Ajker Patrika

রাস্তা খুঁড়তে হবে না, পানির পাইপের ছিদ্র সারাবে ক্ষুদ্র রোবট

অনলাইন ডেস্ক
এই ‘পাইপবট’ নামের রোবটগুলো রাস্তা খোঁড়ার ঝামেলা ছাড়াই পাইপের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করতে পারে। ছবি: ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ড
এই ‘পাইপবট’ নামের রোবটগুলো রাস্তা খোঁড়ার ঝামেলা ছাড়াই পাইপের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করতে পারে। ছবি: ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ড

ভূগর্ভস্থ পানির পাইপে কোনো ছিদ্র বা ফাটল খুঁজে বের করা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। প্রায়ই এ কাজের জন্য রাস্তা খুঁড়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে হয়। তবে এ চিত্র বদলে দিতে পারে ক্ষুদ্রাকৃতির এক রোবট, যা নিজে থেকেই পাইপে ঢুকে ছিদ্র শনাক্ত করে মেরামত করতে পারে।

এ ধরনের রোবট তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষকেরা। এই ‘পাইপবট’ নামের রোবটগুলো রাস্তা খোঁড়ার ঝামেলা ছাড়াই পাইপের ভেতর দিয়ে চলাফেরা করতে এবং সমস্যার জায়গা শনাক্ত করে তা মেরামত করতে পারে।

শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মেকানিক্যাল, অ্যারোস্পেস অ্যান্ড সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছে বার্মিংহাম, ব্রিস্টল ও লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ও। প্রায় ছয় বছর আগে শুরু হওয়া এই গবেষণার লক্ষ্য ছিল—পানির পাইপের অবকাঠামো ব্যবস্থাপনায় বিপ্লব ঘটানো এবং পাইপের ক্ষতির মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করা।

প্রকল্প পরিচালক ও শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকুস্টিকস বিভাগের অধ্যাপক কিরিল হোরোশেঙ্কভ বলেন, ‘ফুটো হওয়া পাইপ এখন শুধু যুক্তরাজ্যে নয়, বরং সারা বিশ্বের পানি খাতের জন্য একটি বড় সমস্যা। পুরোনো অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জের কারণে এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠেছে।’

যুক্তরাজ্যের পানির নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার, যার অনেকটাই ভিক্টোরিয়ান যুগে নির্মিত। ডিসকভার ওয়াটারের তথ্যমতে, প্রতিদিন এই নেটওয়ার্ক থেকে তিন বিলিয়নেরও বেশি লিটার পানি অপচয় হচ্ছে, যা প্রায় ১ হাজার ২০০টি অলিম্পিক সুইমিং পুলের সমান।

মানুষের মাধ্যমে পাইপের ফাটল বা ছিদ্র শনাক্ত করার পদ্ধতি সময় সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং প্রায়শই রাস্তা বন্ধ করে কাজ করতে হয়। তবে মাত্র ৪০ মিলিমিটার চওড়া পাইপবট রোবট সহজেই পাইপের ভেতর চলাফেরা করতে পারে। এতে সংযুক্ত ছোট্ট অ্যাকুস্টিক সেন্সর ও ক্যামেরার মাধ্যমে পাইপের ক্ষুদ্রতম ত্রুটিও সহজেই ধরা যায়।

রোবটটিতে অল-টেরেইন লেগস বা সব ধরনের ভূমিতে চলার উপযোগী পা রয়েছে। ফলে এটি সংর্কীণ ও বাঁকানো পাইপেও চলাচল করতে পারবে। একসঙ্গে একাধিক পাইপবট ব্যবহার করে পুরো একটি এলাকা পরীক্ষা করা সম্ভব। ফায়ার হাইড্রান্টের মাধ্যমে রোবটগুলো পানির পাইপে প্রবেশ করানো হয় এবং সেগুলো লাইভ ডেটা বা তাৎক্ষণিক তথ্য একজন প্রকৌশলীর কাছে পাঠাতে পারে।

অধ্যাপক হোরোশেঙ্কভ বলেন, ‘এই রোবটগুলো মানবসম্পদের ওপর চাপ কমাবে এবং প্রতি বছর রাস্তার কাজ ও সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার কারণে যুক্তরাজ্য অর্থনীতিতে যে চার বিলিয়ন পাউন্ড ক্ষতি হয়, তার একটি বড় অংশ সাশ্রয় করতে সাহায্য করবে।’

শুধু পানির পাইপ নয়, এই রোবটগুলো সুয়ারেজ লাইন, গ্যাসের পাইপ এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ও কাজ করতে পারবে, যেখানে মানুষের পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব নয়। বর্তমানে পাইপবট প্রকল্পের দলটি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন পানি সংস্থা ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একাধিক প্রকল্পে কাজ করছে।

এদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হলো ‘পাইপবট পেট্রোল’। এটি এমন একটি স্বয়ংক্রিয় সুয়োরেজ রোবট তৈরি করছে, যা স্থায়ীভাবে নর্দমায় অবস্থান করবে এবং নিয়মিত পরিদর্শন চালাবে।

শেফিল্ডের গবেষক দলটি ‘পাইপঅন’ নামের একটি প্রকল্পেও কাজ করছে, যার লক্ষ্য স্বয়ংক্রিয় স্যুয়ার পরিদর্শন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উন্নত রোবোটিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তৈরি। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

অধ্যাপক হোরোশেঙ্কভ বলেন, ‘পাইপবট প্রকল্প বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্প খাতের মধ্যে সহযোগিতার একটি দারুণ উদাহরণ। আমাদের গবেষণায় প্রযুক্তিটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এখন শিল্প খাতের অংশীদারেরা এটি ব্যবহারের উপযোগী করতে, পরীক্ষা করতে এবং বাস্তবে প্রয়োগে সাহায্য করছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত