Ajker Patrika

কৌতুক নয়

সম্পাদকীয়
কৌতুক নয়

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে একজন কৌতুক অভিনেতা হিসেবেই জানে বেশির ভাগ মানুষ। চলচ্চিত্র বা নাটকের বাইরেও তাঁর কিছু রেকর্ড করা কৌতুক রয়েছে, যা এখনো আনন্দ দেয় শ্রোতাকে। মানুষ হিসেবে তিনি যে কত বড় ছিলেন, সে কথা অনেকেই জানে না। স্বাধীনতাসংগ্রামীদের প্রতি তাঁর ছিল অগাধ শ্রদ্ধা। সুযোগ পেলেই তাঁদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করতেন।

চিত্রজগতের অনেক মানুষকেই তিনি সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। অনেক ছবি করে টাকা নেননি। অনেকেই আবার তাঁকে দিয়ে অভিনয় করিয়ে চুক্তিমতো টাকা দেননি, টাকা দিতে বেমালুম ভুলে গেছেন।

দুটো ছোট ঘটনা বলব। অজিৎ লাহিড়ী একটা ছবি পরিচালনা করেছেন। ছবির শুটিংয়ের সময় কোনো দিনই ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোনো টাকা দেননি তিনি। শুটিংয়ের শেষ দিন অজিৎ লাহিড়ীর পকেটে কিছু টাকা ভরে দিলেন ভানু। বললেন, ‘আমার বাড়ি গিয়ে নীলিমাকে এই টাকা দিয়ে আসবি।’

নীলিমা হলো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী।

তারপর অজিৎ যখন ভানুরই দেওয়া টাকা দিতে এলেন নীলিমাকে, তখন ভানুর সে কী উল্লাস! চিৎকার করে ডেকে ডেকে বলছেন, ‘নীলিমা দেখো, ও এসেছে আমায় টাকা দিতে!’

ভানুর উদ্ভাসিত মুখ দেখে নীলিমা বুঝতেই পারেননি ভেতরের ঘটনা। এই রহস্য ভানুর মৃত্যুর পর নীলিমার কাছে ফাঁস করে দেন স্বয়ং অজিৎ লাহিড়ী।

আরেকটি সিনেমার প্রযোজক ছিলেন ধীরেশ চক্রবর্তী। সিনেমা শেষ হয়ে যাওয়ার দুই-তিন বছর পর তিনি এসেছেন পাওনা টাকা দিতে। এতে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন ভানু। তিনি একতলা থেকে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘নীলিমা, শিগগির এসে দেখে যাও কী অভিনব কাণ্ড! তবে তুমি যে বলো কোনো মানুষ সৎ নয়? দেখো দেখো, চেয়ে দেখো’ বলে ভানু জড়িয়ে ধরলেন ধীরেশ চক্রবর্তীকে। ভানুর চোখ দিয়ে স্রোতের মতো বেরিয়ে আসতে লাগল আনন্দাশ্রু।

দুটো ঘটনার কোনোটিকে কি কৌতুক বলে মনে হচ্ছে?

সূত্র: ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, (নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা), লেখালেখি, পৃষ্ঠা ১৯-২০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত