মারুফ ইসলাম
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরটি জাপান ও ভারতের জন্য কৌশলগত আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে। কারণ চীনের প্রভাব মোকাবিলা করতে কোয়াডের হাতে এ ছাড়া বিকল্প নেই।
কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় কোয়াড, সেটি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের একটি অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত নিরাপত্তামূলক জোট হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের নেতৃত্বে এটি গঠিত হলেও সেভাবে সক্রিয় ছিল না। কোয়াড কার্যকরভাবে কাজ করতে শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে।
কোয়াডের মূল উদ্দেশ্য চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক অগ্ৰযাত্রা প্রতিহত করা। যদিও প্রশান্ত মহাসাগরে অবাধ নৌচলাচল নিশ্চিত করার কথা বলে এই সংগঠন যাত্রা শুরু করেছিল, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এদের লক্ষ্য চীন। বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তারকে রুখে দেওয়া কোয়াডের মূল উদ্দেশ্য।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী ধলঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন গভীর সমুন্দ্রবন্দরটিতে সহায়তা করছে জাপান। কিন্তু এর থেকে খানিক দূরেই সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চেয়েছিল চীন। ২০১২ সালে প্রকল্পটির অনুমোদনও দিয়েছিল সরকার। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে ওই প্রকল্পের উন্নয়নকাজে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে আসে সরকার।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বড় শক্তিধর দেশগুলোর খেলায় ভারতের কৌশলগত জয় হয়েছে। এই ইস্যুতে ভারতের সতীর্থ দেশ জাপানকেও বিজয়ী বলা যায়।
গত মার্চে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ভারত সফরের সময়েই মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওই সময় কিশিদা বলেছেন, ‘বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দরটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সমৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করবে।’
সন্দেহ নেই, বন্দরটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক এজেন্ডার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর সে কারণে ওই মাসেই বাংলাদেশকে নতুন করে ১২০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি।
বলে রাখা প্রয়োজন, মাতারবাড়ী প্রকল্পটিতে একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। কনটেইনার টার্মিনালের মাধ্যমে বিশালাকৃতির জাহাজ ও ট্যাংকার নোঙর করা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, এসব জাহাজে করে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে লোহা ও আকরিক আনবে এবং বিদেশে দেশীয় পোশাক রপ্তানি করবে।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা জাইকার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পানির গভীরতার দিক থেকে মাতাবাড়ী বন্দরটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর বা সিঙ্গাপুর বন্দরের সমতুল্য হবে।’
২০২৭ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি চালু হলে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরটি ভারতের অনুন্নত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো, যেগুলো ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত, সেগুলোর জন্যও মূল বন্দর হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা যায়। সেভেন সিস্টার্স মূলত চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ঘেরা।
উল্লেখ্য, ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডকে সংক্ষেপে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সেভেন সিস্টার্সের জন্য মাতারবাড়ী বন্দরটি হবে সবচেয়ে সুবিধাজনক। কারণ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক বেশি সৌহার্দপূর্ণ। তিব্বত নিয়ে চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে ভারতের। অন্যদিকে মিয়ানমারের সঙ্গেও খুব একটা সুসম্পর্ক নেই দিল্লির।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেয়ারব্যাংক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের গবেষণা সহযোগী আনু আনোয়ার বলেছেন, ‘ভারতের বিরোধিতার কারণে চীনের সঙ্গে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর চুক্তি করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরে জাপানকে স্বাগত জানায় মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য।’
কিন্তু জাপান কেন এতে রাজি হলো? এ ব্যাপারে জাপানের মেইকাই ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তেতসুও কোটানি একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, জাপান জ্বালানি তেল নেয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে এবং এটি বঙ্গোপসাগর হয়ে জাপানে যায়। তাই এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় জাপানের আগ্রহ রয়েছে। সেই আগ্রহ থেকেই জাপান বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দরে বিনিয়োগ করেছে।
ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতার ভিত্তিও জাপান স্থাপন করতে চায় বলে মনে করেন কোটানি। তিনি বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকেই প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উদ্ভব হয়। কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ বিমান মহড়া পর্যবেক্ষণ করেছে জাপান।’
জাইকার কর্মকর্তা বলেছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা বাড়িয়েছে জাপান। দেশটির আর্থিক সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ রাস্তাঘাট, সেতু ও নানা ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।
জাপানের জন্য মাতারবাড়ী প্রকল্পটি সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। কারণ এটিকে বলা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাকৃতিক প্রবেশদ্বার। যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে জাপান। তারা দেশটির কৌশলগত তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত। সে কারণে প্রায় পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনে সহযোগিতা করছে।’
বাংলাদেশেকে শক্তিধর দেশগুলোর প্রতিযোগিতার রণক্ষেত্র উল্লেখ করে কুগেলম্যান বলেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চীন। অন্যদিকে ভারতও ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও চায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে। কারণ চীনের ওপর থেকে বাণিজ্যিক নির্ভরতা কমাতে এ ছাড়া বিকল্প নেই তার।’
বাংলাদেশের নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির কারণেই শক্তিধর দেশগুলো এখানে চুম্বকের মতো আকৃষ্ট হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন কুগেলম্যান। একই কারণে মংলায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থায়ন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছ চীন ও ভারত উভয়েই।
ফেয়ারব্যাংক সেন্টারের আনু আনোয়ার বলেছেন, বাংলাদেশে বন্দর নির্মাণ ঘিরে লড়াইয়ে নেমেছে শক্তিধরেরা। তবে আনোয়ারের এই দাবিকে নাকচ করেছেন ঢাকাভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্লেষক অ্যাডাম পিটম্যান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নিজেকে শক্তিধরদের লড়াইয়ের ক্ষেত্র হতে দেবে না। এই ভাবনা অযৌক্তিক।’
অ্যাডাম পিটম্যানের যুক্তি, জাপান বাংলাদেশে চীনেরও বহু আগে থেকে বিনিয়োগ করে আসছে। মাতারবাড়ী বন্দরে জাপানের বিনিয়োগকে সেই দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের প্রেক্ষাপটেই দেখা উচিত।
পিটম্যান আরও বলেন, ‘কিশিদার উদার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির কারণে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ আরও বাড়তে পারে বলে আমি মনে করি।’
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস, গার্ডিয়ান ও বিবিসি
আরও পড়ুন:
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরটি জাপান ও ভারতের জন্য কৌশলগত আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে। কারণ চীনের প্রভাব মোকাবিলা করতে কোয়াডের হাতে এ ছাড়া বিকল্প নেই।
কোয়াড্রিল্যাটেরাল সিকিউরিটি ডায়ালগ, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় কোয়াড, সেটি যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের একটি অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত নিরাপত্তামূলক জোট হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ সালে জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের নেতৃত্বে এটি গঠিত হলেও সেভাবে সক্রিয় ছিল না। কোয়াড কার্যকরভাবে কাজ করতে শুরু করে ২০১৭ সাল থেকে।
কোয়াডের মূল উদ্দেশ্য চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক অগ্ৰযাত্রা প্রতিহত করা। যদিও প্রশান্ত মহাসাগরে অবাধ নৌচলাচল নিশ্চিত করার কথা বলে এই সংগঠন যাত্রা শুরু করেছিল, কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এদের লক্ষ্য চীন। বর্তমানে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের আধিপত্য বিস্তারকে রুখে দেওয়া কোয়াডের মূল উদ্দেশ্য।
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী ধলঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন গভীর সমুন্দ্রবন্দরটিতে সহায়তা করছে জাপান। কিন্তু এর থেকে খানিক দূরেই সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে চেয়েছিল চীন। ২০১২ সালে প্রকল্পটির অনুমোদনও দিয়েছিল সরকার। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে ওই প্রকল্পের উন্নয়নকাজে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে আসে সরকার।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বড় শক্তিধর দেশগুলোর খেলায় ভারতের কৌশলগত জয় হয়েছে। এই ইস্যুতে ভারতের সতীর্থ দেশ জাপানকেও বিজয়ী বলা যায়।
গত মার্চে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার ভারত সফরের সময়েই মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ওই সময় কিশিদা বলেছেন, ‘বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দরটি সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সমৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করবে।’
সন্দেহ নেই, বন্দরটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক এজেন্ডার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর সে কারণে ওই মাসেই বাংলাদেশকে নতুন করে ১২০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি।
বলে রাখা প্রয়োজন, মাতারবাড়ী প্রকল্পটিতে একটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও রয়েছে। কনটেইনার টার্মিনালের মাধ্যমে বিশালাকৃতির জাহাজ ও ট্যাংকার নোঙর করা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, এসব জাহাজে করে বাংলাদেশ বিদেশ থেকে লোহা ও আকরিক আনবে এবং বিদেশে দেশীয় পোশাক রপ্তানি করবে।
প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা জাইকার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পানির গভীরতার দিক থেকে মাতাবাড়ী বন্দরটি শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দর বা সিঙ্গাপুর বন্দরের সমতুল্য হবে।’
২০২৭ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এটি চালু হলে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর চাপ কমবে। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরটি ভারতের অনুন্নত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো, যেগুলো ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত, সেগুলোর জন্যও মূল বন্দর হিসেবে কাজ করবে বলে ধারণা করা যায়। সেভেন সিস্টার্স মূলত চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ঘেরা।
উল্লেখ্য, ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মণিপুর, মিজোরাম ও নাগাল্যান্ডকে সংক্ষেপে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, সেভেন সিস্টার্সের জন্য মাতারবাড়ী বন্দরটি হবে সবচেয়ে সুবিধাজনক। কারণ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের তুলনায় ঢাকার সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক বেশি সৌহার্দপূর্ণ। তিব্বত নিয়ে চীনের সঙ্গে আঞ্চলিক বিরোধ রয়েছে ভারতের। অন্যদিকে মিয়ানমারের সঙ্গেও খুব একটা সুসম্পর্ক নেই দিল্লির।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ফেয়ারব্যাংক সেন্টার ফর চাইনিজ স্টাডিজের গবেষণা সহযোগী আনু আনোয়ার বলেছেন, ‘ভারতের বিরোধিতার কারণে চীনের সঙ্গে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর চুক্তি করতে পারেনি বাংলাদেশ। পরে জাপানকে স্বাগত জানায় মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য।’
কিন্তু জাপান কেন এতে রাজি হলো? এ ব্যাপারে জাপানের মেইকাই ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তেতসুও কোটানি একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর মতে, জাপান জ্বালানি তেল নেয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে এবং এটি বঙ্গোপসাগর হয়ে জাপানে যায়। তাই এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষায় জাপানের আগ্রহ রয়েছে। সেই আগ্রহ থেকেই জাপান বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দরে বিনিয়োগ করেছে।
ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতার ভিত্তিও জাপান স্থাপন করতে চায় বলে মনে করেন কোটানি। তিনি বলেছেন, ‘অর্থনৈতিক সম্পর্ক থেকেই প্রতিরক্ষা সহযোগিতার উদ্ভব হয়। কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ বিমান মহড়া পর্যবেক্ষণ করেছে জাপান।’
জাইকার কর্মকর্তা বলেছেন, গত এক দশকে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা বাড়িয়েছে জাপান। দেশটির আর্থিক সহায়তা নিয়ে বাংলাদেশ রাস্তাঘাট, সেতু ও নানা ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।
জাপানের জন্য মাতারবাড়ী প্রকল্পটি সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা। কারণ এটিকে বলা হয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাকৃতিক প্রবেশদ্বার। যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, ‘কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে জাপান। তারা দেশটির কৌশলগত তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত। সে কারণে প্রায় পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনে সহযোগিতা করছে।’
বাংলাদেশেকে শক্তিধর দেশগুলোর প্রতিযোগিতার রণক্ষেত্র উল্লেখ করে কুগেলম্যান বলেন, ‘অবকাঠামোগত উন্নয়ন খাতে বড় ধরনের বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে চীন। অন্যদিকে ভারতও ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রও চায় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে। কারণ চীনের ওপর থেকে বাণিজ্যিক নির্ভরতা কমাতে এ ছাড়া বিকল্প নেই তার।’
বাংলাদেশের নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির কারণেই শক্তিধর দেশগুলো এখানে চুম্বকের মতো আকৃষ্ট হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন কুগেলম্যান। একই কারণে মংলায় সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থায়ন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছ চীন ও ভারত উভয়েই।
ফেয়ারব্যাংক সেন্টারের আনু আনোয়ার বলেছেন, বাংলাদেশে বন্দর নির্মাণ ঘিরে লড়াইয়ে নেমেছে শক্তিধরেরা। তবে আনোয়ারের এই দাবিকে নাকচ করেছেন ঢাকাভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্লেষক অ্যাডাম পিটম্যান। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ নিজেকে শক্তিধরদের লড়াইয়ের ক্ষেত্র হতে দেবে না। এই ভাবনা অযৌক্তিক।’
অ্যাডাম পিটম্যানের যুক্তি, জাপান বাংলাদেশে চীনেরও বহু আগে থেকে বিনিয়োগ করে আসছে। মাতারবাড়ী বন্দরে জাপানের বিনিয়োগকে সেই দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের প্রেক্ষাপটেই দেখা উচিত।
পিটম্যান আরও বলেন, ‘কিশিদার উদার ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির কারণে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ আরও বাড়তে পারে বলে আমি মনে করি।’
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস, গার্ডিয়ান ও বিবিসি
আরও পড়ুন:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বহুল আলোচিত ও প্রতীক্ষিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। যুক্তরাষ্ট্রের রাশিয়াসংলগ্ন অঙ্গরাজ্য আলাস্কায় অবস্থিত যৌথ ঘাঁটি এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে মুখোমুখি বসবেন ট্রাম্প-পুতিন। বৈঠকের প্রধান আলোচ্য বিষয়
১৭ ঘণ্টা আগেনিজের ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প জানান, তিনি ইতিমধ্যে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন এবং নতুন কোনো শর্ত আরোপ করা হচ্ছে না। একই সময়ে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও মার্কিন পণ্যে তাদের শুল্ক স্থগিতাদেশ একই মেয়াদে বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। তাদের পূর্বের চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার রাত ১২টা ১ মিনিটে।
২ দিন আগেবিশ্বজুড়েই ছাত্র ইউনিয়নগুলো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগকারী গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করে। ইতিহাস বলে, এই ছাত্ররাই সরকারকে দায়বদ্ধ করে তোলে এবং তরুণদের অধিকার রক্ষা করে। বাংলাদেশে অনেক ছাত্র নেতা পরবর্তীকালে মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ...
৪ দিন আগেশেখ হাসিনার পতনের বর্ষপূর্তি উদ্যাপন ও বাংলাদেশের এক নতুন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতির আশায় হাজারো মানুষ গত সপ্তাহে ঢাকায় জড়ো হয়েছিলেন। বর্ষাস্নাত দিনটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে নেতা, অধিকারকর্মীদের উপস্থিতিতে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক ‘নয়া বাংলাদেশের’ ঘোষণাপত্র উন্মোচন করেছেন।
৫ দিন আগে