Ajker Patrika

২০২৫ সালে উদ্ভাবনের শীর্ষে চীন

দীর্ঘ পথচলার ফল এ সফলতা

মোস্তাফিজ মিঠু, ঢাকা
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০: ১৯
দীর্ঘ পথচলার ফল এ সফলতা

প্রযুক্তি দুনিয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই আলোচনা শুরু হয় চীনের উদ্ভাবন দিয়ে। চীন এরই মধ্যে এমন প্রযুক্তি নিত্যদিনের কাজে ব্যবহার করছে, যা অনেক দেশের জন্য বিলাসিতা। সে প্রমাণ পাওয়া গেল জাতিসংঘের ডব্লিউআইপিও ২০২৫ পেটেন্ট কো-অপারেশন ট্রিটি (পিসিটি) ইয়ারলি রিভিউতে। সেখানে প্রকাশ করা হয়, ২০২৫ সালে কোন দেশগুলো উদ্ভাবনে শীর্ষে রয়েছে। এ তালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। এরপর ধারাবাহিকভাবে ৯টি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, ভারত ও নেদারল্যান্ডস।

চীনের আজকের এই অবস্থানের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের পথচলা। প্রযুক্তি খাতের পথচলা ১৯৭৮ সালের পর থেকে শুরু হলেও, এর ভিত্তি গড়ে ওঠে ‘মাও যুগে’। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৫ সালের মধ্যে চীনে প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। সরকার নতুন গবেষণাগার তৈরি করে, বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দেয় এবং মৌলিক প্রযুক্তি উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়।

ধারাবাহিক যাত্রা

১৯৮৬ সালে চীনে ৮৬৩ পরিকল্পনা শুরু হয়। এর লক্ষ্য ছিল উন্নত প্রযুক্তি, যেমন বায়োটেকনোলজি ও মহাকাশ গবেষণায় মনোযোগ দেওয়া। এ প্রোগ্রামটি চীনের প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নব্বইয়ের দশকে চীনে কম্পিউটার শিল্পের দ্রুত বিকাশ হয়। সেখানে তাদের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি ৪০ শতাংশের বেশি ছিল। এ সময়ে চীন কম্পিউটার হার্ডওয়্যার উৎপাদন ও সফটওয়্যার উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করে। ২০০০ সালের পর চীন ডিজিটাল প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ব্যাপক বিনিয়োগ করে। চীনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এটি ই-কমার্স ও ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের বিকাশে সাহায্য করে। এ ছাড়া, চীন উচ্চগতির ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্থাপন ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক বিনিয়োগে সফল হয়। বর্তমানে চীন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিক, সেমিকন্ডাক্টর ও নবায়নযোগ্য শক্তির মতো উন্নত প্রযুক্তি খাতে দারুণ উন্নতি করেছে। ফলে পুরো বিশ্বের চোখ এখন চীনের দিকে।

এই উন্নয়নে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা

চীনের উদ্ভাবনের যাত্রা শুধু সরকারের পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে হয়নি। এখানে অনেকটা ভূমিকা রেখেছে সেখানকার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিযোগিতার বাজারে এখন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে সেসব প্রতিষ্ঠান।

  • আলিবাবা: আলিবাবা শুধু একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নয়। এটি চীনের ডিজিটাল অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মূল চালিকাশক্তি। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইন মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে দেশজুড়ে ছোট ও বড় ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এ ছাড়া আলিবাবার ক্লাউড কম্পিউটিং সেবা চীনের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থার ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। ফিনটেক খাতে আলিপে ব্যবহারকারীদের জন্য সহজ ও নিরাপদ ডিজিটাল পেমেন্ট সুবিধা এনে দিয়েছে। এটি চীনের ডিজিটাল অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে উন্নত করেছে।
  • টেনসেন্ট: টেনসেন্ট চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গেমিং এবং ডিজিটাল পেমেন্ট খাতে একটি জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। তাদের মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাট, আন্তর্জাতিকভাবে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি টেনসেন্ট পেমেন্ট সিস্টেম ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনকে সহজ করেছে।
  • হুয়াওয়ে: হুয়াওয়ে এখন এমন অনেক কিছু করছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে পর্যন্ত তাক লেগে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী টেলিকমিউনিকেশন খাতে নেতৃত্বের প্রতীক এ প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানের নতুন উদ্ভাবন ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ও রাউটার, সুইচ ও টেলিকম ডিভাইস। আর তাদের নতুন ল্যাপটপ মেটবুক ফোল্ড উল্টিমেট ২০২৫ সালে সারা বিশ্বে অন্যতম আলোচিত উদ্ভাবন।
  • বিওয়াইডি ও এনআইও: ব্যবসার দিকে থেকে এখন টেসলার চেয়ে এগিয়ে চীনে ইলেকট্রিক গাড়ি প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি। এ ছাড়া এনআইও চীনের বৈদ্যুতিক যানবাহন শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। ইলেকট্রিক গাড়ি ও ব্যাটারি প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনে বৈশ্বিক বাজারে চীনের অবস্থান এখন বেশ দৃঢ়।
  • ডিজিআই: ড্রোন ও অটোমেশন প্রযুক্তিতে বিশ্বে অন্যতম জনপ্রিয়তা এই প্রতিষ্ঠানের। তাদের ড্রোন শুধু বিনোদন বা ছবি তোলার জন্য নয়, কৃষি, নিরাপত্তা, নির্মাণ এবং শিল্প গবেষণায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের উদ্ভাবন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চীনের প্রযুক্তি প্রতিভাকে তুলে ধরেছে।

ChatGPT-Image-Sep-29,-2025,-05_24_44-PM

এআই খাতে পদক্ষেপ

চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই খাতকে এগিয়ে নিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার ২০১৭ সালে জাতীয় এআই উন্নয়ন পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে চীনকে বিশ্বের প্রধান এআই শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। এর আওতায় সরকারি তহবিল, গবেষণা কেন্দ্র এবং উদ্ভাবনী স্টার্টআপগুলোর জন্য প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলক এআই শিক্ষা

চীনে এ বছর সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এআই শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বেইজিংয়ের শিক্ষা কমিশনের নির্দেশনায় প্রতি শিক্ষাবর্ষে অন্তত ৮ ঘণ্টা এআই শিক্ষা দিতে হবে। শিশুদের জন্য হাতে-কলমে শেখার মাধ্যমে এআইয়ের মৌলিক ধারণা, নৈতিকতা, চ্যাটবট এবং বাস্তব প্রয়োগ শেখানো হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের এআইয়ের ব্যবহারিক ও উদ্ভাবনী দিক সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হবে। এ পদক্ষেপটি চীনের বৃহত্তর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ। এর লক্ষ্য ২০৩৫ সালের মধ্যে এআইকে পাঠ্যপুস্তক, পরীক্ষা এবং শ্রেণিকক্ষে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করা।

চীনের এ প্রযুক্তি-যাত্রা সুসংগঠিত পরিকল্পনা এবং দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের ফল। মাও যুগ থেকে শুরু করে ৮৬৩ পরিকল্পনা, বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান, বৈদ্যুতিক গাড়ি, ড্রোন, ক্লাউড কম্পিউটিং এবং এআই শিক্ষা—সব মিলিয়ে চীনকে বিশ্বের প্রযুক্তির অগ্রণী দেশ হিসেবে তৈরি করেছে। সব মিলিয়ে, চীনের এই ধারাবাহিক উদ্যোগ দেশকে শক্তিশালী প্রযুক্তি নেতৃত্বের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: চায়না ডেইলি, মিডিয়াম, টেক রাডার

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গাজায় মার্কিন শান্তি প্রস্তাবে আরব-ইউরোপসহ সবাই একমত, কী আছে ট্রাম্পের ২০ দফায়

ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে হামলা, ছুরিকাঘাতে জামায়াত নেতা নিহত

গান গাওয়া ও শোনা নিষিদ্ধের দাবিও উঠবে

পুলিশের জালে জালিয়াতির মামলায় ফাঁসলেন ‘সম্পদের দেবী’, উদ্ধার ৬১ হাজার বিটকয়েন

এখন ভারতের অন্যতম বিশেষত্ব হলো ভুয়া খবর: ড. ইউনূস

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত