Ajker Patrika

রাশিয়ার পকেটে ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ, কোন দিকে যাচ্ছে যুদ্ধ

আব্দুর রহমান
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২২, ১১: ০৩
রাশিয়ার পকেটে ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ, কোন দিকে যাচ্ছে যুদ্ধ

ইউক্রেনের বড় একটি অংশ ‘গণভোটের’ মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রেমলিনে এক অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। চুক্তি অনুসারে এখন থেকে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া রাশিয়ার অংশ বলে বিবেচিত হবে। এ ঘটনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট কোন দিকে মোড় নেবে সেটিই বিবেচ্য। 

প্রায় ৬ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ইউক্রেনের ১৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা রাশিয়া নিজের করে নিয়েছে। যদিও এই পরিমাণ এলাকা আপাতত খাতা-কলমে যুক্ত হয়েছে। তবে ওই এলাকার মধ্যে এখনো বেশ কিছু অংশ রাশিয়া ও তার ইউক্রেনীয় মিত্রদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। 

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদন অনুসারে, ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, ২০১৪ সালে দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের সীমান্ত যে অবস্থানে ছিল, সেই সীমানাই এসব অঞ্চলের সীমান্ত বলে বিবেচিত হবে। তবে পেসকভ খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার সীমান্ত নির্ধারণের বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেননি। 

রাশিয়ার ইউক্রেনের যে চারটি অঞ্চল নিজেদের বলে ঘোষণা করেছেফলে সীমানা নির্ধারণবিষয়ক জটিলতা থেকেই যাচ্ছে। এখন রাশিয়া যদি ঘোষিত ২০১৪ সালের দোনেৎস্ক-লুহানস্কের সীমান্ত পর্যন্ত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় এবং চুক্তিতে ঘোষিত সম্পূর্ণ অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, তবে অবশ্যই সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রসরমাণ ইউক্রেনীয় বাহিনীর মোকাবিলা করতে হবে। ফলে যুদ্ধ এখনই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। অন্তত এই অবস্থান থেকে যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যায় না। 

শুধু তাই নয়, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা আরও বেড়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির ঘোষণায়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দিতে আবেদন করার কথা ঘোষণা করেছেন জেলেনস্কি। রাশিয়ার পুরোনো ভয়, ন্যাটো তার দোরগোড়ায় চলে আসবে। সেই আশঙ্কার পালে বাতাস দিয়ে বিষয়টি আরও জটিল করে তুলতে পারে ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের আবেদন। জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে ইউক্রেনের অধিকৃত সম্পূর্ণ অঞ্চল মুক্ত করার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করেছেন। 

একই রকম অবস্থান ব্যক্ত করেছেন পুতিনও। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাদের ভূমি রক্ষা করব এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা করা দরকার আমরা করব।’ এ যেন উভয় পক্ষের ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্রমেদিনী’ মনোভাব। ফলে রাশিয়ার জন্য ইউক্রেনের অধিকৃত ভূমিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা এবং ন্যাটোর সহায়তা নিয়ে ইউক্রেনের ভূমি পুনরুদ্ধার—পুরো প্রক্রিয়াটিই দীর্ঘস্থায়ী হতে বাধ্য। 

রাশিয়-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু থেকেই দ্বিপক্ষীয় ছিল না। রাশিয়া একা লড়লেও ইউক্রেনের পেছনে শুরু থেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইউক্রেনকে অস্ত্র ও অর্থ উভয় ধরনের সহায়তাই দিয়ে এসেছে এবং যুদ্ধের জন্য এককভাবে রাশিয়াকে দোষারোপ করে এসেছে। শুধু তাই নয়, রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে সমন্বিতভাবে কঠোর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। 

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসর্বশেষ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়ার ঘোষণার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ইউক্রেনের অঞ্চলের ওপর রাশিয়ার দাবি মেনে নেবে না, নেবে না, নেবে না।’ তিনি রাশিয়ার ওপর আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কেবল বাইডেন নন, ইউক্রেনের অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার সম্প্রসারণ কোনোভাবেই বৈধ নয় এবং তা অবশ্যই নিন্দাযোগ্য।’ 

বিশ্ব যাই বলুক, রাশিয়ার নেতারা ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে যুক্ত করার অনুষ্ঠানে যতটা উল্লসিত-উচ্ছ্বসিত ছিলেন, তা যুদ্ধ শুরুর পর কখনো দেখা যায়নি। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বিষয়টি রাশিয়ার জন্য অনেক কিছু। তবে, মূল প্রশ্ন হলো, রাশিয়া কীভাবে নতুন অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ইউক্রেন কীভাবে হারানো অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। একই সঙ্গে, ইউক্রেনের পশ্চিমা মিত্ররা বিষয়টি কীভাবে আমলে নেবে। এসব কিছু বিবেচনায় বলা যায়, এই সম্প্রসারণই শেষ নয়, বরং আরেকটি নতুন শুরু হতে পারে, যা জন্ম দিতে পারে আরও অস্থির বিশ্ব রাজনীতির। 

তথ্যসূত্র: বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান, এএফপি, আল–জাজিরা

আরো পড়ুন: 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত