Ajker Patrika

ওয়েবক্যাম হ্যাকড কি না বুঝবেন কীভাবে, নিরাপদ থাকার ৫ উপায়

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫: ৩৪
কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যেতে পারে আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে কি না। ছবি: মেক ইউজ অব
কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যেতে পারে আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে কি না। ছবি: মেক ইউজ অব

পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, অফিসের কাজে বা অনলাইন ক্লাসের জন্য ওয়েবক্যাম একটি দরকারি প্রযুক্তি। তবে এই ছোট্ট ডিভাইসটিই অনেক সময় আমাদের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায়। হ্যাকাররা আপনার ওপর নজর রাখতে ওয়েবক্যাম ব্যবহার করতে পারে। আর তখনই গোপনীয়তার লঙ্ঘন ঘটে, যা ব্যক্তিগত জীবনকে বিপদে ফেলতে পারে। তাই, নিজের ওয়েবক্যাম হ্যাক হয়েছে কি না, তা বোঝা জরুরি।

কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যেতে পারে আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে কি না। এসব লক্ষণ হলো—

১. আপনার পিসিতে অপরিচিত ফাইল

বেশির ভাগ হ্যাকার তাদের অস্তিত্ব লুকানোর জন্য পিসির ড্রাইভ থেকে নিজেদের হ্যাকিংয়ে সব চিহ্ন মুছে ফেলে। তবে তারা মুছে ফেলার আগে আপনি তাদের ধরে ফেলতে পারেন। এমন ক্ষেত্রে প্রথমে আপনার ওয়েবক্যামের ডিফল্ট স্টোরেজ লোকেশন এবং পিসির রিসাইকেল বিন চেক করুন, কারণ সেখানেই কিছু ভিডিও বা ছবি থাকতে পারে। যদি এসব ফোল্ডারে এমন ভিডিও বা ছবি থাকে, যেগুলো আপনি রেকর্ড করেননি, তখন বুঝতে পারবেন ওয়েবক্যাম হ্যাক হয়েছে। আর যদি পিসি বা ল্যাপটপের একমাত্র ব্যবহারকারী কেবল আপনিই হন, তাহলে আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। তবে নিশ্চিত হওয়ার আগে অবশ্যই ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপগুলোর সেটিংসে স্বয়ংক্রিয় রেকর্ডিং ফিচার সক্রিয় আছে কি না, তা পরীক্ষা করে নিন।

২. ওয়েবক্যামের লাইট মাঝে মাঝে নিজে থেকে জ্বলে ওঠে

বেশির ভাগ ওয়েবক্যামের পাশে ছোট একটি ইন্ডিকেটর লাইট থাকে, যা ক্যামেরা চালু থাকলে জ্বলে ওঠে। তবে কিছু কিছু পিসিতে এই লাইট না-ও থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনের নিচে ট্রে আইকন হিসেবে ক্যামেরা ব্যবহারের নোটিফিকেশন দেখা যায়।

যদি কখনো এমন দেখা যায় যে আপনি ওয়েবক্যাম ব্যবহার করছেন না অথচ ক্যামেরার লাইট জ্বলে উঠছে বা কোনো নোটিফিকেশন আসছে, তাহলে এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, আপনার ক্যামেরা ব্যবহার হচ্ছে। এ অবস্থায় ধরে নেওয়া যায়, কোনো হ্যাকার টরজান বা অন্য কোনো রিমোট অ্যাকসেস ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে আপনার ওয়েবক্যামের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

তবে ‘হ্যাক হয়েছে’ বলার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন এটা মিথ্যা অ্যালার্ম নয়। অনেক সময় কোনো ব্রাউজার এক্সটেনশন বা ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকা ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপের কারণেও ক্যামেরার আলো জ্বলে উঠতে পারে।

এটি যাচাই করতে চাইলে একে একে ব্রাউজারের প্রতিটি এক্সটেনশন বন্ধ করুন এবং প্রতিবার ক্যামেরার লাইট দেখুন। যেটা বন্ধ করলে আলো নিভে যায়, সেই এক্সটেনশনই দায়ী ক্যামেরার ইন্ডিকেটর লাইটের জন্য।

৩. কম্পিউটারের নিরাপত্তা সেটিংস পরিবর্তন করা হয়েছে

হ্যাকারদের তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে হলে আপনার কম্পিউটারকে কম নিরাপদ করে। এ জন্য তারা ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে নিরাপত্তা সেটিংসে পরিবর্তন আনে। এটি ঘটেছে কি না, তা যাচাই করতে প্রথমে আপনার ওয়েবক্যাম অ্যাপটি খুলুন এবং সিকিউরিটি (নিরাপত্তা) সেটিংসে যান।

সেখানে গিয়ে খেয়াল করুন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন হয়েছে কি না, কোনো অচেনা বা সন্দেহজনক অ্যাপস আছে কি না অথবা এমন কোনো অ্যাপস আছে কি না, যেগুলো আপনার ওয়েবক্যামে অ্যাকসেস পাচ্ছে অথচ আপনি জানেন না। এ ধরনের অ্যাপ দিয়েই হ্যাকাররা ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি এমন কোনো নিরাপত্তা নোটিফিকেশন বন্ধ আছে কি না, যা আসলে চালু থাকার কথা নয়।

শুধু ওয়েবক্যাম অ্যাপই নয়, উইন্ডোজ ও অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারেও একই ধরনের পরীক্ষা করুন। কারণ এগুলোই সেই মূল নিরাপত্তা স্তর, যেখানে হ্যাকাররা ফাঁকফোকর খোঁজে।

৪. হ্যাকারদের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত বার্তা পাওয়া

হ্যাকারদের মধ্যে একটি সাধারণ প্রতারণার কৌশল হলো—আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাক করা হয়েছে বলে দাবি করে আপনাকে ভয় দেখানো এবং অর্থ আদায়ের চেষ্টা করা। এ ধরনের বার্তাগুলোতে হ্যাকাররা প্রায়ই আপনার চেহারা বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য উল্লেখ করে, যাতে আপনি তাদের দাবি বিশ্বাস করেন।

এই পরিস্থিতিতে তারা সাধারণত অর্থ বা বিটকয়েন দাবি করে এবং কীভাবে, কোথায় সেই অর্থ পাঠাতে হবে তা বার্তায় জানিয়ে দেয়।

এ ধরনের বার্তা পেলে প্রথমে যা মনে রাখা দরকার তা হলো—আপনার ওয়েবক্যামের ওপর হ্যাকার আসলেই কতটা নিয়ন্ত্রণ রাখে সেটা নিশ্চিত হতে হবে। হতে পারে তারা আংশিক বা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, আবার হতে পারে তারা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছে। অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকা আপনার ছবিই তারা ব্যবহার করে আপনাকে বোকা বানাতে চেষ্টা করে।

তাই ভয় না পেয়ে বার্তাগুলো বিশ্লেষণ করে দেখুন—এগুলো বিশ্বাসযোগ্য কি না এবং সম্ভাব্য প্রমাণ আছে কি না। সন্দেহজনক কিছু মনে হলে অবশ্যই সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন।

এ কারণে কোনো অবস্থাতেই হ্যাকারদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বা অর্থ প্রদান করা উচিত নয়। অর্থ দেওয়া মানে তাদের অপরাধে উৎসাহ দেওয়া এবং নিজেকে আরও বড় বিপদে ফেলা। এর পরিবর্তে, যদি আপনি মনে করেন যে হ্যাকারদের হুমকি সত্যি হতে পারে, তাহলে দ্রুত কোনো সাইবার সিকিউরিটি বিশেষজ্ঞ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরামর্শ নিন।

৫. ওয়েবক্যাম নিজে থেকেই বারবার চালু হয়ে যাচ্ছে

আপনার ওয়েবক্যাম আসলেই হ্যাক হয়েছে কি না, তা জানার আরেকটি উপায় হলো—ওয়েবক্যামটি উইন্ডোজ সেটিংস থেকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিন। তারপর কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করুন—ক্যামেরা নিজের থেকে আবার চালু হচ্ছে কি না। যদি এমন ঘটে, তবে ধরে নেওয়া যায়, কোনো হ্যাকার দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।

ওয়েবক্যাম বন্ধ করতে উইন্ডোজের সেটিংসে প্রবেশ করুন। এরপর ‘ব্লুটুথ অ্যান্ড ডিভাইসেস’ অপশনে ট্যাপ করুন। এখন ‘ক্যামেরা’ অপশনটি বাছাই করে নিন। এবার ‘ইন্টিগ্রেটেড ওয়েবক্যাম’-এর ডান পাশে থাকা ‘ডিসঅ্যাবল’ বাটনে ক্লিক করুন।

তবে মনে রাখতে হবে, এই উপায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে না যে আপনার ওয়েবক্যাম হ্যাক হয়েছে। কারণ, অনেক সময় উইন্ডোজ আপডেট বা এমন কিছু অ্যাপও আছে, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যামেরা চালু করতে পারে। তাই পরীক্ষার সময় এসব বিষয় মনে রাখা জরুরি।

ওয়েবক্যাম হ্যাকিং থেকে বাঁচার ৫ উপায়

১. ফায়ারওয়াল সক্রিয় করুন

ফায়ারওয়াল আপনার নেটওয়ার্ক ট্রাফিক পর্যবেক্ষণ করে এবং সন্দেহজনক সংযোগ ব্লক করে। উইন্ডোজে ফায়ারওয়াল সক্রিয় করতে প্রথমেই কন্ট্রোল প্যানেলে প্রবেশ করুন। এরপর ‘সিস্টেম অ্যান্ড সিকিউরিটি’ অপশনে যান। এবার ‘উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ফায়ারওয়াল’ চালু করুন।

ম্যাকওয়েসের নিরাপত্তাব্যবস্থা চালু করতে প্রথমে ‘সিস্টেম প্রিফারেন্সেস’ অপশনে যান। এরপর ‘সিকিউরিটি অ্যান্ড প্রাইভেসি’ অপশন খুঁজে বের করুন। সবশেষে ফায়ারওয়াল চালু করে দিন।

২. ভালো অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন

একটি শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাস ম্যালওয়্যার, স্পাইওয়্যার ও ভাইরাস থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করে। ভালো অ্যান্টিভাইরাস আপনার কম্পিউটারে অতিরিক্ত সুরক্ষা দেয়—ম্যালওয়্যার, ট্র্যাকার ও ক্ষতিকর ওয়েবসাইট ব্লক করে।

৩. ফিশিং প্রতারণা এড়িয়ে চলুন

অজানা ইমেইল, লিংক বা ফাইল ডাউনলোড করবেন না। হ্যাকাররা সাপোর্ট এজেন্ট (সাহায্যকারী হিসেবে) সেজে আপনাকে রিমোট অ্যাকসেস সফটওয়্যার ইনস্টল করাতে পারে, যার মাধ্যমে তারা ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে।

৪. পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করলে সতর্ক থাকুন

পাবলিক জায়গায় বিনা মূল্যের ওয়াইফাই খুব সহজেই হ্যাক করা যায়। ভিপিএন ব্যবহার করলে আপনার ডেটা এনক্রিপ্টেড থাকবে এবং হ্যাকারদের নজরদারি থেকে নিরাপদ থাকবেন।

৫. ওয়েবক্যাম ঢেকে রাখুন

সবচেয়ে সহজ ও নির্ভরযোগ্য উপায় ক্যামেরায় টেপ বা স্টিকার লাগিয়ে রাখা। এখন বাজারে আক স্লাইডিং ওয়েবক্যাম কভারও পাওয়া যায়, সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।

তথ্যসূত্র: পিসিম্যাগ ও নর্ড ভিপিএন

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত