বয়স ‘৫৯’ যেন তাঁর কাছে শুধুই সংখ্যা! তারুণ্যের আভা চোখেমুখে, ভারী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নায়কোচিত চলনবলন। এই এশিয়া কাপেও তিনি ছিলেন ধারাভাষ্যকারের ভূমিকায়। দুবাইয়ের হোটেল তাজে ওয়াসিম আকরাম সময় দিলেন ভারত-পাকিস্তান ফাইনালের সকালে। আজকের পত্রিকার হেড অব স্পোর্টস রানা আব্বাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সর্বকালের অন্যতম সেরা ফাস্ট বোলার আকরামের আলাপচারিতা শুধু ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথে সীমাবদ্ধ থাকেনি, সেখানে এল বাংলাদেশও।
রানা আব্বাস, দুবাই থেকে
প্রশ্ন: নব্বইয়ের দশকে ভারত-পাকিস্তানের লড়াইটা ছিল অন্য রকম। এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ কমে গেছে। আপনি নিজেই বলছিলেন, ফাইনালে পাকিস্তান আন্ডারডগ। একজন পাকিস্তানি কিংবদন্তি হয়ে নিজের দলকে আন্ডারডগ হিসেবে ভাবতে কতটা খারাপ লাগে?
ওয়াসিম আকরাম: ফ্যাক্ট লুকাতে পারবেন না। ভারত দারুণ খেলছে। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে তারা হেরেছে। আমি বলতে চাচ্ছি, তারা বেশ ধারাবাহিক। ক্রিকেটার তৈরি করছে। এমনকি তাদের ‘এ’ দল দারুণ। ‘সি’ দলও দারুণ। বিসিসিআইকে কৃতিত্ব দিতে হবে, যেভাবে তারা আইপিএল থেকে টাকা আয় করছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো ভালো। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তরুণ ক্রিকেটাররা ভালোমতো গড়ে ওঠার সুযোগ পায়। টি-টোয়েন্টিতে টেকনিক ভালো না থাকলে ভালো ক্রিকেটার পাবেন না। তাই লাল বল থেকে সাদা বলের ক্রিকেটে এলে খেলার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। তবে সাদা বল থেকে লাল বলের ভালো ক্রিকেটার হওয়াটা প্রায় অসম্ভব।
প্রশ্ন: এখানেই কি ভারতের সঙ্গে উপমহাদেশের বাকিদের পার্থক্য তৈরি হচ্ছে?
আকরাম: সম্ভবত এটাই। তারা ক্রিকেটারের ওপর ফোকাস করে। (শুবমান) গিলের কথাই কল্পনা করুন। সে টি-টোয়েন্টি দারুণ খেলে। সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজে দেখুন তার টেকনিক। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী তার খেলার ধরন বদলে যায়। কোচ তাকে বলে দেয় না। সে (গিল) নিজের কাজ নিজে করে। আমাদের ক্রিকেটারদের এগুলো শিখতে হবে। তাদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস করতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। বড় মঞ্চে ঘাবড়ানো যাবে না।
প্রশ্ন: বড় মঞ্চে বাংলাদেশে বড় কোনো সাফল্য নেই। বড় মঞ্চে কেন খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ?
আকরাম: এখানে ক্রিকেট বোর্ডের করার কিছু নেই। বাংলাদেশের মানুষেরও এখানে কিছু করার নেই। এটা করতে হবে ক্রিকেটারদের। তাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী সচেতন থাকতে হবে। সেটা তো কোচ আপনাকে শেখাতে পারবে না। আপনার নিজেকেই শিখতে হবে। এই অবস্থায় আমি এভাবে ব্যাটিং করব। এই অবস্থায় আমাকে এভাবে বোলিং করতে হবে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে একটা ইতিবাচক ব্যাপার খুঁজে পাওয়া গেছে এবং সেটা হলো তাদের অসাধারণ ফিল্ডিং। দুই-তিনটা ক্যাচ মিস বাদ দিলে সব ঠিক আছে। এমনটা হতেই পারে। নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যদি প্রস্তাব দেয়, কাজ করতে আগ্রহী হবেন?
আকরাম: আমি কিছুদিনের জন্য কাজ করতে পারি। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করব কি না সেটা এখন বলা কঠিন। বাংলাদেশ দলে মুশতাক আহমেদের (স্পিন পরামর্শক) মতো একজন খুব ভালো কোচ আছেন। ফিল সিমন্স, শন টেইট আছেন। তাঁরা ভালো কাজ করছেন। তাসকিন আহমেদের কথা যদি বলি; চার-পাঁচ বছর ধরে তার বোলিং দেখে আমি খুবই মুগ্ধ। আমি ভেবেছিলাম সে সম্ভবত পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে (লিটন দাস ছিটকে যাওয়ায়) অধিনায়ক হবে। আমাকে বলা হয়েছে যে তাসকিন খুব একটা সুশৃঙ্খল নয়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ফাস্ট বোলাররা সুশৃঙ্খল হয় না। কারণ, তারা ফাস্ট বোলার। তাদের ভেতরে আগুন আছে। তারা ভালো নেতা হতে পারে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অধিনায়কের মধ্যে কাকে আপনার বেশি ভালো লেগেছে?
আকরাম: অবশ্যই মাশরাফি। আরেকজন উইকেটরক্ষক—মুশফিকুর রহিম। মাশরাফি রাজনীতিতে জড়িয়ে গেল। সাকিব (আল হাসান) কিছুদিনের জন্য ছিল। এখন লিটন দাস। আমি গত এক বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট সেভাবে দেখিনি। লিটন দাসের অধীনে দল খুব ভালো খেলছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রান তাড়ার সময় বাংলাদেশ তাকে মিস করেছে। যখন আপনি ১৩৩ (১৩৬) রানের মতো অল্প লক্ষ্য তাড়া করবেন ভালো আক্রমণের বিপক্ষে, তখন ২০ ওভার খেলতে হবে। প্রথম ৬ ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে আক্রমণ করতে পারবেন না। আগে তার বোলিংটা দেখুন। তারপর ৪০ রানের একটা জুটি গড়লেই পাকিস্তানকে চাপে ফেলা যেত। কিন্তু সেটা তো হয়নি। তারা বাজে শট খেলেছে। কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এমনটা করেছে। তবে আমি আবারও বলছি, ছন্দে থাকা অধিনায়ককে তারা হারিয়েছে। আশা করি সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন: আপনি নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে খেলেছেন। সেখানে আপনার সবচেয়ে ভালো স্মৃতি কোনটা?
আকরাম: বাংলাদেশে আমার অনেক অসাধারণ স্মৃতি আছে। সেখানকার মানুষ, খাবার—সবই দারুণ। সেখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। আমি গত ১০-১২ বছর বাংলাদেশে যাইনি। তবে আগামী জানুয়ারিতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাব। আমি খুব খুশি যে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো। ঢাকা-করাচি অথবা করাচি থেকে ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এটা একটা ভালো লক্ষণ। আমি বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, বগুড়া; প্রতিটি শহরের কথা আমার মনে আছে। সেখানকার মানুষ এখনো আমাকে ভালোবাসে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সব সময় আমার ভালোবাসা।
প্রশ্ন: পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে অনেক পাকিস্তানি কিংবদন্তিই কাজ করেছেন। কিন্তু আপনাকে খুব একটা দেখা যায়নি কখনো। কারণটা কী?
উত্তর: দেখুন আমার বয়স প্রায় ৬০ বছর। এই কাজটা অনেক কঠিন। আমি শুধু লাহোরভিত্তিক কাজ করতে পারব না। কারণ, কোচিং অনেক কঠিন কাজ। আপনাকে সব সময় সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। পরিবার থেকে দূরে থাকা অনেক কঠিন। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য আমি আছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা জিনিস প্রায়ই দেখা যায়, গিল ও অভিষেককে প্রস্তুত করেছে যুবরাজ সিং। এই দুই ছেলে (গিল-অভিষেক) যুবরাজ সিংয়ের কাছে যেত। কেউ আমার কাছে আসেনি। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের কেউ এলে আমি তাকে টিপস, সহায়তা করতে প্রস্তুত। তাদের সময় দিতেও রাজি। কিন্তু এটা হচ্ছে না। আমি এটা বিনা মূল্যে করতে পারব। আমার টাকা নিয়ে অহংকার নেই। তবে কোনো তরুণ ক্রিকেটার এলে আমি তাকে সময় দিতে রাজি। কিন্তু এখনো কেউ আমাকে ডাকেনি।
প্রশ্ন: আপনার আত্মজীবনী ‘সুলতান অব সুইং’ বইয়ে খেলোয়াড়ি জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক, মাদকাসক্ত হয়ে পড়া নিয়ে অনেক স্পর্শকাতর কথা খোলামেলা তুলে ধরেছেন। আপনার প্রয়াত স্ত্রীর শেষ মুহূর্তগুলো এত হৃদয়স্পর্শী, চোখে পানি এসে যায়। আপনার খেলোয়াড়ি জীবন এত বর্ণাঢ্য, চাইলে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এড়িয়েও যেতে পারতেন। কিন্তু কীভাবে তুলে ধরা?
আকরাম: এটা লেখা আমার জন্য কঠিন ছিল। আমার স্ত্রী শানিরা (শানিয়ারা থম্পসন) আমাকে এই বই লিখতে রাজি করিয়েছিল। আমি বিরক্ত হইনি। এটা নিয়ে পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটার চিন্তিত ছিল। কারণ, তারা ভেবেছিল যে আমি তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলব। কিন্তু সেই বইটি পুরোপুরি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লেখা। আমার সংগ্রাম, ট্র্যাজেডি, জয়, সুখ-দুঃখ—এসব নিয়ে লেখা। এই বইটি লেখা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। এটা লেখার জন্য প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছে। বই নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান লেখক গিডিয়ন হেইগ দুর্দান্ত কাজ করেছেন। আমার সন্তানেরাও আমাকে সমর্থন করেছে। এই বইটি আসলে তাদের জন্য। যখন তারা বড় হবে, তখন তারা বুঝতে পারবে মাঠে এবং মাঠের বাইরে তারা কী কী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। আমার জীবনে একটা ট্র্যাজেডি আছে। আমার প্রথম স্ত্রী হুমাকে আমি এখনো মিস করি। সে মারা যাওয়ার পর শানিরাকে বিয়ে করেছি। আমার ভাগ্য ভালো ছিল বলে আমি এমন দুজন জীবনসঙ্গী পেয়েছি। আয়লা নামে আমাদের ১১ বছরের একটি মেয়ে আছে। সে আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। জীবন চলতেই থাকবে। এটা বলা সহজ। এরপরও জীবনকে চলতেই হবে।
প্রশ্ন: ধারাভাষ্য ও ক্রিকেটীয় কার্যক্রমের বাইরে সময় কাটে কীভাবে?
উত্তর: অনেক ব্যস্ত। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। পাকিস্তানে অনেক টেলিভিশনে কাজ করতে হয়। পরিবার থাকে মেলবোর্নে। পাকিস্তান-মেলবোর্নে তাই অহরহ যাতায়াত করতে হয়। অনেক লম্বা যাত্রা। কিন্তু কাজ তো করতে হবে। এটা কঠিন। ১১ বছর বয়সী মেয়ে আছে। ছেলেরাও বড় হয়েছে। তৈমুরের বয়স ২৭ বছর, আকবরের বয়স ২৪ বছর ও ইসার বয়স ১১ হয়েছে। আমার সন্তান, স্ত্রী ও পরিবারকে মিস করি। অনেক কঠিন। কিন্তু এভাবেই হচ্ছে।
আকরামের চোখে সময়ের সেরা ব্যাটার
বর্তমান সময়ে সেটা বলা কঠিন। আমি যদি টেস্ট ক্রিকেটের কথা বলি তাহলে জো রুট শীর্ষে থাকবে। স্টিভ স্মিথ, বিরাট কোহলিও আছে। আমার মনে হয় বর্তমানে এরা বড় নাম। তারপর কেন উইলিয়ামসন এবং অবশ্যই পাকিস্তানের বাবর আজমের নাম নিতে হয়। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে আমার মনে হয় ইদানীং অভিষেক শর্মা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার ব্যাটিংয়ে আসলে সবাই মুগ্ধ। এবারের এশিয়া কাপে সে যেভাবে ব্যাটিং করছে। লাল বলের ক্রিকেটেও সে সমান ভালো খেলোয়াড়। তার টেকনিক ভালো। সে শট খেলতে পারে। সে ব্লক করতে পারে। তার হাতে সব শটই আছে। সে দারুণ একটি প্রতিভা।
প্রশ্ন: নব্বইয়ের দশকে ভারত-পাকিস্তানের লড়াইটা ছিল অন্য রকম। এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ কমে গেছে। আপনি নিজেই বলছিলেন, ফাইনালে পাকিস্তান আন্ডারডগ। একজন পাকিস্তানি কিংবদন্তি হয়ে নিজের দলকে আন্ডারডগ হিসেবে ভাবতে কতটা খারাপ লাগে?
ওয়াসিম আকরাম: ফ্যাক্ট লুকাতে পারবেন না। ভারত দারুণ খেলছে। টি-টোয়েন্টিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ ফাইনালে তারা হেরেছে। আমি বলতে চাচ্ছি, তারা বেশ ধারাবাহিক। ক্রিকেটার তৈরি করছে। এমনকি তাদের ‘এ’ দল দারুণ। ‘সি’ দলও দারুণ। বিসিসিআইকে কৃতিত্ব দিতে হবে, যেভাবে তারা আইপিএল থেকে টাকা আয় করছে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কাঠামো ভালো। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তরুণ ক্রিকেটাররা ভালোমতো গড়ে ওঠার সুযোগ পায়। টি-টোয়েন্টিতে টেকনিক ভালো না থাকলে ভালো ক্রিকেটার পাবেন না। তাই লাল বল থেকে সাদা বলের ক্রিকেটে এলে খেলার ধরন পরিবর্তন করতে হবে। তবে সাদা বল থেকে লাল বলের ভালো ক্রিকেটার হওয়াটা প্রায় অসম্ভব।
প্রশ্ন: এখানেই কি ভারতের সঙ্গে উপমহাদেশের বাকিদের পার্থক্য তৈরি হচ্ছে?
আকরাম: সম্ভবত এটাই। তারা ক্রিকেটারের ওপর ফোকাস করে। (শুবমান) গিলের কথাই কল্পনা করুন। সে টি-টোয়েন্টি দারুণ খেলে। সাম্প্রতিক টেস্ট সিরিজে দেখুন তার টেকনিক। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী তার খেলার ধরন বদলে যায়। কোচ তাকে বলে দেয় না। সে (গিল) নিজের কাজ নিজে করে। আমাদের ক্রিকেটারদের এগুলো শিখতে হবে। তাদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস করতে হবে। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। বড় মঞ্চে ঘাবড়ানো যাবে না।
প্রশ্ন: বড় মঞ্চে বাংলাদেশে বড় কোনো সাফল্য নেই। বড় মঞ্চে কেন খেই হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ?
আকরাম: এখানে ক্রিকেট বোর্ডের করার কিছু নেই। বাংলাদেশের মানুষেরও এখানে কিছু করার নেই। এটা করতে হবে ক্রিকেটারদের। তাদের নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী সচেতন থাকতে হবে। সেটা তো কোচ আপনাকে শেখাতে পারবে না। আপনার নিজেকেই শিখতে হবে। এই অবস্থায় আমি এভাবে ব্যাটিং করব। এই অবস্থায় আমাকে এভাবে বোলিং করতে হবে। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট থেকে একটা ইতিবাচক ব্যাপার খুঁজে পাওয়া গেছে এবং সেটা হলো তাদের অসাধারণ ফিল্ডিং। দুই-তিনটা ক্যাচ মিস বাদ দিলে সব ঠিক আছে। এমনটা হতেই পারে। নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) যদি প্রস্তাব দেয়, কাজ করতে আগ্রহী হবেন?
আকরাম: আমি কিছুদিনের জন্য কাজ করতে পারি। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করব কি না সেটা এখন বলা কঠিন। বাংলাদেশ দলে মুশতাক আহমেদের (স্পিন পরামর্শক) মতো একজন খুব ভালো কোচ আছেন। ফিল সিমন্স, শন টেইট আছেন। তাঁরা ভালো কাজ করছেন। তাসকিন আহমেদের কথা যদি বলি; চার-পাঁচ বছর ধরে তার বোলিং দেখে আমি খুবই মুগ্ধ। আমি ভেবেছিলাম সে সম্ভবত পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে (লিটন দাস ছিটকে যাওয়ায়) অধিনায়ক হবে। আমাকে বলা হয়েছে যে তাসকিন খুব একটা সুশৃঙ্খল নয়। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ফাস্ট বোলাররা সুশৃঙ্খল হয় না। কারণ, তারা ফাস্ট বোলার। তাদের ভেতরে আগুন আছে। তারা ভালো নেতা হতে পারে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের অধিনায়কের মধ্যে কাকে আপনার বেশি ভালো লেগেছে?
আকরাম: অবশ্যই মাশরাফি। আরেকজন উইকেটরক্ষক—মুশফিকুর রহিম। মাশরাফি রাজনীতিতে জড়িয়ে গেল। সাকিব (আল হাসান) কিছুদিনের জন্য ছিল। এখন লিটন দাস। আমি গত এক বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেট সেভাবে দেখিনি। লিটন দাসের অধীনে দল খুব ভালো খেলছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রান তাড়ার সময় বাংলাদেশ তাকে মিস করেছে। যখন আপনি ১৩৩ (১৩৬) রানের মতো অল্প লক্ষ্য তাড়া করবেন ভালো আক্রমণের বিপক্ষে, তখন ২০ ওভার খেলতে হবে। প্রথম ৬ ওভারে শাহিন শাহ আফ্রিদিকে আক্রমণ করতে পারবেন না। আগে তার বোলিংটা দেখুন। তারপর ৪০ রানের একটা জুটি গড়লেই পাকিস্তানকে চাপে ফেলা যেত। কিন্তু সেটা তো হয়নি। তারা বাজে শট খেলেছে। কয়েকজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এমনটা করেছে। তবে আমি আবারও বলছি, ছন্দে থাকা অধিনায়ককে তারা হারিয়েছে। আশা করি সে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে।
প্রশ্ন: আপনি নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে খেলেছেন। সেখানে আপনার সবচেয়ে ভালো স্মৃতি কোনটা?
আকরাম: বাংলাদেশে আমার অনেক অসাধারণ স্মৃতি আছে। সেখানকার মানুষ, খাবার—সবই দারুণ। সেখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। আমি গত ১০-১২ বছর বাংলাদেশে যাইনি। তবে আগামী জানুয়ারিতে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। আমার বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাব। আমি খুব খুশি যে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম দেশের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভালো। ঢাকা-করাচি অথবা করাচি থেকে ঢাকা সরাসরি ফ্লাইট শুরু হয়েছে। এটা একটা ভালো লক্ষণ। আমি বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। চট্টগ্রাম, ঢাকা, সিলেট, বগুড়া; প্রতিটি শহরের কথা আমার মনে আছে। সেখানকার মানুষ এখনো আমাকে ভালোবাসে। বাংলাদেশের মানুষের প্রতি সব সময় আমার ভালোবাসা।
প্রশ্ন: পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডে অনেক পাকিস্তানি কিংবদন্তিই কাজ করেছেন। কিন্তু আপনাকে খুব একটা দেখা যায়নি কখনো। কারণটা কী?
উত্তর: দেখুন আমার বয়স প্রায় ৬০ বছর। এই কাজটা অনেক কঠিন। আমি শুধু লাহোরভিত্তিক কাজ করতে পারব না। কারণ, কোচিং অনেক কঠিন কাজ। আপনাকে সব সময় সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। পরিবার থেকে দূরে থাকা অনেক কঠিন। কিন্তু পাকিস্তানের জন্য আমি আছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা জিনিস প্রায়ই দেখা যায়, গিল ও অভিষেককে প্রস্তুত করেছে যুবরাজ সিং। এই দুই ছেলে (গিল-অভিষেক) যুবরাজ সিংয়ের কাছে যেত। কেউ আমার কাছে আসেনি। বাংলাদেশ-পাকিস্তানের কেউ এলে আমি তাকে টিপস, সহায়তা করতে প্রস্তুত। তাদের সময় দিতেও রাজি। কিন্তু এটা হচ্ছে না। আমি এটা বিনা মূল্যে করতে পারব। আমার টাকা নিয়ে অহংকার নেই। তবে কোনো তরুণ ক্রিকেটার এলে আমি তাকে সময় দিতে রাজি। কিন্তু এখনো কেউ আমাকে ডাকেনি।
প্রশ্ন: আপনার আত্মজীবনী ‘সুলতান অব সুইং’ বইয়ে খেলোয়াড়ি জীবন, পারিবারিক সম্পর্ক, মাদকাসক্ত হয়ে পড়া নিয়ে অনেক স্পর্শকাতর কথা খোলামেলা তুলে ধরেছেন। আপনার প্রয়াত স্ত্রীর শেষ মুহূর্তগুলো এত হৃদয়স্পর্শী, চোখে পানি এসে যায়। আপনার খেলোয়াড়ি জীবন এত বর্ণাঢ্য, চাইলে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় এড়িয়েও যেতে পারতেন। কিন্তু কীভাবে তুলে ধরা?
আকরাম: এটা লেখা আমার জন্য কঠিন ছিল। আমার স্ত্রী শানিরা (শানিয়ারা থম্পসন) আমাকে এই বই লিখতে রাজি করিয়েছিল। আমি বিরক্ত হইনি। এটা নিয়ে পাকিস্তানের অনেক ক্রিকেটার চিন্তিত ছিল। কারণ, তারা ভেবেছিল যে আমি তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলব। কিন্তু সেই বইটি পুরোপুরি আমার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে লেখা। আমার সংগ্রাম, ট্র্যাজেডি, জয়, সুখ-দুঃখ—এসব নিয়ে লেখা। এই বইটি লেখা আমার জন্য খুব কঠিন ছিল। এটা লেখার জন্য প্রায় ছয় মাস সময় লেগেছে। বই নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান লেখক গিডিয়ন হেইগ দুর্দান্ত কাজ করেছেন। আমার সন্তানেরাও আমাকে সমর্থন করেছে। এই বইটি আসলে তাদের জন্য। যখন তারা বড় হবে, তখন তারা বুঝতে পারবে মাঠে এবং মাঠের বাইরে তারা কী কী অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছে। আমার জীবনে একটা ট্র্যাজেডি আছে। আমার প্রথম স্ত্রী হুমাকে আমি এখনো মিস করি। সে মারা যাওয়ার পর শানিরাকে বিয়ে করেছি। আমার ভাগ্য ভালো ছিল বলে আমি এমন দুজন জীবনসঙ্গী পেয়েছি। আয়লা নামে আমাদের ১১ বছরের একটি মেয়ে আছে। সে আমাদের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। জীবন চলতেই থাকবে। এটা বলা সহজ। এরপরও জীবনকে চলতেই হবে।
প্রশ্ন: ধারাভাষ্য ও ক্রিকেটীয় কার্যক্রমের বাইরে সময় কাটে কীভাবে?
উত্তর: অনেক ব্যস্ত। আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। পাকিস্তানে অনেক টেলিভিশনে কাজ করতে হয়। পরিবার থাকে মেলবোর্নে। পাকিস্তান-মেলবোর্নে তাই অহরহ যাতায়াত করতে হয়। অনেক লম্বা যাত্রা। কিন্তু কাজ তো করতে হবে। এটা কঠিন। ১১ বছর বয়সী মেয়ে আছে। ছেলেরাও বড় হয়েছে। তৈমুরের বয়স ২৭ বছর, আকবরের বয়স ২৪ বছর ও ইসার বয়স ১১ হয়েছে। আমার সন্তান, স্ত্রী ও পরিবারকে মিস করি। অনেক কঠিন। কিন্তু এভাবেই হচ্ছে।
আকরামের চোখে সময়ের সেরা ব্যাটার
বর্তমান সময়ে সেটা বলা কঠিন। আমি যদি টেস্ট ক্রিকেটের কথা বলি তাহলে জো রুট শীর্ষে থাকবে। স্টিভ স্মিথ, বিরাট কোহলিও আছে। আমার মনে হয় বর্তমানে এরা বড় নাম। তারপর কেন উইলিয়ামসন এবং অবশ্যই পাকিস্তানের বাবর আজমের নাম নিতে হয়। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে আমার মনে হয় ইদানীং অভিষেক শর্মা আমাকে মুগ্ধ করেছে। তার ব্যাটিংয়ে আসলে সবাই মুগ্ধ। এবারের এশিয়া কাপে সে যেভাবে ব্যাটিং করছে। লাল বলের ক্রিকেটেও সে সমান ভালো খেলোয়াড়। তার টেকনিক ভালো। সে শট খেলতে পারে। সে ব্লক করতে পারে। তার হাতে সব শটই আছে। সে দারুণ একটি প্রতিভা।
একবার নয়, দুইবার নয়, এবারের এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছে তিনবার। প্রত্যেকবারই জিতেছে ভারত। কিন্তু চিত্রনাট্য একই হলেও কাহিনি তো এত সহজে শেষ হওয়ার নয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এবারের এশিয়া কাপে হয়েছে নানা নাটকীয়তা।
১ ঘণ্টা আগেপাঁজরের চোটের কারণে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে পারেননি লিটন দাস। সেই দুই ম্যাচে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন জাকের আলী অনিক। তবে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের এমন সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি ওয়াসিম আকরামের।
২ ঘণ্টা আগেনানা নাটকীয়তায় গত রাতে দুবাইয়ে শেষ হয়েছে ২০২৫ এশিয়া কাপ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। কিন্তু একই টুর্নামেন্টে যখন ভারত-পাকিস্তান তিন বার মুখোমুখি হয়, তখন কাহিনি কি এত সহজে শেষ হয়!
২ ঘণ্টা আগেভারত-পাকিস্তান নয়, দুবাইয়ে গতকাল ফাইনালটা হতে পারত বাংলাদেশ-ভারতের। ২৫ সেপ্টেম্বর অলিখিত সেমিফাইনাল জিতে বাংলাদেশের জন্য ফাইনাল খেলাটা ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিদায়ে এশিয়া কাপের ৪১ বছরের ইতিহাসে প্রথমবার হলো ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল।
৩ ঘণ্টা আগে