মাহবুবুর রহমান

বর্তমানে যুদ্ধের ময়দান আর খোলা মাঠে নেই। মাঠ পেরিয়ে শহরে শহরে যুদ্ধ এখন নিয়মিত ঘটনা। উদাহরণ হিসেবে ইউক্রেনের কথাই ধরা যাক। গত এপ্রিলে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছিলেন, ‘মারিউপোল শহরটির অস্তিত্ব আর নেই।’ রাশিয়ার আক্রমণের সাত সপ্তাহের মধ্যেই বোমা, গোলা ও রকেট হামলায় আজভ সাগরের তীরবর্তী শহরটি রাশিয়ার দখলে চলে যায়। এর এক মাস পরই শহরটির পতন হয়। মারিউপোলের মেয়র জানিয়েছেন, ১ হাজার ৩০০ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা গেছে, শহরটির অর্ধেক এলাকাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সংকটে পড়েছে শহরটির ৪ লাখ জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশই।
সামরিক ও নিরাপত্তা জার্নাল টেক্সাস ন্যাশনাল সিকিউরিটি রিভিউয়ে লন্ডনের কিংস কলেজের শিক্ষক ও ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হুগো স্ট্যানফোর্ড-টাক লিখেছেন, ‘মারিউপোলের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বিশ্বের সেনাবাহিনীগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা হয়ে থাকবে। শহরে যুদ্ধ করার বিষয়টি জেনারেলরা সব সময়ই অবজ্ঞা করেছেন, এড়িয়ে গেছেন।’ তবে জেনারেলরা না চাইলেও এখন শহরে যুদ্ধ করতে হচ্ছে এবং এই নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা অতীত থেকে শিখছেন এবং আধুনিক অস্ত্রের সাহায্যে যুদ্ধকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত জুলাইয়ে ব্রিটেনের চিফ অব জেনারেল স্টাফ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এমন লড়াইয়ে রত ছিল, যেখানে খুবই নিম্নমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতের যুদ্ধে শহরই রণক্ষেত্র হয়ে উঠবে। এ বিষয়ে মার্কিন মিলিটারি একাডেমিতে দেওয়া এক ভাষণে মার্কিন সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফসের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই শহরে যুদ্ধের উপযোগী হয়ে উঠতে হবে।’ তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, সব মিলিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে ছদ্মবেশ থেকে শুরু করে যানবাহন এবং অন্যান্য সরঞ্জামেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।
এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, শহরের রণক্ষেত্র হয়ে ওঠা এবং এ নিয়ে বিশ্বের সেনাবাহিনীগুলোর ক্রমবর্ধমান আগ্রহের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এক অর্থে, সেনাবাহিনীগুলো নিকট ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছে। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্ধগুলোর কেন্দ্রবিন্দুই ছিল শহর। ২০২০ সালে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র ছিল নাগরনো-কারাবাখের শহর শুশা, ২০১৪ সালে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কা শহরে আইএসের বিজয় এবং দুই বছর পর ওই দুই শহরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের হাতে জিহাদিদের পতন শহুরে যুদ্ধের অন্যতম উদাহরণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ করেছে এবং এর মাধ্যমে মারিউপোল, দনবাসের সেভেরোদোনেৎস্ক এবং লিসিশানস্ক দখলে নিয়েছে। একই পদ্ধতি অবলম্বন করে ইউক্রেন আশা করেছিল তারা দক্ষিণাঞ্চলের শহর খেরসন পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
এই প্রবণতার আরেকটি বড় কারণ হলো—২১ শতক শুরুর আগ পর্যন্ত শহরের তুলনায় গ্রামে মানুষ বেশি বাস করত। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস করে শহরে। ২০৫০ সালের মধ্যে তা মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ পৌঁছাবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। যেমন, তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই বাস করে শহরে। ফলে তাইওয়ানে আক্রমণ করলে চীনকে তাইওয়ানের শহরাঞ্চলেই যুদ্ধ করতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বের শহরগুলো ক্রমেই আকারে বড় হয়ে উঠছে। বাড়ছে শহুরে জনসংখ্যাও। ১৯৫০ সালেই নিউইয়র্ক ও টোকিও মেগাসিটির খ্যাতি অর্জন করে। সে সময় শহর দুটির বাসিন্দা ছিল ১ কোটিরও বেশি। সম্প্রতি জাতিসংঘ ‘২৩০০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা’-শীর্ষক এক প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে, সাধারণ শহরগুলোও দ্রুত মেগাসিটিতে পরিণত হবে।
প্রাচীনকালে শহরের আশপাশে যুদ্ধ হলেও ভেতরে হয়েছে খুবই অল্প। ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি কিং ইকোনমিস্টকে বলেছেন, ‘শহরগুলোর আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের চ্যালেঞ্জও বেড়েছে। অতীতে শহরগুলোর যুদ্ধে শহরবাসীও যুক্ত হতো। সে সময় আক্রমণকারীরা শহরের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করত এবং শহরের ওপর তাণ্ডব চালাত। যেমন, ৮০ বছর আগে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল প্রায় ৫ লাখ সৈন্য, আর শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লাখ। বিপরীতে, বর্তমানে শহরের জনসংখ্যার তুলনায় সেনাবাহিনীর আকার খুবই ছোট হয়। যেমন, ২০১৬ সালে ১৭ লাখ মানুষের শহরের নিয়ন্ত্রণে নিতে যুদ্ধ শুরু করেছিল মাত্র ১ লাখের কাছাকাছি সৈন্য।
ধ্বংসাত্মক প্রবণতা এবং বর্বরতার জন্য বর্তমানের শহুরে যুদ্ধের কুখ্যাতি রয়েছে। নির্মাণাধীন এলাকাগুলোয় সৈন্যদের লুকানোর প্রচুর জায়গা থাকে এবং এই প্রবণতার কারণে প্রায়ই খুবই অল্প দূরত্বের ব্যবধানে দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ ছাড়া শহুরে যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রায়ই বুবি ট্র্যাপ এবং ল্যান্ড মাইন ব্যবহার করে বড় বড় দালান ধসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে শহরে যুদ্ধরত সৈনিকদের সব সময় সতর্ক থাকতে হয়, যা সৈন্যদের মানসিক অবস্থাকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বনভূমিতে যুদ্ধের সময়ও একইরকম কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তবে শহরে যুদ্ধের ক্ষেত্রে সর্বদা সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। কিন্তু বন বা খোলা প্রান্তরে যুদ্ধ হলে এমন হয় না। ফলে শহরে যুদ্ধ করাটা সব সময়ই কঠিন। একজন ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তাকে ‘কোথায় লড়াই করতে পছন্দ করবেন’—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘একটি শহরকে ধ্বংস করার কোনো অনুমতিই আমার নেই।’
কংক্রিটের জঙ্গল
অ্যান্থনি কিংয়ের মতে, ছোট আকারের সেনাবাহিনী কর্তৃক শহর আক্রমণের ফলে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ঘটে তা হলো—‘স্থানীয় ভূখণ্ড দখলের’ মাধ্যমেই তা অনেক সময় শেষ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় কিছু অবকাঠামো দখলে নেওয়া হলেও যুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। তবে এর বিপরীত দিকও রয়েছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর আর্মড ডিভিশনের সাবেক ব্রিগেড অধিনায়ক পিটার মনসুর বলেন, ‘অনেক সময় একটি মাত্র দালান দখল করতে গিয়েও পুরো একটি ব্রিগেড নাই হয়ে যেতে পারে।’
আধুনিক বিস্ফোরক অস্ত্রগুলো ইউরোপের সমভূমিতে স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, এই অস্ত্রগুলো কোনো জনবহুল এলাকায় ব্যবহারের ফলে হতাহত প্রতি দশজনের নয়জনই হয় বেসামরিক নাগরিক। সাম্প্রতিক সময়েই এর বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। রুশ বাহিনী কর্তৃক এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার কেবল মারিউপোল, সেভেরোদোনেৎস্কসহ ইউক্রেনের আরও অনেক ছোট শহরই ধ্বংস করেনি, ধ্বংস করেছে সিরিয়ার আলেপ্পো এবং চেচনিয়ার গ্রোজনিকেও।

এমনকি একটি সর্বাধুনিক বোমা একটি শহরকে সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে। ইরাকের মসুলে মার্কিন বিমান হামলায় ভবনগুলোতে নির্ভুলভাবে আঘাত করেছিল। কিন্তু বিদ্রোহীরা পালিয়ে যেতে শুরু করায় মার্কিন বাহিনী তাদের ধাওয়া করে বোমা বর্ষণ করতে থাকে। এর ফলে পুরো শহর বোমার আঘাতে জর্জরিত হয়। মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর অ্যামোস ফক্স এই হামলার বিষয়ে বলেছিলেন, বোমাগুলো একের পর এক বিভিন্ন দালানে আঘাত করে। এর ফলে সেই সময় মসুলে ১০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক লোক প্রাণ হারায়। এই প্রাণহানির এক-তৃতীয়াংশই ঘটেছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট দ্বারা।
কোনো একটি শহরে যুদ্ধের সময় শহরটির বাসিন্দারা নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে বসে থাকেন না। মার্কিন থিংকট্যাংক মেডিসন পলিসি ফোরামের আরবান ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের চেয়ারপারসন ও সাবেক মেজর জন স্পেনসার গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আক্রমণের কয়েক দিনের মাথায় ইউক্রেনের শহরবাসীদের সামরিক পরামর্শ দেওয়া শুরু করেন। গত জুন মাসে তিনি কিয়েভ পরিদর্শনকালে জেনেছিলেন কীভাবে স্থানীয় একটি মাত্র ব্রিগেড বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকেদের সহায়তায় কেবল একে-৪৭ রাইফেলের সহায়তায় তাদের শহরটির সুরক্ষা দিয়েছিল। সে সময় শহরটির বাসিন্দারা নিজেরাই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হয়ে গোয়েন্দার কাজ করেছে। তাঁর শহরটির ভেতরে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি যাওয়ার নাম করে রাশিয়ার সৈন্যদের অবস্থান চিহ্নিত করে তা ইউক্রেনের সৈন্যদের জানিয়ে দিত।
ইকোনমিস্ট বলছে, আধুনিক শহরগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, শহরের ভূগর্ভস্থ যোগাযোগ প্রসারিত করা। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গবেষক মার্কো বুমার জানিয়েছেন, কীভাবে প্রতিরোধ যোদ্ধারা মসুলের সিঙ্কহোল এবং গুহাগুলো ব্যবহার করে নতুন সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল। বেশ কিছু সুড়ঙ্গ এতটাই চওড়া ছিল যে, সেখান দিয়ে অনায়াসে যানবাহন চলাচল সম্ভব হতো। খালি হাত থেকে শুরু করে বোরিং মেশিন ব্যবহার করে এসব সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল। অধিকাংশ সুড়ঙ্গেই আবাসন, হাসপাতাল এবং উত্তম বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ছিল। গত বছরই ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা গাজায় অন্তত ১০০ কিলোমিটার এমন সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছে। সর্বশেষ, ইউক্রেনের মারিউপোলের আজভস্টাল কারখানায়ও সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইউক্রেনের বাহিনী দীর্ঘ সময় শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছিল।
পশ্চিমারা দীর্ঘদিন ধরে যেসব নতুন প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে আসছে সেগুলো অনেকাংশেই ভূপৃষ্ঠের নিচে কাজ করে না। যেমন, স্যাটেলাইট ও ড্রোন দিয়ে নজরদারি। ভূপৃষ্ঠের নিচে তো বটেই ওপরও অনেক সময় এসব প্রযুক্তি যথাযথ কাজ করতে পারে না।
এ বিষয়ে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গ্যাল হারশ ইকোনমিস্টকে বলেছেন, আধুনিক শহরের উঁচু উঁচু ভবনের মধ্যবর্তী ‘শহুরে গিরিখাতে’ সামরিক রেডিও সংকেত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ শহরগুলো নানা ধরনের রেডিও এবং টেলিভিশন তরঙ্গে ভরপুর। গ্যাল হারশ বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো—এ রকম জনবহুল জটিল এলাকায়, আমাদের যা দেখানো হয় আমরা কেবল তাই দেখতে পাই। আমরা এমন কিছু দেখতে পারি না, যা শত্রু বাহিনী আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখছে।’

মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল লিয়াম কলিন্সের দাবি, এ ধরনের অসুবিধাগুলো আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করে যে—কেন মার্কিন সেনাবাহিনী এখন অবধি শহুরে যুদ্ধ সম্পর্কে চিন্তা করা থেকে দূরে রয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে যুদ্ধ চিন্তা, তা শহুরে যুদ্ধের মডেলের সঙ্গে খাপ খায় না। আমরা যেন আবারও উপসাগরীয় যুদ্ধের মতোই ভবিষ্যতের যুদ্ধে লড়তে চাই।’
এখন সশস্ত্রগুলো বাহিনী বুঝতে পেরেছে, শহুরে যুদ্ধ আরও নিয়মিত হয়ে উঠতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে একটি ইউরোপীয় যুদ্ধ শুরু হলে তাঁর গতিপ্রকৃতি কেমন হতে পারে সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে এবং কীভাবে সেই যুদ্ধে জয়লাভ করা যাবে, সেই উপায় নিয়েও ভাবছে। এই বিষয় নিয়ে কাজ করা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জেমস বাউডার সতর্ক করে বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে সৈন্যদের জন্য খোলা জায়গায় যুদ্ধ করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠবে। বহুমুখী সেন্সর-স্যাটেলাইট ও ড্রোন দিয়ে নজরদারি অতি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তা ক্রমেই আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।’
জেনারেল বাউডারের মতে, সৈন্যদের শহরের মধ্যে চলাচলের সময় নজিরবিহীন বিপদের মুখোমুখি হতে হয়। আগামী দিনের যুদ্ধে শহরগুলোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে তা কেবল শহরগুলোর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক মূল্যের জন্য নয় বরং সেখানে নিজেদের তুলনামূলক নিরাপদে রাখার সুবিধা থাকার কারণেই সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষ বাহিনী কর্তৃক শহরে তাদের শত্রুদের খুঁজে বের করা এবং আক্রমণ করার ক্ষমতা দুইই হ্রাস পাবে। ঠিক এই কৌশলের কারণেই তাল্লিন, রিগা ও ভিলনিয়াসের মতো তুলনামূলক ছোট শহরগুলো ন্যাটো বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে। সেখান থেকে রাশিয়ার সরবরাহ ব্যবস্থা ও রুশ বাহিনীর ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হবে।
যা হোক, বর্তমানে অন্য কৌশলগত বিষয়গুলো আলোচনার পাশাপাশি যুদ্ধকৌশল নিয়েও ভাবছে সেনাবাহিনীগুলো। যাদের শহরে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা আছে, তাদের কাছ থেকে শিখছে অন্য দেশগুলো। ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্থপতি ইয়াল উইজম্যান জানিয়েছেন, কীভাবে ২০০২ সালে ফিলিস্তিনের নাবলুসে ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘ওয়াকিং থ্রো দ্য ওয়ালস’ কৌশল ব্যবহার করেছিল। যে পদ্ধতিতে গতানুগতিক দরজা-জানালা কিংবা পরিচিত রাস্তা ব্যবহার না করে বরং সরাসরি অন্য কোনো পথ ব্যবহার করা হয়। ১৯ শতকে প্যারিস যুদ্ধের সময় ফরাসি বাহিনী এই পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করেছিল।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান জেনারেল আভিভ কোহাভি উইজম্যানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি কি শহরের গলি-ঘুপচিগুলোকে কেবল একটি ফাঁকা জায়গা হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন, যেমনটা করে থাকেন অন্যান্য স্থপতি এবং নগর পরিকল্পনাবিদ?’ জবাবে উইজম্যান বলেছিলেন, ‘শত্রু যদি কোনো ফাঁকা জায়গাকে প্রথাগত পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করে তবে আমি এই ব্যাখ্যা মানতে চাই না এবং ফাঁদেও পড়তে চাই না।’ যার ফলাফল উত্তরাধুনিক যুদ্ধের নতুন ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে শহর এবং এই যুদ্ধে শহরের ধারণা হলো তা কেবল একটি জায়গা নয় বরং তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্র।

বর্তমানে যুদ্ধের ময়দান আর খোলা মাঠে নেই। মাঠ পেরিয়ে শহরে শহরে যুদ্ধ এখন নিয়মিত ঘটনা। উদাহরণ হিসেবে ইউক্রেনের কথাই ধরা যাক। গত এপ্রিলে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছিলেন, ‘মারিউপোল শহরটির অস্তিত্ব আর নেই।’ রাশিয়ার আক্রমণের সাত সপ্তাহের মধ্যেই বোমা, গোলা ও রকেট হামলায় আজভ সাগরের তীরবর্তী শহরটি রাশিয়ার দখলে চলে যায়। এর এক মাস পরই শহরটির পতন হয়। মারিউপোলের মেয়র জানিয়েছেন, ১ হাজার ৩০০ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা গেছে, শহরটির অর্ধেক এলাকাই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে সংকটে পড়েছে শহরটির ৪ লাখ জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশই।
সামরিক ও নিরাপত্তা জার্নাল টেক্সাস ন্যাশনাল সিকিউরিটি রিভিউয়ে লন্ডনের কিংস কলেজের শিক্ষক ও ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হুগো স্ট্যানফোর্ড-টাক লিখেছেন, ‘মারিউপোলের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বিশ্বের সেনাবাহিনীগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা হয়ে থাকবে। শহরে যুদ্ধ করার বিষয়টি জেনারেলরা সব সময়ই অবজ্ঞা করেছেন, এড়িয়ে গেছেন।’ তবে জেনারেলরা না চাইলেও এখন শহরে যুদ্ধ করতে হচ্ছে এবং এই নতুন যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁরা অতীত থেকে শিখছেন এবং আধুনিক অস্ত্রের সাহায্যে যুদ্ধকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত জুলাইয়ে ব্রিটেনের চিফ অব জেনারেল স্টাফ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ব্রিটিশ সেনাবাহিনী গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এমন লড়াইয়ে রত ছিল, যেখানে খুবই নিম্নমানের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। ভবিষ্যতের যুদ্ধে শহরই রণক্ষেত্র হয়ে উঠবে। এ বিষয়ে মার্কিন মিলিটারি একাডেমিতে দেওয়া এক ভাষণে মার্কিন সেনাবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফসের চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি বলেছিলেন, ‘আমাদের অবশ্যই শহরে যুদ্ধের উপযোগী হয়ে উঠতে হবে।’ তিনি সতর্ক করে বলেছিলেন, সব মিলিয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে। বিশেষ করে ছদ্মবেশ থেকে শুরু করে যানবাহন এবং অন্যান্য সরঞ্জামেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।
এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, শহরের রণক্ষেত্র হয়ে ওঠা এবং এ নিয়ে বিশ্বের সেনাবাহিনীগুলোর ক্রমবর্ধমান আগ্রহের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এক অর্থে, সেনাবাহিনীগুলো নিকট ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়েছে। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ের যুদ্ধগুলোর কেন্দ্রবিন্দুই ছিল শহর। ২০২০ সালে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধক্ষেত্র ছিল নাগরনো-কারাবাখের শহর শুশা, ২০১৪ সালে ইরাকের মসুল ও সিরিয়ার রাক্কা শহরে আইএসের বিজয় এবং দুই বছর পর ওই দুই শহরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের হাতে জিহাদিদের পতন শহুরে যুদ্ধের অন্যতম উদাহরণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও রুশ সেনাবাহিনী ইউক্রেনের শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ করেছে এবং এর মাধ্যমে মারিউপোল, দনবাসের সেভেরোদোনেৎস্ক এবং লিসিশানস্ক দখলে নিয়েছে। একই পদ্ধতি অবলম্বন করে ইউক্রেন আশা করেছিল তারা দক্ষিণাঞ্চলের শহর খেরসন পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
এই প্রবণতার আরেকটি বড় কারণ হলো—২১ শতক শুরুর আগ পর্যন্ত শহরের তুলনায় গ্রামে মানুষ বেশি বাস করত। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস করে শহরে। ২০৫০ সালের মধ্যে তা মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ পৌঁছাবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। যেমন, তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই বাস করে শহরে। ফলে তাইওয়ানে আক্রমণ করলে চীনকে তাইওয়ানের শহরাঞ্চলেই যুদ্ধ করতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্বের শহরগুলো ক্রমেই আকারে বড় হয়ে উঠছে। বাড়ছে শহুরে জনসংখ্যাও। ১৯৫০ সালেই নিউইয়র্ক ও টোকিও মেগাসিটির খ্যাতি অর্জন করে। সে সময় শহর দুটির বাসিন্দা ছিল ১ কোটিরও বেশি। সম্প্রতি জাতিসংঘ ‘২৩০০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা’-শীর্ষক এক প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে, সাধারণ শহরগুলোও দ্রুত মেগাসিটিতে পরিণত হবে।
প্রাচীনকালে শহরের আশপাশে যুদ্ধ হলেও ভেতরে হয়েছে খুবই অল্প। ইংল্যান্ডের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি কিং ইকোনমিস্টকে বলেছেন, ‘শহরগুলোর আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যদের চ্যালেঞ্জও বেড়েছে। অতীতে শহরগুলোর যুদ্ধে শহরবাসীও যুক্ত হতো। সে সময় আক্রমণকারীরা শহরের জনসংখ্যার চেয়ে বেশি সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করত এবং শহরের ওপর তাণ্ডব চালাত। যেমন, ৮০ বছর আগে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল প্রায় ৫ লাখ সৈন্য, আর শহরটির জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লাখ। বিপরীতে, বর্তমানে শহরের জনসংখ্যার তুলনায় সেনাবাহিনীর আকার খুবই ছোট হয়। যেমন, ২০১৬ সালে ১৭ লাখ মানুষের শহরের নিয়ন্ত্রণে নিতে যুদ্ধ শুরু করেছিল মাত্র ১ লাখের কাছাকাছি সৈন্য।
ধ্বংসাত্মক প্রবণতা এবং বর্বরতার জন্য বর্তমানের শহুরে যুদ্ধের কুখ্যাতি রয়েছে। নির্মাণাধীন এলাকাগুলোয় সৈন্যদের লুকানোর প্রচুর জায়গা থাকে এবং এই প্রবণতার কারণে প্রায়ই খুবই অল্প দূরত্বের ব্যবধানে দুই বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ ছাড়া শহুরে যুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রায়ই বুবি ট্র্যাপ এবং ল্যান্ড মাইন ব্যবহার করে বড় বড় দালান ধসিয়ে দেওয়া হয়। ফলে শহরে যুদ্ধরত সৈনিকদের সব সময় সতর্ক থাকতে হয়, যা সৈন্যদের মানসিক অবস্থাকে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বনভূমিতে যুদ্ধের সময়ও একইরকম কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তবে শহরে যুদ্ধের ক্ষেত্রে সর্বদা সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে হয়। কিন্তু বন বা খোলা প্রান্তরে যুদ্ধ হলে এমন হয় না। ফলে শহরে যুদ্ধ করাটা সব সময়ই কঠিন। একজন ইউরোপীয় সেনা কর্মকর্তাকে ‘কোথায় লড়াই করতে পছন্দ করবেন’—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন, ‘একটি শহরকে ধ্বংস করার কোনো অনুমতিই আমার নেই।’
কংক্রিটের জঙ্গল
অ্যান্থনি কিংয়ের মতে, ছোট আকারের সেনাবাহিনী কর্তৃক শহর আক্রমণের ফলে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ঘটে তা হলো—‘স্থানীয় ভূখণ্ড দখলের’ মাধ্যমেই তা অনেক সময় শেষ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় কিছু অবকাঠামো দখলে নেওয়া হলেও যুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হতে পারে। তবে এর বিপরীত দিকও রয়েছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর আর্মড ডিভিশনের সাবেক ব্রিগেড অধিনায়ক পিটার মনসুর বলেন, ‘অনেক সময় একটি মাত্র দালান দখল করতে গিয়েও পুরো একটি ব্রিগেড নাই হয়ে যেতে পারে।’
আধুনিক বিস্ফোরক অস্ত্রগুলো ইউরোপের সমভূমিতে স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন অন আর্মড ভায়োলেন্স এক প্রতিবেদনে বলেছে, এই অস্ত্রগুলো কোনো জনবহুল এলাকায় ব্যবহারের ফলে হতাহত প্রতি দশজনের নয়জনই হয় বেসামরিক নাগরিক। সাম্প্রতিক সময়েই এর বাস্তব উদাহরণ রয়েছে। রুশ বাহিনী কর্তৃক এ ধরনের অস্ত্র ব্যবহার কেবল মারিউপোল, সেভেরোদোনেৎস্কসহ ইউক্রেনের আরও অনেক ছোট শহরই ধ্বংস করেনি, ধ্বংস করেছে সিরিয়ার আলেপ্পো এবং চেচনিয়ার গ্রোজনিকেও।

এমনকি একটি সর্বাধুনিক বোমা একটি শহরকে সম্পূর্ণরূপে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে। ইরাকের মসুলে মার্কিন বিমান হামলায় ভবনগুলোতে নির্ভুলভাবে আঘাত করেছিল। কিন্তু বিদ্রোহীরা পালিয়ে যেতে শুরু করায় মার্কিন বাহিনী তাদের ধাওয়া করে বোমা বর্ষণ করতে থাকে। এর ফলে পুরো শহর বোমার আঘাতে জর্জরিত হয়। মার্কিন সেনাবাহিনীর মেজর অ্যামোস ফক্স এই হামলার বিষয়ে বলেছিলেন, বোমাগুলো একের পর এক বিভিন্ন দালানে আঘাত করে। এর ফলে সেই সময় মসুলে ১০ হাজারেরও বেশি বেসামরিক লোক প্রাণ হারায়। এই প্রাণহানির এক-তৃতীয়াংশই ঘটেছিল মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট দ্বারা।
কোনো একটি শহরে যুদ্ধের সময় শহরটির বাসিন্দারা নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে বসে থাকেন না। মার্কিন থিংকট্যাংক মেডিসন পলিসি ফোরামের আরবান ওয়ারফেয়ার স্টাডিজের চেয়ারপারসন ও সাবেক মেজর জন স্পেনসার গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ আক্রমণের কয়েক দিনের মাথায় ইউক্রেনের শহরবাসীদের সামরিক পরামর্শ দেওয়া শুরু করেন। গত জুন মাসে তিনি কিয়েভ পরিদর্শনকালে জেনেছিলেন কীভাবে স্থানীয় একটি মাত্র ব্রিগেড বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবকেদের সহায়তায় কেবল একে-৪৭ রাইফেলের সহায়তায় তাদের শহরটির সুরক্ষা দিয়েছিল। সে সময় শহরটির বাসিন্দারা নিজেরাই ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর হয়ে গোয়েন্দার কাজ করেছে। তাঁর শহরটির ভেতরে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি যাওয়ার নাম করে রাশিয়ার সৈন্যদের অবস্থান চিহ্নিত করে তা ইউক্রেনের সৈন্যদের জানিয়ে দিত।
ইকোনমিস্ট বলছে, আধুনিক শহরগুলোর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো, শহরের ভূগর্ভস্থ যোগাযোগ প্রসারিত করা। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর গবেষক মার্কো বুমার জানিয়েছেন, কীভাবে প্রতিরোধ যোদ্ধারা মসুলের সিঙ্কহোল এবং গুহাগুলো ব্যবহার করে নতুন সুড়ঙ্গের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল। বেশ কিছু সুড়ঙ্গ এতটাই চওড়া ছিল যে, সেখান দিয়ে অনায়াসে যানবাহন চলাচল সম্ভব হতো। খালি হাত থেকে শুরু করে বোরিং মেশিন ব্যবহার করে এসব সুড়ঙ্গ খোঁড়া হয়েছিল। অধিকাংশ সুড়ঙ্গেই আবাসন, হাসপাতাল এবং উত্তম বায়ু চলাচল ব্যবস্থা ছিল। গত বছরই ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, তারা গাজায় অন্তত ১০০ কিলোমিটার এমন সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে দিয়েছে। সর্বশেষ, ইউক্রেনের মারিউপোলের আজভস্টাল কারখানায়ও সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে ইউক্রেনের বাহিনী দীর্ঘ সময় শক্ত অবস্থান বজায় রেখেছিল।
পশ্চিমারা দীর্ঘদিন ধরে যেসব নতুন প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে আসছে সেগুলো অনেকাংশেই ভূপৃষ্ঠের নিচে কাজ করে না। যেমন, স্যাটেলাইট ও ড্রোন দিয়ে নজরদারি। ভূপৃষ্ঠের নিচে তো বটেই ওপরও অনেক সময় এসব প্রযুক্তি যথাযথ কাজ করতে পারে না।
এ বিষয়ে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গ্যাল হারশ ইকোনমিস্টকে বলেছেন, আধুনিক শহরের উঁচু উঁচু ভবনের মধ্যবর্তী ‘শহুরে গিরিখাতে’ সামরিক রেডিও সংকেত বাধাগ্রস্ত হতে পারে। কারণ শহরগুলো নানা ধরনের রেডিও এবং টেলিভিশন তরঙ্গে ভরপুর। গ্যাল হারশ বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হলো—এ রকম জনবহুল জটিল এলাকায়, আমাদের যা দেখানো হয় আমরা কেবল তাই দেখতে পাই। আমরা এমন কিছু দেখতে পারি না, যা শত্রু বাহিনী আমাদের থেকে লুকিয়ে রাখছে।’

মার্কিন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল লিয়াম কলিন্সের দাবি, এ ধরনের অসুবিধাগুলো আংশিকভাবে ব্যাখ্যা করে যে—কেন মার্কিন সেনাবাহিনী এখন অবধি শহুরে যুদ্ধ সম্পর্কে চিন্তা করা থেকে দূরে রয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে যুদ্ধ চিন্তা, তা শহুরে যুদ্ধের মডেলের সঙ্গে খাপ খায় না। আমরা যেন আবারও উপসাগরীয় যুদ্ধের মতোই ভবিষ্যতের যুদ্ধে লড়তে চাই।’
এখন সশস্ত্রগুলো বাহিনী বুঝতে পেরেছে, শহুরে যুদ্ধ আরও নিয়মিত হয়ে উঠতে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ন্যাটো ও রাশিয়ার মধ্যে একটি ইউরোপীয় যুদ্ধ শুরু হলে তাঁর গতিপ্রকৃতি কেমন হতে পারে সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছে এবং কীভাবে সেই যুদ্ধে জয়লাভ করা যাবে, সেই উপায় নিয়েও ভাবছে। এই বিষয় নিয়ে কাজ করা ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জেমস বাউডার সতর্ক করে বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলোতে সৈন্যদের জন্য খোলা জায়গায় যুদ্ধ করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে উঠবে। বহুমুখী সেন্সর-স্যাটেলাইট ও ড্রোন দিয়ে নজরদারি অতি সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছে। ফলে এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, তা ক্রমেই আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।’
জেনারেল বাউডারের মতে, সৈন্যদের শহরের মধ্যে চলাচলের সময় নজিরবিহীন বিপদের মুখোমুখি হতে হয়। আগামী দিনের যুদ্ধে শহরগুলোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে তা কেবল শহরগুলোর রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক মূল্যের জন্য নয় বরং সেখানে নিজেদের তুলনামূলক নিরাপদে রাখার সুবিধা থাকার কারণেই সেগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। এ ছাড়া প্রতিপক্ষ বাহিনী কর্তৃক শহরে তাদের শত্রুদের খুঁজে বের করা এবং আক্রমণ করার ক্ষমতা দুইই হ্রাস পাবে। ঠিক এই কৌশলের কারণেই তাল্লিন, রিগা ও ভিলনিয়াসের মতো তুলনামূলক ছোট শহরগুলো ন্যাটো বাহিনীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে। সেখান থেকে রাশিয়ার সরবরাহ ব্যবস্থা ও রুশ বাহিনীর ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হবে।
যা হোক, বর্তমানে অন্য কৌশলগত বিষয়গুলো আলোচনার পাশাপাশি যুদ্ধকৌশল নিয়েও ভাবছে সেনাবাহিনীগুলো। যাদের শহরে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা আছে, তাদের কাছ থেকে শিখছে অন্য দেশগুলো। ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ স্থপতি ইয়াল উইজম্যান জানিয়েছেন, কীভাবে ২০০২ সালে ফিলিস্তিনের নাবলুসে ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘ওয়াকিং থ্রো দ্য ওয়ালস’ কৌশল ব্যবহার করেছিল। যে পদ্ধতিতে গতানুগতিক দরজা-জানালা কিংবা পরিচিত রাস্তা ব্যবহার না করে বরং সরাসরি অন্য কোনো পথ ব্যবহার করা হয়। ১৯ শতকে প্যারিস যুদ্ধের সময় ফরাসি বাহিনী এই পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করেছিল।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধান জেনারেল আভিভ কোহাভি উইজম্যানকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আপনি কি শহরের গলি-ঘুপচিগুলোকে কেবল একটি ফাঁকা জায়গা হিসেবেই ব্যাখ্যা করেন, যেমনটা করে থাকেন অন্যান্য স্থপতি এবং নগর পরিকল্পনাবিদ?’ জবাবে উইজম্যান বলেছিলেন, ‘শত্রু যদি কোনো ফাঁকা জায়গাকে প্রথাগত পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করে তবে আমি এই ব্যাখ্যা মানতে চাই না এবং ফাঁদেও পড়তে চাই না।’ যার ফলাফল উত্তরাধুনিক যুদ্ধের নতুন ক্ষেত্র হতে যাচ্ছে শহর এবং এই যুদ্ধে শহরের ধারণা হলো তা কেবল একটি জায়গা নয় বরং তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ রণক্ষেত্র।

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

২১ শতকের শুরুর আগ পর্যন্ত শহরের তুলনায় গ্রামে মানুষ বেশি বাস করত। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস করে শহরে। ২০৫০ সালের মধ্যে তা মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ পৌঁছাবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। যেমন, তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই বাস করে শহরে...
২৮ আগস্ট ২০২২
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

২১ শতকের শুরুর আগ পর্যন্ত শহরের তুলনায় গ্রামে মানুষ বেশি বাস করত। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস করে শহরে। ২০৫০ সালের মধ্যে তা মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ পৌঁছাবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। যেমন, তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই বাস করে শহরে...
২৮ আগস্ট ২০২২
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

২১ শতকের শুরুর আগ পর্যন্ত শহরের তুলনায় গ্রামে মানুষ বেশি বাস করত। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস করে শহরে। ২০৫০ সালের মধ্যে তা মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ পৌঁছাবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। যেমন, তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই বাস করে শহরে...
২৮ আগস্ট ২০২২
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

২১ শতকের শুরুর আগ পর্যন্ত শহরের তুলনায় গ্রামে মানুষ বেশি বাস করত। কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বাস করে শহরে। ২০৫০ সালের মধ্যে তা মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ পৌঁছাবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় এই সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে। যেমন, তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই বাস করে শহরে...
২৮ আগস্ট ২০২২
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
২ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে