জাহাঙ্গীর আলম
রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার ও টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএর প্রতিষ্ঠাতা চার্লি কার্ককে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘিরে অনলাইনে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বিশ্বাস করছেন, এ হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা (অনেক সময় সুনির্দিষ্টভাবে মোসাদ) বা ইসরায়েলের পক্ষে পরিচালিত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন হামলাকারীকে শনাক্ত করা যায়নি। যদিও এফবিআই একটি ছবি প্রকাশ করেছে। কিন্তু কোনো সংস্থাই নিশ্চিত নয়। এ পরিস্থিতিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আরও গতি পেয়েছে। যদিও মূলধারার সংবাদ প্রতিবেদন ও সরকারি বিবৃতিগুলোতে এ হত্যাকাণ্ডকে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সম্ভবত দেশীয় চরমপন্থী বা বামপন্থী মতাদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি এটি ছড়াচ্ছে। ইসরায়েলের ওপর দোষারোপ করার এই বয়ান ইহুদিবিদ্বেষ (অ্যান্টি সেমিটিজম), সরকারি বিবৃতির কিছু অসংগতি ও ইসরায়েল বিষয়ে কার্কের পরিবর্তিত অবস্থান থেকে এমন প্রচার কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে থাকতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতি কার্কের প্রশ্নহীন সমর্থন থেকে সাম্প্রতিক পরিবর্তন
কার্ক দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের একজন সরব সমর্থক ছিলেন। তিনি নিজেকে ‘ইহুদিদের রক্ষক’ হিসেবে বর্ণনা করতেন এবং প্রায়শই ইসরায়েলকে ‘মৌলবাদী ইসলামের’ বিরুদ্ধে একটি ঢাল হিসেবে প্রশংসা করতেন। তিনি বেশ কয়েকবার ইসরায়েল সফর করেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আমন্ত্রণ পেয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে কার্ককে ‘সিংহ হৃদয়ের বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছিলেন নেতানিয়াহু। টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএর ইভেন্টগুলোতে ইসরায়েলের পক্ষে বার্তা দেওয়া হয় বলে প্রশংসা করেন তিনি।
তবে মৃত্যুর আগের মাসগুলোতে, কেউ কেউ দাবি করেন যে, কার্ক ইসরায়েলের কার্যকলাপের কিছু দিক নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছিলেন। বিশেষ করে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের হামলা এবং পরবর্তী গাজা যুদ্ধ নিয়ে তিনি ইসরায়েলের প্রতি সন্দেহ উদ্রেককারী কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তারা কার্কের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের (যেমন: পিবিডি পডকাস্ট) ক্লিপ দেখিয়ে বলছেন, কার্ক ৭ অক্টোবরের ঘটনার সময় সম্ভাব্য ‘উদাসীনতা’ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বা ইসরায়েলি বয়ানগুলোকে ‘মিথ্যা’ বা অসংগতিপূর্ণ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা যুক্তি দেন, তাঁর এই ‘সচেতনতা’ তাঁকে ইসরায়েলের জন্য হুমকি করে তুলেছিল, যেমনটা অন্যান্য সমালোচক যেমন: ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট জে এফ কেনেডি বা আধুনিক হুইসেলব্লোয়ারের ক্ষেত্রে ঘটেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভক্স ভেরিটাস (Vox Veritas) নামে একটি এক্স হ্যান্ডল থেকে পোস্ট করা কার্কের একটি ভিডিওর সঙ্গে একটি প্রশ্ন জুড়ে দেওয়া হয়েছে—‘কেন চার্লি কার্ককে গুলি করা হলো?’ এই ক্লিপ ২০ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এ ধরনের ভাইরাল কনটেন্ট জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে। মার্কিন রাজনীতি বা জনহিতৈষী কর্মকাণ্ডে ইহুদি প্রভাবের বিষয়ে কার্কের ক্রমবর্ধমান সমালোচনা (যেমন, ‘ইহুদি দাতারা’ মার্কিনবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়ন করে) তাঁর হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে।
জ্যাকসন হিঙ্কলের মতো কট্টর ডানপন্থী ভাষ্যকার স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, ইসরায়েল চার্লি কার্ককে হত্যা করেছে।’ এ বিবৃতিতে কার্কের বিশালসংখ্যক অনুসারীর মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বয়ান এমন ব্যক্তিদের আকর্ষণ করছে, যাঁরা কার্ককে মূলধারার রক্ষণশীলতা ও আরও চরম ইসরায়েলবিরোধী মতাদর্শের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে দেখেন। এর মাধ্যমে তাঁরা বোঝাতে চান, ইসরায়েল কার্ককে আর কথা বলা চালিয়ে যেতে দেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছে।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ ও সরকারি বয়ান নিয়ে সন্দেহ
হত্যাকাণ্ডটি উটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটির একটি ছাদ থেকে একটি মাত্র স্নাইপার শট, এরপর হত্যাকারী নিঃশব্দে পালিয়ে যায়। পুলিশ এভাবেই বর্ণনা করেছে। তবে এখনো কোনো উদ্দেশ্য বা সন্দেহভাজনকে নিশ্চিত করা হয়নি। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা এ মোটিফ সম্পর্কে ধারণা দিতে না পারার এ শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তি দেন, এই আক্রমণের নিখুঁত কৌশল এবং তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা ইঙ্গিত দেয়, এর সঙ্গে পেশাদারেরাই জড়িত। মোসাদের মতো গোয়েন্দা সংস্থার গুপ্তহত্যা অভিযানের কথিত দক্ষতার সঙ্গে এর মিলে রয়েছে।
প্রচারিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: একজন সাধারণ অপেশাদার খুনির পক্ষে এত সহজে ‘সরে পড়া’ সম্ভব নয়; গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে দ্রুত ‘বামপন্থী’ বা ‘ট্রান্স অ্যাকটিভিস্টদের’ দোষারোপ (কার্ক গণহত্যাকারীদের নিয়ে যে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করে) একটি পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া বলে মনে হয়েছে; নেতানিয়াহুর দ্রুত শোকবার্তা (কার্ককে ‘সত্য বলার জন্য খুন’ হয়েছে বলে বর্ণনা করেছে) ইসরায়েলের স্বার্থের সঙ্গে সন্দেহজনকভাবে মিলে যায়।
কিছু এক্স পোস্টে অভিযোগ করা হয়েছে, গাজা থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ অপারেশন এটি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ বা মুসলিমবিরোধী মনোভাব উসকে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। একটি ফিলিস্তিনপন্থী অ্যাকাউন্টের পোস্ট থেকে জানা যায়, গাজায় গণহত্যার বিষয়ে সরব ব্যক্তিদের পরিণতি বোঝাতে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করতে ইসরায়েল চার্লি কার্ককে হত্যা করেছে। এ ঘটনাকে ১৯৬৭ সালে মার্কিন জাহাজ ইউএসএস লিবার্টিতে ইসরায়েলি হামলা বা ৯/১১ সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোর মতো ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
এই উপাদানগুলো ধ্রুপদি ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কাঠামোকে প্রতিফলিত করে। এ কাঠামোতে হাইপ্রোফাইল হত্যাকাণ্ডের (যেমন: জে এফ কেনেডি) পেছনে শক্তিশালী সত্তা, যেমন গোয়েন্দা সংস্থার ওপর দায় চাপানো হয়।
‘প্রমাণ’ হিসেবে ইহুদি ও ইসরায়েল বিষয়ে কার্কের অতীতের বক্তব্য
ইসরায়েলপন্থী অবস্থান সত্ত্বেও অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগের মতো গোষ্ঠীগুলো কার্ককে ইহুদিবিদ্বেষী বলে অভিযুক্ত করেছিল। কারণ, তিনি কট্টর ডানপন্থী ব্যক্তিত্বদের (যেমন, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী নিক ফুয়েন্তেস) সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করতেন। এ ছাড়া ‘ইহুদি জনহিতৈষী’ কার্যক্রমগুলোকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ইহুদিবিরোধী’ বা ‘গণহত্যাকারী’দের অর্থায়নের জন্য দায়ী করার মতো মন্তব্য করতেন।
অনেকে যুক্তি দেন, এটি কার্ককে ইসরায়েলের জন্য ঝুঁকির কারণ করে তুলেছিল। তাঁদের ভাষায়, কার্ক যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ইহুদি বা ইসরায়েলি প্রভাব সম্পর্কে ‘সত্যের খুব কাছাকাছি’ ছিলেন। পোস্টগুলোতে কার্কের দাবিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ণবাদ বা ইসলাম সম্পর্কে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানো হয়েছিল—এমনটা বলেছিলেন কার্ক। এটিই প্রমাণ করে তিনি ‘জায়নবাদী’ এজেন্ডার বিষয়ে ‘সচেতন’ হয়ে উঠছিলেন।
ঠিক যেমন ধারণা করা হয়, ইসরায়েল ইউএসএস লিবার্টির ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছিল বা র্যাচেল করির মতো সমালোচকদের হত্যা করেছিল (২০০৩), তেমনি কার্কের হত্যাকাণ্ডও একটি হাইপ্রোফাইল কণ্ঠকে নীরব করার প্রচেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে। একটি এক্স থ্রেডে বলা হয়েছে: ‘ইসরায়েল ৯/১১ করেছে...জেএফকে হত্যা করেছে...এখন চার্লি কার্ককেও।’
এই তত্ত্ব কেন হালে পানি পাচ্ছে
কার্ক হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েল যোগের বিশ্বাসটি এক্স, রেডিট ও টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। এটি বৈধ হতাশার (যেমন: অভ্যন্তরীণ সমস্যার সময় ইসরায়েলে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখা) সঙ্গে ইহুদিবিদ্বেষের মিশেল ঘটায়। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়, ‘সব খারাপের পেছনেই ইহুদি বা ইসরায়েল রয়েছে’।
নেতানিয়াহু ও মার্কিন ইহুদি নেতাদের মতো ইসরায়েলপন্থী কণ্ঠগুলো এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘গণতন্ত্রের জন্য একটি গভীর ক্ষত’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। অন্যদিকে বামঘেঁষা সমালোচকেরা এটিকে কার্কের নিজেরই উসকানিমূলক বাগ্মিতা থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য কট্টর ডানপন্থীদের কৌশল হিসেবে দেখেন।
তবে ইসরায়েলের জড়িত থাকার পক্ষে এখনো কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে একজন মার্কিনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এ ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো ইহুদি সম্প্রদায় বা রূপান্তরকামী লোকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিতে পারে। এ বয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ার মতো প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারে। সন্দেহভাজনকে এখনো খোঁজা হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে নানামুখী দাবিগুলো আরও বিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ঘটনা ও প্রবণতা ইসরায়েল, বাক্স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট থেকে উৎসারিত গভীর সামাজিক বিভেদকে আরও উন্মুক্ত করছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, দৈনিক আজকের পত্রিকা
রক্ষণশীল ইনফ্লুয়েন্সার ও টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএর প্রতিষ্ঠাতা চার্লি কার্ককে একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনা ঘিরে অনলাইনে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বিশ্বাস করছেন, এ হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা (অনেক সময় সুনির্দিষ্টভাবে মোসাদ) বা ইসরায়েলের পক্ষে পরিচালিত হয়েছে।
এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন হামলাকারীকে শনাক্ত করা যায়নি। যদিও এফবিআই একটি ছবি প্রকাশ করেছে। কিন্তু কোনো সংস্থাই নিশ্চিত নয়। এ পরিস্থিতিতে ষড়যন্ত্র তত্ত্বটি আরও গতি পেয়েছে। যদিও মূলধারার সংবাদ প্রতিবেদন ও সরকারি বিবৃতিগুলোতে এ হত্যাকাণ্ডকে একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, সম্ভবত দেশীয় চরমপন্থী বা বামপন্থী মতাদর্শের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যক্তি এটি ছড়াচ্ছে। ইসরায়েলের ওপর দোষারোপ করার এই বয়ান ইহুদিবিদ্বেষ (অ্যান্টি সেমিটিজম), সরকারি বিবৃতির কিছু অসংগতি ও ইসরায়েল বিষয়ে কার্কের পরিবর্তিত অবস্থান থেকে এমন প্রচার কিছুটা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে থাকতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতি কার্কের প্রশ্নহীন সমর্থন থেকে সাম্প্রতিক পরিবর্তন
কার্ক দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের একজন সরব সমর্থক ছিলেন। তিনি নিজেকে ‘ইহুদিদের রক্ষক’ হিসেবে বর্ণনা করতেন এবং প্রায়শই ইসরায়েলকে ‘মৌলবাদী ইসলামের’ বিরুদ্ধে একটি ঢাল হিসেবে প্রশংসা করতেন। তিনি বেশ কয়েকবার ইসরায়েল সফর করেছেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর আমন্ত্রণ পেয়েছেন। হত্যাকাণ্ডের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে কার্ককে ‘সিংহ হৃদয়ের বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছিলেন নেতানিয়াহু। টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএর ইভেন্টগুলোতে ইসরায়েলের পক্ষে বার্তা দেওয়া হয় বলে প্রশংসা করেন তিনি।
তবে মৃত্যুর আগের মাসগুলোতে, কেউ কেউ দাবি করেন যে, কার্ক ইসরায়েলের কার্যকলাপের কিছু দিক নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছিলেন। বিশেষ করে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, হামাসের হামলা এবং পরবর্তী গাজা যুদ্ধ নিয়ে তিনি ইসরায়েলের প্রতি সন্দেহ উদ্রেককারী কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের প্রবক্তারা কার্কের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের (যেমন: পিবিডি পডকাস্ট) ক্লিপ দেখিয়ে বলছেন, কার্ক ৭ অক্টোবরের ঘটনার সময় সম্ভাব্য ‘উদাসীনতা’ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বা ইসরায়েলি বয়ানগুলোকে ‘মিথ্যা’ বা অসংগতিপূর্ণ বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁরা যুক্তি দেন, তাঁর এই ‘সচেতনতা’ তাঁকে ইসরায়েলের জন্য হুমকি করে তুলেছিল, যেমনটা অন্যান্য সমালোচক যেমন: ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট জে এফ কেনেডি বা আধুনিক হুইসেলব্লোয়ারের ক্ষেত্রে ঘটেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভক্স ভেরিটাস (Vox Veritas) নামে একটি এক্স হ্যান্ডল থেকে পোস্ট করা কার্কের একটি ভিডিওর সঙ্গে একটি প্রশ্ন জুড়ে দেওয়া হয়েছে—‘কেন চার্লি কার্ককে গুলি করা হলো?’ এই ক্লিপ ২০ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে। এ ধরনের ভাইরাল কনটেন্ট জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে। মার্কিন রাজনীতি বা জনহিতৈষী কর্মকাণ্ডে ইহুদি প্রভাবের বিষয়ে কার্কের ক্রমবর্ধমান সমালোচনা (যেমন, ‘ইহুদি দাতারা’ মার্কিনবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়ন করে) তাঁর হত্যাকাণ্ডের কারণ হতে পারে।
জ্যাকসন হিঙ্কলের মতো কট্টর ডানপন্থী ভাষ্যকার স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, ইসরায়েল চার্লি কার্ককে হত্যা করেছে।’ এ বিবৃতিতে কার্কের বিশালসংখ্যক অনুসারীর মধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জনমতকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বয়ান এমন ব্যক্তিদের আকর্ষণ করছে, যাঁরা কার্ককে মূলধারার রক্ষণশীলতা ও আরও চরম ইসরায়েলবিরোধী মতাদর্শের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন হিসেবে দেখেন। এর মাধ্যমে তাঁরা বোঝাতে চান, ইসরায়েল কার্ককে আর কথা বলা চালিয়ে যেতে দেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছে।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ ও সরকারি বয়ান নিয়ে সন্দেহ
হত্যাকাণ্ডটি উটাহ ভ্যালি ইউনিভার্সিটির একটি ছাদ থেকে একটি মাত্র স্নাইপার শট, এরপর হত্যাকারী নিঃশব্দে পালিয়ে যায়। পুলিশ এভাবেই বর্ণনা করেছে। তবে এখনো কোনো উদ্দেশ্য বা সন্দেহভাজনকে নিশ্চিত করা হয়নি। ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিকেরা এ মোটিফ সম্পর্কে ধারণা দিতে না পারার এ শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে যুক্তি দেন, এই আক্রমণের নিখুঁত কৌশল এবং তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারে ব্যর্থতা ইঙ্গিত দেয়, এর সঙ্গে পেশাদারেরাই জড়িত। মোসাদের মতো গোয়েন্দা সংস্থার গুপ্তহত্যা অভিযানের কথিত দক্ষতার সঙ্গে এর মিলে রয়েছে।
প্রচারিত দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে: একজন সাধারণ অপেশাদার খুনির পক্ষে এত সহজে ‘সরে পড়া’ সম্ভব নয়; গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে দ্রুত ‘বামপন্থী’ বা ‘ট্রান্স অ্যাকটিভিস্টদের’ দোষারোপ (কার্ক গণহত্যাকারীদের নিয়ে যে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তার ওপর ভিত্তি করে) একটি পরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া বলে মনে হয়েছে; নেতানিয়াহুর দ্রুত শোকবার্তা (কার্ককে ‘সত্য বলার জন্য খুন’ হয়েছে বলে বর্ণনা করেছে) ইসরায়েলের স্বার্থের সঙ্গে সন্দেহজনকভাবে মিলে যায়।
কিছু এক্স পোস্টে অভিযোগ করা হয়েছে, গাজা থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য একটি ‘ফলস ফ্ল্যাগ’ অপারেশন এটি। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ বা মুসলিমবিরোধী মনোভাব উসকে দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। একটি ফিলিস্তিনপন্থী অ্যাকাউন্টের পোস্ট থেকে জানা যায়, গাজায় গণহত্যার বিষয়ে সরব ব্যক্তিদের পরিণতি বোঝাতে একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করতে ইসরায়েল চার্লি কার্ককে হত্যা করেছে। এ ঘটনাকে ১৯৬৭ সালে মার্কিন জাহাজ ইউএসএস লিবার্টিতে ইসরায়েলি হামলা বা ৯/১১ সম্পর্কিত তত্ত্বগুলোর মতো ঘটনার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
এই উপাদানগুলো ধ্রুপদি ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কাঠামোকে প্রতিফলিত করে। এ কাঠামোতে হাইপ্রোফাইল হত্যাকাণ্ডের (যেমন: জে এফ কেনেডি) পেছনে শক্তিশালী সত্তা, যেমন গোয়েন্দা সংস্থার ওপর দায় চাপানো হয়।
‘প্রমাণ’ হিসেবে ইহুদি ও ইসরায়েল বিষয়ে কার্কের অতীতের বক্তব্য
ইসরায়েলপন্থী অবস্থান সত্ত্বেও অ্যান্টি-ডিফেমেশন লিগের মতো গোষ্ঠীগুলো কার্ককে ইহুদিবিদ্বেষী বলে অভিযুক্ত করেছিল। কারণ, তিনি কট্টর ডানপন্থী ব্যক্তিত্বদের (যেমন, শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী নিক ফুয়েন্তেস) সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করতেন। এ ছাড়া ‘ইহুদি জনহিতৈষী’ কার্যক্রমগুলোকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘ইহুদিবিরোধী’ বা ‘গণহত্যাকারী’দের অর্থায়নের জন্য দায়ী করার মতো মন্তব্য করতেন।
অনেকে যুক্তি দেন, এটি কার্ককে ইসরায়েলের জন্য ঝুঁকির কারণ করে তুলেছিল। তাঁদের ভাষায়, কার্ক যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ইহুদি বা ইসরায়েলি প্রভাব সম্পর্কে ‘সত্যের খুব কাছাকাছি’ ছিলেন। পোস্টগুলোতে কার্কের দাবিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, বর্ণবাদ বা ইসলাম সম্পর্কে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানো হয়েছিল—এমনটা বলেছিলেন কার্ক। এটিই প্রমাণ করে তিনি ‘জায়নবাদী’ এজেন্ডার বিষয়ে ‘সচেতন’ হয়ে উঠছিলেন।
ঠিক যেমন ধারণা করা হয়, ইসরায়েল ইউএসএস লিবার্টির ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছিল বা র্যাচেল করির মতো সমালোচকদের হত্যা করেছিল (২০০৩), তেমনি কার্কের হত্যাকাণ্ডও একটি হাইপ্রোফাইল কণ্ঠকে নীরব করার প্রচেষ্টা বলেই মনে করা হচ্ছে। একটি এক্স থ্রেডে বলা হয়েছে: ‘ইসরায়েল ৯/১১ করেছে...জেএফকে হত্যা করেছে...এখন চার্লি কার্ককেও।’
এই তত্ত্ব কেন হালে পানি পাচ্ছে
কার্ক হত্যাকাণ্ডে ইসরায়েল যোগের বিশ্বাসটি এক্স, রেডিট ও টেলিগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। এটি বৈধ হতাশার (যেমন: অভ্যন্তরীণ সমস্যার সময় ইসরায়েলে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখা) সঙ্গে ইহুদিবিদ্বেষের মিশেল ঘটায়। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়, ‘সব খারাপের পেছনেই ইহুদি বা ইসরায়েল রয়েছে’।
নেতানিয়াহু ও মার্কিন ইহুদি নেতাদের মতো ইসরায়েলপন্থী কণ্ঠগুলো এই দৃষ্টিভঙ্গিকে ‘গণতন্ত্রের জন্য একটি গভীর ক্ষত’ বলে নিন্দা জানিয়েছে। অন্যদিকে বামঘেঁষা সমালোচকেরা এটিকে কার্কের নিজেরই উসকানিমূলক বাগ্মিতা থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য কট্টর ডানপন্থীদের কৌশল হিসেবে দেখেন।
তবে ইসরায়েলের জড়িত থাকার পক্ষে এখনো কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ কেউ হাজির করতে পারেনি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে একজন মার্কিনের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এ ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো ইহুদি সম্প্রদায় বা রূপান্তরকামী লোকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দিতে পারে। এ বয়ান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়ার মতো প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারে। সন্দেহভাজনকে এখনো খোঁজা হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে নানামুখী দাবিগুলো আরও বিবর্তিত হতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব ঘটনা ও প্রবণতা ইসরায়েল, বাক্স্বাধীনতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়ার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট থেকে উৎসারিত গভীর সামাজিক বিভেদকে আরও উন্মুক্ত করছে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, দৈনিক আজকের পত্রিকা
নেপালে তরুণ বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি ও মাথাপিছু জিডিপি কম। ফলে বিপুলসংখ্যক তরুণ কাজের খোঁজে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তবে মনে হচ্ছে, এই বিক্ষোভে বাইরের লোকজন ঢুকে পড়ে সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
১ দিন আগেভারত সরকার এক বিবৃতিতে জানায়, এই চুক্তি দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার ও বিনিয়োগ পরিবেশকে আরও দৃঢ় ও সহনশীল করে তোলার যৌথ প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন’। সহজভাবে বললে, এটি এমন চুক্তি, যা দীর্ঘ মেয়াদে ভারত ও ইসরায়েলের অর্থনীতিকে যুক্ত করে রাখবে।
২ দিন আগেআওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনকালে দমন ও হয়রানির শিকার জামায়াতে ইসলামী এখন পুনরায় আত্মপ্রকাশ ও প্রভাব শক্তিশালী করার জন্য উর্বর ভূমি পাচ্ছে। ঢাকার মতো ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল রাজনীতির জমিনে জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত ছাত্রসংগঠনের এ জয় দলটির ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রমাণ।
৪ দিন আগেমার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রও হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে খুব একটা পিছিয়ে নেই। তবে বাস্তবতা হলো—যুক্তরাষ্ট্র আসলেই এই খাতে পিছিয়ে আছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো টম কারাকো বলেন, ‘আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) যখন...
৪ দিন আগে