আব্দুর রহমান

পাকিস্তান ও সৌদি আরব এক ঐতিহাসিক কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি ‘স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা এসএমডিএ স্বাক্ষর করেছে। এতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এই দুই দেশের কোনো একটির বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসন হলে সেটিকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই অবস্থায় উভয় দেশ পরস্পরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সৌদি আরব সফরকালে ‘স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’—নামে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। উভয় দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চুক্তি কয়েক দশক ধরে চলা নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করছে।
নতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ। এ ছাড়া, এতে প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই চুক্তিতে। এর আওতায় প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সামরিক সরঞ্জামের যৌথ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিও রয়েছে, যা পাকিস্তানি সামরিক কর্মীদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যগত সৌদি সেনাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
এই উন্নত প্রতিরক্ষা সম্পর্কের পেছনের কারণ হলো—গালফের আরব রাষ্ট্রগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে শঙ্কা’ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগে, ইসরায়েলের গত সপ্তাহে কাতারে আক্রমণের পর বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নিয়ে এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চুক্তি বছরের পর বছর চলা আলোচনার সমাপ্তি। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপ নয়, বরং আমাদের দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর সহযোগিতাকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি পদক্ষেপ।’
সৌদি আরবের কর্মকর্তারা যাই বলুন না কেন যে, এটি নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপ নয়, বাস্তবে এই চুক্তির উপযোগিতা অনেক বেশি। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে সৌদি আরব কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশের সঙ্গে এই ধরনের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে গেল। আর এই বিষয়টিই পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সমীকরণের হিসাব পাল্টে দিতে বাধ্য।
এই চুক্তি সৌদি আরবের কৌশলগত অংশীদারত্ব বৈচিত্র্য করার দৃঢ় ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে। ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদ নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে আরও স্বাধীনতা খোঁজার প্রয়াস পেয়েছে। আর শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, পারমাণবিক সক্ষমতা এবং ভৌগোলিক কৌশলগত নৈকট্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সৌদি আরবের কাছে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই চুক্তি থেকে সৌদি আরব এবং পাকিস্তান উপকৃত হলেও, এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণ উলটপালট করে দিয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানে সৌদি দূতাবাসের মিডিয়া অ্যাটাশে ড. জামাল আল–হারবি বলেন, ‘এই চুক্তি উভয় অঞ্চলের নিরাপত্তা কৌশলকে পুনর্গঠন করতে পারে। আক্রমণের মুখে যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরব ও পাকিস্তান একটি স্পষ্ট প্রতিরোধী বার্তা পাঠাচ্ছে। এই প্রতিশ্রুতির ফলে এই দুই দেশের প্রতিপক্ষের জন্য শত্রুতার সম্ভাবনা কমতে পারে। কারণ তারা জানে যে প্রতিশোধের ক্ষেত্রে দুই শক্তিশালী দেশ একযোগে কাজ করবে।’
মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র থাকা দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হলেও বিগত কয়েক মাসে ইসরায়েলের লাগামছাড়া আচরণ, বিভিন্ন দেশে নির্বিচারে হামলা আরব দেশগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে যে, ওয়াশিংটন তাদের আদৌ তেল আবিরের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে চায় কি না। এর আগে, সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ক উন্নত করেছে। এখন আবার পাকিস্তানের সঙ্গে এই সামরিক চুক্তি! এটা থেকে স্পষ্ট যে, সৌদি আরব তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে নিজেদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র তালাশ করছে।
সৌদি–পাকিস্তান এই চুক্তির ফলে, ইসরায়েল এখন নতুন করে ভাবতে বাধ্য হতে পারে। আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডের’ আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। সৌদি আরবও সেই পথেই হাঁটছিল। একই পথে হাঁটছে সিরিয়াও। তবে গাজায় ইসরায়েলের দুই বছর চালানো বর্বরতার কারণে সৌদি আরব মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এই অবস্থায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের এই চুক্তি নিজেদের নতুন আত্মপরিচয় তৈরিরই প্রচেষ্টা। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক ভালো হলেও, এই চুক্তি ওয়াশিংটনকে বিরক্ত–বিব্রত করতে পারে। তারা এই চুক্তিকে ওয়াশিংটনের ওপর থেকে রিয়াদের আস্থা টলে যাওয়ার নিদর্শন হিসেবেই মনে করতে পারে।
আবার যখন, ওয়াশিংটন কাতারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার পরও দোহায় ইসরায়েলি হামলা ঠেকাননি—জানার পরও—তখন সৌদি আরবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। যদিও বাস্তবতা অনেকটাই কঠিন। কারণ, এখনো কাতারে মার্কিন সেনাঘাঁটি রয়ে গেছে। ফলে, বিষয়টি ওয়াশিংটনের অনুমোদন নাও পেতে পারে। কিন্তু এই সম্ভাবনা থেকেই যায় যে, আরব উপদ্বীপের দেশগুলো নিজেদের ইসরায়েলের সম্ভাব্য আগ্রাসন থেকে বাঁচতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে যেতে পারে। সেটি না হলেও নিদেন পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে সামরিক সহায়তার বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানের কথা ভাবতে পারে।
পাকিস্তানে ইরানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জাভিদ হুসাইন বলেন, ‘পাকিস্তান এবং সৌদি আরব ঐতিহ্যগতভাবে ঘনিষ্ঠ ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।’ তিনি বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করবে। তাঁর মতে, ‘বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তিতে যে ধারা রয়েছে—যার অধীনে এক দেশের ওপর হামলাকে অন্য দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে। এই চুক্তি ভারত বা ইসরায়েলের মতো দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট ও শক্তিশালী বার্তা দেবে এবং পাকিস্তান বা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত রাখবে।’
জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর এই চুক্তিকে ভারত ও দেশটির অন্যতম মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানের ‘কৌশলগত বিজয়’ হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, এই যৌথ বিবৃতি দেখাচ্ছে যে—এই চুক্তির গুরুত্ব রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায়, এই চুক্তি প্রমাণ করছে যে—পাকিস্তান নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারে, তাদের ভারত ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে আরও দুটি দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি স্বাক্ষর করবে।’ তবে তিনি দেশ দুটির নাম উল্লেখ করেননি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এমনকি আমেরিকান ঘাঁটিও ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন। আগে ধারণা ছিল যে, আমেরিকা তার মিত্রদের পাশে থাকে, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর আর তা সত্য নয়। ইসরায়েলও আমেরিকার মিত্রদের ওপর আক্রমণ করেছে।’
মীর যোগ করেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই চুক্তির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এটি পাকিস্তানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বন্ধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই। তাঁর মতে, ‘এটি পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত বিজয় হলেও, একই সঙ্গে সৌদি আরবের প্রত্যাশা পূরণ করা পাকিস্তানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।’
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের এসএমডিএ স্বাক্ষর আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত। তবে এর প্রভাব কেবল সামরিক নয়, বরং বিনিয়োগ প্রবাহ ও বাজার স্থিতিশীলতার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এটি। এই আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে, এক দেশের ওপর আক্রমণ অন্য দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর মাধ্যমে সৌদি আরব ও পাকিস্তান কেবল নিজেদের কৌশলগত মিত্রতা দৃঢ় করেছে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে পুনর্গঠনের সংকেত দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য, এই চুক্তি নতুন সুযোগের পাশাপাশি ঝুঁকিও তৈরি করছে। কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক করিডর, প্রতিরক্ষা শিল্প এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুনভাবে আকার দিচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে দ্য অ্যাডভোকেট পোস্ট। এটি বহিরাগত হুমকির বিরুদ্ধে একত্রিতভাবে কাজ করার এবং অস্থির অঞ্চলগুলোকে স্থিতিশীল করার এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যারা এমন বাজারে আগ্রহী যেখানে জিওপলিটিক্যাল ঝুঁকি কম।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি সৌদি আরবের নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা মিত্রদের বাইরে বিস্তৃত করার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে, যখন মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন আঞ্চলিক অস্থিরতা কমাতে পারে এবং গালফ ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
এই প্রতিরক্ষা চুক্তি ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের রিয়াদ সফরের সময় সৌদি আরব পাকিস্তানের খনিজ, কৃষি, অবকাঠামো এবং বিমান খাতে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পগুলো সৌদি ভিশন—২০৩০ এবং পাকিস্তানের বিদেশি মূলধন আকর্ষণের প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সৌদি বিনিয়োগ দেশের সবুজ শক্তিতে রূপান্তরকে দ্রুততর করতে পারে, আর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো ব্যবসা ও পর্যটন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়। এই চুক্তি পাকিস্তানকে সৌদি আরব ও চীনের মধ্যে একটি কৌশলগত সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, যা অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার সুযোগ বাড়াবে। এটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরকে (সিপিইসি) আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং নতুন বাণিজ্যিক রুট তৈরি করতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারের স্থিতিশীলতাকে সহায়তা করবে।
এসএমডিএ প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার নতুন সুযোগও তৈরি করেছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও সামরিক দক্ষতা, সৌদি আরবের আর্থিক সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও প্রযুক্তিতে যৌথ উদ্যোগ সম্ভব হবে। আল–জাজিরা জানিয়েছে, এই চুক্তিতে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারিং ও যৌথ সামরিক মহড়ার বিধান রয়েছে, যা উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সাইবার সিকিউরিটি সমাধানের চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে। এই খাতে বিনিয়োগ করা প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি উপকৃত হতে পারে।
যদিও এই চুক্তি সৌদি-পাকিস্তান সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, এটি অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে জটিলতা তৈরি করছে। সৌদি আরবের ভারতীয় সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে তেল রপ্তানি ও বাণিজ্য চুক্তি, প্রতিরক্ষা চুক্তির কারণে চাপের মুখে পড়তে পারে।
এই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ বৃহস্পতিবার এক্সে বলেন, ‘ভারত এই ঘটনার বিষয়ে অবগত। আমরা এর প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করব যে, এটি নয়াদিল্লির নিরাপত্তা ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।’
এক উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ককে ভারসাম্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগে কখনো এত দৃঢ় ছিল না। আমরা এই সম্পর্ককে আরও গড়ে তুলতে চলেছি এবং যেভাবেই পারি, অঞ্চলে শান্তির জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করব।’ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সতর্ক কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনা এই চাপ হ্রাস করতে পারে। কারণ উভয় দেশেরই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার স্বার্থ রয়েছে।
সৌদি-পাকিস্তান এসএমডিএ কেবল প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়—এটি অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক রূপান্তরের উদ্দীপক। এটি স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংহতি গভীর করার মাধ্যমে, চুক্তি অবকাঠামো, শক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য আঞ্চলিক গতিবিধি ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া যখন এই নতুন সহযোগিতার যুগে প্রবেশ করছে। এসএমডিএ দেখাচ্ছে কীভাবে ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাজারের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, জিও নিউজ, আরব নিউজ, দ্য গার্ডিয়ান
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক

পাকিস্তান ও সৌদি আরব এক ঐতিহাসিক কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি ‘স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা এসএমডিএ স্বাক্ষর করেছে। এতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এই দুই দেশের কোনো একটির বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসন হলে সেটিকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই অবস্থায় উভয় দেশ পরস্পরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সৌদি আরব সফরকালে ‘স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’—নামে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। উভয় দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চুক্তি কয়েক দশক ধরে চলা নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করছে।
নতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ। এ ছাড়া, এতে প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই চুক্তিতে। এর আওতায় প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সামরিক সরঞ্জামের যৌথ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিও রয়েছে, যা পাকিস্তানি সামরিক কর্মীদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যগত সৌদি সেনাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
এই উন্নত প্রতিরক্ষা সম্পর্কের পেছনের কারণ হলো—গালফের আরব রাষ্ট্রগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে শঙ্কা’ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগে, ইসরায়েলের গত সপ্তাহে কাতারে আক্রমণের পর বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নিয়ে এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চুক্তি বছরের পর বছর চলা আলোচনার সমাপ্তি। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপ নয়, বরং আমাদের দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর সহযোগিতাকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি পদক্ষেপ।’
সৌদি আরবের কর্মকর্তারা যাই বলুন না কেন যে, এটি নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপ নয়, বাস্তবে এই চুক্তির উপযোগিতা অনেক বেশি। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে সৌদি আরব কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশের সঙ্গে এই ধরনের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে গেল। আর এই বিষয়টিই পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সমীকরণের হিসাব পাল্টে দিতে বাধ্য।
এই চুক্তি সৌদি আরবের কৌশলগত অংশীদারত্ব বৈচিত্র্য করার দৃঢ় ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে। ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদ নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে আরও স্বাধীনতা খোঁজার প্রয়াস পেয়েছে। আর শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, পারমাণবিক সক্ষমতা এবং ভৌগোলিক কৌশলগত নৈকট্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সৌদি আরবের কাছে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই চুক্তি থেকে সৌদি আরব এবং পাকিস্তান উপকৃত হলেও, এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণ উলটপালট করে দিয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানে সৌদি দূতাবাসের মিডিয়া অ্যাটাশে ড. জামাল আল–হারবি বলেন, ‘এই চুক্তি উভয় অঞ্চলের নিরাপত্তা কৌশলকে পুনর্গঠন করতে পারে। আক্রমণের মুখে যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরব ও পাকিস্তান একটি স্পষ্ট প্রতিরোধী বার্তা পাঠাচ্ছে। এই প্রতিশ্রুতির ফলে এই দুই দেশের প্রতিপক্ষের জন্য শত্রুতার সম্ভাবনা কমতে পারে। কারণ তারা জানে যে প্রতিশোধের ক্ষেত্রে দুই শক্তিশালী দেশ একযোগে কাজ করবে।’
মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র থাকা দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হলেও বিগত কয়েক মাসে ইসরায়েলের লাগামছাড়া আচরণ, বিভিন্ন দেশে নির্বিচারে হামলা আরব দেশগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে যে, ওয়াশিংটন তাদের আদৌ তেল আবিরের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে চায় কি না। এর আগে, সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ক উন্নত করেছে। এখন আবার পাকিস্তানের সঙ্গে এই সামরিক চুক্তি! এটা থেকে স্পষ্ট যে, সৌদি আরব তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে নিজেদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র তালাশ করছে।
সৌদি–পাকিস্তান এই চুক্তির ফলে, ইসরায়েল এখন নতুন করে ভাবতে বাধ্য হতে পারে। আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডের’ আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। সৌদি আরবও সেই পথেই হাঁটছিল। একই পথে হাঁটছে সিরিয়াও। তবে গাজায় ইসরায়েলের দুই বছর চালানো বর্বরতার কারণে সৌদি আরব মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এই অবস্থায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের এই চুক্তি নিজেদের নতুন আত্মপরিচয় তৈরিরই প্রচেষ্টা। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক ভালো হলেও, এই চুক্তি ওয়াশিংটনকে বিরক্ত–বিব্রত করতে পারে। তারা এই চুক্তিকে ওয়াশিংটনের ওপর থেকে রিয়াদের আস্থা টলে যাওয়ার নিদর্শন হিসেবেই মনে করতে পারে।
আবার যখন, ওয়াশিংটন কাতারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার পরও দোহায় ইসরায়েলি হামলা ঠেকাননি—জানার পরও—তখন সৌদি আরবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। যদিও বাস্তবতা অনেকটাই কঠিন। কারণ, এখনো কাতারে মার্কিন সেনাঘাঁটি রয়ে গেছে। ফলে, বিষয়টি ওয়াশিংটনের অনুমোদন নাও পেতে পারে। কিন্তু এই সম্ভাবনা থেকেই যায় যে, আরব উপদ্বীপের দেশগুলো নিজেদের ইসরায়েলের সম্ভাব্য আগ্রাসন থেকে বাঁচতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে যেতে পারে। সেটি না হলেও নিদেন পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে সামরিক সহায়তার বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানের কথা ভাবতে পারে।
পাকিস্তানে ইরানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জাভিদ হুসাইন বলেন, ‘পাকিস্তান এবং সৌদি আরব ঐতিহ্যগতভাবে ঘনিষ্ঠ ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।’ তিনি বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করবে। তাঁর মতে, ‘বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তিতে যে ধারা রয়েছে—যার অধীনে এক দেশের ওপর হামলাকে অন্য দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে। এই চুক্তি ভারত বা ইসরায়েলের মতো দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট ও শক্তিশালী বার্তা দেবে এবং পাকিস্তান বা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত রাখবে।’
জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর এই চুক্তিকে ভারত ও দেশটির অন্যতম মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানের ‘কৌশলগত বিজয়’ হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, এই যৌথ বিবৃতি দেখাচ্ছে যে—এই চুক্তির গুরুত্ব রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায়, এই চুক্তি প্রমাণ করছে যে—পাকিস্তান নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারে, তাদের ভারত ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে আরও দুটি দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি স্বাক্ষর করবে।’ তবে তিনি দেশ দুটির নাম উল্লেখ করেননি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এমনকি আমেরিকান ঘাঁটিও ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন। আগে ধারণা ছিল যে, আমেরিকা তার মিত্রদের পাশে থাকে, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর আর তা সত্য নয়। ইসরায়েলও আমেরিকার মিত্রদের ওপর আক্রমণ করেছে।’
মীর যোগ করেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই চুক্তির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এটি পাকিস্তানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বন্ধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই। তাঁর মতে, ‘এটি পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত বিজয় হলেও, একই সঙ্গে সৌদি আরবের প্রত্যাশা পূরণ করা পাকিস্তানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।’
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের এসএমডিএ স্বাক্ষর আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত। তবে এর প্রভাব কেবল সামরিক নয়, বরং বিনিয়োগ প্রবাহ ও বাজার স্থিতিশীলতার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এটি। এই আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে, এক দেশের ওপর আক্রমণ অন্য দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর মাধ্যমে সৌদি আরব ও পাকিস্তান কেবল নিজেদের কৌশলগত মিত্রতা দৃঢ় করেছে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে পুনর্গঠনের সংকেত দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য, এই চুক্তি নতুন সুযোগের পাশাপাশি ঝুঁকিও তৈরি করছে। কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক করিডর, প্রতিরক্ষা শিল্প এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুনভাবে আকার দিচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে দ্য অ্যাডভোকেট পোস্ট। এটি বহিরাগত হুমকির বিরুদ্ধে একত্রিতভাবে কাজ করার এবং অস্থির অঞ্চলগুলোকে স্থিতিশীল করার এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যারা এমন বাজারে আগ্রহী যেখানে জিওপলিটিক্যাল ঝুঁকি কম।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি সৌদি আরবের নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা মিত্রদের বাইরে বিস্তৃত করার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে, যখন মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন আঞ্চলিক অস্থিরতা কমাতে পারে এবং গালফ ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
এই প্রতিরক্ষা চুক্তি ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের রিয়াদ সফরের সময় সৌদি আরব পাকিস্তানের খনিজ, কৃষি, অবকাঠামো এবং বিমান খাতে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পগুলো সৌদি ভিশন—২০৩০ এবং পাকিস্তানের বিদেশি মূলধন আকর্ষণের প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সৌদি বিনিয়োগ দেশের সবুজ শক্তিতে রূপান্তরকে দ্রুততর করতে পারে, আর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো ব্যবসা ও পর্যটন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়। এই চুক্তি পাকিস্তানকে সৌদি আরব ও চীনের মধ্যে একটি কৌশলগত সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, যা অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার সুযোগ বাড়াবে। এটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরকে (সিপিইসি) আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং নতুন বাণিজ্যিক রুট তৈরি করতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারের স্থিতিশীলতাকে সহায়তা করবে।
এসএমডিএ প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার নতুন সুযোগও তৈরি করেছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও সামরিক দক্ষতা, সৌদি আরবের আর্থিক সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও প্রযুক্তিতে যৌথ উদ্যোগ সম্ভব হবে। আল–জাজিরা জানিয়েছে, এই চুক্তিতে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারিং ও যৌথ সামরিক মহড়ার বিধান রয়েছে, যা উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সাইবার সিকিউরিটি সমাধানের চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে। এই খাতে বিনিয়োগ করা প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি উপকৃত হতে পারে।
যদিও এই চুক্তি সৌদি-পাকিস্তান সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, এটি অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে জটিলতা তৈরি করছে। সৌদি আরবের ভারতীয় সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে তেল রপ্তানি ও বাণিজ্য চুক্তি, প্রতিরক্ষা চুক্তির কারণে চাপের মুখে পড়তে পারে।
এই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ বৃহস্পতিবার এক্সে বলেন, ‘ভারত এই ঘটনার বিষয়ে অবগত। আমরা এর প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করব যে, এটি নয়াদিল্লির নিরাপত্তা ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।’
এক উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ককে ভারসাম্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগে কখনো এত দৃঢ় ছিল না। আমরা এই সম্পর্ককে আরও গড়ে তুলতে চলেছি এবং যেভাবেই পারি, অঞ্চলে শান্তির জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করব।’ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সতর্ক কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনা এই চাপ হ্রাস করতে পারে। কারণ উভয় দেশেরই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার স্বার্থ রয়েছে।
সৌদি-পাকিস্তান এসএমডিএ কেবল প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়—এটি অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক রূপান্তরের উদ্দীপক। এটি স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংহতি গভীর করার মাধ্যমে, চুক্তি অবকাঠামো, শক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য আঞ্চলিক গতিবিধি ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া যখন এই নতুন সহযোগিতার যুগে প্রবেশ করছে। এসএমডিএ দেখাচ্ছে কীভাবে ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাজারের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, জিও নিউজ, আরব নিউজ, দ্য গার্ডিয়ান
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক
আব্দুর রহমান

পাকিস্তান ও সৌদি আরব এক ঐতিহাসিক কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি ‘স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা এসএমডিএ স্বাক্ষর করেছে। এতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এই দুই দেশের কোনো একটির বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসন হলে সেটিকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই অবস্থায় উভয় দেশ পরস্পরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সৌদি আরব সফরকালে ‘স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’—নামে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। উভয় দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চুক্তি কয়েক দশক ধরে চলা নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করছে।
নতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ। এ ছাড়া, এতে প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই চুক্তিতে। এর আওতায় প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সামরিক সরঞ্জামের যৌথ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিও রয়েছে, যা পাকিস্তানি সামরিক কর্মীদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যগত সৌদি সেনাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
এই উন্নত প্রতিরক্ষা সম্পর্কের পেছনের কারণ হলো—গালফের আরব রাষ্ট্রগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে শঙ্কা’ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগে, ইসরায়েলের গত সপ্তাহে কাতারে আক্রমণের পর বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নিয়ে এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চুক্তি বছরের পর বছর চলা আলোচনার সমাপ্তি। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপ নয়, বরং আমাদের দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর সহযোগিতাকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি পদক্ষেপ।’
সৌদি আরবের কর্মকর্তারা যাই বলুন না কেন যে, এটি নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপ নয়, বাস্তবে এই চুক্তির উপযোগিতা অনেক বেশি। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে সৌদি আরব কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশের সঙ্গে এই ধরনের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে গেল। আর এই বিষয়টিই পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সমীকরণের হিসাব পাল্টে দিতে বাধ্য।
এই চুক্তি সৌদি আরবের কৌশলগত অংশীদারত্ব বৈচিত্র্য করার দৃঢ় ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে। ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদ নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে আরও স্বাধীনতা খোঁজার প্রয়াস পেয়েছে। আর শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, পারমাণবিক সক্ষমতা এবং ভৌগোলিক কৌশলগত নৈকট্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সৌদি আরবের কাছে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই চুক্তি থেকে সৌদি আরব এবং পাকিস্তান উপকৃত হলেও, এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণ উলটপালট করে দিয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানে সৌদি দূতাবাসের মিডিয়া অ্যাটাশে ড. জামাল আল–হারবি বলেন, ‘এই চুক্তি উভয় অঞ্চলের নিরাপত্তা কৌশলকে পুনর্গঠন করতে পারে। আক্রমণের মুখে যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরব ও পাকিস্তান একটি স্পষ্ট প্রতিরোধী বার্তা পাঠাচ্ছে। এই প্রতিশ্রুতির ফলে এই দুই দেশের প্রতিপক্ষের জন্য শত্রুতার সম্ভাবনা কমতে পারে। কারণ তারা জানে যে প্রতিশোধের ক্ষেত্রে দুই শক্তিশালী দেশ একযোগে কাজ করবে।’
মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র থাকা দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হলেও বিগত কয়েক মাসে ইসরায়েলের লাগামছাড়া আচরণ, বিভিন্ন দেশে নির্বিচারে হামলা আরব দেশগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে যে, ওয়াশিংটন তাদের আদৌ তেল আবিরের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে চায় কি না। এর আগে, সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ক উন্নত করেছে। এখন আবার পাকিস্তানের সঙ্গে এই সামরিক চুক্তি! এটা থেকে স্পষ্ট যে, সৌদি আরব তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে নিজেদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র তালাশ করছে।
সৌদি–পাকিস্তান এই চুক্তির ফলে, ইসরায়েল এখন নতুন করে ভাবতে বাধ্য হতে পারে। আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডের’ আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। সৌদি আরবও সেই পথেই হাঁটছিল। একই পথে হাঁটছে সিরিয়াও। তবে গাজায় ইসরায়েলের দুই বছর চালানো বর্বরতার কারণে সৌদি আরব মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এই অবস্থায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের এই চুক্তি নিজেদের নতুন আত্মপরিচয় তৈরিরই প্রচেষ্টা। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক ভালো হলেও, এই চুক্তি ওয়াশিংটনকে বিরক্ত–বিব্রত করতে পারে। তারা এই চুক্তিকে ওয়াশিংটনের ওপর থেকে রিয়াদের আস্থা টলে যাওয়ার নিদর্শন হিসেবেই মনে করতে পারে।
আবার যখন, ওয়াশিংটন কাতারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার পরও দোহায় ইসরায়েলি হামলা ঠেকাননি—জানার পরও—তখন সৌদি আরবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। যদিও বাস্তবতা অনেকটাই কঠিন। কারণ, এখনো কাতারে মার্কিন সেনাঘাঁটি রয়ে গেছে। ফলে, বিষয়টি ওয়াশিংটনের অনুমোদন নাও পেতে পারে। কিন্তু এই সম্ভাবনা থেকেই যায় যে, আরব উপদ্বীপের দেশগুলো নিজেদের ইসরায়েলের সম্ভাব্য আগ্রাসন থেকে বাঁচতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে যেতে পারে। সেটি না হলেও নিদেন পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে সামরিক সহায়তার বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানের কথা ভাবতে পারে।
পাকিস্তানে ইরানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জাভিদ হুসাইন বলেন, ‘পাকিস্তান এবং সৌদি আরব ঐতিহ্যগতভাবে ঘনিষ্ঠ ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।’ তিনি বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করবে। তাঁর মতে, ‘বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তিতে যে ধারা রয়েছে—যার অধীনে এক দেশের ওপর হামলাকে অন্য দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে। এই চুক্তি ভারত বা ইসরায়েলের মতো দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট ও শক্তিশালী বার্তা দেবে এবং পাকিস্তান বা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত রাখবে।’
জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর এই চুক্তিকে ভারত ও দেশটির অন্যতম মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানের ‘কৌশলগত বিজয়’ হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, এই যৌথ বিবৃতি দেখাচ্ছে যে—এই চুক্তির গুরুত্ব রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায়, এই চুক্তি প্রমাণ করছে যে—পাকিস্তান নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারে, তাদের ভারত ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে আরও দুটি দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি স্বাক্ষর করবে।’ তবে তিনি দেশ দুটির নাম উল্লেখ করেননি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এমনকি আমেরিকান ঘাঁটিও ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন। আগে ধারণা ছিল যে, আমেরিকা তার মিত্রদের পাশে থাকে, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর আর তা সত্য নয়। ইসরায়েলও আমেরিকার মিত্রদের ওপর আক্রমণ করেছে।’
মীর যোগ করেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই চুক্তির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এটি পাকিস্তানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বন্ধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই। তাঁর মতে, ‘এটি পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত বিজয় হলেও, একই সঙ্গে সৌদি আরবের প্রত্যাশা পূরণ করা পাকিস্তানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।’
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের এসএমডিএ স্বাক্ষর আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত। তবে এর প্রভাব কেবল সামরিক নয়, বরং বিনিয়োগ প্রবাহ ও বাজার স্থিতিশীলতার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এটি। এই আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে, এক দেশের ওপর আক্রমণ অন্য দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর মাধ্যমে সৌদি আরব ও পাকিস্তান কেবল নিজেদের কৌশলগত মিত্রতা দৃঢ় করেছে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে পুনর্গঠনের সংকেত দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য, এই চুক্তি নতুন সুযোগের পাশাপাশি ঝুঁকিও তৈরি করছে। কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক করিডর, প্রতিরক্ষা শিল্প এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুনভাবে আকার দিচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে দ্য অ্যাডভোকেট পোস্ট। এটি বহিরাগত হুমকির বিরুদ্ধে একত্রিতভাবে কাজ করার এবং অস্থির অঞ্চলগুলোকে স্থিতিশীল করার এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যারা এমন বাজারে আগ্রহী যেখানে জিওপলিটিক্যাল ঝুঁকি কম।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি সৌদি আরবের নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা মিত্রদের বাইরে বিস্তৃত করার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে, যখন মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন আঞ্চলিক অস্থিরতা কমাতে পারে এবং গালফ ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
এই প্রতিরক্ষা চুক্তি ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের রিয়াদ সফরের সময় সৌদি আরব পাকিস্তানের খনিজ, কৃষি, অবকাঠামো এবং বিমান খাতে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পগুলো সৌদি ভিশন—২০৩০ এবং পাকিস্তানের বিদেশি মূলধন আকর্ষণের প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সৌদি বিনিয়োগ দেশের সবুজ শক্তিতে রূপান্তরকে দ্রুততর করতে পারে, আর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো ব্যবসা ও পর্যটন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়। এই চুক্তি পাকিস্তানকে সৌদি আরব ও চীনের মধ্যে একটি কৌশলগত সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, যা অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার সুযোগ বাড়াবে। এটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরকে (সিপিইসি) আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং নতুন বাণিজ্যিক রুট তৈরি করতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারের স্থিতিশীলতাকে সহায়তা করবে।
এসএমডিএ প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার নতুন সুযোগও তৈরি করেছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও সামরিক দক্ষতা, সৌদি আরবের আর্থিক সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও প্রযুক্তিতে যৌথ উদ্যোগ সম্ভব হবে। আল–জাজিরা জানিয়েছে, এই চুক্তিতে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারিং ও যৌথ সামরিক মহড়ার বিধান রয়েছে, যা উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সাইবার সিকিউরিটি সমাধানের চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে। এই খাতে বিনিয়োগ করা প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি উপকৃত হতে পারে।
যদিও এই চুক্তি সৌদি-পাকিস্তান সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, এটি অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে জটিলতা তৈরি করছে। সৌদি আরবের ভারতীয় সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে তেল রপ্তানি ও বাণিজ্য চুক্তি, প্রতিরক্ষা চুক্তির কারণে চাপের মুখে পড়তে পারে।
এই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ বৃহস্পতিবার এক্সে বলেন, ‘ভারত এই ঘটনার বিষয়ে অবগত। আমরা এর প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করব যে, এটি নয়াদিল্লির নিরাপত্তা ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।’
এক উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ককে ভারসাম্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগে কখনো এত দৃঢ় ছিল না। আমরা এই সম্পর্ককে আরও গড়ে তুলতে চলেছি এবং যেভাবেই পারি, অঞ্চলে শান্তির জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করব।’ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সতর্ক কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনা এই চাপ হ্রাস করতে পারে। কারণ উভয় দেশেরই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার স্বার্থ রয়েছে।
সৌদি-পাকিস্তান এসএমডিএ কেবল প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়—এটি অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক রূপান্তরের উদ্দীপক। এটি স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংহতি গভীর করার মাধ্যমে, চুক্তি অবকাঠামো, শক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য আঞ্চলিক গতিবিধি ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া যখন এই নতুন সহযোগিতার যুগে প্রবেশ করছে। এসএমডিএ দেখাচ্ছে কীভাবে ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাজারের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, জিও নিউজ, আরব নিউজ, দ্য গার্ডিয়ান
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক

পাকিস্তান ও সৌদি আরব এক ঐতিহাসিক কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি ‘স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা এসএমডিএ স্বাক্ষর করেছে। এতে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, এই দুই দেশের কোনো একটির বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসন হলে সেটিকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই অবস্থায় উভয় দেশ পরস্পরকে রক্ষায় এগিয়ে আসবে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সৌদি আরব সফরকালে ‘স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স অ্যাগ্রিমেন্ট’—নামে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। উভয় দেশের কর্মকর্তারা বলছেন, এই চুক্তি কয়েক দশক ধরে চলা নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী করছে।
নতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ। এ ছাড়া, এতে প্রতিরক্ষা শিল্পে সহযোগিতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই চুক্তিতে। এর আওতায় প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সামরিক সরঞ্জামের যৌথ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া, সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টিও রয়েছে, যা পাকিস্তানি সামরিক কর্মীদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যগত সৌদি সেনাদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
এই উন্নত প্রতিরক্ষা সম্পর্কের পেছনের কারণ হলো—গালফের আরব রাষ্ট্রগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে শঙ্কা’ প্রকাশ করছে। বিশেষ করে কিছুদিন আগে, ইসরায়েলের গত সপ্তাহে কাতারে আক্রমণের পর বিষয়টি আরও প্রকট হয়ে ওঠে। চুক্তি স্বাক্ষরের সময় নিয়ে এক জ্যেষ্ঠ সৌদি কর্মকর্তা বলেন, ‘এই চুক্তি বছরের পর বছর চলা আলোচনার সমাপ্তি। এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপ নয়, বরং আমাদের দুই দেশের দীর্ঘমেয়াদি ও গভীর সহযোগিতাকে প্রতিষ্ঠিত করার একটি পদক্ষেপ।’
সৌদি আরবের কর্মকর্তারা যাই বলুন না কেন যে, এটি নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা ঘটনাকে কেন্দ্র করে নেওয়া পদক্ষেপ নয়, বাস্তবে এই চুক্তির উপযোগিতা অনেক বেশি। কারণ, মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে সৌদি আরব কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধর দেশের সঙ্গে এই ধরনের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিতে গেল। আর এই বিষয়টিই পুরো মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সমীকরণের হিসাব পাল্টে দিতে বাধ্য।
এই চুক্তি সৌদি আরবের কৌশলগত অংশীদারত্ব বৈচিত্র্য করার দৃঢ় ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে। ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা শক্তিগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রিয়াদ নিরাপত্তা নীতি নির্ধারণে আরও স্বাধীনতা খোঁজার প্রয়াস পেয়েছে। আর শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, পারমাণবিক সক্ষমতা এবং ভৌগোলিক কৌশলগত নৈকট্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান সৌদি আরবের কাছে ঘনিষ্ঠ অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
এই চুক্তি থেকে সৌদি আরব এবং পাকিস্তান উপকৃত হলেও, এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণ উলটপালট করে দিয়েছে। এ বিষয়ে পাকিস্তানে সৌদি দূতাবাসের মিডিয়া অ্যাটাশে ড. জামাল আল–হারবি বলেন, ‘এই চুক্তি উভয় অঞ্চলের নিরাপত্তা কৌশলকে পুনর্গঠন করতে পারে। আক্রমণের মুখে যৌথভাবে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরব ও পাকিস্তান একটি স্পষ্ট প্রতিরোধী বার্তা পাঠাচ্ছে। এই প্রতিশ্রুতির ফলে এই দুই দেশের প্রতিপক্ষের জন্য শত্রুতার সম্ভাবনা কমতে পারে। কারণ তারা জানে যে প্রতিশোধের ক্ষেত্রে দুই শক্তিশালী দেশ একযোগে কাজ করবে।’
মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্র থাকা দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হলেও বিগত কয়েক মাসে ইসরায়েলের লাগামছাড়া আচরণ, বিভিন্ন দেশে নির্বিচারে হামলা আরব দেশগুলোকে ভাবিয়ে তুলেছে যে, ওয়াশিংটন তাদের আদৌ তেল আবিরের আগ্রাসন থেকে বাঁচাতে চায় কি না। এর আগে, সৌদি আরব ইরানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের শীতল সম্পর্ক উন্নত করেছে। এখন আবার পাকিস্তানের সঙ্গে এই সামরিক চুক্তি! এটা থেকে স্পষ্ট যে, সৌদি আরব তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে নিজেদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য মিত্র তালাশ করছে।
সৌদি–পাকিস্তান এই চুক্তির ফলে, ইসরায়েল এখন নতুন করে ভাবতে বাধ্য হতে পারে। আরব আমিরাতসহ বেশ কয়েকটি দেশ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় করা ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডের’ আওতায় ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। সৌদি আরবও সেই পথেই হাঁটছিল। একই পথে হাঁটছে সিরিয়াও। তবে গাজায় ইসরায়েলের দুই বছর চালানো বর্বরতার কারণে সৌদি আরব মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
এই অবস্থায়, পাকিস্তানের সঙ্গে সৌদি আরবের এই চুক্তি নিজেদের নতুন আত্মপরিচয় তৈরিরই প্রচেষ্টা। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে ওয়াশিংটনের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক ভালো হলেও, এই চুক্তি ওয়াশিংটনকে বিরক্ত–বিব্রত করতে পারে। তারা এই চুক্তিকে ওয়াশিংটনের ওপর থেকে রিয়াদের আস্থা টলে যাওয়ার নিদর্শন হিসেবেই মনে করতে পারে।
আবার যখন, ওয়াশিংটন কাতারের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ার পরও দোহায় ইসরায়েলি হামলা ঠেকাননি—জানার পরও—তখন সৌদি আরবের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে। যদিও বাস্তবতা অনেকটাই কঠিন। কারণ, এখনো কাতারে মার্কিন সেনাঘাঁটি রয়ে গেছে। ফলে, বিষয়টি ওয়াশিংটনের অনুমোদন নাও পেতে পারে। কিন্তু এই সম্ভাবনা থেকেই যায় যে, আরব উপদ্বীপের দেশগুলো নিজেদের ইসরায়েলের সম্ভাব্য আগ্রাসন থেকে বাঁচতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে যেতে পারে। সেটি না হলেও নিদেন পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে সামরিক সহায়তার বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানের কথা ভাবতে পারে।
পাকিস্তানে ইরানের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা জাভিদ হুসাইন বলেন, ‘পাকিস্তান এবং সৌদি আরব ঐতিহ্যগতভাবে ঘনিষ্ঠ ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক বজায় রেখেছে।’ তিনি বলেন, এই চুক্তি দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা আরও গভীর করবে। তাঁর মতে, ‘বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই চুক্তিতে যে ধারা রয়েছে—যার অধীনে এক দেশের ওপর হামলাকে অন্য দেশের ওপর হামলা হিসেবে গণ্য করা হবে। এই চুক্তি ভারত বা ইসরায়েলের মতো দেশগুলোকে একটি স্পষ্ট ও শক্তিশালী বার্তা দেবে এবং পাকিস্তান বা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত রাখবে।’
জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানি সাংবাদিক হামিদ মীর এই চুক্তিকে ভারত ও দেশটির অন্যতম মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তানের ‘কৌশলগত বিজয়’ হিসেবে দেখছেন। তাঁর মতে, এই যৌথ বিবৃতি দেখাচ্ছে যে—এই চুক্তির গুরুত্ব রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায়, এই চুক্তি প্রমাণ করছে যে—পাকিস্তান নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, যা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে পারে, তাদের ভারত ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে আরও দুটি দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে অনুরূপ চুক্তি স্বাক্ষর করবে।’ তবে তিনি দেশ দুটির নাম উল্লেখ করেননি। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, এমনকি আমেরিকান ঘাঁটিও ইসরায়েলের আক্রমণ থেকে নিরাপদ নয়। তিনি বলেন, ‘এটি একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন। আগে ধারণা ছিল যে, আমেরিকা তার মিত্রদের পাশে থাকে, কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের পর আর তা সত্য নয়। ইসরায়েলও আমেরিকার মিত্রদের ওপর আক্রমণ করেছে।’
মীর যোগ করেন, পাকিস্তান ও সৌদি আরবের এই চুক্তির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এটি পাকিস্তানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বন্ধু ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই। তাঁর মতে, ‘এটি পাকিস্তানের জন্য কৌশলগত বিজয় হলেও, একই সঙ্গে সৌদি আরবের প্রত্যাশা পূরণ করা পাকিস্তানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।’
সৌদি আরব ও পাকিস্তানের এসএমডিএ স্বাক্ষর আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত। তবে এর প্রভাব কেবল সামরিক নয়, বরং বিনিয়োগ প্রবাহ ও বাজার স্থিতিশীলতার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে এটি। এই আনুষ্ঠানিক প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে, এক দেশের ওপর আক্রমণ অন্য দেশের ওপর আক্রমণ হিসেবে গণ্য করা হবে। এর মাধ্যমে সৌদি আরব ও পাকিস্তান কেবল নিজেদের কৌশলগত মিত্রতা দৃঢ় করেছে না, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে পুনর্গঠনের সংকেত দিয়েছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য, এই চুক্তি নতুন সুযোগের পাশাপাশি ঝুঁকিও তৈরি করছে। কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক করিডর, প্রতিরক্ষা শিল্প এবং কূটনৈতিক সম্পর্ককে নতুনভাবে আকার দিচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছে দ্য অ্যাডভোকেট পোস্ট। এটি বহিরাগত হুমকির বিরুদ্ধে একত্রিতভাবে কাজ করার এবং অস্থির অঞ্চলগুলোকে স্থিতিশীল করার এক যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে। এটি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, যারা এমন বাজারে আগ্রহী যেখানে জিওপলিটিক্যাল ঝুঁকি কম।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি সৌদি আরবের নিরাপত্তা অংশীদারত্বকে ঐতিহ্যবাহী পশ্চিমা মিত্রদের বাইরে বিস্তৃত করার কৌশলের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিশেষ করে, যখন মার্কিন নিরাপত্তা গ্যারান্টির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন আঞ্চলিক অস্থিরতা কমাতে পারে এবং গালফ ও দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
এই প্রতিরক্ষা চুক্তি ইতিমধ্যেই উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রতিশ্রুতির সৃষ্টি করেছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের রিয়াদ সফরের সময় সৌদি আরব পাকিস্তানের খনিজ, কৃষি, অবকাঠামো এবং বিমান খাতে দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে। এই প্রকল্পগুলো সৌদি ভিশন—২০৩০ এবং পাকিস্তানের বিদেশি মূলধন আকর্ষণের প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা উভয় দেশের জন্যই লাভজনক। উদাহরণস্বরূপ, পাকিস্তানের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সৌদি বিনিয়োগ দেশের সবুজ শক্তিতে রূপান্তরকে দ্রুততর করতে পারে, আর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মতো অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলো ব্যবসা ও পর্যটন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
অর্থনৈতিক প্রভাব কেবল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়। এই চুক্তি পাকিস্তানকে সৌদি আরব ও চীনের মধ্যে একটি কৌশলগত সেতু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে, যা অবকাঠামো ও প্রযুক্তিতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার সুযোগ বাড়াবে। এটি চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরকে (সিপিইসি) আরও শক্তিশালী করতে পারে এবং নতুন বাণিজ্যিক রুট তৈরি করতে পারে, যা আঞ্চলিক বাজারের স্থিতিশীলতাকে সহায়তা করবে।
এসএমডিএ প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার নতুন সুযোগও তৈরি করেছে। পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ও সামরিক দক্ষতা, সৌদি আরবের আর্থিক সম্পদের সঙ্গে যুক্ত হলে প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও প্রযুক্তিতে যৌথ উদ্যোগ সম্ভব হবে। আল–জাজিরা জানিয়েছে, এই চুক্তিতে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ারিং ও যৌথ সামরিক মহড়ার বিধান রয়েছে, যা উন্নত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও সাইবার সিকিউরিটি সমাধানের চাহিদা বৃদ্ধি করতে পারে। এই খাতে বিনিয়োগ করা প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলি উপকৃত হতে পারে।
যদিও এই চুক্তি সৌদি-পাকিস্তান সম্পর্ককে শক্তিশালী করছে, এটি অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে জটিলতা তৈরি করছে। সৌদি আরবের ভারতীয় সঙ্গে গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্ক, বিশেষ করে তেল রপ্তানি ও বাণিজ্য চুক্তি, প্রতিরক্ষা চুক্তির কারণে চাপের মুখে পড়তে পারে।
এই বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল আজ বৃহস্পতিবার এক্সে বলেন, ‘ভারত এই ঘটনার বিষয়ে অবগত। আমরা এর প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করব যে, এটি নয়াদিল্লির নিরাপত্তা ও অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।’
এক উচ্চপদস্থ সৌদি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেছেন, পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ককে ভারসাম্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আগে কখনো এত দৃঢ় ছিল না। আমরা এই সম্পর্ককে আরও গড়ে তুলতে চলেছি এবং যেভাবেই পারি, অঞ্চলে শান্তির জন্য অবদান রাখার চেষ্টা করব।’ বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, সতর্ক কূটনৈতিক ব্যবস্থাপনা এই চাপ হ্রাস করতে পারে। কারণ উভয় দেশেরই আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করার স্বার্থ রয়েছে।
সৌদি-পাকিস্তান এসএমডিএ কেবল প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়—এটি অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক রূপান্তরের উদ্দীপক। এটি স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক সংহতি গভীর করার মাধ্যমে, চুক্তি অবকাঠামো, শক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছে। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য আঞ্চলিক গতিবিধি ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ পর্যবেক্ষণ করা অপরিহার্য। মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়া যখন এই নতুন সহযোগিতার যুগে প্রবেশ করছে। এসএমডিএ দেখাচ্ছে কীভাবে ভূরাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাজারের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে পারে।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, ব্লুমবার্গ, নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, জিও নিউজ, আরব নিউজ, দ্য গার্ডিয়ান
লেখক: আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক

এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয় তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র
২ দিন আগে
পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্ক। এই শহরটি যদি রুশ বাহিনীর দখলে যায়, তবে সেটি হবে গত কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। দোনেৎস্ক অঞ্চলের এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরটি নিয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
২ দিন আগে
নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কী কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
৪ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

দারফুরে এল-ফাশের শহর আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) দখলে যাওয়ার বিষয়টিকে মিসর শুধু সুদানের গৃহযুদ্ধের আরেকটি লড়াই হিসেবে দেখেনি; দেশটি তাদের নিজ নিরাপত্তার সীমানায় ফাটল ধরার আশঙ্কা হিসেবে দেখেছে। এল-ফাশেরে আরএসএফের স্থানীয় মানুষদের ওপর নির্যাতনকে কায়রো দক্ষিণ সীমান্তের প্রতিরক্ষার প্রথম সারির ওপর আঘাত হিসেবে ভাবছে।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশেরের পতন স্থানীয় ভূরাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। মিসর বরাবরই এই যুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর (এসএএফ) সঙ্গে মিসরের সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধের পুরো সময়ে কায়রো এই বাহিনীকে সহায়তা করেছে।
কিন্তু এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয়, তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র নতুন করে আঁকছে। সামরিক সমন্বয়ের পাশাপাশি কূটনীতিক তৎপরতা বাড়িয়ে তারা যুদ্ধের প্রভাব ঠেকাতে চাইছে।
অন্যদিকে আরএসএফের উন্নত অস্ত্র ও প্রযুক্তির কাছে এল-ফাশেরে হেরে যাওয়া এসএএফ ও তাদের যৌথ মিত্রবাহিনী এখন নতুন সহায়তার খোঁজে আছে। সুদানি কূটনীতিকেরা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) জানিয়েছেন, এসব অস্ত্র এসেছে মিসরের ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
সুদানি বিশ্লেষক ও কনফ্লুয়েন্স অ্যাডভাইজরি থিংকট্যাংকের পরিচালক খোলুদ খায়ের বলেন, ‘এল-ফাশের পতনের পর এসএএফ এখন মিসর ও তুরস্কের কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার আশা করছে। বিশেষ করে মিসরের নিজস্ব স্বার্থ জড়িত আছে দক্ষিণ সীমান্তের নিরাপত্তার সঙ্গে। তারা আরএসএফের সীমান্তবর্তী অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
এই প্রেক্ষাপটে মিসর চুপিসারে সুদান ও লিবিয়া সীমান্তে অবস্থান শক্তিশালী করছে। বিপদকে নিজ দোরগোড়ায় না পৌঁছাতে তারা সুদানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যাতে হুমকিটা আগেভাগেই ঠেকানো যায়। মিসরের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মিসর ও সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা চলছে। আরএসএফ ও সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি যৌথ কমান্ড ফোর্স গঠনের কাজ এগোচ্ছে।’
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে মিসরের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ ফাতিহি ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সফর করেছেন। একটি সৌদি আরবে, আরেকটি পোর্ট সুদান, যা বর্তমানে সুদান সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সৌদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসএএফকেই সমর্থন দেয় বলে ধারণা করা হয়। রিয়াদে ফাতিহি মিসর-সৌদি সামরিক সহযোগিতা কমিটির যৌথ সভা পরিচালনা করেন। এরপর পোর্ট সুদানে গিয়ে তিনি সুদানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় যৌথ অভিযান পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
একই মিসরীয় সূত্র জানিয়েছে, এই সফরের ফলে উত্তর করদোফানে একটি যৌথ অপারেশন রুম ও নতুন আগাম সতর্কীকরণ রাডার ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ খুলেছে। এর আগে আরএসএফ এল-ফাশের দখলের সময় উত্তর করদোফানের বারা শহরটিও দখলে নেয়। এই অঞ্চল তেলসমৃদ্ধ। তবে বারা রাজধানী খার্তুম ও এর টুইন সিটি ওমদুরমান থেকে মাত্র চার ঘণ্টার দূরত্বে। আরএসএফ যুদ্ধের শুরুতে রাজধানী অঞ্চল দখল করলেও এ বছরের মার্চে এসএএফের কাছে খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ হারায়। বাহিনীটি এখন ওমদুরমানের দিকে আবার হামলার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোলুদ খায়ের বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরএসএফ যদি ওমদুরমানে হামলা চালায়, তা হলে মিসরের সরাসরি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। কারণ (সুদানের) রাজধানী সব সময়ই মিসরের কাছে রেড লাইন হিসেবে বিবেচিত।’ মিসরের ওই সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘করদোফানের যৌথ অপারেশন রুমের মাধ্যমে মিসর সুদানি সেনাবাহিনীকে আরএসএফ দখলকৃত এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। দারফুরের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মিসরের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মাঠপর্যায়ে মিসর এখন সুদান ও লিবিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। আকাশে টহল দিচ্ছে যুদ্ধবিমান। এক সূত্র বলেছে, ‘মিসরীয় বিমানবাহিনী সুদানের আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢোকে না। কারণ, আরএসএফের কাছে ভ্রাম্যমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে। মিসরের বিমান টহল শুধু নিজেদের আকাশসীমায় নজরদারি চালায়, সুদানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে না।’
অন্য এক সরকারি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছে, ‘মিসর সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে। তাদের যুদ্ধকৌশল, অস্ত্র, আর সৈন্যদের অবস্থান সমন্বয়ে সাহায্য করছে, যেন আরএসএফের অগ্রগতি ঠেকানো যায়।’ তবে সেই সূত্র সতর্ক করে বলেছে, ‘আরএসএফের নড়াচড়ায় দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানালে বা কোনো ভুল হলে, মিসরের সীমান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।’
মিসরের জন্য এল-ফাশেরের পতন শুধু সুদানের সেনাবাহিনীর পরাজয় নয়, বরং পুরো অঞ্চলের ভঙ্গুর স্থিতিশীলতার এক ভয়াবহ সংকেত। এল-ফাশের ছিল দারফুরের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের সংযোগস্থল। শহরটি হারানোর পর পশ্চিম দারফুর কার্যত দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যা আবারও সুদান ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
আরএসএফ এখন সুদানের ত্রিভুজ অঞ্চল ও এল-ফাশেরের দখল নিয়ে লিবিয়া ও চাদের দিকে যাওয়া বাণিজ্য ও চোরাচালান পথের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে এই রুট দিয়েই সুদানের সোনা পাচার হয়ে মিসরে গেছে। মিসর এখন চায় না যে এসব রুট কোনো অনিয়ন্ত্রিত শক্তির হাতে চলে যাক।
কায়রোভিত্তিক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘আরএসএফের শক্তি যত বাড়ছে, ততই এমন এক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, যেখানে অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মিসরের জন্য এটা কেবল সুদানের প্রতি সংহতির বিষয় নয়, বরং নিজের দক্ষিণ সীমান্ত রক্ষার লড়াই।’
আরএসএফের উত্থান ও এল-ফাশেরে তাদের নৃশংসতা আমিরাতের ভূমিকাকে আবার আলোচনায় এনেছে। আমিরাত অস্বীকার করলেও মিডল ইস্ট আইয়ের স্যাটেলাইট চিত্র, ফ্লাইট ও জাহাজ চলাচলের তথ্য, ভিডিও প্রমাণ, অস্ত্রের সিরিয়াল নম্বর এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে প্রমাণ মেলে—যুদ্ধের পুরো সময়জুড়েই আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আমিরাত এই সরবরাহে ব্যবহার করেছে সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড অঞ্চলের বোসাসো বন্দর, লিবিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে জেনারেল খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রিত ঘাঁটি, চাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও উগান্ডার বিমানঘাঁটি। এসব রুট হয়ে তারা সরবরাহ পাঠিয়েছে সুদানের দুই ঘাঁটিতে—দারফুরের নিয়ালা ও এল-ফাশের থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের আল-মালহায়।
এক দশক আগে ইয়েমেনে আমিরাতের নেতৃত্বাধীন জোটে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিল আরএসএফ। আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালোর—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—সঙ্গে আমিরাতের আর্থিক সম্পর্ক তাঁকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক করেছে। এই আর্থিক সম্পর্ক মূলত সোনা ও কৃষিজমি ঘিরে।
যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই দারফুরে গণহত্যার অভিযোগে আরএসএফের নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে মিসরের দুর্বল অর্থনীতি আমিরাতের ‘অবিশ্বাস্য নগদ টাকার’ ওপর নির্ভরশীল। এ কারণেই মিসর এখন কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে সীমান্তে ক্রমেই সামরিক পদক্ষেপ বাড়াচ্ছে।
এদিকে সুদান ইস্যুতে সরাসরি সহযোগিতা শুরু করেছে মিসর ও তুরস্কের সেনাবাহিনী। দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এমন সমন্বয় খুবই বিরল ঘটনা। এক উচ্চপদস্থ মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সমন্বয়ের মূল লক্ষ্য হলো সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা, যাতে তারা আরএসএফের দখলকৃত এলাকাগুলো পুনর্দখল করতে পারে এবং দারফুর অঞ্চল স্থিতিশীল রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এল-ফাশের ও আশপাশ এলাকা পুনরুদ্ধারের জন্য সম্ভাব্য এক সামরিক অভিযান নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি আরএসএফ ইউনিটগুলোর কাছে যেন কোনো বিদেশি বিমান সহায়তা না পৌঁছায়, সে জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তুরস্কের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনীকে আরও সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তুরস্ক। সূত্রটি বলেছে, ‘আমরা আগে থেকেই আরও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু এল-ফাশেরে সংঘটিত গণহত্যা আমাদের সেই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ় করেছে।’
গত বছর থেকেই তুরস্ক সুদানের সেনাবাহিনীকে ড্রোন, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও কমান্ড সেন্টার সরবরাহ করছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এমনকি তুর্কি ড্রোনচালকেরাও বর্তমানে সুদানের ভেতরে কাজ করছে। তুর্কি সূত্র আরও জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহের সক্ষমতা এখনো তুরস্কের সীমিত। কারণ, এমন সরঞ্জামের সংখ্যা দেশটিতে কম।
মিসরীয় ও সুদানি সূত্রের তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে তুর্কি সূত্রগুলোও বলছে, যুদ্ধের শুরু থেকেই মিসর গোপনে সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে আসছে। তাদের একজন বলেন, ‘এখন মিসর প্রকাশ্যে সহায়তা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে, কারণ আরএসএফ ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক আলোচনাগুলো ভন্ডুল করেছে।’
ওয়াশিংটনে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সুদানি পক্ষগুলো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে একই সময়ে এল-ফাশেরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে আরএসএফ। আলোচনায় আরএসএফের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন আলগনি দাগালো। তাঁর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি দেশটির মাটিতে ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া হোটেলে অবস্থান করছেন। তিনি আরএসএফ প্রধান হেমেদতির ভাই।
বিশ্লেষক খোলুদ খায়ের বলেন, ‘এখন প্রায় নিশ্চিত যে সুদানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা মিসরের জন্য বিব্রতকর। কারণ, ট্রাম্প আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমেরিকান পরিকল্পনায় সুদানের সেনাবাহিনীকে রাজি করাতে। এখন মিসরকে তার আগের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে এসে সুদানের যুদ্ধে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে।’
আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত দারফুর ও সুদানের আরও কিছু অংশ বের হয়ে নতুন দেশ গড়া ঠেকাতে মিসর ও সুদানের সেনাবাহিনী উত্তর করদোফানের এল-ওবেইদে আরেকটি যৌথ কমান্ড সেন্টার গঠন করছে। এর লক্ষ্য হলো আরএসএফের অগ্রযাত্রা থামানো ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো পুনর্দখল করা। মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো যাবে সেসব এলাকায়, যেগুলো সম্প্রতি আরএসএফের দখলে গেছে। এতে পুরো অঞ্চল আরও স্থিতিশীল হবে।’
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

দারফুরে এল-ফাশের শহর আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) দখলে যাওয়ার বিষয়টিকে মিসর শুধু সুদানের গৃহযুদ্ধের আরেকটি লড়াই হিসেবে দেখেনি; দেশটি তাদের নিজ নিরাপত্তার সীমানায় ফাটল ধরার আশঙ্কা হিসেবে দেখেছে। এল-ফাশেরে আরএসএফের স্থানীয় মানুষদের ওপর নির্যাতনকে কায়রো দক্ষিণ সীমান্তের প্রতিরক্ষার প্রথম সারির ওপর আঘাত হিসেবে ভাবছে।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশেরের পতন স্থানীয় ভূরাজনীতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। মিসর বরাবরই এই যুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সুদানের সেনাবাহিনীর (এসএএফ) সঙ্গে মিসরের সামরিক সম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধের পুরো সময়ে কায়রো এই বাহিনীকে সহায়তা করেছে।
কিন্তু এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয়, তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র নতুন করে আঁকছে। সামরিক সমন্বয়ের পাশাপাশি কূটনীতিক তৎপরতা বাড়িয়ে তারা যুদ্ধের প্রভাব ঠেকাতে চাইছে।
অন্যদিকে আরএসএফের উন্নত অস্ত্র ও প্রযুক্তির কাছে এল-ফাশেরে হেরে যাওয়া এসএএফ ও তাদের যৌথ মিত্রবাহিনী এখন নতুন সহায়তার খোঁজে আছে। সুদানি কূটনীতিকেরা মিডল ইস্ট আইকে (এমইই) জানিয়েছেন, এসব অস্ত্র এসেছে মিসরের ঘনিষ্ঠ মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
সুদানি বিশ্লেষক ও কনফ্লুয়েন্স অ্যাডভাইজরি থিংকট্যাংকের পরিচালক খোলুদ খায়ের বলেন, ‘এল-ফাশের পতনের পর এসএএফ এখন মিসর ও তুরস্কের কাছ থেকে অস্ত্র পাওয়ার আশা করছে। বিশেষ করে মিসরের নিজস্ব স্বার্থ জড়িত আছে দক্ষিণ সীমান্তের নিরাপত্তার সঙ্গে। তারা আরএসএফের সীমান্তবর্তী অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন।’
এই প্রেক্ষাপটে মিসর চুপিসারে সুদান ও লিবিয়া সীমান্তে অবস্থান শক্তিশালী করছে। বিপদকে নিজ দোরগোড়ায় না পৌঁছাতে তারা সুদানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে, যাতে হুমকিটা আগেভাগেই ঠেকানো যায়। মিসরের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মিসর ও সুদানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা চলছে। আরএসএফ ও সম্ভাব্য অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি যৌথ কমান্ড ফোর্স গঠনের কাজ এগোচ্ছে।’
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে মিসরের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ ফাতিহি ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সফর করেছেন। একটি সৌদি আরবে, আরেকটি পোর্ট সুদান, যা বর্তমানে সুদান সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সৌদি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এসএএফকেই সমর্থন দেয় বলে ধারণা করা হয়। রিয়াদে ফাতিহি মিসর-সৌদি সামরিক সহযোগিতা কমিটির যৌথ সভা পরিচালনা করেন। এরপর পোর্ট সুদানে গিয়ে তিনি সুদানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সীমান্ত এলাকায় যৌথ অভিযান পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
একই মিসরীয় সূত্র জানিয়েছে, এই সফরের ফলে উত্তর করদোফানে একটি যৌথ অপারেশন রুম ও নতুন আগাম সতর্কীকরণ রাডার ব্যবস্থা গড়ে তোলার পথ খুলেছে। এর আগে আরএসএফ এল-ফাশের দখলের সময় উত্তর করদোফানের বারা শহরটিও দখলে নেয়। এই অঞ্চল তেলসমৃদ্ধ। তবে বারা রাজধানী খার্তুম ও এর টুইন সিটি ওমদুরমান থেকে মাত্র চার ঘণ্টার দূরত্বে। আরএসএফ যুদ্ধের শুরুতে রাজধানী অঞ্চল দখল করলেও এ বছরের মার্চে এসএএফের কাছে খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ হারায়। বাহিনীটি এখন ওমদুরমানের দিকে আবার হামলার পরিকল্পনা করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খোলুদ খায়ের বলেন, ‘আগামী কয়েক মাসের মধ্যে আরএসএফ যদি ওমদুরমানে হামলা চালায়, তা হলে মিসরের সরাসরি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাবে। কারণ (সুদানের) রাজধানী সব সময়ই মিসরের কাছে রেড লাইন হিসেবে বিবেচিত।’ মিসরের ওই সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘করদোফানের যৌথ অপারেশন রুমের মাধ্যমে মিসর সুদানি সেনাবাহিনীকে আরএসএফ দখলকৃত এলাকাগুলো পুনরুদ্ধারে সহায়তা করতে পারবে। দারফুরের নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও মিসরের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মাঠপর্যায়ে মিসর এখন সুদান ও লিবিয়া সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছে। আকাশে টহল দিচ্ছে যুদ্ধবিমান। এক সূত্র বলেছে, ‘মিসরীয় বিমানবাহিনী সুদানের আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ঢোকে না। কারণ, আরএসএফের কাছে ভ্রাম্যমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে। মিসরের বিমান টহল শুধু নিজেদের আকাশসীমায় নজরদারি চালায়, সুদানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে না।’
অন্য এক সরকারি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছে, ‘মিসর সুদানের সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের বাহিনীকে সহায়তা দিচ্ছে। তাদের যুদ্ধকৌশল, অস্ত্র, আর সৈন্যদের অবস্থান সমন্বয়ে সাহায্য করছে, যেন আরএসএফের অগ্রগতি ঠেকানো যায়।’ তবে সেই সূত্র সতর্ক করে বলেছে, ‘আরএসএফের নড়াচড়ায় দেরিতে প্রতিক্রিয়া জানালে বা কোনো ভুল হলে, মিসরের সীমান্ত নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।’
মিসরের জন্য এল-ফাশেরের পতন শুধু সুদানের সেনাবাহিনীর পরাজয় নয়, বরং পুরো অঞ্চলের ভঙ্গুর স্থিতিশীলতার এক ভয়াবহ সংকেত। এল-ফাশের ছিল দারফুরের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের সংযোগস্থল। শহরটি হারানোর পর পশ্চিম দারফুর কার্যত দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, যা আবারও সুদান ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে।
আরএসএফ এখন সুদানের ত্রিভুজ অঞ্চল ও এল-ফাশেরের দখল নিয়ে লিবিয়া ও চাদের দিকে যাওয়া বাণিজ্য ও চোরাচালান পথের নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে এই রুট দিয়েই সুদানের সোনা পাচার হয়ে মিসরে গেছে। মিসর এখন চায় না যে এসব রুট কোনো অনিয়ন্ত্রিত শক্তির হাতে চলে যাক।
কায়রোভিত্তিক এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, ‘আরএসএফের শক্তি যত বাড়ছে, ততই এমন এক শূন্যতা তৈরি হচ্ছে, যেখানে অরাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রভাব বিস্তার করতে পারে। মিসরের জন্য এটা কেবল সুদানের প্রতি সংহতির বিষয় নয়, বরং নিজের দক্ষিণ সীমান্ত রক্ষার লড়াই।’
আরএসএফের উত্থান ও এল-ফাশেরে তাদের নৃশংসতা আমিরাতের ভূমিকাকে আবার আলোচনায় এনেছে। আমিরাত অস্বীকার করলেও মিডল ইস্ট আইয়ের স্যাটেলাইট চিত্র, ফ্লাইট ও জাহাজ চলাচলের তথ্য, ভিডিও প্রমাণ, অস্ত্রের সিরিয়াল নম্বর এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে প্রমাণ মেলে—যুদ্ধের পুরো সময়জুড়েই আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
আমিরাত এই সরবরাহে ব্যবহার করেছে সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড অঞ্চলের বোসাসো বন্দর, লিবিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে জেনারেল খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রিত ঘাঁটি, চাদ, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র ও উগান্ডার বিমানঘাঁটি। এসব রুট হয়ে তারা সরবরাহ পাঠিয়েছে সুদানের দুই ঘাঁটিতে—দারফুরের নিয়ালা ও এল-ফাশের থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরের আল-মালহায়।
এক দশক আগে ইয়েমেনে আমিরাতের নেতৃত্বাধীন জোটে প্রায় ৪০ হাজার যোদ্ধা পাঠিয়েছিল আরএসএফ। আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালোর—যিনি হেমেদতি নামেও পরিচিত—সঙ্গে আমিরাতের আর্থিক সম্পর্ক তাঁকে প্রায় ৭০০ কোটি ডলারের সম্পদের মালিক করেছে। এই আর্থিক সম্পর্ক মূলত সোনা ও কৃষিজমি ঘিরে।
যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই দারফুরে গণহত্যার অভিযোগে আরএসএফের নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে মিসরের দুর্বল অর্থনীতি আমিরাতের ‘অবিশ্বাস্য নগদ টাকার’ ওপর নির্ভরশীল। এ কারণেই মিসর এখন কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে সীমান্তে ক্রমেই সামরিক পদক্ষেপ বাড়াচ্ছে।
এদিকে সুদান ইস্যুতে সরাসরি সহযোগিতা শুরু করেছে মিসর ও তুরস্কের সেনাবাহিনী। দুই আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে এমন সমন্বয় খুবই বিরল ঘটনা। এক উচ্চপদস্থ মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই সমন্বয়ের মূল লক্ষ্য হলো সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করা, যাতে তারা আরএসএফের দখলকৃত এলাকাগুলো পুনর্দখল করতে পারে এবং দারফুর অঞ্চল স্থিতিশীল রাখতে পারে।
তিনি বলেন, ‘এল-ফাশের ও আশপাশ এলাকা পুনরুদ্ধারের জন্য সম্ভাব্য এক সামরিক অভিযান নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি আরএসএফ ইউনিটগুলোর কাছে যেন কোনো বিদেশি বিমান সহায়তা না পৌঁছায়, সে জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
তুরস্কের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুদানের সেনাবাহিনীকে আরও সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তুরস্ক। সূত্রটি বলেছে, ‘আমরা আগে থেকেই আরও সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিলাম, কিন্তু এল-ফাশেরে সংঘটিত গণহত্যা আমাদের সেই সিদ্ধান্তকে আরও দৃঢ় করেছে।’
গত বছর থেকেই তুরস্ক সুদানের সেনাবাহিনীকে ড্রোন, আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ও কমান্ড সেন্টার সরবরাহ করছে। ওই সূত্র জানিয়েছে, এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে। এমনকি তুর্কি ড্রোনচালকেরাও বর্তমানে সুদানের ভেতরে কাজ করছে। তুর্কি সূত্র আরও জানায়, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহের সক্ষমতা এখনো তুরস্কের সীমিত। কারণ, এমন সরঞ্জামের সংখ্যা দেশটিতে কম।
মিসরীয় ও সুদানি সূত্রের তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে তুর্কি সূত্রগুলোও বলছে, যুদ্ধের শুরু থেকেই মিসর গোপনে সুদানের সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে আসছে। তাদের একজন বলেন, ‘এখন মিসর প্রকাশ্যে সহায়তা দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে, কারণ আরএসএফ ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক আলোচনাগুলো ভন্ডুল করেছে।’
ওয়াশিংটনে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সুদানি পক্ষগুলো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে একই সময়ে এল-ফাশেরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে আরএসএফ। আলোচনায় আরএসএফের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন আলগনি দাগালো। তাঁর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি দেশটির মাটিতে ওয়ালডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া হোটেলে অবস্থান করছেন। তিনি আরএসএফ প্রধান হেমেদতির ভাই।
বিশ্লেষক খোলুদ খায়ের বলেন, ‘এখন প্রায় নিশ্চিত যে সুদানের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এটা মিসরের জন্য বিব্রতকর। কারণ, ট্রাম্প আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমেরিকান পরিকল্পনায় সুদানের সেনাবাহিনীকে রাজি করাতে। এখন মিসরকে তার আগের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে এসে সুদানের যুদ্ধে আরও গভীরভাবে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে।’
আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত দারফুর ও সুদানের আরও কিছু অংশ বের হয়ে নতুন দেশ গড়া ঠেকাতে মিসর ও সুদানের সেনাবাহিনী উত্তর করদোফানের এল-ওবেইদে আরেকটি যৌথ কমান্ড সেন্টার গঠন করছে। এর লক্ষ্য হলো আরএসএফের অগ্রযাত্রা থামানো ও গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো পুনর্দখল করা। মিসরীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, ‘এর মাধ্যমে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো যাবে সেসব এলাকায়, যেগুলো সম্প্রতি আরএসএফের দখলে গেছে। এতে পুরো অঞ্চল আরও স্থিতিশীল হবে।’
মিডল ইস্ট আই থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

নতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্ক। এই শহরটি যদি রুশ বাহিনীর দখলে যায়, তবে সেটি হবে গত কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। দোনেৎস্ক অঞ্চলের এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরটি নিয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
২ দিন আগে
নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কী কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
৪ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্ক। এই শহরটি যদি রুশ বাহিনীর দখলে যায়, তবে সেটি হবে গত কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। দোনেৎস্ক অঞ্চলের এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরটি নিয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পোকরভস্ক জয়ের ঘোষণা দিতে পারেন, তাহলে ৩ বছর ১০ মাস ধরে চলা যুদ্ধে তিনি ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল দনবাস পুরোটা দখলের লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন। দনবাস গঠিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নাম দুটি অঞ্চল নিয়ে।
পোকরভস্ক কতটা বিপদে?
বিভিন্ন দাবি-পাল্টা দাবির ভিড়ে আসল পরিস্থিতি পরিষ্কার নয়। জানা গেছে, রাশিয়া সেখানে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শত শত রুশ সেনা শহরে প্রবেশ করে ভবন ও সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে, ধীরে ধীরে ইউক্রেনীয় অবস্থানগুলোকে দুর্বল করছে।
বুধবার কিয়েভের জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, শহরের ভেতর বা আশপাশে ইউক্রেনীয় সেনারা ঘেরাও হয়নি। তারা এখনো ‘সক্রিয় প্রতিরোধ’ চালিয়ে যাচ্ছে এবং রুশ সেনাদের ঠেকিয়ে রেখেছে। ইউক্রেনের একটি রেজিমেন্ট জানিয়েছে, তারা পোকরভস্কের সিটি কাউন্সিল ভবন পুনর্দখল করেছে এবং সেখানে ইউক্রেনের পতাকা উত্তোলন করেছে।
পোকরভস্ক নিয়ে ইউক্রেনের সরকারি অবস্থান হলো—তারা এখনো টিকে আছে। কিন্তু ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম হ্রোমাদস্ক সেনাসূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী সংখ্যা ও শক্তিতে অনেক পিছিয়ে। এক হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা ঘেরাওয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে।
রাশিয়া বলছে, তারা শহরের উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘেরাও থেকে মুক্ত হওয়ার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলো এখন ‘কড়াই’—এর মতো ফাঁদে আটকে পড়েছে। তবে অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, বাস্তবতা পুরোপুরি তেমন নয়।
ওপেন সোর্স গোয়েন্দা তথ্যের মানচিত্রগুলোতেও মতভেদ দেখা গেছে। কিছু মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে, রুশ সেনারা শহরের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। আবার কিছু বিশ্লেষণ বলছে, শহরের অধিকাংশ অংশ এখনো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই চলছে। মনিটরিং গ্রুপ ডিপস্টেট জানিয়েছে, ‘পোকরভস্কের বেশির ভাগ এলাকা এখন নো-ম্যানস ল্যান্ড। পরিস্থিতি জটিল, পরিষ্কার নয়।’
রাশিয়ার কাছে শহরটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
রাশিয়া পোকরভস্কের দিকে নজর দেয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দোনেৎস্কের আভদিভকা শহর দখলের পরপরই। আভদিভকা হারানো ইউক্রেনের জন্য বড় আঘাত ছিল। কারণ সেটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি। কিন্তু সেই সাফল্যের পর, ৪০ কিলোমিটার এগিয়ে পোকরভস্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে রাশিয়ার ২১ মাস লেগেছে।
পোকরভস্ক দখল করতে পারলে পুতিন দনবাস অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন, যদিও এ বছর রাশিয়ার অগ্রগতি খুবই ধীর। যদি শহরটির পতন হয়, তাহলে এর পাশের শহর মিরনোরাদের প্রতিরক্ষা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এরপর রুশ সেনারা উত্তর-পূর্বের কোস্তিয়ানতিনিভকা শহর এবং আশপাশের দ্রুজকিভকা, ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের দিকে মনোযোগ দিতে পারবে।
তবে বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যানের মতে, ইউক্রেনের এখনো বিকল্প প্রতিরক্ষা লাইন রয়েছে। তারা সরে গিয়ে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়তে পারে। কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের এই বিশ্লেষক এক্সে লিখেছেন, ‘রুশ সেনাদের গতি নেই। তারা যেভাবে যুদ্ধ করছে, তাতে বড় কোনো সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। গোপনে অগ্রসর হওয়া হয়তো ছোট সাফল্য দিতে পারে, কিন্তু এতে বড় কোনো কৌশলগত জয় আসবে না।’

পোকরভস্ক এখন প্রায় জনশূন্য। কিন্তু রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শহরটি ইউক্রেনের সেনাদের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
যুদ্ধের আগে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল এখানে। শহরটি ইউক্রেনের একমাত্র কোকিং কয়লা খনির কাছে অবস্থিত, যা ইস্পাত শিল্পের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তবে এ বছরের শুরু থেকেই খনিটির কার্যক্রম বন্ধ। কারণ, সে সময় থেকেই শহরটি খালি করা শুরু হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—পোকরভস্ক পূর্বাঞ্চলের একটি বড় সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থল। শহরটি হারালে রুশ বাহিনীর জন্য ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলের দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ খুলে যাবে। রুশ বাহিনী ইতিমধ্যে পাভলোহ্রাদ ও দিনিপ্রোর প্রধান সড়কের কাছে পৌঁছে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকেও তারা দোনেৎস্ক ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্কের সীমান্ত এলাকায় অগ্রসর হয়েছে। শহরটির আরেকটি বড় রাস্তা যায় জাপোরিঝঝিয়ার দিকে, যা রাশিয়ার দাবিকৃত আরেকটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলের রাজধানী।
ইউক্রেন পোকরভস্ক হারালে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি কেমন হবে?
ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ করতে হলে পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল রাশিয়াকে দিতে হবে। তবে পোকরভস্ক পতন মানেই পুরো দোনেৎস্ক হারানো নয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই বলেছেন, রুশ বাহিনী যদি পুরো দনবাস দখল করতে চায়, তবে তাদের আরও কয়েক বছর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
এই অবস্থানের সঙ্গে একমত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারও। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, রাশিয়ার পক্ষে ‘দ্রুত ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বেষ্টনী ঘিরে ফেলা বা ভেদ করা সম্ভব নয়’, এবং এতে আরও কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তবু পোকরভস্ক হারানো ইউক্রেনের মনোবলে বড় আঘাত হানবে। বিশেষত এমন এক সময়ে—যখন শীত শুরু হচ্ছে এবং রুশ বাহিনী আবার বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোয় হামলা বাড়িয়েছে।
শহরটি রক্ষায় বিপুল জনবল, সরঞ্জাম ও সম্পদ খরচ হচ্ছে ইউক্রেনের। ফলে, শহরটি হারালে ইউক্রেনের এসব বিনিয়োগ অপচয় হবে। এর রাজনৈতিক প্রভাবও হতে পারে বিশাল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। পোকরভস্ক পতন হলে রাশিয়ার অবস্থান আরও শক্ত হতে পারে। এতে ট্রাম্পের ধারণা জোরদার হবে যে রাশিয়া ‘কাগুজে বাঘ।’
যদিও ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন—তবু রুশ কর্মকর্তারা এখনো সমঝোতার আশায় আছেন। পুতিন হয়তো আশা করছেন, পোকরভস্কে রুশ সাফল্য তাঁর দাবি মেনে নিতে ট্রাম্পকে রাজি করাতে পারবে। যদিও ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা তা প্রত্যাখ্যান করবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্ক। এই শহরটি যদি রুশ বাহিনীর দখলে যায়, তবে সেটি হবে গত কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। দোনেৎস্ক অঞ্চলের এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরটি নিয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পোকরভস্ক জয়ের ঘোষণা দিতে পারেন, তাহলে ৩ বছর ১০ মাস ধরে চলা যুদ্ধে তিনি ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল দনবাস পুরোটা দখলের লক্ষ্যে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবেন। দনবাস গঠিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক নাম দুটি অঞ্চল নিয়ে।
পোকরভস্ক কতটা বিপদে?
বিভিন্ন দাবি-পাল্টা দাবির ভিড়ে আসল পরিস্থিতি পরিষ্কার নয়। জানা গেছে, রাশিয়া সেখানে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেছে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে শত শত রুশ সেনা শহরে প্রবেশ করে ভবন ও সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে, ধীরে ধীরে ইউক্রেনীয় অবস্থানগুলোকে দুর্বল করছে।
বুধবার কিয়েভের জেনারেল স্টাফ জানিয়েছে, শহরের ভেতর বা আশপাশে ইউক্রেনীয় সেনারা ঘেরাও হয়নি। তারা এখনো ‘সক্রিয় প্রতিরোধ’ চালিয়ে যাচ্ছে এবং রুশ সেনাদের ঠেকিয়ে রেখেছে। ইউক্রেনের একটি রেজিমেন্ট জানিয়েছে, তারা পোকরভস্কের সিটি কাউন্সিল ভবন পুনর্দখল করেছে এবং সেখানে ইউক্রেনের পতাকা উত্তোলন করেছে।
পোকরভস্ক নিয়ে ইউক্রেনের সরকারি অবস্থান হলো—তারা এখনো টিকে আছে। কিন্তু ইউক্রেনীয় গণমাধ্যম হ্রোমাদস্ক সেনাসূত্রের বরাতে জানিয়েছে, ইউক্রেনীয় বাহিনী সংখ্যা ও শক্তিতে অনেক পিছিয়ে। এক হাজারের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা ঘেরাওয়ের ঝুঁকিতে রয়েছে।
রাশিয়া বলছে, তারা শহরের উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘেরাও থেকে মুক্ত হওয়ার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, ইউক্রেনীয় ইউনিটগুলো এখন ‘কড়াই’—এর মতো ফাঁদে আটকে পড়েছে। তবে অনেক বিশ্লেষক বলেছেন, বাস্তবতা পুরোপুরি তেমন নয়।
ওপেন সোর্স গোয়েন্দা তথ্যের মানচিত্রগুলোতেও মতভেদ দেখা গেছে। কিছু মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে, রুশ সেনারা শহরের বড় অংশ দখল করে নিয়েছে। আবার কিছু বিশ্লেষণ বলছে, শহরের অধিকাংশ অংশ এখনো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই চলছে। মনিটরিং গ্রুপ ডিপস্টেট জানিয়েছে, ‘পোকরভস্কের বেশির ভাগ এলাকা এখন নো-ম্যানস ল্যান্ড। পরিস্থিতি জটিল, পরিষ্কার নয়।’
রাশিয়ার কাছে শহরটি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
রাশিয়া পোকরভস্কের দিকে নজর দেয় ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দোনেৎস্কের আভদিভকা শহর দখলের পরপরই। আভদিভকা হারানো ইউক্রেনের জন্য বড় আঘাত ছিল। কারণ সেটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি। কিন্তু সেই সাফল্যের পর, ৪০ কিলোমিটার এগিয়ে পোকরভস্ক পর্যন্ত পৌঁছাতে রাশিয়ার ২১ মাস লেগেছে।
পোকরভস্ক দখল করতে পারলে পুতিন দনবাস অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার লক্ষ্যের আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবেন, যদিও এ বছর রাশিয়ার অগ্রগতি খুবই ধীর। যদি শহরটির পতন হয়, তাহলে এর পাশের শহর মিরনোরাদের প্রতিরক্ষা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে। এরপর রুশ সেনারা উত্তর-পূর্বের কোস্তিয়ানতিনিভকা শহর এবং আশপাশের দ্রুজকিভকা, ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্কের দিকে মনোযোগ দিতে পারবে।
তবে বিশ্লেষক মাইকেল কফম্যানের মতে, ইউক্রেনের এখনো বিকল্প প্রতিরক্ষা লাইন রয়েছে। তারা সরে গিয়ে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়তে পারে। কার্নেগি এন্ডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের এই বিশ্লেষক এক্সে লিখেছেন, ‘রুশ সেনাদের গতি নেই। তারা যেভাবে যুদ্ধ করছে, তাতে বড় কোনো সাফল্য পাওয়া সম্ভব নয়। গোপনে অগ্রসর হওয়া হয়তো ছোট সাফল্য দিতে পারে, কিন্তু এতে বড় কোনো কৌশলগত জয় আসবে না।’

পোকরভস্ক এখন প্রায় জনশূন্য। কিন্তু রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শহরটি ইউক্রেনের সেনাদের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
যুদ্ধের আগে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল এখানে। শহরটি ইউক্রেনের একমাত্র কোকিং কয়লা খনির কাছে অবস্থিত, যা ইস্পাত শিল্পের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তবে এ বছরের শুরু থেকেই খনিটির কার্যক্রম বন্ধ। কারণ, সে সময় থেকেই শহরটি খালি করা শুরু হয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—পোকরভস্ক পূর্বাঞ্চলের একটি বড় সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থল। শহরটি হারালে রুশ বাহিনীর জন্য ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলের দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হওয়ার পথ খুলে যাবে। রুশ বাহিনী ইতিমধ্যে পাভলোহ্রাদ ও দিনিপ্রোর প্রধান সড়কের কাছে পৌঁছে গেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিকেও তারা দোনেৎস্ক ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্কের সীমান্ত এলাকায় অগ্রসর হয়েছে। শহরটির আরেকটি বড় রাস্তা যায় জাপোরিঝঝিয়ার দিকে, যা রাশিয়ার দাবিকৃত আরেকটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চলের রাজধানী।
ইউক্রেন পোকরভস্ক হারালে যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি কেমন হবে?
ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ করতে হলে পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল রাশিয়াকে দিতে হবে। তবে পোকরভস্ক পতন মানেই পুরো দোনেৎস্ক হারানো নয়। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আগেই বলেছেন, রুশ বাহিনী যদি পুরো দনবাস দখল করতে চায়, তবে তাদের আরও কয়েক বছর যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
এই অবস্থানের সঙ্গে একমত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ারও। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, রাশিয়ার পক্ষে ‘দ্রুত ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বেষ্টনী ঘিরে ফেলা বা ভেদ করা সম্ভব নয়’, এবং এতে আরও কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তবু পোকরভস্ক হারানো ইউক্রেনের মনোবলে বড় আঘাত হানবে। বিশেষত এমন এক সময়ে—যখন শীত শুরু হচ্ছে এবং রুশ বাহিনী আবার বিদ্যুৎ স্থাপনাগুলোয় হামলা বাড়িয়েছে।
শহরটি রক্ষায় বিপুল জনবল, সরঞ্জাম ও সম্পদ খরচ হচ্ছে ইউক্রেনের। ফলে, শহরটি হারালে ইউক্রেনের এসব বিনিয়োগ অপচয় হবে। এর রাজনৈতিক প্রভাবও হতে পারে বিশাল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের জন্য চাপ দিচ্ছেন। পোকরভস্ক পতন হলে রাশিয়ার অবস্থান আরও শক্ত হতে পারে। এতে ট্রাম্পের ধারণা জোরদার হবে যে রাশিয়া ‘কাগুজে বাঘ।’
যদিও ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন—তবু রুশ কর্মকর্তারা এখনো সমঝোতার আশায় আছেন। পুতিন হয়তো আশা করছেন, পোকরভস্কে রুশ সাফল্য তাঁর দাবি মেনে নিতে ট্রাম্পকে রাজি করাতে পারবে। যদিও ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্ররা তা প্রত্যাখ্যান করবে।
অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

নতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয় তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র
২ দিন আগে
নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কী কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
৪ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কি কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
মামদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির। এর মধ্যে ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আবার শ্রমজীবী আমেরিকানদের দিকে ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে মূলধারার রাজনীতিতে একসময়ে বাতিল হয়ে যাওয়া মতাদর্শগুলো একেবারে বাদ না দেওয়া। কুমো একে বলেছেন ‘গৃহযুদ্ধ।’ আর এই গৃহযুদ্ধে কুমোর মতো ‘মধ্যপন্থীরা’ মুখোমুখি হয়েছেন মামদানির মতো প্রগতিশীল নতুনদের।
ভোটের দিন বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ব্রুকলিনের ক্রাউন হাইটস এলাকার ৬৮ বছর বয়সী ভোটার মাইকেল ব্ল্যাকম্যান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত রাজনীতির বিরুদ্ধে যাওয়া’ ছিল তাঁর কাছে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ইস্যু। তিনি বলেন, ‘মামদানি হয়তো তাঁর সব প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন না, কিন্তু তাঁর অন্তত একটা আদর্শ আছে।’
ব্ল্যাকম্যানের কাছে কুমো মানে ‘একই পুরোনো রাজনীতি’র পুনরাবৃত্তি, যা বহুদিন ধরে উদারপন্থী রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ধনবান দাতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তি তাঁকে সমর্থন দেওয়া সেটিই প্রমাণ করে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস নামের সংগঠন জানায়, ‘জোহরানের এই বিজয় করপোরেটপন্থী, প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটদের জন্য সতর্কবার্তা—আপনি যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ না করেন, আপনার সময় শেষ হয়ে আসছে।’
মামদানির প্রচারণা শিবিরও তাঁর এই বিজয়কে স্থানীয় সীমানা ছাড়িয়ে এক বড় বার্তা হিসেবে তুলে ধরেছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মাইকেল জিয়ানারিস নির্বাচনের আগের রাতে মামদানির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এই বার্তা শুধু নিউইয়র্ক সিটির জন্য নয়, শুধু নিউইয়র্ক রাজ্যের জন্য নয়, এমনকি শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্যও নয়—এটা গোটা বিশ্বের জন্য।’ তিনি যোগ করেন, ‘মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা সবকিছু করতে পারে।’
মামদানির প্রচারণা থেকে কী শিক্ষা নেওয়া যায়, তা সময়ই বলবে। জাতীয় পর্যায়ে অনেক শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা এখনো তাঁকে পুরোপুরি গ্রহণ করেননি। তাঁদের আশঙ্কা, ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য হিসেবে মামদানির অবস্থান এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে তাঁর স্পষ্ট সমর্থন হয়তো ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের দূরে ঠেলে দিতে পারে।
এই তালিকার শীর্ষে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর চাক শুমার। তিনি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরপেক্ষ থেকেছেন। তবে ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদ ট্রিপ ইয়াং বলেন, সমর্থন যেখান থেকেই আসুক না কেন, দলের নেতারা মামদানির এই প্রচারণাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। কারণ, গত বছরের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচনে পরাজয়ের পর ডেমোক্র্যাটরা এখন ভবিষ্যতের পথ খুঁজছে।
ইয়াং বলেন, কুমোর অভিযোগ করা ‘গৃহযুদ্ধ’ আসলে অতিরঞ্জন। কারণ, পুরোনো ধাঁচের ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ নিয়ে কেউ সংগঠিতভাবে কুমোর বিপক্ষে নামেননি। বরং তাঁর মতে মামদানির এই জয় দেখিয়ে দিয়েছে পার্টি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা দলের নেতৃত্ব পছন্দ করুক বা না করুক। ডেমোক্রেটিক পার্টি যাচ্ছে এমন এক রূপান্তরের দিকে, যেখানে লেবেল বা মতাদর্শের চেয়ে চিন্তার বৈচিত্র্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ইয়াং বলেন, ‘আপনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট, মধ্যপন্থী বা রক্ষণশীল যা-ই হোন না কেন, সেটা আসলে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভোটাররা খোঁজে এমন প্রার্থীকে, যিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং তাঁদের সবচেয়ে জরুরি সমস্যার কথা বলতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটিতে এখন বড় বিষয় হলো জীবনযাত্রার ব্যয়। কিন্তু মূল ব্যাপারটা হলো একটা সমস্যাকে চিহ্নিত করা, তারপর সেটি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া।’
ইয়াং আরও বলেন, শহরের বিভিন্ন কমিউনিটিতে মামদানির নিয়মিত উপস্থিতি, এমনকি বৈরী গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের ইচ্ছাও ডেমোক্র্যাটদের অনুসরণ করা উচিত। তাঁর কথায়, ‘অনেক ডেমোক্র্যাট কেবল নিরাপদ রাজনৈতিক পরিসরেই থাকেন।’
ব্রুকলিনের বার্ড কলেজের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড্যানিয়েল ওয়ার্টেল-লন্ডন বলেন, মামদানির সাফল্য প্রমাণ করেছে, ‘সহনীয় জীবনযাপন এখন আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় ইস্যু।’ তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটরা ঐতিহাসিকভাবে সাফল্য পান যখন তাঁরা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রশ্নে যেমন জীবনের ব্যয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মতো ‘রুটি-রুজির ইস্যুতে’ মন দেন।
তবে এসবের দিকে মনোযোগ দেওয়া মানে এই নয় যে প্রগতিশীল মূল্যবোধ বা আদর্শ বিসর্জন দিতে হবে। ওয়ার্টেল-লন্ডনের ভাষায়, ‘মামদানি দেখিয়েছেন কীভাবে এসব অগ্রাধিকারকে সামাজিক ন্যায়বিচারের নৈতিক জরুরির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায়, যা অনেক প্রগতিশীল মানুষের প্রেরণার উৎস।’
তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে একটি বড় ঐক্যবদ্ধ জোট গড়তে চান, তাহলে তাঁদের মামদানির পথ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’ অনেকের কাছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং গাজায় গণহত্যার নিন্দা করার মধ্য দিয়ে এই প্রগতিশীল মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মামদানি।
তবে এই অবস্থানেই সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। কুমো মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ ও ‘সন্ত্রাসবাদের সমর্থক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও মামদানি কিছু বক্তব্যে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন; যেমন তিনি ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তারপরও তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের সমালোচনায় দৃঢ়।
নির্বাচনের আগের রাতে মামদানির সমর্থক শবনম সালেহেজাদেহি বলেন, ‘তাঁর রাজনীতিতে যে নীতিগত দৃঢ়তা আছে, তা আমি পছন্দ করি।’ গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে ফিলিস্তিনপন্থী মনোভাব বাড়ছে। যদিও দলের শীর্ষ নেতারা এখনো ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার পক্ষে। সালেহেজাদেহি বলেন, ‘মামদানি ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি গাজায় যা ঘটছে, সেটিকে স্পষ্টভাবে গণহত্যা হিসেবেই দেখেন।’
তবে মামদানির এই জয়ের গল্প এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর নীতি বাস্তবায়নে সামনে আসবে বহু বাধা। বিশেষ করে যদি তিনি তাঁর অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন করতে চান; যেমন সর্বজনীন শিশুসেবা চালু করা, যার জন্য করপোরেশন ও ধনীদের ওপর কর বাড়াতে হবে।
ওয়ার্টেল-লন্ডন বলেন, ‘তবু ইতিহাস বলে, এসব লড়াই জেতা অসম্ভব নয়। এমনকি রিপাবলিকান মেয়র ব্লুমবার্গও একসময় কর বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন। কারণ, তিনি কার্যকর ও সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব দেখিয়েছিলেন। যদি মামদানি তেমন নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে তিনি মানুষকে অবাক করে দিতে পারবেন তাঁর অর্জনের পরিমাণ দেখিয়ে।’
৩৪ বছর বয়সী সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সামাদ আহমেদের কাছে মামদানির প্রার্থিতা ছিল এক রকম ‘রূপান্তরমূলক অভিজ্ঞতা।’ জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেন। তবে তিনি জানেন, জনমত খুব সহজেই পাল্টে যেতে পারে। যদি মামদানি প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হন, তাহলে তা তাঁর মতো প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সামাদ বলেন, ‘আমি কখনো মনে করিনি যে কোনো প্রার্থী আমার মতো নিউইয়র্কারের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। কিন্তু মামদানি আমাকে সে আশা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এটা তাঁর দায়িত্ব—আমাদের এই আশাকে সঠিক বলে প্রমাণ করা। না হলে নিউইয়র্কাররা তাঁকে বিদায় জানাতে দেরি করবে না। আমেরিকানরা এমনই।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কি কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
মামদানি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির। এর মধ্যে ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে আবার শ্রমজীবী আমেরিকানদের দিকে ফিরিয়ে আনা। একই সঙ্গে মূলধারার রাজনীতিতে একসময়ে বাতিল হয়ে যাওয়া মতাদর্শগুলো একেবারে বাদ না দেওয়া। কুমো একে বলেছেন ‘গৃহযুদ্ধ।’ আর এই গৃহযুদ্ধে কুমোর মতো ‘মধ্যপন্থীরা’ মুখোমুখি হয়েছেন মামদানির মতো প্রগতিশীল নতুনদের।
ভোটের দিন বিষয়টি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। ব্রুকলিনের ক্রাউন হাইটস এলাকার ৬৮ বছর বয়সী ভোটার মাইকেল ব্ল্যাকম্যান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত রাজনীতির বিরুদ্ধে যাওয়া’ ছিল তাঁর কাছে নির্বাচনের সবচেয়ে বড় ইস্যু। তিনি বলেন, ‘মামদানি হয়তো তাঁর সব প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন না, কিন্তু তাঁর অন্তত একটা আদর্শ আছে।’
ব্ল্যাকম্যানের কাছে কুমো মানে ‘একই পুরোনো রাজনীতি’র পুনরাবৃত্তি, যা বহুদিন ধরে উদারপন্থী রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ধনবান দাতাদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যক্তি তাঁকে সমর্থন দেওয়া সেটিই প্রমাণ করে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাস্টিস ডেমোক্র্যাটস নামের সংগঠন জানায়, ‘জোহরানের এই বিজয় করপোরেটপন্থী, প্রতিষ্ঠিত ডেমোক্র্যাটদের জন্য সতর্কবার্তা—আপনি যদি সাধারণ মানুষের স্বার্থে কাজ না করেন, আপনার সময় শেষ হয়ে আসছে।’
মামদানির প্রচারণা শিবিরও তাঁর এই বিজয়কে স্থানীয় সীমানা ছাড়িয়ে এক বড় বার্তা হিসেবে তুলে ধরেছে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সিনেটর মাইকেল জিয়ানারিস নির্বাচনের আগের রাতে মামদানির পাশে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘এই বার্তা শুধু নিউইয়র্ক সিটির জন্য নয়, শুধু নিউইয়র্ক রাজ্যের জন্য নয়, এমনকি শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্যও নয়—এটা গোটা বিশ্বের জন্য।’ তিনি যোগ করেন, ‘মানুষ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তারা সবকিছু করতে পারে।’
মামদানির প্রচারণা থেকে কী শিক্ষা নেওয়া যায়, তা সময়ই বলবে। জাতীয় পর্যায়ে অনেক শীর্ষ ডেমোক্র্যাট নেতা এখনো তাঁকে পুরোপুরি গ্রহণ করেননি। তাঁদের আশঙ্কা, ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য হিসেবে মামদানির অবস্থান এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে তাঁর স্পষ্ট সমর্থন হয়তো ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভোটারদের দূরে ঠেলে দিতে পারে।
এই তালিকার শীর্ষে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর চাক শুমার। তিনি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিরপেক্ষ থেকেছেন। তবে ডেমোক্র্যাট কৌশলবিদ ট্রিপ ইয়াং বলেন, সমর্থন যেখান থেকেই আসুক না কেন, দলের নেতারা মামদানির এই প্রচারণাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। কারণ, গত বছরের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেস নির্বাচনে পরাজয়ের পর ডেমোক্র্যাটরা এখন ভবিষ্যতের পথ খুঁজছে।
ইয়াং বলেন, কুমোর অভিযোগ করা ‘গৃহযুদ্ধ’ আসলে অতিরঞ্জন। কারণ, পুরোনো ধাঁচের ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ নিয়ে কেউ সংগঠিতভাবে কুমোর বিপক্ষে নামেননি। বরং তাঁর মতে মামদানির এই জয় দেখিয়ে দিয়েছে পার্টি কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা দলের নেতৃত্ব পছন্দ করুক বা না করুক। ডেমোক্রেটিক পার্টি যাচ্ছে এমন এক রূপান্তরের দিকে, যেখানে লেবেল বা মতাদর্শের চেয়ে চিন্তার বৈচিত্র্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
ইয়াং বলেন, ‘আপনি ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট, মধ্যপন্থী বা রক্ষণশীল যা-ই হোন না কেন, সেটা আসলে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভোটাররা খোঁজে এমন প্রার্থীকে, যিনি শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং তাঁদের সবচেয়ে জরুরি সমস্যার কথা বলতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্ক সিটিতে এখন বড় বিষয় হলো জীবনযাত্রার ব্যয়। কিন্তু মূল ব্যাপারটা হলো একটা সমস্যাকে চিহ্নিত করা, তারপর সেটি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া।’
ইয়াং আরও বলেন, শহরের বিভিন্ন কমিউনিটিতে মামদানির নিয়মিত উপস্থিতি, এমনকি বৈরী গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের ইচ্ছাও ডেমোক্র্যাটদের অনুসরণ করা উচিত। তাঁর কথায়, ‘অনেক ডেমোক্র্যাট কেবল নিরাপদ রাজনৈতিক পরিসরেই থাকেন।’
ব্রুকলিনের বার্ড কলেজের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড্যানিয়েল ওয়ার্টেল-লন্ডন বলেন, মামদানির সাফল্য প্রমাণ করেছে, ‘সহনীয় জীবনযাপন এখন আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় ইস্যু।’ তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটরা ঐতিহাসিকভাবে সাফল্য পান যখন তাঁরা মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রশ্নে যেমন জীবনের ব্যয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার মতো ‘রুটি-রুজির ইস্যুতে’ মন দেন।
তবে এসবের দিকে মনোযোগ দেওয়া মানে এই নয় যে প্রগতিশীল মূল্যবোধ বা আদর্শ বিসর্জন দিতে হবে। ওয়ার্টেল-লন্ডনের ভাষায়, ‘মামদানি দেখিয়েছেন কীভাবে এসব অগ্রাধিকারকে সামাজিক ন্যায়বিচারের নৈতিক জরুরির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া যায়, যা অনেক প্রগতিশীল মানুষের প্রেরণার উৎস।’
তিনি বলেন, ‘ডেমোক্র্যাটরা যদি নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিভাজন কাটিয়ে একটি বড় ঐক্যবদ্ধ জোট গড়তে চান, তাহলে তাঁদের মামদানির পথ থেকে শিক্ষা নিতে হবে।’ অনেকের কাছে, ফিলিস্তিনিদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এবং গাজায় গণহত্যার নিন্দা করার মধ্য দিয়ে এই প্রগতিশীল মূল্যবোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন মামদানি।
তবে এই অবস্থানেই সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর আক্রমণের মুখে পড়েছেন তিনি। কুমো মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ ও ‘সন্ত্রাসবাদের সমর্থক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। যদিও মামদানি কিছু বক্তব্যে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন; যেমন তিনি ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইন্তিফাদা’ শব্দবন্ধটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে তারপরও তিনি ফিলিস্তিনের পক্ষে এবং ইসরায়েলের সমালোচনায় দৃঢ়।
নির্বাচনের আগের রাতে মামদানির সমর্থক শবনম সালেহেজাদেহি বলেন, ‘তাঁর রাজনীতিতে যে নীতিগত দৃঢ়তা আছে, তা আমি পছন্দ করি।’ গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাধারণ সমর্থকদের মধ্যে ফিলিস্তিনপন্থী মনোভাব বাড়ছে। যদিও দলের শীর্ষ নেতারা এখনো ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার পক্ষে। সালেহেজাদেহি বলেন, ‘মামদানি ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবে দেখেন। তিনি গাজায় যা ঘটছে, সেটিকে স্পষ্টভাবে গণহত্যা হিসেবেই দেখেন।’
তবে মামদানির এই জয়ের গল্প এখানেই শেষ নয়, বরং শুরু। আগামী জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর নীতি বাস্তবায়নে সামনে আসবে বহু বাধা। বিশেষ করে যদি তিনি তাঁর অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন করতে চান; যেমন সর্বজনীন শিশুসেবা চালু করা, যার জন্য করপোরেশন ও ধনীদের ওপর কর বাড়াতে হবে।
ওয়ার্টেল-লন্ডন বলেন, ‘তবু ইতিহাস বলে, এসব লড়াই জেতা অসম্ভব নয়। এমনকি রিপাবলিকান মেয়র ব্লুমবার্গও একসময় কর বৃদ্ধি করতে পেরেছিলেন। কারণ, তিনি কার্যকর ও সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব দেখিয়েছিলেন। যদি মামদানি তেমন নেতৃত্ব দিতে পারেন, তাহলে তিনি মানুষকে অবাক করে দিতে পারবেন তাঁর অর্জনের পরিমাণ দেখিয়ে।’
৩৪ বছর বয়সী সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সামাদ আহমেদের কাছে মামদানির প্রার্থিতা ছিল এক রকম ‘রূপান্তরমূলক অভিজ্ঞতা।’ জীবনে প্রথমবারের মতো তিনি স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেন। তবে তিনি জানেন, জনমত খুব সহজেই পাল্টে যেতে পারে। যদি মামদানি প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হন, তাহলে তা তাঁর মতো প্রগতিশীল রাজনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। সামাদ বলেন, ‘আমি কখনো মনে করিনি যে কোনো প্রার্থী আমার মতো নিউইয়র্কারের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। কিন্তু মামদানি আমাকে সে আশা দিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন এটা তাঁর দায়িত্ব—আমাদের এই আশাকে সঠিক বলে প্রমাণ করা। না হলে নিউইয়র্কাররা তাঁকে বিদায় জানাতে দেরি করবে না। আমেরিকানরা এমনই।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

নতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয় তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র
২ দিন আগে
পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্ক। এই শহরটি যদি রুশ বাহিনীর দখলে যায়, তবে সেটি হবে গত কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। দোনেৎস্ক অঞ্চলের এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরটি নিয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
২ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
৪ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মধ্যপন্থী থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক পর্যন্ত, আদর্শগত দিক থেকে আলাদা ঘরানার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরাও এই জয়ে বিজয়ী হয়েছেন। স্পষ্টত ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য এটি এক নতুন পথের ইঙ্গিত।
ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট ও সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার। রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসাম আর্লে-সিয়ার্সকে পরাজিত করে তিনি রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে রেকর্ড গড়লেন।
এই জয়ের পেছনে রয়েছে উত্তর ভার্জিনিয়ার শহরতলি ও আধা শহরতলির লুডন কাউন্টির মতো অঞ্চলগুলোর ‘সাব-আরবান সুইং’। স্প্যানবার্গারের বিজয়ের আধিপত্য বুঝতে এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট: লুডন কাউন্টিতে তিনি ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই অনুপাত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুসারে যেসব পরিবারে কোনো ফেডারেল কর্মী বা ফেডারেল ঠিকাদার আছেন, স্প্যানবার্গার তাঁদের ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল কর্মী বাহিনীকে দুর্বল করার নীতির প্রতি এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ভোটারের অসন্তোষের ইঙ্গিত।
স্প্যানবার্গারের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জে জনস, যিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন, তিনিও জয়লাভ করতে সক্ষম হন।
নিউ জার্সিতে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি মিকি শেরিল জয়লাভ করেন, এটিও রাজ্যের ট্রাম্পবিরোধী মনোভাবের স্পষ্ট প্রতিফলন। এই রাজ্যে নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের চেয়ে ৮ লাখের বেশি হওয়া সত্ত্বেও রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক চিয়াত্তারেল্লি তাঁর আঞ্চলিক অহম ‘জার্সি গাই’ ক্যাম্পেইন এবং ট্রাম্পের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুযায়ী, শেরিল লাতিনো ভোটারদের ৬৪ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৯১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।
যেখানে চিয়াত্তারেল্লি সহজে জিতেছেন, সেখানকার ভোটদাতাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ মনে করেন, শুল্ক-কর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তবে ৩২ শতাংশ ভোটার যখন অর্থনীতিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাঁদের ৬১ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ ব্যবধানে শেরিলকে সমর্থন দিয়েছেন। এটিই জয়ের মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক জোহরান মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে দ্বিতীয়বারের মতো (প্রাইমারির পর) পরাজিত করেন। যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোকে ভোট দেওয়ার জন্য রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কুমোর জন্য এটি একটি চরম বিব্রতকর ঘটনা। ট্রাম্পের পক্ষ থেকেও এটি একটি ব্যর্থতা। তিনি কুমোকে সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘যদি একজন খারাপ ডেমোক্র্যাট এবং একজন কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’
মামদানি তাঁর প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর ওপর ক্রমাগত জোর দিয়েছেন। তাঁর জয়ের ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন নির্মাণের পথে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর জন্য অনুমোদিত ব্যালট প্রস্তাবগুলো কার্যকর হলে নিউইয়র্ক সিটি দেশের অন্যান্য শহরের জন্য একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররাও একটি সীমানা পুনর্নির্ধারণ ব্যালট প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন, যা আগামী বছর হাউস দখলে ডেমোক্র্যাটদের আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটরা পাঁচটি অতিরিক্ত অনুকূল নির্বাচনী এলাকা পেতে পারেন।
গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই প্রচেষ্টার প্রধান মুখ ছিলেন। তিনি এই জন্য ১০৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেন এবং প্রচারণায় নিজে উপস্থিত থাকেন। এটি নিউসমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মুহূর্ত। ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি সুযোগ।
এসব বড় জয়ের বাইরেও ডেমোক্র্যাটরা ছোটখাটো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন:
পেনসিলভানিয়া: ডেমোক্র্যাট রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তাঁদের ১০ বছরের নতুন মেয়াদ নিশ্চিত করেছেন। ফলে এই ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যের আদালতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ডেমোক্র্যাটদের হাতেই রইল।
মেইন: ভোটাররা এমন একটি ব্যালট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে ভোট দেওয়ার সময় ছবিসহ পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করার মতো কড়া নিয়ম ছিল।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এই নির্বাচন ডেমোক্র্যাটদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক (মধ্যপন্থী বনাম প্রগতিশীল) মেটাতে সামান্যই সাহায্য করবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর সম্মিলিত বার্তাটি তাদের জন্য আগামী নির্বাচনী লড়াইয়ে জেতার একটি সূত্র দিতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোতে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রায় এক বছর পূর্তির লগ্নে এই নির্বাচনকে ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি তীব্র অসন্তোষের সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মধ্যপন্থী থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক পর্যন্ত, আদর্শগত দিক থেকে আলাদা ঘরানার ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরাও এই জয়ে বিজয়ী হয়েছেন। স্পষ্টত ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির জন্য এটি এক নতুন পথের ইঙ্গিত।
ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছেন মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাট ও সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার। রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসাম আর্লে-সিয়ার্সকে পরাজিত করে তিনি রাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী গভর্নর হিসেবে রেকর্ড গড়লেন।
এই জয়ের পেছনে রয়েছে উত্তর ভার্জিনিয়ার শহরতলি ও আধা শহরতলির লুডন কাউন্টির মতো অঞ্চলগুলোর ‘সাব-আরবান সুইং’। স্প্যানবার্গারের বিজয়ের আধিপত্য বুঝতে এই পরিসংখ্যানই যথেষ্ট: লুডন কাউন্টিতে তিনি ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এই অনুপাত ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে ৮ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুসারে যেসব পরিবারে কোনো ফেডারেল কর্মী বা ফেডারেল ঠিকাদার আছেন, স্প্যানবার্গার তাঁদের ৬১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। এটি ট্রাম্প প্রশাসনের ফেডারেল কর্মী বাহিনীকে দুর্বল করার নীতির প্রতি এই অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক ভোটারের অসন্তোষের ইঙ্গিত।
স্প্যানবার্গারের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জে জনস, যিনি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে ছিলেন, তিনিও জয়লাভ করতে সক্ষম হন।
নিউ জার্সিতে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি মিকি শেরিল জয়লাভ করেন, এটিও রাজ্যের ট্রাম্পবিরোধী মনোভাবের স্পষ্ট প্রতিফলন। এই রাজ্যে নিবন্ধিত ডেমোক্র্যাটরা রিপাবলিকানদের চেয়ে ৮ লাখের বেশি হওয়া সত্ত্বেও রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক চিয়াত্তারেল্লি তাঁর আঞ্চলিক অহম ‘জার্সি গাই’ ক্যাম্পেইন এবং ট্রাম্পের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে ব্যবধান কমানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি।
সিএনএনের এক্সিট পোল অনুযায়ী, শেরিল লাতিনো ভোটারদের ৬৪ শতাংশ এবং কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৯১ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।
যেখানে চিয়াত্তারেল্লি সহজে জিতেছেন, সেখানকার ভোটদাতাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ মনে করেন, শুল্ক-কর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। তবে ৩২ শতাংশ ভোটার যখন অর্থনীতিকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, তাঁদের ৬১ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ ব্যবধানে শেরিলকে সমর্থন দিয়েছেন। এটিই জয়ের মূল পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।
অন্যদিকে নিউইয়র্ক সিটিতে গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক জোহরান মামদানি সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে দ্বিতীয়বারের মতো (প্রাইমারির পর) পরাজিত করেন। যেখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোকে ভোট দেওয়ার জন্য রিপাবলিকানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কুমোর জন্য এটি একটি চরম বিব্রতকর ঘটনা। ট্রাম্পের পক্ষ থেকেও এটি একটি ব্যর্থতা। তিনি কুমোকে সমর্থন করে বলেছিলেন, ‘যদি একজন খারাপ ডেমোক্র্যাট এবং একজন কমিউনিস্টের মধ্যে বেছে নিতে হয়, আমি সব সময় খারাপ ডেমোক্র্যাটকেই বেছে নেব।’
মামদানি তাঁর প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর ওপর ক্রমাগত জোর দিয়েছেন। তাঁর জয়ের ফলে সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন নির্মাণের পথে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানোর জন্য অনুমোদিত ব্যালট প্রস্তাবগুলো কার্যকর হলে নিউইয়র্ক সিটি দেশের অন্যান্য শহরের জন্য একটি আদর্শ মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।
ক্যালিফোর্নিয়ার ভোটাররাও একটি সীমানা পুনর্নির্ধারণ ব্যালট প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন, যা আগামী বছর হাউস দখলে ডেমোক্র্যাটদের আত্মবিশ্বাস অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ডেমোক্র্যাটরা পাঁচটি অতিরিক্ত অনুকূল নির্বাচনী এলাকা পেতে পারেন।
গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এই প্রচেষ্টার প্রধান মুখ ছিলেন। তিনি এই জন্য ১০৮ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেন এবং প্রচারণায় নিজে উপস্থিত থাকেন। এটি নিউসমের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মুহূর্ত। ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সক্ষমতা প্রদর্শনের একটি সুযোগ।
এসব বড় জয়ের বাইরেও ডেমোক্র্যাটরা ছোটখাটো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন:
পেনসিলভানিয়া: ডেমোক্র্যাট রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তাঁদের ১০ বছরের নতুন মেয়াদ নিশ্চিত করেছেন। ফলে এই ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ রাজ্যের আদালতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ডেমোক্র্যাটদের হাতেই রইল।
মেইন: ভোটাররা এমন একটি ব্যালট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে ভোট দেওয়ার সময় ছবিসহ পরিচয়পত্র দেখানো বাধ্যতামূলক করার মতো কড়া নিয়ম ছিল।
তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এই নির্বাচন ডেমোক্র্যাটদের নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিতর্ক (মধ্যপন্থী বনাম প্রগতিশীল) মেটাতে সামান্যই সাহায্য করবে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি অসন্তোষ এবং জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর সম্মিলিত বার্তাটি তাদের জন্য আগামী নির্বাচনী লড়াইয়ে জেতার একটি সূত্র দিতে পারে।

নতুন স্বাক্ষরিত চুক্তির লক্ষ্য হলো—দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে—যৌথ সামরিক মহড়া আয়োজন, তথ্যবিনিময়, বিশেষ করে উভয় দেশের জন্য হুমকি মোকাবিলা করতে, যেমন—সন্ত্রাসবাদ ও সীমান্তপারের বিদ্রোহ।
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
এ বছরের জুনে আরএসএফ যখন মিসর, সুদান ও লিবিয়ার সংযোগস্থল মরু এলাকায় সুদানের অংশটি দখল করে নেয় তখনই পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। এখন কায়রোর ভয়, এই যুদ্ধ যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তা হলে তা তাদের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার তাদের নিরাপত্তা মানচিত্র
২ দিন আগে
পূর্ব ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর পোকরভস্ক। এই শহরটি যদি রুশ বাহিনীর দখলে যায়, তবে সেটি হবে গত কয়েক মাসের মধ্যে ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি। দোনেৎস্ক অঞ্চলের এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শহরটি নিয়ে তীব্র যুদ্ধ চলছে।
২ দিন আগে
নিউইয়র্কে জোহরান মামদানির জয় কী কোনো পথনির্দেশ নাকি অসংগতি? গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এই প্রশ্ন ঘিরে রেখেছিল জোহরান মামদানিকে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে তিনি মেয়র নির্বাচনে বড় জয় পেয়েছেন।
৪ দিন আগে