Ajker Patrika

প্রজেক্ট ইমরান খান: পাকিস্তানে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৩ মে ২০২৩, ১২: ১৩
প্রজেক্ট ইমরান খান: পাকিস্তানে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা

পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ২০১১ সালে ‘প্রজেক্ট ইমরান খান’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ওই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল ইমরান খানকে কাজে লাগিয়ে নওয়াজ শরিফের সরকারকে হটানো। ওই সময় সংস্থাটির প্রধান ছিলেন সুজা পাশা। তিনি ২০১২ সালে অবসরে যান। জহিরুল ইসলাম তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি প্রকল্পটি চালিয়ে গেলেও মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হন। জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া সেনাপ্রধান হওয়ার আগপর্যন্ত সামরিকভাবে ওই প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়। পাকিস্তানের দৈনিক জং পত্রিকায় প্রকাশিত কলামে দেশটির সাংবাদিক হামিদ মির এসব তথ্য জানিয়েছেন।

কলামে হামিদ মির বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে জেনারেল বাজওয়া ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে ইমরান খানের সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট হননি। তাই তিনি শাহবাজ শরিফকে নিয়ে পরিকল্পনা করেন, কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ হন। কোনো বিকল্প না থাকায় আবার ইমরান খানকে নিয়েই প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে কারচুপির মাধ্যমে ওই নির্বাচনে ইমরান প্রধানমন্ত্রী হন। প্রজেক্ট ইমরান খানের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসন পদ্ধতি ফিরিয়ে আনাসহ পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার। কিন্তু ইমরান ক্ষমতায় এসেই তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দমনে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি কিছু সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন, যাঁরা বাজওয়াকে সমর্থন করতেন না।

২০১৯ সালে ইমরান খানের সঙ্গে বাজওয়ার মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ে। কারণ, বাজওয়া চাইছিলেন আইএসআইয়ের শীর্ষ পদ থেকে ফায়েজ হামিদকে সরাতে, কিন্তু ইমরান তাতে রাজি হননি। প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মধ্যের এ দূরত্বের সুযোগ নেয় বিরোধীরা। অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ইমরান খানকে সরকার থেকে বহিষ্কার করেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে ইমরান খান সরকারের সমাপ্তি ঘটে। তার পরেও ইমরান তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। শিগগির তিনি আবার ক্ষমতায় আসবেন এমন আত্মবিশ্বাস ছিল। তবে সেই আশা ভেঙে যায় ৯ মে। ওই দিন ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে তাঁকে অপমানজনকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফ থেকে যে নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে, তা রীতিমতো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা।

এর আগে অনেক রাজনীতিবিদ আদালতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রতিক্রিয়া এতই তীব্র ছিল, যা অনেকটা চরমপন্থী সম্প্রদায়ের মতো। তাদের প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা মূলত দলের নেতাদের প্রশিক্ষণ ও বক্তব্যের কারণেই হয়েছে। যখন সেনাবাহিনীর জেনারেলরা ইমরান খানকে সমর্থন করতেন, তখন তিনি তাঁদের প্রশংসা করতেন। কিন্তু যখন তাঁরা ইমরানের পেছন থেকে সরে গেছেন, তখন তিনিও তাঁদের বিরুদ্ধে চলে গেছেন। ইমরান তাঁর বিরোধীদের রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ না করতে হুমকিও দিয়েছিলেন।

হামিদ মির কলামে আরও লেখেন, ইমরান খানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রতিক্রিয়া ছিল অপরিপক্ব। রাজনৈতিক মতপার্থক্যকে ব্যক্তিগত শত্রুতায় পরিণত করার মতো। দলটির সদস্যরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গালিগালাজ করেন। এতে তাঁরা সহানুভূতি ও সমর্থন হারাতে পারেন। ইমরান খানের গ্রেপ্তারের পর তাঁর দলের প্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ রাজনৈতিক দল হিসেবে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

সাংবাদিক হামিদ মিরের মতে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা ঠিক নয়। পাশাপাশি প্রজেক্ট ইমরান খান নামের কার্যক্রমের জন্য সংবিধান ও আইন লঙ্ঘনকারী অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদেরও জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কয়েকজন জেনারেলের নাম ভাঙিয়ে ব্ল্যাকমেল করার ইমরান খানের প্রচেষ্টাও সঠিক ছিল না। ইমরান খান পরবর্তী সময়ে তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রতি আরেকটু মনোযোগী হবেন বলেও আশাবাদ তাঁর।

হামিদ মিরের সাফ কথা, রাজনীতিবিদদের গণতান্ত্রিক পন্থায়ই ক্ষমতায় যেতে হবে। আর দেশের আরও ক্ষতি করতে না চাইলে সেনাবাহিনীকেও বিরত থাকতে হবে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা থেকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত