জাহীদ রেজা নূর

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।
জাহীদ রেজা নূর

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি। তাই, অফিসের কাজ সেরে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে ফোন করলাম তাঁকে। প্রথমে সাড়া নেই। ফোন বেজেই চলল। ধরলেন না। কয়েক মিনিট পর আবার চেষ্টা করলাম। এবার সফল হলাম। ‘হ্যালো, কে বলছেন?’
‘আমি জাহীদ বলছিলাম।’
‘কোন জাহীদ?’
তাঁর এই প্রশ্নটিই বলে দেয়, তিনি অভিমান করেছেন। আমার কণ্ঠ কিংবা আমার নাম তাঁর কাছে অপরিচিত থাকার কথা নয়।
‘আমি প্রথম আলোর জাহীদ।’ ইচ্ছে করেই বুঝতে দিই না, তাঁর অভিমানটা আমি ধরতে পেরেছি।
‘ও আপনি! আপনাকে মনে হয় দুদিন ধরে অনবরত ফোন করেছিলাম। আপনি ধরেননি।’
‘আমার ভুল হয়েছে। আমাকে ক্ষমা করে দিন। আসলে ফোন তো সাইলেন্ট করা থাকে, তাই কখন ফোন করেছিলেন বুঝতে পারিনি। তারপরও ক্ষমা চাইছি।’
এবার অবশ্য ‘তুমি’তে নামলেন। ‘তোমাকে একটা খবর দিতে চাইছি, অথচ তুমি ফোন ধরছ না। তুমি নিজেকে কী মনে করো?’
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাই চুপ করে থাকি।
একটু বুঝি শান্ত হন। বলেন, ‘বলো তো কেন তোমাকে খুঁজছি?’
‘সে তো বলতে পারব না। নিশ্চয়ই কোনো দরকার আছে। আপনি বললে এখনই চলে আসতে পারি।’
‘শোনো, আমি আর একটু পর ঘুমাতে যাব। আজ আমার এখানে আসার দরকার নেই। কাল সময় করে এসো।’
‘নিশ্চয়ই আসব।’ বলে ফোন রাখলাম।
এরপর কী হয়েছিল, সে কথা বলব শেষে। এখানে শুধু বলে রাখি, ভাষা আন্দোলন নিয়ে কাজ করতে গিয়েই প্রথম তাঁর সংস্পর্শে আসা। সে সময় প্রথম আলোতে কাজ করি। ২০০৬ সালের দিকে সম্পাদক আমাকে দায়িত্ব দিলেন পত্রিকার প্রথম পাতায় টানা ২১ দিন ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখার জন্য। আমি বইপত্র খুলে বসলাম। যতদিকে যত তথ্য-উপাত্তের উৎস আছে, তা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। ঠিক আগের বছর সম্পাদকের নির্দেশে জাতীয় মহাফেজখানা ঘেটে চারটি বড় প্রবন্ধ লিখেছিলাম সম্পাদকীয় পাতায়। তারই জের হিসেবে আমার এই দায়িত্ব প্রাপ্তি। বার্তা বিভাগের সেলিম খানের ওপর দায়িত্ব ছিল লেখাগুলো ঠিকভাবে পাতায় তোলার। তিনি প্রতিটি লেখার আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই লেখাগুলো যখন ছাপা হচ্ছে, তখন একদিন একটি ফোন পেলাম। ফোনটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ ওপারে ছিলেন আহমদ রফিক। তিনি ফোন করে বললেন, ‘আপনি কি জাহীদ?’
‘জ্বি।’
‘আপনাদের সম্পাদকের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বরটা নিলাম। আমার নাম আহমদ রফিক।’
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। আহমদ রফিক ফোন করেছেন, তার মানে নিশ্চয়ই প্রথম পাতায় ছাপা হওয়া আমার লেখাগুলো নিয়ে কিছু বলবেন।
কথা শুরু হওয়ার পরই আমার মন প্রশান্ত হয়ে উঠল। তিনি যা বললেন, তার নির্যাস হলো, সব পত্রিকাতেই ভাষা আন্দোলন নিয়ে প্রথম পৃষ্ঠায় এক কলামে একটি করে প্রতিবেদন যায়। তাতে অনেক ভুল থাকে। কিন্তু আমি যে কাজটি করছি, তা তিনি খুবই আগ্রহের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন এবং তাতে এখন পর্যন্ত কোনো ভুল নেই। আমাকে উৎসাহিত করে তিনি ফোন রাখলেন।
এই কথোপকথনটি আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করেছিল। এ সময় বেঁচে থাকা ভাষা সংগ্রামীদের ব্যাপারে আমার মনে আগ্রহ জন্ম নেয়। যতদূর মনে পড়ে এ সময় কাজী গোলাম মাহবুব, গাজীউল হক, সাঈদ হায়দার, রফিকুল ইসলাম, হালিমা খাতুন, সুফিয়া আহমেদ, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, আবদুল মতিন, মুর্তজা বশীর প্রমুখের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে।
এরপর থেকে প্রতি বছর একুশের কাছাকাছি হলেই আহমদ রফিকের শরণাপন্ন হয়েছি। কখনো ভাষা সংগ্রামীদের নিয়ে গেছি শহীদ মিনারে, সেখানে শুনেছি তাদের স্মৃতিচারণ। কখনো কিশোর বয়সীদের নিয়ে গেছি তাঁর বাড়িতে, তিনি শুনিয়েছেন একুশের গল্প। কখনও চলে গেছি একা তাঁর কাছে। নিয়েছি সাক্ষাৎকার। আর এই চলাচলের কারণেই আমাকে তিনি বেঁধেছিলেন স্নেহের বন্ধনে। আমার ওপর তাঁর একটা অধিকার বোধও জন্মেছিল।
মনে আছে, প্রথম আলো ছেড়ে আসার কিছুকাল আগে হঠাৎ মনে হলো, বায়ান্নর ঐতিহাসিক জায়গাগুলো এখন কী অবস্থায় আছে, তার ছবি তুলে ঘটনার বর্ণনা করা হলে নতুনভাবে একুশকে দেখা যাবে। কোথায় বরকত, রফিক গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন, কোথায় গড়ে উঠেছিল শহীদ মিনার, কোথায় বসেছিল প্রাদেশিক আইন পরিষদের বৈঠক—এই সব ছবি তোলা হচ্ছিল। ছবি তুলছিলেন স্বনামধন্য ফটোশিল্পী লতিফ ভাই। জগন্নাথ হলের যে জায়গাটায় প্রাদেশিক পরিষদের বৈঠক বসত, সেটি এখন আর নেই। আছে শুধু কয়েক ধাপ সিঁড়ি। সেখানেই একটি ফলকে লেখা আছে ইতিহাস।
সব তো হলো, এখন সবচেয়ে জরুরি যে জায়গাটা, অর্থাৎ যেখান থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিল মিছিল, সে জায়গাটা চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়েছিল। মুশকিল আসানের জন্য ফোন করলাম আহমদ রফিককে। পরিকল্পনা যখন করেছিলাম, তখনই তাঁকে জানিয়ে রেখেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ ছিলেন না বলে আমাদের সঙ্গে আসতে পারেননি। এখনও মনে আছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ফোন করে বার বার এ জায়গা থেকে ও জায়গা করতে করতে সভাটি কোথায় বসেছিল, সে জায়গাটা চিহ্নিত করতে পেরেছিলাম। এখনও মনে আছে ২২ মিনিট ধরে তিনি শুধু বুঝিয়েছেন, ‘এখানে নয়, আরেকটু এগিয়ে যাও। এবার বাঁয়ে তাকিয়ে দেখ। কী দেখছ। হ্যাঁ, হ্যাঁ, এটাই ঠিক জায়গা।’
২২ মিনিট কথা হয়েছিল, সেটা মনে আছে, কারণ ২১শে ফেব্রুয়ারির বিষয়ে ২২ মিনিট কথা বলেছি, এ রকমভাবে সময়টা মনে রেখেছিলাম।
বাড়িতে তিনি একাই থাকেন। বাড়ির কাজগুলো ঠিকঠাক করে রাখার জন্য সহযোগী আছেন। ছবি তোলার কাজ শেষ হলে প্রথম আলোর গ্রাফিকস বিভাগের মুনির ভাই সুন্দর একটি ডামি তৈরি করে আমাকে দিয়েছিলেন। ভোরবেলায় চলে গিয়েছিলাম আহমদ রফিকের বাড়িতে। একটা হাল্কা চাদর গায়ে বসে ছিলেন তিনি। অপেক্ষা করছিলেন আমার জন্য। বায়ান্নর ছবির সঙ্গে এখনকার ছবিগুলো মিলিয়ে দেওয়ার সময় আপ্লুত হয়েছিলেন। সেদিন তাঁর বাড়িতে ছবি তুলেছিলাম আমরা। এরপর সম্ভবত আর তাঁর বাড়িতে যাওয়া হয়নি। টেলিফোনে কুশল সংবাদ নিয়েছি বটে, কিন্তু সেটাই পর্যাপ্ত ছিল না। তিনি সঙ্গপ্রিয় মানুষ। এখন তিনি অসুস্থ, সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ে আছেন। আজ তাঁর জন্মদিন। এই দিনে তাঁকে নিয়ে খানিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কষ্টও হচ্ছে। তাঁর গুরুগম্ভীর মুখে শিশুর মতো হাসির কথা স্মরণে আনছি।
যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, তা দিয়েই শেষ করি।
তিনি আমাকে যেতে বলেছেন তাঁর বাড়িতে। নিউ ইস্কাটনের সেই চেনা বাড়ির ড্রইংরুমে গিয়ে বসে আছি। বেশ অনকক্ষণ বসে থাকার পর তিনি এলেন সেই ঘরে। কুশল বিনিময়ের পর বসলেন সামনের সোফায়। তারপর বাড়িয়ে দিলেন তাঁর সদ্য প্রকাশিত বইটি। আমি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে বইটি হাতে নিলাম। ভাবলাম, নতুন বই বেরিয়েছে, তার একটি কপি আমাকে উপহার দিতে চাইছেন, কিন্তু আমি ফোন ধরিনি। তাই অভিমান করেছেন।
আমার হাতে বইটি দিয়ে আহমদ রফিক মিটিমিটি হাসছেন। ‘বইটি হাতে নিয়ে বসে আছ কেন? একটু উল্টে-পাল্টে দেখ!’
বইটির নাম সংঘাতময় বিশ্বরাজনীতি’। অনিন্দ্য প্রকাশন থেকে বেরিয়েছে। বর্তমান সময়ের বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে আহমদ রফিকের মূল্যায়ন নিয়েই বইটি।
একটু পর প্লেটে করে চমচম এলো। ‘খাও।’ বললেন তিনি। চোখে মুখে তখনও কৌতুক।
চমচম আর চা খেয়ে ‘আবার দেখা হবে’ বলে ফিরে আসার চেষ্টা করতেই আহমদ রফিকের মুখ আলোয় উদ্ভাসিত হলো। বললেন, ‘সূচিপত্র দেখলে, উল্টে-পাল্টে দু’একটা প্রবন্ধের দিকেও চোখ রাখলে, কিন্তু উৎসর্গপত্রটার দিকে চোখ গেল না তোমার?’
হ্যাঁ, এবার দুরুদুরু বুকে উৎসর্গপত্রটি দেখলাম।
‘প্রগতিবাদী বিশ্বের আগ্রহী পদাতিক,
জাহীদ রেজা নূর,
প্রীতিভাজনেষু।’
আমার মতো এক অকিঞ্চিৎকর মানুষকে বইটি উৎসর্গ করেছেন তিনি! স্নেহ যে নিম্নগামী, সে কথা কে না জানে। কিন্তু কখনো কখনো স্নেহের ভার যে গুরুভার হয়ে দাঁড়ায়, তা আমি আজও টের পাই।

কমলকুমার মজুমদারের বই উচ্চারণ করে পড়লে, দাঁড়ি-কমা মেলে পড়া গেলে, বোঝা যায় যে, কী আশ্চর্য সুন্দর লেখা! কী বলব, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তাঁর লেখা পড়ে। হাসান আজিজুল হকের লেখাও ভালোই লাগে, তাঁর লেখাতে একটা ত্রুটি আছে।
২ ঘণ্টা আগে
অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ!
৬ দিন আগে
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
৬ দিন আগে
আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ...
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

কমলকুমার মজুমদারের বই উচ্চারণ করে পড়লে, দাঁড়ি-কমা মেলে পড়া গেলে, বোঝা যায় যে, কী আশ্চর্য সুন্দর লেখা! কী বলব, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তাঁর লেখা পড়ে। হাসান আজিজুল হকের লেখাও ভালোই লাগে, তাঁর লেখাতে একটা ত্রুটি আছে। লেখাতে কিন্তু একটা জিনিস থাকা উচিত বলে আমার মনে হয়—হিউমার। রসবোধ থাকা উচিত, প্রত্যেকের লেখাতেই। যে ভিক্ষা করছে তাকে যদি ফলো করি, দেখা যাবে একটা সময়ে একটা হাসির কথা বলছে, একটা সময়ে একটা ভঙ্গি করল যেটা হাসির ভঙ্গি। সব সময়ই তাকে যদি এভাবে কষ্টকরভাবে দেখি, ঠিক না। ওর লেখাতে হাসিটা নেই। কায়েস আহমেদের লেখা আমার ভালো লাগত।
মঞ্জু সরকারের লেখা ভালো। আমার ভালো লাগে। সুশান্ত মজুমদারের কিছু লেখা আছে, খুব সিরিয়াসলি লিখেছে, খুব সিরিয়াসলি। বোঝা যায় আরকি। সিরিয়াস লিখলেও এখনো পর্যন্ত বলা চলে না যে ছোটগল্প লেখক হয়েছে। মঈনুল আহসান সাবের সো সো। একটা কথা কি, এদের সময় থেকে লেখকেরা প্রচণ্ড লোভী হয়ে পড়ল, তাই যা হবার হয়েছে। লোভী লোকের দ্বারা গল্প হয় না।
সমরেশ বসু ভার্সেটাইল লেখক। ভার্সেটাইল বলছি এ জন্য যে, উনি যে-সমস্ত বিষয় নিয়ে লিখেছেন, তা ওই লোকই। যেমন, রাস্তায় পড়ে থাকাদের নিয়ে তিনটা বই আছে ওনার। তিনটা কি দুটি হবে। অথচ মনে হবে ওদেরই ভাষা। ওদেরই জীবন, অসাধারণ। অন্য বইও লিখেছেন, সুন্দর।
অমিয়ভূষণ মজুমদারের লেখা আমার প্রথমেই খুব ভালো লেগেছিল, ওনার ভাষার জন্য। এত মেদহীন ভাষা বোধ হয় কারও নেই, এটা আমার মনে হয়েছিল। আমার মনে আছে, প্রায় টেক্সটের মতো বইটা (গড় শ্রীখন্ড) পড়তাম। অনেক মোটা বই। খুব ভালো লেগেছিল বইটা পড়ে।
সূত্র: প্রশান্ত মৃধা ও হামিম কামরুল হকের গ্রহণ করা কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৬০-৬১

কমলকুমার মজুমদারের বই উচ্চারণ করে পড়লে, দাঁড়ি-কমা মেলে পড়া গেলে, বোঝা যায় যে, কী আশ্চর্য সুন্দর লেখা! কী বলব, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তাঁর লেখা পড়ে। হাসান আজিজুল হকের লেখাও ভালোই লাগে, তাঁর লেখাতে একটা ত্রুটি আছে। লেখাতে কিন্তু একটা জিনিস থাকা উচিত বলে আমার মনে হয়—হিউমার। রসবোধ থাকা উচিত, প্রত্যেকের লেখাতেই। যে ভিক্ষা করছে তাকে যদি ফলো করি, দেখা যাবে একটা সময়ে একটা হাসির কথা বলছে, একটা সময়ে একটা ভঙ্গি করল যেটা হাসির ভঙ্গি। সব সময়ই তাকে যদি এভাবে কষ্টকরভাবে দেখি, ঠিক না। ওর লেখাতে হাসিটা নেই। কায়েস আহমেদের লেখা আমার ভালো লাগত।
মঞ্জু সরকারের লেখা ভালো। আমার ভালো লাগে। সুশান্ত মজুমদারের কিছু লেখা আছে, খুব সিরিয়াসলি লিখেছে, খুব সিরিয়াসলি। বোঝা যায় আরকি। সিরিয়াস লিখলেও এখনো পর্যন্ত বলা চলে না যে ছোটগল্প লেখক হয়েছে। মঈনুল আহসান সাবের সো সো। একটা কথা কি, এদের সময় থেকে লেখকেরা প্রচণ্ড লোভী হয়ে পড়ল, তাই যা হবার হয়েছে। লোভী লোকের দ্বারা গল্প হয় না।
সমরেশ বসু ভার্সেটাইল লেখক। ভার্সেটাইল বলছি এ জন্য যে, উনি যে-সমস্ত বিষয় নিয়ে লিখেছেন, তা ওই লোকই। যেমন, রাস্তায় পড়ে থাকাদের নিয়ে তিনটা বই আছে ওনার। তিনটা কি দুটি হবে। অথচ মনে হবে ওদেরই ভাষা। ওদেরই জীবন, অসাধারণ। অন্য বইও লিখেছেন, সুন্দর।
অমিয়ভূষণ মজুমদারের লেখা আমার প্রথমেই খুব ভালো লেগেছিল, ওনার ভাষার জন্য। এত মেদহীন ভাষা বোধ হয় কারও নেই, এটা আমার মনে হয়েছিল। আমার মনে আছে, প্রায় টেক্সটের মতো বইটা (গড় শ্রীখন্ড) পড়তাম। অনেক মোটা বই। খুব ভালো লেগেছিল বইটা পড়ে।
সূত্র: প্রশান্ত মৃধা ও হামিম কামরুল হকের গ্রহণ করা কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হকের সাক্ষাৎকার, ‘হিরণ্ময় কথকতা’, পৃষ্ঠা ৬০-৬১

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ!
৬ দিন আগে
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
৬ দিন আগে
আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ...
৭ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ! শব্দটি হলো ‘67’ (উচ্চারণ: ‘সিক্স সেভেন’), যার কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ নেই। সামাজিক মাধ্যম এবং স্কুলে জেন-আলফা এই শব্দটিকে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, জেন-জি-এর পরবর্তী প্রজন্মকে জেন-আলফা বলা হচ্ছে। মূলত ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা প্রজন্মই জেনারেশন আলফা বা জেন-আলফা।
ডিকশনারি ডটকম এই শব্দটি বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে এর ব্যাপকতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে। ডিকশনারি মিডিয়া গ্রুপের শব্দকোষ পরিচালক স্টিভ জনসন সিবিএস নিউজকে জানান, যে শব্দটিকে আপনি ভেবেছিলেন সহজে বিলীন হয়ে যাবে, সেটিই একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে আরও বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।
এই শব্দে কী বোঝায়?
‘সিক্স-সেভেন’ শব্দটি অতীতের বর্ষসেরা শব্দগুলোর থেকে আলাদা। কারণ এটি কোনো জটিল ধারণা বা বড় ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে না। স্টিভ জনসন এটিকে একটি ‘ইন্টারজেকশন’ বা বিস্ময়সূচক শব্দ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ শব্দ মূলত উদ্দেশ্যহীনভাবে চিৎকার করে বলা হয়।
ডিকশনারি ডটকম-এর মতে, এই শব্দের ব্যবহার অস্পষ্ট এবং পরিবর্তনশীল। কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ‘মোটামুটি’ বা ‘হতে পারে এটা, হতে পারে ওটা’-এমন বোঝাতে ব্যবহার করা হলেও, শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থহীন।
একই সঙ্গে ডিকশনারি ডটকম এটিকে ‘ব্রেনরট স্ল্যাং’-এর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থহীন এবং উদ্ভট। স্টিভ জনসনের মতে, এটি আসলে জেন-আলফা-এর একটি দলগত পরিচয়ের প্রতীক। এই প্রজন্মের কাছে এটি একটি ‘ইন-গ্রুপ জোক’-এর মতো। সমবয়সীদের নিজস্ব কোড ভাষায় কৌতুক করে যেভাবে বোঝানো হয় যে, ‘আমি এই প্রজন্মের অংশ, এটাই আমি।’
কীভাবে হলো এর উৎপত্তি?
এই অপ্রচলিত শব্দটির (স্ল্যাং) উৎপত্তি হয়েছে র্যাপার স্করিলার-এর গান ‘Doot Doot (6 7) ’ থেকে। পরবর্তীতে এটি বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের ভিডিও ক্লিপে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার বাস্কেটবল খেলোয়াড় লামেলো বল-এর ভিডিও ক্লিপ। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে এই গান বাস্কেটবল দৃশ্যের সঙ্গে ভাইরাল হতে শুরু করে এবং দ্রুত তরুণ দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি জনপ্রিয় টিভি শো ‘সাউথ পার্ক’-এর একটি পর্বেও এটি স্থান পায়।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এই শব্দের নির্বাচন নিয়ে প্রজন্ম ভেদে প্রতিক্রিয়া বিভক্ত। স্টিভ জনসন জানান, একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক তাঁকে ভোরবেলা মেসেজ করে অনুরোধ করেন, যেন তাঁরা এই শব্দটিকে বর্ষসেরা নির্বাচন না করেন। জনসন মজা করে বলেন, ‘শিক্ষকেরাও এটি ধরে ফেলেছেন!’
জনসন এই প্রবণতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘একটি নতুন প্রজন্ম তাদের ভাষাগত শক্তিমত্তা ও প্রভাব প্রদর্শন করছে। ইংরেজি ভাষার ওপর এটি অসাধারণ প্রভাব ফেলছে। এটা উদ্যাপন করার মতো বিষয়।’ তবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য, যারা দৈনিক সময় অসময়ে ‘সিক্স সেভেন’ চিৎকার শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া অনেকাংশেই বিরক্তি এবং হতাশার মিশ্রণ!
সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অন্যান্য শব্দ
ডিকশনারি ডট কম ২০২৫ সালের বর্ষসেরা শব্দের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রাজনীতি এবং সমাজ সম্পর্কিত আরও কয়েকটি শব্দ বিবেচনা করেছিল। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল:
Agentic: (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত) লক্ষ্য পূরণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম।
Aura farming: ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের আকর্ষণ, স্টাইল বা ভাবমূর্তি তৈরি করা, যা অনলাইন মনোযোগ বা সামাজিক প্রভাব অর্জনের জন্য করা হয়।
Gen Z stare: জেন-জি-এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অভিব্যক্তি, যা উদাসীন বা নির্লিপ্ত বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।
Overtourism: কোনো জনপ্রিয় গন্তব্যে অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়, যার ফলে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সমাজ-সাংস্কৃতিক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়।
Tradwife: একজন বিবাহিত নারী যিনি ঐতিহ্যবাহী নারীসুলভ লিঙ্গ ভূমিকা মেনে নিয়ে গৃহিণী হিসেবে জীবনযাপন করেন। এটি প্রায়শই রক্ষণশীল রাজনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি শব্দ।

অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ! শব্দটি হলো ‘67’ (উচ্চারণ: ‘সিক্স সেভেন’), যার কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থ নেই। সামাজিক মাধ্যম এবং স্কুলে জেন-আলফা এই শব্দটিকে অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য, জেন-জি-এর পরবর্তী প্রজন্মকে জেন-আলফা বলা হচ্ছে। মূলত ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা প্রজন্মই জেনারেশন আলফা বা জেন-আলফা।
ডিকশনারি ডটকম এই শব্দটি বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে এর ব্যাপকতা এবং সাংস্কৃতিক প্রভাবকে চিহ্নিত করেছে। ডিকশনারি মিডিয়া গ্রুপের শব্দকোষ পরিচালক স্টিভ জনসন সিবিএস নিউজকে জানান, যে শব্দটিকে আপনি ভেবেছিলেন সহজে বিলীন হয়ে যাবে, সেটিই একটি সাংস্কৃতিক ঘটনা হিসেবে আরও বিস্তৃত হতে শুরু করেছে।
এই শব্দে কী বোঝায়?
‘সিক্স-সেভেন’ শব্দটি অতীতের বর্ষসেরা শব্দগুলোর থেকে আলাদা। কারণ এটি কোনো জটিল ধারণা বা বড় ঘটনার প্রতিনিধিত্ব করে না। স্টিভ জনসন এটিকে একটি ‘ইন্টারজেকশন’ বা বিস্ময়সূচক শব্দ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এ শব্দ মূলত উদ্দেশ্যহীনভাবে চিৎকার করে বলা হয়।
ডিকশনারি ডটকম-এর মতে, এই শব্দের ব্যবহার অস্পষ্ট এবং পরিবর্তনশীল। কিছু ক্ষেত্রে এটিকে ‘মোটামুটি’ বা ‘হতে পারে এটা, হতে পারে ওটা’-এমন বোঝাতে ব্যবহার করা হলেও, শব্দটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থহীন।
একই সঙ্গে ডিকশনারি ডটকম এটিকে ‘ব্রেনরট স্ল্যাং’-এর উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যা ইচ্ছাকৃতভাবে অর্থহীন এবং উদ্ভট। স্টিভ জনসনের মতে, এটি আসলে জেন-আলফা-এর একটি দলগত পরিচয়ের প্রতীক। এই প্রজন্মের কাছে এটি একটি ‘ইন-গ্রুপ জোক’-এর মতো। সমবয়সীদের নিজস্ব কোড ভাষায় কৌতুক করে যেভাবে বোঝানো হয় যে, ‘আমি এই প্রজন্মের অংশ, এটাই আমি।’
কীভাবে হলো এর উৎপত্তি?
এই অপ্রচলিত শব্দটির (স্ল্যাং) উৎপত্তি হয়েছে র্যাপার স্করিলার-এর গান ‘Doot Doot (6 7) ’ থেকে। পরবর্তীতে এটি বাস্কেটবল খেলোয়াড়দের ভিডিও ক্লিপে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি হলো ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার বাস্কেটবল খেলোয়াড় লামেলো বল-এর ভিডিও ক্লিপ। ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে টিকটক এবং ইনস্টাগ্রামে এই গান বাস্কেটবল দৃশ্যের সঙ্গে ভাইরাল হতে শুরু করে এবং দ্রুত তরুণ দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি একটি জনপ্রিয় টিভি শো ‘সাউথ পার্ক’-এর একটি পর্বেও এটি স্থান পায়।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
এই শব্দের নির্বাচন নিয়ে প্রজন্ম ভেদে প্রতিক্রিয়া বিভক্ত। স্টিভ জনসন জানান, একজন মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক তাঁকে ভোরবেলা মেসেজ করে অনুরোধ করেন, যেন তাঁরা এই শব্দটিকে বর্ষসেরা নির্বাচন না করেন। জনসন মজা করে বলেন, ‘শিক্ষকেরাও এটি ধরে ফেলেছেন!’
জনসন এই প্রবণতাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ‘একটি নতুন প্রজন্ম তাদের ভাষাগত শক্তিমত্তা ও প্রভাব প্রদর্শন করছে। ইংরেজি ভাষার ওপর এটি অসাধারণ প্রভাব ফেলছে। এটা উদ্যাপন করার মতো বিষয়।’ তবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের জন্য, যারা দৈনিক সময় অসময়ে ‘সিক্স সেভেন’ চিৎকার শুনতে বাধ্য হচ্ছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া অনেকাংশেই বিরক্তি এবং হতাশার মিশ্রণ!
সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অন্যান্য শব্দ
ডিকশনারি ডট কম ২০২৫ সালের বর্ষসেরা শব্দের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রাজনীতি এবং সমাজ সম্পর্কিত আরও কয়েকটি শব্দ বিবেচনা করেছিল। সেই সংক্ষিপ্ত তালিকায় ছিল:
Agentic: (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত) লক্ষ্য পূরণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম।
Aura farming: ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের আকর্ষণ, স্টাইল বা ভাবমূর্তি তৈরি করা, যা অনলাইন মনোযোগ বা সামাজিক প্রভাব অর্জনের জন্য করা হয়।
Gen Z stare: জেন-জি-এর সঙ্গে সম্পর্কিত একটি অভিব্যক্তি, যা উদাসীন বা নির্লিপ্ত বোঝাতে ব্যবহার করা হয়।
Overtourism: কোনো জনপ্রিয় গন্তব্যে অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়, যার ফলে পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সমাজ-সাংস্কৃতিক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হয়।
Tradwife: একজন বিবাহিত নারী যিনি ঐতিহ্যবাহী নারীসুলভ লিঙ্গ ভূমিকা মেনে নিয়ে গৃহিণী হিসেবে জীবনযাপন করেন। এটি প্রায়শই রক্ষণশীল রাজনৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি শব্দ।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কমলকুমার মজুমদারের বই উচ্চারণ করে পড়লে, দাঁড়ি-কমা মেলে পড়া গেলে, বোঝা যায় যে, কী আশ্চর্য সুন্দর লেখা! কী বলব, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তাঁর লেখা পড়ে। হাসান আজিজুল হকের লেখাও ভালোই লাগে, তাঁর লেখাতে একটা ত্রুটি আছে।
২ ঘণ্টা আগে
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
৬ দিন আগে
আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ...
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
২০০৫ সালে হানিফ বিরিয়ানির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি। অনেকে বলেন, কয়েক বছর হানিফের স্বাদে নাকি ভাটা পড়েছিল। এই কথা এখন ডাহা মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয় দোকানের ভিড়ভাট্টা দেখলেই। পুরান ঢাকার খ্যাতনামা সব বিরিয়ানির মধ্যে এখন হানিফ যে তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে, তা আর বলতে হয় না।
ছবি: জাহিদুল ইসলাম

পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
২০০৫ সালে হানিফ বিরিয়ানির প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন তাঁর ছেলে হাজি মোহাম্মদ ইব্রাহিম রনি। অনেকে বলেন, কয়েক বছর হানিফের স্বাদে নাকি ভাটা পড়েছিল। এই কথা এখন ডাহা মিথ্যা হিসেবে প্রমাণিত হয় দোকানের ভিড়ভাট্টা দেখলেই। পুরান ঢাকার খ্যাতনামা সব বিরিয়ানির মধ্যে এখন হানিফ যে তাদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে, তা আর বলতে হয় না।
ছবি: জাহিদুল ইসলাম

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কমলকুমার মজুমদারের বই উচ্চারণ করে পড়লে, দাঁড়ি-কমা মেলে পড়া গেলে, বোঝা যায় যে, কী আশ্চর্য সুন্দর লেখা! কী বলব, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তাঁর লেখা পড়ে। হাসান আজিজুল হকের লেখাও ভালোই লাগে, তাঁর লেখাতে একটা ত্রুটি আছে।
২ ঘণ্টা আগে
অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ!
৬ দিন আগে
আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ...
৭ দিন আগেসম্পাদকীয়

আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিল সব গরিব ঘরেরই ছেলে। আমাদের গ্রামে আলাদা কোনো বুর্জোয়া বা সামন্তসমাজ ছিল না। সেখানে বিশ থেকে ত্রিশ জন ভূস্বামী ছিল, যারা অবশ্য সব সময় একসঙ্গে থাকত। কিন্তু আমার বাবা ওদের থেকে পৃথক থাকতেন।
... আমি বাইরের মানুষ বলতে বাবার খামারে কাজ করা ওই গরিব মানুষদেরই দেখতাম। আমি হাইতিয়ানদের কুঁড়েঘরে যেতাম। হাইতিয়ানদের বাড়িতে ওদের সঙ্গে বসে একবার খাওয়ার জন্য আমি বেশ বকা খেয়েছিলাম। আমাকে ঠিক সামাজিকতার প্রশ্নে বকা দেওয়া হয়নি, বকা খেয়েছিলাম স্বাস্থ্যগত প্রশ্নে। আমার বাবা-মার শ্রেণির কোনো অহমবোধ ছিল না। তাদের ঠিক ভূস্বামী মানসিকতাও ছিল না।
আমার ভেতর নৈতিকতার ধারণা এসেছে আমার স্কুল এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে, আমার পরিবার থেকেও। খুব ছোটবেলা থেকেই আমাকে বলা হয়েছে কোনোভাবেই মিথ্যা কথা বলা যাবে না। আমার স্কুলের শিক্ষকেরাও তা-ই বলেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মার্ক্সীয় দর্শন বা নৈতিক আদর্শ থেকে বলেননি, বলেছেন ধর্মীয় নৈতিকতার দিক থেকে। তারা আমাকে শিখিয়েছেন কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। আমাদের সমাজে এইভাবে ধর্মীয় আবহ থেকে ঐতিহ্যগতভাবে সবাই নৈতিকতার শিক্ষা পায়। যদিও তাতে অনেক অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাও থাকে। ধীরে ধীরে আমার ভেতরে ভুল-শুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা জন্ম নিতে থাকে এবং বেশ কিছু তথাকথিত নৈতিকতাকে আমি ভঙ্গ করতে থাকি। ছোটবেলা থেকেই আমার যেমন নৈতিকতার শিক্ষার অভিজ্ঞতা হয়েছে, তেমনি নৈতিকতা ভঙ্গের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তথাকথিত নৈতিকতার নামে মানুষের অনেক অনৈতিক কাজ আমি দেখেছি।
সূত্র: শাহাদুজ্জামান কর্তৃক ফিদেল কাস্ত্রোর অনূদিত সাক্ষাৎকার। ‘কথা পরম্পরা’, পৃষ্ঠা-২২৩।

আমাদের পরিবার থাকত গ্রামে, গরিবদের মধ্যে। আমার আশপাশে ছিল নগ্নপায়ের ছেল-মেয়েরা, ওদের সঙ্গেই আমার বন্ধুত্ব ছিল। আমি দেখেছি ওদের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন, দেখেছি কীভাবে একটা সাধারণ রোগের প্রকোপ ধ্বংস করে দিচ্ছে গোটা পরিবার। এসব নিয়ে ওই বয়সে নিশ্চয়ই এত চিন্তাভাবনা করিনি, তবে এ জীবনটার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা ছিল সব গরিব ঘরেরই ছেলে। আমাদের গ্রামে আলাদা কোনো বুর্জোয়া বা সামন্তসমাজ ছিল না। সেখানে বিশ থেকে ত্রিশ জন ভূস্বামী ছিল, যারা অবশ্য সব সময় একসঙ্গে থাকত। কিন্তু আমার বাবা ওদের থেকে পৃথক থাকতেন।
... আমি বাইরের মানুষ বলতে বাবার খামারে কাজ করা ওই গরিব মানুষদেরই দেখতাম। আমি হাইতিয়ানদের কুঁড়েঘরে যেতাম। হাইতিয়ানদের বাড়িতে ওদের সঙ্গে বসে একবার খাওয়ার জন্য আমি বেশ বকা খেয়েছিলাম। আমাকে ঠিক সামাজিকতার প্রশ্নে বকা দেওয়া হয়নি, বকা খেয়েছিলাম স্বাস্থ্যগত প্রশ্নে। আমার বাবা-মার শ্রেণির কোনো অহমবোধ ছিল না। তাদের ঠিক ভূস্বামী মানসিকতাও ছিল না।
আমার ভেতর নৈতিকতার ধারণা এসেছে আমার স্কুল এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে, আমার পরিবার থেকেও। খুব ছোটবেলা থেকেই আমাকে বলা হয়েছে কোনোভাবেই মিথ্যা কথা বলা যাবে না। আমার স্কুলের শিক্ষকেরাও তা-ই বলেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মার্ক্সীয় দর্শন বা নৈতিক আদর্শ থেকে বলেননি, বলেছেন ধর্মীয় নৈতিকতার দিক থেকে। তারা আমাকে শিখিয়েছেন কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। আমাদের সমাজে এইভাবে ধর্মীয় আবহ থেকে ঐতিহ্যগতভাবে সবাই নৈতিকতার শিক্ষা পায়। যদিও তাতে অনেক অবৈজ্ঞানিক শিক্ষাও থাকে। ধীরে ধীরে আমার ভেতরে ভুল-শুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা জন্ম নিতে থাকে এবং বেশ কিছু তথাকথিত নৈতিকতাকে আমি ভঙ্গ করতে থাকি। ছোটবেলা থেকেই আমার যেমন নৈতিকতার শিক্ষার অভিজ্ঞতা হয়েছে, তেমনি নৈতিকতা ভঙ্গের অভিজ্ঞতাও হয়েছে। তথাকথিত নৈতিকতার নামে মানুষের অনেক অনৈতিক কাজ আমি দেখেছি।
সূত্র: শাহাদুজ্জামান কর্তৃক ফিদেল কাস্ত্রোর অনূদিত সাক্ষাৎকার। ‘কথা পরম্পরা’, পৃষ্ঠা-২২৩।

রাত সাড়ে ১০টায় অফিসের সামনের ছাপড়িগুলোর একটিতে চা খেতে খেতে ভয়ে ভয়ে ফোন করলাম আহমদ রফিককে। ২০১৭ সাল চলছে তখন। বইমেলার কিছুদিন আগের ঘটনা। ‘ভয়ে ভয়ে’ ফোন করার কারণ হলো, তিনি আগের দুদিন আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি সাড়া দিইনি। কী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মনে নেই, কিন্তু কাজটা যে অন্যায় হয়েছে, সেটা কবুল করে নিচ্ছি।
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
কমলকুমার মজুমদারের বই উচ্চারণ করে পড়লে, দাঁড়ি-কমা মেলে পড়া গেলে, বোঝা যায় যে, কী আশ্চর্য সুন্দর লেখা! কী বলব, আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তাঁর লেখা পড়ে। হাসান আজিজুল হকের লেখাও ভালোই লাগে, তাঁর লেখাতে একটা ত্রুটি আছে।
২ ঘণ্টা আগে
অভিভাবকদের জন্য দুঃসংবাদ! জনপ্রিয় অভিধান ওয়েবসাইট Dictionary. com ২০২৫ সালের জন্য বর্ষসেরা শব্দ হিসেবে এমন একটি শব্দকে বেছে নিয়েছে, যা মূলত এক ধরনের প্রলাপ!
৬ দিন আগে
পুরান ঢাকার বাসিন্দা হাজি মোহাম্মদ হানিফ ১৯৭৫ সালে শুরু করেন বিরিয়ানির ব্যবসা। নাজিরাবাজারে যে দোকানটি তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সেটির নাম দেন হানিফ বিরিয়ানি। অর্ধশত বছর ধরে দোকানটির খাসির বিরিয়ানি ও তার সুঘ্রাণ মন-পেট দুই-ই ভরাচ্ছে ভোজনরসিকদের।
৬ দিন আগে