Ajker Patrika

বিবিসির নিবন্ধ /গাজায় পারলেও ইউক্রেনে কেন ব্যর্থ ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ০০
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত
ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে পারলেও ইউক্রেনে ব্যর্থ হচ্ছেন মূলত অঞ্চলটিতে তাঁর প্রভাব বলয়ের ব্যর্থতার কারণে। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ দুই নেতার আসন্ন বৈঠক নিয়ে ছড়িয়ে পড়া খবরগুলো এখন বেশ অতিরঞ্জিত বলেই মনে হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে ‘দুই সপ্তাহের মধ্যেই’ বৈঠক করবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের প্রাথমিক আলোচনাও বাতিল হয়েছে।

হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি কোনো অর্থহীন বৈঠক করতে চাই না। সময় নষ্ট করতে চাই না, দেখি কী হয়।’ বৈঠক হবে কি হবে না—এই দোলাচলই যেন ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে ট্রাম্পের চেষ্টার সর্বশেষ অধ্যায়। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি করানোর পর থেকে বিষয়টি তাঁর বিশেষ নজরে এসেছে।

গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্‌যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে এই যুদ্ধ।

উইটকফের মতে, গাজা চুক্তি সম্ভব হয়েছিল মূলত ইসরায়েলের এক অপ্রত্যাশিত ভুল পদক্ষেপের কারণে। আর সেটি ছিল কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর হামলা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে এই হামলা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের পথ খুলে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে আগায়।

ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তাঁর প্রথম মেয়াদ থেকেই ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেছেন, পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও বদলে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সমর্থন জানিয়ে আবারও সেই ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন।

ইসরায়েলিদের মধ্যে ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর চেয়েও জনপ্রিয়। ফলে ইসরায়েলি নেতার ওপর তাঁর প্রভাবও অনন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরব বিশ্বের কয়েকটি প্রধান দেশের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর কূটনৈতিক প্রভাব ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী।

কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সে ধরনের প্রভাববলয় নেই। গত ৯ মাসে তিনি পুতিন ও জেলেনস্কি—দুজনকেই কখনো চাপ, কখনো সমঝোতার মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ফল হয়নি বললেই চলে। তিনি রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন, এই পদক্ষেপগুলো নিলে বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে এবং যুদ্ধ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।

আলাস্কায় পুতিনকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। ছবি: এএফপি
আলাস্কায় পুতিনকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ভলোদিমির জেলেনস্কির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও দেশটিতে অস্ত্র পাঠানোও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগের মুখে তিনি আবার পিছু হটেন। ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো সতর্ক করে বলেছিল, ইউক্রেনের পতন পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। মূলত সেই আশঙ্কা থেকেই ট্রাম্প পিছু হটেন।

ট্রাম্প প্রায়ই নিজের ‘চুক্তি করার দক্ষতা’ নিয়ে গর্ব করেন। দাবি করেন, সামনাসামনি বৈঠকেই তিনি সমাধান বের করে ফেলতে পারেন। কিন্তু পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠকগুলোর কোনোটি যুদ্ধের সমাধান এগিয়ে নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন হয়তো ট্রাম্পের এই ‘চুক্তির নেশা’ ও মুখোমুখি আলোচনার প্রতি বিশ্বাসকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করছেন।

গত জুলাইয়ে পুতিন আলাস্কায় এক সম্মেলনের প্রস্তাবে রাজি হন। সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সিনেটরদের সমর্থিত রাশিয়ার একটি নিষেধাজ্ঞা বিলে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে সেই বিল স্থগিত করা হয়। গত সপ্তাহে খবর ছড়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ মিসাইল ও প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-এয়ার মিসাইল পাঠানোর কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আর ঠিক তখনই পুতিন ফোন করেন ট্রাম্পকে। আর ট্রাম্প ঘোষণা দেন সম্ভাব্য এক সম্মেলনের, যা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।

পরদিন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক ছিল টান টান, জেলেনস্কি ফিরে যান খালি হাতে। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেন, তাঁকে পুতিন প্রভাবিত করতে পারেননি। তাঁর ভাষায়, ‘জীবনে অনেকবার আমি সেরা চালবাজদের সঙ্গে খেলেছি, কিন্তু প্রতিবারই ভালোভাবে বেরিয়ে এসেছি।’

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প জেলেনস্কির সঙ্গে একাধিকবার উত্তপ্ত বসচায় জড়িয়ে পড়েন। ছবি: এএফপি
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প জেলেনস্কির সঙ্গে একাধিকবার উত্তপ্ত বসচায় জড়িয়ে পড়েন। ছবি: এএফপি

তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পরে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে আমাদের জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেল, রাশিয়া প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কূটনীতিতে আগ্রহ হারাল।’

অল্প ক’দিনের মধ্যেই ট্রাম্প একের পর এক দোদুল্যমান অবস্থান প্রকাশ করেছেন। একদিকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ভাবনা, অন্যদিকে পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে বৈঠকের পরিকল্পনা, আর ব্যক্তিগতভাবে জেলেনস্কিকে চাপ দিয়েছেন পুরো দনবাস অঞ্চল ছাড়তে। শেষ পর্যন্ত তিনি অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরতির আহ্বানে। তাঁর প্রস্তাবিত বর্তমান যুদ্ধরেখা ধরে অস্ত্রবিরতি রাশিয়া স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।

গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করতে পারবেন। এখন তিনি সে দাবি থেকে সরে এসে স্বীকার করছেন, যুদ্ধ থামানো তাঁর কল্পনার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ। এটা এক বিরল স্বীকারোক্তি। বিশেষ করে, নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা এবং এক এমন শান্তির কাঠামো গড়ার জটিলতা, যেখানে কোনো পক্ষই লড়াই ছাড়তে চায় না, বা ছাড়তে পারে না—এমন অবস্থানে যুদ্ধ থামানো আসলেই কঠিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

উত্তরায় জুলাই রেভেলসের দুই সদস্যকে কুপিয়ে জখম

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে: তিন দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...