Ajker Patrika

নিজের কবিতা মুখস্থ নয়

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ
নিজের কবিতা মুখস্থ নয়

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে নানা সময় নানা বাতিক পেয়ে বসত। একবার ছোটগল্পের আন্দোলন করতে কোমর বেঁধে লাগলেন, একবার বাংলা বানান নিয়ে পড়লেন, নতুন বানানে লিখে চললেন কবিতা। তবে কবিতা তাঁর কাছ থেকে দূরে যায়নি কখনো। কবিতা রুদ্রর কাছে বাতিক ছিল না। সত্তরের দশকের শেষ দিকে সৈয়দ শামসুল হক যখন স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন, তখন রুদ্র নিজেই এসেছিলেন তাঁর সঙ্গে পরিচিত হতে। সেটা ময়মনসিংহে। তখনই সৈয়দ হক টের পেয়েছিলেন রুদ্রের কবিতাপ্রেম। স্মৃতি থেকে একটানা আবৃত্তি করে যেতে পারতেন নিজের কবিতা।

সৈয়দ হক বলেছিলেন, ‘নিজের কবিতা নিজে মুখস্থ রাখাটা বোধ হয় বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে।’ ‘কী রকম?’ ‘অতীত রচনা মুখস্থ রাখলে তার বলয় থেকে বেরিয়ে এসে নতুনতর রচনা হয়তো সম্ভব হয় না।’রুদ্র সেটা শুনেছিলেন কিন্তু উত্তর দেননি।

রফিক আজাদ ও সৈয়দ হক ময়মনসিংহে নির্মলেন্দু গুণের বাসায় অতিথি হলেন। সারা রাত পানাহার চলল, চলল কবিতাপাঠ। পরদিন ঢাকার পথে বেরোনোর মুখে গাড়িতে পা দিতেই দেখলেন রুদ্র এসে হাজির। তিনি সৈয়দ হককে বললেন, ‘না। আর নিজের কবিতা মুখস্থ রাখব না। বোধ হয় অনেক ক্ষতি হবে, যেমনটা আপনি বলেছিলেন।’এ রকম একটা ছোট কথায় সারা রাত ভেবেছেন রুদ্র! এ কথা ভেবে অবাক হয়েছিলেন সৈয়দ হক।

সেই রুদ্র যখন নিজেকে প্রায় গুছিয়ে এনেছিলেন, এ রকম সময়ে মারা গেলেন। বয়স হয়েছিল ৩৪। সৈয়দ হক খবরটি পেয়েছিলেন টেলিফোনে মোহন রায়হান ও তারিক সুজাতের কাছে।রুদ্রর বাড়ি গিয়ে দেখেন, বসার ঘরের মেঝের ওপর শুয়ে আছেন রুদ্র। দূরে কাঁদছিলেন তাঁর মা ও ভাইবোনেরা। শামসুর রাহমান এক কোণে চুপ করে বসে ছিলেন। তাঁর পাশে গিয়ে সৈয়দ হক বসতেই তিনি অনুচ্চস্বরে বললেন, ‘আর কতজনকে এই হাতে কবর দিতে হবে?’

সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা: ২২৬-২২৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত