ফজলুল কবির
এক অন্য দুনিয়ার কথা বলছে ফেসবুক। গত দুই সপ্তাহ ধরেই প্রযুক্তি বিশ্বে এই নয়া দুনিয়ার ধারণা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। কথা হলো এই নয়া দুনিয়া কী? একটু খোলাসা করা যাক।
ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানি থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠান একটি ‘মেটাভার্স কোম্পানিতে’ পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জাকারবার্গের ঘোষণায় উল্লিখিত ‘মেটাভার্স’ শব্দটি নিয়েই হচ্ছে এখন যত আলোচনা। মেটাভার্স মূলত একটি রোমান্টিক ধারণা। শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক নিল স্টেফেনসন। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘স্নো ক্র্যাশ’–এ তিনি প্রথম এই শব্দ ব্যবহার করেন। এটি দিয়ে তিনি মূলত এমন এক জগতের কথা বলতে চেয়েছেন, যেখানে চেনা বাস্তবতা ও ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আজকের দুনিয়া ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা এবং এর ক্রমসম্প্রসারণ দেখছে বেশ ভালোভাবেই। তাহলে মার্ক জাকারবার্গ আর কী চাইছেন? কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন?
অনেকে ভাবতে পারে, একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি থেকে উঠে আসা একটি শব্দ না হয় জাকারবার্গ উচ্চারণ করেছেন, তা নিয়ে এত আলাপের কী আছে? আছে। কারণ, বর্তমানে এমন বহু শব্দ আলোচিত ও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, যা উঠে এসেছে এমনই কোনো কল্পকাহিনি থেকে। দু–একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। বর্তমানে যে ‘সাইবারস্পেস’ শব্দটি কথায় কথায় ব্যবহার হচ্ছে, তা ১৯৮২ সালে প্রথম ব্যবহার করেন কানাডীয়–মার্কিন লেখক উইলিয়াম গিবসন। আর যে যন্ত্রের কাছে কাজ হারানোর শঙ্কায় এখন ভুগছে মানুষ, সেই ‘রোবট’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয়েছিল চেকোস্লোভাকিয়ার লেখক ক্যারেল সাপেকের ১৯২০ সালে লেখা একটি নাটকে।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে জাকারবার্গের কথাকে কেন গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। উপরন্তু এই ‘মেটাভার্স’ নিয়ে আলোচনা তো হঠাৎ করে উঠে আসেনি। এই আলোচনা শুরু হয়েছে আরও বেশ আগে। এমনকি জাকারবার্গ উচ্চারণের আগে থেকেই এটি আলোচিত হচ্ছে। এমনকি জাকারবার্গও বিষয়টি নিয়ে আগে কথা বলেছেন। তারপরও এই সময়ে বিষয়টি নিয়ে এত হইচই হওয়ার কারণ মূলত প্রযুক্তি মুঘলদের একচেটিয়া হয়ে ওঠা। ফেসবুক, গুগল, আমাজন, অ্যাপলসহ বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এই প্রযুক্তি মুঘলদের রাশ টেনে ধরার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও রাশ ঠিক টেনে ধরা যাচ্ছে না। তার কারণ সম্ভবত প্রযুক্তির এই সম্প্রসারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করার একটি ‘ছদ্ম’ অনুভূতি সঞ্চার করছে বলে। ‘ছদ্ম’ কেন বলা হলো, তা পৃথক আলোচনা দাবি রাখে বলে এখানে এড়িয়ে যাওয়া হলো।
ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গ এই মেটাভার্স ধারণা নিয়ে আগেও কথা বলেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, ২০১৪ সালে যখন ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে তাঁর কোম্পানি ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি স্টার্টআপ ‘অকুলাস’ কিনে নেয়। সে সময়ই তিনি বলেছিলেন, এই পদক্ষেপ গ্রাহকদের এক নতুন ভার্চ্যুয়াল অভিজ্ঞতা এনে দেবে, যখন তিনি একই সময় দুটি বাস্তবতায় উপস্থিত থাকার অনুভূতি পাবেন। এর কিছুদিন পরই ফেসবুক জানিয়েছিল, তারা তাদের ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি ব্যবসায় একটি নতুন মেটাভার্স প্রোডাক্ট গ্রুপ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের অধীনে কয়েক শ নতুন কর্মী নিয়োগের ঘোষণাও সে সময় তারা দিয়েছিল। আর সম্প্রতি তারা ঘোষণা করল, ফেসবুক রিয়্যালিটি ল্যাবে তারা কয়েক শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। ফলে পরিকল্পনার পরিসরটি গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে।
কথা হলো ‘মেটাভার্স’ বস্তুটি আসলে কী? সহজভাবে বুঝতে হলে একে একটি অত্যাধুনিক অনলাইন গেমের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু খেলোয়াড় একসঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এই অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে তারা একই সঙ্গে খেলা ও গল্প করার পাশাপাশি আয়ও করতে পারে। এমনকি চাইলে হয়তো একটু কেনাকাটাও করল। অর্থাৎ, এটি হচ্ছে নেট দুনিয়ার আরেকটি জীবন, যেখানে চেনা বাস্তবের প্রায় সবকিছুই করা যাবে। জাকারবার্গ সরাসরি বলছেন, বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়াকে আরও ভালোভাবে মিশিয়ে একটি নয়া দুনিয়ার পত্তন করতে চান তিনি। আর চান সেই নয়া দুনিয়ায় তিনি ও তাঁর কোম্পানিই রাজ করবে।
এমন যেকোনো ঘোষণাই নড়েচড়ে বসার জন্য যথেষ্ট। কারণ স্ট্যাটিস্টা বলছে, প্রতি মাসে ফেসবুক ব্যবহার করেন সারা বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি লোক। তাই যখন এই প্ল্যাটফর্মের প্রধানের কাছ থেকেই নয়া দুনিয়া নির্মাণের ঘোষণাটি আসে, তখন তা বাড়তি মনোযোগ দাবি করতে বাধ্য।
মানুষ এখন পর্যন্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে তার বেশ কয়েকটি ইন্দ্রিয়কে তৃপ্ত করার উপায় খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে দৃষ্টি, শ্রবণ প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়, যা বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে বহু আগেই একটি বিকল্প খুঁজে পেয়েছে। এ দুই মাধ্যমই সময়ের সঙ্গে উন্নত হয়েছে। বেড়েছে এর পরিসর। আজকের দুনিয়ায় যে ভিডিও গেম নিয়ে শিশুরা মেতে আছে, তার উন্নয়ন কত ধাপে কী করে হলো, তা বিস্তর আলোচনার দাবি রাখে। আর এই পথ ধরেই ক্রমে এগিয়ে আসা ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা আজ ভীষণ রকম বাস্তব। তাহলে বাকি থাকল কী? স্পর্শ, গন্ধ ও স্বাদ? জাকারবার্গ কি এই পথেও এগিয়ে যেতে চান? অসম্ভব মনে হচ্ছে? এক শতক আগে তো এমন অনেক কিছুকেই অসম্ভব মনে হয়েছে, যা আজ বাস্তব।
অর্থাৎ, সত্যিকার অর্থেই এক নয়া দুনিয়া অপেক্ষায় আছে। কিন্তু সেই দুনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রকরণটি ঠিক কেমন হবে, তা এখনই বোঝা মুশকিল। কারণ, পুরোনো শব্দ বরাবরই নতুন ধারণাকে সঠিকভাবে বর্ণনা করতে গলদঘর্ম হয়। তাই এই ‘মেটাভার্স’ শব্দটি মন্দ নয়। কিন্তু এই মেটাভার্স প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো আসলে কোন মাত্রায় ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবে, তাও চিন্তার দাবি রাখে।
খোদ বাংলাদেশেই ফেসবুক পোস্ট বা ফেসবুকে নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে মারামারি হানাহানি, কোনো একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তির ওপর আক্রমণের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও জনমত প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে। টিকটক কাণ্ড নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা তো চলছে সব সময়ই। বলা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে যে আইনি কাঠামো দেশে দেশে রয়েছে, তা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো সৃষ্ট এই নতুন বাস্তবতাকে ঠিক সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না। প্রতিনিয়ত সাইবার অপরাধ হচ্ছে। এর ধরন পাল্টাচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য বলে আর কিছুই থাকছে না। মাসে ৩০০ কোটি কর্মী দিয়ে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান যে আয় করছে, তার জন্য তাকে মজুরি বাবদ কোনো কিছু গুনতে হচ্ছে না। আর এর মধ্য দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠছে জাকারবার্গদের পেট ও পকেট। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্ণধারেরা এমন এক জগতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মানুষকে, যা নতুন এক বৈষম্যের সমীকরণও সামনে হাজির করছে, যা মোকাবিলা পুরোনো গণিত দিয়ে আর সম্ভব হচ্ছে না।
কথা হলো বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি এতই একচেটিয়া হয়ে ওঠে, এবং সামনে যদি এতটাই অপরিচয়ের সংকট থেকে থাকে, তবে মানুষ তার সঙ্গে আছে কেন? আছে রাষ্ট্রগুলোয় বিদ্যমান বাস্তবতার কারণে। আর্থ–সামাজিক ও রাজনৈতিক যে বাস্তবতা পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা এত দিন ধরে নির্মাণ করেছে, তার ওপর মানুষ আর আস্থা পাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র প্রযোজিত ও প্রচারিত যে গণতন্ত্র, তার অন্তঃসারশূন্যতা মানুষ দেখে ফেলেছে। ভিন্ন মত প্রকাশ তো দূরের কথা, বিশ্বের বহু দেশেই এখন কথা বলাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির কারণে তৈরি হওয়া নতুন বাস্তবতা মোকাবিলায় সরকারগুলো যে ডিজিটাল আইন করার পথে হাঁটছে, তাও এমনকি মানুষের কণ্ঠই রোধ করছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সে বেছে নিচ্ছে মত প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে। এমনকি যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাও বাজারে প্রতিযোগিতার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না, তখন ফেসবুকে একটি পেজ বা গ্রুপ খুলে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করতে পারছে মানুষ। এক হিসেবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যা করার কথা, তার একটি ‘সীমিত সংস্করণ’ (আগেই বলা হয়েছে—এটা ভিন্ন আলোচনার দাবি রাখে) ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো দিচ্ছে। গণতন্ত্রের একেবারে মৌলিক শর্তটির অনুপস্থিতিই আদতে জাকারবার্গদের এমন নয়া দুনিয়া তৈরির প্রেরণা জোগাচ্ছে। তাই ফেসবুক যখন একেবারে নয়া আরেক দুনিয়ার কথা বলছে, তখন তা সচকিত হতে বলছে সবাইকে। একই সঙ্গে এমন একটা কিছুর প্রাসঙ্গিকতা তৈরি হওয়ার কারণ ও এর সম্ভাব্য ফলাফল বিশ্লেষণের দিকে তাকানোর দাবিও জানাচ্ছে সে।
এক অন্য দুনিয়ার কথা বলছে ফেসবুক। গত দুই সপ্তাহ ধরেই প্রযুক্তি বিশ্বে এই নয়া দুনিয়ার ধারণা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। কথা হলো এই নয়া দুনিয়া কী? একটু খোলাসা করা যাক।
ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ ঘোষণা দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানি থেকে তাঁর প্রতিষ্ঠান একটি ‘মেটাভার্স কোম্পানিতে’ পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জাকারবার্গের ঘোষণায় উল্লিখিত ‘মেটাভার্স’ শব্দটি নিয়েই হচ্ছে এখন যত আলোচনা। মেটাভার্স মূলত একটি রোমান্টিক ধারণা। শব্দটি প্রথম প্রয়োগ করেন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক নিল স্টেফেনসন। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘স্নো ক্র্যাশ’–এ তিনি প্রথম এই শব্দ ব্যবহার করেন। এটি দিয়ে তিনি মূলত এমন এক জগতের কথা বলতে চেয়েছেন, যেখানে চেনা বাস্তবতা ও ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। আজকের দুনিয়া ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা এবং এর ক্রমসম্প্রসারণ দেখছে বেশ ভালোভাবেই। তাহলে মার্ক জাকারবার্গ আর কী চাইছেন? কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছেন?
অনেকে ভাবতে পারে, একটি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি থেকে উঠে আসা একটি শব্দ না হয় জাকারবার্গ উচ্চারণ করেছেন, তা নিয়ে এত আলাপের কী আছে? আছে। কারণ, বর্তমানে এমন বহু শব্দ আলোচিত ও প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, যা উঠে এসেছে এমনই কোনো কল্পকাহিনি থেকে। দু–একটি উদাহরণ দিলেই বিষয়টি বোঝা যাবে। বর্তমানে যে ‘সাইবারস্পেস’ শব্দটি কথায় কথায় ব্যবহার হচ্ছে, তা ১৯৮২ সালে প্রথম ব্যবহার করেন কানাডীয়–মার্কিন লেখক উইলিয়াম গিবসন। আর যে যন্ত্রের কাছে কাজ হারানোর শঙ্কায় এখন ভুগছে মানুষ, সেই ‘রোবট’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার হয়েছিল চেকোস্লোভাকিয়ার লেখক ক্যারেল সাপেকের ১৯২০ সালে লেখা একটি নাটকে।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে জাকারবার্গের কথাকে কেন গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। উপরন্তু এই ‘মেটাভার্স’ নিয়ে আলোচনা তো হঠাৎ করে উঠে আসেনি। এই আলোচনা শুরু হয়েছে আরও বেশ আগে। এমনকি জাকারবার্গ উচ্চারণের আগে থেকেই এটি আলোচিত হচ্ছে। এমনকি জাকারবার্গও বিষয়টি নিয়ে আগে কথা বলেছেন। তারপরও এই সময়ে বিষয়টি নিয়ে এত হইচই হওয়ার কারণ মূলত প্রযুক্তি মুঘলদের একচেটিয়া হয়ে ওঠা। ফেসবুক, গুগল, আমাজন, অ্যাপলসহ বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো এরই মধ্যে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের প্রতিটি দেশেই এই প্রযুক্তি মুঘলদের রাশ টেনে ধরার বিষয়টি খুব গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হচ্ছে। কিন্তু তারপরও রাশ ঠিক টেনে ধরা যাচ্ছে না। তার কারণ সম্ভবত প্রযুক্তির এই সম্প্রসারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করার একটি ‘ছদ্ম’ অনুভূতি সঞ্চার করছে বলে। ‘ছদ্ম’ কেন বলা হলো, তা পৃথক আলোচনা দাবি রাখে বলে এখানে এড়িয়ে যাওয়া হলো।
ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গ এই মেটাভার্স ধারণা নিয়ে আগেও কথা বলেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানাচ্ছে, ২০১৪ সালে যখন ২০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে তাঁর কোম্পানি ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি স্টার্টআপ ‘অকুলাস’ কিনে নেয়। সে সময়ই তিনি বলেছিলেন, এই পদক্ষেপ গ্রাহকদের এক নতুন ভার্চ্যুয়াল অভিজ্ঞতা এনে দেবে, যখন তিনি একই সময় দুটি বাস্তবতায় উপস্থিত থাকার অনুভূতি পাবেন। এর কিছুদিন পরই ফেসবুক জানিয়েছিল, তারা তাদের ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি ব্যবসায় একটি নতুন মেটাভার্স প্রোডাক্ট গ্রুপ তৈরি করেছে। একই সঙ্গে এই প্রকল্পের অধীনে কয়েক শ নতুন কর্মী নিয়োগের ঘোষণাও সে সময় তারা দিয়েছিল। আর সম্প্রতি তারা ঘোষণা করল, ফেসবুক রিয়্যালিটি ল্যাবে তারা কয়েক শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। ফলে পরিকল্পনার পরিসরটি গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে।
কথা হলো ‘মেটাভার্স’ বস্তুটি আসলে কী? সহজভাবে বুঝতে হলে একে একটি অত্যাধুনিক অনলাইন গেমের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যেখানে দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু খেলোয়াড় একসঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এই অনলাইন বা ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে তারা একই সঙ্গে খেলা ও গল্প করার পাশাপাশি আয়ও করতে পারে। এমনকি চাইলে হয়তো একটু কেনাকাটাও করল। অর্থাৎ, এটি হচ্ছে নেট দুনিয়ার আরেকটি জীবন, যেখানে চেনা বাস্তবের প্রায় সবকিছুই করা যাবে। জাকারবার্গ সরাসরি বলছেন, বাস্তব দুনিয়ার সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল দুনিয়াকে আরও ভালোভাবে মিশিয়ে একটি নয়া দুনিয়ার পত্তন করতে চান তিনি। আর চান সেই নয়া দুনিয়ায় তিনি ও তাঁর কোম্পানিই রাজ করবে।
এমন যেকোনো ঘোষণাই নড়েচড়ে বসার জন্য যথেষ্ট। কারণ স্ট্যাটিস্টা বলছে, প্রতি মাসে ফেসবুক ব্যবহার করেন সারা বিশ্বের প্রায় ৩০০ কোটি লোক। তাই যখন এই প্ল্যাটফর্মের প্রধানের কাছ থেকেই নয়া দুনিয়া নির্মাণের ঘোষণাটি আসে, তখন তা বাড়তি মনোযোগ দাবি করতে বাধ্য।
মানুষ এখন পর্যন্ত প্রযুক্তির মাধ্যমে তার বেশ কয়েকটি ইন্দ্রিয়কে তৃপ্ত করার উপায় খুঁজে পেয়েছে। এর মধ্যে দৃষ্টি, শ্রবণ প্রভৃতির কথা উল্লেখ করা যায়, যা বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে বহু আগেই একটি বিকল্প খুঁজে পেয়েছে। এ দুই মাধ্যমই সময়ের সঙ্গে উন্নত হয়েছে। বেড়েছে এর পরিসর। আজকের দুনিয়ায় যে ভিডিও গেম নিয়ে শিশুরা মেতে আছে, তার উন্নয়ন কত ধাপে কী করে হলো, তা বিস্তর আলোচনার দাবি রাখে। আর এই পথ ধরেই ক্রমে এগিয়ে আসা ভার্চ্যুয়াল বাস্তবতা আজ ভীষণ রকম বাস্তব। তাহলে বাকি থাকল কী? স্পর্শ, গন্ধ ও স্বাদ? জাকারবার্গ কি এই পথেও এগিয়ে যেতে চান? অসম্ভব মনে হচ্ছে? এক শতক আগে তো এমন অনেক কিছুকেই অসম্ভব মনে হয়েছে, যা আজ বাস্তব।
অর্থাৎ, সত্যিকার অর্থেই এক নয়া দুনিয়া অপেক্ষায় আছে। কিন্তু সেই দুনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রকরণটি ঠিক কেমন হবে, তা এখনই বোঝা মুশকিল। কারণ, পুরোনো শব্দ বরাবরই নতুন ধারণাকে সঠিকভাবে বর্ণনা করতে গলদঘর্ম হয়। তাই এই ‘মেটাভার্স’ শব্দটি মন্দ নয়। কিন্তু এই মেটাভার্স প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো আসলে কোন মাত্রায় ক্ষমতাশালী হয়ে উঠবে, তাও চিন্তার দাবি রাখে।
খোদ বাংলাদেশেই ফেসবুক পোস্ট বা ফেসবুকে নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে মারামারি হানাহানি, কোনো একটি গোষ্ঠী বা ব্যক্তির ওপর আক্রমণের ঘটনা পর্যন্ত ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশেও জনমত প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর বিরুদ্ধে। টিকটক কাণ্ড নিয়ে আলোচনা–সমালোচনা তো চলছে সব সময়ই। বলা হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বে যে আইনি কাঠামো দেশে দেশে রয়েছে, তা প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো সৃষ্ট এই নতুন বাস্তবতাকে ঠিক সামাল দিয়ে উঠতে পারছে না। প্রতিনিয়ত সাইবার অপরাধ হচ্ছে। এর ধরন পাল্টাচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য বলে আর কিছুই থাকছে না। মাসে ৩০০ কোটি কর্মী দিয়ে ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠান যে আয় করছে, তার জন্য তাকে মজুরি বাবদ কোনো কিছু গুনতে হচ্ছে না। আর এর মধ্য দিয়ে ফুলেফেঁপে উঠছে জাকারবার্গদের পেট ও পকেট। প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ও তাদের কর্ণধারেরা এমন এক জগতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে মানুষকে, যা নতুন এক বৈষম্যের সমীকরণও সামনে হাজির করছে, যা মোকাবিলা পুরোনো গণিত দিয়ে আর সম্ভব হচ্ছে না।
কথা হলো বড় প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি এতই একচেটিয়া হয়ে ওঠে, এবং সামনে যদি এতটাই অপরিচয়ের সংকট থেকে থাকে, তবে মানুষ তার সঙ্গে আছে কেন? আছে রাষ্ট্রগুলোয় বিদ্যমান বাস্তবতার কারণে। আর্থ–সামাজিক ও রাজনৈতিক যে বাস্তবতা পুঁজিতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা এত দিন ধরে নির্মাণ করেছে, তার ওপর মানুষ আর আস্থা পাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্র প্রযোজিত ও প্রচারিত যে গণতন্ত্র, তার অন্তঃসারশূন্যতা মানুষ দেখে ফেলেছে। ভিন্ন মত প্রকাশ তো দূরের কথা, বিশ্বের বহু দেশেই এখন কথা বলাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির কারণে তৈরি হওয়া নতুন বাস্তবতা মোকাবিলায় সরকারগুলো যে ডিজিটাল আইন করার পথে হাঁটছে, তাও এমনকি মানুষের কণ্ঠই রোধ করছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে সে বেছে নিচ্ছে মত প্রকাশের একটি মাধ্যম হিসেবে। এমনকি যখন রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাও বাজারে প্রতিযোগিতার সমান অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না, তখন ফেসবুকে একটি পেজ বা গ্রুপ খুলে স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করতে পারছে মানুষ। এক হিসেবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের যা করার কথা, তার একটি ‘সীমিত সংস্করণ’ (আগেই বলা হয়েছে—এটা ভিন্ন আলোচনার দাবি রাখে) ফেসবুকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো দিচ্ছে। গণতন্ত্রের একেবারে মৌলিক শর্তটির অনুপস্থিতিই আদতে জাকারবার্গদের এমন নয়া দুনিয়া তৈরির প্রেরণা জোগাচ্ছে। তাই ফেসবুক যখন একেবারে নয়া আরেক দুনিয়ার কথা বলছে, তখন তা সচকিত হতে বলছে সবাইকে। একই সঙ্গে এমন একটা কিছুর প্রাসঙ্গিকতা তৈরি হওয়ার কারণ ও এর সম্ভাব্য ফলাফল বিশ্লেষণের দিকে তাকানোর দাবিও জানাচ্ছে সে।
শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন ইস্যুতে কূটনৈতিক পর্যায়ে বাগ্যুদ্ধের পর প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশ সম্প্রতি পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য বিধিনিষেধ আরোপ করছে। এতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা সম্ভাব্য ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগেআব্দুল বাসিত সতর্ক করে বলেন, আগামী কয়েক সপ্তাহই ‘পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে তা নির্ধারণ করবে।’ তিনি বলেন, ‘জেনারেল মুনির কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করেন, তা তাঁকে একজন সৈনিক হিসেবে, একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে এবং পাকিস্তান কী ধরনের আঞ্চলিক অভিনেতা হতে চায়—তা সংজ্ঞায়িত করবে এবং এই মুহূর্তে সেই পছন্দটি মূল
১ দিন আগেএই ধরনের হামলা প্রায়শই প্রতিশোধ হিসেবে চালানো হয়। যখন কোনো সামরিক ইউনিট আক্রান্ত হয়, তখন সেখানকার কর্মীরা পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এমন অভিযান চালায়। তবে এই ধরনের অভিযান কখনোই নিশ্চিত করা হয় না। এর উদ্দেশ্য হলো অন্য দেশকে একটি বার্তা দেওয়া, কিন্তু এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা যাতে তারা পাল্টা জবাব দিতে
১ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের সেলেম স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক কানিষ্কম সাতাশিভম নিউজউইককে বলেন, জনসংখ্যা এবং জিডিপির ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীনতা থাকলেও দুই দেশের সামরিক শক্তি ‘ততটা ভিন্ন নয়।’ তিনি জানান, ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পরাজয়ের পর পাকিস্তান নিশ্চিত করেছে যে তাদের সক্ষমতা ‘অন্তত ভারতের
১ দিন আগে