Ajker Patrika

যেভাবে হলেন বনফুল

বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়
যেভাবে হলেন বনফুল

বনফুলের বাবা ছিলেন চিকিৎসক। খুবই উদারনৈতিক ছিলেন তিনি। মাছ-মাংস খেতেন, যার-তার হাতে খেতেন। পেঁয়াজ খেতেন। ব্রাহ্মদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেন। চাকরির কারণে পূর্ণিয়ায় ছিলেন যখন বাবা-মা, তখন বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায়ের জন্ম হয় মনিহারী গ্রামে। সেটা ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই। বাংলা সন অনুযায়ী ১৩০৬-এর ৪ শ্রাবণ। এর দেড় বছরের মধ্যেই তাঁর ছোট ভাই জন্মগ্রহণ করেন। ফলে সে সময় মাতৃস্তন্যপানে সমস্যার সৃষ্টি হলো। তাহলে কী করতে হবে? একজন মুসলমান মজুরের চামরি নামের স্ত্রীর স্তন্যপান করেন তিনি। কলেজজীবনে যখন তিনি মুরগি খেতে শিখেছেন, তখন তাঁর আপন মা-ই বলেছেন,  ‘এ ম্লেচ্ছ, হবেই তো! ছেলেবেলায় মুসলমানির দুধ  খেয়েছে তো!’

তবে মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় যখন সিক্সথ ইয়ারের ছাত্র, তখন তাঁর ডবল নিউমোনিয়া হয়েছিল। চিকিৎসক তাঁকে প্রতিদিন একটি করে মুরগি খাওয়ার পরামর্শ দেন। বাড়ির মৈথিল ঠাকুর মুরগি রান্না করতে অস্বীকার করেন। তখন সেকেলে মা-ই মুরগি রান্না করে দেন, তবে রান্নার পর অবধারিতভাবেই স্নান করতেন।

আগের কথা একটু বলি। হাতে লেখা ‘বিকাশ’ নামে একটি পত্রিকার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। লিখতে শুরু করেন। যখন তিনি থার্ড ক্লাসের ছাত্র, অর্থাৎ এখনকার ক্লাস এইটের। সুধাংশুশেখর হাওলাদার মানে বটুদা বলাইয়ের কয়েকটি কবিতা বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠিয়ে দেন। মালঞ্চ পত্রিকায় একটি কবিতা ছাপা হলো। সবাই খুব খুশি, কিন্তু ভীষণ রেগে গেলেন হেডপণ্ডিত। তিনি নিজে কিন্তু কাব্যতীর্থ! কিন্তু বললেন, ‘তোমার বাবা যে পয়সা খরচ করে তোমাকে বোর্ডিংয়ে রেখেছেন, তা কি কবিতা লেখার জন্য?’ তখন বটুদা বললেন, ‘তুমি একটা ছদ্মনাম  বের করো।’

বনজঙ্গল ভালোবাসতেন বলাইচাঁদ সেই ছোটবেলা থেকেই। নিজের ছদ্মনাম রাখলেন, ‘বনফুল’। 

সূত্র: আনিসুজ্জামান, মহামানবের সাগরতীরে, পৃষ্ঠা ১৩১-১৩২

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত