ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রচেষ্টা এবং দেশটির ইসলামি প্রশাসনকে পশ্চিমা দুনিয়ায় যেভাবে ‘অতিরঞ্জিত’ করে তুলে ধরা হয়—তার বিরুদ্ধে অবস্থান প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কেনেথ নি’ল ওয়াল্টজের। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক অধ্যয়নে তিনি অন্যতম খ্যাতনামা গবেষক। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং কোরিয়া যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ‘নিওরিয়ালিজমের’ জনক হিসেবে পরিচিত কেনেথ ওয়াল্টজ মারা যান ২০১৩ সালে। মৃত্যুর আগের বছর ২০১২ সালে তাঁর একটি নিবন্ধ ফরেন অ্যাফেয়ার্স ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের এই প্রেক্ষাপটে তাঁর পর্যবেক্ষণটি খুবই প্রাসঙ্গিক। আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান।
কেনেথ এন. ওয়াল্টজ

কয়েক মাস ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের করণীয় কী হওয়া উচিত—তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আগের কঠোর নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরালো করেছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত জানুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী ১ জুলাই থেকে ইরানি তেলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে। যদিও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং ইরান আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরেছে। এরপরও গোটা বিষয়টি নিয়ে একটি উৎকট সংকটের কালো ছায়া ঘনিয়ে আসছে।
কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ইসরায়েলের বেশির ভাগ বিশ্লেষক ও নীতিনির্ধারক মনে করেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে সেটিই হবে এই সংকটের সবচেয়ে খারাপ পরিণতি। কিন্তু বাস্তবতা হতে পারে উল্টো—সেটিই হয়তো হবে সবচেয়ে ভালো পরিণতি, যেটি মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে চলমান সংকট তিনটি পথে শেষ হতে পারে। প্রথমত, কূটনৈতিক তৎপরতা ও কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মিলিত চাপে ইরান তার পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে পারে। কিন্তু এটি খুব একটা সম্ভাবনাময় দিক নয়। ইতিহাস বলছে, কোনো দেশ যদি পরমাণু অস্ত্র অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তবে তাকে ফেরানো খুবই কঠিন।
কেবল নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো দেশের পারমাণবিক কর্মসূচিকে থামানো যায় না। উত্তর কোরিয়ার কথাই ধরুন—অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা আর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও তারা পরমাণু অস্ত্র নির্মাণে সফল হয়েছে। যদি তেহরান মনে করে, তাদের নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র জরুরি, তবে নিষেধাজ্ঞা তাদের মত বদলাবে না। বরং, নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ইরান নিজেকে আরও অনিরাপদ মনে করতে পারে এবং এই আতঙ্ক থেকেই তারা ‘চূড়ান্ত প্রতিরোধের’ পথ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে যেতে পারে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি হলো—ইরান সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা না করে একটি ‘ব্রেকআউট সক্ষমতা’ অর্জন করবে। অর্থাৎ, তারা চাইলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষা করতে পারে—এমন অবস্থানে পৌঁছে যাবে। আর যদি, ইরান সেটি না করে, তবে তারাই প্রথম কোনো দেশ হবে না, যারা ব্যাপক পরমাণু কর্মসূচি গড়ে তুলেও সরাসরি বোমা তৈরি করবে না। জাপানের কথাই ধরুন, তাদের বিস্তৃত বেসামরিক পরমাণু অবকাঠামো আছে। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, তারা চাইলে খুব অল্প সময়েই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে। কিন্তু তারা এখনো সেই পথে যায়নি।
ইরানের বর্তমান শাসকদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে ‘ব্রেকআউট সক্ষমতা’ বা চাইলেই দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা পর্যন্ত পৌঁছানো একটি কৌশল হতে পারে। এতে করে তাঁরা ‘কট্টরপন্থীদের’ আশ্বস্ত করতে পারবেন যে, তারা বোমা থাকার নিরাপত্তাসহ নানা সুবিধা পাবে, আবার এই সুবিধা ব্যবহার না করায় আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা বা নিন্দার ঝুঁকিও এড়ানো যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো—এই কৌশল সব সময় পরিকল্পনামতো কাজ নাও করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের প্রধান উদ্বেগ হলো—অস্ত্রায়ন বা অস্ত্র তৈরির পর্যায়। তাই, যদি ইরান সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকে, তাহলে তারা হয়তো এই পরিস্থিতিকে মেনে নেবে। কিন্তু ইসরায়েল অনেক আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তাদের দৃষ্টিতে ইরানের উল্লেখযোগ্য সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতাও অগ্রহণযোগ্য হুমকি। ফলে এমন এক বাস্তবতা তৈরি হতে পারে যে, যেখানে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য অঙ্গীকার দিলেও পশ্চিমা শক্তিগুলো সন্তুষ্ট হবে, কিন্তু ইসরায়েল তা মানবে না। ‘ভার্চুয়াল পারমাণবিক অস্ত্র’ ইসরায়েলকে অতটা ভীত করবে না, যতটা আসল অস্ত্র করবে। সে কারণে তারা হয়তো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নস্যাৎ করতে ঝুঁকিপূর্ণ গুপ্ত হামলা, নাশকতা কিংবা বিজ্ঞানীদের হত্যা চালিয়ে যেতে থাকবে, যা ইরানকে বুঝিয়ে দিতে পারে যে, শুধু ব্রেকআউট সক্ষমতা যথেষ্ট নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অস্ত্রায়নই একমাত্র পথ।
তৃতীয় সম্ভাবনাটি হলো—ইরান তার বর্তমান পথেই এগিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা চালাবে এবং নিজেকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে ঘোষণা করবে। মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, এ ধরনের পরিণতি তাঁদের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তাঁদের ভাষায়, পারমাণবিক শক্তিধর ইরান হবে ভয়াবহ, অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। যখনই দেখে কোনো দেশ পরমাণু অস্ত্রের দিকে এগোচ্ছে, তখনই এ ধরনের ভাষা পরাশক্তিগুলো সাধারণত ব্যবহার করে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, যতবারই কোনো দেশ সফলভাবে পরমাণু শক্তিধর হয়েছে, বাকি সদস্যরা শেষ পর্যন্ত তাদের মেনে নিয়েছে। বরং সামরিক শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টি হওয়ায় নতুন পারমাণবিক রাষ্ট্রগুলো অনেক সময় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে গত চার দশক ধরে ইসরায়েলের একক পারমাণবিক আধিপত্য বিরাজ করছে, সেটিই মূলত এই অঞ্চলের অস্থিরতার বড় উৎস। পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চলে এমন কোনো একক ও অনিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র নেই। বর্তমান সংকটের জন্য ইরানের পরমাণু আকাঙ্ক্ষার চেয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রভান্ডারই বেশি দায়ী। কারণ, ক্ষমতা থাকলে কেউ না কেউ সেটি প্রতিরোধ করতে চাইবেই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এত দিনে কেবল একজন প্রতিদ্বন্দ্বীই মাঠে নেমেছে।
অবশ্য, এটি সহজেই বোঝা যায় যে, কেন ইসরায়েল এই অঞ্চলের একমাত্র পারমাণবিক শক্তি হিসেবে থেকে যেতে চায় এবং কেন তারা সেই অবস্থান রক্ষায় প্রয়োজনে বলপ্রয়োগেও প্রস্তুত। ইরাক পরমাণু শক্তিধর হয়ে উঠবে, এই আশঙ্কায় ১৯৮১ সালে ইসরায়েল দেশটির ওসিরাক পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করেছিল। ২০০৭ সালে একই ধরনের হামলা চালানো হয়েছিল সিরিয়ায়। এখন ইরানের ক্ষেত্রেও তেমন একটি পদক্ষেপ বিবেচনা করছে তারা। কিন্তু এসব পদক্ষেপ, স্বল্পমেয়াদে ইসরায়েলকে পারমাণবিক আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করলেও এবং দীর্ঘ মেয়াদে একটি অসম সামরিক ভারসাম্যকে টিকিয়ে রাখলেও সেটি শেষ পর্যন্ত টেকসই হবে না।
ইসরায়েল তার সম্ভাব্য পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাতে পারে—এই প্রমাণিত বাস্তবতা ইসরায়েলের প্রতিপক্ষদের এমন এক মানসিকতায় পৌঁছে দিয়েছে, যেখানে তারা নিজেরাই এমন প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে তুলতে আগ্রহী, যাতে ভবিষ্যতে ইসরায়েলের হাতে আরেকটি আকস্মিক হামলার শিকার হতে না হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনা আসলে কোনো নতুন সংকটের সূচনা নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে বহু দশক ধরে চলতে থাকা পারমাণবিক টানাপোড়েনের শেষ অধ্যায়—যার অবসান ঘটবে কেবল তখনই, যখন এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য ফিরে আসবে।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারে—এই আশঙ্কা অনেক বেশি মাত্রায় অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরা হয়েছে। এর একটা বড় কারণ হলো—এই বিতর্ক নিয়ে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রগুলো সাধারণত যেভাবে আচরণ করে, সে সম্পর্কে মৌলিক ভুল ধারণা। সবচেয়ে প্রচলিত এবং গভীর উদ্বেগগুলোর একটি হলো—ইরানি শাসকগোষ্ঠী নাকি ‘স্বভাবগতভাবে অযৌক্তিক বা উন্মাদ’! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—ইরানি নীতিনির্ধারকেরা ‘পাগল মৌলবাদী’ নয়, বরং সম্পূর্ণ সচেতন এবং বাস্তববাদী আয়াতুল্লাহরা নিজেদের টিকে থাকার ব্যাপারে অন্য যেকোনো দেশের নেতার মতোই চিন্তিত।
তাঁরা উসকানিমূলক ও ঘৃণামূলক বক্তব্য দিলেও, আত্মঘাতী কোনো প্রবণতা তাঁদের মধ্যে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা যদি ধরে নেন যে, ইরানের নেতারা আত্মবিনাশের দিকে এগোচ্ছে, তাহলে সেটি হবে ভয়াবহ একটি ভুল হিসাব। তবুও, মার্কিন ও ইসরায়েলি অনেক বিশ্লেষক এবং কর্মকর্তা ইরানকে ‘বিচারবুদ্ধিহীন’ হিসেবে তুলে ধরেন। এর ফলে তারা এমন যুক্তি দাঁড় করাতে পারেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিরোধমূলক ভারসাম্য নাকি ইরানের ক্ষেত্রে কাজ করবে না। তাঁদের মতে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র পায়, তাহলে তাঁরা দ্বিধা না করেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম হামলা চালাবে। এমনকি, যদি তাতে ইরান ভয়াবহ পাল্টা হামলার শিকার হয় এবং নিজেও ধ্বংস হয়ে যায় এরপরও নাকি তারা হামলা চালাবে!
ইরানের আসল অভিপ্রায় নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা না গেলেও, এটি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত যে, তারা যদি পারমাণবিক অস্ত্র চায়ও, তাহলে সেটি নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে, আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যে নয়। ইরান হয়তো আলোচনায় অনমনীয় এবং নিষেধাজ্ঞার মুখে জেদি আচরণ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আচরণ নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লক্ষ্যেই আবর্তিত হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তেল নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার পর ইরান প্রচুর হুমকি দিলেও, শেষ পর্যন্ত হরমুজ প্রণালি বন্ধ করেনি। কারণ, তারা জানে—এমন পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক এবং ধ্বংসাত্মক জবাব আসত। এর মানে হচ্ছে, ইরানি নেতৃত্ব কথায় যতটা আগ্রাসী, কাজে ঠিক ততটাই হিসাবি।
তবুও, অনেক পর্যবেক্ষক ও নীতিনির্ধারক—যাঁরা মনে করেন ইরানি সরকার যুক্তিসংগতভাবে কাজ করে—আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, পারমাণবিক অস্ত্র পেলে ইরান আরও সাহসী হয়ে উঠবে। তেহরানের হাতে একটি পরমাণু অস্ত্র চলে আসবে, যা তাকে আরও আগ্রাসী আচরণ করতে এবং সন্ত্রাসবাদে সহায়তা বাড়াতে উৎসাহিত করতে পারে। কিছু বিশ্লেষক তো এমনটাও আশঙ্কা করেন যে, ইরান সরাসরি সন্ত্রাসীদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র তুলে দেবে!
তবে এসব আশঙ্কার একটা বড় সমস্যা হলো—এগুলো ঐতিহাসিক বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ১৯৪৫ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যেসব দেশ পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করেছে, তাদের আচরণে এসব আশঙ্কার প্রমাণ মেলে না। ইতিহাস বলছে, কোনো দেশ যখন পারমাণবিক বোমা বানায়, তখন তারা নিজেরাই আরও সতর্ক হয়ে পড়ে। কারণ তারা বুঝে যায়, এখন তারা বড় শক্তিধর দেশগুলোর নজরে একটি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। এই উপলব্ধি তাদের আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬৪ সালে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের পর মাওবাদী চীন অনেক কম উগ্র হয়ে ওঠে। একইভাবে, ভারত ও পাকিস্তানও পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার পর থেকে অনেক বেশি সতর্ক আচরণ করে আসছে। ফলে ইরান এই ইতিহাসের বিপরীতে হাঁটবে—এমন সম্ভাবনা খুব কম।
আর সন্ত্রাসীদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র তুলে দেওয়ার যে আশঙ্কা, সেটিও বাস্তবে অত্যন্ত বিপজ্জনক ও দুরূহ। কোনো দেশ চাইলে পারমাণবিক অস্ত্র স্থানান্তর করতে পারবে না, কারণ তাতে ধরা পড়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির ক্ষমতা এবং পারমাণবিক উপাদানের উৎস শনাক্ত করার প্রযুক্তি এখন এতটাই উন্নত যে, কোনো গোপন হস্তান্তর নজর এড়ানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া, যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কোনো রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, তাদের আচরণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ বা পূর্বাভাস দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। ফলে, কোনো রাষ্ট্র যখন একবার পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলে, তখন তার পক্ষে সেই অস্ত্র নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে দেওয়ার মতো বোকামি করার সম্ভাবনা থাকে না। কারণ এটি বানানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ—যা এমন কোনো পক্ষের হাতে তুলে দেওয়া বোকামি হবে, যাদের বিশ্বাস করা যায় না কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
আরেকটি বহুল চর্চিত আশঙ্কা হলো, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেলে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও একে একে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের পথে হাঁটবে এবং এতে পুরো অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পারমাণবিক যুগ প্রায় ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও এই আশঙ্কা সত্যি হয়নি। ‘প্রোলিফারেশন’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ হলো—দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার। এমন কিছু এখনো পর্যন্ত হয়নি। বরং ১৯৭০ সালের পর থেকে নতুন পারমাণবিক শক্তিধর দেশের আবির্ভাবের হার অনেক কমে গেছে।
এই ধারা এখন হঠাৎ করে পাল্টে যাবে, এমন কোনো যুক্তি নেই। ইরান যদি ১৯৪৫ সালের পর মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়, সেটি মোটেও ভয়াবহ ধারাবাহিকতার সূচনা হবে না। ইসরায়েল ১৯৬০-এর দশকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তখন তারা আশপাশের বহু দেশের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িত ছিল। ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র আরব বিশ্বের জন্য অনেক বড় হুমকি ছিল, যা ইরানের বর্তমান কর্মসূচির চেয়ে বহুগুণ ভয়ানক। যদি সেই সময় একটি পারমাণবিক ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না করতে পারে, তবে এখন একটি পারমাণবিক ইরান তার করবে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
১৯৯১ সালে ঐতিহাসিক বৈরী ভারত ও পাকিস্তান একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যেখানে তারা একে অপরের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা না করার অঙ্গীকার করে। তারা বুঝতে পেরেছিল, প্রতিপক্ষের পারমাণবিক সক্ষমতা যতটা ভয়ংকর, তার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক হলো সেই সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো থেকে উদ্ভূত অস্থিরতা।
তখন থেকে, চরম উত্তেজনা ও ঝুঁকিপূর্ণ উসকানির মুখেও এই দুই দেশ সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি। ইসরায়েল ও ইরান এই উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। যদি ইরান পারমাণবিক শক্তিধর হয়, তাহলে ইসরায়েল ও ইরান পরস্পরকে প্রতিহত করবে, যেভাবে সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশ একে অপরকে প্রতিহত করে এসেছে। ইতিহাসে কখনো দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হয়নি। ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্রের দোরগোড়া পেরিয়ে যায়, তাহলে সেই পারমাণবিক প্রতিরোধ কাজ করবে, এমনকি ইরানের অস্ত্রাগার ছোট হলেও। তখন আর মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের নিজস্ব পারমাণবিক শক্তি অর্জনের তাগিদ থাকবে না, এবং চলমান সংকটও প্রশমিত হবে। ফলাফল হিসেবে, আজকের তুলনায় সেই মধ্যপ্রাচ্য আরও স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
এই কারণেই, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। ইরান ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপ চলতে থাকা উচিত, কারণ খোলামেলা যোগাযোগ পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি পারমাণবিক ইরানের সঙ্গে সহাবস্থান সহজ করে তুলবে। তবে ইরানের ওপর আরোপিত বর্তমান নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত—এই নিষেধাজ্ঞাগুলো সাধারণ ইরানিদের কষ্ট দিচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্দেশ্য সাধন করছে না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আরব বিশ্ব, ইউরোপ, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক এবং সাধারণ নাগরিকদের আশ্বস্ত হওয়া উচিত—ইতিহাস দেখিয়েছে, যেখানে পারমাণবিক শক্তি এসেছে, সেখানেই এসেছে স্থিতিশীলতা। পারমাণবিক অস্ত্রের বেলায়, অতীতের মতো এখনো সত্য—অস্ত্র বেশি মানেই বেশি স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা!
অনুবাদক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক

কয়েক মাস ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের করণীয় কী হওয়া উচিত—তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আগের কঠোর নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরালো করেছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত জানুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী ১ জুলাই থেকে ইরানি তেলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে। যদিও সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ এবং ইরান আবারও আলোচনার টেবিলে ফিরেছে। এরপরও গোটা বিষয়টি নিয়ে একটি উৎকট সংকটের কালো ছায়া ঘনিয়ে আসছে।
কিন্তু এমনটা হওয়া উচিত নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং ইসরায়েলের বেশির ভাগ বিশ্লেষক ও নীতিনির্ধারক মনে করেন, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তবে সেটিই হবে এই সংকটের সবচেয়ে খারাপ পরিণতি। কিন্তু বাস্তবতা হতে পারে উল্টো—সেটিই হয়তো হবে সবচেয়ে ভালো পরিণতি, যেটি মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে চলমান সংকট তিনটি পথে শেষ হতে পারে। প্রথমত, কূটনৈতিক তৎপরতা ও কঠোর নিষেধাজ্ঞার সম্মিলিত চাপে ইরান তার পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে পারে। কিন্তু এটি খুব একটা সম্ভাবনাময় দিক নয়। ইতিহাস বলছে, কোনো দেশ যদি পরমাণু অস্ত্র অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, তবে তাকে ফেরানো খুবই কঠিন।
কেবল নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কোনো দেশের পারমাণবিক কর্মসূচিকে থামানো যায় না। উত্তর কোরিয়ার কথাই ধরুন—অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা আর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও তারা পরমাণু অস্ত্র নির্মাণে সফল হয়েছে। যদি তেহরান মনে করে, তাদের নিরাপত্তার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র জরুরি, তবে নিষেধাজ্ঞা তাদের মত বদলাবে না। বরং, নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ইরান নিজেকে আরও অনিরাপদ মনে করতে পারে এবং এই আতঙ্ক থেকেই তারা ‘চূড়ান্ত প্রতিরোধের’ পথ হিসেবে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের দিকে আরও বেশি ঝুঁকে যেতে পারে।
দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি হলো—ইরান সরাসরি পারমাণবিক বোমা পরীক্ষা না করে একটি ‘ব্রেকআউট সক্ষমতা’ অর্জন করবে। অর্থাৎ, তারা চাইলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও পরীক্ষা করতে পারে—এমন অবস্থানে পৌঁছে যাবে। আর যদি, ইরান সেটি না করে, তবে তারাই প্রথম কোনো দেশ হবে না, যারা ব্যাপক পরমাণু কর্মসূচি গড়ে তুলেও সরাসরি বোমা তৈরি করবে না। জাপানের কথাই ধরুন, তাদের বিস্তৃত বেসামরিক পরমাণু অবকাঠামো আছে। বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, তারা চাইলে খুব অল্প সময়েই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে পারে। কিন্তু তারা এখনো সেই পথে যায়নি।
ইরানের বর্তমান শাসকদের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে ‘ব্রেকআউট সক্ষমতা’ বা চাইলেই দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা পর্যন্ত পৌঁছানো একটি কৌশল হতে পারে। এতে করে তাঁরা ‘কট্টরপন্থীদের’ আশ্বস্ত করতে পারবেন যে, তারা বোমা থাকার নিরাপত্তাসহ নানা সুবিধা পাবে, আবার এই সুবিধা ব্যবহার না করায় আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা বা নিন্দার ঝুঁকিও এড়ানো যাবে। কিন্তু সমস্যা হলো—এই কৌশল সব সময় পরিকল্পনামতো কাজ নাও করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের প্রধান উদ্বেগ হলো—অস্ত্রায়ন বা অস্ত্র তৈরির পর্যায়। তাই, যদি ইরান সরাসরি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত থাকে, তাহলে তারা হয়তো এই পরিস্থিতিকে মেনে নেবে। কিন্তু ইসরায়েল অনেক আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তাদের দৃষ্টিতে ইরানের উল্লেখযোগ্য সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতাও অগ্রহণযোগ্য হুমকি। ফলে এমন এক বাস্তবতা তৈরি হতে পারে যে, যেখানে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য অঙ্গীকার দিলেও পশ্চিমা শক্তিগুলো সন্তুষ্ট হবে, কিন্তু ইসরায়েল তা মানবে না। ‘ভার্চুয়াল পারমাণবিক অস্ত্র’ ইসরায়েলকে অতটা ভীত করবে না, যতটা আসল অস্ত্র করবে। সে কারণে তারা হয়তো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নস্যাৎ করতে ঝুঁকিপূর্ণ গুপ্ত হামলা, নাশকতা কিংবা বিজ্ঞানীদের হত্যা চালিয়ে যেতে থাকবে, যা ইরানকে বুঝিয়ে দিতে পারে যে, শুধু ব্রেকআউট সক্ষমতা যথেষ্ট নয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে অস্ত্রায়নই একমাত্র পথ।
তৃতীয় সম্ভাবনাটি হলো—ইরান তার বর্তমান পথেই এগিয়ে গিয়ে প্রকাশ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা চালাবে এবং নিজেকে পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসেবে ঘোষণা করবে। মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বারবার বলেছেন, এ ধরনের পরিণতি তাঁদের কাছে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তাঁদের ভাষায়, পারমাণবিক শক্তিধর ইরান হবে ভয়াবহ, অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। যখনই দেখে কোনো দেশ পরমাণু অস্ত্রের দিকে এগোচ্ছে, তখনই এ ধরনের ভাষা পরাশক্তিগুলো সাধারণত ব্যবহার করে। কিন্তু ইতিহাস বলছে, যতবারই কোনো দেশ সফলভাবে পরমাণু শক্তিধর হয়েছে, বাকি সদস্যরা শেষ পর্যন্ত তাদের মেনে নিয়েছে। বরং সামরিক শক্তির ভারসাম্য সৃষ্টি হওয়ায় নতুন পারমাণবিক রাষ্ট্রগুলো অনেক সময় আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্যে গত চার দশক ধরে ইসরায়েলের একক পারমাণবিক আধিপত্য বিরাজ করছে, সেটিই মূলত এই অঞ্চলের অস্থিরতার বড় উৎস। পৃথিবীর আর কোনো অঞ্চলে এমন কোনো একক ও অনিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র নেই। বর্তমান সংকটের জন্য ইরানের পরমাণু আকাঙ্ক্ষার চেয়ে ইসরায়েলের অস্ত্রভান্ডারই বেশি দায়ী। কারণ, ক্ষমতা থাকলে কেউ না কেউ সেটি প্রতিরোধ করতে চাইবেই। আশ্চর্যের বিষয় হলো, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এত দিনে কেবল একজন প্রতিদ্বন্দ্বীই মাঠে নেমেছে।
অবশ্য, এটি সহজেই বোঝা যায় যে, কেন ইসরায়েল এই অঞ্চলের একমাত্র পারমাণবিক শক্তি হিসেবে থেকে যেতে চায় এবং কেন তারা সেই অবস্থান রক্ষায় প্রয়োজনে বলপ্রয়োগেও প্রস্তুত। ইরাক পরমাণু শক্তিধর হয়ে উঠবে, এই আশঙ্কায় ১৯৮১ সালে ইসরায়েল দেশটির ওসিরাক পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করেছিল। ২০০৭ সালে একই ধরনের হামলা চালানো হয়েছিল সিরিয়ায়। এখন ইরানের ক্ষেত্রেও তেমন একটি পদক্ষেপ বিবেচনা করছে তারা। কিন্তু এসব পদক্ষেপ, স্বল্পমেয়াদে ইসরায়েলকে পারমাণবিক আধিপত্য বজায় রাখতে সাহায্য করলেও এবং দীর্ঘ মেয়াদে একটি অসম সামরিক ভারসাম্যকে টিকিয়ে রাখলেও সেটি শেষ পর্যন্ত টেকসই হবে না।
ইসরায়েল তার সম্ভাব্য পারমাণবিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাতে পারে—এই প্রমাণিত বাস্তবতা ইসরায়েলের প্রতিপক্ষদের এমন এক মানসিকতায় পৌঁছে দিয়েছে, যেখানে তারা নিজেরাই এমন প্রতিরোধ সক্ষমতা গড়ে তুলতে আগ্রহী, যাতে ভবিষ্যতে ইসরায়েলের হাতে আরেকটি আকস্মিক হামলার শিকার হতে না হয়। এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনা আসলে কোনো নতুন সংকটের সূচনা নয়, বরং মধ্যপ্রাচ্যে বহু দশক ধরে চলতে থাকা পারমাণবিক টানাপোড়েনের শেষ অধ্যায়—যার অবসান ঘটবে কেবল তখনই, যখন এই অঞ্চলে সামরিক ভারসাম্য ফিরে আসবে।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারে—এই আশঙ্কা অনেক বেশি মাত্রায় অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরা হয়েছে। এর একটা বড় কারণ হলো—এই বিতর্ক নিয়ে ভুল দৃষ্টিভঙ্গি ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাষ্ট্রগুলো সাধারণত যেভাবে আচরণ করে, সে সম্পর্কে মৌলিক ভুল ধারণা। সবচেয়ে প্রচলিত এবং গভীর উদ্বেগগুলোর একটি হলো—ইরানি শাসকগোষ্ঠী নাকি ‘স্বভাবগতভাবে অযৌক্তিক বা উন্মাদ’! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—ইরানি নীতিনির্ধারকেরা ‘পাগল মৌলবাদী’ নয়, বরং সম্পূর্ণ সচেতন এবং বাস্তববাদী আয়াতুল্লাহরা নিজেদের টিকে থাকার ব্যাপারে অন্য যেকোনো দেশের নেতার মতোই চিন্তিত।
তাঁরা উসকানিমূলক ও ঘৃণামূলক বক্তব্য দিলেও, আত্মঘাতী কোনো প্রবণতা তাঁদের মধ্যে নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা যদি ধরে নেন যে, ইরানের নেতারা আত্মবিনাশের দিকে এগোচ্ছে, তাহলে সেটি হবে ভয়াবহ একটি ভুল হিসাব। তবুও, মার্কিন ও ইসরায়েলি অনেক বিশ্লেষক এবং কর্মকর্তা ইরানকে ‘বিচারবুদ্ধিহীন’ হিসেবে তুলে ধরেন। এর ফলে তারা এমন যুক্তি দাঁড় করাতে পারেন যে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিরোধমূলক ভারসাম্য নাকি ইরানের ক্ষেত্রে কাজ করবে না। তাঁদের মতে, ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্র পায়, তাহলে তাঁরা দ্বিধা না করেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথম হামলা চালাবে। এমনকি, যদি তাতে ইরান ভয়াবহ পাল্টা হামলার শিকার হয় এবং নিজেও ধ্বংস হয়ে যায় এরপরও নাকি তারা হামলা চালাবে!
ইরানের আসল অভিপ্রায় নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা না গেলেও, এটি অনেক বেশি বাস্তবসম্মত যে, তারা যদি পারমাণবিক অস্ত্র চায়ও, তাহলে সেটি নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে, আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যে নয়। ইরান হয়তো আলোচনায় অনমনীয় এবং নিষেধাজ্ঞার মুখে জেদি আচরণ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের আচরণ নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লক্ষ্যেই আবর্তিত হয়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তেল নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করার পর ইরান প্রচুর হুমকি দিলেও, শেষ পর্যন্ত হরমুজ প্রণালি বন্ধ করেনি। কারণ, তারা জানে—এমন পদক্ষেপ নিলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক এবং ধ্বংসাত্মক জবাব আসত। এর মানে হচ্ছে, ইরানি নেতৃত্ব কথায় যতটা আগ্রাসী, কাজে ঠিক ততটাই হিসাবি।
তবুও, অনেক পর্যবেক্ষক ও নীতিনির্ধারক—যাঁরা মনে করেন ইরানি সরকার যুক্তিসংগতভাবে কাজ করে—আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, পারমাণবিক অস্ত্র পেলে ইরান আরও সাহসী হয়ে উঠবে। তেহরানের হাতে একটি পরমাণু অস্ত্র চলে আসবে, যা তাকে আরও আগ্রাসী আচরণ করতে এবং সন্ত্রাসবাদে সহায়তা বাড়াতে উৎসাহিত করতে পারে। কিছু বিশ্লেষক তো এমনটাও আশঙ্কা করেন যে, ইরান সরাসরি সন্ত্রাসীদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র তুলে দেবে!
তবে এসব আশঙ্কার একটা বড় সমস্যা হলো—এগুলো ঐতিহাসিক বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ১৯৪৫ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যেসব দেশ পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করেছে, তাদের আচরণে এসব আশঙ্কার প্রমাণ মেলে না। ইতিহাস বলছে, কোনো দেশ যখন পারমাণবিক বোমা বানায়, তখন তারা নিজেরাই আরও সতর্ক হয়ে পড়ে। কারণ তারা বুঝে যায়, এখন তারা বড় শক্তিধর দেশগুলোর নজরে একটি সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। এই উপলব্ধি তাদের আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করে।
উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬৪ সালে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের পর মাওবাদী চীন অনেক কম উগ্র হয়ে ওঠে। একইভাবে, ভারত ও পাকিস্তানও পারমাণবিক শক্তিধর হওয়ার পর থেকে অনেক বেশি সতর্ক আচরণ করে আসছে। ফলে ইরান এই ইতিহাসের বিপরীতে হাঁটবে—এমন সম্ভাবনা খুব কম।
আর সন্ত্রাসীদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র তুলে দেওয়ার যে আশঙ্কা, সেটিও বাস্তবে অত্যন্ত বিপজ্জনক ও দুরূহ। কোনো দেশ চাইলে পারমাণবিক অস্ত্র স্থানান্তর করতে পারবে না, কারণ তাতে ধরা পড়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারির ক্ষমতা এবং পারমাণবিক উপাদানের উৎস শনাক্ত করার প্রযুক্তি এখন এতটাই উন্নত যে, কোনো গোপন হস্তান্তর নজর এড়ানোর সুযোগ নেই। এ ছাড়া, যেসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে কোনো রাষ্ট্র পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, তাদের আচরণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ বা পূর্বাভাস দেওয়া কখনোই সম্ভব নয়। ফলে, কোনো রাষ্ট্র যখন একবার পারমাণবিক অস্ত্র বানিয়ে ফেলে, তখন তার পক্ষে সেই অস্ত্র নিজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে দেওয়ার মতো বোকামি করার সম্ভাবনা থাকে না। কারণ এটি বানানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ঝুঁকিপূর্ণ—যা এমন কোনো পক্ষের হাতে তুলে দেওয়া বোকামি হবে, যাদের বিশ্বাস করা যায় না কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
আরেকটি বহুল চর্চিত আশঙ্কা হলো, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র পেলে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও একে একে পারমাণবিক শক্তি অর্জনের পথে হাঁটবে এবং এতে পুরো অঞ্চলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পারমাণবিক যুগ প্রায় ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও এই আশঙ্কা সত্যি হয়নি। ‘প্রোলিফারেশন’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ হলো—দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার। এমন কিছু এখনো পর্যন্ত হয়নি। বরং ১৯৭০ সালের পর থেকে নতুন পারমাণবিক শক্তিধর দেশের আবির্ভাবের হার অনেক কমে গেছে।
এই ধারা এখন হঠাৎ করে পাল্টে যাবে, এমন কোনো যুক্তি নেই। ইরান যদি ১৯৪৫ সালের পর মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হয়, সেটি মোটেও ভয়াবহ ধারাবাহিকতার সূচনা হবে না। ইসরায়েল ১৯৬০-এর দশকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তখন তারা আশপাশের বহু দেশের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িত ছিল। ইসরায়েলের পারমাণবিক অস্ত্র আরব বিশ্বের জন্য অনেক বড় হুমকি ছিল, যা ইরানের বর্তমান কর্মসূচির চেয়ে বহুগুণ ভয়ানক। যদি সেই সময় একটি পারমাণবিক ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু না করতে পারে, তবে এখন একটি পারমাণবিক ইরান তার করবে—এমন ভাবার কোনো কারণ নেই।
১৯৯১ সালে ঐতিহাসিক বৈরী ভারত ও পাকিস্তান একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যেখানে তারা একে অপরের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা না করার অঙ্গীকার করে। তারা বুঝতে পেরেছিল, প্রতিপক্ষের পারমাণবিক সক্ষমতা যতটা ভয়ংকর, তার চেয়েও বেশি বিপজ্জনক হলো সেই সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো থেকে উদ্ভূত অস্থিরতা।
তখন থেকে, চরম উত্তেজনা ও ঝুঁকিপূর্ণ উসকানির মুখেও এই দুই দেশ সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়নি। ইসরায়েল ও ইরান এই উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিতে পারে। যদি ইরান পারমাণবিক শক্তিধর হয়, তাহলে ইসরায়েল ও ইরান পরস্পরকে প্রতিহত করবে, যেভাবে সব পারমাণবিক শক্তিধর দেশ একে অপরকে প্রতিহত করে এসেছে। ইতিহাসে কখনো দুটি পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ হয়নি। ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্রের দোরগোড়া পেরিয়ে যায়, তাহলে সেই পারমাণবিক প্রতিরোধ কাজ করবে, এমনকি ইরানের অস্ত্রাগার ছোট হলেও। তখন আর মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশের নিজস্ব পারমাণবিক শক্তি অর্জনের তাগিদ থাকবে না, এবং চলমান সংকটও প্রশমিত হবে। ফলাফল হিসেবে, আজকের তুলনায় সেই মধ্যপ্রাচ্য আরও স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।
এই কারণেই, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়ার দরকার নেই। ইরান ও আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সংলাপ চলতে থাকা উচিত, কারণ খোলামেলা যোগাযোগ পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি পারমাণবিক ইরানের সঙ্গে সহাবস্থান সহজ করে তুলবে। তবে ইরানের ওপর আরোপিত বর্তমান নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া উচিত—এই নিষেধাজ্ঞাগুলো সাধারণ ইরানিদের কষ্ট দিচ্ছে, কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্দেশ্য সাধন করছে না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আরব বিশ্ব, ইউরোপ, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক এবং সাধারণ নাগরিকদের আশ্বস্ত হওয়া উচিত—ইতিহাস দেখিয়েছে, যেখানে পারমাণবিক শক্তি এসেছে, সেখানেই এসেছে স্থিতিশীলতা। পারমাণবিক অস্ত্রের বেলায়, অতীতের মতো এখনো সত্য—অস্ত্র বেশি মানেই বেশি স্থিতিশীলতার সম্ভাবনা!
অনুবাদক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক

দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
১৪ ঘণ্টা আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা
১৭ ঘণ্টা আগে
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র এই পরিবারের সদস্য। এই পরিবারের প্রভাব ভারতের রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
তাদের এই উত্তরাধিকার শুধু ইতিহাসে নয়, রাজনীতির মানসেও এক ধারণা গভীরভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব জন্মগত অধিকারও হতে পারে। এই চিন্তাই ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের রাজনীতির প্রতিটি দলে, প্রতিটি প্রদেশে, আর প্রতিটি স্তরে।
কেবল নেহরু–গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধেই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তোলা হলেও, রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা বংশানুক্রমিক রাজনীতি আসলে ভারতের প্রায় সব দলেই দেখা যায়। জনতা দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বিজয়নন্দ (বিজু) পট্টনায়কের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নবীন পট্টনায়ক লোকসভায় বাবার খালি আসনে নির্বাচিত হন। পরে নবীন বাবার নাম অনুসারে ‘বিজু জনতা দল’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিজুর পথ অনুসরণ করে নবীন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী হন এবং দুই দশকেরও বেশি সময় রাজ্য পরিচালনা করেন।
মহারাষ্ট্রের দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে মৃত্যুর আগে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন তাঁর ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে। উদ্ধবের ছেলে আদিত্য ঠাকরেও এখন রাজনীতির মঞ্চে সক্রিয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অপেক্ষায়। একই ধারা দেখা যায় সমাজবাদী পার্টিতেও। দলের প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁর ছেলে অখিলেশ যাদবও সেই পদে আসেন। এখন তিনি দলের সভাপতি ও এমপি। বিহারের লোক জনশক্তি পার্টিতেও একই চিত্র। প্রয়াত নেতা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে চিরাগ পাসওয়ান দলের নেতৃত্বে এসেছেন।
ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাইরেও এই বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রভাব স্পষ্ট। জম্মু–কাশ্মীরে তিন প্রজন্ম ধরে আবদুল্লাহ পরিবার রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর বিরোধী শিবিরে নেতৃত্বে আছে মুফতি পরিবারের দুই প্রজন্ম। পাঞ্জাবে দীর্ঘদিন শিরোমণি আকালি দল পরিচালনা করেছেন প্রকাশ সিং বাদল। এখন তাঁর ছেলে সুখবীর বাদল দলের প্রধান। তেলেঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ছেলে ও মেয়ে—দুজনেই এখন উত্তরাধিকারের লড়াইয়ে নেমেছেন। তামিলনাড়ুতে প্রয়াত এম করুণানিধির পরিবার এখনো ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে) দলের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর ছেলে এমকে স্ট্যালিন এখন মুখ্যমন্ত্রী, আর তাঁর নাতিকে ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এটি শুধু কিছু বিখ্যাত পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের শাসনব্যবস্থার গাঁথুনিতেই এই পারিবারিক রাজনীতি বীজ গভীরভাবে বোনা। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৪৯টি পরিবার থেকে একাধিক সদস্য রাজ্যের আইনসভায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ১১ জন মন্ত্রী ও ৯ জন মুখ্যমন্ত্রীরও পারিবারিক রাজনৈতিক সংযোগ আছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪৫ বছরের নিচে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কেউ না কেউ রাজনীতিতে ছিলেন। তরুণ সাংসদদের প্রায় সবাই কোনো আত্মীয়—সাধারণত বাবা বা মা—থেকে আসন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সব দলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নারী সাংসদদের ৭০ শতাংশ বংশানুক্রমিক রাজনীতির ফল। এমনকি যেসব নারী রাজনীতিকের সরাসরি উত্তরসূরি নেই, যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুমারী মায়াবতী, তাঁরাও তাঁদের ভাতিজাদের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তুলছেন।
ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, এই বংশানুক্রমিক রাজনীতি গোটা উপমহাদেশেই দেখা যায়। পাকিস্তানে ভুট্টো ও শরিফ পরিবার, বাংলাদেশে শেখ ও জিয়া পরিবার, শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকে ও রাজাপক্ষে পরিবার। তবে ভারতের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে এই প্রবণতা কিছুটা বেমানান বলেই মনে হয়। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কেন ভারত এত গভীরভাবে এই পারিবারিক রাজনীতি মেনে নিয়েছে?
এর একটি কারণ হতে পারে—পরিবার একটি কার্যকর রাজনৈতিক ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে কাজ করে। পরিচিত নামধারী প্রার্থীদের ভোটারদের মনোযোগ পেতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। যদি ভোটাররা কোনো প্রার্থীর বাবা, খালা বা ভাইকে একসময় গ্রহণ করে থাকেন, তবে তাঁরা সম্ভবত একই পরিবারের নতুন প্রার্থীকেও সহজেই মেনে নেন। এভাবে তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য আলাদা করে কিছু করতে হয় না। ভারতের অতীত প্রেক্ষাপটে, যখন সাক্ষরতার হার ও গণমাধ্যমের প্রভাব কম ছিল, তখন এই বিষয়টি আরও বেশি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল।
কিন্তু সাক্ষরতার হার যখন ৮১ শতাংশের কাছাকাছি এবং মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, তখন বোঝা যায় অন্য আরও কিছু কারণ আছে এর পেছনে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়তো—দলীয় রাজনীতির ভেতরকার চর্চা ও গতিপ্রকৃতি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও প্রায় অস্বচ্ছ। প্রায় সব দলেই সিদ্ধান্ত নেয় একদল ক্ষুদ্র প্রভাবশালী গোষ্ঠী, কখনো বা একক কোনো নেতা, যাদের আবার পরিবর্তন আনাতে আগ্রহ কম। ফলে, যোগ্যতার চেয়ে পারিবারিক সম্পর্কই সাধারণত বেশি মূল্য পায়।
এ অবস্থায় প্রার্থী হতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়, যা নতুনদের জন্য বাধা। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারগুলোর হাতে থাকে বিপুল অর্থনৈতিক পুঁজি, যা তারা বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকে জমিয়েছে। তাদের আছে তৈরি নির্বাচনী কাঠামো—দাতা, কর্মী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক। এতে করে নতুন রাজনীতিকদের তুলনায় তাদের সুবিধা অনেক বেশি।
ভারতের এই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পেছনে সাংস্কৃতিক কারণও আছে। আধুনিকায়নের অগ্রগতি সত্ত্বেও সমাজে এখনো জমিদারি মানসিকতা টিকে আছে। আগের দিনে যেভাবে স্থানীয় জমিদার বা রাজাদের প্রতি আনুগত্য দেখানো হতো, এখন সেই শ্রদ্ধা দেওয়া হয় রাজনৈতিক নেতাদের। এতে মনে হয় রাজনৈতিক অভিজাতরা যেন অন্য শ্রেণির মানুষ, যাদের পরিবারই ক্ষমতার উপযুক্ত। এই অহংবোধ এতটাই গভীর যে দুর্বল কর্মক্ষমতাও তাদের নেতৃত্ব থেকে সরাতে পারে না। বারবার নির্বাচনে হারলেও তারা দলীয় নেতৃত্ব ধরে রাখে।
এ ধরনের রাজনীতি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ধারিত হয় বংশপরম্পরায়, যোগ্যতা, নিষ্ঠা বা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বদলে, তখন শাসনব্যবস্থার মান নেমে যায়। সীমিত প্রতিভার ভান্ডার থেকে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া কখনোই সুবিধাজনক নয়। আরও খারাপ হয় যখন প্রার্থীর একমাত্র যোগ্যতা হয় তার পদবি। এমন নেতারা সাধারণ মানুষের বাস্তব চ্যালেঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। ফলে জনগণের প্রয়োজন বুঝে কাজ করার সক্ষমতাও কম থাকে। তবুও তাদের ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না।
এখন সময় এসেছে ভারতকে ‘রাজবংশের’ রাজনীতি ছাড়িয়ে যোগ্যতাভিত্তিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার। এর জন্য প্রয়োজন গভীর সংস্কার—আইন করে মেয়াদসীমা নির্ধারণ, দলীয় পর্যায়ে প্রকৃত নির্বাচনের ব্যবস্থা, এবং ভোটারদের সচেতন করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা বাছাইয়ের প্রেরণা জাগানো। যত দিন ভারতীয় রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য—‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য’—পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র এই পরিবারের সদস্য। এই পরিবারের প্রভাব ভারতের রাজনীতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।
তাদের এই উত্তরাধিকার শুধু ইতিহাসে নয়, রাজনীতির মানসেও এক ধারণা গভীরভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব জন্মগত অধিকারও হতে পারে। এই চিন্তাই ছড়িয়ে পড়েছে ভারতের রাজনীতির প্রতিটি দলে, প্রতিটি প্রদেশে, আর প্রতিটি স্তরে।
কেবল নেহরু–গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধেই পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তোলা হলেও, রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা বংশানুক্রমিক রাজনীতি আসলে ভারতের প্রায় সব দলেই দেখা যায়। জনতা দল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা বিজয়নন্দ (বিজু) পট্টনায়কের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে নবীন পট্টনায়ক লোকসভায় বাবার খালি আসনে নির্বাচিত হন। পরে নবীন বাবার নাম অনুসারে ‘বিজু জনতা দল’ প্রতিষ্ঠা করেন। বিজুর পথ অনুসরণ করে নবীন ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী হন এবং দুই দশকেরও বেশি সময় রাজ্য পরিচালনা করেন।
মহারাষ্ট্রের দল শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে মৃত্যুর আগে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন তাঁর ছেলে উদ্ধব ঠাকরেকে। উদ্ধবের ছেলে আদিত্য ঠাকরেও এখন রাজনীতির মঞ্চে সক্রিয়, ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের অপেক্ষায়। একই ধারা দেখা যায় সমাজবাদী পার্টিতেও। দলের প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিং যাদব উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পরে তাঁর ছেলে অখিলেশ যাদবও সেই পদে আসেন। এখন তিনি দলের সভাপতি ও এমপি। বিহারের লোক জনশক্তি পার্টিতেও একই চিত্র। প্রয়াত নেতা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে চিরাগ পাসওয়ান দলের নেতৃত্বে এসেছেন।
ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাইরেও এই বংশানুক্রমিক রাজনীতির প্রভাব স্পষ্ট। জম্মু–কাশ্মীরে তিন প্রজন্ম ধরে আবদুল্লাহ পরিবার রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, আর বিরোধী শিবিরে নেতৃত্বে আছে মুফতি পরিবারের দুই প্রজন্ম। পাঞ্জাবে দীর্ঘদিন শিরোমণি আকালি দল পরিচালনা করেছেন প্রকাশ সিং বাদল। এখন তাঁর ছেলে সুখবীর বাদল দলের প্রধান। তেলেঙ্গানায় ভারত রাষ্ট্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের ছেলে ও মেয়ে—দুজনেই এখন উত্তরাধিকারের লড়াইয়ে নেমেছেন। তামিলনাড়ুতে প্রয়াত এম করুণানিধির পরিবার এখনো ক্ষমতাসীন দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজাগাম (ডিএমকে) দলের নিয়ন্ত্রণে। তাঁর ছেলে এমকে স্ট্যালিন এখন মুখ্যমন্ত্রী, আর তাঁর নাতিকে ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এটি শুধু কিছু বিখ্যাত পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ভারতের শাসনব্যবস্থার গাঁথুনিতেই এই পারিবারিক রাজনীতি বীজ গভীরভাবে বোনা। সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৪৯টি পরিবার থেকে একাধিক সদস্য রাজ্যের আইনসভায় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ১১ জন মন্ত্রী ও ৯ জন মুখ্যমন্ত্রীরও পারিবারিক রাজনৈতিক সংযোগ আছে। ২০০৯ সালের নির্বাচনের এক গবেষণায় দেখা যায়, ৪৫ বছরের নিচে দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় কেউ না কেউ রাজনীতিতে ছিলেন। তরুণ সাংসদদের প্রায় সবাই কোনো আত্মীয়—সাধারণত বাবা বা মা—থেকে আসন উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। সব দলের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, নারী সাংসদদের ৭০ শতাংশ বংশানুক্রমিক রাজনীতির ফল। এমনকি যেসব নারী রাজনীতিকের সরাসরি উত্তরসূরি নেই, যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কুমারী মায়াবতী, তাঁরাও তাঁদের ভাতিজাদের ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে গড়ে তুলছেন।
ন্যায্যভাবে বলতে গেলে, এই বংশানুক্রমিক রাজনীতি গোটা উপমহাদেশেই দেখা যায়। পাকিস্তানে ভুট্টো ও শরিফ পরিবার, বাংলাদেশে শেখ ও জিয়া পরিবার, শ্রীলঙ্কায় বন্দরনায়েকে ও রাজাপক্ষে পরিবার। তবে ভারতের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রে এই প্রবণতা কিছুটা বেমানান বলেই মনে হয়। প্রশ্ন জাগে, তাহলে কেন ভারত এত গভীরভাবে এই পারিবারিক রাজনীতি মেনে নিয়েছে?
এর একটি কারণ হতে পারে—পরিবার একটি কার্যকর রাজনৈতিক ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে কাজ করে। পরিচিত নামধারী প্রার্থীদের ভোটারদের মনোযোগ পেতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। যদি ভোটাররা কোনো প্রার্থীর বাবা, খালা বা ভাইকে একসময় গ্রহণ করে থাকেন, তবে তাঁরা সম্ভবত একই পরিবারের নতুন প্রার্থীকেও সহজেই মেনে নেন। এভাবে তাদের বিশ্বাস অর্জনের জন্য আলাদা করে কিছু করতে হয় না। ভারতের অতীত প্রেক্ষাপটে, যখন সাক্ষরতার হার ও গণমাধ্যমের প্রভাব কম ছিল, তখন এই বিষয়টি আরও বেশি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল।
কিন্তু সাক্ষরতার হার যখন ৮১ শতাংশের কাছাকাছি এবং মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার ৯৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে, তখন বোঝা যায় অন্য আরও কিছু কারণ আছে এর পেছনে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়তো—দলীয় রাজনীতির ভেতরকার চর্চা ও গতিপ্রকৃতি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো মূলত ব্যক্তিকেন্দ্রিক। নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও প্রায় অস্বচ্ছ। প্রায় সব দলেই সিদ্ধান্ত নেয় একদল ক্ষুদ্র প্রভাবশালী গোষ্ঠী, কখনো বা একক কোনো নেতা, যাদের আবার পরিবর্তন আনাতে আগ্রহ কম। ফলে, যোগ্যতার চেয়ে পারিবারিক সম্পর্কই সাধারণত বেশি মূল্য পায়।
এ অবস্থায় প্রার্থী হতে গেলে বিপুল অর্থের প্রয়োজন হয়, যা নতুনদের জন্য বাধা। কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারগুলোর হাতে থাকে বিপুল অর্থনৈতিক পুঁজি, যা তারা বছরের পর বছর ক্ষমতায় থেকে জমিয়েছে। তাদের আছে তৈরি নির্বাচনী কাঠামো—দাতা, কর্মী ও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক। এতে করে নতুন রাজনীতিকদের তুলনায় তাদের সুবিধা অনেক বেশি।
ভারতের এই পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির পেছনে সাংস্কৃতিক কারণও আছে। আধুনিকায়নের অগ্রগতি সত্ত্বেও সমাজে এখনো জমিদারি মানসিকতা টিকে আছে। আগের দিনে যেভাবে স্থানীয় জমিদার বা রাজাদের প্রতি আনুগত্য দেখানো হতো, এখন সেই শ্রদ্ধা দেওয়া হয় রাজনৈতিক নেতাদের। এতে মনে হয় রাজনৈতিক অভিজাতরা যেন অন্য শ্রেণির মানুষ, যাদের পরিবারই ক্ষমতার উপযুক্ত। এই অহংবোধ এতটাই গভীর যে দুর্বল কর্মক্ষমতাও তাদের নেতৃত্ব থেকে সরাতে পারে না। বারবার নির্বাচনে হারলেও তারা দলীয় নেতৃত্ব ধরে রাখে।
এ ধরনের রাজনীতি ভারতের গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর হুমকি। যখন রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্ধারিত হয় বংশপরম্পরায়, যোগ্যতা, নিষ্ঠা বা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বদলে, তখন শাসনব্যবস্থার মান নেমে যায়। সীমিত প্রতিভার ভান্ডার থেকে নেতৃত্ব বেছে নেওয়া কখনোই সুবিধাজনক নয়। আরও খারাপ হয় যখন প্রার্থীর একমাত্র যোগ্যতা হয় তার পদবি। এমন নেতারা সাধারণ মানুষের বাস্তব চ্যালেঞ্জ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন। ফলে জনগণের প্রয়োজন বুঝে কাজ করার সক্ষমতাও কম থাকে। তবুও তাদের ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত হয় না।
এখন সময় এসেছে ভারতকে ‘রাজবংশের’ রাজনীতি ছাড়িয়ে যোগ্যতাভিত্তিক রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনার। এর জন্য প্রয়োজন গভীর সংস্কার—আইন করে মেয়াদসীমা নির্ধারণ, দলীয় পর্যায়ে প্রকৃত নির্বাচনের ব্যবস্থা, এবং ভোটারদের সচেতন করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতা বাছাইয়ের প্রেরণা জাগানো। যত দিন ভারতীয় রাজনীতি পরিবারকেন্দ্রিক থাকবে, তত দিন পর্যন্ত গণতন্ত্রের আসল লক্ষ্য—‘জনগণের সরকার, জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য’—পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে না।
প্রজেক্ট সিন্ডিকেট থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

কয়েক মাস ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের করণীয় কী হওয়া উচিত—তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আগের কঠোর নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরালো করেছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত জানুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী ১ জুলাই থেকে ইরানি তেলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর...
২১ জুন ২০২৫
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা
১৭ ঘণ্টা আগে
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো সুদানি আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) সমর্থন দিয়েছে।
আরব আমিরাত এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রিম কেতায়েত বলেছেন, এটি ‘নোংরা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা।’ তাঁর দাবি, সুদানের সেনাবাহিনীর বর্বরতা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই দুই বছর ধরে গৃহযুদ্ধে লড়াইরত আরএসএফ।
বিষয়টি সত্যি যে, সুদানি সেনাবাহিনীও যুদ্ধাপরাধ করেছে। কিন্তু আরএসএফ–এর প্রতি আমিরাতের সমর্থন নিয়ে কারও তেমন সন্দেহ নেই। তবে তারপরও আইনি জটিলতার কারণে মামলাটির সামনে এগোনোর সম্ভাবনা কম। তবে এই ঘটনা একটি প্রবণতা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আমিরাত এমন সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে, যারা হয়—রাষ্ট্র দখল করতে চায়, নয়তো সেটিকে ভাঙতে চায়।
আধুনিক আরব বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু এখন সৌদি আরব ও আমিরাত। দুই দেশই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ও প্রভাবশালী কূটনৈতিক শক্তি। উভয়ই নিজেদের বহু মেরু বিশ্বের স্বাধীন শক্তি হিসেবে দেখে। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের পথ আলাদা। সৌদি আরব স্থিতিশীলতাকে মূল স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে এবং (যদিও সব সময় নয়) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার চেষ্টা করে।
অন্যদিকে, সাতটি আমিরাত নিয়ে গঠিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (যার মধ্যে দুবাই আছে এবং সবচেয়ে ধনী আবুধাবি) নীতিনির্ধারণ ভিন্ন ধাঁচের। লিবিয়ায় তারা বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। হাফতারই লিবিয়ায় জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিলেন। ইয়েমেনে আমিরাত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে সমর্থন দিচ্ছে। সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন দুই অঞ্চল—পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে দেশটি।
এসব নীতির অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। সুদানে আরএসএফ–কে সমর্থন দিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তো বটেই, চীন ও শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ করেছে। ফলে বিষয়টি সামান্য কিছু নয়।
আঞ্চলিক ইস্যুতে নিজেদের নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমিরাতের কর্মকর্তারা প্রায়ই বলেন, ‘এই নীতি আমাদের নয়।’ আর এর ধারাবাহিকতায় দেশটি আরএসএফ–কে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে জাতিসংঘের তদন্ত ও স্যাটেলাইট চিত্র প্রমাণ করেছে, তারা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও দেশটি আরএসএফকে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল।
আমিরাতের এক কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন, হাফতারের প্রতি তাদের সমর্থন ছিল ‘মিত্রদের পূর্ণ সম্মতি সাপেক্ষেই।’ যদিও লিবিয়ার বেশির ভাগ মিত্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, হাফতারের বিরোধী ছিল।
আবুধাবিতে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা মনে করেন, এই নীতির পেছনে আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেউ কেউ বলেন, সুদানের স্বর্ণ খনির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেতেই হয়তো আমিরাত আগ্রহী। কিন্তু এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয়। কারণ সুদানের বেশির ভাগ স্বর্ণ এরই মধ্যে আমিরাতে রপ্তানি হচ্ছে। আবার অনেকে মনে করেন, খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগে অগ্রগতি আনতে আমিরাত সুদানে কৃষিজমি ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশাধিকার চায়; কারণ দেশটির ৯০ শতাংশ খাদ্য আমদানিনির্ভর।
তবে কেবল বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা ভুল হবে। আমিরাতের প্রধান প্রেরণা আদর্শিক। প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর তীব্র বিরোধী। তিনি এবং তাঁর পরিবার চান আরব বিশ্বে কাতার ও তুরস্কের প্রভাব কমাতে। কারণ, এই দুই দেশই মুসলিম বিশ্বে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর বড় সমর্থক। একই সঙ্গে আরব আমিরাত সৌদি আরবের প্রভাবের বাইরে নিজেদের আলাদা প্রভাব বলয় গড়ে তুলতে চায়।
ইয়েমেনে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই আমিরাত ২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়। সে সময় রিয়াদ হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। হুতি ইরান-সমর্থিত শিয়া গোষ্ঠী। রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বড় একটি অংশ তাদের দখলে। সৌদি ও আমিরাত কেউই চায়নি—ইরানের মদদপুষ্ট কোনো গোষ্ঠী আরব উপদ্বীপে শক্ত ঘাঁটি পাক। তবে আমিরাত চেয়েছিল নিজেদের অনুগত মিত্র তৈরি করতে। কারণ, তাদের কাছে সৌদি আরবও বিশ্বাসযোগ্য মিত্র নয়। কারণ, সৌদিরা ইসলামি রাজনৈতিক দল ইসলাহের বেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র, যা আবার মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা।
ইয়েমেন ১৯৯০ সালের আগে পর্যন্ত কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ছিল। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে আমিরাতের নীতি বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই জোট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সুফলও বয়ে আনতে পারে। আবুধাবিভিত্তিক রাষ্ট্রীয় শিপিং জায়ান্ট এডি পোর্টস আশা করছে, তারা দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেন বন্দরের পরিচালনার অধিকার পাবে। আমিরাতের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির স্বার্থে তারা আঞ্চলিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, তবে এটাই দেশটির মূল উদ্দেশ্য নয়।
২০১৯ সালে ওমর আল-বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সুদানে কয়েক দশকের ইসলামপন্থী শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু সেনাবাহিনীতে এখনো ইসলামপন্থী কর্মকর্তাদের প্রভাব রয়েছে। এ কারণেই শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দ্রুত সমর্থন দেন আরএসএফ–কে। আরেকটি কারণ ছিল, মিলিশিয়া নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত—ইয়েমেনে যুদ্ধের সময় আরব আমিরাতকে সহায়তা দিতে হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিলেন। শেখ মুহাম্মদ হয়তো সেই সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চেয়েছেন। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি এই লোকদের প্রতি একধরনের আনুগত্য অনুভব করেন।’
আমিরাতের দাবি—তারা শুধু বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে এগোচ্ছে। যুক্তিটা কিছুটা গ্রহণযোগ্যও। ইয়েমেনে তাদের মিত্ররা সৌদি সমর্থিত বাহিনীর চেয়ে দক্ষ যোদ্ধা প্রমাণিত হয়েছিল। লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারও যতটা বৈধ বলে শোনা যায়, বাস্তবে তা নয়—সেখানে প্রভাবশালী হলো মিলিশিয়ারা।
তবু এসব শক্তির প্রতি সমর্থন খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। ২০১৮ সালে আমিরাত দামেস্কে দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং অন্যান্য দেশকেও বাশার আল-আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানায়। শেখ মুহাম্মদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেন, ‘দশ বছরের হতাশা থেকেই এই যোগাযোগ শুরু হয়েছিল।’ তাঁর মতে, সিরিয়ার একনায়ককে একঘরে করে রাখা কাজে আসেনি; তাই তাঁকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা উচিত ছিল। সেই চেষ্টা করে অবশ্য কোনো ফল পায়নি আমিরাত।
আসাদ গত ডিসেম্বরে মস্কো পালিয়ে যান। সিরিয়ার ইসলামপন্থী নতুন সরকারের প্রতি আমিরাতের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো সন্দেহ প্রবণ। এমনকি অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের তুলনায়ও অনেক বেশি। তবে এখনো নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আমিরাত।
এর আগে, হাফতার ত্রিপোলি দখলের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন। আরএসএফও গত মাসে সুদানের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়েছে। বলা যায়, দুই ক্ষেত্রেই আমিরাতের ভূমিকা উল্টো ফল দিয়েছে। এতে তুরস্ক সুদানি সেনাবাহিনী ও ত্রিপোলির সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার আরও বেশি সুযোগ পেয়েছে। ওই দুই পক্ষই এখন তুর্কি ড্রোনের ওপর নির্ভর করছে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে।
এসব নীতি আমিরাতের সুনামেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত মাসে ওয়াশিংটনে কয়েক দফা বৈঠকে তিন কংগ্রেস সদস্যের সহযোগী আমিরাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন। যদিও তা আপাতত কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রচলিত আছে যে, আরএসএফ-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করা শুধু অপরাধ নয়, বরং এক ভয়াবহ ভুল।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানো সুদানি আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসকে (আরএসএফ) সমর্থন দিয়েছে।
আরব আমিরাত এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা রিম কেতায়েত বলেছেন, এটি ‘নোংরা ও ভিত্তিহীন প্রচারণা।’ তাঁর দাবি, সুদানের সেনাবাহিনীর বর্বরতা থেকে দৃষ্টি ফেরাতে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে। এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই দুই বছর ধরে গৃহযুদ্ধে লড়াইরত আরএসএফ।
বিষয়টি সত্যি যে, সুদানি সেনাবাহিনীও যুদ্ধাপরাধ করেছে। কিন্তু আরএসএফ–এর প্রতি আমিরাতের সমর্থন নিয়ে কারও তেমন সন্দেহ নেই। তবে তারপরও আইনি জটিলতার কারণে মামলাটির সামনে এগোনোর সম্ভাবনা কম। তবে এই ঘটনা একটি প্রবণতা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আমিরাত এমন সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সমর্থন দিচ্ছে, যারা হয়—রাষ্ট্র দখল করতে চায়, নয়তো সেটিকে ভাঙতে চায়।
আধুনিক আরব বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু এখন সৌদি আরব ও আমিরাত। দুই দেশই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি ও প্রভাবশালী কূটনৈতিক শক্তি। উভয়ই নিজেদের বহু মেরু বিশ্বের স্বাধীন শক্তি হিসেবে দেখে। কিন্তু আঞ্চলিক রাজনীতিতে তাদের পথ আলাদা। সৌদি আরব স্থিতিশীলতাকে মূল স্বার্থ হিসেবে বিবেচনা করে এবং (যদিও সব সময় নয়) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলার চেষ্টা করে।
অন্যদিকে, সাতটি আমিরাত নিয়ে গঠিত সংযুক্ত আরব আমিরাতের (যার মধ্যে দুবাই আছে এবং সবচেয়ে ধনী আবুধাবি) নীতিনির্ধারণ ভিন্ন ধাঁচের। লিবিয়ায় তারা বিদ্রোহী নেতা খলিফা হাফতারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। হাফতারই লিবিয়ায় জাতিসংঘ-সমর্থিত সরকার উৎখাতের চেষ্টা করেছিলেন। ইয়েমেনে আমিরাত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে সমর্থন দিচ্ছে। সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন দুই অঞ্চল—পুন্টল্যান্ড ও সোমালিল্যান্ডের নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে দেশটি।
এসব নীতির অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থী। সুদানে আরএসএফ–কে সমর্থন দিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তো বটেই, চীন ও শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক খারাপ করেছে। ফলে বিষয়টি সামান্য কিছু নয়।
আঞ্চলিক ইস্যুতে নিজেদের নীতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমিরাতের কর্মকর্তারা প্রায়ই বলেন, ‘এই নীতি আমাদের নয়।’ আর এর ধারাবাহিকতায় দেশটি আরএসএফ–কে অস্ত্র দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে জাতিসংঘের তদন্ত ও স্যাটেলাইট চিত্র প্রমাণ করেছে, তারা প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও দেশটি আরএসএফকে অস্ত্র পাঠাচ্ছিল।
আমিরাতের এক কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন, হাফতারের প্রতি তাদের সমর্থন ছিল ‘মিত্রদের পূর্ণ সম্মতি সাপেক্ষেই।’ যদিও লিবিয়ার বেশির ভাগ মিত্র, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, হাফতারের বিরোধী ছিল।
আবুধাবিতে অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা মনে করেন, এই নীতির পেছনে আরব আমিরাতের অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কেউ কেউ বলেন, সুদানের স্বর্ণ খনির ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পেতেই হয়তো আমিরাত আগ্রহী। কিন্তু এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট নয়। কারণ সুদানের বেশির ভাগ স্বর্ণ এরই মধ্যে আমিরাতে রপ্তানি হচ্ছে। আবার অনেকে মনে করেন, খাদ্য নিরাপত্তা উদ্যোগে অগ্রগতি আনতে আমিরাত সুদানে কৃষিজমি ও সমুদ্রবন্দরে প্রবেশাধিকার চায়; কারণ দেশটির ৯০ শতাংশ খাদ্য আমদানিনির্ভর।
তবে কেবল বাণিজ্যিক দিক দিয়ে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা ভুল হবে। আমিরাতের প্রধান প্রেরণা আদর্শিক। প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ইসলামি রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর তীব্র বিরোধী। তিনি এবং তাঁর পরিবার চান আরব বিশ্বে কাতার ও তুরস্কের প্রভাব কমাতে। কারণ, এই দুই দেশই মুসলিম বিশ্বে ইসলামি রাজনৈতিক দলগুলোর বড় সমর্থক। একই সঙ্গে আরব আমিরাত সৌদি আরবের প্রভাবের বাইরে নিজেদের আলাদা প্রভাব বলয় গড়ে তুলতে চায়।
ইয়েমেনে নিরাপত্তা ঝুঁকির আশঙ্কা থেকেই আমিরাত ২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়। সে সময় রিয়াদ হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। হুতি ইরান-সমর্থিত শিয়া গোষ্ঠী। রাজধানী সানাসহ ইয়েমেনের বড় একটি অংশ তাদের দখলে। সৌদি ও আমিরাত কেউই চায়নি—ইরানের মদদপুষ্ট কোনো গোষ্ঠী আরব উপদ্বীপে শক্ত ঘাঁটি পাক। তবে আমিরাত চেয়েছিল নিজেদের অনুগত মিত্র তৈরি করতে। কারণ, তাদের কাছে সৌদি আরবও বিশ্বাসযোগ্য মিত্র নয়। কারণ, সৌদিরা ইসলামি রাজনৈতিক দল ইসলাহের বেশ ঘনিষ্ঠ মিত্র, যা আবার মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি শাখা।
ইয়েমেন ১৯৯০ সালের আগে পর্যন্ত কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ছিল। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নীতিগত অবস্থানের সঙ্গে আমিরাতের নীতি বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই জোট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সুফলও বয়ে আনতে পারে। আবুধাবিভিত্তিক রাষ্ট্রীয় শিপিং জায়ান্ট এডি পোর্টস আশা করছে, তারা দক্ষিণ ইয়েমেনের এডেন বন্দরের পরিচালনার অধিকার পাবে। আমিরাতের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির স্বার্থে তারা আঞ্চলিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, তবে এটাই দেশটির মূল উদ্দেশ্য নয়।
২০১৯ সালে ওমর আল-বশির ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর সুদানে কয়েক দশকের ইসলামপন্থী শাসনের অবসান ঘটে। কিন্তু সেনাবাহিনীতে এখনো ইসলামপন্থী কর্মকর্তাদের প্রভাব রয়েছে। এ কারণেই শেখ মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান দ্রুত সমর্থন দেন আরএসএফ–কে। আরেকটি কারণ ছিল, মিলিশিয়া নেতা মুহাম্মদ হামদান দাগালো—যিনি ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত—ইয়েমেনে যুদ্ধের সময় আরব আমিরাতকে সহায়তা দিতে হাজার হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিলেন। শেখ মুহাম্মদ হয়তো সেই সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চেয়েছেন। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মনে হয়, তিনি এই লোকদের প্রতি একধরনের আনুগত্য অনুভব করেন।’
আমিরাতের দাবি—তারা শুধু বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে এগোচ্ছে। যুক্তিটা কিছুটা গ্রহণযোগ্যও। ইয়েমেনে তাদের মিত্ররা সৌদি সমর্থিত বাহিনীর চেয়ে দক্ষ যোদ্ধা প্রমাণিত হয়েছিল। লিবিয়ার জাতিসংঘ সমর্থিত সরকারও যতটা বৈধ বলে শোনা যায়, বাস্তবে তা নয়—সেখানে প্রভাবশালী হলো মিলিশিয়ারা।
তবু এসব শক্তির প্রতি সমর্থন খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। ২০১৮ সালে আমিরাত দামেস্কে দূতাবাস পুনরায় চালু করে এবং অন্যান্য দেশকেও বাশার আল-আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানায়। শেখ মুহাম্মদের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আনোয়ার গারগাশ বলেন, ‘দশ বছরের হতাশা থেকেই এই যোগাযোগ শুরু হয়েছিল।’ তাঁর মতে, সিরিয়ার একনায়ককে একঘরে করে রাখা কাজে আসেনি; তাই তাঁকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা উচিত ছিল। সেই চেষ্টা করে অবশ্য কোনো ফল পায়নি আমিরাত।
আসাদ গত ডিসেম্বরে মস্কো পালিয়ে যান। সিরিয়ার ইসলামপন্থী নতুন সরকারের প্রতি আমিরাতের দৃষ্টিভঙ্গি এখনো সন্দেহ প্রবণ। এমনকি অন্যান্য উপসাগরীয় দেশের তুলনায়ও অনেক বেশি। তবে এখনো নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি আমিরাত।
এর আগে, হাফতার ত্রিপোলি দখলের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন। আরএসএফও গত মাসে সুদানের রাজধানীর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে শহর ছেড়ে পালিয়েছে। বলা যায়, দুই ক্ষেত্রেই আমিরাতের ভূমিকা উল্টো ফল দিয়েছে। এতে তুরস্ক সুদানি সেনাবাহিনী ও ত্রিপোলির সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার আরও বেশি সুযোগ পেয়েছে। ওই দুই পক্ষই এখন তুর্কি ড্রোনের ওপর নির্ভর করছে প্রতিপক্ষকে প্রতিহত করতে।
এসব নীতি আমিরাতের সুনামেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। গত মাসে ওয়াশিংটনে কয়েক দফা বৈঠকে তিন কংগ্রেস সদস্যের সহযোগী আমিরাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা উত্থাপন করেছেন। যদিও তা আপাতত কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে প্রচলিত আছে যে, আরএসএফ-এর মতো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করা শুধু অপরাধ নয়, বরং এক ভয়াবহ ভুল।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

কয়েক মাস ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের করণীয় কী হওয়া উচিত—তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আগের কঠোর নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরালো করেছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত জানুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী ১ জুলাই থেকে ইরানি তেলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর...
২১ জুন ২০২৫
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
১৪ ঘণ্টা আগে
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
৩ দিন আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত
বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক
বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।
এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।
যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

আফ্রিকা মহাদেশে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার এবং চলমান সংঘাতকে উসকে দেওয়ার এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর বিরুদ্ধে। সোমালিয়ার পুনটল্যান্ড রাজ্যের বোসাসো বিমানবন্দরকে একটি গোপন ট্রানজিট হাব হিসেবে ব্যবহার করে আমিরাত সুদানের বিতর্কিত আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে ব্যাপক সামরিক সহায়তা দিচ্ছে। সরবরাহ করা হচ্ছে কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনা।
মিডল ইস্ট আই-এর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ফ্লাইট ট্র্যাকিং ডেটা, স্যাটেলাইট চিত্র, স্থানীয় সূত্র এবং মার্কিন ও আঞ্চলিক কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।

ভারী কার্গো বিমানের রহস্যময় যাতায়াত
বোসাসো বিমানবন্দরে আজকাল ভারী কার্গো পরিবহনকারী আইএফ-৭৬ বিমানের ঘন ঘন অবতরণ স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অস্বাভাবিক ছিল, কিন্তু এখন নিয়মিত ঘটনা। পুনটল্যান্ড মেরিটাইম পুলিশ ফোর্সের (পিএমপিএফ) একজন কমান্ডার (আবদুল্লাহি) মিডল ইস্ট মনিটরকে জানিয়েছেন, এই বিমানগুলো ঘন ঘন আসে এবং এগুলোর মাধ্যমে আসা সামরিক সরঞ্জাম ও রসদ দ্রুত অপেক্ষমাণ অন্য বিমানে তুলে সুদানে আরএসএফ-এর জন্য পাঠানো হয়।
সূত্রের বরাত দিয়ে মিডল ইস্ট আই-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বিমানগুলোর উৎস হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিমানবন্দর ব্যবহারের সময়সূচি ঘন ঘন পরিবর্তন করা হয় এবং বিমানগুলো সাধারণত বিমানবন্দরের কর্মচাঞ্চল্য কম থাকার সময় বোসাসোতে পৌঁছায়। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র অনুযায়ী, এই চালানগুলোর মধ্যে চীনা-নির্মিত ড্রোনসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে।
বোসাসো বন্দরের একজন সিনিয়র ম্যানেজার প্রথমবারের মতো মিডল ইস্ট আই-কে নিশ্চিত করেছেন, গত দুই বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি ‘বিপজ্জনক’ চিহ্নিত কন্টেইনার আমিরাত বোসাসো বন্দরের মাধ্যমে পাঠিয়েছে। সাধারণ কার্গোর বিপরীতে, এই আমিরাতি চালানগুলোতে ভেতরের মালপত্র বা গন্তব্যের কোনো বিস্তারিত বিবরণ নথিভুক্ত করা হয় না। বন্দরে একটি জাহাজ ভিড়লে পিএমপিএফ বাহিনীকে মোতায়েন করে এলাকা ঘিরে ফেলা হয় এবং ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে।
কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনাদের গোপন নেটওয়ার্ক
বোসাসো বিমানবন্দরের উত্তর দিকে একটি সামরিক স্থাপনা রয়েছে, এটি কলম্বিয়ার ভাড়াটে সেনাদের আশ্রয়স্থল। মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা ছবিতে দেখা গেছে, ব্যাকপ্যাক বহনকারী ডজন ডজন কলম্বিয়ান বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি সামরিক ক্যাম্পে যাচ্ছে। পিএমপিএফ কমান্ডার আব্দুল্লাহি নিশ্চিত করেছেন, এই এলাকায় বিপুলসংখ্যক কলম্বিয়ান ভাড়াটে সেনা আরএসএফ-এর পক্ষে সুদানে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করছে।
এই ভাড়াটে সেনারা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইটে বোসাসোতে আসে এবং এরপর প্রায় প্রতিদিনই ট্রানজিট হয়ে সুদানে পাড়ি জমায়। এই ভাড়াটে সেনারা তাদের ক্যাম্পের ভেতরে একটি নতুন হাসপাতালও নির্মাণ করেছে। সেখানে সুদানে আহত হওয়া আরএসএফ সৈন্যদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। আব্দুল্লাহি রক্তমাখা বিমান দেখার কথা স্মরণ করে বলেন, এই ক্যাম্প আহত আরএসএফ যোদ্ধাদের জন্য একটি চিকিৎসা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

বোসাসো বিমানবন্দরকে সম্ভাব্য আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত সেখানে একটি ফরাসি-নির্মিত সামরিক রাডার সিস্টেমও স্থাপন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রশ্ন
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০২৩ সালেই ঘোষণা করেছিল, আরএসএফ এবং তাদের সহযোগী মিলিশিয়ারা সুদানে ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আরএসএফ-কে সোমালিয়ার মাটি ব্যবহার করে সাহায্য করার বিষয়টি স্থানীয় পিএমপিএফ সৈন্যদের মধ্যে তীব্র নৈতিক দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, দীর্ঘদিনের মিত্র সুদানের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনাদের সহায়তা করা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য।
হর্ন অব আফ্রিকার সংঘাত বিশেষজ্ঞ মার্টিন প্লট সতর্ক করেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সুদানের যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত করছে এবং পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষ এই অপরাধে সহযোগী হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে গৃহযুদ্ধে সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-কে সমর্থন করার অভিযোগে সুদান সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। খার্তুম অভিযোগ করে, আরব আমিরাত পশ্চিম দারফুরে মাসালিত সম্প্রদায়ের ‘গণহত্যায় জড়িত’, তারা আরএসএফকে সামরিক, আর্থিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়ে এ অপরাধ সংঘটিত করছে।
যদিও ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে, আরএসএফ এবং সুদানি সেনাবাহিনী উভয়ের বিরুদ্ধেই নৃশংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মোগাদিসুর নীরবতা ও আমিরাতের কৌশলগত ঘাঁটি
সোমালিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার মোগাদিসুর আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করলেও, তাদের বোসাসোর বন্দর ও বিমানবন্দরের ওপর কোনো কর্তৃত্ব নেই। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় সরকার (প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ-এর নেতৃত্বাধীন) আমিরাতের ক্রমবর্ধমান ও প্রসারমান প্রভাব মোকাবিলা করতে প্রস্তুত না থাকায় সামরিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে বাধা দিতে পারছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমিরাতের এই কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য হলো সুদানের স্বর্ণখনি দখল এবং লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার। আমিরাত এই অঞ্চলে মায়ুন, আবদ আল-কুরি, সামহা, সোমালিল্যান্ডের বেরবেরা এবং ইয়েমেনের মোচা বন্দরে ঘাঁটি নির্মাণ বা সম্প্রসারণের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে।
প্লট আরও বলেন, পুনটল্যান্ডের কৌশলগত অবস্থান এবং নজরদারির অভাব এটিকে আমিরাতের জন্য আদর্শ অপারেশনাল ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। কারণ এখানে তাদের কার্যক্রম নিয়ে কেউ প্রশ্ন করবে না।
আমিরাত সরকার একাধিকবার আরএসএফকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, এ বিষয়ে মির বা পুনটল্যান্ড কর্তৃপক্ষের কেউই কখনো গণমাধ্যমে এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

কয়েক মাস ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের করণীয় কী হওয়া উচিত—তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আগের কঠোর নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরালো করেছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত জানুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী ১ জুলাই থেকে ইরানি তেলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর...
২১ জুন ২০২৫
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
১৪ ঘণ্টা আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা
১৭ ঘণ্টা আগে
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে।
৩ দিন আগেদ্য ন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রতিবেদন
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে। তাঁদের মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি আবার দাবি করেছেন, অন্তত ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ভেনেজুয়েলান নাগরিক এরই মধ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন।
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগে যেমন সাদ্দাম হোসেন তাঁর ফেদাইন বাহিনী গঠন করেছিলেন, তেমনই এবার মাদুরোও আগেভাগে তাঁর মিলিশিয়াদের প্রস্তুত করছেন। তবে সাদ্দামের তুলনায় মাদুরোর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনেক বেশি।
তবে সিবিএস নিউজ বলছে, মাদুরোর দাবি অতিরঞ্জিত। আসলে সক্রিয় মিলিশিয়া সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজারের মতো, যা সাদ্দামের অনানুষ্ঠানিক বাহিনীর চেয়ে বেশি হলেও মাদুরোর ঘোষণার তুলনায় অনেক কম।
কারাকাস জানে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, মার্কিন আক্রমণ হলে সেটি আসলে পূর্ণাঙ্গ শাসন পরিবর্তনের জন্যই হবে। এ কারণেই মাদুরো এখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। মস্কো ভেনেজুয়েলাকে বিপুল অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে, এমনকি ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ২০০ ভাড়াটে সেনা দেশটিতে পাঠানো হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে, এই বলিভারিয়ান মিলিশিয়ারা আদৌ মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি কি না। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলে তাদের টিকতে পারা কঠিন। তবে গেরিলা ধাঁচের যুদ্ধ, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মিলিশিয়া বাহিনী এবং ভূপ্রকৃতি মার্কিন অভিযানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেক ভেনেজুয়েলান অবশ্য যুদ্ধের আহ্বানে সাড়া দিতে অনাগ্রহী। ফলে মাদুরোর ‘অস্ত্র ধারণের ডাক’ কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি সহজ নয়, শাসক পরিবর্তন করতে গেলে দেশ মেরামতের দায়ভারও নিতে হবে। তাই ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মনরো নীতির পুনরুত্থান চান, অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিশ্চিত করা। তাঁর মতে, চীন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ওয়াশিংটনের বড় মাথাব্যথা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, মাদুরো সরকারের পতনের পর ভেনেজুয়েলা যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
ভেনেজুয়েলার জঙ্গলে যুদ্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। দেশটির সেনারা মূলত মরুভূমি বা ইউরোপীয় বনাঞ্চলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বলিভিয়ার ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অভিযান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেবে, তবে তা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজে মাদুরোর বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে; কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গেরিলা বিদ্রোহই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ফলে পরিস্থিতি ইরাকের মতো হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, মাদুরোর ‘যুদ্ধের আহ্বান’ জনগণের মধ্যে খুব একটা সাড়া জাগায়নি।
যাহোক, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আমেরিকার প্রভাব পুনরুদ্ধার করা। তবে পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এ পথে হেঁটে সত্যিই কি পশ্চিম গোলার্ধে স্থিতিশীলতা আসবে, নাকি আরও এক ‘লাতিন লিবিয়া’ তৈরি হবে?

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সম্প্রতি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য আগ্রাসনের মুখে এখন তাঁর দেশের লাখো মানুষ অস্ত্র ধরতে প্রস্তুত। গত আগস্টে মাদুরো বলেন, তাঁর সরকার আধা সামরিক বাহিনীর ৪৫ লাখ সদস্যকে ‘বলিভারিয়ান মিলিশিয়া’ নামে সক্রিয় করেছে। তাঁদের মার্কিন বাহিনীর বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে তিনি আবার দাবি করেছেন, অন্তত ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ভেনেজুয়েলান নাগরিক এরই মধ্যে অস্ত্র হাতে নিয়েছেন।
২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগে যেমন সাদ্দাম হোসেন তাঁর ফেদাইন বাহিনী গঠন করেছিলেন, তেমনই এবার মাদুরোও আগেভাগে তাঁর মিলিশিয়াদের প্রস্তুত করছেন। তবে সাদ্দামের তুলনায় মাদুরোর বাহিনীর সদস্যসংখ্যা অনেক বেশি।
তবে সিবিএস নিউজ বলছে, মাদুরোর দাবি অতিরঞ্জিত। আসলে সক্রিয় মিলিশিয়া সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৪৩ হাজারের মতো, যা সাদ্দামের অনানুষ্ঠানিক বাহিনীর চেয়ে বেশি হলেও মাদুরোর ঘোষণার তুলনায় অনেক কম।
কারাকাস জানে, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য শুধু মাদকবিরোধী অভিযান নয়, মার্কিন আক্রমণ হলে সেটি আসলে পূর্ণাঙ্গ শাসন পরিবর্তনের জন্যই হবে। এ কারণেই মাদুরো এখন রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। মস্কো ভেনেজুয়েলাকে বিপুল অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিচ্ছে, এমনকি ওয়াগনার গ্রুপের প্রায় ২০০ ভাড়াটে সেনা দেশটিতে পাঠানো হয়েছে।

এখানে প্রশ্ন উঠেছে, এই বলিভারিয়ান মিলিশিয়ারা আদৌ মার্কিন বাহিনীর জন্য হুমকি কি না। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণে সমৃদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হলে তাদের টিকতে পারা কঠিন। তবে গেরিলা ধাঁচের যুদ্ধ, জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা মিলিশিয়া বাহিনী এবং ভূপ্রকৃতি মার্কিন অভিযানে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেক ভেনেজুয়েলান অবশ্য যুদ্ধের আহ্বানে সাড়া দিতে অনাগ্রহী। ফলে মাদুরোর ‘অস্ত্র ধারণের ডাক’ কতটা বাস্তবে রূপ পাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি সহজ নয়, শাসক পরিবর্তন করতে গেলে দেশ মেরামতের দায়ভারও নিতে হবে। তাই ইরাকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
ট্রাম্পের লক্ষ্য পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি মনরো নীতির পুনরুত্থান চান, অর্থাৎ পশ্চিম গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিশ্চিত করা। তাঁর মতে, চীন, রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কই ওয়াশিংটনের বড় মাথাব্যথা।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, মাদুরো সরকারের পতনের পর ভেনেজুয়েলা যদি চীন বা রাশিয়ার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
ভেনেজুয়েলার জঙ্গলে যুদ্ধ করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা হবে। দেশটির সেনারা মূলত মরুভূমি বা ইউরোপীয় বনাঞ্চলে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বলিভিয়ার ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অভিযান হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব অভিজ্ঞতা দেবে, তবে তা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা কঠিন।
বেশির ভাগ বিশ্লেষক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র সহজে মাদুরোর বাহিনীকে পরাজিত করতে পারবে; কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী গেরিলা বিদ্রোহই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ—ফলে পরিস্থিতি ইরাকের মতো হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলছেন, মাদুরোর ‘যুদ্ধের আহ্বান’ জনগণের মধ্যে খুব একটা সাড়া জাগায়নি।
যাহোক, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য স্পষ্ট, আমেরিকার প্রভাব পুনরুদ্ধার করা। তবে পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এ পথে হেঁটে সত্যিই কি পশ্চিম গোলার্ধে স্থিতিশীলতা আসবে, নাকি আরও এক ‘লাতিন লিবিয়া’ তৈরি হবে?

কয়েক মাস ধরে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের করণীয় কী হওয়া উচিত—তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। এই তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র আগের কঠোর নিষেধাজ্ঞাকে আরও জোরালো করেছে। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) গত জানুয়ারিতে ঘোষণা দিয়েছে, তারা আগামী ১ জুলাই থেকে ইরানি তেলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর...
২১ জুন ২০২৫
দশকের পর দশক ধরে ভারতের রাজনীতিতে ভারতীয় রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করে এসেছে একটি পরিবার। নেহরু–গান্ধী পরিবার। স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী এবং বর্তমান বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ও সংসদ সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র...
১৪ ঘণ্টা আগে
সংযুক্ত আরব আমিরাতই প্রথম আরব দেশ হিসেবে সহিষ্ণুতা মন্ত্রণালয় চালু করেছিল। আবার প্রথম আরব দেশ হিসেবে গণহত্যার অভিযোগেও অভিযুক্ত দেশটি। গত ১০ এপ্রিল সুদানের পক্ষের আইনজীবীরা আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (আইসিজে) এই অভিযোগের বিষয়ে শুনানি করেন। তাঁদের অভিযোগ, আরব আমিরাত মাসালিত জাতিগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা
১৭ ঘণ্টা আগে
আরএসএফ সম্প্রতি সুদানের উত্তর দারফুরের রাজধানী আল-ফাশের দখল করার পর সেখানে ব্যাপক নৃশংসতা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৫০০ দিনেরও বেশি অবরোধের পর এই বিজয়ের পর আরএসএফ যোদ্ধারা বেসামরিক নাগরিকদের গণহত্যা, এমনকি হাসপাতালেও নির্বিচারে হত্যার ভিডিও ধারণ করেছে।
৩ দিন আগে