Ajker Patrika

আন্তর্জাতিক নারী

বদলের লড়াইয়ে এক নিঃসঙ্গ নারী

ফিচার ডেস্ক
গিসেল পেলিকট। ছবি: সংগৃহীত
গিসেল পেলিকট। ছবি: সংগৃহীত

ফ্রান্সের একটি বিদ্যুৎ কোম্পানির একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ছিলেন ডমিনিক পেলিকট। তিনি ১৯৭৩ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন গিসেল নামের এক নারীর সঙ্গে। ৫০ বছরের সংসারজীবনে তাঁরা তিনটি সন্তানের জনক-জননী হন। সন্তান এবং নাতি-নাতনিদের নিয়ে যদিও ছবির মতো নিখুঁত একটি পারিবারিক জীবন ছিল তাঁদের। কিন্তু কেউ জানত না এর পেছনে লুকিয়ে ছিল ভয়ংকর কিছু সত্য। সেই সত্য সহিংসতা ও ধর্ষণের অভিযোগের সঙ্গে জড়িত। বছরের পর বছর নিজের স্বামীর কুরুচি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে ছিলেন গিসেল।

দিন শেষে তাঁর জীবনে নির্যাতনের সমাপ্তি ঘটার সূত্রপাত হয়। সে জন্য তাঁকে লড়তে হয়েছে দেশের আইনি ব্যবস্থার সঙ্গেও।

২০১০ সালে ডমিনিক পেলিকটের বিরুদ্ধে প্রথম পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। প্যারিসের একটি স্থানীয় বাজারে এক নারীর আপত্তিকর ছবি তুলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন তিনি। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে রোমহর্ষ সব তথ্য। জানা যায়, ডমিনিক নিজে তাঁর স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে দেওয়ার পর একাধিকবার ভিন্ন পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ ফ্রান্সের মাজানে নামের একটি ছোট শহরে থাকাকালীন স্ত্রীকে মাদক খাইয়ে একাধিক অপরিচিত পুরুষের হাতে তুলে দিয়েছিলেন ডমিনিক। শুধু তা-ই নয়, মাদকের নেশায় আসক্ত গিসেলের কর্মকাণ্ড ভিডিও করে রাখতেন তিনি। অভিযোগ ওঠার পর স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় গিসেলের। তবে লড়াই সেখানেই শেষ হয়নি; বরং শুরু হয় এক কঠিন পরীক্ষা।

জানুয়ারিতে প্রকাশিত ফরাসি সংসদীয় এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, সে দেশে ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ নারী অভিযোগ করে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, সেই সব মামলার মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ বিনা বিচারে খারিজ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় সাহসিকতার সঙ্গে আদালতে লড়ে গেছেন গিসেল। গত অক্টোবরে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘এটা সাহসিকতা নয়. সমাজ পরিবর্তনের জন্য দরকার হলে ইচ্ছাশক্তি এবং দৃঢ় সংকল্প।’

গিসেল চোখে চোখ রেখে শুধু অন্যায়কারীর বিরুদ্ধেই লড়ে যাননি; প্রচ্ছন্নভাবে লড়ে গেছেন দেশটির আইনি ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও। তিনি লড়ে গেছেন সেই সব মানুষের জন্য, যাঁরা বছরের পর বছর নির্যাতন সহ্য করে গেছেন অজানা কোনো আশঙ্কায়। তিনি সাহস জুগিয়েছেন সেই নারীদের, যাঁরা রুখে দাঁড়াতে সাহস পেতেন না। যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে গিসেলের সাহসী লড়াই একটি বন্ধ দরজা খুলে দিয়েছে, যার মধ্য দিয়ে অন্যান্য ভুক্তভোগী স্বাধীনভাবে হাঁটতে পারেন। গত বছরের ডিসেম্বরে ডমিনিক পেলিকটকে ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। তিনি ছাড়াও এই মামলায় মোট ৫১ জনের বিচার হয়। তাঁদের প্রত্যেককেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৪৬ জন পুরুষকে ধর্ষণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ২ জনকে ধর্ষণচেষ্টা এবং ২ জনকে যৌন নিপীড়নের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত।

পুলিশ ডমিনিকের কাছে থাকা ছবি ও ভিডিওর মধ্যে তাঁর মেয়ের ছবিও দেখতে পান। প্রমাণ পেয়ে এ বছরের জানুয়ারিতে মেয়ে ক্যারোলিন ড্যারিয়ানও বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চলা প্রথম বিচারটি বিশ্বব্যাপী মনোযোগ আকর্ষণ করে। কারণ, এই বিচার জনসাধারণ এবং গণমাধ্যমের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল।

সূত্র: টাইম, বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত