ইমতিয়াজ মাহমুদ
কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
একজন নারী বক্তব্য দিতে উঠেছেন, লিকলিকে কাঠির মতো শক্ত হাত-পা, উজ্জ্বল লাল রঙের সস্তার সুতি শাড়ি পরনে। তাঁর ভাষা শুদ্ধ নয়, বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক লাইন স্পষ্ট বোঝা যায় না, বাক্য গঠন ও শব্দের ব্যবহার অতি এলোমেলো। কিন্তু তাঁর কণ্ঠদৃঢ় এবং উচ্চারিত বক্তব্য স্পষ্ট।
আকাশের দিকে উঁচু করে তুলে ধরা মুষ্টিবদ্ধ হাত অকম্প। তিনি চা-শ্রমিকদের কষ্টের জীবনের কথা উচ্চারণ করেন, মালিক ও সরকারপক্ষের প্রতারণার বিষয় বর্ণনা করেন। এমনকি তাঁদের যে বিদ্যমান ইউনিয়ন রয়েছে, সেই ইউনিয়নের দালালির কথাও জানাতে দ্বিধা করেননি। দ্বিধাহীন কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, চা-শ্রমিকদের চলমান সংগ্রামের অগ্রভাগেই তিনি আছেন, থাকবেন। ওরা যদি তাঁকে হত্যা করতে চায়, মৃত্যুতে তিনি শঙ্কিত নন—লড়াই অব্যাহত থাকবে।
না, সংগ্রামটা কেবল একটা বড় সমাবেশে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে নয়। চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের প্রতিদিনের সংগ্রাম শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে। সারা দিনের পরিক্রমার পর সূর্য অস্ত যায়। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের সংগ্রাম শেষ হয় না। আমরা, বাম নারীবাদীরা খবরের কাগজে, বইতে, অন্তর্জালে লিখতে থাকি, খেটে খাওয়া নারীকে সংগ্রাম করতে হয় সব সময় দুটি ফ্রন্টে, এক ফ্রন্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে। যেখানে নারী ও পুরুষ সবাইকে লড়তে হয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর দ্বিতীয় ফ্রন্ট হচ্ছে নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, তথা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যেখানে তাঁর পুরুষ কমরেডটিরও অবস্থান হতে পারে শত্রুর ক্যাম্পে। আমরা কেবল লিখি মাত্র। অথবা কখনো কখনো মুখে বলি বক্তব্য দিতে গিয়ে। এই সংগ্রামী জীবনটা প্রতিদিন যাপন করেন আমাদের চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা। একদিকে তাঁকে লড়তে হয় প্রতিদিন মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের জন্য, অন্যদিকে নারী হিসেবে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে।
কোন অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করেন চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা? মনে রাখবেন, চা-বাগানের অর্ধেকের বেশি শ্রমিক নারী। অর্থাৎ সরকারি পরিসংখ্যানে চা-শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ নারী। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি গবেষণা করেছে ২০১৮ সালে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নারী শ্রমিকদের ১৫ শতাংশই জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত।
এ রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ইত্যাদি ব্যবহারের অভ্যাস, বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান এবং সাধারণভাবে প্রজননস্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা। চা-বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকেরা এসব কারণের সব কটিতেই ভোগেন প্রতিদিন। সেই সঙ্গে ভোগেন অপুষ্টিতে। চা-বাগানে নারী শিশুদের জন্মের পর থেকে মোকাবিলা করতে হয় পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্যের। এমনিতেই অভাব। তার ওপর পরিবারের নারী শিশুরাই থাকে সবচেয়ে অবহেলিত। পুরুষদের খাওয়ার পর যেটুকু থাকে, সেটুকু জোটে নারীদের। পড়ালেখার সুযোগ খুবই সীমিত। একটু বড় হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আর বিয়ের পর শুরু হয় সন্তান ধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়ার পালা। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও অধিকাংশ নারী স্বাস্থ্যসম্মত প্রসবের সুযোগ পান না। বেশির ভাগ প্রসূতিই হাসপাতালের সেবা পান না। আর আছে মাসিকের সময় পুরোনো ন্যাকড়ার অস্বাস্থ্যকর ব্যবহার। জরায়ুমুখ ক্যানসারের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও কত প্রকার ব্যাধিতে যে ভুগতে হয় চা-বাগানের নারীদের, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই! মানে পাওয়া যায় না। পরিবারের রোজগেরে সদস্য হলেও নিজের ঘরে নারী শ্রমিকেরা চিরায়ত পুরুষতান্ত্রিক নিয়মে বেঁধে দেওয়া যে নারীর ভূমিকা রয়েছে, সেগুলোও পালন করতে বাধ্য নিয়ম মেনে।
অন্যান্য শিল্পে নারী শ্রমিকের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা নিশ্চিত করা আছে শ্রম আইনে। চা-শ্রমিক নারীদের ক্ষেত্রে সেসব সুযোগও মেলে না। মাতৃত্বকালীন ছুটি অকল্পনীয় বিষয়। দুপুরের খাবারের বিরতিতে নারী শ্রমিকদের খেতে হয় বাগানের মধ্যে বসেই। সেই খাবারটাই-বা কী? হয়তো দুখানা শুকনো রুটি বা অল্প একটু ভাত—মরিচ আর চা-পাতার ভর্তা দিয়ে খাওয়া! অতি নিম্নমানের এক রকম চা তৈরি করে নিয়ে যান শ্রমিকেরা। কেউ কেউ সেই চায়ে ভিজিয়ে ওই শুকনো রুটিটুকু খেয়েই ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেন। বসে খাওয়ার জায়গা নেই। নেই কোনো টয়লেট বা সেরকম ব্যবস্থা। এই অবস্থাই চলে আসছে প্রায় শত বছর ধরে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পাতা তুলতে হয় প্রতিদিন। বিনিময়ে মজুরির তথ্য তো সবাই জেনেছেন ইতিমধ্যে। শ্রমিকদের তোলা পাতা দিয়ে যে উৎকৃষ্ট চা উৎপাদন হয়, তা পানের সুযোগ শ্রমিকদের হয় না। এইটাই চলে আসছে সেই উনিশ শতক থেকে।
ব্রিটিশ আমলে চা-শ্রমিকদের ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিথ্যা প্রলোভন ও লাভজনক চুক্তির আশ্বাস দিয়ে আনা হয়েছিল আসামে এবং আমাদের সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকায়। পাহাড়ে জঙ্গল সাফ করে চায়ের আবাদ করতে গিয়ে ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে, অনাহারে, অপুষ্টিতে ও সাহেবদের অত্যাচারে প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। নারী-পুরুষ চা-শ্রমিকদের জীবন ছিল তখন আমেরিকার প্ল্যান্টেশনে কাজ করা ক্রীতদাসদের মতোই। এই দাসসুলভ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য চা-শ্রমিক নারী-পুরুষ বিভিন্ন সময় বিদ্রোহ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯২১ সালের মুল্লুক চলো আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার। ব্রিটিশ সরকার ও চা-বাগানের মালিকেরা মিলে মুল্লুক চলো আন্দোলন দমন করতে গিয়ে গণহারে হত্যা করে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক নারী, পুরুষ ও শিশু।
আজকের চা-বাগানে নারী শ্রমিক এবং সাধারণভাবে সব শ্রমিকের অবস্থার যে খুব উন্নতি হয়েছে সে কথা বলা যাবে না। আশার কথা, সংগ্রামের সূচনা হয়েছে ইতিমধ্যে। চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছেন, প্রস্তুত হচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের জন্য। এ লড়াই শ্রমিকের অধিকার এবং পিতৃতন্ত্র, এ দুইয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের এই লড়াই হয়তো সফল হবে না, যদি আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু নারী এবং সচেতন মানুষ তাঁদের লড়াইয়ে শরিক না হয়।
কয়েক দিন আগে সিলেটে গিয়েছিলাম চা-শ্রমিকদের ১০ দফা দাবি আদায়ের সংগ্রামসংক্রান্ত একটি কনভেনশনে যোগ দিতে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ উপত্যকার বিভিন্ন বাগান থেকে চা-শ্রমিকেরা এসেছেন। তাঁদের মধ্য থেকে দু-একজন করে বক্তব্য দিচ্ছেন, দাবির কথা বলছেন।
একজন নারী বক্তব্য দিতে উঠেছেন, লিকলিকে কাঠির মতো শক্ত হাত-পা, উজ্জ্বল লাল রঙের সস্তার সুতি শাড়ি পরনে। তাঁর ভাষা শুদ্ধ নয়, বক্তব্য থেকে রাজনৈতিক লাইন স্পষ্ট বোঝা যায় না, বাক্য গঠন ও শব্দের ব্যবহার অতি এলোমেলো। কিন্তু তাঁর কণ্ঠদৃঢ় এবং উচ্চারিত বক্তব্য স্পষ্ট।
আকাশের দিকে উঁচু করে তুলে ধরা মুষ্টিবদ্ধ হাত অকম্প। তিনি চা-শ্রমিকদের কষ্টের জীবনের কথা উচ্চারণ করেন, মালিক ও সরকারপক্ষের প্রতারণার বিষয় বর্ণনা করেন। এমনকি তাঁদের যে বিদ্যমান ইউনিয়ন রয়েছে, সেই ইউনিয়নের দালালির কথাও জানাতে দ্বিধা করেননি। দ্বিধাহীন কণ্ঠে তিনি ঘোষণা করেন, চা-শ্রমিকদের চলমান সংগ্রামের অগ্রভাগেই তিনি আছেন, থাকবেন। ওরা যদি তাঁকে হত্যা করতে চায়, মৃত্যুতে তিনি শঙ্কিত নন—লড়াই অব্যাহত থাকবে।
না, সংগ্রামটা কেবল একটা বড় সমাবেশে স্পষ্ট বক্তব্য দেওয়ার মধ্যে নয়। চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের প্রতিদিনের সংগ্রাম শুরু হয় সূর্যোদয়ের সঙ্গে। সারা দিনের পরিক্রমার পর সূর্য অস্ত যায়। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের সংগ্রাম শেষ হয় না। আমরা, বাম নারীবাদীরা খবরের কাগজে, বইতে, অন্তর্জালে লিখতে থাকি, খেটে খাওয়া নারীকে সংগ্রাম করতে হয় সব সময় দুটি ফ্রন্টে, এক ফ্রন্ট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির সংগ্রামে। যেখানে নারী ও পুরুষ সবাইকে লড়তে হয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আর দ্বিতীয় ফ্রন্ট হচ্ছে নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে, তথা পিতৃতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যেখানে তাঁর পুরুষ কমরেডটিরও অবস্থান হতে পারে শত্রুর ক্যাম্পে। আমরা কেবল লিখি মাত্র। অথবা কখনো কখনো মুখে বলি বক্তব্য দিতে গিয়ে। এই সংগ্রামী জীবনটা প্রতিদিন যাপন করেন আমাদের চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা। একদিকে তাঁকে লড়তে হয় প্রতিদিন মালিকপক্ষ ও রাষ্ট্রের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের জন্য, অন্যদিকে নারী হিসেবে নারীর প্রতি বৈষম্যের বিরুদ্ধে, পিতৃতান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে।
কোন অবস্থার মধ্যে জীবনযাপন করেন চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা? মনে রাখবেন, চা-বাগানের অর্ধেকের বেশি শ্রমিক নারী। অর্থাৎ সরকারি পরিসংখ্যানে চা-শ্রমিকদের ৫১ শতাংশ নারী। নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সঙ্গে মিলে একটি গবেষণা করেছে ২০১৮ সালে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই নারী শ্রমিকদের ১৫ শতাংশই জরায়ুমুখ ক্যানসারে আক্রান্ত।
এ রোগের অন্যতম কারণ হচ্ছে মাসিকের সময় অস্বাস্থ্যকর কাপড় ইত্যাদি ব্যবহারের অভ্যাস, বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান এবং সাধারণভাবে প্রজননস্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা। চা-বাগানগুলোতে নারী শ্রমিকেরা এসব কারণের সব কটিতেই ভোগেন প্রতিদিন। সেই সঙ্গে ভোগেন অপুষ্টিতে। চা-বাগানে নারী শিশুদের জন্মের পর থেকে মোকাবিলা করতে হয় পিতৃতান্ত্রিক বৈষম্যের। এমনিতেই অভাব। তার ওপর পরিবারের নারী শিশুরাই থাকে সবচেয়ে অবহেলিত। পুরুষদের খাওয়ার পর যেটুকু থাকে, সেটুকু জোটে নারীদের। পড়ালেখার সুযোগ খুবই সীমিত। একটু বড় হলেই মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। আর বিয়ের পর শুরু হয় সন্তান ধারণ ও সন্তান জন্ম দেওয়ার পালা। সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ও অধিকাংশ নারী স্বাস্থ্যসম্মত প্রসবের সুযোগ পান না। বেশির ভাগ প্রসূতিই হাসপাতালের সেবা পান না। আর আছে মাসিকের সময় পুরোনো ন্যাকড়ার অস্বাস্থ্যকর ব্যবহার। জরায়ুমুখ ক্যানসারের পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও কত প্রকার ব্যাধিতে যে ভুগতে হয় চা-বাগানের নারীদের, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই! মানে পাওয়া যায় না। পরিবারের রোজগেরে সদস্য হলেও নিজের ঘরে নারী শ্রমিকেরা চিরায়ত পুরুষতান্ত্রিক নিয়মে বেঁধে দেওয়া যে নারীর ভূমিকা রয়েছে, সেগুলোও পালন করতে বাধ্য নিয়ম মেনে।
অন্যান্য শিল্পে নারী শ্রমিকের জন্য কিছুটা হলেও সুবিধা নিশ্চিত করা আছে শ্রম আইনে। চা-শ্রমিক নারীদের ক্ষেত্রে সেসব সুযোগও মেলে না। মাতৃত্বকালীন ছুটি অকল্পনীয় বিষয়। দুপুরের খাবারের বিরতিতে নারী শ্রমিকদের খেতে হয় বাগানের মধ্যে বসেই। সেই খাবারটাই-বা কী? হয়তো দুখানা শুকনো রুটি বা অল্প একটু ভাত—মরিচ আর চা-পাতার ভর্তা দিয়ে খাওয়া! অতি নিম্নমানের এক রকম চা তৈরি করে নিয়ে যান শ্রমিকেরা। কেউ কেউ সেই চায়ে ভিজিয়ে ওই শুকনো রুটিটুকু খেয়েই ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করেন। বসে খাওয়ার জায়গা নেই। নেই কোনো টয়লেট বা সেরকম ব্যবস্থা। এই অবস্থাই চলে আসছে প্রায় শত বছর ধরে। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে পাতা তুলতে হয় প্রতিদিন। বিনিময়ে মজুরির তথ্য তো সবাই জেনেছেন ইতিমধ্যে। শ্রমিকদের তোলা পাতা দিয়ে যে উৎকৃষ্ট চা উৎপাদন হয়, তা পানের সুযোগ শ্রমিকদের হয় না। এইটাই চলে আসছে সেই উনিশ শতক থেকে।
ব্রিটিশ আমলে চা-শ্রমিকদের ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে মিথ্যা প্রলোভন ও লাভজনক চুক্তির আশ্বাস দিয়ে আনা হয়েছিল আসামে এবং আমাদের সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকায়। পাহাড়ে জঙ্গল সাফ করে চায়ের আবাদ করতে গিয়ে ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে, অনাহারে, অপুষ্টিতে ও সাহেবদের অত্যাচারে প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক। নারী-পুরুষ চা-শ্রমিকদের জীবন ছিল তখন আমেরিকার প্ল্যান্টেশনে কাজ করা ক্রীতদাসদের মতোই। এই দাসসুলভ অত্যাচার-নির্যাতন থেকে বাঁচার জন্য চা-শ্রমিক নারী-পুরুষ বিভিন্ন সময় বিদ্রোহ করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ১৯২১ সালের মুল্লুক চলো আন্দোলন। প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিক অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার। ব্রিটিশ সরকার ও চা-বাগানের মালিকেরা মিলে মুল্লুক চলো আন্দোলন দমন করতে গিয়ে গণহারে হত্যা করে কয়েক হাজার চা-শ্রমিক নারী, পুরুষ ও শিশু।
আজকের চা-বাগানে নারী শ্রমিক এবং সাধারণভাবে সব শ্রমিকের অবস্থার যে খুব উন্নতি হয়েছে সে কথা বলা যাবে না। আশার কথা, সংগ্রামের সূচনা হয়েছে ইতিমধ্যে। চা-বাগানের নারী শ্রমিকেরা সংগঠিত হচ্ছেন, প্রস্তুত হচ্ছেন দীর্ঘমেয়াদি লড়াইয়ের জন্য। এ লড়াই শ্রমিকের অধিকার এবং পিতৃতন্ত্র, এ দুইয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু চা-বাগানের নারী শ্রমিকদের এই লড়াই হয়তো সফল হবে না, যদি আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু নারী এবং সচেতন মানুষ তাঁদের লড়াইয়ে শরিক না হয়।
মানুষ স্বপ্নবাজ প্রাণী। যুদ্ধ ও সংঘাতময় পৃথিবীতে ভিটে চ্যুত মানুষও স্বপ্ন দেখে। এই স্বার্থ আর সংঘাতময় পৃথিবীতে মানুষ তার জীবনের চেয়েও বড়। নইলে বেঁচে থাকে কীভাবে! বিশ্ব শরণার্থী দিবসে তেমনি কিছু নারীর গল্প রইল, যাঁরা উদ্বাস্তু জীবনেও স্বপ্ন দেখেছেন জীবনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
২ দিন আগেকারও কোলে শিশুসন্তান, কেউ অন্তঃসত্ত্বা, কারও হাতে স্যালাইনের ক্যানুলা। চাকরি বাঁচাতে এই অবস্থায় ২১ দিন ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছেন তাঁরা। করবেন নাই-বা কেন, তাঁদের কেউ সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কারও বেতনের টাকায় চলছে পরিবারের অসুস্থ সদস্যের চিকিৎসা; কেউ আবার বেতনের টাকায় সন্তানের জন্য...
৪ দিন আগেযুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা এবং দৈনন্দিন আতঙ্ক ইসরায়েলি নারীদের গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে এমন তথ্যের আভাস পাওয়া গেছে।
৪ দিন আগেঅনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় মাত্র ২০ হাজার টাকায় বোরকার ব্যবসা শুরু করেন। ডিজাইন, কাপড় সংগ্রহ, ডেলিভারি—সবই এক হাতে সামলাতেন তিনি। বর্তমানে ঢাকায় তাঁর দুটি শোরুম রয়েছে। বিনিয়োগের পরিমাণ বহু আগেই কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আমেরিকা, কানাডা, জাপান, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে...
৪ দিন আগে