Ajker Patrika

বাংলাদেশের নামে গ্রাম আছে কাশ্মীরে

আপডেট : ১৭ মে ২০২৩, ১৪: ৫৫
বাংলাদেশের নামে গ্রাম আছে কাশ্মীরে

কাশ্মীর এখন ভ্রমণ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের মানুষের খুব পছন্দের এক জায়গা। তবে যাঁরা কাশ্মীর ভ্রমণে যান, তাঁদের অনেকেরই হয়তো জানা নেই সেখানে বাংলাদেশ নামে একটি গ্রাম আছে। কাশ্মীরের বান্দিপোরা শহর থেকে মোটামুটি কিলোমিটার তিরিশেক দূরে এর অবস্থান।

উলার হ্রদের ধারে অবস্থিত গ্রামটির জনসংখ্যা ৩০০-এর মতো। জলপ্রপাতে ভরা, পর্বতঘেরা জায়গাটিতে যাওয়াও তেমন কঠিন ব্যাপার নয়। বান্দিপোরা-সপোরা রোড ধরে গেলে সেখানে পৌঁছে যেতে পারবেন। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য ক্রমেই পর্যটকদের নজর কাড়ছে। বাড়তি পাওয়া হলো উলার হ্রদে মাছ শিকার, নৌভ্রমণ ও পাখি দেখার সুযোগ।

এবার বরং গ্রামটির নাম বাংলাদেশ কীভাবে হলো তা জেনে নেওয়া যাক। এখন যেখানে গ্রামটি, সেখান থেকে কিছুটা দূরে জুরিমন নামে একটি গ্রাম ছিল। ১৯৭১ সালে ওই গ্রামে বড় একটা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে সেখানকার বাসিন্দারা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েন। পোড়া জায়গাটা থেকে কিছুটা দূরে সুবিধামতো একটি জায়গা বেছে নিয়ে আবার নতুন করে ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করেন গ্রামবাসী। এ সময়ই তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এদিকে নতুন আশায় বুক বাধা সেই জুরিমনের বাসিন্দারা তাঁদের নতুন বসতির নাম রাখেন সদ্য স্বাধীন দেশ বাংলাদেশের নামে।

অনেকগুলো বছর সরকারি নথিতে ছিল না গ্রামটির নাম। তবে বান্দিপোরা ডিসি অফিস ২০১০ সালে এর বাংলাদেশ নাম ও আলাদা গ্রাম হিসেবে একে স্বীকৃতি দেয়। সরকার যদি সুযোগ-সুবিধা বাড়ায় এবং গ্রামটির উন্নয়ন ঘটায়, তবে এটি আরও বেশি পর্যটক টানতে পারবে বলে মনে করেন বাইরে থেকে এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা। এখানকার সৌন্দর্যও তাঁদের আকৃষ্ট করে।

গ্রামটির জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। আগে অল্প কিছু ঘর থাকলেও এখন মোটামুটি ৫০-৬০টি ঘর আছে। এমনিতে এখানকার বাসিন্দারা কৃষি ও মাছ শিকার করে জীবন ধারণ করলেও সম্প্রতি পর্যটনের দিকেও ঝুঁকছে।

গোলাম হাসান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি, যিনি প্রথম নৌকা নামান হ্রদটিতে, তিনি জানান, এলাকাটায় আরও পর্যটক আনার জন্য ভিন্নরকম একটা নৌকা তৈরি করতে কয়েক দিন সময় লাগে তাঁর। এমনিতেও ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে এবং বিদেশ থেকে কাশ্মীর বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছেও উলার হ্রদ বেশ পরিচিত।

ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে ও বিদেশ থেকে কাশ্মীর বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে উলার হ্রদ বেশ পরিচিতহ্রদে শিকারা বা কাঠের নৌকা নামানো অপর একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, গ্রাম ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে তাঁরা গর্বিত। তাঁদের লক্ষ্য কাশ্মীরে আসা পর্যটকদের কাছে গ্রামটিকে ‘অবশ্যই ভ্রমণ করা উচিত’ এমন গন্তব্যে পরিণত করা। সম্প্রতি উলার হ্রদের চারপাশে দক্ষিণী একটি ছবির শুটিং হয়েছে। এটিরর পরিচালক অদিত্য সুহাস। 

এদিকে সরকারও গ্রামবাসীর ও এখানকার পর্যটনের উন্নয়নে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে জানিয়েছে। ‘এই এলাকার পর্যটনের উন্নয়নে সম্ভাব্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। স্থানীয়রা যেন আরও বেশি আয় করতে পারেন এবং জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন সেজন্য সব ধরনের সহযোগিতা করব আমরা।’ বলেন এক সরকারি কর্মকর্তা।

এদিকে বান্দিপোরার ডেপুটি কমিশনার ড. অওয়াইস আহমেদ কাশ্মীরের এই গ্রাম সম্পর্কে বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘পর্যটন মানেই কেবল জনপ্রিয় সব গন্তব্য নয়, এটি একই সঙ্গে তুলনামূলক অচেনা জায়গাগুলোয় ভ্রমণ ও স্থানীয় সংস্কৃতি সম্পর্কে জানা। পর্যটকদের আবিষ্কারের প্রতীক্ষায় থাকা একটি রত্ন হলো বান্দিপোরার বাংলাদেশ নামের গ্রামটি। পর্যটকদের জন্য হোম স্টেসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে এবং স্থানীয় সংস্কৃতিকে যেন তাঁরা জানতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করে এখানকার পর্যটনের উন্নয়নে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আশ্চর্য সুন্দর এই গ্রামের ঐতিহ্য ও রীতি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরতে কিছু উৎসব আয়োজনের পরিকল্পনা আছে আমাদের। এমন একটি পর্যটনকাঠামো তৈরি করতে চাই, যাতে পর্যটক ও স্থানীয় বাসিন্দা দুই পক্ষই উপকৃত হয়।’

সূত্র: এএনআই, টাইমস অব ইন্ডিয়া, রাইজিং কাশ্মীর, স্টিমিট ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনার দানা গিলে ফেলল শিশু, বাইরে যেতে নিষেধ মায়ের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৯
১০ হাজার ইউয়ান মূল্যের সোনার দানা গিলে ফেলেছে শিশু। ছবি: এআই নির্মিত প্রতীকী ছবি
১০ হাজার ইউয়ান মূল্যের সোনার দানা গিলে ফেলেছে শিশু। ছবি: এআই নির্মিত প্রতীকী ছবি

শিশুদের কয়েন মুখে দেওয়া বা গিলে ফেলা নতুন কিছু নয়। চোখের পলকে এই অঘটন অনেক শিশুই ঘটিয়ে ফেলে। পরে অনেককে দৌড়াতে হয় হাসপাতালে, আবার অনেকের স্বাভাবিক নিয়মে তা মলের সঙ্গে বের হয়ে আসে। এদিকে চীনের ১১ বছর বয়সী এক শিশু গিলে ফেলেছে সোনার দানা (গোল্ড বিন)। যার বাজারমূল্য ১০ হাজার ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ২৫ টাকা)।

দক্ষিণ-পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের কুনশানের বাসিন্দা জি গত ১৭ অক্টোবর ১০ গ্রামের একটি সোনার দানা কেনেন। কয়েক দিন পর ২২ অক্টোবর তাঁর ছেলে সোনার দানাটি হাতে পেয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ গিলে ফেলে।

এ সময় জি বারান্দায় কাপড় ধুচ্ছিলেন। তাঁর ছেলে আতঙ্কিত হয়ে ছুটে এসে জানায়, সে গোল্ড বিনটি গিলে ফেলেছে। তার ভয় হচ্ছে সে কি এখন মারা যাবে!

জিকে তাঁর ছেলে আরও জানায়, জিব দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করার সময় সে সোনার দানাটি গিলে ফেলেছে।

প্রথমে জি ভেবেছিলেন, ছেলে মজা করছে। পরে দেখেন সোনার দানাটি নেই। তখন তিনি চিন্তায় পড়ে যান।

জির তখন মনে পড়ে, তাঁর ভাগনিও একবার একটি কয়েন গিলে ফেলেছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেছিলেন, এটি গুরুতর কিছু নয়। মলের সঙ্গে বের হয়ে যাবে।

জি মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে থাকেন কী করা যায়। ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে তিনি দেখেন, সোনার জিনিসও একইভাবে মলের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে।

এরপর জি ছেলেকে চোখে চোখে রাখতে থাকেন হারানো এই মূল্যবান সম্পদ উদ্ধারের আশায়। ছেলেকে সতর্ক করতে থাকেন বাইরে মলত্যাগ না করে ঘরে নির্ধারিত স্থানে করতে। কারণ, মলের সঙ্গে সোনার দানাটি বের হয়ে আসবে। তা সত্ত্বেও টানা পাঁচ দিন ধরে দিনে দুবার পরীক্ষা করেও সোনাটি পাওয়া যায়নি।

পরে গত ২৬ অক্টোবর ছেলেকে কুনশান ফিফথ পিপলস হাসপাতালে নিয়ে যান জি। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা দেখেন, শিশুটির পেটে একটি বস্তু রয়েছে। তবে শিশুটির কোনো ব্যথা বা বমির লক্ষণ ছিল না।

পরে সেদিন সন্ধ্যায় সোনার দানাটি নিরাপদে বের হয়। তবে এটি কি স্বাভাবিকভাবে বের হয়েছে নাকি চিকিৎসার মাধ্যমে বের করা হয়েছে, তা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হ্যালোইনে সুপারহিরো সেজেছিলেন—সেদিনই একটি জীবন বাঁচালেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এই পোশাকেই একটি জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
এই পোশাকেই একটি জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

২০২০ সালের হ্যালোইন রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের গ্রিনভিলে এক অবিশ্বাস্য ঘটনার মুখোমুখি হন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। সেই রাতে স্ত্রীর বোনের বাড়িতে হ্যালোইন পার্টিতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। আর হ্যালোইনের বিশেষ পোশাক হিসেবে টেইলরের কাছে সেদিন বিকল্প ছিল মাত্র দুটো—তাঁকে হয় যিশুখ্রিষ্ট সাজতে হবে, নয়তো অ্যামাজন প্রাইম সিরিজ দ্য বয়েজ-এর কুখ্যাত সুপারহিরো ‘হোমল্যান্ডার’। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে শেষ পর্যন্ত সুপারহিরোর পোশাকটিই বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য গার্ডিয়ানে টেইলর লিখেছেন, সেদিন অন্য এক চরিত্র ‘স্টারলাইট’ সেজে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী চেলসি। তাঁদের দুই সন্তানও ছিল গাড়িতে—তাদের একজন সেজেছিল ‘আয়রন ম্যান’ আর অন্যজন ‘ড্রাগন’।

যাত্রাপথে হঠাৎ তাঁরা দেখতে পান একটি বাড়ি থেকে আগুনের শিখা বের হচ্ছে। টেইলর তখনই তাঁর স্ত্রী চেলসিকে বলেন, ‘গাড়ি থামাও, আর ৯১১-এ ফোন দাও।’ তিনি দৌড়ে চলে যান জ্বলন্ত বাড়ির দিকে।

বাড়িটির সামনে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁরা শুধু আগুনের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেই যাচ্ছিলেন, যেন কারওরই কিছু করার নেই। টেইলর তাঁদের কাছে জানতে চান—ভেতরে কেউ আছে কি না। উত্তর আসে, ‘জানি না।’

টেইলর অবশ্য দৌড়ে বাড়িটির আরও কাছে এগিয়ে যান এবং দরজা খুলে ডাক দেন, ‘কেউ আছেন?’ ভেতর থেকে ক্ষীণ একটি আওয়াজও ভেসে আসে। দেরি না করে তখনই দৌড়ে আগুনের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি।

ভেতরে প্রবল ধোঁয়া ও তাপ সহ্য করেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গিয়ে টেইলর দেখতে পান এক ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। সময় নষ্ট না করে তিনি প্রায় ছয় লম্বা ওই লোকটিকে বহন করে রাস্তায় নিয়ে আসেন।

লোকটির জ্ঞান ফিরে আসার পর অবশ্য পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসও আসে। কিন্তু টেইলর তখন নিজের অদ্ভুত বেশ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কোনো রকমে পালিয়ে আসেন।

তবে টেইলরের এই জীবন বাঁচানোর খবরটি আর চাপা থাকে না। এই ঘটনার পর সবাই তাঁকে ‘সুপারহিরো’ বলে সবাই ডাকতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ‘কার্নেগি মেডেল ফর হিরোইজম’ পান তিনি এবং ওহাইও ফায়ার সার্ভিস হল অব ফেমে তাঁর নাম ওঠে। পাঁচ বছর পরও তাঁর সন্তানেরা গর্ব করে বলে—‘আমার বাবা সত্যিকারের সুপারহিরো।’

এমনকি দ্য বয়েজ সিরিজে হোমল্যান্ডারের চরিত্রে অভিনয় করা অ্যান্টনি স্টার তাঁর গল্পটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘এর চেয়ে গর্বিত মুহূর্ত আর হতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘুরতে গিয়ে বৃদ্ধাকে রেখেই চলে গেল সহযাত্রীরা, পরে মিলল মৃতদেহ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান নারী। ছবি: সংগৃহীত
লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান নারী। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে বলা হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রবাল রিফ। প্রশান্ত মহাসাগরের কোরাল সাগরের এই প্রবাল রিফের কাছাকাছি এক দ্বীপে ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। ৮০ বছর বয়সী এক নারী পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে সেখানে।

গত শনিবার কেয়ার্নস শহর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল উত্তরে অবস্থিত লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইক করতে গিয়েছিলেন ওই নারী। কোরাল অ্যাডভেঞ্চারার নামের একটি ক্রুজ জাহাজে চড়ে আরও অনেকের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। ওই নারী পর্যটক হাইক করার সময় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে গিয়ে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূর্যাস্তের সময় জাহাজটি দ্বীপ ছেড়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর ক্রুরা বুঝতে পারেন, ওই নারী জাহাজে নেই। পরে জাহাজটি দ্বীপে ফিরে যায়। ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়।

পরদিন রোববার সকালে অনুসন্ধানকারীরা দ্বীপ থেকে ওই নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করেন।

অস্ট্রেলিয়ান মেরিটাইম সেফটি অথরিটি (এএমএসএ) জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে জাহাজটি ডারউইনে পৌঁছালে ক্রু সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।

এএমএসএর এক মুখপাত্র জানান, গত শনিবার স্থানীয় সময় রাত প্রায় ৯টার দিকে (জিএমটি অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৫ টা) জাহাজের ক্যাপ্টেন প্রথমবারের মতো ওই নারীর নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন।

সংস্থাটি বলেছে, তারা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে ঘটনাটি তদন্ত করবে এবং তারা বাণিজ্যিক জাহাজে যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।

কোরাল এক্সপেডিশনস-এর প্রধান নির্বাহী মার্ক ফাইফিল্ড জানিয়েছেন, সংস্থার কর্মীরা ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই ‘দুঃখজনক মৃত্যু’-র ঘটনায় পরিবারকে সহায়তা দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্ত এখনো চলছে, তবে যা ঘটেছে তার জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত এবং ওই নারীর পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছি।’

কুইন্সল্যান্ড পুলিশ জানিয়েছে, নারীর এই ‘হঠাৎ এবং সন্দেহাতীত’ মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

কুরিয়ার মেল পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, ওই প্রবীণ নারী দ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কুকস লুক-এ ওঠার জন্য দলের সঙ্গে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

৬০ দিনের ক্রুজে গিয়েছিলেন ওই নারী, যার টিকিটের দাম কয়েক হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার। কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কোরাল অ্যাডভেঞ্চারার জাহাজে সর্বোচ্চ ১২০ জন যাত্রী ও ৪৬ জন ক্রু সদস্য থাকতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের দুর্গম এলাকাগুলোতে যাওয়ার জন্য এটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই জাহাজে ছোট নৌকা বা ‘টেন্ডার’ রয়েছে যেগুলো দিয়ে দিনের বেলা যাত্রীদের ভ্রমণে ব্যবহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চিপসের প্যাকেটকে বন্দুক ভেবে কিশোরকে পুলিশে দিল এআই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ২৯
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি
চিপসের প্যাকেটকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বন্দুক হিসেবে সনাক্ত করেছে। ছবি: জেমিনি

চিপস খেতে খেতে রাস্তায় হাঁটছে যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোরের স্কুলপড়ুয়া কিশোর টাকি অ্যালেন। হঠাৎ আটটি পুলিশের গাড়ি এসে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে তাকে। গাড়ি থামিয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা তার দিকে বন্দুক তাক করে হাঁটু গেড়ে বসতে বললেন। এমন আকস্মিক ঘটনায় হতভম্ব ১৬ বছর বয়সী এই কিশোর বুঝে উঠতে পারছে না, কী তার ভুল। পুলিশের নির্দেশ মানার পর হাতে পড়ল হাতকড়া।

টাকি অ্যালেনকে কিশোর বয়সে এই অদ্ভুত অভিজ্ঞতা দিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। অ্যালেনের হাতে থাকা চিপসকে বন্দুক হিসেবে শনাক্ত করেছে এক এআই সিস্টেম!

স্থানীয় গণমাধ্যম ডব্লিউএমএআর-২ নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাকি অ্যালেন বলে, ‘হঠাৎ দেখি প্রায় আটটা পুলিশ কার এসে গেল। তারপর সবাই বন্দুক তাক করে আমাকে মাটিতে শুতে বলছে।’

অ্যালেন বলতে থাকে, ‘ফুটবল অনুশীলনের পর এক প্যাকেট ডোরিটোস চিপস খেয়ে খালি প্যাকেটটি পকেটে রেখে দিই। এর ২০ মিনিট পরই এই ঘটনা। একজন অফিসার আমাকে হাঁটু গেড়ে বসতে বলেন, তারপর আমাকে আটক করে হাতকড়া পরান।

তবে বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ বিবিসি নিউজের কাছে দাবি করে, অ্যালেনকে হাতকড়া পরানো হয়েছিল, গ্রেপ্তার করা হয়নি।

এক বিবৃতিতে তারা জানায়, কোনো হুমকি নেই নিশ্চিত হওয়ার পর বিষয়টি নিরাপদে সমাধান করা হয়।

এই ঘটনার পর থেকে ফুটবল অনুশীলন শেষে স্কুলের ভেতরে চলে যায় অ্যালেন। সে জানায়, বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়, বিশেষ করে চিপস খাওয়া বা কিছু পান করা।

বাল্টিমোর কাউন্টি পুলিশ বিভাগ জানায়, সেই মুহূর্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত ও আনুপাতিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাদের কর্মকর্তারা।

বিভাগটি আরও জানায়, এআই সতর্কবার্তাটি মানব পর্যালোচকদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁরা এতে কোনো হুমকি পাননি। এই বার্তা স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে পাঠানো হলেও তিনি এ তথ্যটি দেখেননি এবং স্কুলের নিরাপত্তা টিমকে জানান। তারা পুলিশকে ডাকে।

অভিভাবকদের উদ্দেশে এক চিঠিতে স্কুলের প্রিন্সিপাল কেট স্মিথ বলেন, স্কুলের নিরাপত্তা দল দ্রুত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এবং কোনো অস্ত্র না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর প্রাথমিক সতর্কতা বাতিল করে।

তিনি আরও জানান, ‘আমাদের স্কুল রিসোর্স অফিসারকে (এসআরও) বিষয়টি জানানো হলে তিনি অতিরিক্ত সহায়তার জন্য স্থানীয় থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পুলিশ কর্মকর্তারা স্কুলে এসে ওই শিক্ষার্থীকে তল্লাশি করেন এবং দ্রুত নিশ্চিত হন যে তার কাছে কোনো অস্ত্র নেই।’

এআই টুল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওমনিলার্ট এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে। তারা বিবিসি নিউজকে জানায়, ‘ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও সম্প্রদায়ের প্রতি আমাদের উদ্বেগ জানাতে চাই।’

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের সিস্টেম প্রথমে এমন কিছু শনাক্ত করে যা দেখতে আগ্নেয়াস্ত্রের মতো লাগছিল। ছবিটি পরে তাদের পর্যালোচনা দল যাচাই করে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেই তথ্য ও ছবি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুলের নিরাপত্তা দলের কাছে মূল্যায়নের জন্য পাঠানো হয়।

নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, তাদের সিস্টেমে ‘সমাধান হয়েছে’ বলে চিহ্নিত হওয়ার পরই এ বিষয়ে তাদের সম্পৃক্ততা শেষ হয়। তাদের সিস্টেম ‘যেভাবে ডিজাইন করা হয়েছিল, সেভাবেই কাজ করেছে।’

অ্যালেন মন্তব্য করেছে, ‘আমার মনে হয় না কোনো চিপসের প্যাকেটকে কখনো বন্দুক হিসেবে ভুল ধরা উচিত।’

এই ঘটনায় স্কুলগুলোতে এমন প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনার দাবি তুলেছে অনেকে। স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা ঘটনাটি নিয়ে আরও তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বাল্টিমোর কাউন্টির স্থানীয় কাউন্সিলর ইজি পাকোটা ফেসবুকে লেখেন, ‘আমি বাল্টিমোর কাউন্টি পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি তাদের এআই-চালিত অস্ত্র শনাক্তকরণ ব্যবস্থার প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করতে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত