Ajker Patrika

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে নারী শিক্ষক

বেলাল হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১৪: ১৮
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাড়ছে নারী শিক্ষক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র ও ছাত্রীর অনুপাত প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছেলে ও মেয়েদের জন্য রয়েছে আটটি করে আবাসিক হল। ফলে এখানকার মেয়েরা উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ পান নির্বিঘ্নে। সার্বিকভাবে নারীদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এক দারুণ উদাহরণ।

বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হওয়ার দৌড়ে ছেলেদের তুলনায় দ্বিগুণ এগিয়ে রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গত তিন বছরের শিক্ষকের তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে প্রায় ৭২ জন শিক্ষক বিভিন্ন বিভাগে যোগদান করেছেন। এর মধ্যে মাত্র ২৪ জন পুরুষ। অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষকের দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৪৮ জন নারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ৬০৭ জন শিক্ষকের মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ১৮৭।

২০২১ সালের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ৪৭তম বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৭৫৭ জন শিক্ষক রয়েছেন, যার মধ্যে ২৩৩ জন নারী। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ৪৬তম প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৮৩৬ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ২৪৫ জন শিক্ষিকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক জানিয়েছেন, ছাত্রীরা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই শিক্ষকতায় নাম লেখাচ্ছেন, বিষয়টি সুখকর। ক্যাম্পাসে শিক্ষিকার সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নারীর উচ্চশিক্ষায় পরিবেশে ভারসাম্য আসছে। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা অনুপ্রাণিত হবেন বলে আশা প্রকাশ 
করেন তাঁরা।

ছাত্রীরা জানান, ক্যাম্পাসের সংস্কৃতিতে একধরনের নিজস্বতা আছে। এখানে অবাধ স্বাধীনতার পাশাপাশি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নারীদের নিরাপদ রাখে। সেই সঙ্গে এখানকার আবাসনব্যবস্থা বেশ মানসম্মত। এতে পড়াশোনায় পরিশ্রমের সুযোগ তৈরি হয়। ফলে একাডেমিক কার্যক্রম ও ফলাফলে তাঁরা এগিয়ে যান সহজে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের ৪২ ব্যাচের ছাত্রী এবং সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া প্রভাষক শবনম ফেরদৌসী বলেন, ‘শিক্ষকতার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শুরু থেকেই আগ্রহ ছিল। তা ছাড়া মায়ের স্বপ্নও আমাকে শিক্ষক হতে প্রভাবিত করেছে।’

শবনম ফেরদৌসী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা প্রথম বর্ষ থেকেই মানসম্মত আবাসিক পরিবেশ পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া মেয়েরা স্বভাবগতভাবে গোছালো হওয়ায় পড়াশোনায় এগিয়ে যান। ছেলেরা শুরু থেকে পরিবেশসহ বিভিন্ন কারণে পেছনে পড়ে যান। ফলে দিন শেষে ছাত্রীরা তুলনামূলক ভালো ফল করে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। ধারণা করছি, এসব কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকের সংখ্যা বাড়ছে।’

নারী শিক্ষক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে গণিত বিভাগের সদ্য সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবেদা সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি নিঃসন্দেহে উৎসাহের। এখানকার পরিবেশ নারীর উচ্চশিক্ষার জন্য বেশ সহায়ক। বিগত বছরগুলোতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি ভালো ফল করেছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিভাগের প্রথম ১০ জনই ছিল মেয়ে! ফলে এখন দ্বিগুণ হারে মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় সুযোগ পাচ্ছে।’

ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক সাবেরা সুলতানা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণায় লিঙ্গ মুখ্য বিষয় নয়, এখানে মেধার প্রাধান্য থাকা চাই। যেসব মেয়ে এখন শিক্ষক হচ্ছেন, তাঁরা যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়েই এখানে আসছেন। ফলে শিক্ষকের পরিচয় শিক্ষকতা দিয়েই, এখানে নারী কিংবা পুরুষ কোনো বিষয় নয়।’

সরকার ও রাজনীতি বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রী আলিফ আমরিন বলেছেন, ‘যখন শুনি বিভাগ অথবা হলের কোনো আপু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন, তখন আমরা উৎসাহ পাই। আপুরা যোগ্যতার পরিচয় দিয়েই সেই পর্যায়ে যাচ্ছেন। তবে মেয়েরা বেশি শিক্ষক হচ্ছেন বলে ছেলেরা পিছিয়ে পড়েছেন বিষয়টি এমন নয়।’

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪২ ব্যাচের ছাত্রী ও প্রভাষক নাদিয়া আফরিন রিতু বলেন, ‘অনার্স-মাস্টার্সের প্রতিটি ক্লাসে নিবিষ্ট মনে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছি। পরিশ্রমের কারণেই এখানে আসতে সক্ষম হয়েছি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার সময় চিন্তা করতাম, কীভাবে আরও বড় পরিসরে আমার গবেষণা দিয়ে দেশের সেবা করা যায়। এখন সেই চেষ্টা করব। দ্রুত পিএইচডি সম্পন্ন করে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করতে চাই।’ বিশ্ববিদ্যালয়টির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, জাহাঙ্গীরনগর মেয়েদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সব সময় অগ্রগামী ছিল। সেই সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষায় কোটা থাকায় উচ্চশিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণের পথ সুগম করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের তুলনায় শিক্ষিকার সংখ্যার আনুপাতিক ব্যবধান কমে যাওয়ায় মেয়েদের জন্য আরও ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিডনি সুইনির প্রেমিকেরা কেন বেশি বয়সের হয়—ব্যাখ্যা দিলেন মনোবিজ্ঞানী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
স্কুটার ব্রৌন, সিডনি সুইনি ও জনাথন দাভিনো। ছবি: সংগৃহীত
স্কুটার ব্রৌন, সিডনি সুইনি ও জনাথন দাভিনো। ছবি: সংগৃহীত

হলিউড অভিনেত্রী সিডনি সুইনি বরাবরই আলোচনায় থাকেন শুধু তাঁর অভিনয়ের জন্য নয়, বরং প্রেমের সম্পর্ক নিয়েও। ২৮ বছর বয়সী এই তারকা সম্প্রতি ৪৪ বছর বয়সী সংগীত উদ্যোক্তা স্কুটার ব্রৌনের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন। এর আগে তিনি ব্যবসায়ী জনাথন দাভিনোর সঙ্গে সাত বছর ধরে ছিলেন। ৪২ বছর বয়সী দাভিনোর সঙ্গে মিলে তিনি ‘ফিফটি-ফিফটি ফিল্মস’ নামে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলেন।

এদিকে বরাবরই সম্পর্কের ক্ষেত্রে বয়সে অনেক বড় পুরুষদের প্রতি সুইনির আগ্রহ নিয়ে ভক্তদের মনে প্রশ্ন উঠেছে। তবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ও যৌন-মনোবিজ্ঞানী সোফি রোস। তিনি প্রায় ১৮ বছর ধরে এই বিষয়ে কাজ করছেন।

সোফির মতে, এই ধরনের আকর্ষণ আসলে বয়সের জন্য নয়, বরং মানসিক নিরাপত্তা, স্থিতি ও আবেগীয় পরিপক্বতার প্রতি টান থেকে আসে।

সোফি বলেন, ‘যেসব মানুষ সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে সন্দিহান—তারা প্রায় সময়ই এমন সঙ্গী খোঁজেন যিনি স্থির ও নির্ভরযোগ্য। বড় বয়সের মানুষেরা প্রায়ই সেই নিরাপত্তার অনুভূতি দিতে পারেন।’

তিনি আরও মত দেন, এটি সব সময় যে কোনো মানসিক আঘাতের ফলে হবে, এমন নয়। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় কেউ বয়সের তুলনায় পরিণত হয় এবং অনুভব করে, সমবয়সীরা তার মতো পরিপক্ব নয়।’

ইতিপূর্বে সুইনি তাঁর কঠিন শৈশবের কথাও বলেছিলেন। মা-বাবার বিচ্ছেদ, আর্থিক সংকট এবং ১৬ বছর বয়সে পুরো পরিবার নিয়ে এক রুমের হোটেলে বসবাস—এই ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি। সোফি রোসের মতে, এমন অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে অবচেতনভাবে প্রভাব ফেলে। যদি ছোটবেলায়ই কাউকে পরিবার দেখভালের দায়িত্ব নিতে হয়, তবে প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে তিনি এমন কাউকে চাইতে পারেন, যিনি সেই দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেবেন।’

তবে এর উল্টোটাও হতে পারে। রোস বলেন, ‘অনেক সময় যারা ছোটবেলায় অভিভাবকের ভূমিকায় থাকেন, পরিণত বয়সেও তারা এমন সম্পর্ক খোঁজেন যেখানে অন্যকে যত্ন নিতে হয়। পরিচিত অভ্যাসই তাঁদের কাছে নিরাপদ লাগে।’

বিশেষজ্ঞের মতে, মূল বিষয় হলো সচেতনতা। যদি দুই পক্ষই বুঝতে পারে কেন তারা একে অপরের প্রতি আকৃষ্ট এবং সম্পর্কটি সমান মর্যাদা, পারস্পরিক সম্মান ও যোগাযোগের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, তাহলে বয়সের পার্থক্য কোনো সমস্যা নয়।

সোফি বলেন, ‘সিডনি সুইনির মতো কেউ, যার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার, কারও ওপর নির্ভরশীল নন। এই সম্পর্কগুলো অনেক সময় ক্ষমতা নয়, বরং মানসিক সামঞ্জস্যের ওপর গড়ে ওঠে।’

সম্প্রতি সাবেক প্রেমিক দাভিনোর সঙ্গে এক তীব্র বিতণ্ডার পর সুইনিকে প্রকাশ্যে চিৎকার করতে দেখা যায়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনেক আলোচনা ও সমালোচনা হয়। তবে ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইল জানিয়েছে, সবেক হয়ে গেলেও সুইনি ও দাভিনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক বজায় রাখছেন। কারণ তাঁদের প্রযোজনা সংস্থা এখনো সক্রিয় এবং সম্প্রতি ‘ক্রিস্টি’ নামে এক নারী মুষ্টিযোদ্ধার জীবনীচিত্র প্রযোজনা করেছে। ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, সম্পর্কের সমাপ্তি তাঁদের দুজনকে ব্যথিত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় নির্বাচনে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ৩৮
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১৫০ আসনে নারী প্রার্থী চান নারী উদ্যোক্তারা। আজ বুধবার বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে এমন দাবি জানায় নারী উদ্যোক্তাদের ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল।

সিইসির সঙ্গে বৈঠকের পর উইমেন এন্ট্রাপ্রেনিউর অব বাংলাদেশের (ডব্লিউইএবি) প্রেসিডেন্ট নাসরিন ফাতেমা আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই, নারীর সংখ্যা যেন বাড়ে। অ্যাটলিস্ট ১৫০টা সংসদীয় আসন যেন নারীদের দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে আমরা সরকারকেও বলতে চাই যে, নারীরা যে নির্বাচনে আসছেন, তাঁদের ডেফিনেটলি সহায়তা দিতে হবে। আমেরিকাতেও দেখবেন, এ রকম নারীদের সহায়তা দেওয়া হয়। তো নারীদের একটু সাহায্য দেওয়া এবং তাঁরা যেন নির্বাচনটা করতে পারেন, সেই রকম একটা ব্যবস্থা যেন নারীদের জন্য থাকে। নারীরা যেন স্বাচ্ছন্দে ভোট দিতে পারেন, সেটা নিয়েও আমরা কথা বলেছি।’

ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘আমরা চাই যে, অ্যাটলিস্ট ৫০ শতাংশ, আপনার ৩০০টা সিট না, কিন্তু ১৫০টা সিট যেন নারীদের জন্য দেওয়া হয়। নারীরা যেন কনটেস্ট করতে পারেন। সেই জিনিসটা আমরা একটু নিশ্চিত করতে চেয়েছি।’

নির্বাচনী তহবিল নিয়ে ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘নারীদের পক্ষে একটু অসম্ভব, একটু কষ্টকর, একটু না অনেক কষ্টকর। কারণ, সহজে কিন্তু ফ্যামিলি থেকেও নারীদের জন্য ফান্ড পাওয়া যায় না, যেটা পুরুষেরা অহরহ পারেন। আমাদের কথা হলো, নারীদের গভর্নমেন্ট যদি একটু সহায়তা করে, তাহলে অনেক নারীই কিন্তু নির্বাচনে আসতে পারবেন।’

এক প্রশ্নের জবাবে ফাতেমা আউয়াল বলেন, ‘দলগুলোকেও আমরা বলতে চাই, কোথাও দেখা যায় যে, এটা ৫ শতাংশ, কোথাও দেখা যাচ্ছে ৭ শতাংশ—এভাবে মনোনয়ন দিচ্ছে। এভাবে না করে আমার মনে হয়, উনারা যদি বলেন যে এত পারসেন্ট দেবেন, সেভাবে যদি হয়, তাহলে জিনিসটা একটু ব্যালেন্স হবে।’

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ডব্লিউইএবির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেম্বার সাবেরা আহমেদ কলি, সেকেন্ড ভাইস প্রেসিডেন্ট মেহেরুন্নেসা খান, মেম্বার আইরিন তালুকদার, এস এম আনজুমানু ফেরদৌস ও ফাহিমা কাউসার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গণপরিবহনে হয়রানি, যেভাবে আইনি ব্যবস্থা নেবেন

ব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪৩
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দেশে গণপরিবহনে যাতায়াতে ৮৭ শতাংশ নারী মৌখিক, শারীরিকসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হয়। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ হয় যৌন হয়রানির শিকার। এসব তথ্য চলতি বছরের এপ্রিলে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, ইউএন উইমেন্স ও সুইডেন দূতাবাসের সহযোগিতায় আয়োজিত একটি ক্যাম্পেইনে তুলে ধরা হয়। গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে কীভাবে আইনি সহায়তা পেতে পারেন, সে বিষয়ে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইফফাত আরা গিয়াস।

গণপরিবহনে হয়রানি বা সহিংসতার শিকার হলে প্রথম কাজ হবে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

যত দ্রুত সম্ভব ভিড় থেকে দূরে চলে যান, চিৎকার করে আশপাশের লোকদের সচেতন করুন এবং সরাসরি বিপদাপন্ন মনে হলে চালক, কন্ডাক্টর কিংবা শুভানুধ্যায়ীর সাহায্য চান। একই সময়ে মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও বা অডিও রেকর্ড রাখুন, ছবি তুলুন এবং পাশে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীর নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর নোট করে নিন। এগুলো পরে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগবে।

আইনগত দিক

গণপরিবহনে শারীরিক ভঙ্গি, ছোঁয়া কিংবা আপত্তিকর আচরণ পেনাল কোডের ধার্য শাস্তিযোগ্য অপরাধের মধ্যে পড়ে। যেমন কোনো ব্যক্তি যদি কোনো নারীর শালীনতা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে অথবা শালীনতা ক্ষুণ্ন হতে পারে জেনেও উক্ত নারীকে আক্রমণ করে বা তার ওপর অপরাধমূলক বল প্রয়োগ করে, সেটি ধারা ৩৫৪-এর মধ্যে পড়ে। আবার কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কোনো শব্দ ব্যবহার, অঙ্গভঙ্গি অথবা কোনো কাজ করলে তা ধারা ৫০৯ অনুসারে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এই অপরাধগুলোর ভিত্তিতে মামলা করা যায়। দেশের সংবিধান নাগরিকদের সমতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করেছে। তাতে নারীদের পুরুষের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সমান অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা আছে।

কীভাবে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে

ঘটনার পর দ্রুত নিকটস্থ থানায় সাধারণ ডায়েরি বা জিডি অথবা গুরুতর হলে এফআইআর/মোকদ্দমা করুন। এ ছাড়া অনলাইন জিডি সার্ভিসও আছে, যেখানে প্রাথমিক অভিযোগ দাখিল করা যায়। পরে পুলিশ আপনাকে তদন্ত এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে সাহায্য করবে। মেডিকেল পরীক্ষার কাগজ এবং মোবাইল ফোনে করা ভিডিও অথবা অডিও প্রমাণ সংরক্ষণ করুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট বা মেসেজের স্ক্রিনশট রাখুন। প্রয়োজনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীন কঠোর ধারাও বিবেচিত হতে পারে।

গণপরিবহনে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হলে পেনাল কোড ধারা ৩৫৪, ৫০৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সাংবিধানিক সমতা—এসব আইনি সূত্রের সাহায্যে যে কেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।

কটূক্তি বা মৌখিক হয়রানির শিকার হলে করণীয়

হয়রানির ঘটনা ঘটলে কড়া ভাষায় বিরক্তি জানান। আশপাশের মানুষকে ডাকা এবং ঘটনাটি রেকর্ড বা নোট করা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিকভাবে মামলা কিংবা অভিযোগ আনা গেলে ভুক্তভোগীকে অপমান করা

বা ন্যক্কারজনক ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে। এখানে আইনি প্রক্রিয়া ও প্রমাণই নির্ণায়ক, ব্যক্তিগত কলঙ্ক বা সোশ্যাল মিডিয়ার চাপকে অতিরঞ্জিতভাবে গ্রহণ করবেন না। গবেষণা ও এনজিও সার্ভেতে দেখা গেছে, গণপরিবহনে কটূক্তি ব্যাপক। এ কারণেই ব্যক্তিগত ঘটনা আইনি ও সামাজিকভাবে গুরুত্ব পায়।

মানসিক সহায়তা ও সুরাহা

ন্যক্কারজনক কোনো ঘটনা ঘটে গেলে পরিবার, বন্ধু অথবা স্থানীয় নারী সাহায্য কেন্দ্র কিংবা আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। প্রমাণ জোগাড় না করে দ্রুত সামাজিক মিডিয়ায় নেটিভ স্টোরি ছড়িয়ে দেওয়ার আগে আইনগত পরামর্শ নিন। সমাজে ভুক্তভোগীকে দোষারোপ বন্ধ করতে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে।

এ ক্ষেত্রে নিন্দা নয়, সহায়তা বাড়ানোই সমাধান।

গণপরিবহনে হয়রানি অথবা সহিংসতার শিকার হলে পেনাল কোড ধারা ৩৫৪, ৫০৯, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সাংবিধানিক সমতা—এসব আইনি সূত্রের সাহায্যে যে কেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেন।

জীবিকার প্রয়োজনে কিংবা পরিবারের যেকোনো প্রয়োজনে নারীদের ঘর থেকে বের হতে হয়। এই প্রাত্যহিক কাজে গণপরিবহনে হয়রানির শিকার হলে নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হয়। এটি আইনের চোখে অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ বন্ধে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ

অক্টোবরে সংঘটিত সহিংসতায় নারী হত্যার ঘটনা বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

অক্টোবর মাসে ২৩১ জন নারী এবং কন্যাশিশু ধর্ষণ, হত্যা, যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৬ কন্যা, ১৬ নারীসহ মোট ৬২ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। অক্টোবরে বেশিসংখ্যক নারী ও কন্যাশিশু হত্যার শিকার হয়েছে। এ ঘটনার শিকার হওয়া ৫৩ জনের মধ্যে ৪৬ নারী ও ৭ জন কন্যাশিশু। ১৫টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড উপপরিষদ এ তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নির্যাতনের শিকার হওয়া ২৩১ নারী ও কন্যাশিশুর মধ্যে ৩৪ কন্যাসহ ৪৪ জন ধর্ষণের শিকার হয়েছে, ১০ কন্যাসহ ১৩ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ২ কন্যাসহ ৫ জন। এ ছাড়া ১০ কন্যাসহ ১৩ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া সহিংসতার ঘটনার মধ্যে ১০১ কন্যাশিশু, আর ১৩০ জন নারী সহিংসতার শিকার হয়েছে।

বিভিন্ন কারণে ৭ কন্যা এবং ৪৬ জন নারী হত্যার শিকার হয়েছে। হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছে ১ কন্যা ও ২ জন নারী। ৯ কন্যা, ১৭ নারীসহ ২৬ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

২ কন্যা, ৫ নারীসহ ৭ জন আত্মহত্যা করেছে। এর মধ্যে আত্মহত্যার প্ররোচনার শিকার হয়েছে ১ জন।

যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে ৬ কন্যা, ৬ নারীসহ মোট ১২ জন। এর মধ্যে ৫ কন্যাসহ ১১ জন যৌন নিপীড়নের শিকার এবং ১ কন্যা উত্ত্যক্তকরণের শিকার হয়েছে।

অগ্নিদগ্ধের শিকার হয়েছে ৪ জন নারী। সে কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ জন নারীর। ১ জন নারী গৃহকর্মীকে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছে।

৭ কন্যা অপহরণের শিকার হয়েছে। পাচারের শিকার হয়েছে ৬ কন্যাসহ ১০ জন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫ কন্যাসহ ১৯ জন। বাল্যবিবাহের চেষ্টা হয়েছে ২ জন কন্যার। যৌতুকের ঘটনা ঘটেছে ৭টি। এর মধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতনে ২ এবং যৌতুকের কারণে হত্যার শিকার ৫ জন নারী। এ ছাড়া ৫ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত