Ajker Patrika

পট্‌ল্‌

সম্পাদকীয়
পট্‌ল্‌

কৃত্তিবাসের কবিরা তখন জাঁকিয়ে বসেছেন। ভিনদেশি কবিরা যদি এ দেশে আসেন, তাহলে আধুনিক কবিতা নিয়ে কথা বলার জন্য এই কবিদের ডাক পড়ে।

সে সময় কলকাতায় বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন বলে একটি উৎসব হতো। তাতে ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া, রবীন্দ্রসংগীত যেমন থাকত, তেমনি থাকত নাচ আর নাটক। রকমারি পণ্যের দোকানের পাশে থাকত কয়েকটি বইয়ের স্টল। একবার কৃত্তিবাসের কবিরা সেখানে একটি স্টল নিয়েছিলেন। স্টলটির নাম দিয়েছিলেন ‘অতি আধুনিকতা’। কাঁটাতার দিয়ে সুন্দর করে স্টলটি সাজিয়েছিলেন পৃথ্বীশ গঙ্গোপাধ্যায়।

সে সময়ই গৌরকিশোর ঘোষ কৃত্তিবাসের কবিদের কাছে নিয়ে এলেন মার্কিন কবি পল এঙ্গেলকে। তিনি কলকাতার তরুণ কবিদের সঙ্গে কথা বলতে চান। তিনি আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান। কবিতার প্রতি টান থেকে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন পৃথিবীময়।

পল এঙ্গেল ছিলেন লম্বা-চওড়া, দিলদরিয়া মানুষ। নিজের সমালোচনা শুনতে পারেন।

বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলনের শেষ দিনের দুপুরবেলায় আয়োজকেরা বাঙালি রান্নার একটা পঙ্‌ক্তি ভোজের আয়োজন করতেন। সুক্তো, গয়না বড়ি ভাজা, মাছ-পাতুরি ইত্যাদি থাকত। বিদেশিরাও বসে যান আসন পেতে। পল এঙ্গেলের পাতে পড়ল পটোল ভাজা। তিনি সেটায় কামড় দিয়ে জানতে চাইলেন, ‘এটা কী?’

মুশকিল হলো, পটোলের ইংরেজি কী হতে পারে, তা জানা ছিল না কারও। বেগুনের নাম ছিল ব্রিনজাল, পরে সেটা হয়েছে এগ প্ল্যান্ট, দই ছিল কার্ড, এখন তা ইয়োগার্ট। কিন্তু পটোলের আদৌ কোনো নাম ছিল কি না, কে জানে! এই বিপদ থেকে বাঁচালেন প্রবীণ কবি অরুণ কুমার সরকার। তিনি পলকে বললেন, ‘দিস ইজ কলড পট্ল্। ডোন্ট ইউ নো ইট?’

এ কথা শুনে পল একেবারে কাঁচুমাচু হয়ে গেলেন। সাহেবরাও তো সব ইংরেজি মুখস্থ রাখেন না। পল ভাবলেন, পট্ল্ শব্দটাও হয়তো ইংরেজদের ডিকশনারিতে আছে। তাই খেতে খেতে বললেন, ‘অফকোর্স, অফকোর্স!’

সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেক জীবন, পৃষ্ঠা: ২২২-২২৪

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত