Ajker Patrika

ভয়ংকর এক ঝুলন্ত সেতু

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫: ১৯
ভয়ংকর এক ঝুলন্ত সেতু

আপনি যদি রোমাঞ্চপ্রেমী হোন তবে পাকিস্তানের হোসাইনি ঝুলন্ত সেতুটি পেরোনো আপনার জন্য অবশ্য কর্তব্য। তবে কারাকোরাম পার্বত্য এলাকার বাসিন্দারা, যাদের এ সেতুটি পেরোতে হয় প্রয়োজনের তাগিদেই, তাঁদের জন্য এ সেতু ভ্রমণ খুব আনন্দদায়ক কিছু নয়। বিশেষ করে কারাকোরাম পর্বতমালা থেকে আসা শীতল, ঝোড়ো বাতাস যখন সেতুটিকে প্রচণ্ডভাবে দোলাতে থাকে তখন অতি বড় দুঃসাহসীরও বুক কেঁপে ওঠে।

হোসাইনি সাসপেনশন ব্রিজকে অনেকেই পাকিস্তানের সবচেয়ে বিপজ্জনক রোপ ব্রিজ বা দড়ির সেতু হিসেবে বিবেচনা করেন। এটির অবস্থান গিলগিত-বালতিস্তান এলাকার গুলমিত হুনজা উপত্যকায়। ওই এলাকায় অবশ্য হুসাইনি সেতুর মতো আরও কিছু বিপজ্জনক ঝুলন্ত সেতু আছে। হুনজা নদী পেরোনোর জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সেতুটি।

ঝুলন্ত সেতুটি পাড় হতে গিয়ে বুক কাঁপে অনেক সাহসী মানুষেরও।আধুনিক সব বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ আর বিশাল সব মহাসড়কের-সেতুর যুগে অনেকেই কল্পনা করতে পারবেন না পৃথিবীর কোনো কোনো অংশে যোগাযোগ মোটেই সহজ নয়। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত উত্তর পাকিস্তানের গিলগিত-বালতিস্তান এলাকার বাসিন্দারা দেশের অন্য সব এলাকার থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কারণ এখানকার দুর্গম পার্বত্য এলাকা ও রাস্তাঘাটের অভাব। ছোট কোনো প্লেন ভাড়া করে হয়তো যাওয়া সহজ ছিল, কিন্তু তার যে ভাড়া সেটা কয়জনই বা গুনতে পারেন। রাওয়ালপিন্ডি থেকে পর্বতের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়াই ছিল বেশির ভাগের ভাগ্যে। ১৯৭৮ সালে কারাকোরাম মহাসড়ক নির্মাণের পর দেশের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যুক্ত হয় অঞ্চলটি। তবে ভেতরের বিভিন্ন এলাকার মধ্যে যোগাযোগ এখনো খুব একটা সহজ নয়।

উত্তর পাকিস্তানের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎপন্ন হয়েছে অনেক নদী আর খাল। এ এলাকায় ভ্রমণের সময় নদী ও ঝিরির ওপরের তার, তক্তা দিয়ে বানানো এই সেতুগুলো পেরোতে হয়। এগুলোর একটি হুসাইনি হ্যাঙ্গিং ব্রিজ। এ সেতুর নাম এসেছে এর ধারের গ্রাম হোসাইনি থেকে।

পিঠে বোঝা নিয়ে সেতু পাড় হচ্ছেন এক ব্যক্তি।এই ঝুলন্ত সেতু তৈরির ইতিহাসটাও বেশ মজার। ঝুলন্ত সেতুটি প্রথম তৈরি করা হয় ব্রিটিশ শাসনামলে গজালের সিসকাত গ্রামে। ১৯৬৮ সালে হুনজার শাসক মীর মুহাম্মদ জামাল খানকে এখানে একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের অনুরোধ করেন হোসাইনি গ্রামের বাসিন্দারা। তাই কারাকোরাম হাইওয়ে নির্মাণের সময় সেতুটি সরিয়ে নেওয়া হয় হোসেইনি গ্রামের কাছে। এখন হোসেইনি গ্রামের লোকেরা এ সেতু পেরিয়ে নদীর ওপারে তাঁদের নতুন বসতি জার আবাদে চলে যেতে পারেন সহজেই। গ্রামের বাসিন্দারা জানান আগে বড় একটার পাহাড় ডিঙিয়ে সেখানে পৌঁছাতে হতো তাঁদের। তাই ওই ঝুলন্ত সেতুটি এখানে নিয়ে আসা হয়।

অবশ্য প্রথম স্থাপন করা ঝুলন্ত সেতুটি বন্যার সময় ভেসে যায়। কারাকোরাম পর্বত থেকে ধেয়ে আসা প্রবল গতির বাতাসও আগের তুলনামূলক পাতলা দড়ি ও তক্তার সেতুটাকে ধসিয়ে দিতে ভূমিকা রাখে। তখন নতুন ঝুলন্ত সেতুটি তৈরি করা হয় ১৯৯৪ সালে।

অনেকেই একে পাকিস্তানের সবচেয়ে বিপজ্জনক রোপ ব্রিজ বা দড়ির সেতু হিসেবে বিবেচনা করেন।হোসাইনি ঝুলন্ত সেতুর কাছের শহর পাসু। সেখান থেকে ৪০ মিনিট পায়ে হেঁটে পৌঁছে যেতে পারবেন এ ঝুলন্ত সেতুর কাছে। পথটি খুব কঠিন নয়। সামান্য চড়াই-উতরাই অবশ্য আছে। সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৫০ ফুটের মতো। সেতুটিতে ৪৪২টি তক্তা আছে। এর আরেকটি বড় বিষয় হলো দুটো ধাপের মধ্যে ব্যবধান অন্তত এক ফুটের মতো। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে এগোনো শুরুর একপর্যায়ে যখন সেতুটি দুলতে শুরু করে, তখন সাহস হারিয়ে ফেলেন অনেক পর্যটক।

সেতু পেরোচ্ছেন স্থানীয় দুই বাসিন্দা।এদিকে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে এ এলাকায়। সম্প্রতি জায়গাটিকে প্লাস্টিকমুক্ত এলাকা হিসেবেও ঘোষণা করা হয়। হুসাইনি সেতু এলাকা থেকে দু-দিন হেঁটে পৌঁছে যাবেন রাকাপোশি পর্বতের ধারে। পর্বতারোহীদের প্রিয় গন্তব্য এটি। পার্বত্য এলাকা ভ্রমণে আসা হাইকাররাও হোসাইনি সেতু পেরোনোর রোমাঞ্চ হাতছাড়া করতে চান না কোনোভাবেই। তবে সেতু দিয়ে চলার সময় কারাকোরামের জোর শীতল হাওয়া যখন বইতে থাকে, সেই সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে দুলতে শুরু করে সেতু তখন তুমুল রোমাঞ্চপ্রেমীরও জানে পানি থাকে না।

সূত্র: এটলাস অবসকিউরা, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ক্লিক পাকিস্তান. অরগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের পতন হলে, এরপরই রাশিয়া—অভিমত রুশ বিশ্লেষকদের

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

লাইভ-২ (২৩ জুন, ২০২৫): ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুঁশিয়ারি, জাতিসংঘে জরুরি বৈঠক

চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি থেকে বিদায় নিচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত