Ajker Patrika

মা

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ
মা

দুরন্তপনার জন্য মাকে কম কষ্ট দেননি আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। মধ্য-যৌবনে আসার আগেই নানা রকম অসুখ তাঁর মাকে গ্রাস করে ফেলেছিল। ছেলেমেয়েদের দুরন্তপনা তাঁকে আরও কাহিল করে তুলত। আর এ কারণে যখন রেগে যেতেন, তখন নির্মমভাবে পেটাতেন সন্তানদের। একবার বড়সড় অপরাধের জন্য বাগানের গাছের সঙ্গে বেঁধে শক্ত দুটি কঞ্চি দিয়ে পিটিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের দেহ ফালাফালা করে দিয়েছিলেন। সে যুগে সূতিকা নামে স্থায়ী অজীর্নরোগ এবং রক্তশূন্যতায় ভুগত নারীরা। তিনিও সেই রোগে ভুগছিলেন।

একদিন পাশের বাড়ির আরবির অধ্যাপকের স্ত্রীর সামনে সায়ীদ ও তাঁর ছোট ভাই মামুনের নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই সামনের শিলপাটা কপালে ঠুকে ঠুকে বলছিলেন, ‘খোদা, আমাকে তুই নিয়ে যা। আমি আর সহ্য করতে পারি না।’

একদিন প্রাইভেট টিউটর এসে বাড়িতে সায়ীদ, মামুন, মিতা কাউকেই পেলেন না। তাঁরা তখন বাড়ি থেকে বেশ দূরে এক তেঁতুলগাছের কাছে। বাড়িতে যখন এসেছেন, ততক্ষণে শিক্ষক চলে গেছেন। কপালে কী আছে, সেটা বুঝে সতর্ক হয়ে গেলেন তাঁরা। তবে ভরসা ছিল, মা তেঁতুল পছন্দ করেন, তাই তেঁতুল দিয়ে এ যাত্রা রক্ষা পাওয়া যাবে হয়তো।

মায়ের হাতে কয়লা ফেলার লম্বা হাতা। সায়ীদ বললেন, ‘মা, তেঁতুল খাবেন। বেলে তেঁতুল। খুব মজা।’  ‘দে।’  ‘দিতে গেলে তো আপনি ধরে ফেলবেন।’ তারপর ঠিক হলো গেট বন্ধ করে গেটের নিচ দিয়ে তেঁতুলসহ হাতটা ঢুকিয়ে দেবেন সায়ীদ, মা সেটা নেবেন। সরল বিশ্বাসে তেঁতুলসহ হাতটা ঢুকিয়ে দেওয়ার পর মা চেপে ধরলেন হাতটা। তারপর সেই হাতা দিয়ে হাতটাকে এমনভাবে পেটালেন যে সেই নীল হাত সাদা হতে অনেক দিন লেগেছিল। এর কিছুদিন পর অন্তঃসত্ত্বা হয়ে রুগ্‌ণ শরীরে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তিনি মারা যান।

সূত্র: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, আমার বোকা শৈশব, পৃষ্ঠা ৩৪-৩৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত