Ajker Patrika

ফরেন পলিসির নিবন্ধ /ইউক্রেনের গোপন এক বাহিনীর যুদ্ধ কখনো থামবে না

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ২২: ১৭
ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ায় ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়া এই সৈনিক একসময় রুশ বাহিনী সার্জেন্ট ছিলেন। ছবি: ফরেন পলিসি
ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়ায় ইউক্রেনের প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়া এই সৈনিক একসময় রুশ বাহিনী সার্জেন্ট ছিলেন। ছবি: ফরেন পলিসি

রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের লুহানস্ক অঞ্চলের স্টানিৎসিয়া শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে ট্রান্সফরমার গত ২৬ এপ্রিল উড়িয়ে দিয়েছে একদল গোপন প্রতিরোধকারী। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল মেলিতোপোলে রেল অবকাঠামোয় আগুন লাগানো হয়। ১৩ এপ্রিল দোনেস্ক অঞ্চলে একটি রুশ ট্যাংক পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই সব কিছুর দায়িত্ব স্বীকার করেছে ‘আতেশ’ নামে একটি গোপন ইউক্রেনপন্থী সংগঠন।

বুধবার ইউক্রেনের গোপন যোদ্ধাদের নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ফরেন পলিসি। এতে উল্লেখ করা হয়, রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোতে গোপন অস্ত্রধারী প্রতিরোধের পাশাপাশি রয়েছে বেসামরিক অবাধ্যতাও। কেউ রুশ বাহিনীর ওপর বিষ প্রয়োগ করছে, কেউ রাস্তায় ইউক্রেনের পতাকা ও পোস্টার লাগাচ্ছে। আতেশ ও অন্যান্য গোপন গোষ্ঠীগুলোর কাজ হলো—রাশিয়া যুদ্ধাস্ত্র ও যন্ত্রগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া, রুশ অফিসারদের হত্যা করা এবং রসদ সরবরাহে বাধা তৈরি করা।

ইউক্রেনের ওস্ট্রোহ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইউরি মাতসিয়েভস্কি বলেছেন, ‘প্রায় প্রতি দিনই কোনো না কোনো নাশকতা চালানো হয়।’ তিনি জানান, এসব হামলা রাশিয়ার যোগাযোগব্যবস্থা ও রসদ সরবরাহকে ব্যাহত করছে।

মাতসিয়েভস্কি মনে করেন, যুদ্ধবিরতি হলেও এই প্রতিরোধ থামবে না। কারণ, অধিকৃত এলাকাগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে গণহত্যার মতো দমননীতি চালাচ্ছে। তাঁর মতে, যুদ্ধবিরতি হলে এই বাস্তবতা বদলাবে না, বরং প্রতিরোধ আরও উসকে দেবে।

সাবেক প্রতিরোধ যোদ্ধা ভ্লাদিমির ঝেমচুগভ বলেছেন, ‘এটি গেরিলা যুদ্ধ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকেই ইউক্রেনীয়রা এতে অভ্যস্ত।’

বর্তমানে এই ধরনের গেরিলা যুদ্ধে প্রায় ৩ হাজার অস্ত্রধারী সক্রিয় এবং বেসামরিক অবাধ্য নাগরিকের সংখ্যা ১০ হাজারের মতো। ইউক্রেনের তিনটি রাষ্ট্রীয় শাখা এগুলো পরিচালনা করছে—সিআইডি, সামরিক গোয়েন্দা এবং স্পেশাল অপারেশন কমান্ডের ‘রুখ অপোরু’ ইউনিট।

আতেশ গোষ্ঠী ২০২২ সালে ক্রিমিয়ায় আত্মপ্রকাশ করেছিল। এদের ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘আমরা আতেশ। ইউক্রেনীয়, রুশ ও ক্রিমিয়ান তাতারদের নিয়ে গঠিত গোপন প্রতিরোধ আন্দোলন। আমরা রুশ সেনাবাহিনীতে ঢুকে তাদের ধ্বংস করছি।’ এই গোষ্ঠীর টেলিগ্রাম চ্যানেলে বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার অনুসারী রয়েছে।

মেলিতোপোলে ২০২৩ সালে গঠিত ‘জলা মাভকা’ নামে সম্পূর্ণ নারী-চালিত একটি গোষ্ঠী গোপনে অপারেশন চালায়। ইতিপূর্বে তারা রুশ সেনাদের বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করেছে এবং পোস্টার লাগিয়ে রুশ বিরোধী বার্তা ছড়াচ্ছে। ‘ক্রিমিয়ান কমব্যাট সিগালস’ নামে আরেকটি গোষ্ঠীও রুশ সেনাদের বিষ দিয়ে মেরে ফেলার কৃতিত্ব দেখিয়েছে।

ইউক্রেন সরকার ‘ইভোরোগ’ নামের একটি টেলিগ্রাম চ্যাটবট চালু করেছে, যেখানে নাগরিকেরা রুশ সেনাদের অবস্থান জানিয়ে ছবি ও ভিডিও পাঠাতে পারে। এখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়ে থাকে।

এভাবেই গত ২ মে ক্রিমিয়ায় অবস্থিত চারটি বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালিয়ে রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে ইউক্রেন। এর ফলে সেভাস্তোপোলে গত ৯ মে রাশিয়ার বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ বাতিল করতে হয়।

তবে ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর একজন সদস্য বলেছেন, রাশিয়ার কনট্রা-ইন্টেলিজেন্স এতটাই শক্তিশালী যে, অনেক সময় এজেন্টরা ধরা পড়ে যান। এমনকি ফোনে এনক্রিপ্টেড মেসেজিং অ্যাপ থাকলেও কেউ গ্রেপ্তার হতে পারেন।

রুশ আদালত শিশুদেরও কঠোর সাজা দিচ্ছে। এপ্রিল মাসে দোনেস্কে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ইউক্রেনের নিরাপত্তা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল ওই কিশোরকে।

রাশিয়ার জন্য সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো—দেশটির ভেতরেও ঢুকে গেছে ইউক্রেনের গোপন প্রতিরোধ যোদ্ধারা। গত ২৫ এপ্রিল একজন রুশ জেনারেলের হত্যাকাণ্ড এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ। গোপন সংস্থা আতেশও এখন রাশিয়ার অভ্যন্তরেও সক্রিয়।

ইউক্রেনের বিশেষ বাহিনীর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এই অঞ্চলগুলো (রাশিয়ার দখলে নেওয়া অঞ্চলগুলো) আমাদের নিজস্ব ভূমি, রক্তে কেনা। তাই প্রতিরোধ থামবে না, বরং আরও বাড়বে।’

এই গোপন প্রতিরোধ আন্দোলন যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরেও ইউক্রেনকে শক্তি দিচ্ছে এবং সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতিতে ইউক্রেনের আলোচনাকারীদের হাতে জোর বাড়াচ্ছে। তবে একই সঙ্গে, এমন প্রতিরোধ শান্তি আলোচনায় জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে—কারণ যারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করছেন, তাঁদের পক্ষে থেমে যাওয়া সহজ হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত