Ajker Patrika

হাসপাতালে অসুস্থ শিশুদের মুখে হাসি ফোটায় রোবট বন্ধু ‘রবিন’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রবিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর একটি থেরাপিউটিক রোবট। ছবি: জাপান টুডে
রবিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর একটি থেরাপিউটিক রোবট। ছবি: জাপান টুডে

লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ছয় বছরের ছেলে লুকার সঙ্গে হাসপাতালে হাঁটছিলেন মা মেগান ব্রাজিল-শিহান। করিডরে হঠাৎ তাদের সামনে এসে দাঁড়ায় চার ফুট লম্বা এক রোবট—রবিন। উচ্চ স্বরে শিশুকণ্ঠে রোবটটি বলে উঠল, ‘লুকা, কেমন আছ? অনেক দিন দেখা হয়নি!’

মাত্র কয়েক দিন আগে ভর্তি হওয়ার পর একবারই রবিনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল লুকার। তবে এবার রবিন তার নাম মনে রেখেছে দেখে খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে সে।

যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ইউমাস মেমোরিয়াল চিলড্রেনস মেডিকেল সেন্টারে এই রোবটের দেখা পাওয়া যায়। রবিন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর একটি থেরাপিউটিক রোবট। এটি সাত বছরের মেয়েশিশুর মতো আচরণ করতে প্রোগ্রাম করা হয়েছে। মূলত হাসপাতালের শিশু বিভাগ এবং নার্সিং হোমগুলোতে মানসিক সঙ্গী হিসেবে এটি কাজ করছে। পাশাপাশি হাসপাতালের জনবলসংকটও কিছুটা কাটাতে সহায়তা করছে।

রোবটটি তৈরি করেছে এক্সপার টেকনোলজিস নামের প্রতিষ্ঠান। এর প্রধান নির্বাহী করেন খাচিকিয়ান বলেন, ‘নার্স ও চিকিৎসকেরা অনেক চাপের মধ্যে থাকেন, সব সময় রোগীদের সঙ্গে সেভাবে আবেগী সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব হয় না। রবিন সেই অভাব পূরণ করে।’

যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ বছর আগে চালু হওয়া রবিন এখন ক্যালিফোর্নিয়া, ম্যাসাচুসেটস, নিউইয়র্ক ও ইন্ডিয়ানার ৩০টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে কাজ করছে।

রবিন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। বাকি কাজ সে দূরবর্তী নিয়ন্ত্রকের সাহায্যে করে থাকে। সঙ্গে থাকেন চিকিৎসকেরাও। প্রতিটি মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হয়, যা হিপা (HIPAA) বিধিনিষেধ মেনেই করা হয়।

খাচিকিয়ান বলেন, ‘আমরা চাই, রবিন একদিন সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারবে। এমন এক আবেগ-সজীব বুদ্ধিমত্তা তৈরি করতে চাই, যেমনটা আমরা ওয়াল-ই সিনেমায় দেখেছি।’

রবিনের শরীর সাদা, ত্রিভুজাকৃতির এবং ডিজাইন এমনভাবে করা হয়েছে যেন শিশুরা সহজেই জড়িয়ে ধরতে পারে। এক কিশোরের কক্ষে ঢুকে রোবটটি তার পছন্দের গান বাজাতে থাকে আর সেই গানের সঙ্গে কিশোরটি নাচতেও থাকে। করিডরে এক শিশুকে তার মা কোলে নিয়ে হাঁটছিলেন, তখন রবিন নানা রকম মজার চশমা ও লাল নাক পরে শিশুটিকে হাসায়। আরেক রোগীর সঙ্গে রবিন খেলল সোজা ‘টিক-ট্যাক-টো’ গেম।

স্পিচ ল্যাংগুয়েজ প্যাথলজিস্ট সামান্থা দা সিলভা বলেন, ‘রবিন শুধু নাম মনে রাখে না, কার কী গান পছন্দ তা-ও মনে রাখে। ওকে দেখলেই শিশুরা হাসতে শুরু করে।’

রোগীর আবেগ অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেয় রবিন। কেউ হাসলে রবিনও হাসে, কেউ কষ্টের কথা বললে তার মুখে ভেসে ওঠে দুঃখ বা সহানুভূতির ছাপ।

নার্সিং হোমে রবিন ডিমেনশিয়ায় (স্মৃতিভ্রংশ রোগে) আক্রান্ত বৃদ্ধদের সঙ্গে মেমোরি বা মনে রাখার গেম খেলে, দুঃসহ দিনে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন করায় এবং নাতনির মতো সঙ্গ দেয়।

লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি নার্সিং হোমে এক নারীর প্যানিক অ্যাটাক হলে তিনি সরাসরি রবিনকে ডাকার অনুরোধ জানান। রবিন তখন তাঁর প্রিয় শিল্পী এলভিস প্রেসলির গান ও প্রিয় প্রাণী কুকুরের ভিডিও দেখিয়ে তাঁকে শান্ত করে।

আগামী ১১ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৮৬ হাজার চিকিৎসকের ঘাটতির পূর্বাভাস দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকান মেডিকেল কলেজেস। এই প্রেক্ষাপটে রবিন ভবিষ্যতে রোগীর স্বাস্থ্যের কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা করতে পারবে এবং সেই তথ্য চিকিৎসকদের পাঠাতে পারবে বলে আশা করছেন তিনি। পরবর্তী ধাপে বৃদ্ধ রোগীদের জামা বদলানো বা টয়লেট ব্যবহারে সহায়তা করতেও সক্ষম করে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।

রবিনের জন্ম খাচিকিয়ানের পিএইচডি করার সময়। সিঙ্গেল মায়ের কাছে বড় হওয়া খাচিকিয়ান ছোটবেলায় একাকিত্বে ভুগতেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এমন একটি বন্ধু-সদৃশ রোবট তৈরির ভাবনা আসে তাঁর মাথায়।

প্রথমে বিভিন্ন খাতে এটি পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়। তবে এক বিনিয়োগকারী বলেন, শিশুদের হাসপাতালেই এর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তখনই শুরু হয় প্রকল্পের দিক পরিবর্তন।

২০১৯ সালে আর্মেনিয়ার এক শিশু হাসপাতালে প্রথম পরীক্ষায় সফল হয় রবিন। ২০২০ সালে ইউসিএলএ ম্যাটেল চিলড্রেনস হাসপাতালে রবিনের পাইলট প্রোগ্রাম শুরু হয়।

তথ্যসূত্র: জাপান টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত