডেন্ট পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এখন এটা একজাতীয় অভিযান। এই এসআইআর অন্য রাজ্যেও যাচ্ছে এবং তারা (বিরোধী দল) জানে যে, তাদের এমন ক্যাম্পেইন গড়ে তুলতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াকে পরাস্ত করা যায়।’
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি

বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
ভারতের বিহার রাজ্যে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের বিশাল কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। লক্ষ্য—প্রতিটি নিবন্ধিত ভোটারের পরিচয় যাচাই করা এবং রাজ্যের বাইরে থাকা ও মৃত ব্যক্তিদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। ক্লেরেন্স টপ্পো এই যাচাই অভিযানের কথা জানতেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের কাছে কেউ কোনো নথি দেখতে আসেনি, নাগরিকদেরও কেউ নিজ গরজে কাগজপত্র জমা দিতে যায়নি।
টপ্পোর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তিনি জানতে পারেন, যে বিহারে যিনি জন্মেছেন, বড় হয়েছেন, সেখানেই নাকি তাঁর নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কারণ, নথিপত্র দেখাচ্ছে তিনি নাকি রাজ্যের বাইরে চলে গেছেন। তাঁর দুই ভাইয়ের নামও অনুপস্থিতদের তালিকায়। অথচ, তিন ভাইয়ের মধ্যে কেবল একজন অন্য রাজ্যে গেছেন। টপ্পো বলেন, ‘আমি খুব অবাক হয়েছি। আমি ভারতে থাকার পরও যদি আমার ভোটার পরিচয় কেড়ে নেওয়া হয়—তাহলে সেটা তো অনেক বড় ব্যাপার।’
হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে অনেক সংখ্যালঘুর সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, টপ্পো এই ধর্মের মানুষ। পাশাপাশি তিনি দলিত, অর্থাৎ ভারতের বর্ণ প্রথায় ঐতিহাসিকভাবে সবচেয়ে অবহেলিত জনগোষ্ঠীর সদস্য। রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার সংখ্যালঘুদের অধিকার উপেক্ষা করছে—এমনটা ভেবে টপ্পো চেয়েছিলেন নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনে ‘পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিতে’। কিন্তু পরিবারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ার খবর শোনার পর তাঁর সেই আশাও শেষ! টপ্পো বলেন, ‘ভোট আমাদের দেশের লাগাম ধরার অধিকার। এটা আমাদের মৌলিক অধিকার।’
বিহারে চলমান ভোটার যাচাই প্রক্রিয়ায় লাখ লাখ মানুষ কার্যত ভোটাধিকার হারিয়েছেন। নাগরিক সমাজ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, এটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনী মাঠ ক্ষমতাসীনদের পক্ষে নেওয়ার নতুন কৌশল। বিহারের প্রায় ৬৮ লাখ ভোটারের নাম, অর্থাৎ মোট ৭ কোটি ৯০ লাখ ভোটারের প্রায় ৮ শতাংশ, এই যাচাই প্রক্রিয়ায় বাদ দেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার নাম দেওয়া হয়েছে— স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। এই প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে মামলা চলছে সুপ্রিম কোর্টে। রায় এলে নতুন ভোটার তালিকা বাতিলও হতে পারে।
এসআইআর-এর প্রথম ধাপে নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) কর্মীদের এক মাসের মধ্যে বিহারের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছ থেকে নথি সংগ্রহ করে একটি খসড়া তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয় এবং হয়ওনি। বিহার পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের (পিইউসিএল) সাধারণ সম্পাদক সরফরাজ উদ্দিন বলেন, ‘এক মাসে প্রতিটি ঘরে যাওয়া, প্রতিটি ভোটারের সঙ্গে দেখা করা, ফরম নেওয়া এবং নথি সংযুক্ত করা—একেবারেই অসম্ভব।’
সরফরাজ জানান, ২০০৩ সালে এসআইআর সম্পূর্ণ করতে এক বছর লেগেছিল। কিন্তু এবার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, তবু প্রত্যেককে এক মাসে প্রায় ৯০০ ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কাজ দেওয়া হয়। ফলে অনেকেই শর্টকাটে কাজ শেষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যখন মাঠকর্মীরা কাউকে খুঁজে পেতেন না, তখন নিজেরাই ফরম পূরণ করে সেখানে নিজের স্বাক্ষর দিয়ে জমা দিতেন। ফলে অনেক প্রকৃত ভোটার বাদ পড়েছেন, আবার যারা বিহারে নেই তাদের অনেকের নাম তালিকায় থেকে গেছে।’
পর্যবেক্ষকদের আশঙ্কা, এই প্রক্রিয়া কেবল অসতর্কতার ফল নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। দিল্লির আইনজীবী ও এই প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ‘যদি তারা সচেতনভাবে সেই সব মানুষকে ভোটের বাইরে রাখে, যারা সরকারের পক্ষে ভোট দেয় না, তাহলে এর প্রভাব বিশাল হবে। সাধারণত নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় মাত্র ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোটে।’
মাথাপিছু জিডিপির হিসাবে ভারতের সবচেয়ে দরিদ্র রাজ্য বিহার। এই দারিদ্র্যের মূল কারণ—ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দমনমূলক নীতি, দুর্বল শাসনব্যবস্থা, আর খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের আলাদা হয়ে যাওয়া। ২০০০ সালে ঝাড়খন্ড পৃথক রাজ্য হয়। বিহারকে বলা হয় জাতপাতভিত্তিক অস্থির রাজনীতির এক ফুটন্ত কড়াই। একই নেতা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজ্য শাসন করছেন—একবার এই জোটে, আরেকবার প্রতিদ্বন্দ্বী জোটে যোগ দিয়ে। বিহারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক চরখার সম্পাদক আমির আব্বাস বলেন, এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণেই হয়তো বিহারকে বলা হয় ‘ভারতীয় রাজনীতির পরীক্ষাগার’।
কোভিড মহামারি ছড়িয়ে পড়লেও ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রথম রাজ্য হিসেবে বিধানসভা নির্বাচন আয়োজন করে বিহার। ফলে রাজনীতিকেরা দেশজুড়ে তীব্র সংক্রমণের মধ্যেও মুখে মাস্ক না পরে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে না মেনেই বিশাল জনসভা করেন। দুই বছর পর, বিহার আবারও প্রথম রাজ্য হিসেবে জনগণনার সময় জাতিগত তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এই তথ্য পরে সর্বভারতীয় জনগণনায়ও অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আমির আব্বাসের আশঙ্কা, এবার যে এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে, সেটিও রাজনৈতিকভাবে ভোটারদের বঞ্চিত করার এক নতুন পরীক্ষা। সমালোচকেরা বলছেন, এই প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ করে মুসলিম, খ্রিষ্টান ও নিম্নবর্ণের মানুষদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করতে—যাঁরা সাধারণত নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরোধী জোটকে সমর্থন করেন।
ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রথমে জানিয়েছিল, নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১ ধরনের কাগজপত্রের যেকোনো একটি গ্রহণযোগ্য হবে। কিন্তু বিহারের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের কাছে থাকা, সবচেয়ে পরিচিত ও প্রচলিত পরিচয়পত্র আধার কার্ড ওই তালিকায় ছিল না। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, বরং যে নথিগুলো এসআইআর প্রক্রিয়ায় চাওয়া হয়েছিল—যেমন দশম শ্রেণির ভর্তি ফর্ম বা জমির দলিল—সেগুলো রাজ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছেই নেই।
গত ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, আধার কার্ডকেও নাগরিকত্ব যাচাইয়ের বৈধ প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। এসআইআর–এর দ্বিতীয় ধাপে, যাঁরা ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন, তাঁরা আপত্তি জানিয়ে পুনরায় ভোটার হিসেবে নিবন্ধন করতে পারতেন। কিন্তু রাজ্যে সাক্ষরতার হার মাত্র ৭০ শতাংশ। ফলে অনেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে কিনা, সেটিই যাচাই করতে পারেননি। খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। কিন্তু যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামের তালিকা প্রকাশ পায় আরও দুই সপ্তাহ পর—১৭ আগস্ট।
এই খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন বিরোধী রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের কর্মীরা। কয়েক সপ্তাহ ধরে পাটনার মুসলিম অধ্যুষিত ফুলওয়ারি শরিফ এলাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরে লোকজনকে জানান দিচ্ছিলেন সমাজকর্মী জাহিব আজমল। তিনি তাঁদের জানাচ্ছিলেন—তাঁদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ গেছে। আজমল বলেন, অনেকেই তাঁকে বলেছেন, ‘আমরা তো জানিই না কীভাবে তালিকা দেখতে হয়। আমাদের নাম কখনো বাদ পড়েনি। তাহলে কেন বাদ যাবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রবল ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।’
সরকারি এই এসআইআর তালিকায় অস্পষ্ট ঠিকানা আর ভুল তথ্যের কারণে কর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। আজমল বলেন, ‘তথ্য এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যে, যাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের আমরা খুঁজেই পাচ্ছি না। কোনো একটি এলাকায় যদি আপনার কেউ পরিচিত না থাকে তাহলে সেখানে কেবল তালিকা ধরে কাউকে খুঁজে পাবেন না।’
প্রথম ধাপের নির্বাচনী নিবন্ধন যাচাই (এসআইআর) শেষে প্রায় ২২ লাখ মানুষ ভোটার নিবন্ধন করেন। তবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, তাদের বেশির ভাগই নতুন ভোটার। তারা আগের তালিকায় ছিলেন না। অন্যদিকে, শুধু বিহারেই প্রায় ৬৮ লাখ মানুষের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
ভারতের নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক নির্দেশনাও দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন প্রশান্ত ভূষণ। তাঁর অভিযোগ, কমিশন ‘আসলে বিজেপির এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা যদি ইচ্ছা করে সংখ্যালঘু ও দলিতদের মতো নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তালিকা থেকে বাদ দিতে পারে, আর এমন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে—যারা বিজেপিকে ভোট দেয়, তাহলে তারা অবশ্যই সেটা করবে।’
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী টপ্পো মনে করেন, তাঁর পরিবারের দ্বৈত সংখ্যালঘু পরিচয়ই (দলিত ও খ্রিষ্টান) হয়তো তালিকা থেকে বাদ যাওয়ার কারণ। তিনি বলেন, ‘একে আমি তফসিলি জাতির মানুষ, আবার খ্রিষ্টানও। এ কারণে আমার নাম কেটে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে।’ অবশ্য পরে, স্থানীয় এক সাংবাদিক টপ্পোর ঘটনা প্রকাশ করার পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা এসে তাঁর পরিবারের তিন সদস্যের নাম পুনরায় নিবন্ধন করেন।
ভোটার যাচাই অভিযানের প্রভাব শুধু ভোটাধিকারেই সীমাবদ্ধ নয়। বিহারের এই যাচাই প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মোদি সরকার এমন এক উদ্যোগ চালাচ্ছে, যার মাধ্যমে বৈধ কাগজপত্রবিহীন মুসলমানদের জোর করে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। বিহারেও নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া অবৈধ বিদেশিদের ভোট দেওয়া ঠেকাবে।
তবে বিরোধী দল ও অধিকারকর্মীরা আশঙ্কা করছেন, যাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, ভবিষ্যতে তাদের একইভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে। ভারতের মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির (লেনিনবাদী) মুখপাত্র কুমার পারভেজ বলেন, ‘যদি তাদের নাম ভোটার তালিকায় না থাকে, তাহলে আগামী দিনে তারা নাগরিক হিসেবেও থাকবেন না।’
ভোটার নিবন্ধনকে নাগরিকত্ব প্রমাণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা মোদির বিজেপির এক পরীক্ষিত কৌশল। ২০১৯ সাল থেকে দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে, সারা দেশে নাগরিকত্ব যাচাই অভিযান চালাবে। এখন পর্যন্ত একমাত্র যে রাজ্যে যাচাই সম্পন্ন হয়েছে, সেখানে নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য দেখাতে হয়েছিল—১৯৭১ সালের আগে পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ভোটার তালিকায় ছিল কি না।
বিহারের অনেকে এখন আশঙ্কা করছেন, ২০২৫ সালের ভোটার তালিকা তাদের পরিবারের নাগরিকত্বই বিপন্ন করতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত ডাক কর্মী কৃষ্ণ দয়াল সিংকে টপ্পোর মায়ের মতো ‘মেরে ফেলেছিল’ ভারত সরকার। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আমার সন্তানেরা হয়তো এমন প্রশ্নের মুখে পড়বে যে, “তোমার দাদু তো ভোটার ছিলেন না, নাগরিকও ছিলেন না, তাহলে তুমি এ দেশে এলে কীভাবে?”’
দয়াল সিং জানান, তাঁর অবশ্য কপাল ভালো। কারণ, প্রথম ধাপের এসআইআর–এ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর, এক নির্বাচনী কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে এসে তাঁকে ভোটার হিসেবে পুনর্নিবন্ধনের আবেদন করান।
অনেকের কাছে এই ভোটার নিবন্ধন লাইফলাইন বা জীবনরেখার মতো। ৯২ বছর বয়সী জিতনি দেবী তাঁর মাসিক সরকারি পেনশন ১ হাজার ১০০ রুপি দিয়ে খাবার এবং ওষুধের খরচ চালাতেন। এসআইআর চলাকালে, দেবীর পরিবারের ৭ জনের মধ্যে মাত্র দুজন তাদের গণনা ফর্ম জমা দিয়েছিলেন। নিরক্ষর জিতনি দেবী প্রথমে এই প্রক্রিয়ার দিকে মনোযোগ দেননি। অবশ্য দেওয়ার কোনো কারণও ছিল না। কারণ, নির্বাচনী কর্মকর্তারা তাঁর বাড়িতে আলমপুরে গ্রামে যাননি।
কিন্তু আগস্টে দেবী ব্যাংকে পেনশন নিতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখেন, তিনি আর নিবন্ধিত নন। যেহেতু নিবন্ধন নেই, তাই তাঁর পেনশনও নেই। পরে, স্থানীয় এনজিও মানথনের এক কর্মী তাঁকে জানান যে, এসআইআর–এ তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে।
জিতনি দেবী বলেন, ‘আমি জানি না আমি কী করব। আমি জানি না, সরকারই বা আমার সঙ্গে কী করবে। আমি জানি না আমি কীভাবে বাঁচব।’
এসআইআর-এর প্রভাব কতটা, তার পূর্ণ চিত্র প্রকাশ পেতে মাস কয়েক লাগবে। যদিও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট অক্টোবর পর্যন্ত প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে শুনানি চালিয়ে গেছে। সর্বোচ্চ আদালত এসআইআর-এর ফলাফল বাতিল করতে পারে। ফলে বিহার রাজ্যে বিজেপি কি শাসক জোটের নেতৃত্বে থাকবে না কি থাকবে না—তা ১৪ নভেম্বরের রাজ্য নির্বাচনের পরই পরিষ্কার হবে।
কিন্তু যা কিছু বিহারে ঘটছে, শিগগিরই দেশের অন্যান্য জায়গায়ও এর পুনরাবৃত্তি হবে। রাজ্যের ভোটার যাচাই অভিযান শেষের পথে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা রাজ্য-স্তরের সহকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ সারা দেশে এসআইআর-এর প্রস্তুতি নিতে। গত ২৭ অক্টোবর আরও ১২টি অতিরিক্ত রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে। এসব রাজ্য ও অঞ্চলে প্রায় ৫০ কোটি ভোটার আছে।
১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের নাগরিকত্ব যাচাই করার বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়ে সমালোচকেরা বলছেন, এর ফলে প্রায় ৯ কোটি ভারতীয় ভোটাধিকার হারাতে পারেন। আর এ কারণেই মূলত বিহারের ঘটনা জাতীয় বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠেছে। গত আগস্টে বিরোধীদলীয় সাংসদ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস দলের নেতা রাহুল গান্ধী এসআইআর-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বিহারে মিছিলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর নেতারাও সেখানে অংশ নেন।
বিহারের ভোটার যাচাই অভিযান এখন নাগরিক সমাজ কর্মী ও বিরোধীদলীয় দলগুলোর চোখে ভারতের গণতান্ত্রিক বৈধতা রক্ষার নতুন সংগ্রাম। এই বিষয়ে মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের ভাইস–প্রেসিডেন্ট পুষ্পেন্দ্র বলেন, ‘এখন এটা একজাতীয় অভিযান। এই এসআইআর অন্য রাজ্যেও যাচ্ছে এবং তারা (বিরোধী দল) জানে যে, তাদের এমন ক্যাম্পেইন গড়ে তুলতে হবে যাতে এই প্রক্রিয়াকে পরাস্ত করা যায়।’
তথ্যসূত্র: ফরেন পলিসি

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ ও ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
০৭ মে ২০২৫
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
১ দিন আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা
২ দিন আগে
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র এই পরিবারের সদস্য। এই পরিবারের প্রভাব ভারতের রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
তাদের এই উত্তরাধিকার শুধু ইতিহাসে নয়, রাজনীতির মানসেও এক ধারণা গভীরভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব জন্মগত অধিকারও হতে পারে। এই চিন্তাই ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের রাজনীতির প্রতিটি দলে, প্রতিটি প্রদেশে, আর প্রতিটি স্তরে।
কেবল নেহরু–গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধেই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তোলা হলেও, রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা বংশানুক্রমিক রাজনীতি আসলে ভারতের প্রায় সব দলেই দেখা যায়। জনতা দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বিজয়নন্দ (বিজু) পট্টনায়কের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নবীন পট্টনায়ক লোকসভায় বাবার খালি আসনে নির্বাচিত হন। পরে নবীন বাবার নাম অনুসারে ‘বিজু জনতা দল’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিজুর পথ অনুসরণ করে নবীন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী হন এবং দুই দশকেরও বেশি সময় রাজ্য পরিচালনা করেন।
মহারাষ্ট্রের দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে মৃত্যুর আগে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন তাঁর ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে। উদ্ধবের ছেলে আদিত্য ঠাকরেও এখন রাজনীতির মঞ্চে সক্রিয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অপেক্ষায়। একই ধারা দেখা যায় সমাজবাদী পার্টিতেও। দলের প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁর ছেলে অখিলেশ যাদবও সেই পদে আসেন। এখন তিনি দলের সভাপতি ও এমপি। বিহারের লোক জনশক্তি পার্টিতেও একই চিত্র। প্রয়াত নেতা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে চিরাগ পাসওয়ান দলের নেতৃত্বে এসেছেন।
ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাইরেও এই বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রভাব স্পষ্ট। জম্মু–কাশ্মীরে তিন প্রজন্ম ধরে আবদুল্লাহ পরিবার রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর বিরোধী শিবিরে নেতৃত্বে আছে মুফতি পরিবারের দুই প্রজন্ম। পাঞ্জাবে দীর্ঘদিন শিরোমণি আকালি দল পরিচালনা করেছেন প্রকাশ সিং বাদল। এখন তাঁর ছেলে সুখবীর বাদল দলের প্রধান। তেলেঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ছেলে ও মেয়ে—দুজনেই এখন উত্তরাধিকারের লড়াইয়ে নেমেছেন। তামিলনাড়ুতে প্রয়াত এম করুণানিধির পরিবার এখনো ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে) দলের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর ছেলে এমকে স্ট্যালিন এখন মুখ্যমন্ত্রী, আর তাঁর নাতিকে ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এটি শুধু কিছু বিখ্যাত পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের শাসনব্যবস্থার গাঁথুনিতেই এই পারিবারিক রাজনীতি বীজ গভীরভাবে বোনা। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৪৯টি পরিবার থেকে একাধিক সদস্য রাজ্যের আইনসভায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ১১ জন মন্ত্রী ও ৯ জন মুখ্যমন্ত্রীরও পারিবারিক রাজনৈতিক সংযোগ আছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪৫ বছরের নিচে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কেউ না কেউ রাজনীতিতে ছিলেন। তরুণ সাংসদদের প্রায় সবাই কোনো আত্মীয়—সাধারণত বাবা বা মা—থেকে আসন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সব দলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নারী সাংসদদের ৭০ শতাংশ বংশানুক্রমিক রাজনীতির ফল। এমনকি যেসব নারী রাজনীতিকের সরাসরি উত্তরসূরি নেই, যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুমারী মায়াবতী, তাঁরাও তাঁদের ভাতিজাদের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তুলছেন।
ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, এই বংশানুক্রমিক রাজনীতি গোটা উপমহাদেশেই দেখা যায়। পাকিস্তানে ভুট্টো ও শরিফ পরিবার, বাংলাদেশে শেখ ও জিয়া পরিবার, শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকে ও রাজাপক্ষে পরিবার। তবে ভারতের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে এই প্রবণতা কিছুটা বেমানান বলেই মনে হয়। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কেন ভারত এত গভীরভাবে এই পারিবারিক রাজনীতি মেনে নিয়েছে?
এর একটি কারণ হতে পারে—পরিবার একটি কার্যকর রাজনৈতিক ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে কাজ করে। পরিচিত নামধারী প্রার্থীদের ভোটারদের মনোযোগ পেতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। যদি ভোটাররা কোনো প্রার্থীর বাবা, খালা বা ভাইকে একসময় গ্রহণ করে থাকেন, তবে তাঁরা সম্ভবত একই পরিবারের নতুন প্রার্থীকেও সহজেই মেনে নেন। এভাবে তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য আলাদা করে কিছু করতে হয় না। ভারতের অতীত প্রেক্ষাপটে, যখন সাক্ষরতার হার ও গণমাধ্যমের প্রভাব কম ছিল, তখন এই বিষয়টি আরও বেশি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল।
কিন্তু সাক্ষরতার হার যখন ৮১ শতাংশের কাছাকাছি এবং মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, তখন বোঝা যায় অন্য আরও কিছু কারণ আছে এর পেছনে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়তো—দলীয় রাজনীতির ভেতরকার চর্চা ও গতিপ্রকৃতি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও প্রায় অস্বচ্ছ। প্রায় সব দলেই সিদ্ধান্ত নেয় একদল ক্ষুদ্র প্রভাবশালী গোষ্ঠী, কখনো বা একক কোনো নেতা, যাদের আবার পরিবর্তন আনাতে আগ্রহ কম। ফলে, যোগ্যতার চেয়ে পারিবারিক সম্পর্কই সাধারণত বেশি মূল্য পায়।
এ অবস্থায় প্রার্থী হতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়, যা নতুনদের জন্য বাধা। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারগুলোর হাতে থাকে বিপুল অর্থনৈতিক পুঁজি, যা তারা বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকে জমিয়েছে। তাদের আছে তৈরি নির্বাচনী কাঠামো—দাতা, কর্মী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক। এতে করে নতুন রাজনীতিকদের তুলনায় তাদের সুবিধা অনেক বেশি।
ভারতের এই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পেছনে সাংস্কৃতিক কারণও আছে। আধুনিকায়নের অগ্রগতি সত্ত্বেও সমাজে এখনো জমিদারি মানসিকতা টিকে আছে। আগের দিনে যেভাবে স্থানীয় জমিদার বা রাজাদের প্রতি আনুগত্য দেখানো হতো, এখন সেই শ্রদ্ধা দেওয়া হয় রাজনৈতিক নেতাদের। এতে মনে হয় রাজনৈতিক অভিজাতরা যেন অন্য শ্রেণির মানুষ, যাদের পরিবারই ক্ষমতার উপযুক্ত। এই অহংবোধ এতটাই গভীর যে দুর্বল কর্মক্ষমতাও তাদের নেতৃত্ব থেকে সরাতে পারে না। বারবার নির্বাচনে হারলেও তারা দলীয় নেতৃত্ব ধরে রাখে।
এ ধরনের রাজনীতি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ধারিত হয় বংশপরম্পরায়, যোগ্যতা, নিষ্ঠা বা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বদলে, তখন শাসনব্যবস্থার মান নেমে যায়। সীমিত প্রতিভার ভান্ডার থেকে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া কখনোই সুবিধাজনক নয়। আরও খারাপ হয় যখন প্রার্থীর একমাত্র যোগ্যতা হয় তার পদবি। এমন নেতারা সাধারণ মানুষের বাস্তব চ্যালেঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। ফলে জনগণের প্রয়োজন বুঝে কাজ করার সক্ষমতাও কম থাকে। তবুও তাদের ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না।
এখন সময় এসেছে ভারতকে ‘রাজবংশের’ রাজনীতি ছাড়িয়ে যোগ্যতাভিত্তিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার। এর জন্য প্রয়োজন গভীর সংস্কার—আইন করে মেয়াদসীমা নির্ধারণ, দলীয় পর্যায়ে প্রকৃত নির্বাচনের ব্যবস্থা, এবং ভোটারদের সচেতন করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা বাছাইয়ের প্রেরণা জাগানো। যত দিন ভারতীয় রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য—‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য’—পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র এই পরিবারের সদস্য। এই পরিবারের প্রভাব ভারতের রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
তাদের এই উত্তরাধিকার শুধু ইতিহাসে নয়, রাজনীতির মানসেও এক ধারণা গভীরভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব জন্মগত অধিকারও হতে পারে। এই চিন্তাই ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের রাজনীতির প্রতিটি দলে, প্রতিটি প্রদেশে, আর প্রতিটি স্তরে।
কেবল নেহরু–গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধেই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তোলা হলেও, রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা বংশানুক্রমিক রাজনীতি আসলে ভারতের প্রায় সব দলেই দেখা যায়। জনতা দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বিজয়নন্দ (বিজু) পট্টনায়কের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নবীন পট্টনায়ক লোকসভায় বাবার খালি আসনে নির্বাচিত হন। পরে নবীন বাবার নাম অনুসারে ‘বিজু জনতা দল’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিজুর পথ অনুসরণ করে নবীন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী হন এবং দুই দশকেরও বেশি সময় রাজ্য পরিচালনা করেন।
মহারাষ্ট্রের দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে মৃত্যুর আগে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন তাঁর ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে। উদ্ধবের ছেলে আদিত্য ঠাকরেও এখন রাজনীতির মঞ্চে সক্রিয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অপেক্ষায়। একই ধারা দেখা যায় সমাজবাদী পার্টিতেও। দলের প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁর ছেলে অখিলেশ যাদবও সেই পদে আসেন। এখন তিনি দলের সভাপতি ও এমপি। বিহারের লোক জনশক্তি পার্টিতেও একই চিত্র। প্রয়াত নেতা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে চিরাগ পাসওয়ান দলের নেতৃত্বে এসেছেন।
ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাইরেও এই বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রভাব স্পষ্ট। জম্মু–কাশ্মীরে তিন প্রজন্ম ধরে আবদুল্লাহ পরিবার রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর বিরোধী শিবিরে নেতৃত্বে আছে মুফতি পরিবারের দুই প্রজন্ম। পাঞ্জাবে দীর্ঘদিন শিরোমণি আকালি দল পরিচালনা করেছেন প্রকাশ সিং বাদল। এখন তাঁর ছেলে সুখবীর বাদল দলের প্রধান। তেলেঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ছেলে ও মেয়ে—দুজনেই এখন উত্তরাধিকারের লড়াইয়ে নেমেছেন। তামিলনাড়ুতে প্রয়াত এম করুণানিধির পরিবার এখনো ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে) দলের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর ছেলে এমকে স্ট্যালিন এখন মুখ্যমন্ত্রী, আর তাঁর নাতিকে ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এটি শুধু কিছু বিখ্যাত পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের শাসনব্যবস্থার গাঁথুনিতেই এই পারিবারিক রাজনীতি বীজ গভীরভাবে বোনা। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৪৯টি পরিবার থেকে একাধিক সদস্য রাজ্যের আইনসভায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ১১ জন মন্ত্রী ও ৯ জন মুখ্যমন্ত্রীরও পারিবারিক রাজনৈতিক সংযোগ আছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪৫ বছরের নিচে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কেউ না কেউ রাজনীতিতে ছিলেন। তরুণ সাংসদদের প্রায় সবাই কোনো আত্মীয়—সাধারণত বাবা বা মা—থেকে আসন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সব দলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নারী সাংসদদের ৭০ শতাংশ বংশানুক্রমিক রাজনীতির ফল। এমনকি যেসব নারী রাজনীতিকের সরাসরি উত্তরসূরি নেই, যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুমারী মায়াবতী, তাঁরাও তাঁদের ভাতিজাদের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তুলছেন।
ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, এই বংশানুক্রমিক রাজনীতি গোটা উপমহাদেশেই দেখা যায়। পাকিস্তানে ভুট্টো ও শরিফ পরিবার, বাংলাদেশে শেখ ও জিয়া পরিবার, শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকে ও রাজাপক্ষে পরিবার। তবে ভারতের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে এই প্রবণতা কিছুটা বেমানান বলেই মনে হয়। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কেন ভারত এত গভীরভাবে এই পারিবারিক রাজনীতি মেনে নিয়েছে?
এর একটি কারণ হতে পারে—পরিবার একটি কার্যকর রাজনৈতিক ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে কাজ করে। পরিচিত নামধারী প্রার্থীদের ভোটারদের মনোযোগ পেতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। যদি ভোটাররা কোনো প্রার্থীর বাবা, খালা বা ভাইকে একসময় গ্রহণ করে থাকেন, তবে তাঁরা সম্ভবত একই পরিবারের নতুন প্রার্থীকেও সহজেই মেনে নেন। এভাবে তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য আলাদা করে কিছু করতে হয় না। ভারতের অতীত প্রেক্ষাপটে, যখন সাক্ষরতার হার ও গণমাধ্যমের প্রভাব কম ছিল, তখন এই বিষয়টি আরও বেশি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল।
কিন্তু সাক্ষরতার হার যখন ৮১ শতাংশের কাছাকাছি এবং মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, তখন বোঝা যায় অন্য আরও কিছু কারণ আছে এর পেছনে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়তো—দলীয় রাজনীতির ভেতরকার চর্চা ও গতিপ্রকৃতি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও প্রায় অস্বচ্ছ। প্রায় সব দলেই সিদ্ধান্ত নেয় একদল ক্ষুদ্র প্রভাবশালী গোষ্ঠী, কখনো বা একক কোনো নেতা, যাদের আবার পরিবর্তন আনাতে আগ্রহ কম। ফলে, যোগ্যতার চেয়ে পারিবারিক সম্পর্কই সাধারণত বেশি মূল্য পায়।
এ অবস্থায় প্রার্থী হতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়, যা নতুনদের জন্য বাধা। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারগুলোর হাতে থাকে বিপুল অর্থনৈতিক পুঁজি, যা তারা বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকে জমিয়েছে। তাদের আছে তৈরি নির্বাচনী কাঠামো—দাতা, কর্মী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক। এতে করে নতুন রাজনীতিকদের তুলনায় তাদের সুবিধা অনেক বেশি।
ভারতের এই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পেছনে সাংস্কৃতিক কারণও আছে। আধুনিকায়নের অগ্রগতি সত্ত্বেও সমাজে এখনো জমিদারি মানসিকতা টিকে আছে। আগের দিনে যেভাবে স্থানীয় জমিদার বা রাজাদের প্রতি আনুগত্য দেখানো হতো, এখন সেই শ্রদ্ধা দেওয়া হয় রাজনৈতিক নেতাদের। এতে মনে হয় রাজনৈতিক অভিজাতরা যেন অন্য শ্রেণির মানুষ, যাদের পরিবারই ক্ষমতার উপযুক্ত। এই অহংবোধ এতটাই গভীর যে দুর্বল কর্মক্ষমতাও তাদের নেতৃত্ব থেকে সরাতে পারে না। বারবার নির্বাচনে হারলেও তারা দলীয় নেতৃত্ব ধরে রাখে।
এ ধরনের রাজনীতি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ধারিত হয় বংশপরম্পরায়, যোগ্যতা, নিষ্ঠা বা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বদলে, তখন শাসনব্যবস্থার মান নেমে যায়। সীমিত প্রতিভার ভান্ডার থেকে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া কখনোই সুবিধাজনক নয়। আরও খারাপ হয় যখন প্রার্থীর একমাত্র যোগ্যতা হয় তার পদবি। এমন নেতারা সাধারণ মানুষের বাস্তব চ্যালেঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। ফলে জনগণের প্রয়োজন বুঝে কাজ করার সক্ষমতাও কম থাকে। তবুও তাদের ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না।
এখন সময় এসেছে ভারতকে ‘রাজবংশের’ রাজনীতি ছাড়িয়ে যোগ্যতাভিত্তিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার। এর জন্য প্রয়োজন গভীর সংস্কার—আইন করে মেয়াদসীমা নির্ধারণ, দলীয় পর্যায়ে প্রকৃত নির্বাচনের ব্যবস্থা, এবং ভোটারদের সচেতন করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা বাছাইয়ের প্রেরণা জাগানো। যত দিন ভারতীয় রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য—‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য’—পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ ও ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
০৭ মে ২০২৫
বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
১১ ঘণ্টা আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা
২ দিন আগে
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো সুদানি আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) সমর্থন দিয়েছে।
আরব আমিরাত এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রিম কেতায়েত বলেছেন, এটি ‘নোংরা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা।’ তাঁর দাবি, সুদানের সেনাবাহিনীর বর্বরতা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই দুই বছর ধরে গৃহযুদ্ধে লড়াইরত আরএসএফ।
বিষয়টি সত্যি যে, সুদানি সেনাবাহিনীও যুদ্ধাপরাধ করেছে। কিন্তু আরএসএফ–এর প্রতি আমিরাতের সমর্থন নিয়ে কারও তেমন সন্দেহ নেই। তবে তারপরও আইনি জটিলতার কারণে মামলাটির সামনে এগোনোর সম্ভাবনা কম। তবে এই ঘটনা একটি প্রবণতা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আমিরাত এমন সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে, যারা হয়—রাষ্ট্র দখল করতে চায়, নয়তো সেটিকে ভাঙতে চায়।
আধুনিক আরব বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু এখন সৌদি আরব ও আমিরাত। দুই দেশই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ও প্রভাবশালী কূটনৈতিক শক্তি। উভয়ই নিজেদের বহু মেরু বিশ্বের স্বাধীন শক্তি হিসেবে দেখে। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের পথ আলাদা। সৌদি আরব স্থিতিশীলতাকে মূল স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে এবং (যদিও সব সময় নয়) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার চেষ্টা করে।
অন্যদিকে, সাতটি আমিরাত নিয়ে গঠিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (যার মধ্যে দুবাই আছে এবং সবচেয়ে ধনী আবুধাবি) নীতিনির্ধারণ ভিন্ন ধাঁচের। লিবিয়ায় তারা বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। হাফতারই লিবিয়ায় জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিলেন। ইয়েমেনে আমিরাত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে সমর্থন দিচ্ছে। সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন দুই অঞ্চল—পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে দেশটি।
এসব নীতির অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। সুদানে আরএসএফ–কে সমর্থন দিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তো বটেই, চীন ও শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ করেছে। ফলে বিষয়টি সামান্য কিছু নয়।
আঞ্চলিক ইস্যুতে নিজেদের নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমিরাতের কর্মকর্তারা প্রায়ই বলেন, ‘এই নীতি আমাদের নয়।’ আর এর ধারাবাহিকতায় দেশটি আরএসএফ–কে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে জাতিসংঘের তদন্ত ও স্যাটেলাইট চিত্র প্রমাণ করেছে, তারা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও দেশটি আরএসএফকে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল।
আমিরাতের এক কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন, হাফতারের প্রতি তাদের সমর্থন ছিল ‘মিত্রদের পূর্ণ সম্মতি সাপেক্ষেই।’ যদিও লিবিয়ার বেশির ভাগ মিত্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, হাফতারের বিরোধী ছিল।
আবুধাবিতে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা মনে করেন, এই নীতির পেছনে আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেউ কেউ বলেন, সুদানের স্বর্ণ খনির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেতেই হয়তো আমিরাত আগ্রহী। কিন্তু এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয়। কারণ সুদানের বেশির ভাগ স্বর্ণ এরই মধ্যে আমিরাতে রপ্তানি হচ্ছে। আবার অনেকে মনে করেন, খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগে অগ্রগতি আনতে আমিরাত সুদানে কৃষিজমি ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশাধিকার চায়; কারণ দেশটির ৯০ শতাংশ খাদ্য আমদানিনির্ভর।
তবে কেবল বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা ভুল হবে। আমিরাতের প্রধান প্রেরণা আদর্শিক। প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর তীব্র বিরোধী। তিনি এবং তাঁর পরিবার চান আরব বিশ্বে কাতার ও তুরস্কের প্রভাব কমাতে। কারণ, এই দুই দেশই মুসলিম বিশ্বে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর বড় সমর্থক। একই সঙ্গে আরব আমিরাত সৌদি আরবের প্রভাবের বাইরে নিজেদের আলাদা প্রভাব বলয় গড়ে তুলতে চায়।
ইয়েমেনে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই আমিরাত ২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়। সে সময় রিয়াদ হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। হুতি ইরান-সমর্থিত শিয়া গোষ্ঠী। রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বড় একটি অংশ তাদের দখলে। সৌদি ও আমিরাত কেউই চায়নি—ইরানের মদদপুষ্ট কোনো গোষ্ঠী আরব উপদ্বীপে শক্ত ঘাঁটি পাক। তবে আমিরাত চেয়েছিল নিজেদের অনুগত মিত্র তৈরি করতে। কারণ, তাদের কাছে সৌদি আরবও বিশ্বাসযোগ্য মিত্র নয়। কারণ, সৌদিরা ইসলামি রাজনৈতিক দল ইসলাহের বেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র, যা আবার মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা।
ইয়েমেন ১৯৯০ সালের আগে পর্যন্ত কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ছিল। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে আমিরাতের নীতি বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই জোট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সুফলও বয়ে আনতে পারে। আবুধাবিভিত্তিক রাষ্ট্রীয় শিপিং জায়ান্ট এডি পোর্টস আশা করছে, তারা দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেন বন্দরের পরিচালনার অধিকার পাবে। আমিরাতের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির স্বার্থে তারা আঞ্চলিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, তবে এটাই দেশটির মূল উদ্দেশ্য নয়।
২০১৯ সালে ওমর আল-বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সুদানে কয়েক দশকের ইসলামপন্থী শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু সেনাবাহিনীতে এখনো ইসলামপন্থী কর্মকর্তাদের প্রভাব রয়েছে। এ কারণেই শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দ্রুত সমর্থন দেন আরএসএফ–কে। আরেকটি কারণ ছিল, মিলিশিয়া নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত—ইয়েমেনে যুদ্ধের সময় আরব আমিরাতকে সহায়তা দিতে হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিলেন। শেখ মুহাম্মদ হয়তো সেই সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চেয়েছেন। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি এই লোকদের প্রতি একধরনের আনুগত্য অনুভব করেন।’
আমিরাতের দাবি—তারা শুধু বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে এগোচ্ছে। যুক্তিটা কিছুটা গ্রহণযোগ্যও। ইয়েমেনে তাদের মিত্ররা সৌদি সমর্থিত বাহিনীর চেয়ে দক্ষ যোদ্ধা প্রমাণিত হয়েছিল। লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারও যতটা বৈধ বলে শোনা যায়, বাস্তবে তা নয়—সেখানে প্রভাবশালী হলো মিলিশিয়ারা।
তবু এসব শক্তির প্রতি সমর্থন খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। ২০১৮ সালে আমিরাত দামেস্কে দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং অন্যান্য দেশকেও বাশার আল-আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানায়। শেখ মুহাম্মদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেন, ‘দশ বছরের হতাশা থেকেই এই যোগাযোগ শুরু হয়েছিল।’ তাঁর মতে, সিরিয়ার একনায়ককে একঘরে করে রাখা কাজে আসেনি; তাই তাঁকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা উচিত ছিল। সেই চেষ্টা করে অবশ্য কোনো ফল পায়নি আমিরাত।
আসাদ গত ডিসেম্বরে মস্কো পালিয়ে যান। সিরিয়ার ইসলামপন্থী নতুন সরকারের প্রতি আমিরাতের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো সন্দেহ প্রবণ। এমনকি অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের তুলনায়ও অনেক বেশি। তবে এখনো নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আমিরাত।
এর আগে, হাফতার ত্রিপোলি দখলের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন। আরএসএফও গত মাসে সুদানের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়েছে। বলা যায়, দুই ক্ষেত্রেই আমিরাতের ভূমিকা উল্টো ফল দিয়েছে। এতে তুরস্ক সুদানি সেনাবাহিনী ও ত্রিপোলির সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার আরও বেশি সুযোগ পেয়েছে। ওই দুই পক্ষই এখন তুর্কি ড্রোনের ওপর নির্ভর করছে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে।
এসব নীতি আমিরাতের সুনামেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত মাসে ওয়াশিংটনে কয়েক দফা বৈঠকে তিন কংগ্রেস সদস্যের সহযোগী আমিরাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন। যদিও তা আপাতত কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রচলিত আছে যে, আরএসএফ-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করা শুধু অপরাধ নয়, বরং এক ভয়াবহ ভুল।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো সুদানি আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) সমর্থন দিয়েছে।
আরব আমিরাত এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রিম কেতায়েত বলেছেন, এটি ‘নোংরা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা।’ তাঁর দাবি, সুদানের সেনাবাহিনীর বর্বরতা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই দুই বছর ধরে গৃহযুদ্ধে লড়াইরত আরএসএফ।
বিষয়টি সত্যি যে, সুদানি সেনাবাহিনীও যুদ্ধাপরাধ করেছে। কিন্তু আরএসএফ–এর প্রতি আমিরাতের সমর্থন নিয়ে কারও তেমন সন্দেহ নেই। তবে তারপরও আইনি জটিলতার কারণে মামলাটির সামনে এগোনোর সম্ভাবনা কম। তবে এই ঘটনা একটি প্রবণতা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আমিরাত এমন সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে, যারা হয়—রাষ্ট্র দখল করতে চায়, নয়তো সেটিকে ভাঙতে চায়।
আধুনিক আরব বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু এখন সৌদি আরব ও আমিরাত। দুই দেশই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ও প্রভাবশালী কূটনৈতিক শক্তি। উভয়ই নিজেদের বহু মেরু বিশ্বের স্বাধীন শক্তি হিসেবে দেখে। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের পথ আলাদা। সৌদি আরব স্থিতিশীলতাকে মূল স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে এবং (যদিও সব সময় নয়) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার চেষ্টা করে।
অন্যদিকে, সাতটি আমিরাত নিয়ে গঠিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (যার মধ্যে দুবাই আছে এবং সবচেয়ে ধনী আবুধাবি) নীতিনির্ধারণ ভিন্ন ধাঁচের। লিবিয়ায় তারা বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। হাফতারই লিবিয়ায় জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিলেন। ইয়েমেনে আমিরাত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে সমর্থন দিচ্ছে। সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন দুই অঞ্চল—পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে দেশটি।
এসব নীতির অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। সুদানে আরএসএফ–কে সমর্থন দিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তো বটেই, চীন ও শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ করেছে। ফলে বিষয়টি সামান্য কিছু নয়।
আঞ্চলিক ইস্যুতে নিজেদের নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমিরাতের কর্মকর্তারা প্রায়ই বলেন, ‘এই নীতি আমাদের নয়।’ আর এর ধারাবাহিকতায় দেশটি আরএসএফ–কে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে জাতিসংঘের তদন্ত ও স্যাটেলাইট চিত্র প্রমাণ করেছে, তারা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও দেশটি আরএসএফকে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল।
আমিরাতের এক কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন, হাফতারের প্রতি তাদের সমর্থন ছিল ‘মিত্রদের পূর্ণ সম্মতি সাপেক্ষেই।’ যদিও লিবিয়ার বেশির ভাগ মিত্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, হাফতারের বিরোধী ছিল।
আবুধাবিতে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা মনে করেন, এই নীতির পেছনে আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেউ কেউ বলেন, সুদানের স্বর্ণ খনির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেতেই হয়তো আমিরাত আগ্রহী। কিন্তু এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয়। কারণ সুদানের বেশির ভাগ স্বর্ণ এরই মধ্যে আমিরাতে রপ্তানি হচ্ছে। আবার অনেকে মনে করেন, খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগে অগ্রগতি আনতে আমিরাত সুদানে কৃষিজমি ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশাধিকার চায়; কারণ দেশটির ৯০ শতাংশ খাদ্য আমদানিনির্ভর।
তবে কেবল বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা ভুল হবে। আমিরাতের প্রধান প্রেরণা আদর্শিক। প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর তীব্র বিরোধী। তিনি এবং তাঁর পরিবার চান আরব বিশ্বে কাতার ও তুরস্কের প্রভাব কমাতে। কারণ, এই দুই দেশই মুসলিম বিশ্বে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর বড় সমর্থক। একই সঙ্গে আরব আমিরাত সৌদি আরবের প্রভাবের বাইরে নিজেদের আলাদা প্রভাব বলয় গড়ে তুলতে চায়।
ইয়েমেনে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই আমিরাত ২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়। সে সময় রিয়াদ হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। হুতি ইরান-সমর্থিত শিয়া গোষ্ঠী। রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বড় একটি অংশ তাদের দখলে। সৌদি ও আমিরাত কেউই চায়নি—ইরানের মদদপুষ্ট কোনো গোষ্ঠী আরব উপদ্বীপে শক্ত ঘাঁটি পাক। তবে আমিরাত চেয়েছিল নিজেদের অনুগত মিত্র তৈরি করতে। কারণ, তাদের কাছে সৌদি আরবও বিশ্বাসযোগ্য মিত্র নয়। কারণ, সৌদিরা ইসলামি রাজনৈতিক দল ইসলাহের বেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র, যা আবার মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা।
ইয়েমেন ১৯৯০ সালের আগে পর্যন্ত কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ছিল। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে আমিরাতের নীতি বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই জোট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সুফলও বয়ে আনতে পারে। আবুধাবিভিত্তিক রাষ্ট্রীয় শিপিং জায়ান্ট এডি পোর্টস আশা করছে, তারা দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেন বন্দরের পরিচালনার অধিকার পাবে। আমিরাতের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির স্বার্থে তারা আঞ্চলিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, তবে এটাই দেশটির মূল উদ্দেশ্য নয়।
২০১৯ সালে ওমর আল-বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সুদানে কয়েক দশকের ইসলামপন্থী শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু সেনাবাহিনীতে এখনো ইসলামপন্থী কর্মকর্তাদের প্রভাব রয়েছে। এ কারণেই শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দ্রুত সমর্থন দেন আরএসএফ–কে। আরেকটি কারণ ছিল, মিলিশিয়া নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত—ইয়েমেনে যুদ্ধের সময় আরব আমিরাতকে সহায়তা দিতে হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিলেন। শেখ মুহাম্মদ হয়তো সেই সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চেয়েছেন। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি এই লোকদের প্রতি একধরনের আনুগত্য অনুভব করেন।’
আমিরাতের দাবি—তারা শুধু বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে এগোচ্ছে। যুক্তিটা কিছুটা গ্রহণযোগ্যও। ইয়েমেনে তাদের মিত্ররা সৌদি সমর্থিত বাহিনীর চেয়ে দক্ষ যোদ্ধা প্রমাণিত হয়েছিল। লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারও যতটা বৈধ বলে শোনা যায়, বাস্তবে তা নয়—সেখানে প্রভাবশালী হলো মিলিশিয়ারা।
তবু এসব শক্তির প্রতি সমর্থন খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। ২০১৮ সালে আমিরাত দামেস্কে দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং অন্যান্য দেশকেও বাশার আল-আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানায়। শেখ মুহাম্মদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেন, ‘দশ বছরের হতাশা থেকেই এই যোগাযোগ শুরু হয়েছিল।’ তাঁর মতে, সিরিয়ার একনায়ককে একঘরে করে রাখা কাজে আসেনি; তাই তাঁকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা উচিত ছিল। সেই চেষ্টা করে অবশ্য কোনো ফল পায়নি আমিরাত।
আসাদ গত ডিসেম্বরে মস্কো পালিয়ে যান। সিরিয়ার ইসলামপন্থী নতুন সরকারের প্রতি আমিরাতের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো সন্দেহ প্রবণ। এমনকি অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের তুলনায়ও অনেক বেশি। তবে এখনো নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আমিরাত।
এর আগে, হাফতার ত্রিপোলি দখলের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন। আরএসএফও গত মাসে সুদানের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়েছে। বলা যায়, দুই ক্ষেত্রেই আমিরাতের ভূমিকা উল্টো ফল দিয়েছে। এতে তুরস্ক সুদানি সেনাবাহিনী ও ত্রিপোলির সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার আরও বেশি সুযোগ পেয়েছে। ওই দুই পক্ষই এখন তুর্কি ড্রোনের ওপর নির্ভর করছে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে।
এসব নীতি আমিরাতের সুনামেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত মাসে ওয়াশিংটনে কয়েক দফা বৈঠকে তিন কংগ্রেস সদস্যের সহযোগী আমিরাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন। যদিও তা আপাতত কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রচলিত আছে যে, আরএসএফ-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করা শুধু অপরাধ নয়, বরং এক ভয়াবহ ভুল।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ ও ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
০৭ মে ২০২৫
বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
১১ ঘণ্টা আগে
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
১ দিন আগে
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত
বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক
বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।
এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।
যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত
বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক
বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।
এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।
যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে গড়াল। এরই মধ্যে পাকিস্তানে ২৬ ও ভারতে ৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাশ্মীর সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় (এলওসি) তুমুল গোলাগুলির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত তিনটি যুদ্ধবিমানের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।
০৭ মে ২০২৫
বিহারের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ক্লেরেন্স টপ্পো তাঁর এক বন্ধুর কাছে জানতে পারেন, তাঁর মা মারা গেছেন। ঘটনা চলতি বছরের আগস্টের শুরুর দিকের। টপ্পো খবর পেয়ে বেশ অবাক হন। কারণ, তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন, মা সুস্থ শরীরে বহাল তবিয়তে। কিন্তু ৭৪ বছর বয়সী মেরি টপ্পো ভারত সরকারের নথিতে মৃত।
১১ ঘণ্টা আগে
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
১ দিন আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা
২ দিন আগে